Wednesday, August 29, 2012

ডিজনিল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়া, আমেরিকা

0 comments
বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে শিহরণ জাগানো বিনোদন পার্ক হলো ডিজনিল্যান্ড। কল্পনারজগৎকে এখানে বাস্তবতায় রূপ দেওয়া হয়েছে। নানা ধরনের রোমঞ্চকর আর উত্তেজনায় ভরপুর রাইড ছাড়াও এখানকার জোনগুলো যেন কল্পনার এক স্বপ্নপুরী। ১৯৫৫ সালের ১৮ জুলাই বিস্ময়কর এ বিনোদন পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এর পর থেকেই বিশ্বজুড়ে মানুষের স্বপ্নের পার্ক হিসেবে পরিচিতি পায় ডিজনিল্যান্ড। ডিজনিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা হলেন আমেরিকার বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক ওয়াল্ট ডিজনি। তিনি এক রবিবার তাঁর মেয়েদের নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি পার্কে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। মেয়েদের বিভিন্ন রাইডে চড়তে দেখে ওয়াল্ট ডিজনির মনে হলো, যদি এমন একটা পার্ক থাকত, যেখানে ছোট-বড় সবাই একসঙ্গে আনন্দ করতে পারে, তবে খুবই ভালো হতো- এই ভাবনা থেকেই ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৬০ একর জায়গার ওপর তিনি তাঁর স্বপ্নের পার্কটি নির্মাণ শুরু করেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, জনপ্রিয় সিনেমার চরিত্র, ভৌতিক বাড়ি, রোমঞ্চকর রাইড প্রভৃতি দিয়ে সাজানো হয় ডিজনিল্যান্ডকে। রূপকথার রাজপ্রাসাদ, মহাকাশযান, ভয়ে শিউরে ওঠার মতো এক ভিন্ন জগতের সৃষ্টি করা হয়েছে শিল্পকলা আর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। মেইন স্ট্রিট, অ্যাডভেঞ্চারল্যান্ড, ফ্যান্টাসিল্যান্ড, মিকিস টুনটাউনথ এমন কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে গোটা ডিজনিল্যান্ডকে। প্রতিটি জোনই দর্শনার্থীদের দারুণ এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে।

মুর্তজা ইন্সটিটিউট, সৈয়দপুর

0 comments
আজকের আধুনিক সৈয়দপুরের শুরুটা ছিল আসাম-বেঙ্গল রেলওয়েকে ঘিরে। এর আগে সৈয়দপুর ছিল সাধারণ গ্রাম। পলাশীর যুদ্ধে বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হওয়ার পর ব্রিটিশরা নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থেই এদেশে গড়ে তুলতে থাকে রেলপথ। এরই এক পর্যায়ে সৈয়দপুর হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। দীর্ঘ ১শ’ ৩০ বছর অথবা তারও আগেকার কথা। সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন গড়ে উঠার পর এই অঞ্চলে লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যায়। বিস্তৃতি ঘটতে থাকে শহরের। তারপরই ১৮৭০ সালে ইংরেজ বেনিয়ারা সৈয়দপুরে প্রতিষ্ঠা করে বিশাল রেলওয়ে কারখানা, যা আজও বাংলাদেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা হিসাবে বিবেচিত। সে সময় ইংরেজদের চিত্তবিনোদনের জন্য এখানে একটা সুরম্য মিলনায়তন গড়ে তোলা হয়। নাম ছিল ‘দি ইউরোপিয়ান ক্লাব’। পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় মুর্তজা ইন্সটিটিউট। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা বিস্তৃতির কারণে এখানে ইউরোপিয়ানদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ইংরেজ সাহেবরা বিকালে ক্লাবে এসে জড়ো হতো, সঙ্গে থাকতো তাদের স্ত্রী অথবা বান্ধবীরা। তারা নিজেদের ইচ্ছা ও রুচি অনুযায়ী আমোদ-ফুর্তি করতো এই ক্লাবে। ক্লাবের এই অবস্থা ১৯৩০ সাল পর্যন্ত অক্ষুণ্ন ছিল। এরপর থেকে ক্লাবের নিয়ম-কানুন কিছুটা শিথিল করা হয়। ১৯৩০ সালের আগে এ ক্লাবে ভারতীয়দের প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ ছিল।
পরবর্তীকালে সাহেবদের পাশাপাশি ভারতীয় রেল কর্মকর্তারাও এ ক্লাবে প্রবেশের সুযোগ লাভ করে। পায় সদস্য পদ। এ সময় আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন বিআর সিং। তাঁর নামানুসারে রেলওয়ে ময়দানের পশ্চিম পার্শ্বে একটি ভবনের নামকরণ করা হয় বিআর সিং ইন্সটিটিউট। যা বর্তমানে সৈয়দপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। পরবর্তীকালে ইউরোপিয়ান ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে বিআর সিং ক্লাব রাখা হয়। এ নামই পরে কালোপেপার ইন্সটিটিউট এবং আরও পরে মুর্তজা ইন্সটিটিউট রাখা হয়।

মূলত ১৯৩০ সালের পর থেকেই এ ইন্সটিটিউটে ইউরোপীয় সংস্কৃতির পরিবর্তে দেশীয় নাটক, যাত্রাপালার বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্থান পায়। তখন থেকেই এ অঞ্চলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। ইংরেজ সাহেবরাও তখন একে একে স্বদেশ ফিরতে থাকেন। ফলে এই ইন্সটিটিউটের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেন ভারতীয় কর্মকর্তারাই। ’৪৭-এর দেশ বিভাগের পর ইন্সটিটিউটের প্রথম জেনারেল সেক্রেটারীর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় মুর্তজা ইন্সটিটিউট। মুর্তজা সে সময় সৈয়দপুরস্থ বিভাগীয় মেডিক্যাল অফিসের হেডক্লার্ক ছিলেন। ওই সময় মূলত ইন্সটিটিউটটি সংস্কার ও সমপ্রসারণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। বর্তমানে এই ইন্সটিটিউটে নিজস্ব প্রয়োজন ছাড়াও শহরের অন্যান্য নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের অনুষ্ঠান এখানে মঞ্চায়ন করছে। মুর্তজা ইন্সটিটিউটের মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে এর গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারে আছে প্রাচীনকালের দুষপ্রাপ্য কিছু গ্রন্থ। গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।

এছাড়া সংগ্রহে রয়েছে বাংলা ও ইংরেজী ভাষার অনেক বই। রয়েছে অতীতকালের সাক্ষী কিছু পত্র-পত্রিকাও। এছাড়া সংগ্রহে থাকা মূল্যবান বাদ্যযন্ত্র ও চিত্রকলা ইতিমধ্যে খোয়া গেছে। এই মুহূর্তে অতীত ঐতিহ্য রক্ষায় এই মুর্তজা ইন্সটিটিউটটি মেরামত ও সংস্কার করে আধুনিক উপযোগী করার জন্য সচেতনমহল দাবি জানিয়েছেন। লাল ইটের গাঁথুনির উপর দাঁড়ানো এ ভবন আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে।

Tuesday, August 28, 2012

খুচরা ব্যবসায়

0 comments
প্রশ্ন-১।খুচরা ব্যবসায়ী কাকে বলে? 
উত্তর : পাইকার বা উত্পাদনকারীর নিকট থেকে পণ্য সংগ্রহ করে ভোক্তাদের নিকট বিক্রয় করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানকে খুচরা ব্যবসায়ী বলে।

প্রশ্ন-২। খুচরা ব্যবসায় কী? 
উত্তর : যে ব্যবসায়ের মাধ্যমে উত্পাদনকারী, পাইকার বা অন্য কোনো উত্স হতে পণ্য সংগ্রহ করে তা চূড়ান্ত ভোক্তাদের নিকট সরবরাহ করা হয় সেটি হলো খুচরা ব্যবসায়। মুদি দোকান, মাছ, তরকারি ইত্যাদি বিক্রয়ের ব্যবসায় খুচরা ব্যবসায়ের উদাহরণ।

প্রশ্ন-৩। খুচরা ব্যবসায়ের প্রধান কাজ কোনটি?
উত্তর : খুচরা ব্যবসায়ের প্রধান কাজ হলো পণ্য ক্রয় বা সংগ্রহ করা। ভোক্তাদের রুচি, পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী উত্পাদক, আমদানিকারক, পাইকার ইত্যাদি বিভিন্ন উত্স হতে পণ্য ক্রয় বা সংগ্রহ করা হয়।

প্রশ্ন-৪। আদর্শ বিক্রয়কর্মী কাকে বলে?
উত্তর : আদর্শ বিক্রয়কর্মী বলতে এমন একজন বিক্রয়কর্মীকে বোঝায় যিনি তার অমায়িক ব্যবহার ও মোহনীয় ব্যক্তিত্বের দ্বারা ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে নিয়মিত ও স্থায়ী ক্রেতায় পরিণত করেন।

প্রশ্ন-৫। পণ্য বিভাগকরণ কাকে বলে?
উত্তর : বিক্রয়ের সুবিধার্থে পণ্যকে এর গুণ, মান, রং বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার ইত্যাদির ভিত্তিতে শ্রেণিবিন্যাস করাকে পণ্য বিভাগকরণ বলে।

প্রশ্ন-৬। ভোক্তার সংজ্ঞা দাও। 
উত্তর : ভোক্তা হলেন সেই ব্যক্তি যিনি দ্রব্য ভোগ বা ব্যবহার করেন।

প্রশ্ন-৭। খুচরা ব্যবসায়ের তথ্য সরবরাহ কী?
উত্তর : খুচরা ব্যবসায়ের তথ্য সরবরাহ বলতে বোঝায় খুচরা ব্যবসায়ী ভোক্তাদের নিকট হতে তাদের অভিরুচি, পছন্দ-অপছন্দ ও চাহিদা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে পাইকারের মাধ্যমে উত্পাদকের নিকট তথ্য পৌছানোর ব্যবস্থা।

প্রশ্ন-৮।খুচরা ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচন কাকে বলে?
উত্তর : খুচরা ব্যবসায়ের স্থান নির্বাচন বলতে বোঝায় যেখানে সেখানে দোকান স্থাপন না করে, চিন্ত-ভাবনার ভিত্তিতে যে পণ্যের জন্যে যে স্থানটি উপযুক্ত সে স্থানটিতে দোকান স্থাপনের জন্যে নির্বাচন করা।

প্রশ্ন-৯। খুচরা বিপণি প্রতিষ্ঠায় কোন বিষয় প্রথমে বিবেচনা করতে হবে?
উত্তর : খুচরা বিপণি প্রতিষ্ঠায় প্রথমে স্থান নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনা করতে হয়।

প্রশ্ন-১০। বহুশাখা বিপণি কী? 
উত্তর : যখন কোনো উত্পাদনকারী দেশে বা বিদেশের বিভিন্ন শহর বা অঞ্চলে একই ধরনের বহুসংখ্যক খুচরা দোকান প্রতিষ্ঠা করে নিজস্ব উত্পাদিত দ্রব্য সরাসরি ভোক্তাদের নিকট বিক্রয় করে তখন তাকে বহুশাখা বিপণি বলে।

প্রশ্ন-১১। খুচরা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রগুলো উল্লেখ করো।
উত্তর : খুচরা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রগুলো হলো-কাঁচাবাজার, মুদির দোকান, পান, বিড়ি, সিগারেট, পাউরুটি, বিস্কুট, দুধ, ডিম ইত্যাদি।

প্রশ্ন-১২। বিপণিভিত্তিক খুচরা ব্যবসায়ের নাম লেখো।
উত্তর : বিপণিভিত্তিক খুচরা ব্যবসায় বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। প্রধান দুটির নাম হলো- বহুশাখা বিপণি, বিভাগীয় বিপণি।

প্রশ্ন-১৩। বিক্রয় পূর্বাভাস কী?
উত্তর : কোনো একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট অবস্থায় ক্রেতাগণের ভোগ ও ক্রয় সম্পর্কিত আচরণ কী রকম হতে পারে সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করাকে বিক্রয় পূর্বাভাস বলে।

আদিম যুগের গুহাচিত্র

1 comments
পৃথিবীতে কিভাবে গুহাচিত্র প্রথম আবিষ্কৃত হলো সে সম্পর্কে কিছু বলা যাক। ঘটনাটি আকস্মিক। ঘটলো ১৮৭৯ সালে উত্তর স্পেনে। আবিষ্কারক এক সৌখিন ব্যক্তি। তাঁর নাম হলো মারসেলিনো দ্যা সাওতুলা। স্পেনের সানতানদার এলাকার কাছাকাছি আবিষ্কৃত হয় পৃথিবীর প্রথম গুহাচিত্র।
সাওতুলার আবিষ্কৃত গুহাচিত্র থেকেই দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হলো যে, এই সমস্ত শিল্পাকৃতির আবিষ্কার মানব সভ্যতার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। আমাদের উপমহাদেশেও এ ধরনের গুহাচিত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ রকম শতশত গুহার কথা আমাদের জানা আছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে মধ্য ভারতে। ভূপাল শহরের একশত মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত এই সমস্ত গুহা। ভারতবর্ষের প্রাচীন গুহাচিত্রের বয়স প্রায় সাড়ে সাত হাজার বছর।

সভ্যতা বিকাশের একেবারে শুরুতে মানুষ প্রথম যেসব দিকে মনোনিবেশ করেছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো ছবি আঁকা। আদিম মানুষের জীবন যাপন ছিল অত্যন্ত কঠিন। তারা বাইসন, হরিণ, মহিষ, ষাঁড় ইত্যাদি জীবজন্তু শিকার করতো এবং এদের মাংস ও ফলমূল খেয়ে বেঁচে থাকতো। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় ও হিংস্র জীবজন্তুর হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা গুহায় বসবাস করতো। তারা যে সব গুহায় বাস করতো সেসব গুহায় তারা ছবি আঁকতো।

এই সমস্ত গুহাচিত্রে যে সমস্ত রঙ ব্যবহার করা হয়েছিল তার সবকিছুই প্রাকৃতিক খনিজ রঙ। এ গুলির মধ্যে ছিল গাঢ় লাল এবং গোলাপ- এগুলো পাওয়া যেত মূলত পোড়ামাটি থেকে। তারা শিকারের বস্তু এবং দৃশ্যকে বিষয় করে ছবি আঁকতো। এসব ছবির ড্রইং-ই হলো প্রধান। রেখার মাধ্যমে জীবজন্তুর আকার, আকৃতি, ছুটে যাওয়ার গতি ইত্যাদি তারা চমত্কারভাবে ফুটিয়ে তুলতো।
পরিশেষে বলা যায় যে, শিকারী শিল্পী প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট গুহার অমসৃণ ও এবড়ো-থেবড়ো দেওয়ালে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চিত্র রচনা করেছে। এর উঁচুনিচু খাঁজ, খাড়া অংশ, ঢালু অঞ্চল অনেক সময় ছবি আঁকতে সহায়তা করেছে। যার ফলে বের হয়ে আসা উঁচু দেওয়ালে আঁকা বাইসন, ষাঁড়, ঘোড়া দেখতে আরো জীবন্ত ও গতিশীল মনে হয়। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট পাহাড়ের দৃশ্য, মেঘ, আকাশ, লতাগুল্ম ছবির পরিবেশকে আরো সুন্দর করেছে। গুহাচিত্রগুলোতে রঙের ব্যবহার আরো বাস্তব ও প্রাণময় করে তুলতে সহায়ক হয়েছে। অতএব গুহাচিত্রের চিত্রগুলোতে মানুষ বাইসন, হরিণ, শূকর ইত্যাদি আকার পূঙ্খানুপুঙ্খ খুঁটিনাটি না থাকলেও সহজেই চেনা যায়। কি বলা হচ্ছে তার ভাষাও সহজেই বোঝা যায়।

রাতারগুল বন, সিলেট

56 comments
বিশাল জলাভূমির মধ্যে কোমর ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি গাছের একটি জঙ্গল। ডালে ডালে ঘুরে বেড়ায় নানা প্রজাতির পাখি আর কিছু বন্য প্রাণী। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত জলের এ বনের নাম রাতারগুল। নৌকায় ঘুরে ঘুরে দেখা এ বন যেন অনেকটা আমাজনের মতো। ভেতরের দিকে জঙ্গলের গভীরতা এত বেশি যে, সূর্যের আলো গাছের পাতা ভেদ করে জল ছুঁতে পারে না। সিলেট শহর থেকে এ বনের দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার।
আগেই বলা হয়েছে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় রাতারগুলের অবস্থান। সিলেট বন বিভাগের উত্তর সিলেট রেঞ্জ-২-এর অধীন প্রায় ৩০৩২৫ একর জায়গা জুড়ে এর অবস্থান। এরমধ্যে ৫০৪ একর জায়গায় মূল বন, বাকি জায়গা জলাশয় আর সামান্য কিছু উঁচু জায়গা। তবে বর্ষাকালে পুরো এলাকাটিই থাকে জলে ডুবে থাকে। শীতে প্রায় শুকিয়ে যায় রাতারগুল। তখন কেবল জল থাকে বনের ভেতরে খনন করা বড় জলাশয়গুলোতে। পুরোনো দু’টি বড় জলাশয় ছাড়াও ২০১০-১১ সালে রাতারগুল বনের ভেতরে পাখির আবাসস্থল হিসেবে ৩.৬ বর্গকিলোমািটারের একটি বড় লেক খনন করা হয়। শীতে এ জলাশয়ে বসে নানান পাখির মিলন মেলা।

রাতারগুল মূলত প্রাকৃতিক বন। এর পরেও বন বিভাগ হিজল, বরুন, করচ আর মুর্তাসহ কিছু জলবান্ধব জাতের গাছ লাগিয়ে দেয় এ বনে। এ ছাড়াও রাতারগুলের গাছপালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কদম, জালি বেত, অর্জুনসহ জলসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির গাছপালা। সিলেটের শীতল পাটি তৈরির মূল উপাদান মুর্তার বড় একটা অংশ আসে এ বন থেকে। বাংলাদেশ বন বিভাগ ১৯৭৩ সালকে এ বনের ৫০৪ একর এলাকাকে বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে। এ বনে দেখা যায় নানা প্রজাতির পাখি। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাছরাঙা, বিভিন্ন প্রজাতির বক, ঘুঘু, ফিঙে, বালিহাঁস, গুঁইসাপ পানকৌড়ি ইত্যাদি। বন্যপ্রাণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বানর, উদবিড়াল, কাঠবিড়ালি, বানর, মেছো বাঘ ইত্যাদি। নানান প্রজাতির সাপেরও অভায়শ্রম এ বন।

রাতারগুলের সৌন্দর্য বলে শেষ করার নয়। বনের একেবারে শুরুর দিকটায় মুর্তার বন। বর্ষায় বেশির ভাগই ডুবে থাকে এ গাছগুলো। এর পরে মূল বন। বনের যতই গহীন গাছের ঘনত্ব ততই বেশি। কোথাও কোথাও সূর্যের আলো পর্যন্ত দেখা যায় না। দু-একদিন বৃষ্টি না হলে বনের জল এত বেশি স্বচ্ছ হয় যে, বনের সবুজ প্রতিবিম্বকে মনে হয় বনের নিচে আরেকটি বন।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে সিলেট শহরে। সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট আসতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকেও সিলেটে আসা যায়। ঢাকা থেকে গ্রিন লাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহনের এসি বাস যায় সিলেটে। ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর, সায়দাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সৌদিয়া, মামুন পরিবহন, সিলকম পরিবহন ইত্যাদি সংস্থার নন-এসি বাসও সিলেটে যায়। ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা।

ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া ৯৫ টাকা-৬৯৮ টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টায় যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টায় উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৯০-৪৬৫ টাকা।

সিলেট শহর থেকে বিভিন্ন পথে রাতারগুল যাওয়া সম্ভব। তবে পর্যটকরা দুটি পথ ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমত সিলেট-জাফলংয়ের গাড়িতে চড়ে নামতে হবে সারিঘাট। ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। সেখান থেকে সিএনজি চালিত বেবি টেক্সিতে চড়ে গোয়াইনঘাট বাজার। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে যেতে হবে রাতারগুল। ১০-১২ জনের উপযোগী সারাদিনের জন্য একটি নৌকার ভাড়া পড়বে ৮০০-১২০০ টাকা। সারি নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে এ পথটি অনুসরণ করতে পারেন। তবে খরচ আর সময়, দুটোই বেশি লাগবে এ পথে। রাতারগুলের সবচেয়ে সহজ আর সুন্দর পথটি হলো সিলেট শহরের পার্শ্ববর্তী খাদিম চা বাগান আর খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে। খুব অল্প সময়েই এ পথ ধরে রাতারগুল পৌঁছানো সম্ভব। এ পথে সিএনজি অটোরিকশা কিংবা জিপ নিয়ে আসতে হবে শ্রীঙ্গি ব্রিজ। সকালে গিয়ে বিকেলের মধ্যেই বন ঘুরে ফিরে আসা সম্ভব। সারা দিনের জন্য একটি সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া পড়বে ১২০০-১৫০০ টাকা। আর সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে লোকাল সিএনজিতে গেলে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা। শ্রীঙ্গি ব্রিজ থেকে রাগারগুল জঙ্গলে ঢুকতে হবে জেলেদের ছোট নৌকায়। একটি নৌকায় ৪-৬ জন ঘুরে বেড়ানো সম্ভব। ভাড়া লাগবে ৪০০-৮০০ টাকা। রাতারগুলে যেতে যে পথই অনুসরণ করুন না কেন বনে ঢুকতে লাগবে জেলেদের ছোট নৌকা।

কোথায় থাকবেন


সিলেট শহরে রাতে অবস্থান করার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। তবে এ ভ্রমণে প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্য উপভোগ করতে চাইলে অবস্থান করতে পারেন শুকতারা প্রকৃতি নিবাসে। পাহাড় চূড়ায় চমত্কার আর আধুনিক কটেজ আছে শুকতারায়। শুকতারার কক্ষ ভাড়া ৫০০০-৬৫০০ টাকা। তবে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিনে এ মূল্যের উপরে মিলবে ১০ ভাগ ছাড়। যোগাযোগ :শুকতারা প্রকৃতি নিবাস, উদ্দীনের টিলা, শাহপরাণ উপশহর, খাদিমনগর সিলেট। ফোন :০৮২১-২৮৭০৯৯৪-৫,০১৭৬৪৫৪৩৫৩৫। www.shuktararesort.com

সাবধানতা


রাতারগুল বেড়ানোর উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। এ বনের চারিদিকে জলে পূর্ণ থাকে বলে ভ্রমণকালীন কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বর্ষায় বন ডুবে গেলে বেশিরভাগ সাপ আশ্রয় নেয় গাছের ডাল কিংবা শুকনো অংশে। তাই চারপাশ খেয়াল করে চলতে হবে। এ ছাড়া এ সময় জোঁকেরও উপদ্রব আছে। সাঁতার না জানলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখা জরুরি। এ ছাড়া বর্ষাকাল বলে ছাতা, বর্ষাতি কিংবা পঞ্চ সঙ্গে নিতে হবে।

ত্বক যখন তৈলাক্ত

0 comments
একটুতেই ত্বক তেলতেলে হয়ে যায়। কখনো কখনো দেখা দেয় ব্রণের উপদ্রব। এমন সমস্যা তৈলাক্ত ত্বকে বেশি। সমস্যা নিয়ে বসে থাকলে তো হবে না। সমাধানও আছে।
রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বলেন, ‘তৈলাক্ত ত্বকে বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। ত্বক সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। তবে এ ধরনের ত্বকের সুবিধা হলো সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না। আর যেসব সমস্যা হয় সঠিকভাবে পরিষ্কার করলে অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।’ তৈলাক্ত ত্বকের যত্নের কথা জানিয়েছেন তিনি।

মুখের যত্ন
তৈলাক্ত ত্বকে লোমকূপ বড় হয়ে যায়। তেল জমে সেসব বন্ধ হয়ে ব্রণও ওঠে। তাই প্রতিদিন ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। বাড়িতে বসেই ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। শসার রস তৈলাক্ততা দূর করতে খুবই কার্যকর। প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে শসার রস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে পারেন। এ ছাড়া স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে এর সঙ্গে চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিলেই হবে। যাঁদের মধুতে অ্যালার্জি নেই, তাঁরা সামান্য মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন এই মিশ্রণে। সপ্তাহে দুই দিন এই প্যাক ব্যবহার করলে ত্বক পরিষ্কার হবে। ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস দূর হয়ে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে, ব্রণ থাকলে স্ক্রাব করা যাবে না।

অন্যান্য প্যাক
শসার রসের সঙ্গে কর্নফ্লাওয়ার বা লাল আটা মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এটি মুখে ও গলায় ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। লোমকূপ বড় দেখানোর সমস্যা হলে একটু বাড়তি যত্ন নিতে হবে। এ জন্য ডিমের সাদা অংশ মুখে লাগিয়ে এরপর টিস্যু পেপার চেপে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ধীরে ধীরে টিস্যু পেপার তুলে পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে ফেলুন। ত্বকে টানটান ভাব চলে আসবে। নিয়মিত ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) জেল দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা যেতে পারে। ত্বকের জন্য এটি অনেক উপকারী। দিনে তিনবারের বেশি ফেসওয়াশ বা ক্লেনজার ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রসাধন থেকে শুরু করে ফেসওয়াশ—সব হতে হবে তেলমুক্ত।

চুলের যত্নে
তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের মাথার ত্বকও তেলতেলে হয়। ময়লা জমে বেশি। নিয়মিত যাঁদের বাইরে বের হতে হয়, তাঁরা প্রতিদিন মৃদু ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। তা না হলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন শ্যাম্পু করা উচিত। অনেক সময় তৈলাক্ত ত্বকের চুলেও রুক্ষতা দেখা দেয়। তখন কন্ডিশনার দিতে পারেন। অন্য সময় এটি ব্যবহার করার দরকার নেই। সপ্তাহে এক দিন নারকেল তেলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে চুলে মালিশ করুন। এরপর তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে চেপে নিয়ে সেটি মাথায় ১০ মিনিট পেঁচিয়ে রাখুন। এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।

হাত-পায়ের যত্নে
শসার রস, গাজরের রস, চালের গুঁড়া, দুধ ও এক চা-চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন। সপ্তাহে অন্তত দুইবার হাত-পায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে এই প্যাক।

রিবন্ডিং

0 comments
রিবন্ডিং কোঁকড়া, নিস্তেজ আর রুক্ষ চুলকে স্ট্রেট, সিল্কি এবং উজ্জ্বল করে। তবে চুলের ধরন অনুযায়ী রিবন্ডিং করা উচিত। কোন চুলে কী রিবন্ডিং এবং রিবন্ডিংপরবর্তী চুলের যত্ন জানাচ্ছেন আকাঙ্ক্ষা'স গ্লামার ওয়ার্ল্ডের রূপ বিশেষজ্ঞ জুলিয়া আজাদ।

গ্লেজি রিবন্ডিং

রুক্ষ ও নিস্তেজ চুলের জন্য গ্লেজি বা থাই রিবন্ডিং। এতে চুল স্ট্রেট, সিল্কি ও শাইনি হয়। গ্লেজি স্থায়ী রিবন্ডিং। কালার চুলেও এ রিবন্ডিং করা যায়। তবে এ জন্য বাড়তি সাবধানতা প্রয়োজন। গ্লেজি রিবন্ডিং করতে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। চুলের দৈর্ঘ্য ও ধরনের ওপর রিবন্ডিংয়ের খরচ নির্ভর করে। সাধারণ গ্লেজি রিবন্ডিং ৬ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়।

মিল্ক রিবন্ডিং

রিবন্ডিং মেডিসিনের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে দুধ ব্যবহার করে মিল্ক রিবন্ডিং করা হয়। সব ধরনের চুলেই মানানসই। এটাও স্থায়ী রিবন্ডিং। অন্যান্য রিবন্ডিংয়ের তুলনায় খরচ বেশি। তবে সময় কম লাগে। মিল্প রিবন্ডিংয়ের খরচ ৭ হাজার টাকা থেকে শুরু।

ভলিউম রিবন্ডিং

পাতলা চুলে ভলিউম আনতে এ ধরনের রিবন্ডিং করা হয়। যা চুলকে ন্যাচারাল স্ট্রেট লুক দেয়। ভলিউম রিবন্ডিংয়ে সময় ও খরচ তুলনামূলক কম। এটাও স্থায়ী রিবন্ডিং। ভলিউম রিবন্ডিংয়ের খরচ ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু।

টাচ-আপ রিবন্ডিং

স্থায়ী পদ্ধতিতে চুল স্থায়ীভাবে রিবন্ডিং হয়। অর্থাৎ রিবন্ডিং চুল সব সময় একই রকম থাকবে। তবে নতুন করে যে চুল গজাবে সে অংশ আবার কয়েক মাস পর রিবন্ডিং করে নিতে হবে। একে বলে টাচ আপ রিবন্ডিং। এর মেয়াদ এক বছর। খরচও কম। সাধারণ চুলের ধরন ভেদে ১ থেকে ২ হাজার টাকা খরচ হয়।

ক্যারোটিন রিবন্ডিং

ক্যারোটিন রিবন্ডিং এর স্থায়িত্ব ছয় মাস। ছয় মাস পর চুল আগের মতো হয়ে যায়। তখন আবার রিবন্ডিং করতে হয়। এর খরচ শুরু হয় ৫ হাজার টাকা থেকে।

চায়না রিবন্ডিং

চায়নায় তৈরি মেডিসিন দিয়ে এ ধরনের রিবন্ডিং করা হয়। এ ধরনের রিবন্ডিংয়ে সাময়িক উজ্জ্বলতা পাওয়া যায়। তবে মেয়াদ শেষে চুল রুক্ষ ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। খরচ কম। এর খরচ শুরু হয় ৩ হাজার টাকা থেকে।

রিবন্ডিংয়ের আগে-পরের যত্ন

চুল কালার করার পর পরই রিবন্ডিং করা উচিত নয়। চুল কালার করার ছয় মাস পর রিবন্ডিং করা ভালো।
পাকা চুলে মেহেদি বা গ্রে কভারেজ করা থাকলে তিন মাস পর রিবন্ডিং করা উচিত।
চুল রিবন্ডিং করার তিন দিন পর অবশ্যই একটা হেয়ার ট্রিটমেন্ট নিতে হবে। এরপর প্রতি মাসে একটা করে ট্রিটমেন্ট নিন।
রিবন্ডিং চুলের জন্য অ্যারোমা ট্রিটমেন্ট আদর্শ। এতে চুল পড়া বা চুল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
রিবন্ডিং করার পর বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চুলের সঙ্গে মানানসই হেয়ার কাট দিন।
রিবন্ডিং চুলের জন্য আলাদা শ্যাম্পু কন্ডিশনার পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করুন।

Monday, August 27, 2012

চকোলেট

30 comments
অত্যন্ত মজার ও লোভনীয় একটি খাবার হলো চকোলেট। দারুণ স্বাদের কারণে সব বয়সের মানুষেরই প্রিয় খাবারের তালিকায় স্থান পেয়েছে চকোলেট। নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও অনেকেই অতিরিক্ত মাত্রায় চকোলেট খাবার লোভ সামলাতে পারেন না। অথচ শুরুর দিকে এই চকোলেট ছিল অত্যন্ত তেতো স্বাদের। দক্ষিণ আমেরিকার বাসিন্দারা কোকোয়া বীজ গুঁড়ো করে এক ধরনের তেতো স্বাদের শরীর সতেজকারী পানীয় তৈরি করত। কোকোয়া বীজের এই পানীয়ই হলো চকোলেটের আদিরূপ। বর্তমান সময়ের শক্ত চকোলেট জনপ্রিয়তা পায় ১৮০০ শতকের দিকে। সে সময়ে কোকোয়ার বীজ তাপে গলিয়ে বিভিন্ন ছাঁচে ঢেলে ঠাণ্ডা করে কঠিন চকোলেট তৈরি শুরু হয়। ১৮৩১ সালে ব্রিটেনে ক্যাডবেরি নামের একটি ফার্ম বাণিজ্যিকভাবে চকোলেট উৎপাদন শুরু করে। তখনো চকোলেটের স্বাদ খুব একটা ভালো ছিল না। বর্তমান সময়ের মজাদার চকোলেটের জনক বলা যায় সুইজ্যারল্যান্ডের রুডলফ লিন্ডকে। তিনিই চকোলেটকে নরম আর চকচকে করার জন্য বেশি করে চকোলেটে মাখন মেশানো শুরু করেন। এই ধারা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। এই সময়েই চকোলেটকে ৯৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় গলানো শুরু হয়। আমাদের শরীরের তাপমাত্রাও এ রকম হওয়ায় চকোলেট মুখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গলতে শুরু করে। ১৮৭৫ সালে সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ড্যানিয়েল পিটার প্রথম মিল্ক চকোলেট তৈরি করেন। পরবর্তী সময়ে এই চকোলেট ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমান বিশ্বে মিল্ক চকোলেটই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। চকোলেট উৎপাদনে দুনিয়ার অনেক দেশই বিখ্যাত। এদের মধ্যে বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ইতালি ইত্যাদি দেশ চকোলেটের জন্য সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত।

মাচু পিচু

0 comments
আশ্চর্যজনক ও অদ্ভুতুড়ে একটি শহর হলো মাচু পিচু। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ৪০০ মিটার উঁচুতে পাহাড়ের ওপর নির্মিত শহরটি বিশ্বের সপ্তমাশ্চর্যের একটি। কালের বিবর্তনে শহরটি এক সময় চলে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। কয়েক'শ বছর অজ্ঞাত থাকার পর শহরটি ১৯০০ শতকের শুরুতে আবার এটি আবিষ্কৃত হয়। বর্তমানে পেরু নামক দেশটির কোস্কো এলাকায় ১২০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে গড়ে উঠেছিল ইনকা নামের এক প্রাচীন সভ্যতা। এই ইনকা সভ্যতারই একটি অদ্ভুদ শহর হলো মাচু পিচু। ইনকাদের ভাষায় মাচু পিচু শব্দটির মানে 'পুরনো চূড়া'। পেরুর উরুবাম্বা উপত্যকায় একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত হওয়ার কারণেই বোধ হয় শহরটির নামকরণ করা হয় 'মাচু পিচু'। ধারণা করা হয়, ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে এই শহরটি নির্মাণ করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তির কোনো সহায়তা ছাড়াই পাহাড়ের চূড়ায় কিভাবে এমন চমৎকার একটি শহর নির্মিত হয়েছিল, তা আজও বিস্ময়। দুঃখের বিষয় হলো, শহরটি নির্মাণের মাত্র ১০০ বছরের মধ্যেই তা জনমানবহীন হয়ে যায়। কারো কারো মতে গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে শহরটির বেশির ভাগ বাসিন্দা মারা যায়। বেশির ভাগ পুরাতত্ত্ববিদের মতে, এই শহরটি ছিল ইনকা সম্রাট পাচাকুতিকের একটি অবকাশ যাপনকেন্দ্র। ১৬০০ শতকে স্প্যানিশরা ইনকা সভ্যতা আক্রমণ করে বেশির ভাগ শহর ধ্বংস করে দেয়; কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, স্প্যানিশরা মাচু পিচু শহরটিকে দেখতেই পায়নি। কয়েক শ বছর পরিত্যক্ত থাকার ফলে ঘন জঙ্গলে ঢেকে যাওয়া শহরটিকে ১৯১১ সালে মার্কিন গবেষক হাইরাম বিঙাম সবার নজরে আনেন।
99 - Machu Picchu - Juin 2009
Machu Picchu as the mist's rise at dawn
124 - Machu Picchu - Juin 2009


মাংসখেকো গাছ

0 comments
মাংসখেকো গাছের কথা শুনলেই কেউ কেউ ভয়ে শিউরে ওঠেন। ভাবেন, গাছগুলো বুঝি হিংস্র! কাছে গেলেই খপ করে ধরে খেয়ে ফেলবে। অনেক সিনেমায়ও দেখা যায়, জঙ্গলে মাংসখেকো গাছ মানুষকে ধরে খেয়ে ফেলছে। প্রকৃতপক্ষে কিন্তু মাংসখেকো গাছ এমন নয়। মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণী নয়, খুব ছোট আকৃতির পোকামাকড় হলো মাংসখেকো গাছের খাবার। সাধারণত যেসব এলাকার মাটিতে উদ্ভিদের জন্য উপযুক্ত পুষ্টি উপাদান কম_বিশেষ করে যেসব জায়গায় নাইট্রোজেনের পরিমাণ কম সেখানকার কিছু গাছ নাইট্রোজেনের ঘাটতি পূরণের জন্য ছোট ছোট পোকামাকড় খেয়ে থাকে। তবে সব বিজ্ঞানী গাছের পোকামাকড় খাবার এমন কারণের সঙ্গে একমত নন। মাংসখেকো উদ্ভিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো_কলস উদ্ভিদ, ফ্লাইপেপার ট্র্যাপ, স্ন্যাপ ট্র্যাপ, ব্লাডার ট্র্যাপ, লবস্টার-পট ট্র্যাপ, ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ ইত্যাদি। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এমন গাছের অস্তিত্ব রয়েছে। সেখানে সূর্য, শিশির এবং ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ নামে দুটি মাংসখেকো গাছ রয়েছে। মাংসখেকো এসব গাছ সাধারণত নানা ধরনের ফাঁদে ফেলে পোকামাকড় শিকার করে থাকে। কলস আকৃতির গাছগুলোতে এক ধরনের মধু জন্মে। এই মধু খাবার লোভে ছোট পোকাগুলো গাছের ওপর বসলে পা পিছলে কলসের ভেতরে পড়ে যায়। তখন আরেক ধরনের রস পোকাটিকে আটকায় এবং আরো কিছু রস নিঃসরণ করে গাছটি পোকাটিকে হজম করে ফেলে। আবার ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপের পাতাগুলো দেখতে অনেকটা দুপাটি চোয়ালের মতো। কোনো পোকা এই পাতার ওপর বসলে আধা সেকেন্ড সময়ের মধ্যেই পাতাটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১০ দিনে পোকাটি হজম করে, তারপর পাতাটি তার মুখ আবার খোলে।

পেত্রা, জর্দান

0 comments
অসাধারণ সৌন্দর্যের এক বিস্ময়কর প্রাচীন আরব শহর হলো পেত্রা। বর্তমান জর্দানের দক্ষিণ-পশ্চিমে হুর পাহাড়ের পাদদেশে এই শহরটি অবস্থিত। নগরীটি মানুষকে আকৃষ্ট করার মূল কারণ এর মনোমুঙ্কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভগুলো। এটি নির্মাণ করা হয়েছে গুহার মধ্যে। কোনো কোনো অংশে এটি মাত্র ১২ ফুট চওড়া। গুহার পাশেই কঠিন পাথরের দেয়ালের গায়ে গাঁথা আছে অনেক প্রাচীন দালান। দালানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো 'খাজনেত ফিরাউন' নামের একটি মন্দির। মন্দিরটি ফারাওদের ধনভাণ্ডার নামেও পরিচিত। এখানে আছে একটি অর্ধগোলাকৃতির তিন হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি বৃহদাকার নাট্যশালা। নগরীটিকে অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি দুর্গও বলা যায়। ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পেত্রা নগরী ছিল নাবাতাইন রাজ্যের রাজধানী। নানা সময়ে নানা জাতির দখল-পাল্টা দখলে নগরীটি ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে থাকে। বহু বছর অজানা থাকার পর ১৮১২ সালে এই প্রাচীন শহরটিকে পশ্চিমা বিশ্বের নজরে আনেন সুইস পরিব্রাজক জোহান লুডিগ বুর্খার্দত। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো পেত্রা নগরীটিকে 'বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান' হিসেবে ঘোষণা করে।


গ্রন্থনা : তৈমুর ফারুক তুষার

রোডসের মূর্তি

0 comments
প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের একটি হলো রোডসের মূর্তি। ইজিয়ান সাগরে অবস্থিত সবচেয়ে বড় দ্বীপ রোডস। প্রাচীন গ্রিসের অন্তর্ভুক্ত এই দ্বীপটি ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র। রোডস দ্বীপের মানুষরাই খ্রিস্টপূর্ব ২৮০ অব্দে নির্মাণ করেন বিশাল একটি মূর্তি। সূর্য দেবতা হিলিয়াসের এই বিশাল মূর্তিটি ছিল অত্যন্ত বিস্ময়কর। তখনকার মানুষেরা বিশালাকার এই মূর্তিটি দেখে ভীষণভাবে বিস্মিত হতো। এই মূর্তিটি নির্মাণের পেছনের কারণটা বেশ মজার। মহাবীর আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর সেনাপতিদের মধ্যে রোডস দ্বীপের দখল নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দেয়। রোডস দ্বীপের বাসিন্দারা ছিল সেনাপতি টলেমির সমর্থক; কিন্তু আরেকজন সেনাপতি এই দ্বীপ দখল করে নিলে রোডসের বাসিন্দাদের সঙ্গে যুদ্ধ বেঁধে যায়। পরে সেনাপতি টলেমির সৈন্য এবং রোডসের বাসিন্দারা যুদ্ধ করে দ্বীপটিকে শত্রুমুক্ত করে। শত্রুরা ফেলে যায় অনেক তামা ও লোহা। এই ফেলে যাওয়া তামা ও লোহা কী কাজে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে অনেক ভাবনার পর সূর্য দেবতা হিলিয়াসের মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অনেক মানুষের শ্রমে নির্মাণ করা হয় ১২০ ফুট উচ্চতার এই মূর্তিটি। রোডসের মানুষেরা এই মূর্তিটি নির্মাণে প্রায় ২৫০ টন তামার ব্যবহার করে। খ্রিস্টপূর্ব ২২৮ অব্দে এক প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে মূর্তিটির একটি পা ভেঙে যায়। এরপর ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সারাসিন জাতি রোডস দ্বীপ দখল করে নিয়ে এই আশ্চর্যজনক মূর্তিটি ধ্বংস করে দেয়।

অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি

0 comments
Zeus Hermitage St. Petersburg 20021009
প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি হলো অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি। গ্রিকদের অসংখ্য দেব-দেবীর মধ্যে প্রধান দেবতা হলেন জিউস। অন্য দেব-দেবীদের তুলনায় জিউস অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই গ্রিকরা তাদের প্রধান দেবতাকে সন্তুষ্ট এবং সম্মানিত করার লক্ষ্যে এ মূর্তিটি নির্মাণ করেন খ্রিস্টপূর্ব ৪৩৫ অব্দে গ্রিকরা অলিম্পিয়া নগরীতে একটি মন্দির নির্মাণ করে এবং সেখানেই স্থাপন করে দেবতা জিউসের বিশালাকার মূর্তি। মূর্তিটি উচ্চতায় ছিল প্রায় ৪০ ফুট। অবশ্য জিউসের এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠায় আরো একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। এ অলিম্পিয়া নগরীতেই বসত জনপ্রিয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর অলিম্পিক। বিশ্বের বৃহত্তম এ খেলার আসরটিতে দেবতা জিউসের আশীর্বাদ পেতেই এ বিশাল মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছিল। সাতজন মিস্ত্রি আড়াই বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে মূর্তিটি তৈরি করেন। বলা হয়ে থাকে ফিডিয়াস এ মূর্তিটির নকশা করেন। দারুণ সৌন্দর্য এবং বিশালতার কারণে দেবতা জিউসের এ মূর্তিটি মানুষের কাছে আশ্চর্যময় হয়ে ওঠে। খ্রিস্টধর্মের প্রসারের ফলে ধ্বংস করে ফেলা হয় মূর্তিটি। মূর্তিটির খুব সামান্য অংশ এখনো টিকে আছে।

গ্রন্থনা : তৈমুর ফারুক তুষার

Saturday, August 25, 2012

কলোসিয়াম

0 comments
Colosseum in Rome, Italy - April 2007
বিশ্বের সপ্তমাশ্চর্যের একটি হলো ইতালির রোম শহরে অবস্থিত কলোসিয়াম। এটি মূলত একটি ছাদবিহীন মঞ্চ। চারতলাবিশিষ্ট অনেকটা বৃত্তাকার এই মঞ্চটি তার নির্মাণশৈলীর কারণে এখনো মানুষের বিস্ময় জাগায়। এখানে বসেই মানুষ ও প্রাণীদের নানা ধরনের খেলা, প্রদর্শনী ইত্যাদি উপভোগ করতেন তৎকালীন রোম সম্রাটরা। কলোসিয়ামে প্রায় ৫০ হাজার দর্শক একসঙ্গে বসতে পারত। বিস্ময়কর এই মঞ্চটি অনেক করুণ ও বীভৎস কাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। এই কলোসিয়ামেই অনুষ্ঠিত হতো যোদ্ধাদের লড়াই প্রতিযোগিতা। লড়াইরত এই যোদ্ধাদের বলা হতো গ্লাডিয়েটর। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একজন গ্লাডিয়েটর আরেকজন গ্লাডিয়েটরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করত। লড়াই করতে করতে এই গ্লাডিয়েটররা রক্তাক্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত। গ্যালারিতে বসে এই দৃশ্য দেখে উল্লসিত হতেন সম্রাটসহ অন্য দর্শকরা। অমানবিকভাবে এমন অসংখ্য মানুষের প্রাণ হরণের সাক্ষী এই কলোসিয়াম। কলোসিয়ামটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ৭২ খ্রিস্টাব্দে। ফেরিয়াস বংশের সম্রাট ভেসপাসিয়ান এটি নির্মাণ করেন। তিনি এটির নাম রেখেছিলেন এমফি-থিয়েটারিয়াম ফেভিয়াম। সাত বছরে তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণ করে আকস্মিকভাবে মারা যান ভেসপাসিয়ান। পরে তাঁর ছেলে সম্রাট টাইটাস এর নির্মাণকাজ শেষ করেন। টাইটাস ফেভিয়ামের নাম পাল্টে নতুন নাম রাখেন কলোসিয়াম। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম সম্রাটদের একজন ছিলেন টাইটাস। তিনিই কলোসিয়ামে গ্লাডিয়েটরদের মরণপণ লড়াইয়ের সূত্রপাত করেন। প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত এই কলোসিয়ামটি অতীতের নিষ্ঠুরতা আর বিস্ময়ের সাক্ষী হয়ে এখনো রোমে দাঁড়িয়ে আছে।
0 Colosseum - Rome 111001 (1)
0 Colosseum - Rome 111001 (2)
0 Colosseum - Rome 111001 (4)
Colloseum-hypogeum-detail
Colosseo di Roma panoramic

চুইংগাম

0 comments
চুইংগাম চিবাতে কে না ভালোবাসে? ছেলে-বুড়ো সব বয়সের মানুষকেই চিবাতে দেখা যায় এই চুইংগাম। বর্তমানে নানা রঙের প্যাকেটে চুইংগাম বাজারে পাওয়া যায়। তবে শুরুতে কিন্তু এমনটা ছিল না। প্রাচীনকালের মানুষের খাদ্য তালিকায় যে চুইংগাম ছিল তা মূলত গাছের রস বা ছাল। প্রাচীন গ্রিক জাতি ম্যাসটিক গাছের আঠালো উপাদান ম্যাসটিচ চিবিয়ে খেত। গ্রিক ভাষায় ম্যাসটিচ শব্দের অর্থ হলো 'চিবানো'। কেউ কেউ এটিকেই মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম চুইংগাম বলে আখ্যায়িত করেন। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় পাঁচ হাজার বছর আগে চুইংগামের অস্তিত্ব থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ মিলেছে। ফিনল্যান্ডে গবেষণা চালাতে গিয়ে এই আবিষ্কারটি করেন ব্রিটিশ শিক্ষার্থী সারাহ পিকিন। গুহাতে প্রাপ্ত উপকরণকে ল্যাবরেটরিতে আতশ কাচের নিচে ফেলে তিনি বুঝতে পারলেন এটি প্রস্তর যুগের চুইংগাম, সঙ্গে পাওয়া গেল গুহামানবের দাঁত বসানোর প্রমাণ। আরো জানা গেল, চুইংগামটি যে গাছের অংশ সেটির রয়েছে ছোটখাটো ক্ষত সারানোর ক্ষমতা। পৃথিবীর প্রায় সব সভ্যতায়ই চুইংগামের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে চুইংগামের ধরন ও ব্যবহারের কারণে ভিন্নতা রয়েছে। গ্রিসের লোকেরা গাছের আঠালো রস জমিয়ে গাম বানাত। এই গামই তারা চুইংগামের মতো চিবাত। তারা বিশ্বাস করত, এটি দাঁত পরিষ্কার ও মুখের ময়লা দূর করে। মায়ানরা ব্যবহার করত একটি বিশেষ গাছের ছাল। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসীরা গাছের বাকলের সঙ্গে মৌচাকের মোম মিশিয়ে নরম করে তৈরি করত তাদের চুইংগাম। বর্তমান সময়ের চুইংগামের জনক বলা হয় আমেরিকার টমাস এডামসকে। ১৮৫০-এর দশকে তিনি চুইংগাম তৈরির মেশিন আবিষ্কার করেন এবং মেশিনটি নিজের নামে পেটেন্ট করে নেন।

আলুটিলার সুড়ঙ্গ, খাগড়াছড়ি

0 comments
খাগড়াছড়ির আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ পথ (আলুটিলা গুহা) দেখতে পর্যটকদের ভিড় এখন উপচে পড়ছে। ঈদ আনন্দের ছুটি কাটাতে দেশীয় পর্যটকদের ভিড় এখন সবচেয়ে বেশি। ছেলে, মেয়ে ও পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রতিদিন ছুটে আসছে অসংখ্য পর্যটক। হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউস, গেস্ট হাউস কোনোটাতে এখন ঠাঁই মিলছে না। কেউ কেউ পুরনো বন্ধুবান্ধব কিংবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে থাকছে। চেঙ্গী, মাইনী বিধৌত এ পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা গোটা জেলাকে ঘিরে রেখেছে অসংখ্য পাহাড়ি ঝর্ণা। মং সার্কেলের আওতাধীন এ জেলা রাঙামাটি চাকমা সার্কেল, বান্দরবান বোমাং সার্কেল ও খাগড়াছড়ি হচ্ছে মং সার্কেলের অধীনে। বর্তমানে মং সার্কেলের রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী বংশানুক্রমে মং রাজার দায়িত্ব পালন করে চলেছে।
চেঙ্গী নদীর পাড় কিংবা জেগে ওঠা চরে তৎকালীন বহু বছর আগে ছোট আখের ন্যায় এক প্রকার সরু লম্বা আখ জন্মাতো, যা এখানকার ভাষায় খাগড়ানল হিসেবে অধিক পরিচিত ছিল।

খাগড়ানলের পাশেই ছড়া, খাগড়া যোগ ছড়া এ নিয়ে পরিচিত পেল খাগড়াছড়ি। এভাবেই অনেকে এ জেলার নামকরণ খুঁজে পান। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এ জেলার প্রধান কেন্দ্র ছিল রামগড়ে। রামগড় মহকুমা শহর ছিল তৎকালীন এ জেলার কেন্দ্রবিন্দু। কালের আবর্তে দেশ স্বাধীন হলো। পর্যায়ক্রমে এখন গোটা জেলার কেন্দ্রবিন্দু।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়, ঝর্ণা, সবুজ বনানী ঘেরা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। এখানে উপজাতীয় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাঙালিদেরও বসবাস রয়েছে। এ জেলায় সর্বমোট ৩ লাখ ৪২ হাজার ৪৮৮ জন লোকের বসবাস। পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর এখানে ব্যাপকহারে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু হয়। শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে রক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টা চালানো হলেও তা এখনো বন্ধ হয়নি। ঝর্ণা, পাহাড়, ছড়া, বন-বনানীর সমন্বয়ে খরস্রোতা চেঙ্গী নদীর পাড়ে এ জেলার মূল শহর অবস্থিত। ১৯৮৩ সালে জেলা হওয়ার পর থেকে এখানকার রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে শুরু করা হয়, যা অদ্যাবধি চলছে।

নয়নাভিরাম পাহাড়ে আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে এ জেলায় আসতে হয়। আলুটিলা সর্বোচ্চ পাহাড়, যা এককালে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল। আলুটিলা পাহাড় থেকে খাগড়াছড়ি শহরের দৃশ্য এক অপূর্ব, যা যে কাউকে এক সেকেন্ডের জন্য হলেও থাইল্যান্ডের কোনো নগরীর কথা মনে করিয়ে দেবে।

বহমান চেঙ্গী নদীর পাশ ঘেঁষে শহরের আশপাশ এলাকা যতদূর চোখ যায়, শুধু সবুজ বন-বনানী ও পাহাড় মালা। দূরের পাহাড় আকাশের মেঘ ঘেঁষে সুউচ্চ পাহাড়ের রূপ নিয়েছে। আলুটিলা পর্যটন এলাকা ব্যাপক স্বীকৃতি না পেলেও এখানে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভিড় করে। আলুটিলা পাদদেশে রয়েছে এক প্রকৃতিগত ভাবে গড়ে ওঠা সুড়ঙ্গ পথ। প্রায় আধা কিলোমিটার এ পথে রয়েছে ছড়া ও ঝর্ণার কলকাকলির সংমিশ্রণ। হাতে বাঁশের চোঙ্গায় মশাল জ্বালিয়ে দর্শনার্থীরা সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করে। সুড়ঙ্গে প্রবেশ করলে মনে হয় কোনো এক স্বপ্নপুরীর দেশে যাচ্ছি। গা ছম্ ছম্ করে ওঠে। শরীরে শিহরণ জাগায়। পথ চলতে পায়ে ঠাণ্ডা হাওয়া লাগে। শব্দ করলে তা পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনি হয়ে উঠে। এ এক অজানা রহস্যপুরী।

রাতে খাগড়াছড়ি শহর আরও মনোমুঙ্কর। শহরের ঝিলিমিলি বাতিগুলো মনে হয় যেন সাগরে দূরের সমুদ্র জাহাজের ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। পাহাড়ের জনপদে পাহাড়িদের জীবনধারা, চাল-চলন আলুটিলার পাহাড়কে আরও ছন্দ-গতিময় করে তুলে।

পাহাড়ি তরুণী কলসি কাঁকে ঝর্ণা থেকে গোসল সেরে পানি নিয়ে বাড়ি ফেরার সে এক অপরূপ দৃশ্য। পাহাড়ের গায়ে জুম চাষ, আদা, হলুদ, কাঠ আহরণসহ নানা দৃশ্য চোখে পড়বে। সবমিলে খাগড়াছড়ি শহর এখন পর্যটকদের ভারে উৎসবমুখর নগরীতে পরিণত হয়েছে। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে জিরোমাইল এলাকায় স্থাপিত জেলা পরিষদ পার্ক।
Ful Biju-Chengi river-Khagrachori-Biplob Rahman
**মো. জহুরুল আলম, খাগড়াছড়ি

Sunday, August 19, 2012

রিক্সা

0 comments
Bangladeshi style Rickshaw
বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বাহন হলো রিকশা। জীবনে একবারও রিকশায় চড়েননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই রিক্সার প্রথম প্রচলন হয় জাপানে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গাড়ির জ্বালানির ব্যাপক সংকটের কারণে জাপানে রিকশা বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জাপানে 'নিনতাকু' নামে পরিচিত সাইকেল রিকশা ১৯৫০-এর দশকে উঠে গেলেও বাংলাদেশে এটি এখনো বহুল ব্যবহৃত একটি বাহন। কারো কারো মতে, ১৯১৯ সালে মিয়ানমার থেকে সর্বপ্রথম চট্টগ্রামে রিকশা বাংলাদেশে আসে। তবে ঢাকায় প্রথম রিকশা আসে কলকাতা থেকে। কলকাতায় রিকশার প্রচলন হয় ১৯৩০-এর দশকে। বাংলাদেশে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে বসবাসরত ইউরোপীয় পাট ব্যবসায়ীরা তাঁদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্য ১৯৩৮ সালে কলকাতা থেকে রিকশা আমদানি করেন। ঢাকায় লোকদের সে সময়ে প্রচলিত বাহন ছিল ঘোড়ার গাড়ি, পালকি ও নৌকা। নতুন ধরনের এই বাহনটি খুব দ্রুতই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ধীরে ধীরে রিকশা বাহন হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। পৌরসভার রেকর্ড থেকে জানা যায়, ১৯৪১ সালে ঢাকায় রিকশার সংখ্যা ছিল ৩৭টি এবং ১৯৪৭ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮১-তে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে এই রিকশার সংখ্যা। ১৯৯০-এর দশকে এসে এই রিকশার সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লাখেরও ওপরে। শুধু শহর এলাকা নয়, রিকশা এখন ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামগঞ্জেও। বাংলাদেশজুড়েই রিকশা এখন জনপ্রিয় একটি বাহন।



মৃত সাগর, জর্ডান

0 comments
বিশাল জলরাশি থাকা সত্ত্বেও সাগরটির নাম ডেড সি বা মৃত সাগর। এই নামকরণের কারণ হলো এই সাগরে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজাতীয় অণুজীব ছাড়া মাছ বা অন্য কোনো জলজ প্রাণী এমনকি উদ্ভিদও বাঁচে না। আরেকটি অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এ সাগরে কোনো মানুষ সাঁতার না জানলেও ডুবে মারা যায় না। এর কারণ হলো, মৃত সাগরের পানির ঘনত্ব স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। আর এ সাগরে পানির ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণ হলো, পানিতে লবণের উপস্থিতি বেশি। অন্যান্য সাগরের পানিতে যেখানে লবণের পরিমাণ ৬ শতাংশ দেখা যায়, সেখানে মৃত সাগরের পানিতে লবণের পরিমাণ ৩০ শতাংশ। এই কারণে একে সল্ট সি বা লবন সাগরও বলা হয়। মৃত সাগরটি চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। অনেকের ধারণা, মৃত সাগরের কাদা গায়ে মাখলে বিভিন্ন রোগের উপশম হয়। আবার কেউ কেউ চর্মরোগ থেকে মুক্তির জন্য এখানে সূর্যস্নান করে থাকে। মৃত সাগরের ধর্মীয় গুরুত্বও অনেক। ইসলাম ধর্ম মতে, এ এলাকাটি হজরত লূত (আ.)-এর অনুসারীদের আবাসস্থল। এখানেই ফেরেশতারা ভূমি উল্টে লূত (আ.)-এর অনুসারীদের মাটি চাপা দেন। ইসলামে এ স্থানটিকে বিশ্বের সবচেয়ে নিচু এলাকা বলে আখ্যা দেওয়া হয়। বাইবেলেও মৃত সাগর নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে এ স্থানের পানি একসময় মিষ্টি হয়ে উঠবে এবং তা মাছের বসবাসের উপযোগী হবে। মৃত সাগরের অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক। এখানে প্রাপ্ত উপাদান থেকে বিপুল পরিমাণে পটাশ, কস্টিক সোডা, ব্রোমিন, সোডিয়াম ক্লোরাইড ও ম্যাগনেসিয়াম উৎপন্ন করা হয়।
এর পশ্চিমে পশ্চিম তীর এবং ইসরায়েল , পূর্বে জর্ডান । জিবুতির আসাল হ্রদের পর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লবণাক্ত পানির প্রাকৃতিক আধার।
Masada Northeast Panorama

নবরত্ন মন্দির, হাটিকুমরুল; সিরাজগঞ্জ

17 comments
সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হাটিকুমরুল। গ্রামটি হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত। পাখির কোলাহল আর ছায়া সুনিবিড় সবুজে ঘেরা এ হাটিকুমরুল এলাকায় নবরত্ন মন্দির অবস্থিত। ১৭০৮ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। নবরত্ন মন্দিরের গঠন, আকৃতি ও নির্মাণশৈলী এতই অভূতপূর্ব যে দেশীয় পর্যটক ছাড়াও জার্মান, জাপান, ফ্রান্স, আমেরিকা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এখানে ঘুরতে আসেন। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং মন্দিরের আশপাশের জায়গাগুলো দখলমুক্ত করে পর্যটকদের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে নবরত্ন মন্দির হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
জানা যায়, মথুরার রাজা প্রাণনাথের বন্ধুভাজন ব্যক্তি ছিলেন জমিদার রামনাথ ভাদুড়ী। রাজা প্রাণনাথ দিনাজপুর জেলার ঐতিহাসিক কান্তজীর মন্দির নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় করে সংকটে পড়ে যান। এদিকে রামনাথ ভাদুড়ী রাজা প্রাণনাথকে রাজস্ব পরিশোধ করার জন্য তাকে চাপ দেন। কিন্তু রাজা প্রাণনাথ বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে রামনাথ ভাদুড়ী বন্ধুত্বের খাতিরে নিজ কোষাগার থেকে প্রাণনাথের বকেয়া পরিশোধ করে দেন। বিনিময়ে তিনি রাজা প্রাণনাথকে দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরের আদলে হাটিকুমরুলে একটি মন্দির নির্মাণের শর্ত জুড়ে দেন। বন্ধুর দেওয়া শর্ত মোতাবেক রাজা প্রাণনাথ কান্তজীর মন্দিরের অবিকল নকশায় হাটিকুমরুলে এই নবরত্ন মন্দির নির্মাণ করেন। আবার অন্য সূত্রে জানা যায়, রাখাল জমিদার নামে পরিচিত রামনাথ ভাদুড়ী তার জমিদারি আয়ের সঞ্চিত কোষাগারের অর্থ দিয়েই এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।

মন্দিরের বিশাল চত্বরে বিক্ষিপ্তভাবে আরও তিনটি মন্দির রয়েছে। নবরত্ন মন্দিরের উত্তরে শিব পার্বতী মন্দিরের পাশেই রয়েছে দোচালা চণ্ডি মন্দির, দক্ষিণ পাশে পুকুরের পাড় ঘেঁষে রয়েছে পোড়া মাটির টেরো কোটা কারুকার্য খচিত শিবমন্দির। এই চারটি মন্দিরেই পূজা-অর্চনা করা হতো। তার পর কালের বিবর্তনে ভারত উপমহাদেশে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত, দেশ বিভাগ ও রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনে হারিয়ে যায় জমিদারের পূর্বপুরুষরা। যুগ যুগ ধরে কালের সাক্ষী হয়ে ঝোপঝাড় বুকে নিয়ে লুকিয়ে ছিল এই নবরত্ন। অরক্ষিত এই নবরত্নের অনেক মূল্যবান প্রাচীন সামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে দেশি-বিদেশি দুর্বৃত্তরা। পরে স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ঐতিহ্যের এই নিদর্শন খুঁজে বের করে। বিশেষজ্ঞদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় নবরত্ন মিসরের পিরামিডের মতো ধীরে ধীরে ফিরে পেতে থাকে প্রাচীন ঐতিহ্যসহ তার হারানো অপরূপ সৌন্দর্য। এর পর ১৯৮৭ সালে সংরক্ষিত ইমারত হিসেবে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ গ্রহণ করে নবরত্ন মন্দির ও এর আশপাশের মন্দিরের কিছু সংস্কার সাধন করে।

নবরত্ন মন্দির দেখার জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত দর্শনার্থী হাটিকুমরুলে আসে। এ ছাড়া মন্দিরটির অভূতপূর্ব নির্মাণশৈলী দর্শনের জন্য জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, আমেরিকা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এখানে আসে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে নিজ জেলার দর্শনার্থীদের সমাগম কম লক্ষ্য করা যায়। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার হাঁটার রাস্তা, খানাখন্দকে ভরা একটু বৃষ্টি হলেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পর্যটকদের জন্য রাস্তাটা পাকা করা অনেক আগেই জরুরি ছিল। নবরত্ন মন্দিরটির চার পাশে প্রায় ২০০ ঘর হিন্দু পরিবার বসবাস করে। মূল মন্দিরের পাশেই হিন্দুদের পূজা-অর্চনার একটি জরাজীর্ণ মন্দির রয়েছে। এটাও মূল মন্দিরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেরামত করা দরকার। নবরত্ন মন্দিরের চার পাশে জায়গাগুলো দখলমুক্ত করে পর্যটকদের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে নবরত্ন মন্দির হতে পারে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। ফলে সলঙ্গা থানার পরিচিতি ও মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান সরকারের কাছে এটাই এলাকাবাসীর প্রত্যাশা।

*আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

সৌরজগতের সাত আশ্চর্য

0 comments
খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২০০ বছরে পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্যকে নির্বাচিত করেছিলেন আন্টিপেটার অব সিডন। পৃথিবীর মতোই সমগ্র সৌরজগতেও অনেক আশ্চর্য জিনিস ছড়িয়ে আছে। মহাকাশ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের অসংখ্য আশ্চর্য থেকে ভেবেচিন্তে সাতটি আশ্চর্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অদ্ভুত সেসব জিনিসের কথা জানাচ্ছেন -জুয়েল সরকার

১. সোলার ফ্লেয়ার

সৌরজগতের প্রথম আশ্চর্য হলো সোলার ফ্লেয়ার বা সৌরঝলক। সূর্যের উপরিভাগের বিভিন্ন চৌম্বক ক্ষেত্রে এক জটিল বিন্যাস থেকে ঘন ঘন বিভিন্ন আকৃতির এই দর্শনীয় আলোর ঝলকের সৃষ্টি হয়। পৃথিবী থেকে করোনা গ্রাফের মাধ্যমে এই সূর্যের এই নান্দনিক সৌরঝলক পর্যবেক্ষণ করা হয়।

২. অলিম্পাস মনস

সৌরজগতের দ্বিতীয় আশ্চর্য হলো অলিম্পাস মনস। এটি মঙ্গল গ্রহের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি। মঙ্গল গ্রহের ভূস্তর থেকে ৪ কিলোমিটার উঁচুতে রয়েছে এর ৮০ কিলোমিটার চওড়া জ্বালামুখ! সুবিশাল এই আগ্নেয়গিরির পাদদেশের ব্যাস ৬০০ কি.মি.। এর চারপাশে দিগন্ত বিস্তৃত সমতল ভূমি। গ্রীষ্ম ও বসন্তকালে এর জ্বালামুখের চারপাশ থেকে যখন বেগ সরে যায়, তখন পৃথিবীর যে কোনো মানমন্দির থেকে টেলিস্কোপের সাহায্যে তা দেখা যায়। এ এক অদ্ভুত দৃশ্য।

৩. মঙ্গলে দু'বার সূর্যোদয়

অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য যে মঙ্গলগ্রহে দু'বার সূর্যোদয় ঘটে। আর এটিই সৌরজগতের তৃতীয় আশ্চর্য! অবশ্য এটি রোজ হয় না। সূর্যকে প্রতিবার প্রদক্ষিণকালে মাত্র একবার হয়। দুইবার সূর্যোদয় সৌরজগতের আর কোনো গ্রহে হয় না।

৪. শনির বলয়

সৌরজগতের চতুর্থ আশ্চর্য শনি গ্রহকে কেন্দ্র করে। আর এটি হচ্ছে শনির ট্রেড মার্ক 'শনির বলয়'। এই বলয়ের সবচেয়ে অবাক দিক হলো এটিকে যেদিক থেকে দেখা যাক না কেন, এ বলয়ের সৌন্দর্য অনন্য ও অসাধারণ। পঞ্চম আশ্চর্য হলো শনির উপগ্রহ

৫. টাইটানের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য

টাইটানের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও ঋতু পরিবর্তন। সৌরজগতের অধিকাংশ উপগ্রহ খানাখন্দকে ভরা এবং রুক্ষ। বাতাসের অস্তিত্ব নেই। টাইটানের নীলাকাশে মরচে রংয়ের মেঘ উড়ে বেড়ায়। মিথেনের নরম কাদায় ভাসে আমোনিয়া বরফ। শনির এই উপগ্রহকে বলা হয় মহাকাশের মরূদ্যান। পৃথিবীর মতো ভারি এর আবহাওয়া।

