Tuesday, November 27, 2012

রুক্ষ ঠোঁটের যত্ন

0 comments
প্রকৃতির পাতা ঝরা আর হালকা কুয়াশা দেখেই বোঝা যায় শীত এসেছে। তাইতো শীতের ছোঁয়া লেগেছে ঠোঁটেও। তাই এই সময় নেওয়া উচিত ঠোঁটের সঠিক যত্ন।
শীতের সময় বাতাসে আদ্রতা কম থাকার ফলে ঠোঁট ফেটে যায়। অনেক সময় ঠোঁট ফেটে রক্ত ঝরতেও দেখা যায় অনেকের। তাই ঠোঁট শুকনো লাগলেই চপস্টিক বা লিপবাম ব্যবহার করা উচিত।
আপনার লিপবাম, চপস্টিক বা লিপস্টিকে যেন এসসিএফ ১৫, ভিটামিন-ই অ্যালোভেরা এবং গ্লিসারিন থাকে সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
ঠোঁটে ভালো করে লিপবাম লাগিয়ে বেবি টুথব্রাশ দিয়ে আস্তে আস্তে ঘষে ডেডস্কিন তুলে, তারপর ক্রিম লিপবাম লাগানো উচিত। এছাড়া গোলাপের পাপড়ি পেস্ট করে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট নরম ও গোলাপি হয়।
এক সপ্তাহ রাতে শোয়ার সময় নারিকেল তেল, চন্দনবাটা ও গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট নরম থাকবে। এছাড়া মেকআপের সময় লিপস্টিক লাগানোর আগে সবসময় কোনো কোল্ডক্রিম বা লিপবাম লাগানো উচিত।

Monday, November 26, 2012

থ্যাংকস গিভিং ডে

1 comments
নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার থ্যাংকস গিভিং ডে উদযাপিত হয়। উত্তর আমেরিকাজুড়ে ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' উৎসব।

থ্যাঙ্কস গিভিং ডে'র মূল উদ্দেশ্য, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবসহ সবাই একত্রিত হয়ে সবার জীবনের প্রতিটি সাফল্যের জন্য, দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান। যদিও আমেরিকানদের অনেকেই জানেন না থ্যাঙ্কস গিভিং কবে থেকে শুরু, কেনই বা উৎসবটির নাম থ্যাঙ্কস গিভিং ডে হলো, কাকেই বা এমন ঘটা করে থ্যাঙ্কস জানান হচ্ছে! তারা জানেন, থ্যাঙ্কস গিভিং মানেই পার্টি, বিশাল ভোজ আয়োজন, পারিবারিক মিলনমেলা। ভূরিভোজনের তালিকায় থাকে টার্কি রোস্ট, ক্র্যানবেরি সস, মিষ্টি আলুর ক্যান্ডি, স্টাফিং, ম্যাশড পটেটো এবং ঐতিহ্যবাহী পামকিন পাই। আর কিছু না হোক, অতি সাধারণ আয়োজনেও টার্কি রোস্ট উইদ ক্র্যানবেরি সস এবং পামকিন পাই থাকবেই। অর্থাৎ থ্যাঙ্কস গিভিং মানেই টার্কি। [টার্কি : ময়ূরের মতো বড় সাইজের বনমোরগ মার্কিনমুলুকে আজ থ্যাঙ্কস গিভিং ডে উদযাপিত হচ্ছে। থ্যাঙ্কস গিভিং প্যারেডে পিলগ্রিম [ব্রিটিশ অরিজিন, যারা ধর্মযাজক হিসেবে অজানার উদ্দেশ্যে সমুদ্রযাত্রা করেছিল এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে আমেরিকার মেসাচুসেটসে প্লিমথ কলোনিতে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়], আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের [আদি আমেরিকান] ডিসপ্লে দেখানো হয়ে থাকে। এ দিন আনন্দে কাটিয়ে সবাই প্রস্তুত হয় পরের দিন 'থ্যাঙ্কস গিভিং সেল'-এর জন্য। প্রতি বছর, আমেরিকায় থ্যাঙ্কস গিভিং সেলের রমরমা ব্যবসা দেশটির অর্থনীতির সূচক কাঁটা ঘুরিয়ে দেয়। ফলে থাঙ্কস গিভিং ডে'র ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য অপেক্ষা বাণিজ্যিক দিকটাই বেশি প্রকাশিত হয়।

থ্যাঙ্ক গিভিং ডে উৎসবের সূচনা হয় ১৬২০ সালের আগস্টে। ওই সময় 'মে ফ্লাওয়ার' নামের ১০৮ টনের একটি জাহাজ ১০২ জন যাত্রী নিয়ে ইংল্যান্ডের সাউথ হ্যাম্পটন থেকে যাত্রা করে। যাদের ইংল্যান্ডে স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করায় বাধা ছিল। তাই স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করার উদ্দেশ্যে 'মে ফ্লাওয়ারে' চেপে ইংল্যান্ড ছেড়ে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়। দু-তিন মাস বাদে তারা আমেরিকার মেসাচুসেটস বে-তে এসে পেঁৗছে। ততদিনে যাত্রীদের অনেকেই অর্ধাহারে-অনাহারে অসুস্থ হয়ে পড়ে, কিছু যাত্রীর মৃত্যু হয়। নতুন স্থানে পেঁৗছে অনেকেই শীতের তীব্রতায় অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়ে। শুরু হয় মুক্ত স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার সংগ্রাম, স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চার উদ্যোগ। তবে শুরুতেই তাদের অনেক কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। নতুন দেশ, নতুন আবহাওয়া, শীতের তীব্রতায় প্রতিদিনই দু-একজনের জীবন সংকট দেখা দিতে থাকে। শীত পেরিয়ে যখন বসন্তের আসে, তাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। তারা ধীরে ধীরে ঘরবাড়ি বানাতে শুরু করে, আশপাশের স্থানীয় ইন্ডিয়ান উপজাতিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলা, উপজাতিদের সাহায্যে চাষবাস করাসহ বেঁচে থাকার তাগিদে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে দেয়। এভাবেই প্লিমথ কলোনি বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে তারা। ১৬২১ সালের নভেম্বরে প্লিমথবাসী প্রথমবারের মতো নিজেদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলে। ফসলের মধ্যে ভুট্টার ফলন এত বেশি ভালো হয়েছিল যে তৎকালীন গভর্নর উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড এ উপলক্ষে সব ইন্ডিয়ান উপজাতি এবং প্লিমথ কলোনিবাসীর সৌজন্যে 'ফিস্টি' আয়োজন করেন। ফিস্টির দিনটিকে সবাই ঈশ্বরের নামে উৎসর্গ করেন। সবাই কৃতজ্ঞচিত্তে ঈশ্বরকে স্মরণ করে, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানায়, কারণ ঈশ্বরের কৃপায় তারা বেঁচে আছে। ঈশ্বরের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন শেষে নিজেদের মধ্যে ধন্যবাদ বিনিময় হয়, খাওয়া-দাওয়া হয়, সবাই মিলে আনন্দ-ফুর্তিতে কাটিয়ে দেয় একটি দিন। সেই থেকে অনুষ্ঠানটি আমেরিকার সর্বপ্রথম 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্লিমথ কলোনিবাসীর দেখাদেখি থ্যাঙ্কস গিভিং ডে উদযাপনের এই রীতি অন্যান্য কলোনিবাসীর মাঝে প্রচলিত হতে থাকে। সরকারিভাবে সর্ব প্রথম 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' উদযাপিত হয়েছিল নিউইয়র্কে, ১৮১৭ সালে। এরপর থেকে প্রতি বছর অন্যান্য স্টেটেও উৎসবটি পালিত হয়। এক সময় 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে'কে জাতীয় ছুটির দিন ঘোষণা করার পক্ষে জোর দাবি উঠতে থাকে। ১৮২৭ সালে বিখ্যাত নার্সারি রাইম 'মেরি হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব' রচয়িতা সারাহ যোসেফা উদ্যোগ নেন, দীর্ঘ ৩৬ বছর তিনি একটানা এ আবেদনের সপক্ষে প্রচুর লেখালেখি করেন। শেষ পর্যন্ত ১৮৬৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন, সারাহ যোসেফের আবেদন খুব গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেন এবং 'সিভিল ওয়ার' চলাকালীনই জনগণের উদ্দেশ্যে আবেদনমূলক ঘোষণা দেন_ 'হে ঈশ্বর! তোমার স্নেহের পরশ, অপার করুণা তুমি তাদের ওপর বর্ষণ কর, যারা সিভিল ওয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে নারী স্বামী হারিয়েছে, যে সন্তান পিতৃহারা হয়েছে, যা ক্ষতি সমস্ত জাতির হয়েছে, সমস্ত ক্ষতি যেন দ্রুত সারিয়ে তোলা যায়। জীবিত সবার যেন মঙ্গল হয়।' একই বছর প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন নভেম্বরে মাসের শেষ বৃহস্পতিবার 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়। 'গ্রেট ডিপ্রেশন' হিসেবে পরিচিত অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে ১৯৩৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট রিটেল সেল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এ ছুটি এক সপ্তাহ এগিয়ে আনার ঘোষণা দেন এবং সেই থেকে শেষ বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' পালিত হয়।

