Sunday, November 4, 2012

নকশি পিঠা

0 comments
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরাঞ্চলে নানা ধরনের পিঠা তৈরি হয়। নকশি পিঠা তার অন্যতম। পিঠার গায়ে যখন বিভিন্ন ধরনের নকশা আঁকা হয় অথবা ছাঁচে ফেলে পিঠাকে চিত্রিত করা হয়, তখন তাকে বলা হয় নকশি পিঠা। নকশি পিঠা বা নকশা করা পিঠা এক ধরনের লোকশিল্প। পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব-অনুষ্ঠান যেমন_অতিথি আপ্যায়ন, বর-কনের বাড়িতে লেনদেন, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে উপহার-উপঢৌকন পাঠানো, ঈদ, পূজা-পার্বণ, শবেবরাত, মহররম, খতনা, বিবাহ, নবান্ন, পৌষ-পার্বণ, প্রিয়জনের মনোরঞ্জন, অন্নপ্রাশন, আকিকা প্রভৃতি উপলক্ষে নানা স্বাদ, গন্ধ ও আকারের নকশি পিঠা তৈরি করা হয়। নকশি পিঠা তৈরির জন্য প্রথমে আতপ চালের গুঁড়া বা আটা সিদ্ধ করা হয়। পরে সিদ্ধ চালের গুঁড়া বা আটা থেকে রুটি করে তার ওপর গাছ, লতাপাতা ইত্যাদির নকশা তোলা হয়। খেজুর কাঁটা, খোঁপার কাঁটা, সূচ, পাটকাঠি, খড়কা ইত্যাদির সাহায্যে হাতে দাগ কেটে কেটে নকশাগুলো তোলা হয়। হাতের পরিবর্তে ছাঁচের সাহায্যেও পিঠাকে নকশাযুক্ত করা যায়। ছাঁচগুলো সাধারণত মাটি, পাথর, কাঠ বা ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি। এসব ছাঁচের ভেতরের দিকে গাছ, ফুল, লতাপাতা, মাছ, পাখি প্রভৃতির নকশা অঙ্কিত থাকে। সব ধরনের পিঠায় নকশা আঁকা হয় না। সাধারণত পুলিপিঠা ও পাকোয়ান বা তেলপিঠা, যাকে ফুলপিঠাও বলে, তাতে নকশা করা হয়। নারিকেলের সঙ্গে গুড় বা চিনি মিশিয়ে পুলিপিঠা তৈরি করা হয়। পুলিপিঠার এক পাশে হাতের আঙুল ও নখের সাহায্যে নকশা তোলা হয়, যা দেখতে ফুলের পাপড়ির মতো। পাকোয়ান পিঠায় বিচিত্র নকশা অঙ্কনে নৈপুণ্যের জন্য বৃহত্তর ময়মনসিংহের নারীদের খ্যাতি রয়েছে। নকশার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পিঠার বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়। যেমন_শঙ্খলতা, কাজললতা, চিরল বা চিরণপাতা, হিজলপাতা, সজনেপাতা, উড়িয়াফুল, বেঁট বা ভ্যাট ফুল, পদ্মদিঘি, সাগরদিঘি, সরপুস, চম্পাবরণ, কন্যামুখ, জামাইমুখ, জামাইমুচড়া, সতীনমুচড়া প্রভৃতি। পিঠার এই নামগুলো বিশেষ ভাবব্যঞ্জক।

0 comments:

Post a Comment