Sunday, November 4, 2012

হস্তশিল্প

0 comments
হস্তশিল্প ও কুটিরশিল্প ছিল আদি ও মধ্যযুগীয় বাংলার গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। হস্তশিল্প হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল বয়ন, ধাতব পদার্থের কাজ, অলংকার, বিশেষ করে রুপার তৈরি অলংকার, কাঠের কাজ, বেত এবং বাঁশের কাজ, মাটি ও মৃৎপাত্র। পরবর্তী সময়ে হস্তশিল্প পণ্য তৈরিতে পাট এবং চামড়া প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। বাংলাদেশের হস্তশিল্প পণ্যে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য, সৌন্দর্য এবং নৈপুণ্য বিদ্যমান। হস্তশিল্প হাতের তৈরি নানাবিধ পণ্য উৎপাদনের ক্ষুদ্রায়তন ইউনিট। গৃহের মালিক নিজে এবং পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় বা কয়েকজন বেতনভুক কর্মচারী নিয়ে যন্ত্র বা যন্ত্রপাতি ছাড়া এসব পণ্য প্রস্তুত করে থাকে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, গাঙ্গেয় অববাহিকার মসলিন কাপড় রোমান এবং গ্রিক সাম্রাজ্য পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। চীনা এবং আরব পর্যটকরাও বঙ্গদেশে উৎপাদিত উচ্চমানের সুতি এবং রেশমি কাপড়ের কথা জানতেন। ষোড়শ শতাব্দী থেকে বঙ্গদেশের উচ্চমানের হাতেবোনা বস্ত্র, উন্নতমানের গজদন্ত, রুপা এবং অন্যান্য ধাতুর তৈরি কারুপণ্য মোগল দরবারেও সমাদৃত হয়েছিল। মোগল সম্রাটরা শিল্প-কারুপণ্যের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। হস্তশিল্প সৃষ্টি হয় চিত্রশিল্পী, ভাস্কর এবং কারুশিল্পীর কর্ম থেকে যাদের শিল্পী হিসেবে বস্তুত কোনো প্রশিক্ষণই থাকে না। তাদের সৃষ্ট হস্তশিল্প দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে জাদুঘরে মূল্যবান চিত্রকর্ম হিসেবে রক্ষিত না হয়ে বরং অন্য লোকদের জন্য ব্যবহারিক উপযোগ সৃষ্টি করে। শিল্পীরা সাধারণ লোকের প্রয়োজন মেটানোর পর ধনী ও অভিজাত লোকদের পৃষ্ঠপোষকতায় কারুশিল্পীর মর্যাদা অর্জন করে। হস্তশিল্পে উৎপাদিত পণ্যগুলো টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব হয়ে থাকে। বাংলাদেশে কয়েক লাখ মানুষের পেশা হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।
গ্রন্থনা : ফারজানা শ্রাবন্ত

0 comments:

Post a Comment