Tuesday, October 23, 2012

কুমারী পূজার তত্ত্ব

0 comments
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন: কুমারী পূজা করে কেন? সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ।
দুর্গাপূজার অষ্টমী বা নবমীতে সাধারণত ৫ থেকে ৭ বছরের একটি কুমারীকে প্রতিমার পাশে বসিয়ে দেবী প্রতিমা চিন্তা করে পূজা করা হয়। এটা মাতৃভাবের প্রতিই শ্রদ্ধা নিবেদন। চণ্ডীতে বলা হয়েছে— যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ সকলের মধ্যে মায়ের রূপ ধরে যে দেবী বিরাজিতা, তাঁকে পুনঃপুন নমস্কার করি।
কুমারী কাকে বলে? ১ বছর বয়স থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত অজাতপুষ্পবালাকে কুমারী বলে। মাতৃভাব বিকাশের জন্য রামকৃষ্ণ মঠ বিশেষভাবে এ পূজা করে থাকে। দুর্গাপূজার সময় বা জগদ্ধাত্রী পূজার সময় এ পূজা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। ঠিক ঠিকভাবে পূজা হলে মন বিশুদ্ধ হয়, ঈশ্বরের কৃপালাভ হয়।
বয়স অনুসারে কুমারীর নানা শাস্ত্রীয় নাম হয়ে থাকে। যেমন— কালিকা, সুভগা, উমা, মালিনী ইত্যাদি। শান্ত, পবিত্র, সর্তশীলা এসব দৈবী সম্পদের অধিকারিণী কুমারীই জগজ্জননীর প্রতিমারূপে গ্রহণে বিধান আছে।
ব্রহ্ম ও শক্তি অভিন্ন। যাঁকে ঈশ্বর, হরি, গড প্রভৃতি বলা হয়, তাঁকেই মাতৃভাবে সাধনার সময় বলা হয় জগজ্জননী। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানবজাতির ক্ষেত্রে মায়ের নীরব অবদানের ঋণ পরিশোধ করা অসম্ভব।  নারী শক্তিরূপিণী। তাঁর সঠিক মূল্যায়নের অভাবে আমাদের অবক্ষয় নেমে আসে। আবার তাঁর উপযুক্ত মর্যাদায় সমাজ হয় কল্যাণমুখী। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন— ‘মেয়েদের পূজা করেই সব জাত বড় হয়েছে। যে দেশে, যে জাতে মেয়েদের পূজা নেই, সে দেশ, সে জাত কখনও বড় হতে পারেনি, কস্মিন্কালেও পারবে না। ... মনু বলেছেন, ‘যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তএ দেবতা:। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যতে সর্বাস্তত্রাফলা: ক্রিয়া:।’ অর্থাত্, যেখানে নারীগণ পূজিতা হন, সেখানে দেবতারা প্রজসন্ন। যেখানে নারীগণ সম্মানিতা হন না, সেখানে সকল কাজই নিষ্ফল। (মনুসংহিতা, ৩.৫৬) যেখানে স্ত্রীলোকের আদর নেই, স্ত্রীলোকেরা নিরানন্দে অবস্থান করে, সে সংসারের, সে দেশের কখনও উন্নতির আশা নেই।’
মাটির প্রতিমায় যে দেবীর পূজা করা হয়, তারই বাস্তব রূপ কুমারী পূজা। কুমারীতে সমগ্র মাতৃজাতির শ্রেষ্ঠ শক্তি—পবিত্রতা, সৃজনী ও পালনী শক্তি, সকল কল্যাণী শক্তি সূক্ষ্মরূপে বিরাজিতা। তাই কুমারী পূজা। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন—কুমারী পূজা করে কেন? হাগে মুতে এক মেয়েকে পূজা করা কেন? না ভগবতীর এক একটি রূপ বলে।
কুমারী প্রতীকে আমাদের মাতৃরূপে অবস্থিত। সর্বব্যাপী ঈশ্বরেরই মাতৃভাবে আরাধনা। যে জাতির মধ্যে শুদ্ধা, শিক্ষিতা, করুণাময়ী মায়ের সংখ্যা বেশি সে মাতৃজাতির সন্তানেরা সমাজের আদর্শ সন্তান। নিজ নিজ শক্তির বিকাশের জন্য সমগ্র নারী জাতির প্রতি প্রয়োজন নিজের মায়ের শ্রদ্ধা। তাই কুমারী পূজার মাধ্যমে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ শ্রদ্ধা জানায়। যিনি সকল প্রাণীতে মাতৃরূপে আছেন, তাকে প্রণাম। কুমারী পূজার প্রণামে আছে তিনি পরমভাগ্যসন্দায়িনীম এবং ভুবনবাক কুমারীং ভজে। অর্থাত্, কুমারী প্রতীকে জগজ্জননীর পূজায় পরম সৌভাগ্য লাভ হয়।
এ কুমারী সমগ্র জগতের বাক্যস্বরূপা, বিদ্যাস্বরূপা। তিনি এক হাতে অভয় এবং অন্য হাতে বর প্রদান করেন। অন্য ধ্যান আছে— ভদ্রবিদ্যাপ্রকাশিনীম। তিনি সকল শুভ বিদ্যার প্রকাশিকা।
তাই মাতৃজাতির প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা দেখিয়ে আমরা আমাদের সমাজ ও জীবনকে মহত্ করে তুলতে পারি।

লেখক: স্বামী অমেয়ানন্দ; অধ্যক্ষ, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা

চোখের যত্ন

0 comments
নিত্য নানা কাজের ব্যস্ততার মাঝে আমারা ভুলে যাই আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অঙ্গটিকে—আমাদের চোখ। আমাদের সব কাজের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এই চোখটি। কিন্তু এ চোখেরও যে আরাম প্রয়োজন তা আমরা ভুলে যাই। আর এই কারণে সৃষ্টি হতে পারে মাথাব্যথা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যার। আর তাই আমাদের উচিত চোখের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। খুব সহজেই আমরা চোখের যত্ন নিতে পারি।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন। ক্লকওয়াইজ ও এন্টি ক্লকওয়াইজ চোখের মণি ঘুরিয়ে চোখের ব্যায়াম করুন। মাঝে মাঝে গোলাপ পানিতে চোখ ধোয়ার অভ্যাস করুন। যারা বেশি মানসিক পরিশ্রম করেন, অনিয়মের মধ্য দিয়ে দিন কাটান, অনিদ্রা কিংবা রক্ত স্বল্পতায় ভোগেন তারাই চোখের নিচে কালি বা চোখের চারধারে বলিরেখা এই সমস্যায় আক্রান্ত হন। এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতে কিছু টিপস—
++ আলু কিংবা শসার টুকরো চোখের ওপর দিয়ে ১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। ক্লান্তি কাটবে। চোখের তলায় কালি থাকলে দূর হবে।
++ বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে আন্ডার আই ক্রিম ব্যবহার করুন।
++ যখন তখন চোখে হাত দিবেন না ও অযথা চোখ ঘষবেন না। ময়লা থেকে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঘষাঘষিতে চোখের নরম ত্বকে বলিরেখা পড়ে।
++ মুলতানি মাটি ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দইয়ের সাথে মিশিয়ে চোখের নিচে লাগালে উপকার পাবেন।
++ তুলসি পাতাবাটা ও চন্দনবাটা গোলাপ পানি দিয়ে মিশিয়ে চোখে লাগান।
++ ঠান্ডা টি-ব্যাগ চোখের পক্ষে আরামদায়ক।
++ ভিটামিন এ এবং ডি যুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। গাজর, বিট, পেঁপে ইত্যাদি পুষ্টিকর শাক-সবজি ও ফল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
++ আধাঘণ্টা নিয়মিত স্কিপিং, জগিং, সাঁতার, হাঁটা, দৌড়ানো যেকোনো ধরনের ব্যায়াম করা খুবই ভালো।
++ সাজগোজের সময় ভালো ব্র্যান্ডের মেকআপ ব্যবহার করা উচিত।