৬. মঙ্গলের ম্যারিনাল ভ্যালি

মঙ্গলগ্রহের ম্যারিনাল ভ্যালি সৌরজগতের ষষ্ঠ আশ্চর্য। আমেরিকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের চেয়ে লম্বা চওড়ায় বহু গুণ বড়। এখানে আছে অসংখ্য গিরিখাত যেগুলো দেখলে মনে হয় অতীতে এখানে নদী ছিল। কয়েকটি গিরিখাত প্রায় ২৫০ কি.মি. লম্বা। অনেক স্থানে এর গভীরতা প্রায় ৭০০ মিটার যা গ্রান্ড ক্যানিয়নের প্রায় ৪ গুণ। এ গ্রহে একটি গোলাকার খাদও আছে, যার নাম পাভোনিস মনস।

৭. বৃহস্পতির লাল টিপ

সৌরজগতের সপ্তম আশ্চর্য হলো বৃহস্পতির লাল টিপ। এ গ্রহের দক্ষিণ গোলার্ধে যে দীর্ঘস্থায়ী ঝড় হয় , সেই ঝড়ে বাতাসে ধুলোর মতো উড়ে বেড়ায় কমলা লাল রংয়ের অনেক হাইড্রোকার্বনের গুঁড়া। বহু দূর থেকে দেখলে লাল টিপ বলে মনে হয়। এই টিপ লম্বায় প্রায় ৪০ হাজার কি.মি. এবং চওড়ায় প্রায় ১১ হাজার কি.মি.।

মিরিঞ্জা পাহাড়, লামা, বান্দরবান

0 comments
কোথাও মেঘ, রোদ্দুর আবার কোথাও বৃষ্টি। চারদিকে সবুজ পাহাড়। রোদের মাঝে হঠাৎ বৃষ্টি। এ যেন প্রকৃতির এক লীলাখেলা। পাহাড়ের এক পাশে ঘনকালো মেঘের অন্ধকার। অন্য পাশে কাঠফাটা রোদ। বিশাল আকৃতির উঁচু অরণ্যে ঢাকা পাহাড়। এক পাহাড়ে মেঘ তো অন্য পাহাড়ে বৃষ্টি। কোনো পাহাড় থেকে উঠছে ধোঁয়ার মতো জলীয়বাষ্প। সে ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে ওঠে নীল আকাশ। ভাসে মেঘের ভেলা। বিকালের পড়ন্ত রোদে পাহাড়ের চূড়া থেকে দূরে দেখা যায় বাদামি রংয়ের আকাশ আর সমুদ্রের মিলন। কখনো কালো মেঘের আকাশে সাদা বক উড়ে নিজের ঠিকানায়। শেষ বিকালে যখস সূর্য ডোবে চারদিকে নেমে আসে অন্ধকার। পাহাড়ের খোপে ঝুপড়ি ঘরে জ্বলে তেলের কুপি। আর বৃষ্টি এলে ভিজিয়ে দেয় পার্বত্য জনপদ। জুমে কাজ শেষে আদিবাসি নারীদের ঘরে ফেরার তাড়া। গভীর বন থেকে কানে আসে হারিয়ে যাওয়া গরুর গলায় বাঁধা ঘণ্টির আওয়াজ। নগর যন্ত্রণা ছেড়ে কেউ যদি নির্জন বর্ষার দৃশ্য দেখতে চান তাহলে যেতে হবে বান্দরবানের লামার মিরিঞ্জা পাহাড়ে।

সমতল থেকে প্রায় ১৬ ফুট উঁচু মিরিঞ্জা পাহাড়। হরেকরকমের গাছগাছালি। অাঁকাবাঁকা রাস্তা। চাঁদের গাড়ির আনাগোনা। পাহাড়ের গায়ে ঝরনার জলধারা। দুপাহাড়ের চূড়ায় মুরং/ ত্রিপুরাদের বাস। শূকরের পাল, বন মোরগের ডাক আর মুরংদের থাকার টং ঘর। রয়েছে পর্যটকদের জন্য টাইটানিক জাহাজের ভাস্কর্য। টাইটানিকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মনে পড়বে শত বছর আগের টাইটানিক জাহাজকে নিয়ে তৈরি কাহিনীচিত্র। শান্ত বিকালে দেখা যাবে সূর্যাস্তের দৃশ্য। কঙ্বাজারের সমুদ্রসৈকত। পাহাড়ের মাঝখানে ছুটেচলা আঁকাবাঁকা মাতামুহুরী নদী। মিরিঞ্জার পর্যটন কমপ্লেক্সে আগত পর্যটকদের সুবিধার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সুরম্য গিরিদ্বার। রয়েছে রেস্ট হাউস-কাম ওয়েটিং শেড 'বনরত্না'। নেই ভিখারিদের উৎপাত। নির্জনে বসে প্রিয়জনকে নিয়ে গল্প করতে রয়েছে দুই স্তরের গোলঘর 'মালঞ্চ'। আছে টেলিস্কোপ ঘর ও প্ল্যাটফর্ম। গোলঘরে রয়েছে জোছনা দেখার বিশেষ আয়োজন। চাঁদনী রাতে চাঁদ দেখা যাবে গোলঘর থেকে। শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে মিনি শিশুপার্ক। খাওয়াদাওয়ার জন্য রয়েছে শিশুপার্কসংলগ্ন অত্যাধুনিক রেস্তোরাঁ। এক পাশে সুখ পাহাড় অন্য পাশে দুঃখ। মাঝখানে বহমান মাতামুহুরী। ঢেউতোলা ঘোলা জলে পালতোলা মালবাহী নৌকা।

পাহাড়ের গায়ে শত বছরের পাথরের কারু কাজ। কখনো দেখা মেলে বনমোরগ, খরগোশ, শিয়াল, বুনো হরিণের ছোটাছুটি। সকালে এলেই এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স ঘুরে যে কেউ চলে যেতে পারেন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক অথবা কক্সবাজারে। তবে মেঘ আর বৃষ্টির লুকোচুরি খেলার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে চাইলে থাকতে হবে এক রাত। থাকতে না চাইলেও রয়েছে বিকল্প ব্যবস্থা। দিনভর থেকে সন্ধ্যায় ফিরতে পারেন লামা বাজারে। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থা। খরচ খুবই কম।

ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের বাসে উঠতে হবে। চট্টগাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া বাসস্টেশনে নেমে বাস, জিপ, মাইক্রোবাসে ৩০ মিনিটের পথ। পৌঁছে যাবেন লামা মিরিঞ্জা টাইটানিক পাহাড়ে। এখান থেকে লামাবাজারে যেতে সময় লাগবে ১০ মিনিট। যাওয়ার আগে লামা থানার নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে একবার যোগাযোগ করলে ভ্রমণের আনন্দটা আরও মধুর হবে। হয়তো পেতেও পারেন যাবতীয় সহযোগিতা।

* নিবারণ বড়ুয়া

সোনারং জোড়া মঠ, টঙ্গীবাড়ি, মুন্সীগঞ্জ

0 comments
সোনারং জোড়া মঠ বাংলাদেশের অষ্টাদশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনারং গ্রামে এটি অবস্থিত। জানা যায়, জোড়া মঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও মূলত এটি জোড়া মন্দির। মন্দিরের একটি প্রস্তরলিপি থেকে দেখা যায়, এলাকার রূপচন্দ্র নামে হিন্দু লোক বড় কালীমন্দিরটি ১৮৪৩ সালে ও ছোট মন্দিরটি ১৮৮৬ সালে নির্মাণ করেন। ছোট মন্দিরটি মূলত শিবমন্দির। বড় মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ১৫ মিটার। মন্দির দুটির মূল উপাসনালয় কক্ষের সঙ্গে রয়েছে বড় মন্দিরের ১.৯৪ ও ছোট মন্দিরের ১.৫ মিটার বারান্দা। এ ছাড়া মন্দিরের সম্মুখ অংশে রয়েছে বেশ বড় আকারের একটি পুকুর। বড় মন্দিরটি তৈরির সময় এ পুকুরটি তৈরি করা হয়। মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনারং গ্রামের এক ছায়া-সুনিবিড় পরিবেশে অষ্টাদশ শতাব্দীর স্থাপত্যশৈলীর এক অপূর্ব প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন এ মঠটি। সোনারং গ্রামে এক সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। মন্দিরের সুউচ্চ শিখরে দণ্ডায়মান ত্রিশূলটি অনেকটা বাঁকা। মন্দিরের দেয়ালের রং বর্তমানে বিবর্ণ হয়ে গেছে। ফাটল ধরেছে মূল স্তম্ভে। পরগাছায় ছেয়ে গেছে মন্দিরটি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মন্দিরের পাশে একটি সাইনবোর্ড স্থাপন ছাড়া তেমন কিছুই করেনি।
*জগদীশ কুমার দাস

চীনের টেরাকোটা জাদুঘর

0 comments
এক দশক আগে লু তোং চিয়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন টেরাকোটাসমৃদ্ধ একটি জাদুঘর পেইচিংয়ে টেরাকোটার প্রদর্শন করে যাচ্ছে। চীনের অন্যতম বেসরকারি জাদুঘর হিসেবে প্রাচীন টেরাকোটা জাদুঘরটি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে। এর প্রতিষ্ঠাতা লু তোং চি আশা করেন, এটি সারা বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এ জাদুঘরে প্রাচীন চীনের লুপ্তপ্রায় ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ সংরক্ষণ করা হবে। প্রাচীন টেরাকোটা জাদুঘর পেইচিংয়ের দক্ষিণাঞ্চলের একটি হু থুং-এ অবস্থিত। জাদুঘরের প্রদর্শনী ভবন প্রাচীনৃ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। এখন এ প্রদশর্নী ভবনের দেয়ালের রং কিছুটা ওঠে গেছে। দেয়ালটা দেখতে মরিচাধরা পুরনো। দরজার সামনে পাইন গাছগুলোর পাশে আগাছা দেখা যায়। প্রাচীন স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত শান্ত এ জাদুঘরটি আশপাশের সুন্দর পার্ক ও মানুষের সঙ্গে যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ জাদুঘরের দর্শক খুব বেশি নয়, কারণ নিদর্শনগুলো পথ চলতেই দেখা যায়। এ জাদুঘরে চার থেকে পাঁচ হাজার বছর আগের নতুন প্রস্তর যুগ থেকে দশম শতাব্দীর থান রাজবংশ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের তিন হাজার টেরাকোটা আছে। এসব মূল্যবান প্রাচীন টেরাকোটাকে চীনের প্রাচীন টেরাকোটা সভ্যতার ইতিহাস বলা যায়। ১৯৯৭ সালে চীনে চারটি বেসরকারি জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে লু তোং চির প্রাচীন টেরাকোটা জাদুঘর অন্যতম। চীনে টেরাকোটার ইতিহাস সুদীর্ঘ। আট হাজার বছর আগে চীনের নলুদ নদী অববাহিকা অঞ্চলে রঙিন টেরাকোটার উৎপত্তি। খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীর থান রাজবংশ থেকে চীনা মাটির পাত্র তৈরি শিল্প ধীরে ধীরে টেরাকোটা শিল্পের স্থলাভিষিক্ত হয়।

উৎসঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিশ্বের প্রথম চিড়িয়াখানা

0 comments
খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ বছর আগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসংখ্য পশুপাখি সংগ্রহ করে বিশ্বের প্রথম চিড়িয়াখানাটি গড়ে ওঠে ইরাকে। নানা প্রজাতির পাখি একসঙ্গে দেখার সেই অভিপ্রায় দীর্ঘদিন থেমে থাকার পর খ্রিস্টীয় ১৫০০ অব্দে আবার একটি চিড়িয়াখানা গড়ে তোলেন মিসরের রানী হ্যাটশেপসাট। এরপর খ্রিস্টীয় ১১০০ অব্দে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরেকটি চিড়িয়াখানা গড়ে তোলেন চীনের সম্রাট ওয়েন ওয়াং। তার সেই চিড়িয়াখানায় অসংখ্য পশুপাখি ছিল। ১৫০০ একর জমির ওপর স্থাপিত বাগানের ভেতর তিনি চিড়িয়াখানাটি গড়ে তুলেছিলেন। তবে সরকারি উদ্যোগে নানা প্রজাতির পাখি দিয়ে সাধারণের জন্য প্রথম চিড়িয়াখানাটি তৈরি হয় প্রাচীন গ্রিসে। প্রাচীন রোমে যেসব চিড়িয়াখানা গড়ে উঠেছিল সেগুলো অবশ্য ব্যক্তিগত উদ্যোগেই। নানা দেশ থেকে মাটি সংগ্রহ করে তারা চিড়িয়াখানা গড়ে তুলত। ইউরোপ মহাদেশে আধুনিক যে চিড়িয়াখানা গড়ে ওঠে, তার ইতিহাস অবশ্য বড়জোর ১০০ বছরের।







Friday, August 17, 2012

ঢাকার মসলিনের ইতিহাস

0 comments
চারশো বছরেরও বেশি বয়স শহরটির। কিন্তু এর ঐতিহ্যকে হাজার বছরের ঐতিহ্য বলা চলে নিঃসন্দেহে। স্থাপত্য-সংস্কৃতি- সংগীত-রীতি সবকিছুতেই সমৃদ্ধ এই নগর। প্রাচীন ঢাকার আরেক বিস্ময় ছিল এর বস্ত্রশিল্প। 'সিলসিলাতি তাওয়ারিখের' ইতিহাসবিদ সোলায়মান উল্লেখ করেছেন বাংলার একপ্রকার সূক্ষ্ম সুতিবস্ত্র সেখানকার মুসলিম তাঁতিরা বয়ন করেন যা একটি আংটির ভেতর দিয়ে অনায়াসে বহন করা যায়।

ঢাকার ঐতিহ্য বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল ঢাকাই বস্ত্রের জন্য। এই বস্ত্রশিল্প মূলত মোগলদের পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ণতা লাভ করেছিল। রকমারি বস্ত্রশিল্পের মাঝে এদেশের চারু ও কারুশিল্পীদের সৃষ্ট আপন মনের মাধুরী মেশানো মসলিন বস্ত্র ছিল প্রধান। মসলিন তার সূক্ষ্মতা ও রমণীমোহন পেলবতার জন্য জয় করে নিয়েছিল সম্রাট, সম্রাজ্ঞী, নায়েবে নাজিম, শাহজাদা-শাহজাদীদের হৃদয়। সূক্ষ্ম বস্ত্রের জন্য প্রাচীন বাংলার গৌরব ছিল অবশ্য প্রাক-মুসলিম যুগেই। ওই সময়ের ঢাকাই বস্ত্রের ইতিহাস অন্ধকারাচ্ছন্ন হলেও মধ্যযুগীয় বাংলার মুসলিম সুলতানদের আমলে মসলিন বিষয়ক কথকতা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে। ত্রয়োদশ শতকে বিশ্বখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা যখন সোনারগাঁও আসেন তখন তিনি সোনারগাঁওয়ের মুসলিম তাঁতিদের বয়নকৃত সূক্ষ্ম বস্ত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। চতুর্দশ শতকে গিয়াসুদ্দিন আজম শাহের রাজত্বকালে চৈনিক পরিব্রাজকরা কংসুলোর নেতৃত্বে সোনারগাঁও, পাণ্ডুয়া ভ্রমণ করেছিলেন। চীনা দূতদের মালদহের আম খাওয়ানোর পাশাপাশি সূক্ষ্ম মসলিন বস্ত্র উপহার দেওয়া হয়েছিল। চীনাদের ইতিহাস মিংশরে বাংলার মসলিনের কথা উল্লেখ আছে। চীনা দূতরা বাংলার মুসলিম কারিগরদের বয়নকৃত কয়েক পদের বস্ত্রের কথা উল্লেখ করেছিলেন। এরও আগে আরবীয় বণিক, ঐতিহাসিক সোলায়মানের নবম শতাব্দীতে লেখা 'সিলসিলাতি-তাওয়ারিখের' ইতিহাসবিদ সোলায়মান উল্লেখ করেছেন বাংলার একপ্রকার সূক্ষ্ম সুতিবস্ত্র সেখানকার মুসলিম তাঁতিরা বয়ন করেন যা একটি আংটির ভেতর দিয়ে অনায়াসে বহন করা যায়। এ সূত্র থেকেই প্রমাণ মেলে বাংলার মসলিনের নান্দনিক আকর্ষণ হাজার বছর আগেই আরব বিশ্বে পেঁৗছে যায়। সে সময় জেদ্দা, বসরা, মশুল বন্দরেও ব্যবসায়ীদের আরাধ্য বস্ত্র হিসেবে পরিচিতি পায় বাংলার মসলিন। তবে সে সময় বাংলার সূক্ষ্ম বস্ত্র কি নামে পরিচিত ছিল তা জানা যায়নি। সপ্তদশ শতকে ইংরেজদের কাছে ঢাকাই বস্ত্র পরিচিতি লাভ করে 'মসলিন' হিসেবে। ইংরেজরা কেনইবা ঢাকাই বস্ত্রের নাম 'মসলিন' দিয়েছিলেন তার কারণও জানা যায় না। মসলিন গবেষকরা ধারণা করেন ইরাকের 'মোসুল' বন্দরে বাংলার বস্ত্রের উপস্থিতির কারণে বাংলার বস্ত্র 'মসলিন' আখ্যায়িত হতে পারে। বাংলার বস্ত্রের 'মসলিন' নামকরণ যেভাবেই হোক না কেন মসলিনের আকর্ষণীয় ও রুচিস্নিগ্ধ নামের আড়ালে রাজসিক আভিজাত্যের বর্ণাঢ্য ছাপ পাওয়া যায়। মলমল খাস, মলবুস খাস নামক মসলিন ছিল শ্রেষ্ঠ। 'অাঁবে-ই-রওয়া' নামে এক ধরনের উৎকৃষ্ট মসলিন সোনারগাঁও, ঢাকা, জঙ্গলবাড়ি, বাজিতপুর, তিতাবাদির মুসলিম কারিগররা বয়ন করত। 'অাঁবে-ই-রওয়া' ফারসি শব্দ, অর্থ (প্রবাহিত স্বচ্ছ রজতধারা) 'শাবনাম' মসলিনের অর্থ ভোরের শিশির। মলমল খাস, মলবুস খাস, অাঁবে-ই-রওয়া, শাবনাম, ঝুনা, বদনখাস, আলিবালি, শরবন্দ, শরবেত হরেক পদের মসলিন তৈরিতে মুসলিম কারিগরদের সুনাম ছিল। উপরোক্ত বস্ত্রগুলোর বর্ণাঢ্য নামের কারিশমাই প্রমাণ করে এই বস্ত্রগুলো নির্মাণের পেছনে রাষ্ট্রের উঁচুস্তরের লোকজনের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা সর্বোপরি পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। এ নামগুলো ছিল মুসলিম রাজন্যদের দেওয়া, তাতে কি সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে। মধ্যযুগীয় ইতিহাসের পণ্ডিত ডঙ্ আবদুল করিম এবং তার পাশাপাশি ইংরেজ ঐতিহাসিকরাও দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করেছেন মসলিন বয়ন শিল্পে ঢাকা, সোনারগাঁও, তিতাবাদি, জঙ্গলবাড়ি, ধামরাই, বাজিতপুরের মুসলিম কারিগরদের বিশেষ অবদান ছিল। শুধু মসলিন বয়ন শিল্পই নয়, মসলিন কাপড়কে আকর্ষণীয় ও বর্ণাঢ্য করে তোলার জন্য সোনা-রূপার সূক্ষ্ম কারুকাজের শিল্পীরাও ছিল অধিকাংশ মুসলিম। সুতায় রং করা, রিফু করা, ইস্ত্রি করার কাজেও ঢাকা, সোনারগাঁওয়ের তাঁতিদের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। বিশেষত মলমল খাস, মলবুস খাস মসলিন ছিল দিলি্লর সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীদের জন্য। 'সরকার-ই-আলী' মসলিন ছিল মুর্শিদাবাদের নবাব ও নায়েবে নাজিমদের জন্য। মসলিনে যত বেশি সুতা থাকত এবং যে মসলিনটি ওজনে হালকা ছিল সে মসলিনই সর্বোৎকৃষ্ট মসলিন হিসেবে বিবেচিত হতো। সম্রাট আওরঙ্গজেবকে একখণ্ড মলমল খাস মসলিন পাঠানো হয়েছিল, যার ওজন ছিল ৭ তোলা এবং ওই সময়ই ওই মসলিনটির মূল্য ছিল ৪০০ টাকা। সুবাদার ইসলাম খান দিলি্লর সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং সম্রাজ্ঞী নূরজাহানকে সোগারগাঁওয়ের খাসনগরের তৈরি ২০ হাজার টাকার 'মলমল খাস' মসলিন পাঠিয়েছিলেন। এসব মসলিন এত সূক্ষ্ম এবং ওজনে এত পাতলা ছিল যে, অধিকাংশ মসলিনের ওজনই ৭ তোলা থেকে ২০ তোলার অধিক হতো না। একবার 'অাঁবে-ই-রওয়া' নামে মসলিনের এক খণ্ড কাপড় প্রাসাদের সম্মুখস্থ জমিনের ঘাসের ওপর শুকাতে দেওয়া হয়েছিল। কোনো এক কৃষকের গাভী মসলিনকে ঘাস মনে করে পুরো মসলিন খণ্ডটিই উদরস্থ করেছিল। নবাব আলিবর্দী খাঁ ওই গাভীর মালিকের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে শহর থেকেই বের করে দিয়েছিলেন। এমনি অনেক রসালো চকমপ্রদ উপাখ্যান মসলিন সম্পর্কে ছড়িয়ে আছে।

*মাহমুদুল হাসান

মসজিদ আল নববী, মদিনা

0 comments
পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এবং শান্তিময় শহর মদিনা যা 'মদিনা আল মনোয়ারা' নামে সুপরিচিত। মনোয়ারা শব্দটির শাব্দিক অর্থ সুখী, সমৃদ্ধ, উজ্জ্বল, জ্যোর্তিময়, রৌদ্রোজ্জ্বল ইত্যাদি। বাস্তাবিক অর্থে মদিনা এক সমৃদ্ধনগরী, যা ধারণ করে আছে ইসলাম ধর্মের প্রাচীনতম তিনটি মসজিদ। মসজিদ আল নববী, কুবা মসজিদ এবং মসজিদ আল কিবলাতইন। অন্যদিকে এ শহর ধন্য হয়েছে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র সমাধিকে বুকে ধারণ করে। মূলত এ সমাধিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে 'মসজিদ আল নববী' বা 'নবীর মসজিদ'।
মসজিদ আল নববীর যাত্রা শুরু হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র হাত ধরে। ৬২২ সালে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর নিজ বাসস্থানের পাশেই মহানবী (সা.) তাঁর পবিত্র হাতে এই মসজিদ গড়ার কাজে অংশ নেন। খেজুর গাছের কাণ্ড আর মাটির দেয়াল ঘেরা এ মসজিদের তিনটি দরজা ছিল। যা যথাক্রমে রহমতের দরজা, জিবরাইল (আ.)-এর দরজা এবং মহিলাদের দরজা নামে পরিচিত ছিল। গবেষণায় জানা যায়, পরবর্তীকালে পৃথিবীতে যত মসজিদ গড়ে উঠেছে, তা মূলত 'মসজিদ আল নববীকে অনুসরণ করেছে।

মসজিদ আল নববীর বর্তমান অবয়বের পেছনে রয়েছে বহু ঘটনা, দুর্ঘটনা, যুদ্ধ, অবরোধ, ত্যাগ, তিতিক্ষা প্রভৃতি। প্রতিষ্ঠাকালীন আয়তন থেকে মসজিদের বর্তমান আয়তন প্রায় ১০০ গুণ বেশি। যেখানে একসঙ্গে প্রায় ৬ লাখ মুসলি্ল নামাজ আদায় করতে পারে। তবে হজ মৌসুমে মসজিদ ও পারিপাশ্বর্িক এলাকায় ১০ লাখ মুসলমান একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে। এ মসজিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো একটি সবুজ গম্বুজ। এ গম্বুজটির নিচেই হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয়তমা স্ত্রী হজরত আয়েশা (রা.)-এর ঘর ছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক ধারণা করেন। কালের পরিক্রমায় এ মসজিদের আয়তন বাড়তে থাকে। যার উল্লেখযোগ্য দিক ছিল কারুকার্যময় সুদৃশ্য গম্বুজ। এসব গম্বুজের কোথাও কোথাও অলংকারও লাগানো হতো। পরবর্তীতে ওহাবি আন্দোলনের সময় এসব গম্বুজ ধ্বংস করা হয়। বর্তমানে মসজিদ আল নববীতে বিভিন্ন ধরনের ২৭টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের একটি অংশ দ্বিতল বিশিষ্ট। ৩৪৪ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ১০টি মিনার মসজিদের সৌন্দর্যকে বাড়তি মাত্রা দিয়েছে। বর্তমানে মসজিদের একটি অংশে রয়েছে হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর রওজা শরিফ। এই রওজা শরিফে আরও রয়েছে তাঁর প্রিয় দুই সাহাবি হজরত আবু বকর (রা.) এবং হজরত উমর (রা.)-এর পবিত্র কবর। রওজা মোবারকের পাশেই রয়েছে 'রিয়াল আল জান্নাহ্' বা 'বেহেশতের বাগান' নামে পরিচিত একটি অংশ। এই অংশের রং এবং সাজসজ্জা মসজিদের অন্য এলাকা থেকে পৃথক। এই অংশে ছোট ছোট কিছু পিলারও দৃশ্যমান। মসজিদের বাইরে বিরাট অংশ ছাতা ও তাঁবু দিয়ে আবৃত করার ব্যবস্থা রয়েছে। শান্তিময় ও স্নিগ্ধ পরিবেশের কারণে মসজিদ আল নববীর আবেদন চির অম্লান।

*মেজর নাসির উদ্দিন আহমেদ (অব:)

সুন্দরবন

0 comments
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে সুন্দরবনের অবস্থান। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। যে কোনো পর্যটক সুন্দরবনের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখলে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। বনের ভেতরে প্রবেশ করার পর চারদিকে দেখা যাবে সবুজ আর সবুজ। বিধাতা যেন অপরূপ সাজে সজ্জিত করে রেখেছে। কী অপরূপ সৃষ্টি, তা সুন্দরবন দেখলেই বোঝা যায়। এই সুন্দরবনে বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, বানর, শূকর, গুঁইসাপ, অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ এবং নানা প্রজাতির পাখি রয়েছে। এখানকার নদ-নদীতে লোনা পানির কুমির, হাঙ্গর, চিংড়িসহ ২১০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের চেয়ে সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। সুন্দরবনে ৩৩৪ প্রজাতির গাছ, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল এবং ১৩ প্রজাতির অর্কিড আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ সুন্দরবনকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' বা 'বিশ্ব ঐতিহ্য' ঘোষণা করে। সুন্দরবন পর্যটকদের অন্যতম স্থান হিসেবে সরকার শত শত কোটি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম। অথচ সুন্দরবন সংলগ্ন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে একে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। সুন্দরবনের এই বিশাল বৃক্ষরাজির জন্যই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ তাই চিন্তিত। বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ সুন্দরবন ধ্বংস হবে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বিলীন হবে সুন্দরবনের অতীত ঐতিহ্য, জীববৈচিত্র্য ও সুন্দরবনের গাছগাছালি। ভূগর্ভস্থ পানির অতিমাত্রায় ব্যবহার চারপাশের জমির উপরিভাগে মরুময়তা সৃষ্টি করবে। নির্গত কার্বন মানুষের মধ্যে দুরারোগ্য ক্যান্সার সংক্রমণ ছড়াতে পারে এমন আশঙ্কা অনেকের। এখানকার প্রধান গাছ সুন্দরী ও বন্যপ্রাণী ধ্বংস হয়ে যাবে। বায়ুমণ্ডলের সালফার ডাই-অঙ্াইড ও কার্বন যৌগগুলো থেকে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস বনের জন্য অতি মারাত্দক ক্ষতিকর এসিড বৃষ্টি ঘটাতে পারে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে বিভিন্ন মাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অথচ এই সুন্দরবনকে নিয়ে সরকারের নেই কোনো মাস্টারপ্ল্যান। পর্যটন শিল্প বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক খাত হলেও সরকার পরিকল্পনায় আনতে পারেনি। সুন্দরবনকে বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন বলা হয়। একে অবশ্য উত্তম মৎস্য চারণক্ষেত্রও বলা হয়। এমনিতেই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এখানকার নদী-খাল শুকিয়ে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। সুন্দরবনকে নানাভাবে বিষিয়ে তুলছে অসাধু গোষ্ঠী। উপরন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয় তো বড় হুমকি। যেভাবে বন ধ্বংস হচ্ছে তাতে অচিরেই এলাকাগুলো ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের বড় ধরনের শিকারে পরিণত হতে পারে। সে ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ। বিপন্ন হবে জাতীয় অর্থনীতি।

দেশের মোট আয়তনের ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৪৪ শতাংশ। খুলনা, বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরে ২১৩৯০র্০ হতে ২২৩র্০১র্৫ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯১র্২ ৫র্৪ হতে ৮৯২৯ ৯র্৪ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এর পশ্চিমে হাড়িয়াভাঙ্গা, রায়মঙ্গল ও কালিন্দি নদী। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, উত্তরে ছোট নদী, খাল ও জনপদ এবং পূর্বে বলেশ্বর নদী। এই বনের প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরী গাছ। সুন্দরী গাছের নাম অনুসারে এই বনের নাম হয়েছে সুন্দরবন। আবার সমুদ্রের কাছে হওয়ায় সমুন্দর শব্দ হতে প্রথমে সমুন্দরবন ও পরে সুন্দরবন নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। সুন্দরবনের মোট আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪৩ বর্গ কিলোমিটার সমগ্র সুন্দরবনের (৬৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ) এবং জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ বর্গ কি.মি.সমগ্র সুন্দরবনের (৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ)। বনে সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, বাইন, পশুর, কাঁকড়া, গরান, গোলপাতা, হেতাল, ঝানা, অমুর, সিংড়া, খলসীসহ বিভিন্ন ধরনের ঘাস জন্মে।
জানা যায়, ১৮২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার সুন্দরবনের স্বত্বাধিকার অর্জর্র্র্র্র্ন করে। এলটি হজেয ১৮২৯ সালে সুন্দরবনে প্রথম জরিপ চালান। ১৮৭৬ সাল পূর্ব পর্যন্ত তৎকালীন জমিদারের অধীনে ছিল সুন্দরবন। ১৮৭৮ সালে সুন্দরবন এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সালে সুন্দরবনের দায়িত্ব বন বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সমগ্র সুন্দরবন চারটি ফরেস্ট রেঞ্জ এলাকায় বিভক্ত। এগুলো হলো_ খুলনা, সাতক্ষীরা, চাঁদপাই এবং শরণখোলা ফরেস্ট রেঞ্জ। সুন্দরবনে প্রায় ৪৫০টি নদ-নদী ও খাল আছে। এই নদী এবং খালগুলো সমগ্র সুন্দরবনে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। পশুর, শৌলা, শিবসা, ভদ্রা, যমুনা, রায়মঙ্গল, ভোলা, মরজাত, আডুয়া শিবসা, বল এখানকার প্রধান নদী। উল্লেখযোগ্য খালগুলো হলো_ শাপলা, মরাভোলা, কটকা, বাদামতলা, মৃগামারি, করমজল, জোংড়া, হরিণটানা, মরাপশুর, নন্দবালা, ধানসাগর, নিশাজখালী প্রভৃতি। সুন্দরবনে বেশ কিছু চর আছে। এর মধ্যে দুবলার চর, মেহের আলীর চর, ডিমলার চর, বালির চর, তিন কোণার চর, পক্ষীর চর, শৌলার চর, পুতনীর চর বিখ্যাত। সুন্দরী গাছকেই সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ হিসেবেই সবাই জানেন। মোট উদ্ভিদের ৭৩ শতাংশ সুন্দরী গাছের জন্য সমানভাবে মিঠা এবং লোনা পানির প্রয়োজন। যেসব এলাকার মিঠাপানি প্রবাহ বেশি সেখানকার সুন্দরী গাছগুলো লম্বা হয়ে থাকে।

উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, সুন্দরী গাছগুলোতে আগামরা রোগ সংক্রামক হিসেবে দেখা দিয়েছে। মৃত্যুর প্রহর গুনছে আগামরা রোগে আক্রান্ত গাছগুলো। এ রোগে আক্রান্ত গাছগুলোর পাতা প্রথম হলুদ সবুজ হয়। এরপর সেগুলো হলুদ হয়ে শুকিয়ে যেতে থাকে। এক সময় পাতাগুলো গাছ থেকে ঝরে পড়ে। পাতার মতো গাছের শাখাগুলোও মরতে বসে। সুন্দরী গাছ ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। আগামরা গাছগুলো ওপর থেকে মরতে থাকে। একটি রোগাক্রান্ত গাছ নিচের দিকে জীবন্ত থাকবে ও ওপরের অংশটি কঙ্কালের আকার ধারণ করে। সেটি গাছ না হয়ে পরিণত হয় কাঠে। সে কাঠ কোনো আসবাব হিসেবেও ব্যবহার করা যায় না। সেগুলো লাকড়ি হিসেবেই ব্যবহার করতে হয়। মিঠাপানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় সুন্দরবনে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। আর অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে আগামরা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সুন্দরী গাছ। সুন্দরবনের বৃহত্তম ৫৫টি কম্পার্টমেন্টের ৪২টিতে আগামরা রোগ দেখা দিয়েছে।

সুন্দরবনের সুন্দরী গাছগুলোর শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগই এই আগামরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বয়স্ক গাছগুলোই এ রোগের বেশি শিকার হচ্ছে। খুলনা রেঞ্জের শিবসা নদীর পারে কালাবগিতে এবং চাঁদপাই রেঞ্জের পশুর নদীর পারে হাড়বাড়িয়া এলাকায় সুন্দরী গাছের আগামরা রোগের প্রকোপ বেশি। সুন্দরবনে মিঠা পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় লবণাক্ততা আগের চেয়ে আট গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ম্যানগ্রোভ বনের গাছগুলোর বেঁচে থাকার জন্য মিঠা এবং লোনা পানি দুটোরই প্রয়োজন। এই পানির সমন্বয় সমানভাবে না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। মারা যাচ্ছে সুন্দরী গাছ। ভবিষ্যতে এই মরণব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্য উদ্ভিদে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সাবেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রহমান ইউএনডিপির সহযোগিতায় সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের আগামরা রোগ নির্ণয়ে একটি গবেষণা করেন। সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করে তিনি এই রোগের কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালান। পর্যবেক্ষণ শেষে দেওয়া প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলখ্যাত সুন্দরবনের পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণেই সুন্দরী গাছের আগামরা রোগ হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা এবং গড়াই নদীতে মিঠা পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় দক্ষিণের লবণাক্ত পানি অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছে। লবণাক্ত পানি এবং মিঠা পানির প্রবাহ সমানভাবে না হওয়ায় সুন্দরীর মতো গাছগুলো ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে মানিয়ে নিতে পারছে না। একটি সুন্দরী গাছ ১৩৫ থেকে ১৪০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। সুন্দরবনের সুন্দরী গাছগুলোর বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছর। এর কয়েকটি ১০০ বছরের পুরনো হতে পারে। যেসব সুন্দরী আগামরা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সেগুলোর বয়স ৫০-এর উপরে। বলতে গেলে সুন্দরী গাছ পরিপক্ব হওয়ার আগেই মরছে।


সুন্দরবনে মাছের আকাল

সুন্দরবনকে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান মৎস্যচারণ এলাকা বলা হয়। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের সুবিধা নিয়ে এখানে সহজেই বৃদ্ধি পায় মাছের পোনা। কিন্তু চিংড়ি পোনা ধরার জন্য এখানকার অন্য অনেক মাছের পোনাই ধ্বংস হয়ে যায়। ২টি চিংড়ি পোনা ধরতে ১১২টি অন্য মাছের পোনা ধ্বংস করা হতো। এ কারণে সুন্দরবনে মাছের পোনা ধরা বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সুন্দরবনে মাছের পোনা ধরা বন্ধ হলেও পশুর এবং শিবসা নদীতে এই পোনা নিধন বন্ধ হয়নি। সে কারণে মিঠাপানির মাছের পোনাগুলো সুন্দরবনে আসার সুযোগ পাচ্ছে না। লোনা পানির যেসব মাছ আছে সেগুলোও আর আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না।

কিছু মাছ আছে যারা জীবনের একটি সময় লোনা পানিতে এবং অপর এক সময় মিঠা পানিতে জন্মায়। কিন্তু এই পরিভ্রমণের সময় তারা নিজেদের রক্ষা করতে না পারায় স্বাভাবিক প্রজনন এবং বৃদ্ধি ঘটাতে ব্যর্থ হয়। সুন্দরবনে মাছের পোনা নিধন বন্ধের পর এরকম অবস্থার উন্নতি হবে বলে অনেকেই মনে করছেন। সুন্দরবনের দুবলার চর এবং মেহের আলীর চরে মৌসুমি মাছ শিকারের ওপর নির্ভর করে প্রতিবছর ৬৫০ হাজার জেলে এবং মৎস্যজীবীর ভিড় জমে। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তারা মাছ ধরে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি বানায়। এর পর তারা দুবলার চর ছেড়ে যায়। বাকি সময় ইলিশ এবং অন্যান্য মাছ ধরতে আরেক দল মৎস্যজীবী এসব চরে আসে।

সুন্দরবন সমুদ্রে তলিয়ে যাবে!

সমুদ্র সমতলের পানির তাপমাত্রা ০ দশমিক ৫০ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ১০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে সুন্দরবনের প্রায় ১৫ শতাংশ এলাকা অর্থাৎ প্রায় ৭৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার, উদ বিড়াল, চিত্রল হরিণ ও বন্যশূকর প্রভৃতির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেই বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন সম্পূর্ণরূপে সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। বর্তমানে এই বনের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা জেলে, কাঠুরে, ঝিনুক সংগ্রহকারী, কাঠ ব্যবসায়ী, মৌয়ালি, বাওয়ালিসহ সংশ্লিষ্ট শ্রেণীর প্রায় ৬ লাখ মানুষ তাদের জীবন-জীবিকার প্রধান উৎস হারা হবে।

লবণাক্ততায় বিপণ্ন!

শীতকালে উজান থেকে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার বিপরীতে সমুদ্রের লবণাক্ত পানির ব্যাপক অনুপ্রবেশের ফলে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার কবলে পড়ে ম্যানগ্রোভ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রজাতিগুলো বিপণ্ন হবে। ম্যানগ্রোভ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রজাতিগুলো মূলত ঈষৎ লবণাক্ততা সহায়ক এবং লবণাক্ত ও মিষ্টি পানির সঙ্গমস্থলে বিরাজ করে থাকে। তাই মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা এদের ধ্বংস ডেকে আনতে পারে এবং এতে সুন্দরবন বিপণ্ন হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস

জলবায়ু মডেলগুলোতে আশঙ্কা করা হয়েছে যে, এই শতাব্দীতে উপকূলবর্তী অঞ্চলজুড়ে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতার মাত্রা বাড়বে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাড়লে তা সুন্দরবনের ওপর মরণাঘাত হানতে পারে।

অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধ

অতি বৃষ্টিপাতের কারণে গঙ্গা অববাহিকার নদীগুলো বেশি পরিমাণে মিষ্টি পানি বহন করে এনে সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকা দিয়ে সাগরে নিয়ে ফেলবে। কিন্তু সমুদ্রের পানি স্ফীতির কারণে উজান থেকে আসা পানি প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে উল্টোদিকে প্রবাহিত হবে। এতে করে উজানের পানি বহন করে নিয়ে আসা নদীগুলোর সমুদ্রে পানি নিষ্কাশনে আগের চেয়ে বেশি সময় লাগবে। এর ফলে মৌসুমী বর্ষা ঋতুতে সুন্দরবন দীর্ঘ সময় পানিতে তলিয়ে থাকবে। যে কারণে সুন্দর বনাঞ্চলের জলাভূমি ও খাঁড়িসমূহে পলি অবক্ষেপণের হার বৃদ্ধি পাবে এবং সুন্দরী গাছের শ্বাসমূল পলিতে ঢেকে গিয়ে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্যপ্রাণ গ্রহণে বাধার সৃষ্টি করবে।

-ফসিহ উদ্দীন মাহতাব