Monday, July 30, 2012

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা, ঢাকা

0 comments
রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সুবিশাল একটি নগর উদ্যান হলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। আগে এ উদ্যানটি 'রমনা রেস কোর্স ময়দান' নামে পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ আমলে এখানে প্রতি রবিবার ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা এ দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামে উদ্যানটির নাম রাখা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এ উদ্যানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। এখানেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল। ১৯৭৫ সালের পর এলাকাটিকে সবুজে ঘেরা পার্কে পরিণত করা হয়। পার্কের একপাশে শিশুদের জন্য একটি বিনোদন পার্ক গড়ে তোলা হয়। ১৯৯৬ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে 'স্বাধীনতা স্তম্ভ' ও 'শিখা চিরন্তন' নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্বাধীনতা স্তম্ভের প্রধান আকর্ষণ জনতার দেয়াল নামে ২৭৩ ফুট দীর্ঘ একটি ম্যুরাল বা দেয়ালচিত্র। এটি ইতিহাসভিত্তিক টেরাকোটার পৃথিবীর দীর্ঘতম ম্যুরাল। এর বিষয়বস্তু ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি দৃষ্টিনন্দন কৃত্রিম জলাশয় বা লেক খনন করা হয়েছে। এ লেকটির ধারে প্রতিদিন অসংখ্য কর্মক্লান্ত মানুষ ভিড় জমায় একটু প্রশান্তির জন্য।

সাঁওতাল বিদ্রোহ

0 comments
এ দেশের একটি বড় আদিবাসী গোষ্ঠী হলো সাঁওতাল। এ সাঁওতালরা ১৮৫৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচার আর নিপীড়নের উনিশ শতকের পঞ্চম দশকে অর্থাৎ ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহ দেখা দেয়। সাঁওতাল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল তৎকালীন বাংলার বীরভূম, ভাগলপুর ও মুর্শিদাবাদ জেলার সাঁওতাল অঞ্চলসমূহে। সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল মূলত কৃষক বিদ্রোহ। কোম্পানির শাসন ব্যবস্থা শুরু হওয়ার আগে সাঁওতালদের জীবনযাত্রা ছিল সরল ও সাদাসিধে। কোম্পানির বাংলা দখল করার পর তারা সাঁওতাল জনজীবনের ওপর বাড়িয়ে দিয়েছিল শোষণ ও নির্যাতনের মাত্রা। তাদের এলাকায় কোম্পানি সরকার শাসন ও শোষণ অপেক্ষাকৃত মজবুত করার উদ্দেশ্যে জমিদার, দালাল, মহাজন, সরকারি আমলা ও দারোগা সৃষ্টি করে সাঁওতাল জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। মহাজনরা সাঁওতালদের কাছ থেকে চড়া সুদ আদায় করত। ধান-চাল ধার দেওয়ার সময় ওজনে ফাঁকি দিত। সাঁওতালরা যখন ধান-চাল পরিশোধ করত, তখন তাদের কাছ থেকে আদায় করা হতো কয়েক গুণ বেশি। ক্রমেই পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছিল যে, বছরের পর বছর মহাজনের দেনা দশ গুণ পরিশোধ করেও সাঁওতালরা ঋণ থেকে মুক্তি পেত না। তাদের হালের গরু ও ফসল জোর কর কেড়ে নিয়ে যেত মহাজনরা। যেসব পরিবার দেনার দায়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যেত, তাদের পরিবারের সব সদস্যকে ক্রীতদাসে পরিণত করা হতো। মহাজন ছাড়াও ছিল এক শ্রেণীর দালাল। দালালরা নামমাত্র মূল্যে চাল, বোরা, সরিষা ও অন্যান্য তেলজাতীয় দ্রব্য বারহাইত নামক স্থান থেকে কিনে গরুর গাড়িতে করে ভাগীরথীর তীরে অবস্থিত জঙ্গীপুরে নিয়ে যেত। জঙ্গীপুর থেকে এসব দ্রব্য চালান দিত মুর্শিদাবাদ_ মুর্শিদাবাদ থেকে নিয়ে যাওয়া হতো কলকাতায়_ কলকাতা থেকে মালগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হতো জাহাজে করে বিলাতে। জমিদাররা অশিক্ষিত, নিরীহ সাঁওতালদের কাছ থেকে চড়া হারে খাজনা আদায় করত এবং সে সঙ্গে আরও আদায় করত বেআইনি নজরানা।
এ অঞ্চলে শোষণ চালানোর জন্য বসতি স্থাপন করেছিল নীলকররা। তারা জোর করে নীলের চাষ করাত। রেলপথ নির্মাণের জন্য একদল ইউরোপীয় বাস করত এ অঞ্চলে। তাদের কাজ ছিল সাঁওতাল মেয়েদের সতীত্ব নষ্ট করা। যারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাত, তাদের ওপর চালানো হতো কঠোর নির্যাতন। স্থানীয় সরকারি আমলা ও দারোগাদের অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ সামগ্রিক পরিস্থিতি এমনই হয়ে উঠেছিল যে, সাঁওতালদের বিদ্রোহ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন ভাগনাদিহির মাঠে ১০ হাজার সাঁওতাল সিধু ও কানুর নেতৃত্বে সমবেত হয়েছিল। এ সমাবেশেই সিধু ও কানু সাঁওতালদের বিদ্রোহের নির্দেশ দেন। বিদ্রোহের বাণী চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার সাঁওতাল বিদ্রোহীদের দলে যোগদান করে। প্রথমদিকে বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছিল ভাগলপুর থেকে মুঙ্গের পর্যন্ত। বিদ্রোহীদের তৎপরতার ফলে এ অঞ্চলে সরকারের ডাক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ইংরেজ বাহিনী বিদ্রোহ দমন করতে এগিয়ে এলে বিদ্রোহীরা তাদের প্রতিরোধ করে। বিদ্রোহের আগুন শুধু ভাগলপুর থেকে মুঙ্গের পর্যন্ত জ্বলে ওঠেনি, জ্বলে উঠেছিল গোদা, পাকুড়, মহেশপুর, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের বিভিন্ন অঞ্চলে। জমিদাররা ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। শুধু জমিদাররা নয়, দেওঘর থেকে ম্যাজিস্ট্রেটও পালিয়ে যায়। মহেশপুরে পঞ্চাশ হাজার সাঁওতাল কোম্পানি সৈন্যের গতিরোধ করে। কোম্পানি বিদ্রোহ দমন করার জন্য রেজিমেন্ট নিয়োগ করে। কিন্তু তবুও বিদ্রোহ দমন করা সম্ভব হয়নি। কোম্পানি সরকার বিদ্রোহী নেতাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য মাথাপিছু ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। ইংরেজ বড়কর্তারা আতঙ্কিত হয়ে লিখেছিলেন যে, সাঁওতালরা সশস্ত্র হয়ে ঘোরাফেরা করছে, তাদের সংখ্যা কমপক্ষে ৩০ হাজার। তাদের আত্মসমর্পণ করার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

ইংরেজরা ভেবেছিল, তাদের সৈন্যবাহিনীর আক্রমণে হয়তো সাঁওতাল বিদ্রোহীদের শক্তি ভেঙে পড়বে, কিন্তু পরিণামে দেখা গিয়েছিল উল্টো। সেপ্টেম্বরের শেষদিকে আবার আগুন দ্বিগুণ জ্বলে উঠেছিল সাঁওতাল অঞ্চলে। হাজার হাজার বিদ্রোহী সাঁওতালের পদধ্বনিতে কেঁপে উঠেছিল কোম্পানির শাসন। নিরুপায় হয়ে ইংরেজ কর্তৃপক্ষ এ অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করতে বাধ্য হয়েছিল। সাঁওতাল নেতারা এ বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে একটা স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। তারা ঘোষণা করেছিল আমলাদের পাপে সাহেবরাও পাপাচারে লিপ্ত হয়েছে, এ পাপের ফলে তারা যে দেশটিকে বেআইনিভাবে দখল করেছে, তা হাতছাড়া হয়ে যাবে। তারা আরও ঘোষণা করেছিল, তাদের রাজ্যে কাউকে খাজনা দিতে হবে না। প্রত্যেকে সাধ্যমতো জমি চাষ করার অধিকার পাবে। সব ঋণ মওকুফ করে দেওয়া হবে। বলদ চালিত লাঙলের ওপর দু'পয়সা আর মহিষ চালিত লাঙলের ওপর দু'আনা খাজনা ধার্য হবে।

এই বিদ্রোহের সময় স্থানীয় কামার-কুমার, তেলী, চামার, ডোম ও মুসলমান তাঁতিরা সাঁওতালদের সক্রিয় সহযোগিতা করেছিল। বিদ্রোহীরা বাংলা, বিহার ও ছোট নাগপুরের কয়েকটি অঞ্চলে ইংরেজ শাসন উচ্ছেদ করেছিল এবং নিজেদের শাসন ছ'মাস কালব্যাপী পরিচালনা করেছিল।
যুদ্ধের পরে সাঁওতালদের সমস্যা বিবেচনা করে আদিবাসী সাঁওতালদের জন্য ডুমকা নামের একটি জেলা বরাদ্দ করা হয়। এটি সাঁওতাল পরগনা নামে পরিচিত।

গ্রন্থনা : তৈমুর ফারুক তুষার

শান্তি কমিটি

0 comments
শান্তি কমিটি নামটা শুনলে মনে হয় শান্তির জন্য কাজ করছে, এমন কিছু একটা হবে হয়তো। শান্তি কমিটির নাম থেকে এর কর্মকাণ্ড ও নৃশংসতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালাতে থাকে। শান্তি কমিটি হলো পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য এ দেশের কিছু মানুষের তৈরি একটি সংগঠন। এ শান্তি কমিটির সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে এ দেশে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগে সহায়তা প্রদান এবং প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয়। মুক্তিযোদ্ধা এবং এ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে শান্তি কমিটির সদস্যরা ছিল বিভীষিকার মতো। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী প্রভৃতি সংগঠনের নেতারা এ শান্তি কমিটি গঠনে মূল ভূমিকা রাখেন। শান্তি কমিটির কেন্দ্রীয় মূল নেতা ছিলেন খাজা খয়েরউদ্দিন, গোলাম আযম, ফরিদ উদ্দিন, নূরুজ্জামান প্রমুখ। তাঁরা পুরো বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীকে তথ্য, পথ দেখানো, মুক্তিযোদ্ধাদের চিনিয়ে দেওয়া ও বাঙালি নারীদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানিদের হাতে সোপর্দ ইত্যাদি কাজে লিপ্ত হন। কুখ্যাত এ শান্তি কমিটি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বিলুপ্ত হয়।

নরকের দরজা, তুর্কমেনিস্তান

0 comments
তুর্কমেনিস্তানের Darvaz শহরে অবস্থিত এটি একটি জ্বলন্ত গর্ত। জ্বলন্ত জায়গাটি Door to Hell নামে সুপরিচিত। নরকের দরজাটি ভয়ংকর সুন্দর লাগে রাতে। তখন অনেক দূর থেকেই জায়গাটা তো দেখা যায়ই, এর শিখার উজ্জ্বলতাও ভালোমতো বোঝা যায়। সেখানকার উত্তাপ এত বেশি যে কেউ চাইলেও পাঁচ মিনিটের বেশি সেখানে থাকতে পারবে না। ১৯৭১ সাল থেকে জায়গাটি অবিরত দাউদাউ করে জ্বলছে। কারাকুম মরুভূমিতে অবস্থিত অগ্নিমুখটির ব্যাস ৭০ মিটার এবং গর্ত ২০ মিটার দীর্ঘ; যদিও এটি প্রাকৃতিক কোনো গর্ত নয়। ১৯৭১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রাকৃতিক গ্যাসসমৃদ্ধ দারউয়িজি এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানের সময় অনুসন্ধানকারীরা গ্যাসবহুল গুহার মধ্যে মৃদু স্পর্শ করলে দুর্ঘটনাক্রমে মাটি ধসে পুরো ড্রিলিং রিগসহ পড়ে যায়। পরিবেশে বিষাক্ত গ্যাস প্রতিরোধ করার জন্য ভূতত্ত্ববিদরা তখন গ্যাস উদ্গিরণ মুখটি জ্বালিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা আশা করেছিলেন যে এর ফলে কয়েক দিনের মধ্যে গ্যাস উদ্গিরণ বন্ধ হবে। কিন্তু তা আর হয়নি। ৪০ বছর ধরে অগ্নিমুখটি অনবরত জ্বলছে।