'মে ফ্লাওয়ার' থেকে নেমে আসা পিলগ্রিমদের মতোই পরিশ্রম করে ফসল ফলানোর কথা, যুদ্ধ-বিগ্রহ ভুলে গিয়ে, প্রতিবেশী দেশ তথা বিশ্বের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনই গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরের করুণা লাভের মাধ্যমে জীবন আরও উন্নত করার জন্য এ উৎসব। বছরের এই দিনটিতে যেন ঈশ্বরের জয়গান করা যায়। 

Tuesday, November 13, 2012

তাজমহল

0 comments
পৃথিবীর সেরা আশ্চর্য্যগুলোর মধ্যে অন্যতম তাজমহল। ভারতের আগ্রায় যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত তাজমহল একটি রাজকীয় সমাধি। মোঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগমের স্মৃতি রায় এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন।
তাজমহল বা শুধু তাজ হিসেবে পরিচিত এই মর্মর সৌধের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে। আর কাজ শেষ হয় ১৬৪৮ এ।

তাজমহলকে মোঘল স্থাপত্যশৈলীর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়। এর নির্মাণশৈলীতে অসাধারণ পারঙ্গমতায় পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশৈলীর সম্মিলন ঘটানো হয়েছে।


যদিও তাজ কমপ্লেঙ্ এর কেন্দ্রে থাকা সাদা মার্বেলের গম্বুজাকৃতির রাজকীয় সমাধীটিই সাধারণ্যে অধিক সমাদৃত আর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, তবে তাজমহল সামগ্রিকভাবে একটি জটিল অখণ্ড স্থাপত্যকীর্তি। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে সংরণের তালিকাভুক্ত করে। তখন একে বলা হয়েছিল, বিশ্ব ঐতিহ্যের চিরকাল সমাদৃত শ্রেষ্ঠ শিল্প নিদর্শন (universally admired masterpiece of the world`s heritage).


১৬৩১ খ্রিস্টাব্দে মোঘল সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী মুমতাজ মহল তাদের চতুর্দশ সন্তান গৌহর বেগমের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এ মৃত্যুতে প্রচণ্ড শোকাহত হয়ে পড়েন শাহজাহান। তিনি প্রিয়তমা স্ত্রীর স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য তাজমহল গড়ার উদ্যোগ নেন।



তাজমহলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় মমতাজের মৃত্যুর ঠিক পরপরই। মূল সমাধিটি সম্পূর্ণ হয় ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে এবং এর চারদিকের ইমারত এবং বাগান আরও পাঁচ বছর পরে তৈরি হয়।

স্বেত মর্মরে নির্মিত তাজমহল অন্যান্য মুঘল সমাধি সৌধের মতই মূলতঃ পারস্যদেশীয় বৈশিষ্টমণ্ডিত, যেমন আইওয়ানসহ প্রতিসম ইমারত, এ ধনুক আকৃতির দরজার ওপরে বড় গম্বুজ। বর্গাকার বেদির উপর স্থাপিত সমাধির ভিত্তি কাঠামোটি বিশাল এবং কয়েক কবিশিষ্ট। প্রধান কটিতে মুমতাজ মহল ও শাহজাহানের স্মৃতিফলক বসানো, তাদের কবর রয়েছে এক স্তর নিচে।

সমাধির উপরের মার্বেল পাথরের গম্বুজই এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ। এর আকার প্রায় ইমারতের ভিত্তির সমান, প্রায় ৩৫ মিটার। এ ধরণের উচ্চতা হওয়ার কারণ, গম্বুজটি একটি ৭ মিটার উচ্চতার সিলিন্ডার আকৃতির ড্রাম এর উপরে বসানো।

তাজমহলের নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই শাহজাহান পুত্র আওরঙ্গজেবের হাতে বন্দি ও মতাচ্যুত হন। তাকে আগ্রার কেল্লায় গৃহবন্দী করে রাখা হয়। কথিত আছে, জীবনের বাকি সময়টুকুর অধিকাংশ শাহজাহান আগ্রার কেল্লার জানালা দিয়ে তাজমহলের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়েই কাটিয়েছিলেন।

শাহজাহানের মৃত্যুর পর আওরঙ্গজেব তাকে তাজমহলে স্ত্রী মমতাজের পাশে সমাহিত করেন। ১৯ শতকের শেষ ভাগে তাজমহলের একটি অংশ মেরামতের অভাবে তিগ্রস্থ হয়। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের সময় ইংরেজ সৈন্যরা তাজমহলের বিকৃতি সাধন করে আর সরকারি কর্মচারীরা বাটালি দিয়ে তাজমহলের দেয়াল থেকে মূল্যবান ও দামী নীলকান্তমণি খুলে নিয়ে যায়।
১৯ শতকের শেষ দিকে লর্ড কার্জন তাজমহল পুণঃনির্মাণের একটি বড় প্রকল্প হাতে নেন। প্রকল্পের কাজ ১৯০৮ সালে শেষ হয়। তিনি তাজমহলের ভেতরের মঞ্চে একটি বড় বাতি (যা কায়রো মসজিদে ঝুলানো একটি বাতির অনুকরণে তৈরি করার কথা ছিল কিন্তু তৎকালীন কারিগরেরা ঠিক হুবুহু তৈরি করতে পারেনি) বসিয়েছিলেন। একইভাবে বাগানের নকশা পরিবর্তন করে ইংরেজ উদ্যানরীতিতে গড়া হয়। তাজের সামনের উদ্যানটি সেই নকশাতেই এখনও রয়েছে।

বিংশ শতাব্দীতে তাজমহলের রণাবেণে ব্যাপক মেনোযোগ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪২ সালে যখন জার্মান বিমান বাহিনী এবং পরে জাপানি বিমান বাহিনী আকাশপথে হামলা চালায়, তৎকালীন বৃটিশ সরকার তখন তাজমহল রার জন্য এর ওপর একটি ভারা তৈরি করেছিল। এরপর ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের সময়ও তাজমহলকে ভারা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল যাতে শত্রুপরে বৈমানিকের দৃষ্টিভ্রম হয় তাজকে খুঁজে নিতে।

তাজমহল সম্প্রতি যে হুমকির মুখে পরেছে তা হল যমুনা নদীর তীরের পরিবেশ দূষণ। এছাড়া মথুরাতে তেল পরিশোধনাগারের কারণে সৃষ্ট এসিড বৃষ্টি ( ওই শোধনাগারের বিষয়ে অবশ্য ভারতীয় উচ্চ আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে)।

১৯৮৩ সালে তাজমহলকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।

খেরুয়া মসজিদ, শেরপুর, বগুড়া

0 comments
অনেক ঝড়-বৃষ্টি, রৌদ্র-দহন সয়ে টিকে আছে ৪৩০ বছর ধরে। মহাকাল তার গতিপ্রবাহের চিহ্ন রেখে গেছে দেয়ালে-খিলানে-গম্বুজে। ক্ষয়ে গেছে ইটে খোদাই করা নকশা, ঝরে গেছে চুন-সুরকির প্রলেপ। হয়তো হুমড়ি খেয়ে পড়েই যেত এত দিনে। কিন্তু তা হয়নি সম্ভবত চার কোণের প্রকাণ্ড আকারের মিনার আর চওড়া দেয়ালের শক্তির জন্যই। চুন-সুরকি দিয়ে গাঁথা পাতলা লাল ইটের দেয়ালগুলো ১.৮১ মিটার চওড়া। তার ওপর ভর করেই ছাদের ওপর টিকে আছে খেরুয়া মসজিদের তিনটি গম্বুজ।
দেশের পুরাকীর্তিগুলোর যে গড়পড়তা বিধ্বস্ত চেহারা, সে তুলনায় খেরুয়া মসজিদের অবস্থা যথেষ্ট ভালো বলেই মনে হলো। সামনে সবুজ ঘাসে ঢাকা আয়তাকার মাঠ। কিনার দিয়ে তাল, নারকেল, আম, কদমগাছের সারি। মৌসুমি ফুলের গাছও আছে এক পাশে। ইটের প্রাচীরের ওপর লোহার রেলিং দিয়ে পুরো চত্বর ঘেরা। মোট ৫৯ শতাংশ জায়গা। নামাজের সময় মুসল্লিরা ছাড়া সাধারণত কেউ ভেতরে প্রবেশ করে না। ফলে প্রাঙ্গণটি নিরিবিলি এবং খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। গাছগাছালিঘেরা সবুজ পরিবেশে তিন গম্বুজওয়ালা প্রাচীন স্থাপত্যটিকে মনোরম দেখায়। চার শতাধিক বছরের পুরানো বগুড়া শেরপুরের খেরুয়া মসজিদ খেরুয়া মসজিদ প্রত্ননিদর্শন হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোগল-পূর্ব সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে মোগল স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে এই মসজিদটি নির্মিত।

বগুড়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা সদরের খোন্দকার টোলা মহল্লায় এর অবস্থান। মসজিদের সামনের দেয়ালে উৎকীর্ণ শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৫৮২ সালে জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশাল এটি নির্মাণ করেছিলেন। ‘কাকশাল’ উপাধি ছিল তুর্কিদের। ঘোড়াঘাট অঞ্চল ছিল তুর্কি জায়গিরদারদের অধীন। মির্জা মুরাদ খান কাকশালের বিশদ পরিচয় পাওয়া যায় না। সে সময় শেরপুর ঘোড়াঘাটের অধীনে একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। মির্জা মুরাদ খান কাকশাল শেরপুরের জায়গিরদার বা ফৌজদার ছিলেন বলে ঐতিহাসিকদের অনুমান। খেরুয়া মসজিদের নামকরণও স্পষ্ট নয়। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া তাঁর বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ বইতে উল্লেখ করেছেন ‘এ মসজিদের “খেরুয়া” নামের কোনো ইতিবৃত্ত পাওয়া যায়নি। আরবি বা ফার্সি ভাষায় খেরুয়া বলে কোনো শব্দ পাওয়া যায় না।’ তবে ফার্সিতে ‘খায়ের গাহ্’ বলে একটি শব্দ আছে। এর অর্থ ‘কোনো স্থানের ভেতরে’। রাজা মানসিংহ যখন বাংলার সুবাদার, তখন তিনি শেরপুরে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এই দুর্গের কোনো অস্তিত্ব এখন নেই। তবে মসজিদটি যদি শেরপুর দুর্গের ভেতরে নির্মিত হয়ে থাকে, তবে ‘খায়ের গাহ্’ থেকে খেরুয়া নাম হতে পারে বলে যাকারিয়া অনুমান করেছেন। খেরুয়া মসজিদ বাইরের দিক থেকে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ১৭.২৭ মিটার, প্রস্থ ৭.৪২ মিটার। পূর্ব দেয়ালে তিনটি খিলান দরজা। মাঝেরটি আকারে বড়। উত্তর-দক্ষিণে একটি করে খিলান দরজা। কোনোটিতেই চৌকাঠ নেই। ফলে দরজার পাল্লা ছিল না। পূর্বের বড় দরজাটির নিচে কালো পাথরের পাটাতন। পূর্বের দরজা বরাবর পশ্চিমের দেয়ালের ভেতরের অংশে তিনটি মেহরাব। মেহরাবগুলোর ওপরের অংশ চমৎকার কারুকাজখচিত। মসজিদটির নিচের অংশে ভূমি পরিকল্পনা মোগল স্থাপত্যরীতির। ওপরের অংশ মোগল-পূর্ব সুলতানিরীতিতে। চার কোণে দেয়াল থেকে খানিকটা সামনে চারটি বিশাল মিনার। ছাদের ওপর তিনটি ৩.৭১ মিটার ব্যাসের অর্ধ গোলাকৃতির গম্বুজ। কার্নিশ ধনুকের মতো বাঁকা। তার তলায় সারিবদ্ধ খিলান আকৃতির প্যানেলের অলংকরণ। অত্যন্ত সুন্দর এর দেয়ালের গাঁথুনি। নান্দনিক বৈচিত্র্য আনা হয়েছে ইটের বিন্যাস ও খাড়া প্যানেল তৈরি করে। সামনের অংশের ইটে আছে ফুল-লতা-পাতা খোদাই করা নকশা। মিনার, গম্বুজ, নকশা ও ইটের বৈচিত্র্যময় গাঁথুনিতে পুরো স্থাপত্যটি অত্যন্ত নান্দনিক হয়ে উঠেছে। 

এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে বাড়ি গিয়ে এক ফাঁকে খেরুয়া মসজিদে ঘুরে আসা গেল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, গত বছর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটির সীমানাপ্রাচীর তৈরি করে দেওয়ায় পরিবেশটি ভালো আছে। এখনো নিয়মিত নামাজ আদায় হয়। তা ছাড়া দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য, ইতিহাস বিষয়ে আগ্রহী অনেকেই আসেন মসজিদটি দেখতে। ছবি তোলার চেষ্টা করা গেল। তবে প্রাচীন এই স্থাপত্যের অনন্য সৌন্দর্য তুলে ধরার মতো দক্ষতা তো নেই, উপরন্তু তেমন ক্যামেরাও ছিল না সঙ্গে। অগত্যা দায় ঠেকানোর যন্ত্রটিতে যে ছবি উঠল, তাতে খেরুয়া মসজিদের কাঠামোরই একাংশ ধরা পড়ল শুধু, স্বরূপে পাওয়া গেল না তাকে।

(সৌজন্যে- প্রথম আলো)

Tuesday, November 6, 2012

খাজা শাহবাজ মসজিদ

0 comments
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে তিন নেতার মাজারের পেছনে খয়েরি রঙের বেশ পুরনো একটি মসজিদ ও সমাধিসৌধ রয়েছে। মোগল স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করে হাজি খাজা শাহবাজ (র.)-এর নামে এক ব্যবসায়ী ৩০০ বছর আগে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। সুবেদার শাহ আজমের সময় (১৬৭৭-৭৮) খাজা শাহবাজ কাশ্মীর থেকে ঢাকায় এসে ব্যবসা শুরু করেন। অচিরেই তিনি বিপুল ধনসম্পত্তির মালিক হন। মিতব্যয়ী এ ব্যক্তি থাকতেন টঙ্গী। প্রতিদিন হেঁটে যাওয়া-আসা করতেন। তিনি রমনা এলাকায় একটি চিত্তাকর্ষক মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৬৭৯ সালে তিনি রমনায় তিন গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। রমনার পূর্ব দিকে ছিল খাজা শরফুদ্দিন চিশতি (র.)-এর মাজার এবং মাঠের মাঝখানে ছিল ৫০০ বছরের পুরনো কালীমন্দির। এমন স্থানে মসজিদটি নির্মিত হওয়ার পরে এ এলাকার সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসত নামাজ পড়তে। খাজা শাহবাজও টঙ্গী যাওয়া-আসার পথে নামাজ পড়তেন এ মসজিদে। ভূমি থেকে তিন ফুট উঁচুতে নির্মিত এ মসজিদটি প্রায় এক বিঘা জমির ওপর অবস্থিত। এর দক্ষিণ ও পূর্ব দিক নিচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং পশ্চিম ও উত্তর প্রান্তটি লোহার রেলিং দিয়ে ঘেরা। মসজিদে প্রবেশের জন্য পাঁচটি আকর্ষণীয় দরজা রয়েছে। এর প্রতি কোণে একটি বড় মিনার ও দুটি ছোট মিনার রয়েছে। মসজিদের ২০ গজ দূরে এক গম্বুজবিশিষ্ট সমাধিসৌধে শায়িত আছেন খাজা শাহবাজ (র.)। মৃত্যুর আগেই তিনি এটি নির্মাণ করেন।
গ্রন্থনা : মাহমুদুল হাসান

নিমতলী গেট, ঢাকা

0 comments
নবাবি ঐতিহ্যের আদলে তৈরি করা হয় নিমতলী গেট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারিয়েট রোড থেকে এশিয়াটিক সোসাইটির সামনের সড়কে একসময় অবস্থিত ছিল এ গেট। কালের বিবর্তনে এটি হারিয়ে যায়। ঢাকার ৪০০ বছরপূর্তি উপলক্ষে ২০০৮ সালের ২২ জানুয়ারিতে নবাবি ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য এ গেটটি উদ্বোধন করা হয়। একসময় ঢাকাই নবাবরা নিমতলী প্রাসাদে বাস করতেন। এ প্রাসাদে নায়েবে নাজিমরা ১৮৪৩ সাল পর্যন্ত বসবাস করেছিলেন । প্রাসাদের ব্যাপ্তি ছিল বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল, শহীদুল্লাহ হল এবং একুশে হল ঘিরে। সময়ের স্রোতে নিমতলী প্রাসাদ বিলুপ্ত হলেও প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে এখনো দাঁড়িয়ে আছে নিমতলী দেউড়ি। নিমতলীর নবাবি ঐতিহ্য ধরে রাখতেই নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে গেটটি। এর নির্মাণশৈলী দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সবার। সড়কদ্বীপ ও আশপাশের এলাকার চিত্র এখন পাল্টে গেছে। এটি নির্মাণের আগে এ এলাকা ছিল ভাসমান মানুষ আর মাদকাসেবীদের দখলে। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকত ময়লা-আবর্জনা। কিন্তু নতুনভাবে নির্মিত এ গেটটি বদলে দিয়েছে এলাকার পরিবেশ। সবুজ ঘাসের ওপর ঐতিহ্যের ধারক সুদৃশ্য স্থাপনাটি আজো ঢাকার নবাবি ঐতিহ্যের কথাটাই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে।

ইলেকটোরাল পদ্ধতি

0 comments
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেন সাধারণ ভোটাররা। কিন্তু তাদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন না প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সাধারণ ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রাপ্ত ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজের ভোট রয়েছে ৫৩৮টি। যে রাজ্যে যে প্রার্থী সাধারণ ভোটে জয়ী হন, তিনি সেই রাজ্যের সব কটি ইলেকটোরাল কলেজের ভোট পান। এ প্রক্রিয়ায় যে প্রার্থী অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজের ভোট পান তিনিই নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া কিছুটা ভিন্ন। সাধারণ ভোটাররা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিলেও তাদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন না প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে। তবে এটি কোনো লেখাপড়ার কলেজ নয়, নেই কোনো ছাত্র বা শিক্ষকও।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্টসংখ্যক নির্বাচকমণ্ডলী বা ইলেকটোরাল কলেজ থাকে। যেমন ক্যালিফোর্নিয়াতে জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি, তাই ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যাও সর্বাধিক, ৫৫টি। অন্যদিকে, ভারমন্ট, আলাস্কা, নর্থ ও সাউথ ড্যাকোটায় জনসংখ্যা কম বলে ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা মাত্র তিন। বিজয়ী সব পাবেন নীতি অনুযায়ী_ যে প্রার্থী যে রাজ্যে সাধারণ ভোট বেশি পাবেন তিনি সেই রাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোটই পাবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের এই ইলেকটোরাল কলেজের সংখ্যা ৫৩৮টি। একজন প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হলে পেতে হবে ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। কাজেই প্রচারণার ক্ষেত্রে ইলেকটোরাল কলেজের ভোট বেশি আছে, এমন রাজ্যই প্রার্থীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

রাজ্যে রাজ্যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের সম্ভাব্য জয়পরাজয় জনমত জরিপ অনুযায়ী- বারাক ওবামা এ পর্যন্ত ২৩৮টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে পারেন, রমনির ভাগে রয়েছে ২০৬টি। দোদুল্যমান আটটি রাজ্যে রয়েছে বাকি ৯৫টি ভোট। এগুলো হলো কলোরাডো, ফ্লোরিডা, আইওয়া, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, ভার্জিনিয়া, উইসকনসিন এবং ওহাইও। তাই ২৭০-এর ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে শেষ মুহূর্তে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীরই সবটুকু নজর এই অঙ্গরাজ্যগুলোতে।

* রকমারি ডেস্ক

আসেম

0 comments
এশিয়া ও ইউরোপের ৪৮টি দেশের অংশগ্রহণে ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করে আসেম। প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর ৫১ দেশের জোট এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ের (আসেম) পূর্ণ সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ।

প্রতিষ্ঠাকালীন ৪৮ সদস্যের মধ্যে এশিয়ার ১৯টি এবং ইউরোপের ২৭টি দেশ ছিল। এছাড়া ইউরোপীয় কমিশন ও এশিয়ান সেক্রেটারিয়েটকেও এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য করা হয়। সে বছর ১ ও ২ মার্চ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এর প্রথম সম্মেলন হয়।

সর্বশেষ ২০১০ সালের ৪-৫ অক্টোবর ব্রাসেলসে এই জোটের সম্মেলন হয়।

আসেমের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া,অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ব্রুনেই, বুলগেরিয়া, কম্বোডিয়া, চীন, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, লাওস, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মালয়শিয়া, মালটা, মঙ্গোলিয়া, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইনস, পোল্যান্ড, রাশিয়া, পর্তুগাল, রোমানিয়া, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম রয়েছে।

