Wednesday, April 25, 2012

ল্যাসিক

0 comments
নাকের গোড়ায় চশমা মাঝে মাঝেই বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। লেন্স ব্যবহারেও আছে নানা ঝক্কি। চোখের সমস্যা সমাধানে নতুন প্রযুক্তি ল্যাসিক। রাজধানীতে এ সেবা দিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বিস্তারিত লিখেছেন এমসি তারেক
LASIK
মানুষ সবকিছুকে সহজ ও উন্নত করে পেতে চায়। তাই কোনো কিছু পাওয়া হয়ে গেলে তা নিয়ে গবেষণায় নেমে পড়ে, কী করে সেটাকে আরও সহজ, উপযোগী ও উন্নততর করে বানিয়ে ব্যবহার করা যায়। তেমনই একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার চশমা। আর এ চশমা যখন পাওয়া হয়ে গেল এর পর থেকেই আবার গবেষণা শুরু হলো কী করে চশমা ছাড়াই ভালো দেখা যায়। অর্থাৎ চশমার বিকল্প আর কী হতে পারে। আর বিকল্প খুঁজবেই বা না কেন? চশমা মানুষের বাহ্যিক চেহারায় বিরাট একটা পরিবর্তন ঘটায়, যা মূলত কারোরই কাম্য নয়। ১৫০৮ সালে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি অত্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝিয়ে দেন চশমার বিকল্প হতে পারে কন্ট্যাক্ট লেন্স। আর উনিশ শতকের শেষ দিকে এসে যখন কন্ট্যাক্ট লেন্স জনপ্রিয় হয়ে উঠল, তখনই আবার চিন্তার উদ্ভব হলো, কী করে মানুষকে একেবারে খালি চোখে ভালো দেখানো যায়। আর এ চিন্তা থেকেই ল্যাসিকের উৎপত্তি ঘটে। বর্তমানে প্রায়ই একটি স্লোগান শোনা যায়_ ল্যাসিক করুন, চশমা ছাড়া খালি চোখেই ভালো দেখুন। চক্ষু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী দু'এক দশকের মধ্যে চশমার ব্যবহার এত অবিশ্বাস্য হারে হ্রাস পাবে যে ভবিষ্যতে আর চশমার দোকান খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর তা হবে শুধু ল্যাসিকের জন্যই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ল্যাসিক আসলে কী? ল্যাসিক হচ্ছে এক ধরনের লেজার প্রযুক্তি, যা চোখে প্রয়োগ করে হারানো দৃষ্টি ফিরে পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে এক ধরনের শক্তিশালী ও সংকুচিত আলোকরশ্মি নেত্রস্বচ্ছের মাঝখানের (চোখের কালো মণি) এক-তৃতীয়াংশ অত্যন্ত নিখুঁতভাবে পাতলা করে কেটে তোলা হয় এবং পুরোটা না কেটে এক কোনায় আটকে রাখা হয়। এরপর এক ধরনের বিশেষ লেজারের (এক্সাইমার লেজার) সাহায্যে চোখের পাওয়ার স্থাপন করে নেত্রস্বচ্ছের সরিয়ে রাখা পর্দাটি আবার লাগিয়ে দেওয়া হয়, যেটা কর্নিয়ার সঙ্গে লেগে থাকে। এটি একটি ঝামেলামুক্ত এবং সেলাইবিহীন সার্জারি, যাতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। যারা চশমা মোটেও পছন্দ করেন না, তারা করিয়ে নিতে পারেন ল্যাসিক। বিশেষ করে যাদের চশমার পাওয়ার অনেক বেশি এবং চশমার জন্য প্রায়ই হতে হয় নানা বিড়ম্বনার শিকার, তাদের জন্য অনেকটা আশীর্বাদ হয়েই এসেছে ল্যাসিক। অনেকে হয়তো ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখেছেন পাইলট হবেন কিংবা নৌবাহিনীর সমুদ্রজয় দেখে মনের গহিনে সুপ্ত বাসনা জমেছিল নেভি অফিসার হবেন। কেউ হয়তো হতে চেয়েছেন মডেল কিংবা অভিনেতা কিন্তু বাদ সেধেছে আপনার চশমাটি_ তারা ল্যাসিকের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারেন স্বপ্ন পূরণের পথে। এখন আসুন, জেনে নেওয়া যাক কারা করাতে