সুপারনোভা

0 comments
সুপারনোভা এক ধরনের নাক্ষত্রিক বিস্ফোরণ, যা প্রচণ্ড উজ্জ্বল এবং এত বেশি আলো উদ্গিরিত করে যে তা একটি সম্পূর্ণ গ্যালাক্সির উজ্জ্বলতাকে প্রায়ই ছাড়িয়ে যায়। একটি সুপারনোভা এত বেশি শক্তি নির্গত করতে পারে যে তা আমাদের সূর্য হয়তো তা সারা জীবনেও নির্গত করতে পারবে না। বিস্ফোরণের সময় এর অভ্যন্তরস্থ তারার সব পদার্থ সেকেন্ডে প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার বেগে বাইরের দিকে ছুড়ে মারে। পাশে অবস্থিত সব আন্তনাক্ষত্রিক মাধ্যমে প্রচণ্ড শকওয়েব বয়ে নিয়ে যায়। এ শকওয়েব কয়েক আলোক বর্ষ দূর পর্যন্ত সুপারনোভা বিস্ফোরণের ধুলাবালি ও ধোয়া বয়ে নেয়।
আমাদের মিল্কি-ওয়ের মতো সাইজের গ্যালাক্সিতে প্রতি ৫০ বছরে একটি করে সুপারনোভা সংঘটিত হতে পারে। ১৮৫ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম একজন চাইনিজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী সুপারনোভা পর্যবেক্ষণ করেন। আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল সুপারনোভা ছিল SN1006। সবচেয়ে বেশি পর্যবেক্ষণ করা সুপারনোভার নাম SN1054। আমাদের গ্যালাক্সিতে সর্বশেষ সংঘটিত দুটি সুপারনোভা SN1572 ও SN1604 খালি চোখেই দেখা গিয়েছিল। প্রতিটি সুপারনোভার নামের প্রথমে ঝঘ এবং পরবর্তী সময়ে বছরের নাম এবং এর সঙ্গে বিভিন্ন ইংরেজি বর্ণমালা ব্যবহার করা হয়। বছরের প্রথম ২৬টি আবিষ্কৃত সুপারনোভার নামের সঙ্গের অ থেকে ত পর্যন্ত বড় হাতের অক্ষর বসানো হয়। পরবর্তী সময়ে আবিষ্কৃত সুপারনোভাগুলোর নামের সঙ্গে ছোট হাতের অক্ষর জোড়ায় জোড়ায় অর্থাৎ aa, ab, ac-এভাবে ব্যবহৃত হয়। এখন প্রায় প্রতিবছরই প্রচুর সুপারনোভা আবিষ্কৃত হয়। ২০০৫ সালে ৩৬৭টি, ২০০৬ সালে ৫৫১টি, ২০০৭ সালে ৫৭২টি সুপারনোভা আবিষ্কৃত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, ৪৪৩.৭ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে প্রায় ১০০ আলোক বর্ষের কিছু কম দূরত্বে একটি সুপারনোভার বিস্ফোরণ হয়েছিল। যা পৃথিবীতে বয়ে এনেছিল অর্ডোভিসিয়ান অভিশাপ। যার কারণে পৃথিবীর সমুদ্র থেকে প্রায় ১০০ পরিবার বিলুপ্তিসহ প্রায় ৬০ শতাংশ প্রাণীর মৃত্যু হয়।

তিনবিঘা করিডর ও দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল

0 comments
পাটগ্রাম উপজেলার কুচলিবাড়ী ইউনিয়ন ও দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলের মাঝখানে তিনবিঘা করিডরটি অবস্থিত। ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যাতায়াতের একমাত্র পথ হচ্ছে এই করিডরটি। পাটগ্রাম উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগের সময় সীমান্ত এলাকাগুলো যাতে সুষ্ঠুভাবে বণ্টিত হয়, এ জন্য গঠিত হয়েছিল Radcliffe Commission। ব্রিটিশদের ডিভাইড অ্যান্ড রুলনীতির সার্থক প্রয়োগ করে Radcliffe Commission সীমান্ত এলাকাগুলোকে এমনভাবে ভাগাভাগি করেছিল, যাতে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ বিরাজ করে, যার দৃষ্টান্ত ছিটমহলগুলো। এর মধ্যে লালমনিরহাট জেলাধীন পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ছিটমহল দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ব্যাপকভাবে পরিচিত। এ ছিটমহলের সঙ্গে তৎকালীন পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগের জন্য একটি 'প্যাসেজ ডোর'-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল, যা বর্তমানে 'তিনবিঘা করিডর' নামে পরিচিত। পাকিস্তান আমল পেরিয়ে বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত তিনবিঘা হস্তান্তর প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের অনেক বৈঠক এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহল পাটগ্রাম উপজেলার একটি স্বতন্ত্র ইউনিয়ন 'দহগ্রাম ইউনিয়ন' হিসেবে পরিগণিত হয় এবং ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ আগস্ট এখানে ইউনিয়ন পরিষদের শুভ উদ্বোধন ঘটে। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন ইজারার মাধ্যমে ওই তিনবিঘা বাংলাদেশকে প্রদান করা হয়। তবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক ঘণ্টা পর পর করিডর দিয়ে বাংলাদেশিদের যাতায়াতের সুযোগ দেওয়া হয়। অতঃপর করিডর দিন-রাত খোলা রাখার জন্য দাবি উত্থাপিত হলে ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ এপ্রিল থেকে তা সকাল ৬টা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬-৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হাসিনা-মনমোহন বৈঠকে স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশিদের যাতায়াতের জন্য তিনবিঘা করিডর বর্তমানে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হচ্ছে।

অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ

0 comments
অ্যান্টার্কটিকা একটি মহাদেশ। কুমেরু অর্থাৎ দক্ষিণ মেরু_এ মহাদেশে অবস্থিত। এই মহাদেশ পরিবেষ্টন করে আছে দক্ষিণ মহাসাগর (লক্ষণীয় : সুমেরুতে কেবল উত্তর মহাসাগর আছে কিন্তু জমি নেই)। অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর শুধু দক্ষিণতমই নয়, শীতলতম ও শুষ্কতম মহাদেশ। এর গড় উচ্চতা ও বায়ু প্রবাহবেগও মহাদেশগুলোর মধ্যে সর্বাধিক। অ্যান্টার্কটিকাকে একটি মরুভূমি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ সেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ২০০ মিমি (৮ ইঞ্চি), তাও আবার কেবল উপকূলের কাছাকাছি। ভেতরের দিকে এ পরিমাণ আরো কম। সেখানে স্থায়ীভাবে মানুষ বাস করে না, তবে মহাদেশজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন গবেষণা স্টেশনে এক থেকে পাঁচ হাজার মানুষ বছরের বিভিন্ন সময় অবস্থান করে। প্রবল শৈত্যের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম উদ্ভিদ ও প্রাণীই_এ মহাদেশে টিকে থাকতে সক্ষম। এর মধ্যে রয়েছে পেঙ্গুইন, সিল, নেমাটোড, টার্ডিগ্রেড, মাইট, বিভিন্ন প্রকার শৈবাল ও অন্যান্য মাইক্রোঅর্গানিজম এবং তুন্দ্রা উদ্ভিদগুলো। এ মহাদেশটি মানুষের চোখে ধরা পড়ে ১৮২০ সালে। রুশ অভিযাত্রী মিখাইল লাজারেভ ও ফাবিয়ান গটলিয়েব ফন বেলিংসেন সর্বপ্রথম এ মহাদেশের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। তবে উনিশ শতকের বাকি অংশজুড়ে অ্যান্টার্কটিকা বিস্মৃতি অবস্থায়ই রয়ে যায়। যার কারণ ছিল মহাদেশটির চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া, জীবনধারণের প্রয়োজনীয় উপাদানের অপ্রতুলতা ও বিচ্ছিন্নতা। অ্যান্টার্কটিকা নামটির প্রথম আনুষ্ঠানিক ব্যবহার করেন স্কটিশ কার্টোগ্রাফার জন জর্জ বার্থলোমে।
১৯৫৯ সালে ১২টি দেশের মধ্যে অ্যান্টার্কটিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়; যাতে বর্তমানে ৪৬টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তির মাধ্যমে অ্যান্টার্কটিকায় সামরিক কর্মকাণ্ড ও খনিজসম্পদ খনন নিষিদ্ধ, বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে সহায়তা এবং মহাদেশটির ইকোজোন সুরক্ষিত করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের চার হাজারেরও বেশি বিজ্ঞানী অ্যান্টার্কটিকায় বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন।

অপারেশন সার্চলাইট

0 comments
অপারেশন সার্চলাইট (Operation Searchlight) ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যা, যার মধ্যমে তারা ১৯৭১-এর মার্চ ও এর পূর্ববর্তী সময়ে সংঘটিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিল। এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের আদেশে পরিচালিত, যা ১৯৭০-এর নভেম্বরে সংঘটিত অপারেশন বি্লটজ্-এর পরবর্তী অনুষঙ্গ। অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চের মধ্যে সব বড় শহর দখল করে নেওয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। বাঙালিরা তখন পাল্টা প্রতিরোধ সৃষ্টি করে, যা পাকিস্তানি পরিকল্পনাকারীদের ধারণার বাইরে ছিল। মের মাঝামাঝি সময়ে সব বড় শহরের পতন ঘটার মধ্যে দিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের মূল অংশ শেষ হয়। এই সামরিক আক্রমণ ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে ত্বরান্বিত করে। এই গণহত্যা বাঙালিদের ক্রুদ্ধ করে তোলে; যে কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয় এবং বহু মানুষকে শরণার্থী রূপে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়।
এই ভয়াবহ গণহত্যা ১৯৭১-এর ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করার পেছনের একটি বড় কারণ, যার ফলে বাঙালি মুক্তিবাহিনী দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতাড়িত করার যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং এর ফলাফল স্বরূপ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ কমান্ড 'মিত্র বাহিনী'র কাছে বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করে।