Monday, November 5, 2012

হঠাৎ জ্ঞান হারালে করণীয়

0 comments
হঠাৎ কারও মনে হতে পারে ভীষণ দুর্বল লাগছে, চোখের দৃষ্টি কমে যাচ্ছে। এতই দুর্বল মনে হচ্ছে যে, সামনে আর পা বাড়ানো যাচ্ছে না। হঠাৎ মাথা চক্কর দিয়ে মাটিতে পড়ে যেতে পারেন। জনাকীর্ণ স্থানে, বাসে, ট্রেনে কিংবা সিনেমা হলে গরম ভ্যাপসা পরিবেশে হঠাৎ এ অবস্থা হতে পারে। এ অবস্থাকে অনেকে ফেইনটিং বা মূর্ছা যাওয়া বলে থাকেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে সিনকোপ বলা হয়।
হৃৎপিণ্ড পাম্পের ফলে ধমনীর মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহিত হয়। সাময়িক রক্ত প্রবাহ কমে গেলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজ অনেকাংশেই বন্ধ হয়ে যায়। রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
হঠাৎ শোয়া থেকে বা বসা থেকে দাঁড়ানো, অত্যধিক মানসিক উত্তেজনা, ভয়ভীতি, আতঙ্ক, দুঃসংবাদ, গরম আবহাওয়া, আঁটসাঁট জামা-কাপড় পরা, খুব ক্ষুধা লাগা, রক্তশূন্যতা, রক্তক্ষরণ, তীব্র ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়া, হার্ট-বাল্বের সমস্যা যেমন এয়োর্টিক স্টেনোসিস, হার্টের ইলেকট্রিক সার্কিটে ব্লক, হার্টের গতি কমে যাওয়া, হাইপারটপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি, হার্টে টিউমার যেমন এট্রিয়াল মিক্সোমা, জন্মগত হার্টের ক্রটি ইত্যাদি কারণে সিনকোপ বা ফেইনটিং হতে পারে। এ অবস্থায় নাড়ির গতি দুর্বল এবং ক্ষীণ হয়। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। চামড়া শীতল ও ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে। চোখের মণি বড় হয়ে যায়। ঠোঁট ফ্যাকাশে নীল হতে পারে। ঘুম ঘুম ভাব হয়, অনেক সময় ডাকলে সাড়া দেয়; কিন্তু পরক্ষণেই আবার আগের অবস্থায় চলে যায়। কখনও রোগী বেসামাল থাকতে পারে। প্রশ্ন করলে সঠিক উত্তর দিতে পারে না। মাঝেমধ্যে মস্তিষ্কের অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাওয়ার জন্য খিঁচুনিও হতে পারে। সিনকোপের ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি রোগীর জ্ঞান ফিরে আসবে। গরম আবহাওয়ায় শরীর থেকে অধিক পানি বের হয়ে যাওয়ার জন্য মাথাব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়া এমনকি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন । একে হিট সিনকোপ বলা হয় । সিনকোপের রোগীকে চিৎ করে শুইয়ে দিতে হয়। জ্ঞান সম্পূর্ণ লোপ না পেলে শান্ত করুন, সাহস দিন। আর আঁটসাঁট কাপড়-চোপড় থাকলে তা ঢিলে করে দিতে হবে, বিশেষ করে গলা, বুক, কোমড়ের কাপড়। পায়ের দিকটা উঁচু করে দিলে মাথায় রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। সিনকোপ হলে প্রথমে রোগীকে যেখানে যে অবস্থায় থাকুক সঙ্গে সঙ্গে শুইয়ে দিতে হবে, অন্যথায় রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার জন্য মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। তবে সাবধান, একটু সুস্থ হওয়ার পর হঠাৎ দাঁড় করালে বা বসালে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। জনাকীর্ণ ভ্যাপসা পরিবেশ থেকে রোগীকে খোলামেলা স্থানে সরিয়ে আনতে হবে ।
রাস্তায় চলাফেরা বা কাজ করার সময় বা দুর্ঘটনা দেখলে বা রক্ত প্রবাহ দেখলে যদি মনে হয় নিজেই এরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি, সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন। এতে মস্কিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, সুস্থ বোধ করবেন। ভয়ে দিশেহারা না হয়ে সাহস রাখবেন। ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেবেন। হিট সিনকোপের রোগীকে ঠাণ্ডা পরিবেশে নিতে হবে। পানি খেতে চাইলে পানি দেবেন।
বারবার সিনকোপ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। প্রয়োজনে ইসিজি, বুকের এক্স-রে, ইকোকার্ডিওগ্রাম, হল্টার মনিটরিং, টিল্ট টেস্ট, কেরটিড আল্ট্রাসাউন্ড করে কারণ নির্ণয় করা যায়। হার্টের ইলেকট্রিক সার্কিটে ব্লকের জন্য সিনকোপ হলে পেসমেকার লাগাতে হয়, যার সাহায্যে হৃৎপিণ্ড সঠিকভাবে চালানো হয়ে থাকে। পেসমেকার হলো একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্র, যার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন কমে গেলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। একে আর্টিফিসিয়াল পেসমেকারও বলা হয়। রোগী বেশি সময় অজ্ঞান থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন অথবা হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রয়োজন হতে পারে। অজ্ঞান হওয়ার অন্যান্য কারণ খুঁজতে হতে পারে ।


ড. মোহাম্মদ শফিকুর রহমান পাটওয়ারী
সহকারী অধ্যাপক
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
ঢাকা

আর্নিস, জার্মান

0 comments
যদি বলা হয়, একটি শহরে মাত্র ২৮০ জন বাস করে, তাহলে নিশ্চয় অবাক হবেন। ভাববেন, এটাকে কি শহর বলা যায়? অবাক হলেও সত্যি, জার্মানির স্লেসভিগ হলস্টাইন রাজ্যের স্লাই নদীর তীরে আছে এমনই এক শহর। নাম 'আর্নিস'। এটি জার্মানির সবচেয়ে ছোট শহর। তবে বেশ গোছানো। শহরে ঢোকার আগেই চোখে পড়বে 'বাড আর্নিস' লেখা একটি সাইনবোর্ড। এর অর্থ 'একটি স্পা এলাকা।' এখানে আছে ঝরনা আর প্রস্রবণ। জার্মানির উত্তরে এ রাজ্যটির অবস্থান। স্লাই নদীর আশপাশে আরও শহর থাকলেও আর্নিসই সবচেয়ে ছোট শহর। শহরের আয়তন মাত্র আধা বর্গকিলোমিটার। কাগজে-কলমে 'আর্নিস' শহর হলেও এটিকে গ্রাম বলাই ভালো। এখানে কোনো স্কুল নেই, কোনো দোকানপাট নেই। সরকারি কোনো দফতরও নেই। তবে এখানে যে কেউ এলে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি সময় কাটাতে পারবে। নিশ্চিন্ত মনে সবুজ প্রকৃতি আর নদীর সঙ্গে মিশে যেতে পারবে তারা।
শহরটির গোড়াপত্তন হয় ১৬৬৭ সালে। মাত্র ৬৪টি পরিবার সবচেয়ে কাছের শহর কাপেল্কম্ন থেকে আর্নিসে এসে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৩৪ সালে আর্নিসকে আনুষ্ঠানিকভাবে শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে আর্নিস এবং কাপেল্কেম্ন সরকারের একটি আঞ্চলিক অফিস আছে। তবে শহরের এখনও কোনো মেয়র নেই। নেই কোনো টাউন হল। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, পুরো শহরটি হেঁটে ঘুরতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। পুরো শহরে রয়েছে সাতটি রাস্তা। দীর্ঘতম রাস্তাটির নাম 'লাঙে স্ট্রাসে।' অর্থাৎ লম্বা রাস্তা। রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ৬শ' মিটার। শহরের বাড়িগুলো কাঠ দিয়ে নির্মিত, গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি করা। বাড়িগুলোতে রয়েছে ছোট ছোট জানালা। গ্রীষ্মকালে আর্নিস শহরের সৌন্দর্য দেখার মতো। সবুজে সবুজে এবং রঙবেরঙের ফুলে ভরে ওঠে পুরো শহর। বিশেষ করে প্রতিটি বাড়ির সামনের গোলাপ বাগান ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। সব রাস্তা তখন ঢেকে থাকে সবুজ লাইম ট্রিতে। অবসর গ্রহণকারীদের অনেকেই এসে দীর্ঘ সময় কাটান এ শহরটিতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন স্লাই নদীর তীরে। এখানকার সবকিছু খুবই শান্ত, কোনো হৈচৈ নেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অপূর্ব। নদীর ওপর ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে গাঙচিল, আবার কিছুক্ষণ পর ঘুরে ঘুরে ফিরে আসছে। নদীতে অনেক নৌকা বাঁধা থাকে। অনেকেই আসেন সাইকেল নিয়ে। কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু হাঁটেন, কেউ আবার নৌকা নিয়ে নেমে যান নদীতে। সবাই মিশে যান শান্ত, সবুজ আর নির্মল প্রকৃতির সঙ্গে। শহরটিতে কোনো হোটেল নেই। কিন্তু অনেক অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া পাওয়া যায়। এগুলো পর্যটকদের জন্য সবসময় খালি থাকে। বেড়াতে এলে যে কেউ এসব অ্যাপার্টমেন্টে উঠতে পারেন। অনেকে আসেন মাছ ধরার জন্য ছিপ হাতে। মাছ ধরতে সারাদিন তারা নদীর তীরে বসে থাকেন। স্লাই নদীতীর ঘেঁষে রয়েছে একটি রেস্টুরেন্ট। নাম 'স্লাই পার্ল' বা স্লাইয়ের মুক্তা। পারিবারিকভাবে এ ব্যবসাটি শুরু হয় ১৯৫২ সাল থেকে। হান্স ভের্নার ব্রডেরিউস নামে এক বাসিন্দা ১৯৭৭ সালে থেকে রেস্টুরেন্টটি চালাচ্ছেন। তিনি জানান, রান্নার কাজ করে আমি খুবই আনন্দ পাই এবং কাজকে দারুণভাবে উপভোগ করি। রেস্টুরেন্ট থেকে যে দৃশ্য দেখা যায়, তা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যাবে না_ এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