পারবেন ল্যাসিক। যাদের কাছের দৃষ্টিতে সমস্যা বা মাইনাস পাওয়ারের জন্য চশমা পরেন, তাদের জন্য ল্যাসিক সবচেয়ে বেশি কার্যকর। এ ক্ষেত্রে -২ থেকে -২২ পর্যন্ত পাওয়ারের রোগীদের ল্যাসিক করা যায়। আর যারা দূরদৃষ্টি বা প্লাস পাওয়ারের জন্য চশমা পরেন তাদের ক্ষেত্রে +১ থেকে +৮ পর্যন্ত পাওয়ার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ল্যাসিক করা হয়। তবে মনে রাখতে হবে, ল্যাসিক শুধু তারাই করাতে পারবেন যাদের চশমার পাওয়ার অন্তত এক বছর ধরে ওঠানামা করে না এবং বয়স অবশ্যই ১৮ থেকে ২১ বছরের ওপর। তবে যাদের একটাই চোখ এবং চোখে বিশেষ কিছু রোগ রয়েছে, এমন রোগীদের জন্য ল্যাসিক নয়। ল্যাসিকের মতো একটি আধুনিক চিকিৎসাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই, তবে এর জটিলতাও যে একেবারেই নেই তা কিন্তু বলা যাবে না। ল্যাসিকের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে আর ল্যাসিক সার্জনরাও স্বীকার করেন যে, এর দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার বিষয়ে তাদের কাছে কোনো ডাটা নেই। তা ছাড়া ১৯৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋউঅ (ঋড়ড়ফ ধহফ উৎঁম অফসরহরংঃৎধঃরড়হ) যখন ল্যাসিকের স্বীকৃতি দিয়েছিল তখন এফডিএর ডায়াগনস্টিক ও সার্জিক্যাল বিভাগের প্রধান ছিলেন ডা. মরিস ওয়াক্সলার। তিনি একটি টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এক্সাইমার লেজারকে ল্যাসিক সার্জারির জন্য স্বীকৃতি দেওয়াটা ছিল এফডিএ এবং তা একটি অত্যন্ত ভুল ও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া তাইওয়ানের তাইপে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত সার্জন ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি আর কখনও ল্যাসিক সার্জারি করাবেন না। কারণ ১০ বছর আগে তিনি যাদের ল্যাসিক করিয়েছেন তারা প্রায় সবাই অনবরত তার কাছে চোখের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করে যাচ্ছেন। সুতরাং প্রিয় পাঠক, চোখে চশমা? ভাবছেন ল্যাসিক করাবেন? তার আগে আশপাশে ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে নিন। জেনে নিন তাদের কাছ থেকে, যারা চার-পাঁচ বছর আগে ল্যাসিক করিয়েছেন। প্রয়োজনে পরামর্শ নিন আপনার পারিবারিক ডাক্তারের। জেনে নিন, চোখের জন্য ল্যাসিক কতটা নিরাপদ। কেননা চোখ কোনো সাধারণ অঙ্গ নয়। আপনার একটি ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে জীবনের বড় কোনো ক্ষতির কারণ। এবার জেনে নেওয়া যাক কোথায় করাবেন ল্যাসিক এবং খরচ কী রকম পড়বে। ল্যাসিক করানোর জন্য যেতে পারেন নিচের প্রতিষ্ঠানগুলোতে : ল্যাসিক সাইট সেন্টার, গুলশান। খরচ পড়বে : প্রি-ল্যাসিক টেস্ট ৩৬০০ টাকা, ল্যাসিক দু'চোখে ৪৫,০০০ টাকা, মেডিসিন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। হারুন আই ফাউন্ডেশন, ধানমণ্ডি। খরচ পড়বে : প্রি-ল্যাসিক টেস্ট ৩,০০০ টাকা, ল্যাসিক দু'চোখে ৪৫,০০০ টাকা, মেডিসিন ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা। ওএসবি লেজার ভিশন সেন্টার, মিরপুর। খরচ পড়বে : প্রি-ল্যাসিক টেস্ট ২,৫০০ টাকা, ল্যাসিক দু'চোখে ৩৫,০০০ টাকা, মেডিসিন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা।

0 comments:

Post a Comment