জাতিসংঘ

0 comments
জাতিসঙ্ঘ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘ বিশ্বের জাতিসমূহের একটি সংগঠন, যার লক্ষ্য_আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইন, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি ও মানবাধিকার বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। ১৯৪৫ সালে ৫১টি রাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষর করার মাধ্যমে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং পরবর্তীসময়ে লুপ্ত লীগ অব নেশনসের স্থলাভিষিক্ত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বিজয়ী মিত্রশক্তি পরবর্তীকালে যাতে যুদ্ধ ও সংঘাত প্রতিরোধ করা যায়, এই উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য (যাদের ভেটো দানের ক্ষমতা আছে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, গণচীন হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পাঁচটি বিজয়ী দেশ।
জাতিসংঘের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে অবস্থিত। ভবনটি ইস্ট নদীর তীরে অবস্থিত। সাংগঠনিকভাবে জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘের প্রধান অঙ্গ সংস্থাগুলো হলো_সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, সচিবালয়, ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল ও আন্তর্জাতিক আদালত। এ ছাড়া রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ইত্যাদি। জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘের প্রধান নির্বাহী হলেন এর মহাসচিব। ২০০৭ সালের জানুয়ারির ১ তারিখ হতে মহাসচিব পদে রয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বান কি মুন। ২০১১ সালের তথ্যানুসারে জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘের সদস্য সংখ্যা ১৯৩। জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘে যোগদানকারী সর্বশেষ সদস্যরাষ্ট্র হলো দক্ষিণ সুদান (২০১১ সালের ১৪ জুলাই, ১৯৩তম)। যার রাজধানী জুবা। জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষা হলো আরবি, চীনা, ইংরেজি, ফরাসি, রুশ এবং স্পেনীয় ভাষা। জাতিসংঘ সচিবালয়ে যে দুটি ভাষা ব্যবহৃত হয় তা হলো ইংরেজি ও ফরাসি। জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষাগুলোর মধ্যে ইংরেজি ৫২টি সদস্য দেশের সরকারি ভাষা। ফরাসি হলো ২৯টি দেশের, আরবি ২৪টি দেশের, স্পেনীয় ২০টি দেশের, রুশ চারটি দেশের এবং চীনা ভাষা দুটি দেশের সরকারি ভাষা।

শাঁখারীবাজার, পুরান ঢাকা

0 comments
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী একটি এলাকার নাম শাঁখারীবাজার। শাঁখারিদের তৈরি শাঁখার জন্য বিখ্যাত ছিল ঢাকা। শাঁখারিদের আবাসিক এলাকা হিসেবে এটি এখনও বহন করছে নানা স্মৃতি ও ঐতিহ্য। ১৮৮৩ সালে বাংলায় শাঁখারিদের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৪৫৩ জন। তার মধ্যে পূর্ববঙ্গে বাস করতেন ২ হাজার ৭৩৫ জন। ঢাকায় ৮৩৫ জন এবং বাকিরা বাস করতেন বাখরগঞ্জে। পূর্ববঙ্গে শাঁখারিরা এসেছিলেন বল্লাল সেনের সঙ্গে। বিক্রমপুরে তাদের সেই স্মৃতি বহন করেছিল একটি বাজার। সেটি হলো শাঁখারীবাজার। সতের দশকে লাখেরাজ জমির প্রলোভন দেখিয়ে মোগলরা ঢাকায় এসে শাঁখারিদের নতুন শহর ঢাকায় নিয়ে আসে। সে সময় শাঁখারিরা ঢাকায় এসে একটি অঞ্চল বেছে বসবাস শুরু করেন। যেটি বর্তমানে শাঁখারীবাজার নামে সবার কাছে পরিচিত। ১৬৬৬ সালে পর্যটক ট্যাভারনিয়ার যখন ঢাকায় আসেন, তখন এ অঞ্চলে শাঁখারিদের বসবাস করতে দেখেন।
সেই থেকে এখনও একটি গ্রুপ পেশা ও পুরনো রীতিনীতি অক্ষুণ্ন রেখে একই জায়গায় বসবাস করছেন। এখন যেমন গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার জমি উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়, এরূপ উনিশ শতকের মধ্যভাগে শাঁখারীবাজারের জমির উচ্চমূল্য ছিল। শাঁখারিদের বাসগৃহের স্থাপত্য ছিল একটু স্বতন্ত্র ধরনের। ওয়াইজের মতে, লাখেরাজ শাঁখারিদের দেওয়া জমি আয়তনে ছিল ক্ষুদ্র। সেই আয়তন মেনেই নির্মিত হয় বাসগৃহ। সেই বাসগৃহ ছিল দোতলা। সামনে মূল ফটক হতো ছয় ফুটের মতো। করিডোর ছিল ২০-৩০ ফুট লম্বা। শাঁখারিদের অধিকাংশ ছিলেন নিরামিষভোজী এবং বিষ্ণু বা কৃষ্ণের অনুসরণকারী। ভাদ্রের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতো তাদের প্রধান উৎসব। এ সময় তারা পাঁচ দিন কাজ করতেন না। পূজা করতেন অগস্ত্য ঋষির। তাদের মতে, শঙ্খ অসুর নামে এক দানবকে অগস্ত্য হত্যা করেন। হত্যার জন্য যে করাত ব্যবহার হতো, সে করাত দিয়ে শাঁখারিরা শাঁখা কাটেন। শাঁখারীবাজারের বাইরে কোনো শাঁখারি বাস করলে তাকে করা হতো সমাজচ্যুত। সে কারণে হয়তো একই জায়গায় যুগ যুগ ধরে বাস করছেন। ওয়াইজের মতে, শাঁখারিরা নোংরাভাবে বাস করতেন। ফলে প্রায়ই মহামারী দেখা দিত। শাঁখারি মহিলারা ছিলেন পর্দানসীন। এরা খুব অপমানিত বোধ করতেন। শাঁখারীবাজারে এখনও শাঁখারি রয়েছে। যদিও সংখ্যায় কম। এ এলাকাটি খুবই ঘিঞ্জি। দালানগুলো অতি পুরনো। এখানে অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের বসতি। পুরনো ভবনের ফাঁকে ফাঁকে গড়ে উঠেছে নতুন ভবন। এখানকার রাস্তা সরু। বড় বড় যানবাহন চলতে পারে না। শাঁখারীবাজার এখনও ধরে রেখেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য।

নিমতলী প্রাসাদ, ঢাকা

0 comments
কার্জন হল থেকে অল্প দূরত্বে বর্তমান এশিয়াটিক সোসাইটির পেছনে এবং অমর একুশে হলের পশ্চিম পাশেই রয়েছে নিমতলী প্রাসাদ। মূল প্রসাদটি ধ্বংস হয়ে গেলেও এর আকর্ষণীয় ফটকটি এখনও ধ্বংসের প্রহর গুণছে। ধারণা করা হয় ব্রিটিশ আমল লে. সুইনটিন ১৭৬৬ খ্রীস্টাব্দে নায়েব নাজিম জসরত খানের বাসস্থান হিসেবে নিমতলী প্রাসাদও ফটক নির্মাণ করেন। ঢাকায় নায়েব নাজিমগণ ১৮৪৩ সাল পর্যনত্দ এখানে বসবাস করেন।
১৭০২ সালে মুর্শিদকুলি খাঁ সুবে বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে পরিবর্তন করে মুর্শিদাবাদ নিয়ে যান এবং তিনি বাংলার নাজিম নিয়োগপ্রাপ্ত হন। রাজধানী স্থানান্তর করলেও পূর্ববঙ্গকে শাসনের সুবিধার্থে ঢাকায় নিয়াবত স্থাপন করেন। ফলে ঢাকার শাসনকর্তার পদটির নাম হয় নায়েব নাজিম। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানি লাভের পর ঢাকার নায়েব নাজিম জেসারত খানের বংশধররাই ছিল ঢাকার শেষ নায়েব নাজিম। স্থানীয়ভাবে তাদের উপাধি ছিল 'নবাব'। সেই সময়ে ঢাকার নায়েব নাজিমরা চকের মোগল দুর্গেই বসবাস করতেন। ঐতিহাসিক ড. দানীর মতে, লে. সুইনটন ঢাকার ভার গ্রহণ করেছিলেন ১৭৬৪ সালে। সুইনটনের থাকার জন্য জেসারত খান দুর্গ ত্যাগ করে চলে যান বড় কাটরায়। কলকাতা পরিষদ শিগগিরই নায়েব নাজিমদের জন্য নতুন বাসস্থান তৈরি করতে সুইনটনকে নির্দেশ দেয়। নিমতলীতে নতুন প্রাসাদ নির্মাণ দ্রুততার সঙ্গে ১৭৬৬ সাল নাগাদ সম্পন্ন হয়। নিমতলীতে প্রাসাদ নির্মাণের পর জেসারত খান সেই প্রাসাদে ওঠেন। এরপর নিমতলী প্রাসাদ পরিচিত হয় নায়েব নাজিমদের বাসস্থান হিসেবে। উনিশ শতকে এলাকাটি 'নবাবি দালান' নামে পরিচিত ছিল। নিমতলী প্রাসাদটি ছিল বিশাল এক বর্গাকার চত্বরে ভিন্ন অট্টালিকা সংবলিত। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে আলম মুসাওয়ারের আঁকা ঈদ ও মহররমের মিছিলের ছবি থেকে অনুমান করা যায় নিমতলী প্রাসাদটি দ্বিতল বিশিষ্ট এবং প্রাসাদের ছাদ সম্ভবত সমান্তরালই ছিল। প্রাসাদটির চারপাশে বেশ গাছ-গাছালিও ছিল। চারদিকে ইটের দেয়াল দেওয়া প্রাসাদটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল একটি বাগান এবং একটি বিশাল দীঘি, যার কিছু অংশ এখনও রয়েছে ফজলুল হক হলের পাশে। এশিয়াটিক সোসাইটির পেছনে বর্তমানে বিদ্যমান একমাত্র গেট নিমতলী দেউরি। ধরে নেওয়া যেতে পারে যে এটি মোগলদের সচরাচর প্রাসাদের নকশা অনুসারে নির্মিত হয়েছিল। এখানে ছিল আরও অনেক গেট, অভ্যন্তরীণ অঙ্গন, নিভৃত বাসস্থান, প্রার্থনার জন্য নির্দিষ্ট স্থান, সৈন্যদের ব্যারাক ও কর্মচারীদের আবাস প্রভৃতি। ক্ষমতা না থাকলেও নায়েব নাজিমদের মোটামুটি জৌলুস তখনও বজায় ছিল। মূলত তাদের পৃষ্ঠপোষকতায়ই ঢাকায় তখন চালু হয়েছিল ঈদ ও মহররমের মিছিল। এসব মিছিল তখন নিমতলীর প্রাসাদ থেকে শুরু হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে আবার নিমতলীতে এসে শেষ হতো। প্রাসাদের অভ্যন্তরের বর্ণনা পাওয়া যায় ১৮২৪ সালে ঢাকায় ভ্রমণে আসা কলকাতার বিশপ রেজিল্যান্ড হেবারের কাছ থেকে। সে সময় ঢাকার নায়েব নাজিম ছিলেন শামসউদ্দৌলাহ। সে সময় শামসউদ্দৌলার সঙ্গে দেখা করার জন্য নিমতলীতে যান। নবাবকে সম্মান দেখানোর জন্য এক কোম্পানি সৈন্য রাখা হতো। প্রাসাদে ছিল সুন্দর একটি ফটক, খোলা গ্যালারিসহ সেখানে ছিল নহবতখানা। দ্বিতীয় তলায় ছিল গথিক রীতিতে নির্মিত একটি সুন্দর হলঘর। ঘরের ভেতর বড় গোলাকার একটি টেবিল লাল কাপড়ে ঢাকা মেহগনি কাঠের চেয়ার, চমৎকার বড় বড় দুটি কনভেক্স আয়না, সাধারণ দুটি আয়না। এভাবেই ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যায় মানুষের হাতে ঢাকার এককালীন মোগল ঐতিহ্য। তবে পুরো প্রাসাদটি ধ্বংস হয়ে গেলেও নায়েব নাজিমদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এখনও টিকে রয়েছে 'নিমতলীর দেউরি' এবং 'বারোদুয়ারি'।


