Monday, July 30, 2012

নিমতলী প্রাসাদ, ঢাকা

0 comments
কার্জন হল থেকে অল্প দূরত্বে বর্তমান এশিয়াটিক সোসাইটির পেছনে এবং অমর একুশে হলের পশ্চিম পাশেই রয়েছে নিমতলী প্রাসাদ। মূল প্রসাদটি ধ্বংস হয়ে গেলেও এর আকর্ষণীয় ফটকটি এখনও ধ্বংসের প্রহর গুণছে। ধারণা করা হয় ব্রিটিশ আমল লে. সুইনটিন ১৭৬৬ খ্রীস্টাব্দে নায়েব নাজিম জসরত খানের বাসস্থান হিসেবে নিমতলী প্রাসাদও ফটক নির্মাণ করেন। ঢাকায় নায়েব নাজিমগণ ১৮৪৩ সাল পর্যনত্দ এখানে বসবাস করেন।
১৭০২ সালে মুর্শিদকুলি খাঁ সুবে বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে পরিবর্তন করে মুর্শিদাবাদ নিয়ে যান এবং তিনি বাংলার নাজিম নিয়োগপ্রাপ্ত হন। রাজধানী স্থানান্তর করলেও পূর্ববঙ্গকে শাসনের সুবিধার্থে ঢাকায় নিয়াবত স্থাপন করেন। ফলে ঢাকার শাসনকর্তার পদটির নাম হয় নায়েব নাজিম। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভের পর ঢাকার নায়েব নাজিম জেসারত খানের বংশধররাই ছিল ঢাকার শেষ নায়েব নাজিম। স্থানীয়ভাবে তাদের উপাধি ছিল 'নবাব'। সেই সময়ে ঢাকার নায়েব নাজিমরা চকের মোগল দুর্গেই বসবাস করতেন। ঐতিহাসিক ড. দানীর মতে, লে. সুইনটন ঢাকার ভার গ্রহণ করেছিলেন ১৭৬৪ সালে। সুইনটনের থাকার জন্য জেসারত খান দুর্গ ত্যাগ করে চলে যান বড় কাটরায়। কলকাতা পরিষদ শিগগিরই নায়েব নাজিমদের জন্য নতুন বাসস্থান তৈরি করতে সুইনটনকে নির্দেশ দেয়। নিমতলীতে নতুন প্রাসাদ নির্মাণ দ্রুততার সঙ্গে ১৭৬৬ সাল নাগাদ সম্পন্ন হয়। নিমতলীতে প্রাসাদ নির্মাণের পর জেসারত খান সেই প্রাসাদে ওঠেন। এরপর নিমতলী প্রাসাদ পরিচিত হয় নায়েব নাজিমদের বাসস্থান হিসেবে। উনিশ শতকে এলাকাটি 'নবাবি দালান' নামে পরিচিত ছিল। নিমতলী প্রাসাদটি ছিল বিশাল এক বর্গাকার চত্বরে ভিন্ন অট্টালিকা সংবলিত। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে আলম মুসাওয়ারের আঁকা ঈদ ও মহররমের মিছিলের ছবি থেকে অনুমান করা যায় নিমতলী প্রাসাদটি দ্বিতল বিশিষ্ট এবং প্রাসাদের ছাদ সম্ভবত সমান্তরালই ছিল। প্রাসাদটির চারপাশে বেশ গাছ-গাছালিও ছিল। চারদিকে ইটের দেয়াল দেওয়া প্রাসাদটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল একটি বাগান এবং একটি বিশাল দীঘি, যার কিছু অংশ এখনও রয়েছে ফজলুল হক হলের পাশে। এশিয়াটিক সোসাইটির পেছনে বর্তমানে বিদ্যমান একমাত্র গেট নিমতলী দেউরি। ধরে নেওয়া যেতে পারে যে এটি মোগলদের সচরাচর প্রাসাদের নকশা অনুসারে নির্মিত হয়েছিল। এখানে ছিল আরও অনেক গেট, অভ্যন্তরীণ অঙ্গন, নিভৃত বাসস্থান, প্রার্থনার জন্য নির্দিষ্ট স্থান, সৈন্যদের ব্যারাক ও কর্মচারীদের আবাস প্রভৃতি। ক্ষমতা না থাকলেও নায়েব নাজিমদের মোটামুটি জৌলুস তখনও বজায় ছিল। মূলত তাদের পৃষ্ঠপোষকতায়ই ঢাকায় তখন চালু হয়েছিল ঈদ ও মহররমের মিছিল। এসব মিছিল তখন নিমতলীর প্রাসাদ থেকে শুরু হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে আবার নিমতলীতে এসে শেষ হতো। প্রাসাদের অভ্যন্তরের বর্ণনা পাওয়া যায় ১৮২৪ সালে ঢাকায় ভ্রমণে আসা কলকাতার বিশপ রেজিল্যান্ড হেবারের কাছ থেকে। সে সময় ঢাকার নায়েব নাজিম ছিলেন শামসউদ্দৌলাহ। সে সময় শামসউদ্দৌলার সঙ্গে দেখা করার জন্য নিমতলীতে যান। নবাবকে সম্মান দেখানোর জন্য এক কোম্পানি সৈন্য রাখা হতো। প্রাসাদে ছিল সুন্দর একটি ফটক, খোলা গ্যালারিসহ সেখানে ছিল নহবতখানা। দ্বিতীয় তলায় ছিল গথিক রীতিতে নির্মিত একটি সুন্দর হলঘর। ঘরের ভেতর বড় গোলাকার একটি টেবিল লাল কাপড়ে ঢাকা মেহগনি কাঠের চেয়ার, চমৎকার বড় বড় দুটি কনভেক্স আয়না, সাধারণ দুটি আয়না। এভাবেই ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যায় মানুষের হাতে ঢাকার এককালীন মোগল ঐতিহ্য। তবে পুরো প্রাসাদটি ধ্বংস হয়ে গেলেও নায়েব নাজিমদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এখনও টিকে রয়েছে 'নিমতলীর দেউরি' এবং 'বারোদুয়ারি'।


---রিবেল মনোয়ার

0 comments:

Post a Comment