Sunday, October 21, 2012

পাণ্ডু রাজার ঢিবি

0 comments
খুব কমসংখ্যক বাঙালি পাণ্ডু রাজার ঢিবি সম্পর্কে জানেন। তবে অনেক বাঙালিই জানেন সিন্ধু সভ্যতার কথা। প্রাচীন হরপ্পা, মহেঞ্জোদারোর পরিকল্পিত নগরী তাদের অবাক করে। নীলনদকেন্দ্রিক মিসরীয় সভ্যতাও অনেকের অজানা নয়। ব্যবিলনীয়, মেসোপটেমীয়, এসেরীয় সভ্যতা কিংবা প্রাচীন গ্রিক অথবা পারসিক সভ্যতা সম্পর্কেও তারা অনেকে খবর রাখেন। বিশেষ করে শিক্ষিত বাঙালি। সভ্যতা সম্পর্কে এ জ্ঞান তাদের পুলকিত করে। তারা বিস্মিত হন, মানব জাতির অংশ হিসেবে গৌরব বোধ করেন। এরূপ গৌরব করার মতো উপাদানই পাণ্ডু রাজার ঢিবি। যাকে বাংলা ও বাঙালি সভ্যতার স্মারক হিসেবে অভিহিত করা যায়।
নদীকেন্দ্রিক বাংলার বিস্তীর্ণ সমতল ভূ-ভাগ অপেক্ষাকৃত নবীন বলে এসব অঞ্চলে মানব বসতি গড়ে উঠেছে অনেক পরে। তাই সভ্যতার বয়সও এসব অঞ্চলে বেশি নয়। তবে বাংলার উত্তর, উত্তর-পশ্চিম, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের পার্বত্যভূমি এবং নিকটবর্তী অঞ্চলসমূহের ভূ-ভাগ অনেক প্রাচীন বলে এসব স্থানে মানব বসতি গড়ে ওঠে হাজার হাজার বছর আগে। অন্তত নব্য প্রস্তর যুগে স্থায়ী মানব বসতি গড়ে তুলে এসব অঞ্চলে আদি বাঙালিরা যে কৃষি সমাজের বিকাশ ঘটিয়েছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। বিকাশের এ ধারা অব্যাহত ছিল এবং কালক্রমে উন্নতি ঘটেছিল। ক্রমোন্নতির ধারায় তাম্রপ্রস্তর যুগে বাংলার পুরনো ভূমি অঞ্চলের বিভিন্ন নদী উপত্যকায় গড়ে ওঠে সুসভ্য মানব বসতি। বিকাশ ঘটে উন্নত সংস্কৃতির। গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক শহর। ধারণা করা হয় আলোচিত পাণ্ডুু রাজার ঢিবি এবং সংলগ্ন অঞ্চল ঘিরে এমনই এক বাণিজ্যিক শহরের পত্তন ঘটেছিল। বর্তমান পশ্চিম বাংলার বর্ধমান জেলার অজয় নদীর দক্ষিণ তীর ঘেঁষে এ শহর গড়ে ওঠে।
প্রতœতত্ত্ববিদদের নিরলস খনন-প্রয়াসে ১৯৬২ সালে আবিষ্কৃত হয় পাণ্ডু রাজার ঢিবি। ঢিবি ও সংলগ্ন অঞ্চলে আবিষ্কৃত হয় অসংখ্য তাম্রপ্রস্তর যুগের নিদর্শন। এসব নিদর্শন থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগেকার সুসভ্য বাঙালি সংস্কৃতি বা সভ্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ সময়কাল জগদ্বিখ্যাত সিন্ধু সভ্যতার প্রায় সমসাময়িক। তাই বলা যায়, যে সময়ে ভারতের পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে উন্নত ধরনের সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল সে সময়ে বাংলাও পিছিয়ে ছিল না। পাণ্ডু রাজার ঢিবি ও সংলগ্ন অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রতœনিদর্শনসমূহ সাক্ষ্য দেয় চাষাবাদ, পশুপালন, ইট ও পাথরের ভিত্তির ওপর আরামদায়ক গৃহনির্মাণে বাঙালির পারঙ্গমতা ছিল ঈর্ষণীয়। তারা গোলাকার, বর্গাকার এবং আয়তাকার ঘর তৈরিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। পোড়া মাটির টুকরা এবং চুনের আস্তরণে ঘরগুলোর মেঝে পাকা করার কৌশল তারা আবিষ্কার করেছিলেন। নলখাগড়ার সঙ্গে মাটি মিশিয়ে তারা তৈরি করতেন ঘরের পোক্ত বেড়া বা দেয়াল। এরূপ দেয়াল আর খুঁটির ওপর নির্মিত হতো ঘরের ছাদ। শুধু গৃহনির্মাণ নয়, শিল্প ও শিল্পকলার নানা শাখায়ও তাদের উন্নতি ঘটেছিল ব্যাপক। ঢিবিতে প্রাপ্ত নিদর্শন এসব ক্ষেত্রে তাদের পারদর্শিতার প্রমাণ দেয়। একটি নিদর্শন ছিল মাটির পিণ্ডে রেশমি বস্ত্রের ছাপ। একে বস্ত্রশিল্প বিকাশের নিদর্শন হিসেবে পণ্ডিতরা উল্লেখ করেছেন। ঢিবিতে প্রাপ্ত পোড়া মাটির নিদর্শন বিশেষ করে চিত্রশোভিত মাটির পাত্র এবং মাতৃদেবীর প্রতিকৃতি সমসাময়িক বাংলার বিকশিত শিল্পকলার পরিচয়কেই তুলে ধরে।
পাণ্ডু রাজার ঢিবি এবং সংলগ্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক শহর থেকে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এমনকি দূর দেশেও বাণিজ্য পরিচালনা করা হতো বলে পণ্ডিতরা ধারণা করেন। এ ধারণার ভিত্তি তৈরি হয় ঢিবিতে প্রাপ্ত স্টিটাইট পাথরে নির্মিত এক গোলাকৃতি সিল থেকে। সিলটিতে কিছু খোদিত চিহ্ন আছে। যে চিহ্নগুলোকে চিত্রাক্ষর বলে শনাক্ত করা হয়। আর এ চিত্রাক্ষর থেকে বোঝা যায় সিলটি ভূমধ্যসাগরীয় ক্রিট দ্বীপের এবং আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে তা নির্মিত হয়েছিল। এ সিল এবং অনুরূপ আরও কিছু নিদর্শন থেকে অনুমিত হয় মানব সভ্যতার প্রাচীন নিদর্শন ইজিয়ান সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ শহর ক্রিটের সঙ্গে বাংলার বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। পাণ্ডু রাজার ঢিবি এবং সংলগ্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক শহর থেকেই যে বাংলার প্রতিবেশী অঞ্চলে এবং দূর দেশে বাণিজ্য পরিচালনা করা হতো তা এক রকম নিশ্চিত করেই বলা যায়। আমরা জানি, বাণিজ্যে মুদ্রা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, বিনিময়ের মাধ্যম। পাণ্ডু রাজার ঢিবিতে একটি স্বর্ণমুদ্রার ভগ্নাবশেষ পাওয়া যায়। এর এক পীঠে মাছের প্রতীক আঁকা। মুদ্রার এ উপস্থিতি বাংলা অঞ্চলে সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক অর্থনীতির পরিচয় তুলে ধরে। আর এরূপ পরিচয় সূত্রে বলা যায়, আলোচ্য পাণ্ডু রাজার ঢিবি স্পষ্টতই বাংলা ও বাঙালি সভ্যতার স্মারক। জীবনযাপনের ক্রমোন্নতির প্রশ্নে আদি বাঙালিরা সমসাময়িক অপরাপর মানবগোষ্ঠী থেকে কোন ক্ষেত্রেই পিছিয়ে ছিলেন না পাণ্ডু রাজার ঢিবি তারই সাক্ষ্য বহন করে।
লেখক : প্রফেসর ড. এটিএম আতিকুর রহমান, ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
এ সম্পর্কীয় আরেকটি রচনা_
পাণ্ডু রাজার ঢিবি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অজয় নদের তীরে বর্ধমান জেলার পাণ্ডুকে আবিষ্কৃত এ অঞ্চলের প্রথম তাম্র-প্রত্নযুগীয় প্রত্নস্থল। মধ্যপ্রস্তর যুগীয় প্রত্নস্থল বীরভনপুরের প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এর অবস্থান। ১৯৫৪-৫৭ সালের মধ্যে বিবি লাল কর্তৃক উৎখনন পরিচালিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের প্রত্নতাত্তি্বক অধিদফতরের উদ্যোগে ১৯৬২-৬৫ এবং ১৯৮৫ সালে পাণ্ডু রাজার ঢিবিতে কয়েক দফা প্রত্নতাত্তি্বক খনন চলে এবং বাংলার প্রাক-ইতিহাসের তাম্র-প্রত্ন যুগীয় সাংস্কৃতিক পর্যায়ে জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়। পর্যায়ক্রমে এখানে ৭৬টি তাম্র-প্রস্তর যুগীয় প্রত্নস্থল পাওয়া গেছে, যা বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর জেলায় এবং ময়ুরাক্ষী (উত্তর), কোপাই, অজয়, কুনুর, ব্রাহ্মণী, দামোদর, দ্বারকেশ্বর, শীলাবতী এবং রূপনারায়ণ (দক্ষিণ) নদীর আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের তাম্র-প্রত্ন যুগীয় প্রত্নস্থল পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ করে মনে হয়, ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে এক বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নদীতীরে কৃষি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল। যদিও তাম্র-প্রত্ন যুগীয় মানুষ ছিল প্রধানত কৃষিজীবী, তথাপি তারা শিকার অথবা মাছ ধরার কাজ বাদ দেয়নি। তারা কাদার আবরণকৃত দেয়ালবিশিষ্ট গোলাকার ও বর্গাকার সাদামাটা কুঁড়েঘরে বাস করত। ঘরের কোণে উনোন ও জ্বালানি রাখার স্থান নির্ধারিত ছিল। তারা ভাত খেত। সিদ্ধ মাংস, মাছ এবং ফলমূলও তাদের খাদ্য তালিকায় ছিল। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত তাম্র-প্রস্তর যুগীয় প্রত্নস্থলের মধ্যে সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হচ্ছে পাণ্ডু রাজার ঢিবি। ১৯৬২-৮৫ সালের মধ্যে ঢিবিটিতে (২০০ মি-১৭০ মি) পাঁচবার প্রত্নতাত্তি্বক খনন পরিচালিত হয়। ৪৪ মি থেকে ১০৫ মি পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের ৫৩টি ট্রেঞ্চে এ খনন কাজ চলে। ঢিবিটির প্রধান অংশ রাস্তা থেকে ৫ মিটার উঁচু। ১৯৮৫ সালের খননের মাধ্যমে প্রত্নস্থলে ৬টি স্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে। কোনো কোনো ট্রেঞ্চ স্বাভাবিক মাটির স্তর পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ তাম্র-প্রস্তর যুগীয় প্রত্নস্থলের মতো এখানেও দুটি প্রধান পর্ব বা স্তর রয়েছে : (ক) তাম্র-প্রস্তর যুগের পর্ব (খ) লৌগযুগের পর্ব। তাম্র-প্রস্তর যুগের পর্ব আবার মোটামুটিভাবে দু'ভাগে বিভক্ত। একটি ধাতুযুগের পূর্ববর্তী পর্ব এবং অপরটি লৌহযুগের পর্ব। পশ্চিমবঙ্গে তাম্র-প্রস্তর যুগ অব্যাহত ছিল সম্ভবত ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দপূর্ব পর্যন্ত। পাণ্ডুরাজার ঢিবি প্রত্নস্থলের গোচরে আসার ৬টি স্তরের প্রথম দুটি তাম্রপ্রস্তর যুগীয়। প্রথম পর্বের একেবারে নিচ থেকে অভ্যন্তরে তুষের দাগ বিশিষ্ট হাতে তৈরি ধূসর ও ফ্যাকাসে লাল রঙের মৃৎ শিল্পের টুকরো এবং মানুষের সমাধিস্থলের অংশবিশেষ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ওপরের দিকে পাওয়া গেছে সাধারণ কালো, লাল ধূসর এবং অনুজ্জ্বল সিরামিক। এ স্তর থেকে মধ্যযুগীয় কিছু ছুরি ও ফলা পাওয়া গেছে। কিন্তু কোনো প্রকার তাম্র সামগ্রী পাওয়া যায়নি। তাই প্রথম পর্বের এ অংশটুকু ধাতু যুগের পূর্ববর্তী পর্যায়ের। দ্বিতীয় পর্বটি সম্পূর্ণভাবে তাম্র-প্রস্তর যুগীয় সংস্কৃতির নির্দেশক। এ স্তরে লাল, কালো ছোপাঙ্কিত লাল, সাদা ছোপাঙ্কিত লাল, কালো ও লাল মেশানো (ভেতর দিক সাদামাটা কিংবা ক্রিম অথবা সাদা রঙে রঞ্জিত) ক্রিম রঙের কাদামাটির প্রলেপযুক্ত এবং ধূসর মৃৎ পাত্রের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সিরামিক পাওয়া গেছে। 

জাপানি সবুজ চায়ের কথা

0 comments
‘ওচা ওয়া য়োওজোও নো ছেনইয়াকু, এনরেই নো মিয়োজুৎসু’ বলে একটি প্রবাদ ছিল কামাকুরা যুগে (১১৮৫-১৩৩৩)। এর অর্থ হল : ‘ওচা স্বাস্থ্য রক্ষার্থে মহাষৌধ এবং দীর্ঘায়ু হওয়ার জাদুকরী কৌশল।’ তখনকার আমলে জাপানে ওচা ওষুধ হিসেবে পান করা হতো। জেন বৌদ্ধধর্ম অনুসারে আধ্যাত্মিক মনোযোগ স্থাপনে এ ওচা বিশেষ ভূমিকা রাখত বলে অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতো। অবশ্য তখন এটা একমাত্র সমাজের অভিজাত শ্রেণীর জন্য পানীয় বস্তু হিসেবে নির্ধারিত ছিল।
যুগের পালাবদলে এদো যুগে (১৬০৩-১৮৬৮) এসে ওচাকে কেন্দ্র করে জš§ নিল প্রিয়জন সমাবেশ। তখন কৃষিকাজের ক্লান্তি দূর করার এবং খিদের অনুভূতিকে ভিন্ন দিকে ফিরিয়ে রাখার পন্থা হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ওচা পানের সুযোগ সৃষ্টি হল। এর শতাধিক বর্ষ পরে গবেষণার মাধ্যমে জানা গেল যে, ওচার মধ্যে বেশি পরিমাণে আছে অ্যামিনো ও গ্লুমাটিক এসিড উপাদান, যা কিনা মানুষের মানসিক স্বস্তিবিধায়ক এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধে সহায়ক। শুধু তাই নয়, জাপানি ওচা>রোকুচা>গ্রিন টি>সবুজ চা পাতার মধ্যে রয়েছে আরও নানা ধরনের উপাদান, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপাদেয়। তাই জাপানে ওচা সংস্কৃতি আজ অপরিহার্য এক অনুষঙ্গ, যা এখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। এই ওচা সংস্কৃতিকে জাপানি ভাষায় বলে ‘ওচা আসোবি’ বা ‘চা নো ওইউ’ অর্থাৎ ‘চা-সঙ্গ’ আরও সহজ করে বললে ‘চায়ের আড্ডা।’ জাপানি এই ওচা আদৌ রং চা নয়, যা বিলেতে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ‘টি’ হিসেবে প্রচলিত। জাপানে ‘টি’কে ‘কোওচা’ বলে, যার অর্থ ‘লাল চা।’
জাপানি ওচাকে একটি শৈল্পিক রীতিতে রূপদান করা হয়েছে কামাকুরা যুগেই যাকে বলা হয় ‘চাদোও’ বা ‘শাদোও’; ইংরেজিতে ওয়ে অফ টি। সুঐতিহ্যবাহী এই চা-রীতিকে বিশ্বে প্রথম পরিচিত করান জাপানের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কলাশিল্পের পণ্ডিত ও দার্শনিক ওকাকুরা (কাকুজো) তেনশিন (১৮৬৩-১৯১৩) ইংরেজিতে দি বুক অফ টি নামে একটি নাতিদীর্ঘ গ্রন্থ লিখে।
দি বুক অফ টি পড়লে বোঝা যায় চা-অনুষ্ঠানটিকে কীভাবে জাপানিরা চীন থেকে আমদানি করে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। এ চা-রীতিটিই একটি পূর্ণাঙ্গ দর্শন, যা কিনা পাশ্চাত্য সভ্যতার চেয়েও বহুলাংশে অগ্রসর; শুধু তাই নয়, মানবতাবাদ, আন্তর্জাতিকতাবাদ ও সর্বজনীন শান্তিবাদেরও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল একটি পন্থা। এই চা-অনুষ্ঠান দীর্ঘ সময় নিয়ে নানা আচার-আচরণ দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেমন ‘তাতামি’ তথা বিশেষ খড় দিয়ে তৈরি মেঝেতে হাঁটু মুড়ে নিঃশব্দে বসার ভঙ্গি, কয়েকবার ঘুরিয়ে চা পাত্র হাতে নেয়া ও চা পানের পদ্ধতি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম সাধারণ ওচা পান করার থেকে। চাদোও অনুষ্ঠিত হয় কাঠ, বাঁশ ও বুনোছন দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি একটি কক্ষে যাকে বলে ‘চা-শিৎসু’ বা ‘চা-কক্ষ’। অবশ্য হেমন্তকালীন উৎসব ‘কোওয়োও মাৎসুরি’, বসন্তকালীন উৎসব ‘হানামি’এবং অন্যান্য জাতীয় দিবস, উৎসব-মেলা উপলক্ষে উদ্যানেও চাদোও অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ অনুষ্ঠানে ব্যবহƒত কাঠের তৈরি চা পাতার কৌটো, চীনা মাটি বা লোহার চা-পট যাকে বলে ‘কিউসু’, বাঁশের চামচ, বাঁশের ব্রাশ, পোড়া মাটির খাড়া চা-পাত্র ইত্যাদি ‘চা-দোওগু’ বা ‘চা-সরঞ্জাম’ নামে পরিচিত। এসবের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক নির্যাস ও সুগন্ধসার। এ জন্য চা-দোও জাপানের অন্যতম ‘লিভিং আর্ট।’ এই চা-অনুষ্ঠানে ব্যবহƒত হয় ‘মাচ্চা’ নামে ‘রোকু চা’রই একটি প্রজাতির গুঁড়ো চা, যার রং সফেদ ঘন সবুজ। স্বাদ কষজাতীয় কিন্তু সুরভিযুক্ত। কিয়োতো মহানগরে প্রচুর সুসজ্জিত ওচার দোকান আছে। টোকিওতেও আধুনিক ওচার দোকান উš§ুক্ত হয়ে চলেছে। জাপানের সর্বত্র পর্যটন কেন্দ্রে প্যাকেট ও কৌটোভরা পাতা ও গুঁড়ো ওচা বিক্রি হয়। মধ্যযুগ থেকে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত সরকারি পতিতাপল্লী ‘য়োশিওয়ারা’, ‘শিনমাচি’, ‘শিমাবারা’ প্রভৃতিতে ‘ওচাইয়া’ তথা ‘ওচার দোকান’ বিশেষ ভূমিকা রেখেছে ‘ওইরান’ বা ‘পতিতা’ ও খদ্দেরের মধ্যে দরকষাকষির ক্ষেত্রে। ওচার ব্যবসা পরিচালনা করতেন ‘গেইশা’রা। এখনও জাপানের প্রায় ৬০টি ‘গেইশা মাচি’ বা ‘গেইশা পাড়া’য় ওচার দোকান বিদ্যমান। জাপানব্যাপী চাদোওর প্রতিষ্ঠানও বিদ্যমান।
কামাকুরা যুগের মাঝামাঝি এসে একজন চা মাস্টার জেন্ পুরোহিত মুরাতা জুকোও (১৪২২-১৫০২) চা সমাবেশে জুয়া খেলা এবং মদ পান করা নিষিদ্ধ করেন। চা মাস্টার এবং অতিথিদের মধ্যে বাহ্যিক আনন্দ-বিনোদনের চেয়ে যদি আধ্যাÍিক ভাববিনিময় করা যায় সেটা যেমন হবে নান্দনিক তেমনি হবে শান্তিদায়কÑ এ রকম ব্যাখ্যা করে তাদের বোঝাতে সক্ষম হন। আর তখন থেকেই জাপানি নন্দনতত্ত্বের পরিভাষা ‘ওয়াবি-সাবি’ তথা ‘প্রকৃতির নিঃশব্দতা, একাকিত্ব এবং ক্ষণস্থায়িত্ব’ সম্পর্কে মানুষের যে অদৃশ্য গভীর অনুভূতি তার জš§ হয় চা মাস্টার মুরাতার এই চা সমাবেশ থেকেই। তিনিই প্রথম চা সমাবেশকে চা-অনুষ্ঠানের রীতি তথা চাদোও বা শাদোও-তে রূপান্তরিত করেন। তিনিই চাদোওর জনক।
জাপানের চাদোও এতই মর্যাদাসম্পন্ন যে বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রসমূহের প্রধান, জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা কিয়োতো মহানগরে আসেন উরা ছেনকে ঘরানার চাদোওর সবুজ চায়ের স্বাদ গ্রহণ করার জন্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও টোকিওতে বিখ্যাত আসাহিশিম্বুন পত্রিকার মালিক রিউহেই মুরায়ামার বাসভবনে একবার চাদোওর অতিথি হয়েছিলেন। বর্তমানে ছেন্ বংশের চা মাস্টার হচ্ছেন ছেন্ গেনশিৎসু। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন তিনি চাদোও সম্পর্কে বক্তৃতা দিচ্ছেন, আয়োজন করছেন চা-অনুষ্ঠানের।
চাদোওর এই সবুজ চা নানা কারণেই স্বাস্থ্যকর বিশেষ করে ক্যান্সার, হƒদরোগ, রক্তচাপ, বায়ুচড়া, দৈহিক দুর্বলতা, বহুমূত্র রোগ প্রভৃতি প্রতিরোধক। এখন অবশ্য নানা ধরনের চা পাতা উৎপাদিত হচ্ছে যেমন গিয়োকুরো চা, কাবুছে চা, ছেন চা, ফুকামুশি চা, বান চা, কামাইরি চা, তামারোকু চা, কুকি চা, মে চা, মাচ্চা চা, হোওজি চা, আরা চা, শিন চা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এসব চায়ের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পিঠা, কেক, আচার, সেনবেই (চাল থেকে প্রস্তুত এক ধরনের বিস্কুট বিশেষ যা খুবই জনপ্রিয়) প্রভৃতির সঙ্গে ওচা পান করাই সাধারণ রীতি। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত ওচা জাপানিদের একবার না একবার পান করা চাই-ই। বাসাবাড়িতে তো বটেই, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, অফিস, আদালত, মন্দির সর্বত্রই প্রথমে ওচা দিয়ে অতিথিবরণ করা হয়। আবার খাওয়া-দাওয়ার পর ওচা পরিবেশন করাও জাপানি রীতি। এখন প্লাস্টিক বোতল এবং টিনের ক্যান্জাতীয় ওচা সর্বত্র ভেন্ডিং মেশিনে কিনতে পাওয়া যায়। একাধিক পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করে থাকে নানা ধরনের ওচা। বয়স্কদের হাতব্যাগে ওচার বোতল থাকবেই। ‘ওচাৎসুকে’ নামক এক ধরনের খাবার অত্যন্ত জনপ্রিয়। চীনামাটির বাটিতে গরম ভাত ও সালমন মাছের শুকনো গুঁড়োর সঙ্গে মেশানো সামুদ্রিক শ্যাওলা ‘নোরি’র শুকনো পাতার কুচি প্যাকেট থেকে খুলে ছড়িয়ে দেয়ার পর গরম ওচা তাতে ছেড়ে দিতে হয় বাটি পূর্ণ করে। মিনিট তিনেক রাখার পর কাঠি দিয়ে নাড়া দিয়ে স্যুপের মতো খাওয়ার এই খাদ্যটি আবালবৃদ্ধবণিতা সবারই প্রিয়। সাম্প্রতিককালে আইসক্রিম এবং কেক জাতীয় খাবারেও ওচার স্বাদ সংযুক্ত হয়েছে। কাজেই ওচা বা রোকুচা অর্থাৎ সবুজ চা আর জাপান সমার্থক। ঐতিহ্যবাহী চাদোও হচ্ছে জাপানি সংস্কৃতির অহঙ্কার।

লেখক : প্রবীর বিকাশ সরকার, গবেষক ও মাসিক কিশোরচিত্র সম্পাদক

Wednesday, October 17, 2012

অর্কিড পর্যটন প্রকল্প, শেরপুর

0 comments
প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি করতে ক্লান্ত মন কখনো কখনো শান্তির জন্য অধীর হয়ে ওঠে। তখন মনে হয় একটু প্রশান্তি প্রয়োজন। সকল ব্যস্ততা ফেলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে ইচ্ছে হয়। প্রকৃতির সঙ্গে মিতালী এবং মনের প্রশান্তির এক অপূর্ব সুযোগ শেরপুরের অর্কিড পর্যটন প্রকল্প।

শেরপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজহার আলী। মনের মাধুরী মিশিয়ে অর্থ, মেধা আর শ্রম দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন অর্কিড পর্যটন প্রকল্প। এর ফলে অর্কিড ঘিরে প্রকৃতির সঙ্গে মিতালী করার এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পুরো অর্কিড পর্যটন কেন্দ্রটি যেন শিল্পীর তুলির ছোয়ায় আঁকা গভীর চিন্তার এক শিল্পকর্ম।

নয়নাভিরাম এ পর্যটন কেন্দ্রটি তৈরি করতে সময় লেগেছে দুই যুগ। কত টাকা লেগেছে তার হিসাব নেই আজাহার আলীর কাছে।

অর্কিট পর্যটন প্রকল্পের শোভা বর্ধণে  চারিদিকে লাগানো হয়েছে সারি সারি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, মাঠ জুড়ে রয়েছে মেশিনে কাঁটা একই মাপের বিশেষ সবুজ ঘাস, চোখ ধাঁধানো নির্মল স্বচ্ছ পানির পুকুর আর শান বাঁধানো জমিদারি পুকুর ঘাট। পুকুরের চারপাশে মাছ শিকারে আসে সাদা বক। সবুজের ওই অর্কিডের খাঁচা থেকে আনন্দ দেয় বানর, টার্কিস, খরগোশসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং জীবজন্তু। সারা অর্কিড জুড়ে নানা প্রজাতির বাহারি থোকা থোকা ফুল অপেক্ষায় আছে দর্শনার্থীদের নির্মল আনন্দ বিলিয়ে দেওয়ার জন্য।

অর্কিডে হাটার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সরু রাস্তা। আর রাস্তাগুলোতে ইটের উপর মনের মাধুরি মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে রং। সব মিলিয়ে এ যেন এক স্বপ্নপুরী!

প্রিয়জন অথবা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় ছাতা এবং বসার জন্য চেয়ার। চা, কফি ও কোমল পানীয় পানের জন্য রয়েছে ছনের তৈরি ব্যতিক্রমী সুদৃশ্য ক্যান্টিন এবং রেস্ট হাউজ। এ যেন ইট বালুর যান্ত্রিক শহরের মধ্যে মন খুলে আনন্দ করার এক লীলাভূমি। পরিবার-পরিজন বা  প্রিয়জন নিয়ে বেড়ানো ও প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি করার বা শহুরে জীবনের একঘেঁয়েমি কাটাতে চমৎকার একটি বিনোদন কেন্দ্র।

শেরপুর পৌর এলাকার শেরপুর-ঝিনাইগাতী ফিডার রোড সংলগ্ন কান্দাপাড়া এলাকায় ১৯৮৮ সাল থেকে আজাহার আলী তার ধানের ক্ষেতের পাশেই প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জমির উপর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নানা জাতের দেশি-বিদেশি বনজ ও ফলজ গাছ রোপন করে গড়ে তোলেন ‘অর্কিড’ বাগান। সে সময় ওই স্থানটি ‘কলা বাগান’ হিসেবে বেশ পরিচিত লাভ করেছিল।

এরপর নানা প্রতিকূলতায় ওই বাগানের সৌন্দর্য হারায়। এরপর ২০০৮ সাল থেকে তিনি আবার তার স্বপ্নের অর্কিড বাগান সংস্কারে মনোযোগ দেন। ব্যয় করেন প্রচুর অর্থ। নানা অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে নতুন করে গড়ে তোলেন ‘অর্কিড পর্যটন প্রকল্প’।

এই পর্যটন প্রকল্পে প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ২০ টাকা। প্রতিদিন বহু পর্যটক, প্রেমিক যুগল এবং  বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসে শহরবাসী। জেলার বাইরে থেকেও প্রতিদিন প্রচুর লোক আসে এ অর্কিড প্রকল্পে। বিশেষ করে ছুটির দিনে বেড়াতে আসা লোকজনের ভীড় থাকে বেশি।

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো অনুষ্ঠান করতে দিনব্যাপী ভাড়া নিতে চাইলে বুকিং দিতে পারবে ৫ হাজার টাকায়। আপাতত রাত যাপনের কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও ভবিষ্যতে এখানে বাংলোসহ ভ্রমণবিলাসী ও বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য নানা সুযোগ-সবিধা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান অর্কিড মালিক আজাহার আলী।

বর্তমানে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অর্কিডে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সন্ধ্যার পর কোনো দর্শনার্থীকে ভেতরে থাকতে দেওয়া হয় না। অর্কিডে রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

আজহার আলী জানান, ব্যবসায়িক কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে অর্কিড প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। আমার বাবা ছিলেন একজন প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ। বাবার স্মৃতি ধরে রাখার জন্যই আমি এটি করেছি। এখানে সাধারণ মানুষ ছাড়াও উচ্চ পর্যায়ের সরকারি আমলা, প্রতিরক্ষা ও বিচার বিভাগের লোকজন বেড়াতে আসে। মানুষকে শুধু আনন্দ দেওয়ার জন্যই আমি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে অর্কিড প্রতিষ্ঠা করেছি। অর্কিডের পাশে আমার আরও ৪ একর জায়গা রয়েছে। ইচ্ছা ছিল পুরো জমিতেই আমার স্বপ্নের অর্কিড নির্মাণ করবো। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় সেটা সম্ভব হয়নি। আমি জীবিত থাকতেই অর্কিডে অসহায় মানুষের জন্য একটি চিকিৎসা কেন্দ্র করবো, আমার  ডাক্তার মেয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবে। সেই সাথে একটি ব্যতিক্রমধর্মী লাইব্রেরী করারও ইচ্ছা আছে।

অর্কিডের অদূরেই রয়েছে মধুটিলা ও গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র। শেরপুরে পর্যটকদের জন্য বিশেষ কোনো আবাসনের ব্যবস্থা নেই। পর্যটকদের জন্য আবাসনের জন্য রিসোর্ট করার চিন্তাও রয়েছে । আমার অবর্তমানে অর্কিডের আয় থেকে একটি অংশ মানুষের কল্যাণে ব্যয় হবে এমন একটি দলিল করা যাবো বলে প্রকৃতি প্রেমিক আজহার আলী জানান।

আজহার আলী আক্ষেপ করে বলেন, অর্কিড নির্মাণ করতে গিয়ে পারিবারিকভাবে অনেক অশান্তি এবং প্রশাসনিকভাবে অযথা নির্যাতনেরও শিকার হয়েছি। এ কাজ করতে গিয়ে ব্যবসায় মন না থাকার কারণে লোকসানও হয়েছে বেশ। তবে কোনো প্রতিবন্ধকতাই আমাকে দমাতে পারে নি।

তিনি আরো বলেন, বারবার অকৃত্রিম টানে ছুটে গেছি অর্কিডে। অর্কিডের প্রতিটি উপকরণের সঙ্গে গড়ে উঠেছে নিবিড় বন্ধুত্ব। কোথাও সমস্যা হলে খাওয়াদাওয়া, ঘুম কিছুই হয় না, সেটা সমাধান না করা পর্যন্ত।

মাসুদ হাসান বাদল, শেরপুর

Tuesday, October 16, 2012

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, সিলেট

0 comments
সিলেট শহরের পাশেই বাংলাদেশের নবীনতম জাতীয় উদ্যান খাদিমনগর। শহর সিলেট ছেড়ে জাফলং তামাবিল সড়কের খাদিম নগরে হাতের বাঁ বড়জান আর খাদিমনগর চা বাগানের দিকে চলে যাওয়া সড়কটির ঠাঁই মেলেছে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে। চা বাগানের ভেতর দিয়ে চলতে চলতে জঙ্গলের ঘনত্বই জানান দেবে তার আপন পরিচয়। সিলেট শহর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার।
বাংলাদেশের যে কয়টি সংরক্ষিত বনাঞ্চল আছে তার মধ্যে খাদিমনগর নবীনতম। ২০০৬ সালে এটি জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্কের মর্যাদা পায়। এর আয়তন প্রায় ৬৭৮ হেক্টর। তবে সর্বপ্রথম ১৯৫৭ সালে এই বনকে রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করা হয়েছিল। জানা যায়, সে সময়ে বাঁশবন পরিষ্কার করে এখানে বনায়ন করা হয়েছিল। প্রায়-পাতাঝরা উষ্ণ মণ্ডলীয় চিরসবুজ এই বন দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ, লতাগুল্ম, পাখি আর বন্য প্রাণীদের অভয়াশ্রম। এ বনে বসবাসকারী বন্যপ্রাণীদের আছে ২৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৯ প্রজাতির উভচর, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ২৫ প্রজাতির পাখি।
খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের এসব স্তন্যপায়ী প্রাণীদের উল্লেখযোগ্য হলো মুখপোড়া হনুমান, বানর, বনবিড়াল, ভল্লুক, মায়া হরিণ, লজ্জাবতী বানর, বনরুই, খাটাশ, সজারু, সাদা বুক-কাঠবিড়ালি, খরগোশ, মালায়ান বৃহত্ কাঠবিড়ালি, বাদুর প্রভৃতি। সরীসৃপের মধ্যে আছে বিভিন্ন জাতের সাপ, অজগর, গুইসাপ, উড়ুক্কু লিজার্ড, বেজি ইত্যাদি। এ ছাড়া নানান পাখপাখালির কলকাকলিতে সবসময় মুখরিত থাকে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান। হলুদ পা হরিয়াল, পাকড়া ধনেশ, বড় র্যাকেট টেইল ফিঙ্গে, লালপিঠ ফুলঝুরি, বেগুনি মৌটুসি, মদনা টিয়া, কালা মথুরা, বাসন্তী লটকন টিয়া, মালয়ি নিশি বক ইত্যাদি। বনের গাছগাছালির মধ্যে রয়েছে চাঁপালিশ, কদম, জলকড়ই, কড়ই, গর্জন, সিভেট, বাঁশ, মুলিবাঁশ, বুনো সুপারি, ট্রি-ফার্ন ইত্যাদি।
খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের ভেতরে ঘন জঙ্গলের ভেতরে চমত্কার দুটি ট্রেইলে গা ছম ছম করা পরিবেশের মধ্যে হেঁটে বেড়াতে পারেন। বনের ভেতরে জঙ্গলের ঘনত্ব কোথাও কোথাও এতো বেশি, সূর্যের আলো পর্যন্ত মাটি ছুঁতে পারে না। দুটি ট্রেইলের মধ্যে একটি ৪৫ মিনিটের, অন্যটি দুই ঘণ্টার। ৪৫ মিনিটের ট্রেইলটির শুরু সড়কের খাদিমনগর চা বাগান থেকে চলে আসা সড়কটির কালিবাড়িতে আবুলের টিলাকে বাঁয়ে রেখে শুরু হয়েছে। এ পথে শীতল জলের পাহাড়ি ছড়া আছে। এ পথে বিভিন্ন রকম বনফুল, ঘন বাঁশবন আছে। নিরবতা অবলম্বন করলে নানান দুর্লভ বন্যপ্রাণী আর পাখির দেখা মিলতে পারে এ পথে। ঘুরে ফিরে এসে এ পথটির শেষ হয়েছে বিট অফিসের আগে প্রদান সড়কের সঙ্গেই। 
দুই ঘণ্টার ট্রেইলটির শুরু বিট অফিসের পাশ থেকে। শুরুতেই ছড়ার উপর থেকে বাঁশের সেতু পেরিয়ে হাঁটা শুরু করতে হবে। বিট অফিসকে হাতের ডানে রেখে বাঁয়ের সরু পথ ধরে চলতে হবে। এ পথে জোয়ালনালা, জলকণা, জিয়ানা, সাধুনালা নামের চারটি পাহাড়ি ছড়া পড়বে। এ পথে আছে ঘন বাঁশবন। নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে চলতে এ পথের শেষ হয়েছে আবার প্রধান সড়কে এসে। এ পথেও দেখা মিলতে পারে নানান বন্যপ্রাণী আর পাখির।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে সিলেট শহরে। সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট আসতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকেও সিলেটে আসা যায়। ঢাকা থেকে গ্রিন লাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহনের এসি বাস যায় সিলেটে। ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর, সায়দাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সৌদিয়া, মামুন পরিবহন, সিলকম পরিবহন ইত্যাদি সংস্থার নন-এসি বাসও সিলেটে যায়। ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া ৯৫ টাকা-৬৯৮ টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টায় যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টায় উদয়ন এক্সপ্রেস। সিলেট শহর থেকে কার, মাইক্রো বাস, কিংবা অটোরিকশায় খাদিমনগর জাতীয় ্উদ্যানে আসতে সময় লাগবে ত্রিশ মিনিটের মতো।
কোথায় থাকবেন
সিলেট শহরে রাতে অবস্থান করার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। তবে এ ভ্রমণে উদ্যানের একেবারে কাছাকাছি অবস্থান করার জন্য আছে শুকতারা প্রকৃতি নিবাস। পাহাড় চূড়ায় চমত্কার আর আধুনিক কটেজ আছে শুকতারায়। শুকতারার কক্ষ ভাড়া ৫০০০-৬৫০০ টাকা। তবে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিনে এ মূল্যের উপরে মিলবে ১০ ভাগ ছাড়। যোগাযোগ :শুকতারা প্রকৃতি নিবাস, উদ্দীনের টিলা, শাহপরাণ উপশহর, খাদিমনগর সিলেট। ফোন :০৮২১-২৮৭০৯৯৪-৫, ০১৭৬৪-৫৪৩৫৩৫। www.shuktararesort.com
কী করবেন
জঙ্গলে ভ্রমণে সবসময় হালকা কাপড় ও জুতা এবং কেমোফ্লাজ রঙের কাপড় পরিধান করবেন। রোদ চশমা, রোদ টুপি, ছাতা, পানির বোতল, সঙ্গে নেবেন। বর্ষায় ভ্রমণে গেলে অবশ্যই রেইনকোট কিংবা পঞ্চ সঙ্গে নিন। পোকা মাকড় ও মশার হাত থেকে বাঁচতে পতঙ্গ নাশক ক্রিম সঙ্গে নিন। জোঁকের হাত থেকে বাঁচতে মোজার মধ্যে প্যান্ট গুঁজে নিন। দূরের বন্যপ্রাণী ও পাখি দেখতে দূরবীন নিতে পারেন। জঙ্গলে ভ্রমণকালীন সর্বোচ্চ নিরবতা অবলম্বন করুন। প্লাস্টিক জাতীয় প্যাকেট, বোতল, ক্যান সঙ্গে এনে বাইরে কোথাও ফেলুন।  
কী করবেন না
পিকনিক করতে জঙ্গলে যাবেন না। ভ্রমণে উচ্চ শব্দে মাইকে গান কিংবা কোনো কিছু বাজাবেন না। বন্যপ্রাণীরা বিরক্ত হয় এমন কোনো শব্দ কিংবা আওয়াজ করবেন না। ময়লা, প্লাস্টিক জাতীয় কোনো কিছু জঙ্গলে ফেলবেন না। বনে ধূমপান করবেন না। 
প্রয়োজনীয় তথ্য
খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে একাকী ভ্রমণ না করাই ভালো। দলবদ্ধভাবে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই অভিজ্ঞ গাইড সঙ্গে নেওয়া ভালো। তাতে জঙ্গলে ভ্রমণ এবং বন্যপ্রাণী দর্শন সহজ হবে। খাদিমনগর উদ্যানে নিসর্গ প্রশিক্ষিত কয়েকজন গাইড আছেন। নির্ধারিত সম্মানীর বিনিময়ে এসব গাইডের সেবা নেওয়া যাবে। কয়েকজন গাইডের মুঠোফোন নম্বর :শ্রী গোপাল পাত্র ০১৭৩৯১৭১৫৮৭, এমরান আলী তালুকদার ০১৭২৫১০৮৯৫৯, নাদিম হোসেন ০১৭১৭৫৬৬৬৯৬, বিলাস ব্যানার্জী ০১৭২৮৯৬৮২৭৯, কামরুল ইসলাম ০১৭১২৩২৮৭৫৮, হোসেন আলী ০১৭২২২২৮৩১৯, রিন্টু চাষা ০১৯১২৮৭৫৭০৮, স্বরস্বতী পাত্র ০১৭৩৯১৭১৫৮৭।

আলোকচিত্র ও লেখা  মুস্তাফিজ মামুন  |  ইত্তেফাক

Monday, October 15, 2012

ব্রণ ও ব্রণের দাগ যেভাবে দূর করা সম্ভব

0 comments
আমাদের ত্বকের তৈল গ্রন্থি ব্যাটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে এর আকৃতি বৃদ্ধি পায় তখন এর ভিতরে পুঁজ জমা হতে থাকে, যা ধীরে ধীরে বর্ন পরিবর্তন করেব্রণের আকার ধারণ করে। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বংশগত। ব্রণকে
অনেকেই pimple, zit বা spot বলে থাকে।

সাধারণত টিনেজাররাই ব্রণের সমস্যায় বেশি ভোগে।বাজারে ব্রণ দূর করার জন্য নানারকম কসমেটিক্স/ঔষধ পাওয়া যায়।সেগুলো ব্যবহার করারআগে নিচের ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো অনুসরন করতে পারেন।
ঘরোয়া পদ্ধতি্তে ব্রণ এবং ব্রণেরদাগ দুর করার কিছু সহজ উপায়ঃ

১। কাঁচা হলুদ এবং চন্দনকাঠের গুঁড়ো ব্রণের জন্য খুবই কার্যকর দুটো উপাদান। সমপরিমাণ বাটা কাঁচা হলুদ এবংচন্দন কাঠের গুঁড়ো একত্রে নিয়ে এতে পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করতে হবে।মিশ্রণটি এরপর ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষন পর শুকিয়ে গেলে মুখঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

এই মিশ্রণটি শুধুমাত্র ব্রণদূর করার কাজ করে না বরং ব্রণের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।

২।আপেল এবং মুধ এর মিশ্রণহচ্ছে ব্রণের দাগ দূর করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি। প্রথমে আপেলের পেষ্ট তৈরিকরে তাতে ৪-৬ ফোঁটা মধু মিশাতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করেএরপর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখেএবং কমপ্লেকশন হালকা করে।সপ্তাহে ৫-৬ বার এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনিকয়েকদিনের মধ্যে পরিবর্তনটা অনুভব করতে পারবেন।

৩।ব্রণের জন্য তুলসি পাতাররস খুব উপকারী।কারণ তুলসি পাতায় আছে আয়ূরবেদিক গুণ।শুধুমাত্র তুলসি পাতার রস ব্রণআক্রান্ত অংশে লাগিয়ে রেখে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।এরপর কুসুম গরমপানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

৪।প্রথমে চন্দন কাঠের গুড়োঁরসাথে গোলাপ জল মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করুন। এরপর এতে ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস মিশাণ। গোলাপজল অনেকের ত্বকের সাথে এডজাষ্ট হয় না।তারা সেইক্ষেত্রে গোলাপ জলের পরিবর্তে মুধব্যবহার করতে পারেন।এই পেষ্ট আপনার ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।সপ্তাহে ৩-৪দিন ব্যবহার করতে পারলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।

৫।এছাড়া রাতে শোয়ার আগেডিমের সাদা অংশ ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় মেসেজ করে সারারাত রাখতে পারেন।এটি আপনারত্বকের খসখসে ভাব দূর করে।সবচেয়ে ভাল হয় যদি এর সাথে লেবুর রস যোগ করা যায়।আপনিএটি সারারাতও রাখতে পারেন আবার আধ ঘন্টা পরও ধুয়ে ফেলতে পারেন।

৬।প্রতিদিন ৯-১০ গ্লাস পানিখান।

৭।প্রতিদিন রাতের খাবারের পরযেকোন ধরনের মৌসুমি ফল খান। এটি আপনার ত্বককে সতেজ রাখবে।যতটা সম্ভব তেলযুক্ত বাফাষ্ট ফুড জাতীয় খাবার পরিহার করুন।

৮।সবসময় বাহির থেকে আসামাত্র মুখ ফেসওয়াস দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া হালকা গরম পানির স্টীম নিতে পারেন।এতেকরে ত্বকে জমে থাকা ধুলোবালি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

যারা বহুদিন যাবত ব্রণসমস্যায় ভুগছেন,কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না,তারা আর দেরি না করে কোন অভিজ্ঞডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

Thursday, October 11, 2012

মানসিক চাপ

0 comments

মানসিক চাপ কী ও কেন?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হূদেরাগ, ক্যানসার, স্ট্রোক, মানসিক রোগ ইত্যাদি অসংক্রামক ব্যাধি দ্রুত ও আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে সারা পৃথিবীতে। এই বৃদ্ধির হার আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনেক বেশি। এর একটি প্রধান কারণ হচ্ছে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। স্ট্রেস হচ্ছে, বিজ্ঞানীদের ভাষায়, যেকোনো চ্যালেঞ্জের বিপরীতে মানুষের এক স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া। আমাদের মস্তিষ্ক যে মুহূর্তে কোনো বিপদ বা দুশ্চিন্তার কারণ টের পায়, অমনি তার বিশেষ এলাকাসমূহ সচল হয়ে ওঠে, নানা ধরনের হরমোন ও রাসায়নিক পদার্থ দ্রুত নিঃসৃত হয়ে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তাকে সচকিত করে দিতে থাকে। একটা সীমারেখা পর্যন্ত এই জিনিসটা মন্দ নয়, বরং নিত্যনতুন সমস্যা মোকাবিলায় এই ব্যাপারটা আপনাকে সামনে এগোনোর প্রেরণা জুগিয়ে যেতে পারে, কিন্তু সীমা অতিক্রম করলেই বিপদ। চিকিৎসকেরা বলেন, অত্যধিক ও দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ মানুষের শরীর, মন এবং আচরণ—এই তিনটি জায়গায় আঘাত করতে পারে। শারীরিক যেসব সমস্যা আপনি অনুভব করতে পারেন সেগুলো হচ্ছে—মাথাব্যথা, গায়ে ব্যথা বা মাংসপেশিতে ব্যথা, ক্লান্তি বোধ করা, বুকে ব্যথা বা চাপ বোধ, বদ হজম, ঘুমের সমস্যা ও যৌন জীবনে সমস্যা। মুড বা চিন্তার যেসব সমস্যা দেখা দেয়, তার মধ্যে দুশ্চিন্তা, বিরক্তি, ক্রোধ, অস্থিরতা, প্রেষণার অভাব, বিষাদ ইত্যাদি অন্যতম। বিভিন্ন আচরণগত সমস্যাও দেখা দেয় এই স্ট্রেসের কারণে, যেমন—বেশি খাওয়া বা খুব কম খাওয়া, স্বাদহীনতা, যখন তখন রাগে ফেটে পড়া, অমনোযোগ, ধূমপান, অ্যালকোহল বা ড্রাগে আসক্তি, ঘুমের বড়ি খাওয়ার অভ্যাস ইত্যাদি।

চাপ মোকাবিলার উপায়

আজকের এই দুনিয়ায় মানসিক চাপ বা স্ট্রেসকে এড়িয়ে চলার উপায় নেই। কিন্তু সুস্থ থাকতে হলে জানা থাকতে হবে কীভাবে এই নিত্যদিনের চাপ মোকাবিলা করবেন। এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ওয়াজিউল আলম চৌধুরীর পরামর্শ হলো—মানসিক চাপ মোকাবিলায় এবং মানিয়ে নিতে যেকোনো মানুষের মধ্যে ইতিবাচকতা বা পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা জরুরি। সমস্যা বা চাপের কারণকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবুন, ইতিবাচকভাবে ভাবা যায় কি না দেখুন, অষ্টপ্রহর এসব নিয়ে না ভেবে অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকুন, আশাব্যঞ্জক চিন্তা বা উইশফুল থিংকিং করুন যে এই পরিস্থিতি নিশ্চয় চিরকাল থাকবে না। সমস্যা যদি খুব গুরুতর হয়, তবে পরিস্থিতি বদলে ফেলার চেষ্টা করুন; যেমন—কাজের পরিবেশের সঙ্গে একটুও মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হলে অগত্যা অফিসটাই পাল্টে ফেলতে হবে, সম্পর্ক নিয়ে চাপের সৃষ্টি হলে কাউন্সেলরের পরামর্শ নিতে পারেন, কাছের বন্ধু বা পরিবারের কারও সাহায্য নিন। মানসিক চাপ মানিয়ে নিতে সামাজিক যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সমাজে অনেকের সঙ্গে মেশার অভ্যাস, নিত্যনতুন বন্ধু গড়ে তোলা, বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে যথেষ্ট সময় কাটানো ইত্যাদি অনেকটাই সাহায্য করবে। একা একা সমস্যা বা চাপ মোকাবিলা করার চেয়ে কারও সঙ্গে ভাগ করা অবশ্যই বুদ্ধিমানের কাজ। এমনকি, অনেক সমাজে, আপনজনের অভাবে পোষা প্রাণীও চাপ কমাতে অনেক সাহায্য করে বলে দেখা গেছে।
মানসিক চাপ যাতে স্বাস্থ্যের ওপর মন্দ প্রভাব না ফেলতে পারে, সে জন্য ইদানীং বায়োফিডব্যাক নামের একটি বিষয় প্রায়ই উচ্চারিত হয়—বলেন অধ্যাপক ওয়াজিউল আলম। এ পদ্ধতিতে একজন মানুষ কীভাবে আপৎকালীন পরিস্থিতিতেও নিজের রক্তচাপ, নাড়ির গতি, দেহের তাপমাত্রা বা পেশি সংকোচন নিজের আয়ত্তে রাখতে পারেন তা শেখানো হয়। বিভিন্ন শিথিল হওয়ার পদ্ধতি, ধ্যান, যোগব্যায়াম, অ্যারোবিক এক্সারসাইজ যেমন—জগিং, হাঁটা, সাইকেল চালনা ইত্যাদি এই আত্মনিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে।

চাপ কমানোর স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি

 প্রতিদিন নিয়মিত খোলা আকাশের নিচে সবুজ পরিবেশে হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন
 প্রকৃতির মাঝে রোজ কিছু সময় কাটান
 স্বাস্থ্যকর খাদ্য খান, অহিতকর খাবার এড়িয়ে চলুন
 ভালো বন্ধু গড়ে তুলুন এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান
 কাজের বাইরে কিছু ভালো বিনোদনমূলক কাজের অভ্যাস গড়ে তুলুন; যেমন—বাগান করুন, পাখি পুষতে পারেন বা নাটক দেখতে যেতে পারেন।
 উত্তম বই ও সংগীত, হালকা সুগন্ধিযুক্ত মোম, চমৎকার একটি লম্বা গোসল—এসবই চাপ কমাতে সহায়ক, তা পরীক্ষিত সত্য
 ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন, যত কাজের চাপই থাকুক, পর্যাপ্ত ঘুমের বিষয়ে আপস করবেন না।

এই অভ্যাস বাদ দিন
 ঘন ঘন চা, কফি বা অ্যালকোহলে আসক্তি
 ধূমপান
 রাত জেগে টেলিভিশন দেখা
 অকারণে সবার সঙ্গে মেজাজ করা ও রাগ দেখানো
 ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমানোর অভ্যাস
 নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া

চাপের মধ্যেও ভালো থাকুন

প্রতিদিন নানা রকম টেনশন আর মানসিক চাপ আমাদের পর্যুদস্ত করে রাখে। এই চাপের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে আমরা আমাদের দেহ ও মনের ক্ষয়সাধন করি, পরিণামে পঁয়ত্রিশেই উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস, চল্লিশ পেরোতেই দুম করে হয়ে যায় হার্ট অ্যাটাক, দেখা দেয় নানা মানসিক ভারসাম্যহীনতা, মনের ওপর নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে সম্পর্কগুলো আরও বেশি করে নষ্ট হয়, আরও বেশি একাকিত্ব ও অসহায়ত্ব জেঁকে ধরে। কিন্তু আমরা তা হতে দেব কেন? এই হাঁসফাঁস জীবনের বাইরে আরও জীবন আছে; আছে প্রজাপতি ও পাখিদের ওড়াউড়ি, বুড়ো বটগাছ আর শরতের সাদা কাশফুল, বন্ধুদের সঙ্গে হা হা হাসি, সন্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার সুখময় সময়, জীবনসঙ্গীকে নিয়ে মাঝে মাঝে দূরে কোথাও হারিয়ে যাওয়ার দারুণ রোমাঞ্চ, আছে চৌরাসিয়ার বাঁশি বা ভীমসেন যোশী, আছে একটি ভালো কবিতা বুঁদ হয়ে পড়ার চমৎকার অভিজ্ঞতা। জীবন থেকে এই জিনিসগুলোকে হারিয়ে যেতে দেবেন না কখনো। কেননা, এই ভালো সময় আর ভালো স্মৃতিগুলোই আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে মানসিক চাপ নামের দৈত্যের হাত থেকে, জিতিয়ে দেবে সব প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ও পরিবেশে। তাই সব চাপের মধ্যেও ভালো থাকুন, ভালো থাকার চেষ্টাটা রাখুন।

তানজিনা হোসেন | প্রথম আলো

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

0 comments
মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার লক্ষে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথ'র উদ্যোগে ১৯৯২ সাল থেকে ১৫০টি দেশে এটি পালিত হয়ে আসছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে ৪৫০ মিলিয়ন লোক কোনো না কোনো ভাবে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। অপর পরিসংখ্যান মতে, প্রতি বছর পৃথিবীতে আট লাখ ৭৩ হাজার লোক আত্মহত্যা করে। পৃথিবীর সকল দেশে মানসিক রোগ ও মানসিক সমস্যা একই রকম এবং দুঃখ কষ্টের বড় কারণ। 

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং শিশু-কিশোরদের ১ শতাংশ বিষণ্নতায় আক্রান্ত। বিষণ্নতার কারণে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত ও সামাজিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিষণ্নতা কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়, মানুষ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। অনেক সময় বিষণ্নতার কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে।

ফেসবুকে প্রতারণার শিকার হলে কী করবেন

0 comments
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ যেমন তার জীবন যাত্রায় অভাবনীয় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে তেমন এর অপব্যবহারের ফল ও কিন্তু কম নয়। এমন একটি নমুনা হল ফেসবুকে প্রতারণা ও এর মাধ্যমে হয়রানি।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক এখন প্রায় সকলের কাছে জনপ্রিয়। ফেসবুকের মাধ্যমে উঠতি বয়সের কিশোর-তরুণরা নানা অপরাধেও জড়িয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরাই এর শিকার হচ্ছে। ভাবছেন এর কি কোন প্রতিকার নেই? হাঁ আছে।
তথ্য ও প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৭ (১) ধারাতে বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাটে বা অন্যকোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে যা মিথ্যা ও অশ্লীল যার দ্বারা কারো মানহানি ঘটে বা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় আর এ ধরনের তথ্যগুলোর মাধ্যমে সংলিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হলে অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান আছে।
আবার পর্নোগ্রাফি আইন.২০১২ এ আছে ,কোন ব্যক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোন বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করলে তিনি এ ধরণের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আমরা অনেকে এইসব আইন সম্পর্কে জানিনা বা জেনেও আইনের আশ্রয় নি না বলে এসব অপরাধ ও অপরাধীকে দমানো কঠিন হচ্ছে।
লেখকঃ  মোঃ জাহিদ হোসেন, শিক্ষার্থি আইন বিভাগ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও মানবাধিকার কর্মী
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Wednesday, October 10, 2012

বিশ্ব ডাক দিবস

0 comments
প্রতি বৎসর ৯ই অক্টোবর ‌‌‌বিশ্ব ডাক দিবস পালিত হয়। ইউরোপের ২২টি দেশের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দের এদিনে সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে গঠিত হয় ‘জেনারেল পোস্টাল ইউনিয়ন’। এর লক্ষ্য ছিল বিশ্বের প্রতিটি দেশের মধ্যে ডাক আদান-প্রদানকে অধিকতর সহজ ও সমৃদ্ধশালী করার মধ্য দিয়ে বিশ্বজনীন পারস্পরিক যোগাযোগকে সুসংহত করা। এক সময় এ জেনারেল পোস্টাল ইউনিয়ন ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন বা ইউপিইউ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৬৯ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডাক ইউনিয়নের ১৬তম অধিবেশনে প্রতি বছরের ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবস নির্ধারণ করা হয়। ১৯৮৪ সালে জার্মানীর হামবুর্গে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডাক ইউনিয়নের ১৯তম অধিবেশনে বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবসের নাম বিশ্ব ডাক দিবস বদলে যায়। বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ওই সংস্থার সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। সেই থেকে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

Monday, October 8, 2012

ভূমির পরিমাণ পদ্ধতি

0 comments
ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলাদি লিখন, সরকারি হিসাব ও অফিসের কাজ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে ভূমির পরিমাপ হলো:
(১) ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক
(২) কাঠা,
(৩) বিঘা এবং
(৪) একর
এই পরিমাপ সর্ব এলাকায় সর্বজন গৃহীত। এটা "সরকারি মান" ( Standard Measurement) বলে পরিচিত।

উক্ত পরিমাপের কতিপয় নিম্নে প্রদান করা হলোঃ

ইঞ্চি, ফুট ও গজঃ
১২'' ইঞ্চি = ১ ফুট
৩ ফুট= ১ গজ

ভূমি যে কোন সাইজের কেন ভূমির দের্ঘ্য ও প্রস্থে যদি ৪৮৪০ বর্গগজ হয় তাহলে এটা ১.০০ একর (এক একর) হবে।
যেমনঃ ভূমির দৈর্ঘ্য ২২০ গজ এবং প্রস্থ ২২ গজ সুতরাং ২২০ গজ×২২ গজ= ৪৮৪০ বর্গগজ।


বর্গগজ/বর্গফুট অনুযায়ী শতাংশ ও একরের পরিমাণঃ

৪৮৪০ বর্গগজ = ১ একর ধরে
৪৮৪০ বর্গগজ = ১ একর
৪৩৫৬০ বর্গফুট= ১ একর
১৬১৩ বর্গগজ= ১ বিঘা
১৪৫২০বর্গফুট= ১ বিঘা
৪৩৫.৬০ বর্গফুট= ০১ শতাংশ
৮০.১৬ বর্গগজ= ১ কাঠা
৭২১.৪৬ বর্গফুট= ১ কাঠা
৫.০১ বর্গগজ = ১ ছটাক
২০ বর্গহাত = ১ ছটাক
১৮ ইঞ্চি ফুট= ১ হাত (প্রামাণ সাই)


কাঠা, বিঘা ও একরের মাপঃ

১৬ ছটাক = ১/ কাঠা
০.০১৬৫ অযুতাংশ = ১/কাঠা
০.৩৩ শতাংশ বা ০.৩৩০০ অযুতাংশ = ১ বিঘা
২০ (বিশ) কাঠা = ১ বিঘা
১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক = ৬০.৫ কাঠা

টিকাঃ
একশত শতাংশ বা এক হাজার সহস্রাংশ বা দশ হাজার অযুতাংশ= ১.০০ (এক) একর। দশমিক বিন্দুর (.) পরে চাষ অঙ্ক হলে অযুতাংশ পড়তে হবে।


মিলিমিটার ও ইঞ্চিঃ

১ মিলিমিটার= ০.০৩৯৩৭ (প্রায়)
১ সেন্টিমিটার= ০.০৩৯৩৭ (প্রায়)
১ মিটার = ৩৯.৩৭ ইঞ্চি বা ৩.২৮ ফুট/ ১.০৯৩ গজ (প্রায়)
১০০০ মিটার = ১ কিলোমিটার
১ কিলোমিটার= ১১ শত গজ
২ কিলোমিটার = (সোয়া মাইল)
১৭৬০ গজ = ১ মাইল
১৩২০ গজ = পৌন এক মাইল।
৮৮০ গজ = আধা মাইল
৪৪০ গজ = পোয়া মাইল।
১ বর্গ মিটার = ১০.৭৬ বর্গফুট (প্রায়)
১ হেক্টর = ২.৪৭ একর (প্রায়)
১ ইঞ্চি = ২.৫৪ সেন্টিমিটার (প্রায়)