---রিবেল মনোয়ার

রাজবাড়ী

0 comments
আয়তন
১১১৮.৮ বর্গ কিলোমিটার
প্রধান নদী
পদ্মা, চন্দনা, হড়াই, গড়াই, কুমার ও চিত্রা
অন্যান্য দর্শনীয় স্থান বেলগাছির দোলমঞ্চ, চাঁদ সওদাগরের ঢিবি, শিঙ্গা গায়েবি মসজিদ, গোয়ালন্দ বিজয় বাবুর মন্দির, পাংশার বৌদ্ধ সংঘারাম, রাজা সীতারামের পুষ্করিণী, মদাপুরের রাজরাজেশ্বর মন্দির ইত্যাদি

ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে সাউদিয়া, সৌহার্দ্য, এমএম, রাজবাড়ীসহ বেশ কিছু পরিবহনের বাসে রাজবাড়ী যাওয়া যায়। ভাড়া ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা।

নলিয়া জোড়বাংলা মন্দির

বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নলিয়া গ্রামে এই মন্দির। সতেরো শতকে তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রতিবছর এখানে দোল উৎসব হয়। রাজবাড়ী থেকে বালিয়াকান্দি উপজেলা সদর হয়ে নলিয়া গ্রামে যাওয়া যায়। বাসভাড়া ৪০ টাকা।


কল্যাণ দিঘি

বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের খালকুলা গ্রামে এই দিঘিটি। আয়তন বিশ একরের মতো। জনশ্রুতি আছে, অনেক আগে কোনো এক সময় এখানে পানির অভাব দেখা দিলে কল্যাণ নামের এক ব্যক্তি দিঘিটি খনন করান। প্রথমে রাজবাড়ী থেকে বাসে বহরপুর বাজারে যেতে হয়। সেখান থেকে রিকশাভ্যান অথবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় কল্যাণ দিঘি পর্যন্ত যেতে খরচ হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।


মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র

বিষাদসিন্ধুর রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের সমাধি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এখানে একটি স্মৃতিকেন্দ্র গড়ে তুলেছে। প্রায় দেড় হাজার গ্রন্থের একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার আছে স্মৃতিকেন্দ্রে। আরো আছে দলিলপত্রের সংগ্রহশালা, ১০০ আসনের সভাকক্ষ এবং একটি বিশ্রামাগার। কেন্দ্রের প্রবেশমুখে মীর সাহেবের একটি আবক্ষ মূর্তিও আছে। উল্লেখ্য, লেখক দীর্ঘদিন ফরিদপুর নবাব এস্টেটে চাকুরি করেছেন। রাজবাড়ী থেকে বাসে কালুখালী উপজেলার সেনাপুর মোড়ে যেতে হয়। সেখান থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় স্মৃতিকেন্দ্রে যাওয়া যায়। খরচ ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট

ব্রিটিশ আমলে গোয়ালন্দকে বলা হতো গেটওয়ে অব বেঙ্গল। লঞ্চঘাটটি দৌলতদিয়া ঘাট নামে পরিচিত। এখানে বাংলাদেশের দুটি বড় নদী পদ্মা ও যমুনার মিলন ঘটেছে। পদ্মার ইলিশের জন্যও জায়গাটি বিখ্যাত ছিল সে সময়। ঢাকা থেকে বাসে পাটুরিয়া ঘাট হয়ে লঞ্চ অথবা ফেরিতে দৌলতদিয়া যাওয়া যায়। খরচ ১০০ টাকা।

লেখা ও ছবি : জাহাঙ্গীর হোসেন

পানিহাটা, শেরপুর

0 comments
বন, পাহাড়, নদী আর ঝরনা নিয়ে এই পানিহাটা। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী জনপদ। এখানে আরো আছে সহজ-সরল আদিবাসী মানুষের দল। সেদিন মেঘে আকাশ ভার হয়ে ছিল। শেষ হাসি অবশ্য সূর্যই হেসেছিল, তবে ততক্ষণে ৯টা বেজে গেছে। শেরপুর শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রওনা হই নালিতাবাড়ী। আধঘণ্টার একটু বেশি লাগল নালিতাবাড়ী পেঁৗছতে। হাসপাতালের সামনে অপেক্ষা করছিল স্থানীয় সাংবাদিক মনির। আগে থেকেই কথা ছিল। একটি চায়ের দোকানে খানিক জিরিয়ে নিয়ে মনিরের মোটরসাইকেলে চেপে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের পথ ধরে রওনা হই। পৌর শহরের গড়কান্দা চৌরাস্তা হয়ে সোজা উত্তরে চারালি বাজার পার হলে নাকুগাঁও। পরে পূর্ব দিকে মোড় নিলে দারুণ সুন্দর চারালি ভোগাই ব্রিজ। এরপর পূর্ব দিকেই প্রায় তিন কিলোমিটার যাওয়ার পর চায়না মোড়। এখান থেকে পথ গেছে উত্তরে। গাছগাছালিতে ঘেরা রাস্তাটি পাহাড় ঘেঁষে। প্রায় আধা কিলোমিটার যাওয়ার পর পাওয়া যায় পানিহাটা। এখানে দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে চলেছে ভোগাই নদী। এর পারে পাহাড়ের ঢালে পানিহাটা খ্রিস্টান মিশন। মিশনের সামনে গিয়ে থামল আমাদের মোটরসাইকেল। এরপর উঁচু-নিচু টিলাপথে ভোগাইয়ের তীর ধরে পথ চললাম। পথে এক দোকানি নূরুজ্জামান, মনিরের আগের চেনা, খুব খাতির করল, চা-বিস্কুট না খাইয়ে ছাড়ল না। প্রবীণ মারাক আর ম্যাট্রিকেল সাংমা_দুই গারো আমাদের সঙ্গী হলেন এখান থেকে।

পানিহাটা নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে। একেবারে গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে। দূরের পাহাড়গুলোতে মেঘের লুকোচুরি। ওই পাহাড়েই মেঘালয়ের তুরা শহর। ভোগাইও এসেছে ওই পাহাড় থেকেই। এর পানি স্বচ্ছ টলটলে। ভারতের প্রান্তে ব্রিজের ওপর দুজন বিএসএফকে টহল দিতে দেখা যাচ্ছে। সেগুন, গজারি আর আকাশমণির বাগান থেকে পাখিরা বার্তা পাঠাচ্ছে কিচিরমিচির শব্দে। পথে পায়ে বাধছে ছোট ছোট বুনো গাছ-লতাগুল্ম। ম্যাট্রিকেল জানালেন, এখন পানিহাটার পাহাড়ে বন্য হাতি আছে। রাতে লোকালয়ে নেমে আসে।

খ্রিস্টান মিশনে উপাসনালয়, চিকিৎসাকেন্দ্র, বিদ্যালয় আর শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য হোস্টেল আছে। মিশনের অল্প পুবে আদিবাসী গ্রাম ফেক্কামারী। ৪৫-৫০টি পরিবারের বাস পাড়াটিতে। পাড়ার পূর্ব দিকে পাহাড়ঘেরা পানিহাটা বিল। বিলে অনেক মাছ_চাষ হয় যে!
দুপুর গড়াতে শুরু করেছে। নূরুজ্জামানের দোকানে বনরুটি আর কলা খেয়ে নিলাম। চাও খেলাম শেষে। সূর্য আরেকটু পশ্চিমে হেললে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের দিকে গেলাম। আধঘণ্টা বন্দর ঘোরাঘুরি করে ফিরে এলাম নালিতাবাড়ী। মুড়ি আর চা নিয়ে নালিতাবাড়ী প্রেসক্লাবে তখন আড্ডা দিচ্ছিলেন সাংবাদিক হীরা ভাই, সোহেল ও লাল মোহাম্মদ। আমি আধঘণ্টা থাকলাম আড্ডায়। সন্ধ্যা ঘনালে ফেরার পথ ধরলাম।


কিভাবে যাবেন
কোথায় থাকবেন
ঢাকার মহাখালী থেকে বিলাস পরিবহনের বাসে নালিতাবাড়ী যাওয়া যায়। সময় লাগে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। ভাড়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। নালিতাবাড়ী শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে পানিহাটা যেতে সময় লাগে ৩৫ থেকে ৪৫ মিনিট। মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার যাতায়াত ভাড়া দুই শ থেকে আড়াইশ টাকা। নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় থাকার ব্যবস্থা আছে।

--হাকিম বাবুল

মুসা খানের মসজিদ

0 comments
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শহীদুল্লাহ হল ও আশপাশের এলাকাজুড়ে একসময় ছিল বিশাল বাগান। তখন এর নাম ছিল বাগ-ই-মুসা খাঁ। ঐতিহাসিকদের মতে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ওই বাগান তৈরি করেছিলেন ইতিহাসখ্যাত বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁর ছেলে মুসা খান। এখন এ জায়গায় বাগান কিংবা আরণ্যক পরিবেশের ছিটেফোঁটাও নেই। আছে নতুন করে লাগানো কিছু নারিকেল ও কয়েকটি পলাশগাছ। আর কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা_'মুসা খান মসজিদ'।
শহীদুল্লাহ হলের উত্তর-পশ্চিম কোণে তিন গম্বুজবিশিষ্ট প্রাচীন, জরাজীর্ণ এ মসজিদ এখন হঠাৎ করে চোখে পড়ে না। চারপাশে গজিয়ে উঠেছে বহুতল ভবন। নির্দেশক কোনো সাইনবোর্ড নেই। দীর্ঘদিন মসজিদটির সংস্কারও নেই। অনেকটা অনাদর, অবহেলা নিয়ে দাঁড়িয়ে বারো ভুঁইয়াদের অতীত গৌরব। ঈশা খাঁর ছেলে মুসা খানের নামে মসজিদটির নামকরণ। মুসা খানের কবরও রয়েছে কাছেই, মসজিদের উত্তর-পূর্ব পাশে।
বাবা ঈশা খাঁর মতো মুসা খান ছিলেন পরাক্রমশালী ও খ্যাতিমান। রাজধানী ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা সুবাদার ইসলাম খানকে এখানে আসার পথে প্রবল বাধা দিয়েছিলেন তিনিই। কয়েকবার লড়াই হয়েছিল সমানে সমান। তবে শেষ পর্যন্ত হেরে গিয়েছিলেন মুসা খান।
মসজিদের নাম মুসা খান হলেও ধারণা করা হয়, এ মসজিদের নির্মাতা তিনি নন। এর স্থাপত্যরীতি দেখে ঐতিহাসিকরা মত দেন, শায়েস্তা খানী রীতিতে নির্মিত মসজিদটি আসলে নির্মাণ করেছিলেন মুসা খানের ছেলে মাসুম খান কিংবা পৌত্র দিওয়ান মুনওয়ার খান। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়াও তাঁর 'বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ' বইয়ে এটি উল্লেখ করেছেন। পিতা বা পিতামহের নামে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছিল বলেই লেখকের অনুমান। মসজিদে কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি বলে এর সঠিক নির্মাণকাল ও নির্মাতার নাম নিয়ে এ ধরনের ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। সপ্তদশ শতকের শেষ থেকে অষ্টাদশ শতকের শুরুর মধ্যে মসজিদটি নির্মিত বলে ঐতিহাসিকদের অনুমান।
মুসা খান মসজিদ দেখতে খাজা শাহবাজের মসজিদের (তিন নেতার মাজারের পেছনে) মতো। ভূমি থেকে উঁচু মঞ্চের ওপর মসজিদটি নির্মিত। নিচে অর্থাৎ মঞ্চের মতো অংশে আছে ছোট প্রকোষ্ঠ। এগুলো এখন বন্ধ। দক্ষিণ পাশ দিয়ে ১২ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় মসজিদের দরজায়। পূর্ব দিকে খোলা বারান্দা। চওড়া দেয়াল। পূর্ব-পশ্চিমের দেয়াল ১ দশমিক ৮১ মিটার ও উত্তর-দক্ষিণের দেয়াল ১ দশমিক ২ মিটার চওড়া। পূর্বের দেয়ালে তিনটি ও উত্তর-দক্ষিণে দুটি খিলান দরজা। ভেতরে পশ্চিম দেয়ালের মধ্যে একটি প্রধান এবং পাশে দুটি ছোট মেহরাব। চারপাশের দেয়ালে মোগল রীতির নকশা। বাইরের দেয়ালের চার কোণে চারটি মিনারখচিত আট কোণ বুরুজ। এর পাশে ছোট ছোট মিনার। বুুরুজ ও ছোট মিনার ১৬টি। ছাদে তিনটি গম্বুজ। মাঝেরটি বড়। ওপরের কার্নিশ নকশাখচিত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের বাইরের দেয়ালের পলেস্তারা খসে গেছে। ছাদ ও কার্নিশে জন্মেছে পরগাছা। অজুখানা ও শৌচাগারেরও বেহাল অবস্থা।
এখানে যাঁরা নিয়মিত নামাজ পড়তে আসেন, তাঁদের দাবি মসজিদটি সংস্কার করা হোক। ষাটোর্ধ্ব কেরামত উল্লা আক্ষেপ করে বলেন, 'এটি আমাদের একটি গৌরব। কিন্তু মসজিদটি দেখার কেউ নেই।'

