Saturday, November 3, 2012

জেলহত্যা দিবস

0 comments
স্বাধীন বাংলাদেশে যে কটি দিন চিরকাল কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, এটি তেমনি একদিন, ৩ নভেম্বর। ভারাক্রান্তভাবে প্রতি বছর ফিরে আসে। যে কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত অর্জনের পথে বাধা তৈরি করেছে, তার মধ্যে অন্যতমটি ঘটেছিল এই দিনে। জাতির ইতিহাসে অত্যন্ত বেদনাবিধুর একদিন। যে ক্ষত কোনো দিনই বাঙালির হৃদয় থেকে মুছবে না। এই নৃশংস হত্যা পুরো জাতিকে ধীরে ধীরে অন্ধকারের পথে নিয়ে যেতে বসেছিল। ৩৭ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের চার নায়ক ও বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার পর বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার লক্ষ্যে ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরাজিত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মহতী অর্জন স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, প্রগতি, মানবাধিকার, সংস্কৃতি, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা চালায়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর দেশে দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। ক্ষমতা দখল ও পাল্টা দখলের রক্তাক্ত অধ্যায়ে পূর্ণ এই সময়। জাতীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যার এ ঘটনায় তখনই লালবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার জেল হত্যা মামলার প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করে। এরপর দীর্ঘ আট বছরেরও বেশি সময় বিচারকাজ চলার পর গত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২০ আসামির মধ্যে ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তার শাস্তি এবং অপর পাঁচজনকে খালাস দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ষড়যন্ত্রের দায়ে অভিযুক্ত চারজন রাজনীতিক বেকসুর খালাস পান। শুধু তাই নয়, ষড়যন্ত্রের কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় মামলার ২০ আসামির সবাইকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে উচ্চ আদালতের রায়ে আত্দস্বীকৃত খুনিদের প্রায় সবাই খালাস পাওয়ার পরও বিচারের দাবি কমেনি। এবারে ভিন্ন পারিপাশ্বর্িকতায় আজ জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে চার জাতীয় নেতাকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচিতে দিনটি স্মরণ করবে। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতির গভীর শ্রদ্ধা : জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান এক বাণীতে শহীদ চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বাঙালি জাতির ইতিহাসে তাদের অবদান চিরভাস্বর হয়ে থাকবে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের 'সোনার বাংলা' বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে অবদান রাখার আহ্বান জানান। সব ষড়যন্ত্র রোখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে বলেছেন, ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশের মাটি থেকে আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্যই জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছিল। কারাগারে নিরাপদ আশ্রয়ে এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। তিনি দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ধারাকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান।

কর্মসূচি : আজ সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব কার্যালয় ও শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণের মধ্য দিয়ে দলের কর্মসূচি শুরু হবে।

এ সময় বঙ্গবন্ধু ভবনে জমায়েত এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সাড়ে ৭টায় ১৫ আগস্টের শহীদ ও জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত হবে। বেলা সাড়ে ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এতে অংশ নেবেন।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, জাতীয় চার নেতা পরিষদ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী প্রভৃতি সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচিতে দিনটি পালন করবে।

0 comments:

Post a Comment