Saturday, September 15, 2012

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস

0 comments
বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এ দিনটি। বাংলাদেশ মেডিকেল জার্নাল ২০১১ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০০৮-এর জানুয়ারি থেকে ২০০৯-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছরে ময়না তদন্ত হয়েছে ৫১১৪টি লাশের। এর মধ্যে আত্মহত্যার লাশ ছিল ৯৭০। অর্থাৎ মোট লাশের ১৯%আত্মহত্যা কৃত লাশ। ধর্মীয় ও আইনের চোখে ও আত্মহত্যাকারী একজন অপরাধী। এ অপরাধ প্রতিরোধে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন-শামছুল হক রাসেল
আত্মহত্যার ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিকে মনে রাখতে হবে, সুইসাইড মানে আইন লঙ্ঘন করা, অপরাধ করা। সুইসাইড মানে ধর্মীয় অনুশাসন অবজ্ঞা করা। সুইডসাইড মানে সমাজে পচনশীল ক্ষত বাড়িয়ে দেওয়া, সমাজকে পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়া। সুইসাইড কখনো প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া হচ্ছে কাপুরুষতা।

                                                                                              - ডা. মোহিত কামাল



আইনের চোখেও আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকারী একজন অপরাধী। আত্মহত্যার পর যেমন থানায় খবর দিতে হয়, তেমনি আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও থানায় জানাতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি কাউকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচিত করে বা তার প্ররোচনায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়, তাহলে প্ররোচনাকারীকে সর্বনিম্ন ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।

                                                                                      - ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী দিবসটি উদযাপন করে থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য �Suicide Prevention across the Globe : Strengthening Protective Factors and Instilling Hope� প্রতি বছর বিশ্বে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। ৪০ লাখ টিনএজার প্রতি বছর আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এর মধ্যে এক লাখ সফল হয়ে চলে যায় পরপারে। যুদ্ধ, টেরোরিস্ট বা সন্ত্রাসী আক্রমণ কিংবা খুনের শিকার হয়েও আত্দহত্যার সমতুল্য এত মানুষ মারা যায় না পৃথিবীতে। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন আত্মহত্যা করে প্রায় তিন হাজার মানুষ। প্রিয়জনের আত্মহত্যার যন্ত্রণার পেরেক বুকে ঠুঁকে নিয়ে ৬০ লাখেরও বেশি স্বজন ধুঁকে ধুঁকে পার করছে জীবন। জীবিত থেকেও মৃত তারা। সুই (sui) অর্থ নিজেকে, সিডস (caeds) অর্থ হত্যা। অর্থাৎ আত্মহত্যা মানে নিজেকে নিজে খুন করা।

সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে আত্মহত্যা কারীর সংখ্যা। সাধারণত দুভাবে আত্মহত্যা সংঘটিত হয়ে থাকে-অধিকাংশই পরিকল্পনার মাধ্যমে আত্মহত্যা করে। আর একটি হলো তাৎক্ষণিক উত্তেজনা বা তাড়নায় ইমপালসিভ আত্মহত্যা। পরিকল্পনাকারীদের মনে প্রথমে আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগে, ইচ্ছার পর পরিকল্পনা করে সে, তার পর আত্মহত্যার জন্য অ্যাটেমপ্ট গ্রহণ করে। বড় ধরনের বিষণ্নতা রোগের শেষ পরিণতি হচ্ছে পরিকল্পনার মাধ্যমে আত্মহত্যা। বাংলাদেশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত এক মৌলিক গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায়,আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকারীদের ৬৫.৪ শতাংশ মানসিক রোগে ভুগেছিল। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিল গুরুতর বিষণ্ন রোগী। ২৫ বছরের নিচের তরুণ বয়সীদের হার ছিল সর্বোচ্চ। পুরুষের তুলনায় মহিলার হার ছিল বেশি (৫৪.৪%), বিবাহিত মহিলা ৫৫.৯%। পারিবারিক সমস্যা (৪১.২%)। পরীক্ষায় খারাপ করা, ভালোবাসার ব্যর্থতা ও জটিলতা, বৈবাহিক অশান্তি, অবৈধ প্রেগন্যান্সি ইত্যাদি বিষয়ও ছিল গুরুত্বপূর্ণ (আলী এম'০৫)।

বাংলাদেশে সুইসাইডের হার প্রতিবছর লাখে ৮-১০ জন। পক্ষান্তরে বিশ্বজনীন এই হার প্রতিবছর লাখে ১৪.৫। বাংলাদেশে ঝিনাইদহ ও যশোর জেলাকে আত্মহত্যাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে- গড়ে এই হার ২৯-৩৩ জন। ঝিনাইদহে আত্মহত্যাকারীদের ৬৭.২৮% ছিল গৃহবধূ, ৭৩.৪৫% মহিলা, ৬৯.৫৬% অশিক্ষিত, ৭৪.৬১ শতাংশের বয়স ছিল ১১-২৫ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্রিতে রিভিউ আর্টিকেল হিসেবে প্রকাশিত এ গবেষণাপত্র থেকে আরও দেখা যায়, ৩৭-৫৯% সুইসাইড ঘটেছে পারিবারিক সমস্যার কারণে (আলম এম এফ'০৪)।

সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, মরণপ্রবৃত্তির অন্তর্মুখিতা সুইসাইড ঘটায়। সহিংসতা অন্তর্মুখী হলে নিজেকে নিঃশেষ করার প্রবৃত্তি জোরাল হয়ে ওঠে। নিজেকে খুন করে মানুষ। আইনের চোখেও আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকারী একজন অপরাধী।আত্মহত্যার পর যেমন থানায় খবর দিতে হয়, তেমনি আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও থানায় খবর জানানোর কথা বলা হয়েছে। আত্মহত্যার চেষ্টা করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আত্মহত্যাপ্রতিরোধে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রচলিত কুসংস্কার দূর করার লক্ষ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সুইসাইড প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ভুক্তভোগী পরিবার যেন আইনের অপব্যবহারের কারণে ভোগান্তির শিকার না হয়, সচেতন হতে হবে। কীটনাশক প্রস্তুতকারী ও বিপণনকারীদের দায়িত্বশীল হতে হবে। ঘুমের বড়ি বিক্রির ব্যবহারে কঠোরতা আরোপ করতে হবে।

0 comments:

Post a Comment