নওশাদ জামিল

হাজী খাজা শাহবাজের মসজিদ

0 comments
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আরেকটি প্রত্নতাত্তি্বক স্থাপনা হাজী খাজা শাহবাজের মসজিদ। শিশু একাডেমীর লাগোয়া উত্তর কোনে রয়েছে এ মসজিদটি। ৬৮*২৬ফুট আয়তনের এ মসজিদের চারকোণে চারটি আটকোণা বাতির মিনার বা টারেট আছে। এগুলো কার্নিশের অনেক উপরে উঠে নিরেট ছোট গম্বুজে শেষ হয়েছে। পূর্ব দেয়ালে রয়েছে তিনটি প্রবেশ পথ। মসজিদের প্রায় ৫০ ফুট উত্তর পূর্বে একখন্ড উঁচু জায়গায় রয়েছে হাজী খাজা শাহবাজের সমাধি। হাজী শাহবাজ তার মৃত্যুর আগেই এ মাজার নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। মসজিদের পশ্চিম পাশেই রয়েছে আমাদের তিন নেতার মাজার এবং তার সামনেই দেখা যাবে প্রাচীন ঢাকা গেট।

ছবির উৎসঃ হরপ্পা

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি

0 comments
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশেই রয়েছে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি। কবির জীবনের তীব্র মর্মকামনা পূরণ করতেই তাকে এ মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয় ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট। কবি নজরুলের সমাধির পাশেই রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, পটুয়া কামরুল হাসান প্রমুখের সমাধিও।

Saturday, July 28, 2012

ঝাড়বাড়ি, বীরগঞ্জ, দিনাজপুর

0 comments
আটষট্টি হাজার গ্রামের এই বাংলাদেশ। শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো এই গ্রামগুলো এবং তার নামকরণ নিয়ে আছে নানা জনশ্রুতি। কোনোটা সত্য, কোনোটা আবার শুধুই মিথ। গ্রামবাংলা এবং তার জনশ্রুতি নিয়ে আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজন। আজ শুনুন দিনাজপুরের বীরগঞ্জের ঝাড়বাড়ি গ্রামের গল্প।


ইতিহাস
সতেরশ' শতকের দিকে রামলাল ছিলেন বীরগঞ্জের কিছু এলাকার জমিদার। প্রতিপত্তিশালী এই জমিদারের পরগনা ছিল সুজলা-সুফলা। কিন্তু একটা এলাকা ছিল একেবারেই জঙ্গলাকীর্ণ। শুধু বাঁশ, বেতের ঝোপ আর বড় বড় আকাশ ছোঁয়া গাছ। জমিদার বিলাসী মানুষ ছিলেন। শিকার ছিল তার নেশা। অনেক সময় দিনের পর দিন শিকারে কাটিয়ে দিতেন। শিকারে গিয়ে শ্রান্তির জন্য এবং রাত কাটাতে জমিদার রামলাল জঙ্গলে এক বাংলোবাড়ি বানান। তার নাম দেন জঙ্গলবাড়ি। ঝাড়ের আধিক্য থাকার কারণে পরবর্তীতে মানুষের মুখে মুখে ঝাড়বাড়ি নামটা প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়।
ঝাড়বাড়িতে একদিন
অসীম আয়তনের জঙ্গল। যতদূর চোখ যায় শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল। জঙ্গলের পাশ ঘেঁষে আছে কিছু বসতি_ তাও খুব বেশি নয়। তবে অনেক খুঁজেওজমিদারের বাগানবাড়ির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া গেল না। বাঁশের ঝাড়, বড় বৃক্ষের সঙ্গে মিলেমিশে আছে বেতের ঝাড়। আর আছে জঙ্গলের মাঝে মাঝে ফসলের ক্ষেত। সবুজ ধানের চারায় ভরা ক্ষেত দূর থেকে দেখে শিল্পীর তুলিতে ইজেলে ধরা ল্যান্ডস্কেপের শিল্পকর্ম যেন। বিরাট জঙ্গলের কোথাও আবার কুল কুল করে বয়ে গেছে সাপের শরীরের মতো আঁকাবাঁকা নদী। দেখে বোঝা যায়, এক সময় নদীগুলো দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে পানি পরিবহন করত। এখন নদীতে যে পরিমাণ পানি আছে তা পরিবহন করা তো দূরে থাক, উত্তরাঞ্চলের পানির চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে। আর একই অবস্থা জঙ্গলেরও। ঝাড়ের অর্ধেকও আর অবশিষ্ট নেই জঙ্গলে।

অনিন্দিতা রাজকন্যা

হাম্মাম জলপ্রপাত

0 comments
প্রকৃতির অপরূপ লীলাভুমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমা বনাঞ্চলের সীমান্তবর্তী গহীন অরন্যে সন্ধান পাওয়া গেছে নতুন রোমাঞ্চকর নয়নাভিরাম এক জলপ্রপাত। স্থানীয়রা একে হাম্মাম বলে। গোসল খানাকে আরবীতে হাম্মাম বলে ও জলের স্রোতধ্বনীকে ত্রিপুরার টিপরা ভাষায় হাম্মাম বলে তাই এ জলপ্রপাতটি হাম্মাম বা হাম হাম নামে পরিচিত। উপড়ে যে স্থান থেকে জল পড়ে সেখান থেকে ২শত ফুট পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা সীমানা।
পাহাড়ী অধিবাসীরা বলেন, পানি পতনের স্থানে এক সময় পরীরা গোসল করত। জলপ্রপাতটি ২০১০ খ্রিস্টাব্দের শেষাংশে পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মার সাথে দুর্গম জঙ্গলে ঘোরা একদল পর্যটক আবিষ্কার করেন। তারা এর নাম দেন চিতা ঝর্ণা।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৮কিঃমিঃ পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি বন রেঞ্জের কুরমা বনবিট এলাকায় এ ঝরণা'র অবস্থান। এ দর্শনীয় স্থানে যেতে হলে উপজেলা সদর থেকে স্থানীয় মিনিবাস, জীপ, মাইক্রোবাস ও সিএনজি নিয়ে কমলগঞ্জের-কুরমা চেকপোষ্ট পর্যন্ত প্রায় ২৫কিঃ পাকা রাস্তা বাকী ১৩ কিঃ মিঃ মাটির রাস্তায় পায়ে হেঁটে চাম্পারায় চা বাগানের ভেতর দিয়ে কলাবন বস্তি হয়ে মোকামটিলায় গেলে দেখা পাওয়া যায় ১৬০ ফুট উচ্চতা ও ৮০ ফুট প্রস্তের হাম্মাম ঝরণা।

ভ্রমন পিপাষুরা মৌলভীবাজার,কমলগঞ্জ অথবা শ্রীমঙ্গল শহর থেকে যানবাহন ভাড়া করে ভোর ছয়টার মধ্যেই হাম্মামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হয়। গাড়ি ও পায়ে হেটে ৪ ঘন্টা সময় লাগবে গন্তেব্যে পৌছতে। আগত পর্যটকরা বলেন, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত থেকে তিনগুন বড় হয়ে পানি পড়ছে হাম্মাম জলপ্রপাতে। মাধবকুন্ডের চেয়ে উচ্চতায় কম হলেও প্রস্থে অনেক বড়।

পাহাড়ের আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথে ট্রেকিং করা খুবই কঠিন এবং কষ্টের। মাঝেমধ্যে সিমেন্টের ঢালাই করার মতো দেখতে বড় বড় পাথরের খণ্ড খুবই পিচ্ছিল। তাই ট্রেকিং করার সময় সবাইকে একটি করে বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে পাহাড়ী এই পথে সাবধানে হাঁটতে হয়। এই লাটি হচেছ একমাত্র অবলম্বন। সাথে নিতে হয় পানি ও শোকনো খাবার। আপনাকে গন্তব্যে পৌছে দিতে স্থানীয় গাইডের সহযোগিতা পাওয়া যাবে।

পর্যটন শিল্প বিকাশের স্বার্থে ও দেশের অন্যতম জলপ্রপাতটিকে বিশ্বের সকল ভ্রমন পিপাষুদের পরিচয় করিয়ে দিতে দ্রূত গতিতে পর্যটন উপযোগী, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বনের ভিতরে স্থানে স্থানে বিশ্রামের জন্য কয়েকটি পর্যটন ছাউনি তৈরী করে পর্যটকদের উৎসাহিত করবে পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে এ আশা করছেন পর্যটক ও এলাকাবাসী।