গান্টার শিকল জরীপঃ

ভূমির পরিমাপ পদ্ধতি সঠিক এবং সহজ করার জন্য ফরাসী বিজ্ঞানী এডমন্ড গান্টা এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তিনি ভূমি পরিমাপের জন্যে ইস্পাত দ্বারা এক ধরণের শিকল আবিষ্কার করেন। তিনি ভূমি পরিমাপের জন্য ইস্পাত দ্বারা এক ধরণের শিকল আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে তার নাম অনুসারেই এই শিকলের নামকরণ করা হয় গান্টার শিকল। আমাদের দেশে গান্টার শিকল দ্বারা জমি জরিপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। একর, শতক এবং মাইলষ্টোন বসানোর জন্য গান্টার শিকল অত্যন্ত উপযোগী। এই শিকলের দৈর্ঘ্য ২০.৩১ মিটার (প্রায়) বা ৬৬ ফুট

গান্টার শিকল ভূমি পরিমাপের সুবিধার্থে একে ১০০ ভাগে ভাগ করা হয় থাকে। এর প্রতিটি ভাগকে লিঙ্ক বা জরীপ বা কড়ি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।

প্রতি এক লিঙ্ক = ৭.৯২ ইঞ্চি
দৈর্ঘ্য ১০ চেইন ×প্রস্থে ১ চেইন = ১০ বর্গ চেইন = ১ একর
গান্টার শিকলে ১০ লিঙ্ক বা ৭৯.২ ইঞ্চি পর পর নস বা ফুলি স্থাপন করা হয় (নস ফুলি)

২০ লিঙ্ক বা ১৫৮.৪ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়-
৩০ লিঙ্ক বা ২৩৭.৩ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়-
৪০ লিঙ্ক বা ৩১৬.৮ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়-
৫০ লিঙ্ক বা ৩৯৬.০ ইঞ্চি পর স্থাপিত হয়-
৮০ গান্টার বা ১৭৬০ গজ পর স্থাপিত হয়- মাইল ষ্টোন


একর শতকে ভূমির পরিমাপ

১০০ লিঙ্ক = ১ গান্টার শিকল
১০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ শতক
১,০০,০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ একর

আমাদের দেশে জমি-জমা মাপ ঝোকের সময় চেইনের সাথে ফিতাও ব্যবহার করা হয়। সরকারি ভাবে ভূমি মাপার সময় চেইন ব্যবহার করা হয় এবং আমিন সার্ভেয়ার ইত্যাদি ব্যাক্তিগণ ভূমি মাপার সময় ফিতা ব্যবহার করেন। ভূমির পরিমান বেশি হলে চেইন এবং কম হলে ফিতা ব্যবহার করাই বেশি সুবিধাজনক।


বিভিন্ন প্রকারের আঞ্চলিক পরিমাপ

আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন প্রকারের মাপ ঝোক প্রচলিত রয়েছে। এগুলো হলো কানি-গন্ডা, বিঘা-কাঠা ইত্যাদি। অঞ্চলে ভেদে এই পরিমাপগুলো আয়তন বিভিন্ন রকমের হয়ে তাকে। বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমির পরিমাপ বিভিন্ন পদ্ধতিতে হলেও সরকারি ভাবে ভূমির পরিমাপ একর, শতক পদ্ধতিতে করা হয়। সারাদেশে একর শতকের হিসাব সমান।


কানিঃ
কানি দুই প্রকার। যথা-
(ক) কাচ্চা কানি
(খ) সাই কানি

কাচ্চা কানি: ৪০ শতকে এক বাচ্চা কানি। কাচ্চা কানি ৪০ শতকে হয় বলে একে ৪০ শতকের কানিও বলা হয়।

সাই কানিঃ
এই কানি কোথাও ১২০ শতকে ধরা হয়। আবার কোথাও কোথাও ১৬০ শতকেও ধরা হয়।


কানি গন্ডার সাথে বিভিন্ন প্রকারের পরিমাপের তুলনা

২ কানি ১০ গন্ডা (৪০ শতকের কানিতে) = ১ একর
১ কানি = ১৭২৮০ বর্গফুট
১ কানি = ১৯৩৬ বর্গগজ
১ কানি = ১৬১৯ বর্গমিটার
১ কানি = ৪০ বর্গ লিঙ্ক
১ একর = ১০ বর্গ চেইন
১ একর = ১০০ শতক
১ একর = ৪,০৪৭ বর্গমিটার
১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক
১ একর = ৬০.৫ কাঠা
১ শতক = ১ গন্ডা বা ৪৩২.৬ বর্গফুট


বিঘা-কাঠার হিসাব

১ বিঘা = (৮০ হাত×৮০ হাত) ৬৪০০ বর্গহাত
১ বিঘা = ২০ কাঠা
১ কাঠা = ১৬ ছটাক
১ ছটাক = ২০ গন্ডা
১ বিঘা = ৩৩,০০০ বর্গলিঙ্ক
১ বিঘা = ১৪,৪০০ বর্গফুট
১ কাঠা = ৭২০ বর্গফুট
১ ছটাক = ৪৫ বর্গফুট


লিঙ্ক এর সাথে ফুট ও ইঞ্চির পরিবর্তন

লিঙ্ক = ৭.৯ ইঞ্চি
৫ লিঙ্ক = ৩ ফুট ৩.৬ ইঞ্চি
১০ লিঙ্ক = ৬ ফুট ৭.২ ইঞ্চ
১৫ লিঙ্ক = ৯ ফুট ১০.৮ ইঞ্চি
২০ লিঙ্ক = ১৩ ফুট ২.৪ ইঞ্চি
২৫ লিঙ্ক = ১৬ ফুট ৬.০ ইঞ্চি
৪০ লিঙ্ক = ২৬ ফুট ৪.৮ ইঞ্চি
৫০ লিঙ্ক = ৩৩ ফুট
১০০ লিঙ্ক = ৬৬ ফুট


এয়র হেক্টর হিসাব

১ হেক্টর = ১০,০০০
১ হেক্টর = ২.৪৭ একর
১ হেক্টর = ৭.৪৭ বিঘা
১ হেক্টর = ১০০ এয়র

============
সুত্র: agrobangla
==============

স্বর্ণ বিষয়ে মজার তথ্য

0 comments
* মধ্যযুগে আলকেমিরা বিভিন্ন ধাতুকে স্বর্ণে রূপান্তর করার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন। তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই কিনা জানা যায়নি, তবে স্যার আইজাক নিউটনও সময় ব্যয় করেছিলেন স্বর্ণ তৈরির আশায়।

* স্বর্ণ অভিযান শুরু করলেও আগস্টাস বা মার্শাল কেউ-ই নিজেদের জন্য তেমন কোনো স্বর্ণ সংগ্রহ করতে পারেননি। দু'জনকেই গরিব অবস্থায় মরতে হয়েছে।

* এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় স্বর্ণখণ্ডটির নাম, 'ওয়েলকাম স্ট্রেনজার', যার ওজন প্রায় ২০০ পাউন্ড। অস্ট্রেলিয়ার ব্যালারাটে জন ডিসন ও রিচার্ড ওয়েটস ১৮৯৬ সালে এটি আবিষ্কার করেন।

* দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশদের অভিযানের আগ পর্যন্ত অ্যাজটেকরা লোহার ব্যবহার জানত। তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ছিল, যেগুলো তারা সাধারণত দৈনন্দিন কাজেও ব্যবহার করত।

দেশের একমাত্র পারুল গাছ

0 comments
দেশের একমাত্র পারুল গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে বগুড়ায়। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার সরকারি নাজির আখতার কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে একটি শতবর্ষী পারুল গাছ এখনো সতেজ রয়েছে। জানা যায়, বগুড়ার সৈয়দ নুরুল হুদা এ গাছটি লাগিয়েছিলেন। পরে ওই গাছকে কেন্দ্র করে তিনি ১৯৬৭ সালে ১৯ বিঘা জমির ওপর নাজির আখতার কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ঐতিহ্যবাহী এ গাছটি দেখার জন্য প্রতিদিন কলেজ চত্বরে প্রচুর মানুষ ভিড় করে। তিনি আরও জানান, কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় তিনি বলেছিলেন তার মৃত্যু হলে কলেজের পারুল গাছের নিচে যেন কবর দেওয়া হয়। ১৯৮৯ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তার কথা অনুযায়ী পরদিন ঢাকা থেকে লাশ এনে পারুল গাছের নিচেই তার কবর দেওয়া হয়। শিক্ষানুরাগী সৈয়দ নুরুল হুদা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন নিজ হাতে লাগানো পারুল গাছের নিচে। ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। তিনি জানান, পারুল গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য ঢাকা, দিনাজপুর ও রাজশাহী থেকে কয়েকজন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ চিঠি প্রেরণ করেছেন। তার জানামতে, বাংলাদেশের একমাত্র পারুল গাছ এটি। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা প্রায় ৭০ বছর ধরেই পারুল গাছটি দেখে আসছেন বলে জানান। তারা জানান, শুষ্ক মৌসুমে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বর্ষা মৌসুমে আবার সবুজ পাতায় ঢেকে যায়। এপ্রিল-মে মাসে গাছে ছোট ছোট অসংখ্য সাদা ফুল ফোটে। বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজের উদ্ভিদ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ কে এম শফিকুর রহমান জানান, লোকমুখে শুনে তিনিও গাছটি দেখেছেন। গাছটি পারুল ফুলের গাছ। এলাকাবাসীর কথা মতো শতবর্ষী না হলেও ৯০ বছর বয়স হবে গাছটির। সোনাতলার এ গাছটি দেশের একমাত্র পারুল গাছ বলে তিনি জানান।
আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

Tuesday, October 2, 2012

মামলা বিষয়ক টুকিটাকি

0 comments
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় সুপ্রীম কোর্টই হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত। অনেক দেশে সুপ্রীম কোর্টের পরও বৃটেনের প্রিভি কাউন্সিলে আপীল করার সুযোগ রয়েছে। তবে বাংলাদেশে এখন সেটা নেই।

সু্প্রীম কোর্টের দু’টি বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপীল বিভাগ। পাশের দেশ ভারতে একাধিক হাইকোর্ট থাকলেও বাংলাদেশে হাইকোর্ট একটি। এই হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপীল বিভাগ দু’টো একই এলাকায় অবস্থিত। মানুষের মুখে মুখে যা হাইকোর্ট নামে পরিচিত।


মামলা

উচ্চ আদালতে বিভিন্নভাবে মামলা হতে পারে। নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল হতে পারে, মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য উচ্চ আদালতে আসতে পারে, আবার নিম্ন আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা হতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে হাইকোর্ট কোন নির্দিষ্ট মামলার ব্যাপারে নিম্ন আদালতকে নির্দেশনা দেয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে মামলাটিকে উচ্চ আদালতে নিয়ে আসে।


কিছু কিছু মামলা আছে যেগুলোতে সরাসরি হাইকোর্টে যেতে হয়, যেমন: কোম্পানী সংক্রান্ত মামলা, খ্রিস্টান বিবাহ সংক্রান্ত মামলা, এডমিরালটি বা সমুদ্রগামী জাহাজ সংক্রান্ত মামলা।


রিট

সংবিধানের ১০২ ধারা অনুসারে যেকোন নাগরিক রিট আবেদন করতে পারেন। রিটের বিষয়টি মামলার মত হলেও মৌলিক একটি পার্থক্য আছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কোন আইনের অধীনে প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর অন্যায় করা হচ্ছে। তখন ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ এর প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করতে পারে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়।

আবার কেউ যদি মনে করে সরকারের প্রণীত কোন আইন প্রচলিত অন্য আইনের পরিপন্থী বা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, সে ক্ষেত্রেও আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে রিট করা যায়।


অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে রিট এবং সাধারণ মামলা দু’টিই করা চলে। রিটে খরচ কিছুটা বেশি হলেও সাধারণত দ্রুত নিষ্পত্তি হয়।


এডমিনিস্ট্রেটিভ আপিলেট ট্রাইব্যুনাল

সংবিধানের ১১৭ ধারা অনুসারে এডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল বা প্রসাশনিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। সরকারি এবং আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকুরি সংক্রান্ত জটিলতায় এডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়, এরপর আপীল করতে হয় এডমিনিস্ট্রেটিভ আপিলেট ট্রাইব্যুনালে। এই এডমিনিস্ট্রেটিভ আপিলেট ট্রাইব্যুনালকে হাইকোর্টের সমান মর্যাদা দেয়া হয়। কাজেই এর বিরুদ্ধে আপীল করতে হলে হাইকোর্টে নয়, আপীল বিভাগে আপীল করতে হয়।

আপীল করা

সংবিধানের ১০৩ ধারা অনুসারে আপীল বিভাগে যাওয়ার সুযোগ থাকে। হাইকোর্টে মামলা শেষ হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আপীলের আবেদন করা যায়। আপীল বিভাগ মামলটিকে আপীল করার যোগ্য মনে করলে আমলে নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। আবার কোন মামলা চলাকালে যদি হাইকোর্ট মনে করে মামলাটিতে সংবিধানের ব্যাখ্যার বিষয়টি জড়িত, তবে হাইকোর্ট বিভাগও মামলাটিকে আপীল বিভাগে পাঠাতে পারে।

লিভ টু আপিল

হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া রায়ে যদি আপীল করা না করা প্রসঙ্গে কিছু উল্লেখ না থাকে, তবে প্রথমে আপীল বিভাগে আপীলের আবেদন করতে হয়। এই আবেদনকেই লিভ টু আপিল বলে। আবেদনকারী কি যুক্তিতে আপীল করতে চাইছে এসময় সেটা তুলে ধরতে হয়। আপীল বিভাগ আপীলের যোগ্য মনে করলে নিয়মিত মামলা হিসেবে সেটিকে গ্রহণ করে।

জামিন এবং আগাম জামিন

যদি কোন মামলায় নিম্ন আদালত জামিন দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে উচ্চ আদালত জামিন আবেদন বিবেচনা করে জামিনের নির্দেশ দিতে পারে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মামলাটি নিম্ন আদালতে চলতে থাকে, যদিও অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনে বেরিয়ে আসার সুযোগ পান।

সাধারণত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আগাম জামিনের সুবিধা পান। যদি কেউ আশংকা করে যে তার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা হতে পারে, তবে তিনি আগেভাগেই হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করতে পারেন।


হাইকোর্ট গুরুত্ব বুঝে আগাম জামিনের নির্দেশ দিতে পারেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা গেলেও ঐ মামলায় তাকে গ্রেফতার করা যায় না।


কারা মামলা করতে পারেন

অন্য সব আদালতের মত উচ্চ আদালতেও নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে আইনজীবির সাহায্য নেয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে আইনগত দিক বুঝে আত্নপক্ষ সমর্থন বা নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে আইনজীবির সাহায্য নেয়া ভালো। যেসব আইনজীবি উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন, কেবল তারাই উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করতে পারেন। কাজেই নিম্ন আদালতে নিয়মিত মামলা পরিচালনা করছেন কিন্তু উচ্চ আদালতে তালিকাভুক্ত নন এমন আইনজীবি মামলা পরিচালনা করতে পারেন না।

অন্তত দুই বছর বাংলাদেশের কোন জেলা জজ আদালতে মামলা পরিচালনা করেছেন এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবির তত্ত্বাবধানে কাজ করেছেন এমন আইনজীবি হাইকোর্টে তালিকাভুক্তির আবেদন করতে পারেন। আইনজীবিদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বার কাউন্সিল লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে তালিকাভুক্তির জন্য বাছাই করে। একটি এনরোলমেন্ট কমিটি মৌখিক পরীক্ষা নেয়। এখানে সদস্য হিসেবে হাইকোর্টের দু’জন বিচারকও থাকেন।


ব্যরিস্টারি পাশ করে যারা আবেদন করেন তাদের কেবল মৌখিক পরীক্ষা দিতে হয়।


তবে আপীল বিভাগে মামলা করতে হলে আরেক দফা অনুমতি নিতে হয়। হাইকোর্ট বিভাগে অন্তত পাঁচ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন আইনজীবি এক্ষেত্রে তালিকাভুক্তির আবেদন করতে পারেন।


আইনজীবির সাথে যোগাযোগ:

সংশ্লিষ্ট আইনজীবি নিম্ন আদালতে মামলা শেষ হওয়ার পর উচ্চ আদালতে মামলার জন্য কোন আইনজীবির কাজে যেতে হবে সে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে যেকোন আইনজীবির কাছেই যাওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ী ব্যারিস্টারগণ মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আলাদা কোন সুবিধা পান না। তবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবির হাতে ফল ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

অভিজ্ঞ এবং সুপরিচিত আইনজীবি ছাড়া যে মামলা জেতা যাবে না, তা কিন্তু নয়। তুলনামূলকভাবে নবীন কিন্তু দক্ষ আইনজীবিও কম খরচে মামলা জিতিয়ে দিতে পারেন।


বিভিন্ন আইনজীবি বিভিন্ন ধরনের মামলা পরিচালনা করতে অভ্যস্ত, কাজেই বিষয়টি জেনে আইনজীবি বাছাই করা ভালো। আর পরিচিতদের মাধ্যমেও আইনজীবিদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা যেতে পারে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত ল’ফার্মগুলোর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। আবার ব্যক্তিগতভাবেও কাউকে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে।


হাইকোর্ট চত্বরে অবস্থিত সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন ভবনে বিভিন্ন আইনজীবির চেম্বার রয়েছে, এছাড়া এ ভবনের দু’টি হলে আইনজীবিগণ বসেন। সুপ্রীম কোর্ট বার অফিস থেকে তালিকাভুক্ত সব আইনজীবির ঠিকানা ও ফোন নম্বর সম্বলিত একটি ডিরেক্টরী সংগ্রহ করা যেতে পারে। এটি প্রতিবছর আপডেট করা হয়।


মামলার দায়িত্ব দেয়া:

ওকলাতনামা বা একটি চুক্তিপত্রে সাক্ষরের মাধ্যমে আইনজীবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার দায়িত্ব দিতে হয়। একবার আইনজীবিকে দায়িত্ব দেবার পর তার লিখিত সম্মতি ছাড়া অন্য কোন আইনজীবির মাধ্যমে মামলা পরিচালনার সুযোগ থাকে না।

উকিল নোটিশ

যে কোন মামলা শুরু করার আগে প্রতিপক্ষকে নোটিশ দেয়ার একটি রেওয়াজ আছে। সাধারণত যে আইনজীবিকে মামলার দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তিনি এই নোটিশ দেন। নোটিশে মূলত একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়ে বলা হয় যে, এই সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে মামলা করা হবে। কতদিন সময় দিতে হবে তার নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে সরকার প্রতিপক্ষ হলে এক মাস সময় দেয়ার রেওয়াজ চালু আছে। অন্য ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টা থেকে থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় দেয়া হতে পারে।


উকিল নোটিশের জন্যও আইনজীবিকে ফি দিতে হয়, আর অধিকাংশ আইনজীবি উকিল নোটিশ দেবার আগে ওকলাতনামায় সাক্ষর নেন।


উচ্চ আদালতে মামলা করতে হলে উচ্চ আদালতে কাজ করেন এমন আইনজীবিকেই নোটিশ দিতে হয়। আর নিম্ন আদালতের মামলা হলে যেকোন আইনজীবি নোটিশ দিতে পারেন।


উকিল নোটিশের সাথে আদালতের কোন সম্পৃক্ততা নেই।


মামলার খরচ

খরচ দু’ভাবে হয়। একটি আইনজীবির ফি বাবদ, অন্যটি দাপ্তরিক খরচ বাবদ। আইনজীবির ফি-এর অংক নির্দিষ্ট নয়। বিভিন্ন আইনজীবি বিভিন্ন ধরনের মামলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অংকের ফি নেন। স্বাভাবিকভাবেই জ্যেষ্ঠ আইনজীবিদের ফি-এর অংকটা বেশি হয়।

মামলার ধরন বুঝে দাপ্তরিক খরচ নির্ধারিত হয়। আর্থিক দাবীর ক্ষেত্রের টাকার পরিমাণের ওপর এটি নির্ভর করতে পারে।


মামলা শুরু করা:

এ কাজটি আইনজীবি বা তার সহকারী করেন। কোর্ট অফিসে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা দায়ের করলে একটি নম্বর পাওয়া যায়। তারপর হাইকোর্টের কোন একটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করাতে হয়। এরপর থেকে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি প্রদর্শিত হতে থাকে। কার্যতালিকা অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে শুনানী সম্পন্ন করা হয়। একাধিক দিন শুনানী হতে পারে। প্রতিপক্ষকে আত্নপক্ষ সমর্থনের জন্য সময় দেয়া হতে পারে। তবে এর মাঝে বেঞ্চ ভেঙে দেয়া হলে পুনরায় অন্য একটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।

এই কার্যতালিকাকেই কজলিস্ট বলা হয়। সুপ্রীম কোর্টে গিয়ে যে কেউ এটি দেখতে পারেন, সুপ্রীম কোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রতিদিনের কার্যতালিকা দেয়া হয়। হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপীল বিভাগের জন্য দু’টি পৃথক কার্যতালিকা থাকে।


ছুটি

বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে ঐতিহ্যগতভাবে দীর্ঘ ছুটির রেওয়াজ চলছে। শুক্র ও শনিবার আদালতের কোন কার্যক্রম চলে না। সরকারি ছুটির দিনেও আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। প্রতিবছর সুপ্রীম কোর্ট তার নিজের ছুটির তালিকা একটি ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। সাধারণত পাঁচ দফায় দীর্ঘ ছুটি হয়:
মার্চের শেষ সপ্তাহ ও এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ
জুনের শেষ সপ্তাহ ও জুলাই-এর প্রথম সপ্তাহ
আগস্টের শেষ সপ্তাহ ও পুরো সেপ্টেম্বর
অক্টোবরের শেষ দুই সপ্তাহ
ডিসেম্বরের শেষ দুই সপ্তাহ

চেম্বার জজ

যেকোন সময় বিশেষ প্রয়োজনে, বিশেষ করে দীর্ঘ ছুটিতে জরুরি মামলার বিষয়টি দেখার জন্য প্রধান বিচারপতি আপীল বিভাগের একজন বিচারককে চেম্বার জজ হিসেবে নিয়োগ করেন। তিনি আবেদনকারীর আবেদন বিবেচনা করে প্রয়োজনে নির্দেশ দেন, কিংবা নিয়মিত বেঞ্চে শুনানীর জন্য বিষয়টি পাঠিয়ে দেন। তিনি অফিস সময়ের বাইরেও আবেদন শুনতে পারেন, এমকি বাসায়ও আবেদন বিবেচনা করে রায় দিতে পারেন। তবে দেরি করলে আবেদনকারীর ক্ষতি হতে পারে কেবল এমন আবেদনই তিনি বিবেচনা করেন

উৎসঃ সামহোয়ার ইন ব্লগ