প্রদীপ সাহা

Sunday, November 4, 2012

হস্তশিল্প

0 comments
হস্তশিল্প ও কুটিরশিল্প ছিল আদি ও মধ্যযুগীয় বাংলার গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। হস্তশিল্প হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল বয়ন, ধাতব পদার্থের কাজ, অলংকার, বিশেষ করে রুপার তৈরি অলংকার, কাঠের কাজ, বেত এবং বাঁশের কাজ, মাটি ও মৃৎপাত্র। পরবর্তী সময়ে হস্তশিল্প পণ্য তৈরিতে পাট এবং চামড়া প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। বাংলাদেশের হস্তশিল্প পণ্যে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য, সৌন্দর্য এবং নৈপুণ্য বিদ্যমান। হস্তশিল্প হাতের তৈরি নানাবিধ পণ্য উৎপাদনের ক্ষুদ্রায়তন ইউনিট। গৃহের মালিক নিজে এবং পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় বা কয়েকজন বেতনভুক কর্মচারী নিয়ে যন্ত্র বা যন্ত্রপাতি ছাড়া এসব পণ্য প্রস্তুত করে থাকে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, গাঙ্গেয় অববাহিকার মসলিন কাপড় রোমান এবং গ্রিক সাম্রাজ্য পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। চীনা এবং আরব পর্যটকরাও বঙ্গদেশে উৎপাদিত উচ্চমানের সুতি এবং রেশমি কাপড়ের কথা জানতেন। ষোড়শ শতাব্দী থেকে বঙ্গদেশের উচ্চমানের হাতেবোনা বস্ত্র, উন্নতমানের গজদন্ত, রুপা এবং অন্যান্য ধাতুর তৈরি কারুপণ্য মোগল দরবারেও সমাদৃত হয়েছিল। মোগল সম্রাটরা শিল্প-কারুপণ্যের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। হস্তশিল্প সৃষ্টি হয় চিত্রশিল্পী, ভাস্কর এবং কারুশিল্পীর কর্ম থেকে যাদের শিল্পী হিসেবে বস্তুত কোনো প্রশিক্ষণই থাকে না। তাদের সৃষ্ট হস্তশিল্প দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে জাদুঘরে মূল্যবান চিত্রকর্ম হিসেবে রক্ষিত না হয়ে বরং অন্য লোকদের জন্য ব্যবহারিক উপযোগ সৃষ্টি করে। শিল্পীরা সাধারণ লোকের প্রয়োজন মেটানোর পর ধনী ও অভিজাত লোকদের পৃষ্ঠপোষকতায় কারুশিল্পীর মর্যাদা অর্জন করে। হস্তশিল্পে উৎপাদিত পণ্যগুলো টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব হয়ে থাকে। বাংলাদেশে কয়েক লাখ মানুষের পেশা হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।
গ্রন্থনা : ফারজানা শ্রাবন্ত

নকশি পিঠা

0 comments
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরাঞ্চলে নানা ধরনের পিঠা তৈরি হয়। নকশি পিঠা তার অন্যতম। পিঠার গায়ে যখন বিভিন্ন ধরনের নকশা আঁকা হয় অথবা ছাঁচে ফেলে পিঠাকে চিত্রিত করা হয়, তখন তাকে বলা হয় নকশি পিঠা। নকশি পিঠা বা নকশা করা পিঠা এক ধরনের লোকশিল্প। পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব-অনুষ্ঠান যেমন_অতিথি আপ্যায়ন, বর-কনের বাড়িতে লেনদেন, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে উপহার-উপঢৌকন পাঠানো, ঈদ, পূজা-পার্বণ, শবেবরাত, মহররম, খতনা, বিবাহ, নবান্ন, পৌষ-পার্বণ, প্রিয়জনের মনোরঞ্জন, অন্নপ্রাশন, আকিকা প্রভৃতি উপলক্ষে নানা স্বাদ, গন্ধ ও আকারের নকশি পিঠা তৈরি করা হয়। নকশি পিঠা তৈরির জন্য প্রথমে আতপ চালের গুঁড়া বা আটা সিদ্ধ করা হয়। পরে সিদ্ধ চালের গুঁড়া বা আটা থেকে রুটি করে তার ওপর গাছ, লতাপাতা ইত্যাদির নকশা তোলা হয়। খেজুর কাঁটা, খোঁপার কাঁটা, সূচ, পাটকাঠি, খড়কা ইত্যাদির সাহায্যে হাতে দাগ কেটে কেটে নকশাগুলো তোলা হয়। হাতের পরিবর্তে ছাঁচের সাহায্যেও পিঠাকে নকশাযুক্ত করা যায়। ছাঁচগুলো সাধারণত মাটি, পাথর, কাঠ বা ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি। এসব ছাঁচের ভেতরের দিকে গাছ, ফুল, লতাপাতা, মাছ, পাখি প্রভৃতির নকশা অঙ্কিত থাকে। সব ধরনের পিঠায় নকশা আঁকা হয় না। সাধারণত পুলিপিঠা ও পাকোয়ান বা তেলপিঠা, যাকে ফুলপিঠাও বলে, তাতে নকশা করা হয়। নারিকেলের সঙ্গে গুড় বা চিনি মিশিয়ে পুলিপিঠা তৈরি করা হয়। পুলিপিঠার এক পাশে হাতের আঙুল ও নখের সাহায্যে নকশা তোলা হয়, যা দেখতে ফুলের পাপড়ির মতো। পাকোয়ান পিঠায় বিচিত্র নকশা অঙ্কনে নৈপুণ্যের জন্য বৃহত্তর ময়মনসিংহের নারীদের খ্যাতি রয়েছে। নকশার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পিঠার বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়। যেমন_শঙ্খলতা, কাজললতা, চিরল বা চিরণপাতা, হিজলপাতা, সজনেপাতা, উড়িয়াফুল, বেঁট বা ভ্যাট ফুল, পদ্মদিঘি, সাগরদিঘি, সরপুস, চম্পাবরণ, কন্যামুখ, জামাইমুখ, জামাইমুচড়া, সতীনমুচড়া প্রভৃতি। পিঠার এই নামগুলো বিশেষ ভাবব্যঞ্জক।

সাদা স্রাব

0 comments
লিউকোরিয়ার অর্থ হল যোনির স্বাভাবিক স্রাব। তাতে রক্ত থাকবেনা, সংক্রমন জনিত কারনে কোন কটু গন্ধ থাকবে না বা যোনি পথে বা প্রজনন অংগে কোনও চুলকানি বা অস্বস্তি থাকবেনা।

এই স্রাবের জন্য কোনও কোনও ক্ষেত্রে অন্তর্বাস ভিজে জায় এবং তা শুকালে দাগ লেগে থাকে । এই স্রাব স্বাভাবিক এবং কোনও রোগজনিত কারনে নয় তাই এর জন্য কোনও চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়েনা। যোনির এই আতিরক্ত স্বাভাবিক স্রাবের ব্যাপারটা এক এক মহিলার কাছে এক এক রকম। কোনও মহিলা অল্প স্রাবেই মনে করেন এরকম কেন হচ্ছে, এটা তো স্বাভাবিক নয়, আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত স্রাবেও নির্বিকার থাকেন। অনেকে মনে করেন লিউকোরিয়ার জন্যি তার স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে যদিও তার উলটোটাই ঠিক, অর্থাৎ সাধারন স্বাস্থ্য খারাপ হলে এই স্রাব বাড়তে পারে।

কোনও কোনও মেয়ে ভাবে এটি কি কোনও যৌনরোগ?


মনে আশঙ্কা নিয়ে তারা চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে আসে। নারীর জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোনও না কোনও সময়ে অতিরিক্ত স্বাভাবিক স্রাব হতে পারে।


কেন হয়?


বয়ঃসন্ধির পর বা নারীর চাইল্ড বেয়ারিং এজ-এ

(অর্থাৎ বাচ্চা হতে পারে এমন বয়সেঃ ১৫ থেকে ৪৪ )
যোনির দেওয়াল পুরু থাকে। এখানে কোষের স্তর তার শরীরের স্ত্রী হরমনের মাত্রার উপর নির্ভর করে। যোনিতে এক ধরনের ব্যাসিলাই বা জীবানু স্বাভাবিক ভাবে বসবাস করে। এরা যোনির দেওয়াল থেকে ঝরে পড়া কোষের মধ্যেকার গ্লাইকোজেনকে ল্যাকটিক এসিডে রূপান্তরিত করে। এই ল্যাকটিক এসিড যোনির পি-এইচ ঠিকঠাক বাজার রাখে এবং এই কারনে মেয়েদের যোনির এক স্বাভাবিক সংরক্ষন নিরোধক ক্ষমতা থাকে। ওই অংশের ভিজে ভাবও সেইজন্য ।

@ কোনও কোনও কন্যাশিশুর জন্মের প্রথম দশ দিনে লিউকোরিয়া দেখা দেয় । মায়ের শরীরের অতিরিক্ত স্ত্রী-হরমোন থাকে, তার প্রভাবেই এমন হয়।


@ বয়ঃসন্ধিতে প্রজনন অংগে অর্থাৎ ইউটেরাস, ওভারি ও ভ্যাজাইনায় অতিরিক্ত রক্ত চলাচলের জন্য লিউকোরিয়া হয়।


@ পিরিয়ড শুরু হওয়ার দু,তিনদিন আগে লিঊকোরিয়া হতে পারে।


@ ওভিউলেশন বা ডিম্ভানু বার হওয়ার সময় সাধারনত পিরিয়ডের ১৪ দিনের মাথায় সাদা স্রাব হওয়া স্বাভাবিক।


@ যৌন উত্তেজনা বা অতিরিক্ত আবেগেও সাদা স্রাব হতে পারে।


@ গর্ভাবস্থায় মায়ের শ্রীরে ইস্ট্রোজেনের আধিক্যের জন্য লিউকোরিয়া হয়।


@ ডেলিভারির পর দেড় মাস থেকে তিন মাস পর্যন্ত সাদা স্রাব স্বাভাবিক।



বয়ঃসন্ধির আগে বা মেনোপজের পর যোনির সংক্রমন রোধের স্বাভাবিক ক্ষমতা কমে যায়। তখন সংক্রমন হওয়া সহজ।

যোনির এই ক্ষরন স্বাভাবিক, কিন্তু কোনও রোগের কারনে তা বাড়তে পারে।
অপুষ্টি, বিবাহিত জীবনের অশান্তি ও মানসিক কারনে সাদা স্রাব বাড়তে পারে।
ক্রিমিও স্রাব বাড়ানোর কারন হতে পারে।
এ ছাড়া স্বাভাবিক পরিচ্ছনতা বজায় না রাখলে, অন্তরবাস ভাল করে ধুয়ে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে না নিলে, পারিপারশ্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় না থাকলে সংক্রমন হয়ে বিশি স্রাব হওয়া আশ্চর্য নয়।
হস্তমৈথুন বা ম্যাস্টারবেশনও এর একটি কারন।
এ ছাড়া যোনিতে ছত্রাক বা পরজীবীর সংক্রমন হতে পারে। সংক্রমন হলে চুলকানি থাকবে।
ডাইয়াবেটিস রোগ থাকলে, দীর্ঘদিন এন্টিবায়োটিক খেলেও এই সংক্রমনের সম্ভাবনা বাড়ে।
লিউকোরিয়ার আরও কারন হিসাবে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমন, টিউবারকুলোসিস ইত্যাদির জন্য প্রজানন অংগের ইনফেকশন, তলপেটের প্রদাহ,জন্মনিরোধ বড়ি খাওয়া ইত্যাদিকে ও চিহ্নিত করা যেতে পারে।

চিকিৎসা:


@ পরিচ্ছন্নতাঃ শারীরিক ও পারিপার্শ্বিক। বাথরুম বিশেষভাবে পরিস্কার ও জীবানুশুন্য থাকা দরকার।

@ ওরাল পিলের জন্য হচ্ছে মনে হলে ডক্তারকে বলে কিছুদিন তা বন্ধ রাখতে হবে।
@ বিভিন্ন ওষুধ আছে , চিকিৎ সকের পরামরর্শে খেতে/ব্যবহার করতে হবে।
@ প্রজনন অংগের টিউমার বা অন্য রোগ থাকলে তার চিকিৎ সা দরকার।
@ স্রাবের রঙ পানির মত সাদা হলে ভয়ের কিছু নাই ।কিন্তু রঙ লাল বা হলুদ , গন্ধ বা চুলকানি থাকলে দ্রুত চিকিসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। 

Saturday, November 3, 2012

জেলহত্যা দিবস

0 comments
স্বাধীন বাংলাদেশে যে কটি দিন চিরকাল কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, এটি তেমনি একদিন, ৩ নভেম্বর। ভারাক্রান্তভাবে প্রতি বছর ফিরে আসে। যে কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত অর্জনের পথে বাধা তৈরি করেছে, তার মধ্যে অন্যতমটি ঘটেছিল এই দিনে। জাতির ইতিহাসে অত্যন্ত বেদনাবিধুর একদিন। যে ক্ষত কোনো দিনই বাঙালির হৃদয় থেকে মুছবে না। এই নৃশংস হত্যা পুরো জাতিকে ধীরে ধীরে অন্ধকারের পথে নিয়ে যেতে বসেছিল। ৩৭ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের চার নায়ক ও বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার পর বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার লক্ষ্যে ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরাজিত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মহতী অর্জন স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, প্রগতি, মানবাধিকার, সংস্কৃতি, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা চালায়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর দেশে দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। ক্ষমতা দখল ও পাল্টা দখলের রক্তাক্ত অধ্যায়ে পূর্ণ এই সময়। জাতীয় চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যার এ ঘটনায় তখনই লালবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার জেল হত্যা মামলার প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করে। এরপর দীর্ঘ আট বছরেরও বেশি সময় বিচারকাজ চলার পর গত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ২০ আসামির মধ্যে ১৫ সাবেক সেনা কর্মকর্তার শাস্তি এবং অপর পাঁচজনকে খালাস দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে পলাতক তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ষড়যন্ত্রের দায়ে অভিযুক্ত চারজন রাজনীতিক বেকসুর খালাস পান। শুধু তাই নয়, ষড়যন্ত্রের কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় মামলার ২০ আসামির সবাইকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে উচ্চ আদালতের রায়ে আত্দস্বীকৃত খুনিদের প্রায় সবাই খালাস পাওয়ার পরও বিচারের দাবি কমেনি। এবারে ভিন্ন পারিপাশ্বর্িকতায় আজ জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে চার জাতীয় নেতাকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচিতে দিনটি স্মরণ করবে। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতির গভীর শ্রদ্ধা : জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান এক বাণীতে শহীদ চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বাঙালি জাতির ইতিহাসে তাদের অবদান চিরভাস্বর হয়ে থাকবে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের 'সোনার বাংলা' বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে অবদান রাখার আহ্বান জানান। সব ষড়যন্ত্র রোখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে বলেছেন, ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশের মাটি থেকে আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্যই জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছিল। কারাগারে নিরাপদ আশ্রয়ে এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। তিনি দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ধারাকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান।

কর্মসূচি : আজ সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব কার্যালয় ও শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণের মধ্য দিয়ে দলের কর্মসূচি শুরু হবে।

এ সময় বঙ্গবন্ধু ভবনে জমায়েত এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সাড়ে ৭টায় ১৫ আগস্টের শহীদ ও জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত হবে। বেলা সাড়ে ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এতে অংশ নেবেন।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, জাতীয় চার নেতা পরিষদ, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী প্রভৃতি সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচিতে দিনটি পালন করবে।

সোনার শহর এল ডোরাডো

0 comments
আমাজনের ঘন জঙ্গলের মধ্যে আছে এক শহর। সেখানে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি সবকিছুই নাকি সোনা দিয়ে তৈরি! রূপকথার গল্পের মতো শোনালেও, এই মিথের হাতছানিতেই বহুদিন ধরে অনেক দুঃসাহসী অভিযাত্রী পাড়ি জমিয়েছেন দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর দুর্ভেদ্য গভীর অরণ্যে। স্প্যানিশ ভাষায় যে শহরের নাম ‘এল ডোরাডো’। তবে আজ পর্যন্ত কেউই খুঁজে পায়নি সোনায় মোড়া এই শহরটি। কাহিনী হিসেবে প্রচলিত আছেÑ বহুদিন আগে দক্ষিণ আমেরিকার পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা জায়গায় ইনকারা তাদের সভ্যতা গড়ে তুলেছিল। ইনকারা ছিল প্রভূত ধনসম্পত্তির মালিক। তাদের নেতা ছিলেন আতা হুয়ালপা। কিভাবে যেন ইনকাদের স্বর্ণ-সম্পত্তির খবর পৌঁছে গেল স্পেনীয়দের কানে। অমনি সোনার লোভে ইনকাসাম্রাজ্যে হানা দিল তারা। স্পেনের বিপুল সেনাবাহিনীর সামনে যে তারা খড়কুটোর মতো অসহায়, তা বুঝতে বেশি সময় লাগল না আতা হুয়ালপার। তার নির্দেশে সব ‘পাইতিতি’ অর্থাৎ ‘স্বর্ণ ভাণ্ডার’ রাতারাতি লুকিয়ে ফেলল ইনকারা। ইনকাদের যুদ্ধে হারিয়ে অনেক খুঁজেও সে স্বর্ণ ভাণ্ডারের হদিস পায়নি স্পেনীয়রা।
তাদের মুখ থেকেই ধীরে ধীরে গোটা দুনিয়া জানতে পারে এল ডোরাডোর কথা। এল ডোরাডোর রহস্যে যোগ হয়েছে ভিনগ্রহী তত্ত্বও। অনেকে বলেন, পৃথিবীর বাইরে নাকি এমন এক গ্রহ আছে, যার অধিবাসী জীবনধারণের জন্য সোনার
ওপর নির্ভরশীল ছিল। তারাই নাকি এল ডোরাডোর স্বর্ণভাণ্ডার থেকে সরিয়ে ফেলেছে সব সোনা! অনেক অভিযাত্রীও সে সোনার সন্ধানে অভিযান চালিয়ে ফিরেছেন শূন্য হাতেই। মায়া-সভ্যতার ধ্বংসাবশেষের মধ্যেও গুপ্তধন খুঁজে বেড়িয়েছেন অনেক রত্ন সন্ধানী মানুষ।

-এ রিয়াজ

মেয়েদের দাড়ি-গোঁফ : হার্সুটিজম

0 comments
মাথাভর্তি চুল নারী-পুরুষ উভয়ের ব্যক্তিত্ব ও শোভা বাড়ায়, আর দাড়ি-গোঁফ পুরুষালি বৈশিষ্ট্য হলেও কখনও কখনও এটা নারীদের জন্য একটা বিব্রতকর সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে এ পরিস্থিতিকে হার্সুটিজম (Hirsutism) বলে, যাতে মেয়েদের ঠোঁটের উপরি ভাগে, গালে, চিবুকে, বুকে, স্তনে, তলপেটে, নিতম্বে অথবা কুঁচকিতে শক্ত-কালো চুল (terminal hair) গজায়। এ রোগে বাড়তি চুলের পাশাপাশি মাথায় টাক, পুরুষালি পেশি গঠন, গভীর কণ্ঠস্বর, ব্রণ, মাসিক বন্ধ, স্থূলতা, বন্ধ্যত্ব, ডায়াবেটিস ইত্যাদি থাকতে পারে। কারণ : কিছু কিছু জাতিগোষ্ঠীতে স্বাভাবিকভাবেই নারীদের দাড়ি-গোঁফের মতো পুরুষালি চুল থাকে। যেমন_ দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ এবং দক্ষিণ ইউরোপের কিছু অঞ্চল, অন্যদিকে এশিয়ান এবং ভারতীয়দের শরীরের এসব স্থানে চুল কম গজায়। তবে ৪.৭% ক্ষেত্রে কোন বিশেষ কারণ ছাড়াই হার্সুটিজম হতে পারে। হার্সুটিজম সাধারণত মেয়েদের শরীরে ডিম্বাশয় (ovary) বা এড্রেনাল (adrenal) গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমোন (যেসব হরমোন পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী) নিঃসরণের কারণে হয়ে থাকে। ৭০-৮০% ক্ষেত্রে হার্সুটিজম আক্রান্ত নারীদের রক্তে এন্ড্রোজেন হরমোন বেশি থাকে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়ই এ অতিরিক্ত এন্ড্রোজেনের উৎস। ডিম্বাশয়ের কিছু রোগ, যেমন- পলিসিস্টিক ওভারী সিন্ড্রোম, হাইপার ইন্সুলিনিজমিক হাইপার এন্ড্রোজেনিজম উইথ এন অভুলশন, ওভারি বা এড্রেনাল গ্রন্থির কিছু টিউমার বা ক্যান্সারের কারণেও এন্ড্রোজেন হরমোন নিঃসরণ বেড়ে হার্সুটিজম হয়। এড্রেনাল গ্রন্থির রোগের মধ্যে কঞ্জেনিটাল এড্রেনাল হাইপারপ্লাসিয়া, এড্রেনাল এডেনোমা, কার্সিনোমা ইত্যাদি। এছাড়া পিটিউইটরি গ্রন্থির রোগ যেমন- কুশিং ডিজিজ, এক্রোমেগালি ইত্যাদি। কিছু ওষুধ গ্রহণের ফলেও এমন সমস্যা হতে পারে, যেমন- মিনক্সিডিল, কর্টিকোস্টেরয়েড, ফিনাইটইন,ডায়াজক্সাইড ইত্যাদি। শরীরে অতিরিক্ত চুলের অন্য একটি কারণ হচ্ছে হাইপারট্রাইকোসিস (Hypertrichosis), যাতে এন্ড্রোজেনের প্রভাববিহীন দাড়ি-গোঁফ ছাড়াও সব শরীরেই পাতলা চুল বা লোম (vellus hair) গজায়। এটা কিছু রোগের কারণে হয়, যেমন- জন্মগত কিছু রোগ, পরফাইরিয়া, হাইপোথাইরয়েডিজম, এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা, ডার্মাটোমাইয়োসাইটিস, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি। হার্সুটিজম রোগের সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য এর ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেসব ক্ষেত্রে হার্সুটিজম স্থির থাকে অর্থাৎ নতুন করে দাড়ি-গোঁফ গজায় না সেক্ষেত্রে কোন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার দরকার নেই। যাদের হার্সুটিজমের সঙ্গে পুরুষালি লক্ষণ (Virilization) থাকে এবং তা দ্রুত বাড়তে থাকে সেক্ষেত্রে হার্সুটিজমের কারণ টিউমার বা ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কারণ নির্ণয় এবং এর চিকিৎসার জন্য তলপেটের আল্ট্রাসনোগ্রফি, গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (ডায়াবেটিসের পরীক্ষা), লিপিড প্রোফাইল (রক্তে স্নেহ পদার্থের মাত্রা), টোটাল টেস্টোস্টেরন, ১৭-হাইড্রক্সিটেস্টোস্টেরন, ডিহাইড্রোইপিএন্ড্রোওস্টেরোন, টিএসএইচ, এসিটিএইচ, সিরাম প্রলেকটিন এবং তলপেট ও মাথার এমআরআই অথবা সিটিস্কেন ইত্যাদি করতে হতে পারে। সুতরাং হার্সুটিজম ও হাইপারট্রাইকোসিসে শুধু অতিরিক্ত চুলের সমস্যা বিবেচনা না করে সামগ্রিকভাবে এ রোগের কারণ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা করা জরুরি।

ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম ভূঞা
সহকারী অধ্যাপকচর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়