Wednesday, July 25, 2012

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

0 comments
ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম প্রান্তে চিরসবুজে ঘেরা গ্রামীণ পরিম-লে ১ হাজার ২৩০ একর এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যামপাস। বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম বিদ্যাপীঠ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং গৌরবমতি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) কৃষি আধুনিকায়ন ও গবেষণায় উলেখযোগ্য অবদান রেখে যাচ্ছে। কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগোপযোগী কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চলছে। ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় আধুনিক কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে দেশের প্রথম এ টেকনিক্যাল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাকৃবি উন্নত মানসম্মত উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা ব্যবস্থার নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে দেশের কৃষি উন্নয়নে গুরুদায়িত্ব বহনে সমর্থ তাত্তি্বক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসমপন্ন দক্ষ কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদ তৈরি ও সরবরাহ করছে। এটি মূলত একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি ও সংশ্লিষ্ট সব বিজ্ঞানের শাখায় শিক্ষাদান, পরীক্ষা পরিচালনা ও অধিভুক্তি প্রদানের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। ছয়টি অনুষদের আওতায় ৪৩টি শিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। এছাড়া ৩৫টি বিভাগ থেকে ৪৪টি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটির ওপর স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের উন্নয়ন, সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ হিসেবে জামালপুরের মেলান্দহে অবস্থিত বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ফিসারিজ কলেজে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ হাজার ৯৭৬ জন স্নাতক, ১২ হাজার ৬২৪ জন স্নাতকোত্তর এবং ৩৪১ জন পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উওীর্ণ বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০১ জন। তাছাড়াও বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে নোবেল লরিয়েট কৃষি বিজ্ঞানী ড. নরম্যান ই বোরলগকে সন্মানসূচক ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদে অধ্যয়নরত রয়েছেন স্নাতক পর্যায়ে ৩ হাজার ১৩৪ জন, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১ হাজার ৩৬৭ জন এবং পিএইচডি পর্যায়ে ২৬২ জন শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষকসংখ্যা ৫১৯। এছাড়া আছেন ৩৮৬ জন কর্মকর্তা, ৫২৯ জন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী এবং ১ হাজার ২৫৬ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) থেকে উত্তীর্ণ কৃষিবিদরা দেশে খাদ্য জোগানোর কাজে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন। আন্তর্জাতিকভাবেও কৃষি গবেষণায় তাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক উপাচার্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট মাৎস্যবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মুহাম্মদ আমিনুল হক বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গবেষণা করে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শস্যের জাত, উৎপাদন কলাকৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন যা দেশের কৃষি প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। এগুলোর মধ্যে বাউকুল, বাউ-৬৩ ও বাউধান-২ নামে দুটি উফশী ধানের জাত, 'সম্পদ' ও 'সম্বল' নামে দুটি উফশী সরিসা জাত, ডেভিস, ব্র্যাগ, সোহাগ ও জি-২ নামে চারটি সয়াবিন জাত, কমলা সুন্দরী ও তৃপ্তি নামে দুটি মিষ্টি আলুর জাত, লতিরাজ, বিলাসী ও দৌলতপুরী নামে তিনটি মুখীকচু জাত, রাইজোবিয়াল জৈব সার উৎপাদন প্রযুক্তি, সয়েল টেস্টিং কিট, পেয়ারার মড়ক দমনের কলাকৌশল, কলা ও আনারস উৎপাদনের প্রযুক্তি, শুষ্ক বা স্বল্প পানিতে ধান চাষ, হাঁস-মুরগির টিকা উৎপাদন, ধানক্ষেতে মাছ ও চিড়ি চাষ, পুকুরে মাছ চাষে সহজলভ্য মৎস্য খাদ্য তৈরি, মাগুর, শিং ও তারাবাইন মাছের কৃ্িত্রম প্রজননের কলাকৌশল, আফ্রিকান ধৈঞ্চার অঙ্গজ প্রজনন, বর্ষব্যাপী পাতাজাতীয় সবজি চাষ, সুষম পোলট্রি খাদ্য, কৃত্রিম পশুপ্রজনন, গোখাদ্য হিসেবে খড়ের সঙ্গে ইউরিয়া- মোলাসেস বকের ব্যবহার, উন্নত ধরনের লাঙ্গল, বাউ জিয়া সার ও বীজ ছিটানোর যন্ত্র, সৌর ড্রায়ার, বায়োগ্যাস প্লান্ট উদ্ভাবন, সবজি শোধন যন্ত্র, ভাইরাস শনাক্তকরণের যন্ত্র, পাতা দেখে রোগ নির্ণয়, পাতা দেখে উৎপাদনের পরিমাণ নির্ণায়নের যন্ত্র, খুঁটে খাওয়া হাঁস-মুরগির উন্নত জাত উৎপাদন, রোগ-প্রতিরোধী বেগুন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেম বা বাউরেসের তত্ত্বাবধানে ৮৬৬টি গবেষণা প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং বর্তমানে এর চলমান প্রকল্পের সংখ্যা ১৫২টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব গবেষণা তৎপরতার ফলে দেশের কৃষি প্রবৃদ্ধিতে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে এমন উলেখযোগ্যসংখ্যক শস্যজাত, উৎপাদন কলাকৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের গৌরব অর্জন করা সম্ভবপর হয়েছে।
জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি সংক্রান্ত গবেষণা সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমপ্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি মানসম্মত বিশেষায়িত ল্যাব গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সিড প্যাথলজি সেন্টার, আইপিএম ল্যাব, বায়োটেকনোলজি ল্যাব, সয়াবিন ও অয়েল সিড ল্যাব, ফিল্ড ফার্টিলিটি ক্লিনিক ল্যাব এবং কেন্দ্রীয় গবেষণাগার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও পশু-পাখিদের রোগ নির্ণয়ের জন্য ভেটেরিনারি ক্লিনিক, ফিল ফারটিলিটি ও উদ্ভিদের রোগ নির্ণয়ের জন্য দেশের তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ও প্রধান প্যান্ট ডিজিজ ক্লিনিক রয়েছে। বাউএক আয়োজিত ৩৬টি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৯ হাজার ৭৯৮ জন কৃষক-কৃষাণীকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তার কাজের উপর ভিত্তি করে 'সংযোগ' নামে একটি নিউজ লেটার প্রকাশিত হয়ে থাকে। তাছাড়াও শিক্ষার্থীদের জ্ঞানকে সমপ্রসারণের জন্য সমপ্রসারণ মাঠ সফরের আয়োজন করে থাকে।
দেশের কৃষি বিজ্ঞানী ও উন্নয়নকর্মীদের মাঝে কার্যকর সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্য সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও বিভিন্ন বিজ্ঞান সমিতির উদ্যোগে ১৫টি উচ্চ মানসম্মত বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি জার্নাল প্রকাশিত হয়ে থাকে। দেশের একমাত্র সেশনজট মুক্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সময়ে জাতীয় কৃষি পুরস্কার হিসেবে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদকসহ অন্যান্য পদক লাভের গৌরব অর্জন করে সেগুলোর মাঝে রয়েছে, বৃক্ষরোপণ, গৃহাঙ্গন পর্যায়ে হাঁস-মুরগি পালন, কলা চাষের উন্নত প্রযুক্তি, গ্রামীণ সমবায় পদ্ধতি উদ্ভাবন, বায়োগ্যাস প্রযুক্তি উদ্ভাবন, সার বীজ ছিটানো যন্ত্র উদ্ভাবন, শস্য শুকানোর পদ্ধতি উন্নয়ন, বীজ শোধন ও সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা ও ফার্মিং সিস্টেম, জার্ম পাজম সেন্টারের পাওয়া বিভিন্ন পুরস্কার।
ছাত্রছাত্রীদের মেধা ও কৃতিত্বকে উৎসাহদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তির উদ্যোগে বিশ্ববিদালয়ে বেশ কয়েকটি ট্রাস্ট তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে। গবেষণা ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা গ্রহণ করা হয়। ভাষা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, বিজয়-'৭১ ও বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।

গুলশান আনোয়ার

সাপের মন্দির, পেনাং, মালয়েশিয়া

0 comments
সারা বিশ্বের মানুষের কাছে মন্দিরটি পরিচিত ‘স্নেক টেম্পল’ নামে। বিমান থেকে মালয়েশিয়ার পেনাং দ্বীপে নামলেই যেখানে পা পড়বে আপনার, সেটির নাম বায়ান লেপাস বিমানবন্দর। বিমানবন্দরটি পেরিয়ে একটু সামনে এগোলেই সানগাই ক্লুয়াং অঞ্চল। এখানে আছে একটি বাস স্টপেজ। টিকিট কেটে বাসে চড়ে বসলেই পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে। এশিয়া তো বটেই, বিশ্বের নানা দেশ থেকেই অসংখ্য দর্শনার্থী এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা মনোবাসনা পূরণ এবং স্রেফ ঘুরে দেখতেই আসছেন সাপের মন্দিরে। মজার ব্যাপার হল, মন্দির সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ বাসস্ট্যান্ড থেকে মন্দির পর্যন্ত পুরো পথেই শিল্পীর তুলিতে আঁকিয়েছেন নানা অলৌকিক ঘটনার দেয়ালচিত্র। আজব এসব ঘটনা দেখে অবাক হওয়ারও উপায় নেই। কারণ মন্দিরের ভেতরে পরিবেশটা এতটাই আলাদা যে, চমকে যাবেন খুব সাহসী মানুষও।

মন্দিরের ঠিক সামনেই বসানো আছে ধূপ পোড়ানোর বড় একটি পাত্র। প্রতিদিন ধূপের ধোঁয়া মেখে সর্প দেবতার কাছে মনোবাসনা জানাচ্ছেন অসংখ্য পুণ্যার্থী। তবে সন্দেহবাদীরা বলছেন, ধূপের ধোঁয়ার উৎকট গন্ধেই বেশির ভাগ সময় নিথর হয়ে পড়ে থাকে বিষাক্ত সাপগুলো। তাদের কথা না শুনে আরেকটু সামনে এগোলেই দেখা যাবে বড় একটি পাত্রে রাখা আছে নানা জাতের পাখি আর মুরগির ডিম। ওগুলো সাপের খাবার। যদিও ডিমের চেয়ে বাদামই খেতে বেশি পছন্দ করে মন্দিরের কর্তারা।
মন্দির প্রাঙ্গণ তো বটেই এমনকি ভেতরের নানা গাছের ডালেও মনোহর ভঙ্গিতে আয়েশ করে ঝুলছে নানা রঙের সাপ। আকারে, প্রকারে তারা বিচিত্র। অজগরের মতো প্রকাণ্ড সাপের পাশাপাশি আছে হাতের আঙুলের চেয়েও চিকন সাপ। গায়ের রং এতই বর্ণিল যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
কীভাবে এত সাপের এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেও এক দারুণ গল্প। চীনা ও ভারতীয় অভিবাসীরাই পেনাং রাজ্যের সংখ্যাগুরু অধিবাসী। তাদের অনেকেই বিশ্বাস করেন, কয়েক শতক আগেও পেনাং ছিল জঙ্গলময়। নবম শতাব্দীতে জঙ্গলে বসবাস করতেন এক বৌদ্ধ ভিক্ষু। চর সু কং নামের এ ভিক্ষুই ভয়ংকর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় রক্ষা করেছিলেন সাপগুলো। দিয়েছিলেন আশ্রয়, বেঁচে থাকার জন্য সেগুলোকে যুগিয়েছিলেন খাবারদাবার। আর দশজনের মতো ভয়ংকর সরীসৃপদের মোটেও ঘৃণা করতেন না তিনি। বরং ভালবাসতেন প্রবলভাবে। তার নামেই আজব এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫০ সালে। প্রতিষ্ঠাতার মূর্তি বসানো আছে মন্দিরের মাঝখানের মূল প্রার্থনা কক্ষে। মজার ব্যাপার হল সর্পমন্দিরের আসল নাম কিন্তু ‘টেম্পল অব দি আজিউর ক্লাউড’। পেনাংয়ে অপরূপ সুন্দর নীল আকাশের সঙ্গে তুলনা করে রাখা হয়েছে নামটি। মন্দিরের ভেতরের ঠিক ডান পাশে রাখা আছে দক্ষিণা বাক্স এবং দর্শনার্থীদের স্বাক্ষর দেওয়ার জন্য একটি খাতা। খাতায় তারা লিখতে পারেন নিজের অভিজ্ঞতাও। খুশি হয়ে বাক্সে অনেকেই দান করেন অর্থ। সাপগুলোর খাবার এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ চালানো হয় এ টাকায়। মন্দিরটির ঠিক পেছনেই বড় একটি গর্ত। তবে পানিতে পূর্ণ নয়, গর্তে রয়েছে নানা জাতের ফলের গাছ। ফলের গাছে ভরা গর্তের পাশে দাঁড়ালে প্রথমেই চোখে পড়বে নানা রং আর জাতের ফল থোকায় থোকায় ঝুলে আছে গাছগুলোয়। তবে আরেকটু মনোযোগ দিয়ে ডালপালাগুলোর আড়ালে ভালোভাবে চোখ রাখলেই দেখা যাবে জটলা পাকিয়ে পেঁচিয়ে রয়েছে বিষধর সব সাপ।
‘সাপগুলো যথেষ্ট বিষধর। তবে ওরা কাউকে কামড়ায় না। অন্তত এ পর্যন্ত কাউকে কামড়াতে দেখিনি। অসম সাহসী কোন দর্শনার্থী তো মাঝেমধ্যেই গায়ে জড়িয়ে নেন কোন সাপ। তখনও দুর্ঘটনা ঘটে না’ এভাবেই সাপগুলো সম্পর্কে মতামত জানালেন মন্দিরের এক কর্মকর্তা। কারও কারও মতে, বিষদাঁত ভেঙে ফেলা হয়েছে সাপগুলোর। তবে পুরনো এক স্বেচ্ছাসেবক এ ঘটনা পুরোপুরিই অস্বীকার করলেন, ‘কানো সাপেরই বিষদাঁত ভাঙা হয়নি। কারণ আমাদের কাছে এগুলো খুবই পবিত্র। আমাদের এগুলোর দাঁতে হাত দেওয়ার অনুমতি নেই।’ তবে স্বীকার করলেন, সাপগুলো আসলেই খুব বিষধর। তিনিও মনে করতে পারলেন না মন্দিরের সাপ আসলেই কোনদিন কাউকে কামড়েছে কিনা।
সাপগুলো দেখাশোনা করার জন্য আছেন স্বেচ্ছাসেবক। প্রতিদিন সকাল ৫টায় মন্দিরটি খুলে দেন তারা। খোলা রাখেন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। তবে দর্শনার্থীরা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন সকাল ৯টার পর। মন্দির থেকে তাদের বেরিয়ে যেতে হয় সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে। কোন প্রবেশ ফি নেই।
মন্দিরের পেছনেই রয়েছে ছোট্ট একটি ‘সর্প জাদুঘর’। সেখানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণ করে রাখা আছে মরে যাওয়া সাপ।
প্রতিদিন এ মন্দির দেখতে আসছেন প্রায় একশ’ দর্শনার্থী। কেউ কেউ আসছেন আমেরিকা, ইউরোপ এবং চীন থেকেও। প্রতিবেশগত কারণে দিন দিন মন্দিরের সাপের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বংশবৃদ্ধিও হচ্ছে না আগের মতো। এ সমস্যা চিন্তিত করে তুলছে সবাইকে। মন্দিরের শুভানুধ্যায়ীরা অবশ্য একটি বিকল্প উপায় অবলম্বন করতে শুরু করেছেন। চুর সুং কং উৎসবে তারা মন্দিরে সাপ উপহার দেওয়া শুরু করেছেন। প্রতিবছর তিনবার আয়োজন করা হয় উৎসবটির। চৈনিক ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রথম মাসের ষষ্ঠ দিনে আয়োজন করা হয় প্রথম অনুষ্ঠান। বাকি দুটো উৎসবের আয়োজন করা হয় পাঁচ মাস পর পর।

এ হাসান

Tuesday, July 24, 2012

বিগ ব্যাঙ বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব

0 comments
আমাদের পৃথিবীসহ পুরো মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে নানা ধরনের ব্যাখ্যা দেখা যায়। বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়ে থাকেন। মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যেও সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য একটি মত রয়েছে। মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব হলো মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের দেওয়া একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। এই তত্ত্বানুসারে আজ থেকে প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে এই মহাবিশ্ব একটি অতি ঘন ও উত্তপ্ত অবস্থার বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। এই তত্ত্বে বলা হয়, কোনো ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় নয়, একটি বিশেষ মুহূর্তে মহাবিশ্বের উদ্ভব। বিজ্ঞানী এডুইন হাবল প্রথম বলেন, দূরবর্তী ছায়াপথগুলোর বেগ সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এরা পরস্পর দূরে সরে যাচ্ছে; অর্থাৎ মহাবিশ্ব ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সমগ্র মহাবিশ্ব একটি সুপ্রাচীন বিন্দু অবস্থা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই অবস্থায় সব পদার্থ এবং শক্তি অতি উত্তপ্ত ও ঘন অবস্থায় ছিল। কিন্তু এ অবস্থার আগে কী ছিল তা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে কোনো ঐকমত্য নেই।


সম্পাদনা : তৈমুর ফারুক তুষার

Monday, July 23, 2012

চাঁদপুর

0 comments
আয়তন: ১,৭০৪ বর্গকিলোমিটার
প্রধান নদী: মেঘনা, ডাকাতিয়া, ধনাগোদা, গোমতী ইত্যাদি

দর্শনীয় স্থান: হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ, সুজা মসজিদ, আলমগিরি মসজিদ, মতলবের কালীমন্দির, সাহেবগঞ্জের নীলকুঠি

ঢাকার সদরঘাট থেকে মেঘনারানী, ময়ূর, বোগদাদীয়াসহ বেশ কিছু লঞ্চে চাঁদপুরে যাওয়া যায়। আসনভাড়া ১৫০ টাকা, কেবিন ৪০০ টাকা।

লেখা ও ছবি : ফারুক আহম্মদ

হজরত রাস্তি শাহ (রহ.)-এর মাজার

0 comments
তাঁর নামেই শাহরাস্তি উপজেলার নাম। তিনি ছিলেন সিলেটের হজরত শাহ্জালাল (রহ.)-এর একজন ঘনিষ্ঠ সহচর। চাঁদপুর-লাকসাম রেললাইন এবং চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের এক কিলোমিটার দক্ষিণে মেহারের শ্রীপুর গ্রামে হজরত রাস্তি শাহ (রহ.)-এর মাজার। সুলতান শামস্উদ্দিন শাহর শাসনামলে অর্থাৎ ১৩৫১ সালে বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে ধর্মপ্রচারের জন্য আসেন হজরত রাস্তি শাহ (রহ.)। বড় একটি দিঘির পাশে টিলার ওপর মাজারটি। পশ্চিম পাশের আরেকটি দিঘির অন্য পাড়ে রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান মেহার কালীবাড়ি। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে পদ্মা বা বিলাস পরিবহনের বাসে দোয়াভাঙা গেট যাওয়া যায়। ভাড়া ২০০ টাকা। গেট থেকে মাজার পর্যন্ত রিকশাভাড়া ১০ টাকা।

বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

0 comments
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলসেতু। ২৪ হাজার ৪০০ শ্রমিক-কর্মচারী পাঁচ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ব্রিজটি নির্মাণ করে। পাবনা জেলার পাকশী রেলস্টেশনের দক্ষিণে পদ্মা নদীর ওপর এই সেতু অবস্থিত। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে এই সেতুর নামকরণ করা হয়। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ব্রিজের ওপর দুটি ব্রডগেজ রেললাইন রয়েছে। ১৯০৮ সালে ব্রিজ নির্মাণের মঞ্জুরি পাওয়ার পর ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট উইলিয়াম গেইলস হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রধান প্রকৌশলী রবার্ট শুধু ব্রিজের নকশা প্রণয়ন করেন। ব্রিজের প্রথম প্রকল্প প্রণয়ন করেন স্যার এস এম রেলডলস। এই ব্রিজে রয়েছে ১৫টি মূল স্প্যান। মূল স্প্যান ছাড়াও দুপাশে রয়েছে তিনটি করে অতিরিক্ত ল্যান্ড স্প্যান। ব্রিজ নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল রেইথ ওয়ালটি অ্যান্ড ক্রিক। সে সময় পদ্মা ছিল প্রমত্তা ও ভয়াল। ব্রিজ নির্মাণের বড় সমস্যা ছিল নদীর গতি নিয়ন্ত্রণ করে ব্রিজের নিচ দিয়ে স্থায়ীভাবে প্রবাহিত করা। ব্রিজটি নির্মাণের শত বছর পরও বিশ্বের প্রকৌশলীদের কাছে এটি বিস্ময়কর হয়ে আছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী যখন খুলনা ও যশোরে পরাজয়ের পর পিছু হটে ঈশ্বরদীতে সমাবেত হওয়ার উদ্দেশে একটি ট্রেনে এসেছিল, সেই সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে কোণঠাসা করার লক্ষ্যে মিত্রবাহিনী বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করলে ব্রিজের ১২ নম্বর স্প্যানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পর ব্রিজটিকে মেরামত করে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা হয়।

সম্পাদনা : তৈমুর ফারুক তুষার



রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

0 comments
১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই যাত্রা শুরু করে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার আগে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের গা ঘেঁষে মতিহারের মনোরম পরিবেশে এটি অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট দিয়ে ঢোকার মুখেই পড়ে পামগাছের সারি। বাঁয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত শিল্পী নিতুন কুণ্ডুর 'শাবাশ বাংলাদেশ' ভাস্কর্যটি। এর পাশেই আছে সিনেট ভবন। প্রশাসন ভবনের সামনে গোল চত্বরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন '৬৯-এর শহীদ ড. শামসুজ্জোহা। ফরাসি স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত তিনতলার প্রশাসনিক ভবনের দুই দিকেই আছে বিখ্যাত প্যারিস রোড। রাস্তাটির দুই পাশের গগণ শিরীষের সারি সবাইকে মোহিত করে। ক্যাম্পাসের সবচেয়ে সুন্দর স্থান হলো শহীদ মিনার চত্বরটি। এখানকার শহীদ মিনারের নকশায় প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশের সংবিধানের চারটি মূলনীতি। মুর্তজা বশীরের অনবদ্য রিলিফ একে অন্য মাত্রা দিয়েছে। এ চত্বরেই আছে বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর 'শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা'। তার সামনেই নাটকের জন্য মুক্তমঞ্চ। আর বিপরীত পাশে আছে চিত্র প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত গ্যালারি। আধুনিক তুর্কি স্থাপত্যসমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের অবস্থানও এখানে। ছাত্রাবাস ১৬টি_ছেলেদের ১১টি, মেয়েদের পাঁচটি। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন আছে ক্যাম্পাসের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে। এ ছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ গ্রন্থাগার, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বিজ্ঞানের চারটি, বাণিজ্যের একটি এবং কলার চারটি বড় ভবনসহ অসংখ্য স্থাপনা।

লেখা : উদয় শংকর বিশ্বাস

সাবাশ বাংলাদেশ

0 comments
স্বাধীনতার দুর্বার সংগ্রামকে ধরে রাখার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে শাবাশ বাংলাদেশ ভাস্কর্যটি। ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলিষ্ঠ সাহসী ভূমিকা ছিল। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবপূর্ণ অবদান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। তাই তারা নির্বিচারে হত্যা করে অধ্যাপক হবিবুর রহমান, অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার, অধ্যাপক মীর আবদুল কাইয়ুমসহ অসংখ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদদের স্মৃতিকে চির অম্লান করে রাখার জন্য উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনের দক্ষিণে এই ভাস্কর্যটি নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়। নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন পর ১৯৯১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-রাকসুর উদ্যোগে শিল্পী নিতুন কুণ্ডু শাবাশ বাংলাদেশের নির্মাণকাজ শুরু করেন। নির্মাণকাজ শেষে হলে এর ফলক উন্মোচন করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। ভাস্কর্যটি দাঁড়িয়ে আছে ৪০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে, যেখানে রয়েছে দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি। একজন রাইফেল উঁচু করে দাঁড়িয়ে আর তার বাঁ বাহুটি মুষ্টিবদ্ধ করে জাগানো। অন্যজন রাইফেল হাতে দৌড়ের ভঙ্গিতে রয়েছে। যার পরনে প্যান্ট, মাথায় এলোমেলো চুলের প্রাচুর্য, যা কি না আধুনিক সভ্যতার প্রতীক। এ দুজন মুক্তিযোদ্ধার পেছনে ৩৬ ফুট উঁচু একটি দেয়ালও দাঁড়িয়ে আছে। দেয়ালের ওপরের দিকে রয়েছে একটি শূন্য বৃত্ত, যা দেখতে সূর্যের মতো।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রথম ভাস্কর্য জাগ্রত চৌরঙ্গী

0 comments
ডান হাতে গ্রেনেড, বাঁ হাতে রাইফেল। লুঙ্গি পরা, খালি গা, খালি পা আর পেশিবহুল এক মুক্তিযোদ্ধার এ ভাস্কর্যটি গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তার ঠিক মাঝখানে সড়কদ্বীপে অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের অসামান্য আত্মত্যাগের স্মরণে নির্মিত এ ভাস্কর্যটির নাম 'জাগ্রত চৌরঙ্গী'। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শাপলার ভাস্কর আবদুর রাজ্জাক এই জাগ্রত চৌরঙ্গী ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন। ১৯৭৩ সালে এ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নির্মিত এটি বাংলাদেশের প্রথম ভাস্কর্য। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে গাজীপুরের স্থানীয় জনগণের একটি প্রতিরোধ যুদ্ধে ২০ জন শহীদ হন। যদিও সরকারি বিবৃতিতে তিনজন মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করা হয়। প্রতিরোধ যুদ্ধে এই শহীদদের অবদান ও আত্মত্যাগকে জাতির চেতনায় সমুন্নত রাখতে জয়দেবপুর চৌরাস্তার সড়কদ্বীপে দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপত্যকর্মটি নির্মাণ করা হয়। বেদিসহ জাগ্রত চৌরঙ্গীর উচ্চতা প্রায় ৪২ ফুট। ২৪ ফুট ৫ ইঞ্চি ভিত বা বেদির ওপর মূল ভাস্কর্যের ডান হাতে গ্রেনেড ও বাম হাতে রাইফেল। কংক্রিট, গ্রে-সিমেন্ট, হোয়াইট সিমেন্ট ইত্যাদি দিয়ে ঢালাই করে নির্মিত এ ভাস্কর্যটিতে ৩ নম্বর সেক্টর ও ১১ নম্বর সেক্টরের শহীদ সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লিপিবদ্ধ করা আছে। এই ভাস্কর্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতিচিত্র।

Sunday, July 22, 2012

অ্যালেন গিন্সবার্গ

0 comments
সবাই জানে জর্জ হ্যরিসন "কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" অনুষ্ঠানে তাঁর বিখ্যাত "Bangladesh" গানটি জনমত তৈরিতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু কয়জন জানেন এই কনসার্টের উদ্যোক্তা কে? এই কনসার্টে আর কে কে গান করেছিল?
অ্যালেন গিন্সবার্গ ১৯৭১ সালের ১লা আগস্ট নিউ ইয়ার্কের মডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ‘পণ্ডিত রবি শংকর’ কে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য আয়োজন করেন কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ।

এই কনসার্টে জর্জ হ্যরিসন, বব ডিলান, জোয়ান বায়েজসহ আমেরিকার আরও অনেকই সঙ্গীত পরিবেশন করেন। পণ্ডিত রবি শংকর ও অপর ভারতীয় কিংবদন্তী গায়ক আলি আকবর খানও গান পরিবেশন করেন এই কনসার্টে এবং এখান থেকে প্রায় আড়াই লাখ ডলার সংগৃহীত হয়। এই টাকার থেকেও বড়ো ব্যাপার ছিলো এই কনসার্ট সারা বিশ্বকে একটা নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছিলো। সবার কাছে পৌঁছে গিয়েছিলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার কথা এবং আমাদের গৌরবান্বিত স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা। এর পর থেকে জনমত গড়তে থাকে এবং বিশ্ব অপেক্ষা করে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মের জন্য।

Saturday, July 21, 2012

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

0 comments
আদিম যুগ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। জাতিতে জাতিতে, দেশে দেশে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ আর লাখো মানুষের রক্তপাতের মাধ্যমে পৃথিবীকে অনেকবার ধ্বংসের মুখোমুখি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ রকম একটি যুদ্ধ হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তখন পর্যন্ত এটিই ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ যুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একপক্ষে ছিল অস্ট্রিয়া, জার্মানি, হাঙ্গেরি ও বুলগেরিয়া। যাদের বলা হতো কেন্দ্রীয় শক্তি। আর অপর পক্ষে ছিল সার্বিয়া, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান, ইতালি ও আমেরিকা। যাদের বলা হতো মিত্রশক্তি। ১৯১৪ সালের ২৮ জুন বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো শহরে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্কডিউক ফ্রানৎস ফার্ডিনান্ড এক সার্বিয়াবাসীর গুলিতে নিহত হন। অস্ট্রিয়া এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সার্বিয়াকে দায়ী করে এবং ওই বছরের ২৮ জুন সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পরে এ যুদ্ধে দুই দেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও জড়িয়ে পড়ে। এভাবেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত। তবে সেই সময় পণ্য তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ ও পণ্য বিক্রির বাজার স্থাপনে দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ। রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে মিত্রশক্তি জয়লাভ করে।

কুতুবদিয়া বাতিঘর

0 comments
রাতের বেলা জাহাজের নাবিকদের পথের সংকেত প্রদর্শনের জন্য সমুদ্র উপকূলে উঁচু টাওয়ার নির্মাণ করে তার ওপরে আলো জ্বেলে রাখা হয়। আর সংকেত প্রদানকারী এই টাওয়ারটিই হলো বাতিঘর। বাংলাদেশের এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বাতিঘর হলো কুতুবদিয়া বাতিঘর। রাতের বেলা বঙ্গোপসাগরে চলাচলকারী জাহাজকে সংকেত প্রদর্শনের জন্য এই বাতিঘরটি নির্মাণ করা হয়। কর্ণফুলী মোহনার ৪০ মাইল দূরে কুতুবদিয়া দ্বীপে এটি নির্মিত হয়। ক্যাপ্টেন হেয়ারের পরিচালনা ও ইঞ্জিনিয়ার জে এইচ টুগুডের নির্দেশনায় এই বাতিঘর নির্মাণ করা হয়। পাথরের ভিত্তির ওপর বসানো এই বাতিঘরের উচ্চতা ১২১ ফুট। ১৮৪৬ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। বাতিঘরটি নির্মাণে সেই সময়ে ব্যয় হয় চার হাজার ৪২৮ টাকা। পাকিস্তান আমলে লোহা দিয়ে একটি টাওয়ার বানিয়ে তার ওপর আধুনিক বাতিঘর স্থাপন করে প্রাচীন বাতিঘরটি বাতিল করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও ক্রমাগত ভাঙনের ফলে পরিত্যক্ত বাতিঘর ভবনটি ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর ও সামুদ্রিক এলাকায় মোট পাঁচটি বাতিঘর আছে।

ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

0 comments
চিড়িয়াখানায় জীব-জন্তুদের বন্দি অবস্থায় রাখা হয়, কিন্তু সাফারি পার্কে প্রাণীরা থাকে মুক্ত অবস্থায়। সাফারি পার্ক হলো সরকার ঘোষিত সংরক্ষিত এলাকা, যেখানে বণ্য প্রাণীদের প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিপালন করা হয়। এই পার্কের মধ্যে দেশি-বিদেশি বন্য প্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণের সুযোগ করে দেওয়া হয়। সাফারি পার্কে পর্যটকদের হেঁটে বা বাহনে করে টিকিটের বিনিময়ে ঘুরে দেখার সুযোগ থাকে। এ রকম একটি পার্ক হলো ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক। এর আয়তন ৯০০ হেক্টর। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় ডুলাহাজারা রিজার্ভ ফরেস্টে এই সাফারি পার্কটি অবস্থিত। প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত নির্জন উঁচু-নিচু টিলা, হ্রদ, চিরসবুজ বনের জানা-অজানা গাছ-গাছালি, ফলদ-ভেষজ উদ্ভিদ ও লতার অপূর্ব সমাহার ও ঘন আচ্ছাদনে গড়ে উঠেছে সাফারি পার্কটি। পার্কের চারদিকে বেষ্টনী রয়েছে, যাতে বন্য প্রাণী পার্কের বাইরে যেতে না পারে। পার্কের ভেতরেও আলাদা আলাদা বেষ্টনী রয়েছে। এই বেষ্টনীর ভেতরে বাঘ, সিংহ ও তৃণভোজী প্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করে। প্রধান ফটকের বাম পাশে রয়েছে একটি ডিসপ্লে ম্যাপ। অতি অল্প সময়ে পার্কের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য ম্যাপটি কার্যকর। পার্কের ভেতরে বাঘ-সিংহসহ অন্যান্য প্রাণী পর্যবেক্ষণের জন্য রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও প্রহরা পোস্ট।

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি

0 comments
কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হলেও এই খেলার প্রথম প্রচলন ঘটে জাপানে। কাবাডি খেলাকে বাংলাদেশে 'হাডুডু' খেলাও বলা হয়। বিভিন্ন উৎসব উদ্যাপনে এ দেশের গ্রামেগঞ্জে কাবাডি খেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। ১৯৭২ সালে হাডুডুকে কাবাডি নামকরণ করা হয় এবং বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কাবাডি খেলার মাঠের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৫ মিটার এবং প্রস্থ ১০ মিটার। মেয়েদের কাবাডি খেলার মাঠের দৈর্ঘ্য ১১ মিটার এবং প্রস্থ আট মিটার। ১৯৮৫ সালে কাবাডি খেলা সর্বপ্রথম সাফ গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয়। লোনা ও লবি এই দুটি শব্দ কাবাডি খেলায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কাবাডি খেলায় মোট ১৪ জন খেলোয়াড় থাকে। একজন রেফারি, দুজন অ্যাম্পায়ার, একজন স্কোরার ও দুজন সহ-স্কোরার। এ ছাড়া মোট ছয়জন কাবাডি খেলা পরিচালনা ও ফলাফল নির্ধারণে যুক্ত থাকে। পাঁচ মিনিট বিরতিসহ মোট ৪৫ মিনিটে কাবাডি খেলা সম্পন্ন হয়ে থাকে।

চীনের মহাপ্রাচীর

0 comments
বাড়ির চারদিকে প্রাচীর দিয়ে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করে থাকি। কিন্তু প্রাচীর দিয়ে একটি দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা কি ভাবা যায়? ৬৫৩২ কিলোমিটার লম্বা এবং পাঁচ থেকে আট মিটার উঁচু এ রকমই একটি প্রাচীর নির্মাণ করা হয় চীনে। এটি চীনের মহাপ্রাচীর নামে পরিচিত। এই মহাপ্রাচীর মানুষের হাতে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থাপত্য। শত্রুর হাত থেকে চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষার জন্য পাথর ও মাটি দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। এটি সাংহাইপাস থেকে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে লোপনুর নামক স্থানে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকে এই প্রাচীর নির্মাণ শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে শাসকরা এই প্রাচীর নির্মাণ অব্যাহত রাখেন। এর মধ্যে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াঙের অধীনে নির্মিত প্রাচীরটিই সবচেয়ে বিখ্যাত। এটি বর্তমান প্রাচীরের অনেক উত্তরে অবস্থিত এবং এর খুব সামান্যই অবশিষ্ট আছে। বর্তমান প্রাচীরটি মিং রাজবংশের শাসনামলে নির্মিত হয়। প্রাচীরটিতে নিয়মিত বিরতিতে পর্যবেক্ষণ চৌকি আছে। চৌকিগুলো অস্ত্র সংরক্ষণ, সেনাবাহিনীর আবাসন এবং শত্রু দেখে সংকেত প্রদানে কাজে লাগত। পর্যবেক্ষণের সুবিধার জন্য পাহাড়সহ অন্যান্য উঁচুস্থানে সংকেত টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছিল।