Wednesday, January 30, 2013

গণঅভ্যুত্থান দিবস

0 comments
২৪ জানুয়ারিঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস। ঊনসত্তরের এই অগ্নিঝরা দিনে এদেশের ছাত্র-জনতা অকাতরে বুকের রক্ত দিয়ে গণমানুষের স্বাধীকার আদায়ের সংগ্রামে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। গ্রামবাংলা আর নগরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেদিন লক্ষ্য-কোটি মেহনতি মানুষের গগনবিদারী আওয়াজ ধ্বনিত হয় ১১-দফা আনতে হবে। মৃত্যুঞ্জয়ী মানুষের চোখেমুখে ছিল বিদ্যুতের ঝিলিক। পথে পথে ছিল মিছিলের পর মিছিল। স্বৈরাচারী সরকারের বুলেটের আঘাতে নিহত আসাদ, রুস্তম, মনির, মতিউর, ড. জোহা ও সার্জেন্ট জহুরুল হক আর আনোয়ারা
বেগমসহ শত শহীদের রক্ত-শপথ প্রতিটি সংগ্রামী মানুষের মনে এক নতুন চেতনার জন্ম দেয়। শহীদদের সেই আত্মদানের প্রেক্ষিতে বাংলার আকাশে হাতছানি দেয় মুক্তির রক্তিম সূর্য। গণঅভ্যুত্থানের মহান জাগরণ এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য এক উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে এবং
৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। রক্তে আঁকা যে নতুন ইতিহাস আমরা রচনা করেছি সেই ইতিহাসের সোপান অতিক্রম করে এক অসমাপ্ত সংগ্রামকে সাফল্যের দুয়ারে পৌঁছে দেয়ার ইস্পাতদৃঢ় আহ্বান নিয়ে প্রতিবছর এ দিনটি আমাদের মাঝে ফিরে আসে।
৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ছিল পাকিস্তানবিরোধী সফল অভ্যুত্থান এবং এর প্রধান নির্মাতা ছিলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী। সে সময় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্য জাতীয় ও তরুণ নেতারা ছিলেন কারাগারে। ফলে এই আন্দোলনে আওয়ামী লীগের বিশেষ কোনো ভূমিকা ছিল না। অধিকন্তু এই আন্দোলনের কারণেই শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যরা জেল থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব মজলুম মওলানা ভাসানীর এই অবদান এখন আর স্মরণ করেন না। রাজনীতির চানক্য চালের মাধ্যমে ওই সময় আওয়ামী লীগের তত্কালীন রাজনীতিকরা যেভাবে এ আন্দোলনের সাফল্যকে কুক্ষিগত করেছিলেন তা আজও অব্যাহত আছে। তবে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তত্কালীন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে ছাড়া পেয়েই কৃতজ্ঞতার নিদর্শনস্বরূপ ওই দিনই ছুটে গিয়েছিলেন মওলানা ভাসানীর কাছে। তিনি প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় কাটিয়েছিলেন মজলুম জননেতার সঙ্গে। আর এ সংবাদ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির দৈনিক ইত্তেফাকে।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান বন্দী ছিলেন ১৯৬৬ সালের মে থেকে। তখন আওয়ামী লীগের অবস্থা ছিল শোচনীয়। শেখ মুজিব তার ছয় দফা পেশ করেছিলেন ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ছয় দফার প্রশ্নেই ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল। শেখ মুজিব ছিলেন ‘ছয় দফাপন্থী’ আওয়ামী লীগের সভাপতি, অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খানের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ‘পিডিএমপন্থী’ আওয়ামী লীগ।
ছয় দফাপন্থী আওয়ামী লীগের অবস্থা সে সময় এতোটাই দুর্বল ছিল যে, শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় প্রধান আসামি বানানোর পরও দলটির পক্ষ থেকে আন্দোলন গড়ে তোলা দূরের কথা, প্রতিবাদ পর্যন্ত জানানো হয়নি। আগরতলা মামলা শুনানির একপর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য সাংবাদিক আতাউস সামাদের মাধ্যমে মওলানা ভাসানীকে অনুরোধ জানান। শেখ মুজিবকে বাঁচানোর প্রধান উদ্দেশ্যেই ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বরে মওলানা ভাসানী দেশব্যাপী জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের সূচনা করেন। ৪ ডিসেম্বর তার নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা গর্ভনর হাউস (বর্তমান বঙ্গভবন) ঘেরাও করে। এই ঘেরাও আন্দোলনের পথ ধরেই ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে ঘোষিত হয় ছাত্র সমাজের ১১ দফা। এর ফলে আন্দোলন আরও গতিলাভ এবং ১৭ জানুয়ারি থেকে রুদ্ররূপ ধারণ করে এবং ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২২ ফেব্রুয়ারি সরকার শেখ মুজিবসহ সব রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
১৯৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মওলানা ভাসানীর সঙ্গে এই আন্দোলনে যুগপত্ সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছিল সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে বাংলার ছাত্রসমাজ। ১৯৬৯-এর ৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুর রউফ, সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী, ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল্লাহ, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ) সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দোহা, জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের (এনএসএফ) নেতা ইব্রাহিম খলিল এবং ফখরুল ইসলাম মুন্সি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদ (ছাত্রলীগ) এবং সাধারণ সম্পাদক নাজিম কামরান চৌধুরীর (এনএসএফ) সমন্বয়ে এই সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এই নেতৃবৃন্দ ছাড়াও জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের (এনএসএফ) বিদ্রোহী নেতা মাহবুবুল হক দুলনসহ বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।


৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে প্রখ্যাত রাজনীতিক প্রয়াত অলি আহাদ তার ‘জাতীয় রাজনীতি ৪৫ থেকে ৭৫ শিরোনাম গ্রন্থে (পৃষ্ঠা নং ৩৪১) উল্লেখ করেন, ‘এই রক্ত বৃথা যায় নাই। এক ব্যক্তির শাসন প্রবর্তক, জনতার সার্বভৌমত্ব ছিনতাইকারী, দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন মোতাবেক দেয়া ওয়াদা ভঙ্গকারী প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এই ২১শে ফেব্রুয়ারি (১৯৬৯) ভবিষ্যত্ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী না হইবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন এবং ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহৃত হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তবৃন্দ মুক্তি পান। ঢাকায় সংগ্রামী লক্ষ লক্ষ জনতা তাঁহাদের স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানায় অপরাহেপ্ত অনুষ্ঠিত পল্টন জনসভায়। লক্ষণীয় যে, শেখ মুজিবুর রহমান এই জনসভায় উপস্থিন হন নাই, অধিকন্তু সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদ একক ও বিচ্ছিন্নভাবে ২৩শে ফেব্রুয়ারি অপরাহপ্ত ২ ঘটিকায় ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে গণসংবর্ধনা দানের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত সদ্যমুক্ত অন্যদের সম্পর্কে কোনো বক্তব্য নাই। এইভাবেই ষড়যন্ত্র মামলার সকল কৃতিত্ব ও ত্যাগ তিতিক্ষার নৈবেদ্য ও জনপ্রিয়তা সুচতুর শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক মূলধনে পরিণত হয়। মামলার প্রকৃত ত্যাগী অভিযুক্ত লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের সকল ভূমিকা একপাশে পড়িয়া রহিল—আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার শিরোপা এককভাবে কুক্ষিগত করিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কয়েকজন যুবনেতার বদৌলতে তিনি ভূষিত হইলেন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে। কাহার প্রাপ্য কে আত্মসাত্ করে? রাজনীতির চানক্যচাল কি ইহাকেই বলে? আসলে লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করিবার গোপন আন্দোলনের প্রকৃত নায়ক। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন উক্ত আন্দোলন লক্ষ্যের বন্ধু ও সমার্থক মাত্র।’ ১৯৭০ সাল থেকে প্রতিবছর ২৪ জানুয়ারি বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনের নানা আয়োজনে পালিত হয়ে আসছে গণঅভ্যুত্থান দিবস। দিবসটির তাত্পর্য তুলে ধরতে ওই বছর থেকে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক বিশেষ প্রতিবেদন, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, সম্পাদকীয় ইত্যাদি প্রকাশ করে আসছে। গণঅভ্যুত্থানের প্রথমবার্ষিকী উপলক্ষে দৈনিক সংবাদ ‘চব্বিশে জানুয়ারীর ডাক’ শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। সম্পাদকীয়টি তুলে ধরা হলো—
চব্বিশে জানুয়ারীর ডাক
আজ ২৪শে জানুয়ারী—পূর্ব বাংলা তথা সারা পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসের একটি অবিস্মরণীয় দিন। গত বছর ১৭ই হইতে ২৪শে জানুয়ারী—এই এক সপ্তাহকাল ছিল আইয়ুবী শাসকচক্রের সহিত নির্যাতিত জনগণের চরম বোঝাপড়ার সময়। একদিকে চরম গণবিরোধী শক্তিসমূহ তথা সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও একচেটিয়া পুঁজির প্রতিভূ আইয়ুব সরকার; অন্যদিকে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত-বৃত্তিজীবী ছোট ও মাঝারি ব্যবযায়ী ও শিল্পপতি, এক কথায় সমগ্র জনতা। ১৭ই হইতে ২৪শে জানুয়ারীর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আইয়ুবশাহীর ভাগ্য চূড়ান্তরূপে নির্ধারিত হইয়া যায়—দশ বত্সর অধিককাল স্থায়ী আইয়ুবের নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শাসনের অনিবার্য পতন নিছক সময়ের প্রশ্নে পরিণত হয়। গণতন্ত্র ও ১১ দফার দাবিতে ছাত্র-জনতার মরণপণ সংগ্রামের স্মরণে এ বত্সর ১৭ই হইতে ২৩শে জানুয়ারী সংগ্রামী ছাত্র সমাজ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি কর্তৃক ‘১১ দফা সপ্তাহ’ হিসাবে উদযাপিত হইয়াছে এবং ২৪ জানুয়ারীকে ‘গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসাবে চিহ্নিত করিয়া হরতাল, জনসভা, গণ-সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতির মাধ্যমে যথাযোগ্যভাবে পালনের আয়োজনস করা হইয়াছে। ১১-দফা সপ্তাহ ও গণ-অভ্যুত্থান দিবসের কর্মসূচীর প্রতি যে বিপুল ও স্বতঃস্ফূর্ত জনসমর্থন দেখা যাইতেছে তাহাতে সঙ্গতভাবেই বলা চলে: “১১ দফার রক্ত মুছে ফেলা শক্ত”।
১১-দফার রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম কেবলমাত্র আইয়ুব শাহীর পতনকেই অবধারিত করিয়া তোলে নাই—দেশবাসীর দীর্ঘদিনের কতকগুলি গণতান্ত্রিক দাবি-দাওয়ার স্বীকৃতিকেও অনিবার্য করিয়া তুলিয়াছিল। এই আন্দোলনের ফলেই আইয়ুব খান পহেলা ফেব্রুয়ারির মাস পহেলা বেতার ভাষণে গোলটেবিল বৈঠক আহ্বানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন এবং জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, রাজবন্দীদের মুক্তিদান ও কুখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করিতে বাধ্য হন। বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দের মতানৈক্য এবং নসরুল্লাহ খাঁ-মওদুদী গংয়ের ভোল পাল্টানো সত্ত্বেও আইয়ুব খান যে জনগণের দুইটি দাবী—পার্লামেন্টারী সরকার ও ফেডারেল পদ্ধতি এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে সরাসরি নির্বাচন ব্যবস্থা মানিয়া লইতে বাধ্য হন, তাহাও জনতার ঐক্যবদ্ধ ও দুর্বার আন্দোলনের ফলেই। এমনকি প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক শাসন পরিচালক জেনারেল ইয়াহিয়া যে গত ২৮শে নভেম্বরের ভাষণে জনগণের কতকগুলি মৌলিক রাজনৈতিক দাবি দাওয়া মানিয়া লন এবং দেশব্যাপী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। উহারও পটভূমি হিসাবে আমরা গত বছরের শত শহীদানের আত্মদানে মহিমান্বিত ১৭-২৪শে জানুয়ারীর সংগ্রামকে চিহ্নিত করিতে পারি। গত বত্সর এই সপ্তাহব্যাপী সংগ্রামের মধ্য দিয়া ভীতি ও নির্যাতনের পাষাণ প্রাচীর ভাঙ্গিয়া যে বিপুল বিশাল জনতা রাজপথে বাহির হইয়া আসে তাহাকে ঘর লওয়ানো সম্ভব হয় নাই আজও। যাঁহাদের অকাতর আত্মদানের বিনিময়ে এই ঐতিহাসিক আন্দোলন গড়িয়া উঠিয়াছিল সমগ্র দেশবাসী আজ তাই তাঁহাদের উদ্দেশে জানায় লাখো সালাম।
১১-দফা আন্দোলনের বার্ষিকী উদযাপন করিতে গিয়া আজ আমরা ঐক্যের তাগিদ তীক্ষষ্টরূপে উপলব্ধি করিতেছি। গত বত্সর আন্দোলনের সাফল্যের মূলমন্ত্র ছিল ঐক্য। আজ দেশি-বিদেশি কায়েমী স্বার্থের ধারক ও বাহকেরা যখন প্রকাশ্যে ও ঐক্যবদ্ধভাবে এগার দফার বিরোধিতা করিতেছে, তখন এগার দফার শিবিরে ঐক্যের অভাব প্রকট। কেহ কেহ প্রকাশ্যে ঐক্যের বিরোধিতা করিতেছেন, আবার কেহ কেহ বিপ্লবের হটকারী স্লোগানে জনমতকে বিভ্রান্ত করিতেছেন। ১১-দফা কর্মসূচীর মধ্যে জনতার ব্যাপকতম অংশের যে সকল জরুরী ও মৌলিক দাবী-দাওয়া অন্তর্ভুক্ত, সেগুলিকে আদায় করিতে হইলে প্রয়োজন সকল প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য। গণবিরোধী শক্তিগুলি গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে পাল্টা মার দেওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হইতেছে, অতি সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর মধ্য দিয়া উহারই প্রমাণ পাওয়া যায়। কাজেই গণবিরোধী শক্তিবর্গের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করিয়া নির্দিষ্ট তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা বিধান, নির্বাচনের পর চার মাসের নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন এবং পরবর্তীকালে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রগতিশীল সংস্কার প্রবর্তন ও জনগণের সরকার কায়েমের উদ্দেশ্যে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট গঠনের সংকল্পই হউক চব্বিশে জানুয়ারীর শপথ। শহীদের আত্মদানকে সফল করার একমাত্র পথ ইহাই।
 

 (দৈনিক সংবাদ : ২৪ জানুয়ারি ১৯৭০)

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

0 comments
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিনটির শুরু ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ । সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুঁচ কারখানার নারী শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন।
আন্দোলন করার অপরাধে গ্রেফতার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার।
১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
এর পর থেকেই সারা বিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দু বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

Saturday, January 26, 2013

পেট ও কোমরের মেদ কমাবে যেসব খাদ্য

0 comments
কোমর ও পেটের মেদ কমাতে গিয়ে নিজেকে অভুক্ত না রাখলেও চলে। যথাযথ নিয়ম মেনে সঠিক খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করলে উধাও হবে অনাকাঙ্কিত মেদ। কোমর ও পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে এমন খাবারের একটি তালিকা পাঠকের সুবিধার্থে তুলে ধরা হল -

শাকসবজি : কেবল নির্ভেজাল শর্করা অর্থাৎ ভাত, আলু, ময়দার রুটি ইত্যাদি খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে সবুজ শাকসবজি ও আমিষ জাতীয় খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। শর্করা বা চর্বি জাতীয় খাবার হজম করতে শরীরের শক্তি কম খরচ হয়। অপরদিকে আমিষ জাতীয় খাবার হজম করতে শরীরের শক্তি খরচ হয় বেশি। ফলে আমিষ বা প্রোটিন খেলে শরীরে জমে থাকা চর্বি কমে যায়। কারণ এই চর্বি শরীরকে শক্তি বা ক্যালরির যোগান দেয়।

ডিম : আমিষ বা প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিমে রয়েছে অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি-১২। এটি পেট ও কোমরের চর্বিতে আঘাত করতে সক্ষম। যারা ডিমের কোলেস্টেরল নিয়ে ভয় করেন তাদের প্রতি বক্তব্য হল, এই কোলেস্টেরল খুব বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর নয়। তারপরও যারা অতি সংবেদনশীল তারা ডিমের কুসুম না খেয়ে। সাদা অংশ খেতে পারেন।

কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার : যেসব নারী নিয়মিত দিনে ৩ থেকে ৪ বার ননীবিহীন দুধ ও চর্বিহীন দই খেয়ে থাকেন তারা নিয়মিত ডায়েট করেন এমন নারীদের তুলনায় ৭০ ভাগ বেশি মেদ কমাতে সক্ষম হন। চর্বি বা ননীবিহীন দুগ্ধজাত খাবার শরীরে বাড়তি ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে যা দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্যেরও সুরক্ষা দেয়।

শিম জাতীয় খাবার : সব ধরনের শিম জাতীয় খাবারে রয়েছে প্রচুর আমিষ, আঁশ ও লৌহ। শিম ও সয়াবিন রান্না করে সবজি হিসেবে খেলে শরীরের অনাবশ্যক চর্বি কমবে।

জলপাই তেল বা অলিভ অয়েল: কিছু কিছু চর্বি আছে যা শরীরের জন্য ভালো। এ ধরনের চর্বির নাম মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট। জলপাই তেলে এমন উপকারী চর্বি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এ ধরনের চর্বি শরীরের জন্য ক্ষতিকর চর্বি কমায় এবং হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখে।

অপরিশোধিত শস্য বা হোল গ্রেইন : আটা, ঢেঁকিছাঁটা চাল এসব অপরিশোধিত শস্যে রয়েছে প্রচুর আঁশ এবং খনিজ উপাদান। ময়দার পাউরুটি ও রুটি না খেয়ে লাল আটার রুটি ও পাউরুটি খেলে মেদ কমে। তাছাড়া মেশিনে পরিশোধিত সাদা চালের ভাত না খেয়ে ঢেঁকিছাঁটা লাল চালের ভাত বেশি পুষ্টিকর। এ ধরনের ভাতে রয়েছে খনিজ উপাদান এবং প্রোটিন। বিশুদ্ধ শর্করা না খেয়ে এমন অপরিশোধিত শর্করাযুক্ত খাবার খাওয়া উপকারী।

মাছ ও মাংস : মুরগি, গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি প্রাণীর মাংসে প্রচুর আমিষ রয়েছে। কিন্তু ভাজা মাংস শরীরের জন্য হিতকর নয়। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ রান্না মাংস খেলে আমিষের ঘাটতি কেটে যায় এবং মেদও কমে, সামুদ্রিক মাছও হতে পারে আমিষের ভালো উৎস। এ ধরনের মাছে উপকারি চর্বি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে। মাছ মেদ কমায়, বিষন্নতা দূর করে, হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখে।

ব্রেইন ফুড বা মস্তিষ্কের খাবার

0 comments
আপনার শরীরকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখার জন্য যেমন ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন, তেমনি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুগুলোকেও সচল রাখার জন্য এসব খাবারের প্রয়োজন। এসব খাবারের নাম ব্রেইন ফুড বা মস্তিষ্কের খাদ্য। আসুন এ সম্পর্কে জানি। 
ভিটামিন বি১ (থায়ামিন): সম্পূর্ণ খাদ্যশস্য এবং খাদ্যশস্য থেকে তৈরি খাবার যেমন রুটি, ভাত ও পেস্তায় এই ভিটামিন থাকে।
 
ভিটামিন বি৫ (প্যানটোথেনিক অ্যাসিড): এই ভিটামিন আপনি পেতে পারেন মাংস, মাছ, সম্পূর্ণ খাদ্যশস্য, শিম বা মটরশুঁটি, দুধ, শাকসবজি ও ফল থেকে।
 
ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন): এই ভিটামিন বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায়। যেমন মুরগির মাংস, মাছ, লিভার ও কিডনি। সম্পূর্ণ খাদ্যশস্য, বাদাম ও শিম থেকেও আপনি এই ভিটামিন পেতে পারেন।
 
ভিটামিন বি১২ (সায়ানোকোবেলামিন): ডিম, মাংস, মাছ, দুধ এবং দুধজাত খাবার থেকে আপনি এই ভিটামিন পেতে পারেন।
 
ফলিক অ্যাসিড: ফলিক অ্যাসিড বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে পাওয়া যায় যেমন—কলা, কমলার রস, খাদ্যশস্য থেকে প্রস্তুতকৃত খাবার, লেবু, স্ট্রবেরি, ফুটি বা তরমুজ, শাকযুক্ত সবজি, শিম, মটরশুঁটি ইত্যাদি।

ম্যাগনেশিয়াম: এটা পাওয়া যায় সম্পূর্ণ খাদ্যশস্য, শিম বা মটর-জাতীয় বীজ, বাদাম এবং সবুজ শাকসবজিতে।
 
পটাশিয়াম: এটা পাওয়া যায় খুবানি, আভোকাদো, কলা, খরমুজ, মোসম্বি লেবু, কমলা, শুকনো খেজুর বা আলুবোখারা, স্ট্রবেরি, আলু, মাংস, মাছ প্রভৃতি খাবারে।
 
ক্যালসিয়াম: এটা পাওয়া যায় দুধ ও দুধজাত খাদ্য যেমন পনির ও দই; শিম, ফুলকপি, বিট, ভক্ষণীয় কাঁটাযুক্ত মাছ ইত্যাদি খাবারে।

Tuesday, January 22, 2013

টি শার্ট বা শার্টের মাপ

0 comments
Size = S
Width (A)= 17.5 inch       Length(B)=25.5 inch

Size=M
Width(A)=18.5 inch         Length(B)=26.5 inch

Size=L
Width(A)=19.5 inch           Length(B)=27.5 inch

Size=XL
Width(A)=20.5 inch            Length(B)=28.5 inch

Saturday, January 19, 2013

স্ট্রেচ

0 comments
ব্যায়ামের জন্য জিমে যেতে হবে, কিংবা শরীর গঠনে নামি-দামি যন্ত্র লাগবেই_এসব ভাবার কোনো কারণ নেই। যন্ত্র ছাড়াই করা যায় অনেক ধরনের ব্যায়াম। ঠিক রাখা যায় শরীরের গঠন। এমনকি শুধু বালুর ব্যাগ দিয়েও করা যায় সিক্সপ্যাক! যন্ত্র ছাড়া আলোচিত ব্যায়ামগুলোর অন্যতম স্ট্রেচ (সম্প্রসারণ)। স্ট্রেচ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের। বলা হয়, শরীরে যত পেশি আছে, স্ট্রেচ রয়েছে এর চেয়েও বেশি। সেই স্ট্রেচগুলো ঠিকভাবে নিয়ম মেনে করলে বদলে যাবে আপনার শরীরের গঠন। এ ছাড়া এগুলো শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য কার্যকর। এরই কয়েকটা নিয়ে এ আয়োজন। যন্ত্রের দরকার নেই বলে এগুলো করতে পারেন বাড়িতেই।


হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ : সিটিং
যেভাবে করবেন
* মেঝেতে বসে এক পা সামনের দিকে সোজা করে রাখতে হবে এবং অন্য পা বাঁকিয়ে নিজের দিকে রাখতে হবে।
* শরীর সামনের দিকে নিয়ে দুই হাত সোজা করে পায়ের পাতার কাছে ধরতে হবে এবং বুক ঊরুর কাছে নিয়ে আসতে হবে।
* এ সময় পিঠের নিচের অংশ হালকা বাঁকা হতে পারে।
* এভাবে কিছুক্ষণ থাকতে হবে।
* একইভাবে অন্য পায়ে অনুশীলন করতে হবে।

হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ : সুপাইন
যেভাবে করবেন
* দুই পায়ের মাঝে একটু ফাঁকা জায়গা রেখে মেঝেতে চিত হয়ে শুতে হবে।
* এক পায়ের হাঁটু একটু বাঁকানো অবস্থায় ধীরে ধীরে ওপরে তুলতে হবে।
* ওপরে ওঠানো পায়ের ঊরু দুই হাতে ধরে ধীরে ধীরে শরীরের দিকে টেনে আনতে হবে।
* এভাবে কিছুক্ষণ থাকতে হবে।
* অন্য পায়ে একইভাবে অনুশীলন করতে হবে।

কাফ মাসল স্ট্রেচ : গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস
যেভাবে করবেন
* একটি দেয়ালের সামনে এমনভাবে দাঁড়াতে হবে, যেন এক পা অন্য পায়ের সামনে বা পেছনে থাকে এবং দুই পায়ের আঙুল সামনের দিকে মুখ করা থাকে। এবার সামনের দেয়ালে দুই হাত এমনভাবে রাখতে হবে, যেন মনে হয় আপনি দেয়ালের ওপর চাপ দিচ্ছেন।
* পেছনের পায়ের হাঁটু সোজা রেখে পায়ের সামনের অংশে মেঝেতে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
* পেছনের পায়ের সামনের অংশ দিয়ে যখন মেঝের ওপর চাপ দেওয়া হবে, তখন কোমর সামনের দিকে নিয়ে চাপ দিতে হবে।
* এভাবে কিছু সময় থাকতে হবে।
* এবার অন্য পা সামনে এনে একইভাবে অনুশীলন করতে হবে।

সতর্কতা
* সব চাপ পেছনের পায়ের ওপর থাকবে, সামনের পায়ে নয়।

Tuesday, January 15, 2013

চুল

0 comments
*আমাদের মাথায় চুল আছে এক থেকে দেড় লাখ! 

* যাদের চুলের রং সোনালি, তাদের মাথায় চুলও একটু বেশি। আরেকটি কথা, সোনালি আর লাল রং কাছাকাছি হলে কি হবে, চুলের ক্ষেত্রে কিন্তু এই হিসাব একদম উল্টা। সোনালি-চুলোদের যেখানে চুল সবচেয়ে বেশি থাকে, সেখানে লাল-চুলোদের মাথায় চুল থাকে সবচেয়ে কম! 

* ছেলেরা গড়ে তাদের জীবনের ছয় মাসই কাটায় আয়নার দিকে তাকিয়ে। আর মেয়েরা কাটায় প্রায় ২ বছর!

সাইকেল

0 comments
*সাইকেলের যে রেস হয়, সে তো সবারই জানা। সবচেয়ে বিখ্যাত সাইকেল রেসের নাম ট্যুর ডি ফ্রান্স।
* আমেরিকায় শহরের মানুষ খুব কমই সাইকেলে চড়ে; হিসাব করলে তা ১ শতাংশও হবে কিনা সন্দেহ। অনেকটা আমাদের দেশের ঢাকা শহরের মতো আর কি! সে তুলনায় ইউরোপে শহরের মানুষ অনেক বেশি সাইকেলে চড়ে বেড়ায়। এই যেমন ইতালির শহরগুলোর যানবাহনের পাঁচ শতাংশই সাইকেল। আর নেদারল্যান্ডে তো সংখ্যাটা আরও বেশি, প্রায় ৩০ শতাংশ। ওখানে নাকি প্রতি ৮ জনের মধ্যে ৭ জনেরই সাইকেল আছে!
* বাইসাইকেল শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৮৬০ সালের দিকে, ফ্রান্সে।
* প্লেনের আবিষ্কারক দুই ভাই অরভিল রাইট আর উইলবার রাইট? তাদের কিন্তু একটি সাইকেল মেরামতের দোকান ছিল!  
Bicycles in India 04
* এখনো পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন সাইকেল তৈরি করা হয়! Brosen city bicycle 
* চীনে আজও সাইকেল ব্যবহার করে প্রায় আধা বিলিয়ন, মানে ৫০ কোটি মানুষ!

আইসল্যান্ড

0 comments
আইসল্যান্ড ইউরোপ মহাদেশের একটি প্রজাতান্ত্রিক দ্বীপরাষ্ট্র। রাজধানীর নাম রেইকিয়াভিক। দেশটি উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে গ্রিনল্যান্ড, নরওয়ে, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং ফারো দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সদাসক্রিয় ভূ-সাংগঠনিক প্লেপগুলোর সীমারেখার ঠিক উপরে অবস্থিত একটি আগ্নেয় দ্বীপ। আইসল্যান্ডের উত্তর প্রান্ত সুমেরুবৃত্তকে স্পর্শ করেছে। ডিম্বাকার এই দ্বীপটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৪৮৫ কিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ। পার্শ্ববর্তী গ্রিনল্যান্ডকে উত্তর আমেরিকার অংশ ধরা হলেও আইসল্যান্ডকে ইউরোপ অন্তর্গত রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করা যায়। দেশটির জলবায়ু, ভূগোল ও সংস্কৃতি বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ। ভূ-গঠনগত দিক থেকে আইসল্যান্ড অপেক্ষাকৃত নবীন। বিগত ৬০ মিলিয়ন বছর ধরে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের অবশেষ থেকে দ্বীপটি উৎপত্তি লাভ করে। এখনো দ্বীপটিতে বেশ কটি আগ্নেয়গিরি সক্রিয় আছে। ভূমিকম্প সাধারণ ব্যাপার। ভূ-গর্ভস্থ উষ্ণ পানির প্রসবণগুলো দেশটির ভবনগুলোকে সারা বছর ধরে উষ্ণ রাখে এবং কৃষিকাজে সহায়তা করে। দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রসবণগুলো থেকে নির্গত জলীয়বাষ্পের কারণে সেখানে অবস্থিত আইসল্যান্ডের রাজধানীর নাম দেওয়া হয়েছে রেইকিয়াভিক অর্থাৎ ধোঁয়াটে উপসাগর। ভৌগোলিকভাবে উত্তরে সুমেরুর কাছে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও উত্তরে আটলান্টিক মহাসাগরের উষ্ণ উপসাগরীয় সমুদ্রস্রোতের কারণে এখানকার জলবায়ু তুলনামূলকভাবে মৃদু। ফলে আইসল্যান্ড পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত মনব বসতিগুলোর একটি। এটিকে তাই সুমেরু অঞ্চলীয় রাষ্ট্র হিসেবেও গণ্য করা হয়। আইসল্যান্ডের রুক্ষ পর্বতশ্রেণীগুলো হিমবাহে আবৃত। এদের মধ্যে ভাতা হিমবাহটি ইউরোপের বৃহত্তম। আইসল্যান্ডের সমুদ্র উপকূল প্রায় সারা বছরই জাহাজ নোঙর করার জন্য উন্মুক্ত থাকে। কেবল শীতকালে মেরুদেশীয় অঞ্চল থেকে আগত ভাসমান বরফের কারণে দেশের উত্তর ও পূর্বের বন্দরগুলো বন্ধ রাখতে হয়। প্রায় ১০০০ বছর আগে খ্রিস্টীয় ৯ম শতকে ভাইকিং অভিযানকারীরা আইসল্যান্ডে বসতি স্থাপন করে। আইসল্যান্ডবাসী তাদের ভাইকিং ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করে। অনেকেই একেবারে শুরুর দিকের বসতি স্থাপকদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক খুঁজে বের করতে পারে। এখানে বসবাসকারী জনগণ জাতিতে নর্স ও কেল্টীয়। শুরুর দিকে মূলত নরওয়েজীয় নাবিক ও অভিযানকারীরা এখানে বসবাস করত এবং এখান থেকে পরবর্তীতে গ্রিনল্যান্ড ও উত্তর আমেরিকায় অভিযান চালাত। আইসল্যান্ডের সঙ্গে নিকটতম ইউরোপীয় প্রতিবেশী দেশ স্কটল্যান্ডের দূরত্ব প্রায় ৮০০ কিলোমিটার। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমগ্র ইতিহাসে আইসল্যান্ড বৃহত্তর ইউরোপীয় সভ্যতার অংশ হিসেবেই বিদ্যমান। আইসল্যান্ডের গাথাগুলোকে মধ্যযুগের উৎকৃষ্ট সাহিত্য নির্দেশক অংশ হিসেবে মনে করা হয়। এই গাথাগুলোতে ইউরোপের চিন্তাধারা যেমন প্রতিফলিত হয়েছে তেমনি ইউরোপ মহাদেশ থেকে বহুদূরে অবস্থিত লোকদের ইতিহাস ও রীতিনীতিও ফুটে উঠেছে। ভাইকিংদের মুখের প্রাচীন নর্স ভাষার সঙ্গে আইসল্যান্ডীয় ভাষার পার্থক্য খুবই কম। ফলে তারা সহজেই এই গাথাগুলো পড়তে পারে। আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকিয়াভিকেই দেশের প্রথম কৃষি খামার গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে এটি একটি বর্ধনশীল শহর এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিক এখানে বসবাস করে। এখানে কৃষি ও খনিজ সম্পদ খুব কম। দ্বীপের তিন-চতুর্থাংশই উদ্ভিদ জন্মানোর অযোগ্য। উদ্ভিদের মধ্যে তৃণভূমি প্রধান। যেখানে ভেড়া, গবাদিপশু ও শক্তসামর্থ্য আইসল্যান্ডীয় ঘোড়া পালন করা হয়। দ্বীপের চারপাশের সমুদ্রে বিভিন্ন জাতের মাছ পাওয়া যায় এবং মৎস্যশিকার এখানকার লোকদের আদি পেশা। এখনো বহু গ্রামীণ আইসল্যান্ডীয় অধিবাসী প্রাচীন নরওয়েজীয় পুরাণের নানা দৈত্য-দানব যেমন ট্রোলার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। অন্যদিকে শহরের আইসল্যান্ডীয়দের অধিকাংশ নিজেদের দেশকে একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে মনে করতেই পছন্দ করেন। 

আফতাব চৌধুরী

Saturday, January 12, 2013

আশ্চর্য মশারি

0 comments
গরমের সাথে সাথে মশার যন্ত্রণায় দিশেহারা অনেকেই। বিরক্তিকর এক প্রানী এই মশা। পুচকে এই মশার জন্য হয় কত রকমের রোগ। এ মশা নিধনের জন্য কয়েল আর এরোসল দিয়ে ঘরে ঘরে হচ্ছে বায়ু দূষণ। ঘরে থাকা অবস্থায় মশার থেকে বাঁচার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে মশারি টাঙ্গানো। অনেকে জানালায় নেট লাগিয়ে নেন বাড়তি সুরক্ষার জন্য। মশারি তো শুধু মশাকে আপনার কাছ থেকে দূরে রাখে, তাই নয় কি? এমন যদি হতো মশারি মশা মারতে পারতো! তখন ব্যাপারটি কেমন দাড়াতো, একবার ভেবে দেখুন তো? আর ভাবার দরকার নেই কারণ এ ধরণের মশারি বাজারে এসে পড়েছে।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতকারী জার্মানির বিএএসএফ (BASF) নামক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় নতুন এক ধরণের মশারি বানাচ্ছে গ্রামীণ সামাজিক ব্যবসা (Grameen Social Business) নামের প্রতিষ্ঠান। নতুন এ মশারির গায়ে এমন এক রাসায়নিক দ্রব্য ব্যহার করা হয়েছে যার কারণে এতে মশা বসলে কিছুক্ষণ পর তা মারা যাবে। এ রাসায়নিক দ্রব্য মানুষের জন্য ক্ষতিকারক নয়। এমনকি নবজাতকও যদি এ মশারিতে মুখ লাগায় তবুও কোনো সমস্যা হবে না। মশারিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) কর্তৃক অনুমোদিত তাই এটি নিরাপদ।

বিএএসএফ ও গ্রামীণ সামাজিক ব্যবসার যৌথ উদ্যোগে গঠিত বিএএসএফ গ্রামীণ লিমিটেড ২৫ শে মার্চ থেকে আশ্চর্য মশারি বাজারজাত করা শুরু করেছে। এটির উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের দায়িত্বে আছে গ্রামীণ ফেব্রিক্স অ্যান্ড ফ্যাশনস লিমিটেড। প্রকল্পটি ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বৃহৎ প্রকল্প গড়ে তোলার সাথে সাথে দেশের বাইরে রপ্তানি করার চিন্তা করছেন ড. ইউনূস। বর্তমানে প্রতিদিন তিন হাজার পিস মশারি তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ পরিমাণ দাঁড়াবে নয় হাজারে।

বিএএসএফ গ্রামীণের সামাজিক ব্যবসায়ের প্রথম প্রকল্প এই মশারির বাজারজাতকরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের (Grameen Bank) প্রতিষ্ঠাতা  ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আশ্চর্য মশারির উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের ফলে এখন মানুষ অল্প খরচে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া থেকে রক্ষা পাবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত হলগার মিশায়েল, বিএএসএফ’এর এশিয়া অঞ্চলের সভাপতি সাওরি ডুবোর্গ এবং বিএএসএফ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারিয়া সাদিক।

পরে এক সংবাদ সম্মেলনে সারিয়া সাদিক ও আশরাফুল হাসান জানান, আশ্চর্য মশারিটি বহুবার অর্থাৎ ২০ বার ধোয়ার পরও এর কার্যকারিতা সক্রিয় থাকবে। বড় একটি মশারির দাম পড়বে প্রায় ৬৫০ টাকা। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দুটি ইউনিটের মধ্যে স্বল্প পরিসরে একটি চালু হয়েছে। পুরোপুরি চালু না হওয়ায় এখন দেশি বাজার থেকে মশারির কাপড় কিনে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। এ বছরের মধ্যেই পুরোদমে কারখানা চালু হবে। এ ছাড়া বিএএসএফের অনুমোদন পেলে আগামী বছরই রপ্তানির জন্য দ্বিতীয় ইউনিট চালু করা হবে।
আশরাফুল হাসান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, গ্রামীণ ফেব্রিক্স এন্ড ফ্যাশন লিমিটেড; সাওরি ডুবার্গ, প্রেসিডেন্ট, এশিয়া প্যাসিফিক বিএএসএফ; শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস; মাইকেল হোল্গার, জার্মান অ্যাম্বাসেডর ও সারিয়া সাদিক, সিইও, বিএএসএফ গ্রামীণ লিমিটেড। (বাম থেকে ডানে)

নেয়া হয়েছে__বিডি ব্লগারজ থেকে

Friday, January 11, 2013

ভাতের মাড় বা ফ্যানের বহু গুণ

0 comments
অতি সহজলভ্য খরচবিহীন এই ভাতের মাড়কে আমরা নিম্নমানের জিনিস বিবেচনা করে ফেলে দেই। এটা ক্যালোরিসমৃদ্ধ সুষম খাবার বলে বিবেচনা করা যায়। ভাতের মাড় হলো চালের নির্যাস। এই নির্যাস ফেলে দিলে ভাতের কিছু থাকে না। তাই ভাতের মাড় ফেলে না দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখা দরকার খাবারে ক্যালসিয়াম বেড়ে গেলে তা ফসফরাস শোষন ক্ষমতা-হ্রাস করে। আবার অধিক ফসফরাস সমৃদ্ধ খাদ্য ক্যালসিয়াম শোষনে বাধা দেয়। এতে ক্যালসিয়াম ঘাটতি হতে বাধ্য। তাই ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভারসাম্য রক্ষা করতে ভাতের মাড় অদ্বিতীয়। ভাতের মাড় ক্যান্সার প্রতিরোধক। এতে রয়েছে প্রোটিন, আঁশ ও ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স। ভাতের মাড় কোষ্টকাঠিন্য দূর করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, শুধু তা-ই নয়, যাদের উচ্চ রক্সচাপ আছে তারা মাড় না ফেলে জাউ রান্না করে খাবেন। এতে প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়াম থাকায় উচ্চ রক্তচাপ কমায়। ভাতের মাড়ে অধিক পরিমাণে গ্লুকোজ আছে বিধায় রক্তে যথেষ্ট শর্করা সরবরাহ করে। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। যাদের বিভিন্ন প্রকারের আলসার হওয়ার প্রবনতাথাকে তারা নিয়মিত ভাতের মাড়ে সামান্য লবন দিয়ে চামচে তুলে স্যুপের মতো খেলে এই প্রবণতা থাকে না।
ভিটামিন ই নিয়ে এখন উন্নত বিশ্বে যথেষ্ট গবেষনা হচ্ছে। ভাতের মাড়ে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই রয়েছে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এতে আরো রয়েছে টোকোট্রাইনোল যা অত্যন্ত কার্য়কর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভাতের মাড়ের মধ্যে আরো একটি প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে, যাকে বলে Oryza Sative Linn । এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও স্টেরয়েড। প্রাকৃতিক স্টেরয়েড আমাদের দেহের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে। এখন বাজারে এই স্টেরয়েড বড়ি পাওয়া যায়। খেলোয়ার ও ক্রীড়াবিদরা তাদের মাংসপেশীকে শক্তিশালী ও অধিক কার্যক্ষম করতে এই বড়ি নিয়ে থাকেন। তবে এ বড়িতে কারো কারো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিন্তু ভাতের মাড় খেলে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না।
চীন ও জাপানে ভাতের মাড় নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। ২০০৪ সালে চীনের বিজ্ঞানী মি. লিন মাড় ফেলা ও মাড় বিদ্যমান ভাত নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি গবেষণায় ভাতের মাড়ে জিংক, মেলেনিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও কপার এই ছয়টি উপাদান আবিস্কার করেছেন। ফেলে দেয়া ভাতের মাড়ে তিনি মেলেনিয়াম ২ গুণ, জিংক ৩, আয়রন ১০, ক্যালসিয়াম ৪, ম্যাঙ্গানিজ ১২ এবং কপার ৬ গুন পেয়েছেন। আরো কয়েকটি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, ভাতের মাড়ের অরাইজামোল মানবদেহের ক্ষতিকর LDL কোলেস্টেরল হ্রাস করে এবং HDL অপরিবর্তিত রাখে।
জাপানে মেয়েরা ভাতের মাড় রূপচর্চায় ব্যবহার করে। মুখের ত্বকে ভাতের মাড় লাগালে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় বলে তারা এটা ব্যবহার করে। একটি বিদেশী পত্রিকা বলছে, তারা এক সমীক্ষায় দেখেছে ভাতের মাড় মানবদেহের মেলানিন ছড়িয়ে পড়তে দেয় না। মেলানিনের কারণে মানুষ ফর্সা, কালো বা শ্যামলা হয়। সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি দেহে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। আসুন, আমরা ভাতের মাড় ফেলা বন্ধ করে মাড় শুকানো ভাত খাই এবং সুস্থ থাকি।


সুত্র- ইন্টারনেট

চর্বি পুরুষত্বের ক্ষতি করে

0 comments
পনির আর মাংসে যে চর্বি থাকে, তা কেবল পুরুষদের স্থূলতাই বাড়ায় না, শুক্রাণু কমিয়ে পুরুষত্বেরও ক্ষতি করে। আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত গবেষণামূলক নিবন্ধের বরাত দিয়ে আজ সোমবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।
নিবন্ধের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি ডেনমার্কের একদল গবেষক তাঁদের সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে দাবি করেছেন, পনির ও মাংসের অতিরিক্ত চর্বি পুরুষদের শুক্রাণুর ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন পূর্ণবয়স্ক ডেনিশ পুরুষের শুক্রাণুর ঘনত্ব মোটামুটি চর্বি খাওয়া একজন পুরুষের চেয়ে ৩৮ শতাংশ কম। এ ছাড়া সবচেয়ে কম চর্বি খাওয়া একজন পুরুষের শুক্রাণুর ঘনত্ব বেশি চর্বি খাওয়া একজন পুরুষের শুক্রাণুর চেয়ে ৪১ শতাংশ বেশি।
এই গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক টিনা জেনসেন বলেন, ‘ব্যাপারটি মোটেও হেলাফেলা করার মতো বিষয় নয়। আমরা জানি যে পনির ও মাংসের চর্বি মানুষের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি পুরুষদের শুক্রাণুর পরিমাণের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।’
খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে যে পুরুষের শুক্রাণুর মান সম্পর্কযুক্ত—ব্যাপারটি অতীতে অনেকবারই গবেষণার বিষয় হয়েছে। ২০১১ সালে ব্রাজিলে একই ধরনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষ গম, বার্লি ইত্যাদি বেশি খান, তাদের শুক্রাণুর ঘনত্ব বেশি। একই ধরনের আরেক গবেষণায় গবেষকেরা দেখিয়েছেন, ফলাহারি পুরুষদের শুক্রাণুর মান ফল কম খাওয়াদের চেয়ে অনেক উন্নত।
ডেনমার্কের সর্বশেষ গবেষণায় কমপক্ষে ২০ বছর বয়সী ৭০১ জন পুরুষের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। এসব তরুণ ২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
গবেষণার সময় এই ৭০১ জনের তাঁদের শেষ তিন মাসের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে তাঁদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়। চারটি পর্যায়ে গবেষকেরা এই গবেষণাটির ফল প্রকাশ করেন।
গবেষণায় অবশ্য চর্বি খাওয়ার বাইরে মানুষের দৈনন্দিন জীবনাচার বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। টিনা জেনসেনের মতে, বিশ্বজুড়ে পুরুষের শুক্রাণুর ঘনত্ব কমে যাওয়া নিয়ে যে বিভিন্ন গবেষণা চলছে, তাঁদের গবেষণাটি এ ক্ষেত্রে আংশিক ধারণা দিতে সক্ষম।

সূত্র প্রথম আলো

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

0 comments
১০ জানুয়ারি। জাতির জনক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও বাঙালির মুক্তি আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের এ  দিনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৫ মার্চ রাতে তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীণ রাখা হয়। সেখানে তাকে হত্যা ভয় দেখানো হয়। কবর খুঁড়ে বলা হয় স্বাধীনতার দাবি থেকে সরে আসতে। কিন্তু তিনি পাক স্বৈরশাসকদের সঙ্গে কোনো আপোষ করেননি। বরং তিনি বলেন, মৃত্যুর পর আমার লাশটা বাংলার মাটিতে পাঠিয়ে দিও। তবু বাংলার স্বাধীনতা নিয়ে কোনো আপোষ করব না।

বাঙালি জাতি ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাস বর্বর হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করে। বিনিময়ে দিতে হয় লাখ লাখ মানুষকে প্রাণ ও মা-বোনকে ইজ্জত। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া ২৫ দিন আগে বাঙালি বিজয়ের স্বাদ পেলেও তা ছিল অপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ আশ্বাদন করে।

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু প্রথম লন্ডন যান। পরে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তাকে অভ্যর্থনা জানাতে তাৎকালীন তেজগাঁও বিমান বন্দরে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। দেয়া হয় এক প্রাণঢালা সংবর্ধনা। স্বপ্নের স্বাধীন দেশে ফিরতে পেরে বঙ্গবন্ধু নিজেও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। সংবর্ধনার জবাবে দেন আবেগঘন বক্তব্য। রবি ঠাকুরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, দেখে যাও আমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে। এ সময় তার চোখ ছিল অশ্রুসজল। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে পাকিন্তানীদের বিরুদ্ধে শেষ হয় বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম।
সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব

Sunday, January 6, 2013

সুমো

0 comments

সুমো কুস্তির জন্ম জাপানে যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও আগে। এটি মূলত জাপানেরই খেলা। তৎকালীন জাপানি সম্রাটের সম্মানে হওয়া বলী খেলা উৎসবে জন্ম হয় সুমোর। ওই সময় এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলো জাপানের বিখ্যাত সব পালোয়ানরা।

ধীরে ধীরে সুমো কুস্তি পরিণত হয় জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলায়। এ খেলার জনপ্রিয়তায় এতোটুকুও ছেদ পড়েনি ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত। কিন্তু হঠাৎ করে ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা। জাপানের তৎকালীন সম্রাট সুমুতোই কোসিমার জোর বিরোধীতার মুখে বন্ধ হয়ে যায় এই খেলা।

একটানা বন্ধ থাকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত। এর পর ১৯০৯ সালে দুজন বিখ্যাত সুমোবিদ হিটারিয়ামা ও উনিগ্রেতিনির বিশেষ আগ্রহে আবার শুরু হয় সুমো। মূলত এদের দুজনের উৎসাহ এবং চেষ্টায় তৎকালীন সম্রাট ইকো তৈরি করে দেন একটি স্টেডিয়াম। শুধু সুমো কুস্তিগীরদের জন্য তৈরি ওই স্টেডিয়ামটির নাম ছিল ককৃজিকান।

সুমো খেলোয়াড়দের জাপানি ভাষায় বলা হয় ‘রিকিসি’। একজন রিকিসির অগণিত ভক্ত থাকে। যারা নতুন সুমো তাদের বলা হয় ‘মায়েজুমো’। আর যারা ভালো কুস্তি করেন তাদের ‘মাকুচিতা’, ‘জুরিও’, ‘মাকুউচি’, ‘মায়েজুমো’ প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়।

সুমো মূলত জাপানি খেলা হলেও ১৯৭২ সালের পর এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে চীন, শ্রীলংকা, তাইওয়ান, আমেরিকা, ব্রিটেন, তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার বিভিন্ন দেশসহ হাওয়াই-এ সুমো খেলা অর্জন করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। যা আজো অব্যাহত আছে।

বিশাল শরীরের অধিকারী হয় একজন সুমো কুস্তিগীর। এদের সবার উচ্চতা হয় ছয় থেকে সাড়ে ছয় ফুটের মতো। আর ওজন হয় দুই থেকে আড়াইশ কেজি। কি বন্ধুরা, অবাক হচ্ছো তাই না?

অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের শরীরের এমন গঠন  শুরু হয় ছোটবেলা থেকেই। এজন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় তাদের। ওজন বাড়ানোসহ কুস্তির কায়দা-কানুন শিখতে হয় ওস্তাদের কাছে। এরা প্রতিদিন তিন-চার কেজি মাংস, ২০ থেকে ২৫টি ডিম, সমুদ্রের শৈবালের তৈরি খাবার,  নারিকেলের পানি, স্কুইড, সামুদ্রিক মাছ প্রভৃতি খায়।

জাপানের মানুষের গড় আয়ু ৮৩ বছর। কিন্তু সুমোরা বাঁচে ৬০ থেকে ৬৫ বছর। ভারি শরীর এবং খাদ্যাভাসের কারণে তারা ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আথ্রারাইটিস প্রভৃতি রোগে ভোগে। ফলে তাদের বেশি দিন বেঁচে থাকা কঠিন হয়।

একটি বড়ো বৃত্তের মধ্যে খেলা হয় সুমো। বৃত্তটি মূল মাটি থেকে কিছুটা উঁচু থাকে। খেলা শুরু হওয়ার আগে একজন উপস্থাপক প্রতিযোগীর নাম, বয়স, ওজন বলে দেন। ঠিক সে সময়টাতে পুরো চত্বর প্রদক্ষিণ করে দুজন কুস্তিগীর গ্যালারিমুখো হয়ে দাঁড়ান। এরপর এক পায়ে দাঁড়িয়ে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে ‘সব শয়তানের ধ্বংস হোক’ এই প্রার্থনা করে এবং নিজের জয়ের জন্য আশীর্বাদ চেয়ে ঢুকে পড়েন রিঙের মধ্যে। খেলা পরিচালনা করেন একজন রেফারি। তার সঙ্গে থাকেন পাঁচজন বিচারক। রেফারি প্রধানকে জাপানি ভাষায় বলা হয় গেয়জি।

সুমো কুস্তিতে প্রতিদিন খেলা হয় মোট ৩৫০টি বাউট বা রাউন্ড। প্রতিটি রাউন্ডের সময় মাত্র ৩০ সেকেন্ড। এক সুমোবিদ অন্য সুমোবিদকে যদি ঠেলে ওই রাউন্ড বর্ডার পার করে বাইরে নিতে পারেন, তবেই সে জিতে যায়। একটানা ১৫ দিন বিভিন্ন রাউন্ডে লড়াই করে যে সুমো শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেন তিনিই হন গ্রান্ড চ্যাম্পিয়ন।

কুস্তিগীর কিন্তু ইচ্ছেমতো তাদের শরীরেরর শক্তি প্রয়োগ করতে পারেন না। এজন্য মানতে হয় অনেক নিয়ম-কানুন। সুমোর নিয়মে চোখে আঘাত, চুল ধরে টান, কুচচিতে এবং মুখে আঘাত, পা ধরে বাঁকা করা, ঘাড়ে জোরে আঘাত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এজন্য প্রত্যেক কুস্তিগীরকেই গ্যারান্টি স্বাক্ষর দিতে হয় খেলা শুরুর আগে। রেফারি ছাড়াও আরো পাঁচজন জজ বা বিচারক খেলা পর্যবেক্ষণ করেন। রিঙের চারপাশ থেকে যারা রেফারিকে ফলাফল নির্ধারণের জন্য সাহায্য করেন এদের মধ্যে একজন নিয়ন্ত্রণ করেন সময়। খেলা শেষে বিচারকরা পয়েন্ট হিসাব করে ফলাফল তুলে দেন রেফারির হাতে। রেফারি বিজয়ীর হাত উত্তোলন করে ঘোষণা করেন গ্রান্ড চ্যাম্পিয়ন।

সুমোকুস্তি মূলত দুধরনের। এর মধ্যে একটি ‘এমুনি’। অপরটি ‘বেল্ট ফাইটিং’। বেল্ট ফাইটিং সুমোই সবচেয়ে জনপ্রিয়। তোমরা হয়তো গালে হাত দিয়ে ভাবতে শুরু করেছো ইয়া মোটা সুমো কুস্তিগীররা এতো কষ্টে লড়াই করে, এর বিনিময়ে তারা কী পায়। বা তারা তাদের শরীরের মতো মোটা অঙ্কের কোনো পুরস্কার পায় কিনা?

হ্যাঁ পায়। মূলত মোটা অঙ্কের অর্থই দেওয়া হয় বিজয়ীকে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, ওই অর্থের পুরোটাই বিজয়ীকে ব্যয় করতে হয় তার ভক্তদের পেছনে। এই রীতিটি চলে আসছে জাপানের বিখ্যাত সম্রাট মিইইজীর শাসনামল থেকে। মিইইজীর শাসনামল ছিল ১৮৬৮-১৯৮২ সাল পর্যন্ত।

যাই হোক, এই পুরস্কারের টাকাকে জাপানি ভাষায় বলা হয় ‘জানা’। যার শাব্দিক অর্থ ফুল। ভক্তদের উদ্দেশে ওই টাকা ব্যয় করার সময় তার ভক্ত সমর্থকরা ফুল ছিটিয়ে অভিনন্দন জানায় তাদের পছন্দের খেলোয়াড়কে। এসময় তারা চিৎকার করে বলতে থাকে ‘হানা ইউরি দ্যাংগো’। যার অর্থ ভাত কিংবা পিঠার চেয়েও ফুল ভালো। পুরস্কারের অর্থ ছাড়াও সুমো কুস্তিগীররা পান একটি সম্মাননাপত্র, কাপসহ ৩০ কিলোগ্রাম ওজনের একটি রূপার পদক। ওই পদকটি গলায় ঝুলিয়ে বিজয়ী সুমো কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়ান স্টেডিয়াম চত্বরে। দর্শকরা তাকে দেখে চিৎকার করে বলতে থাকে সুমো-সুমো-সুমো।

তবে সরাসরি সুমো খেলা দেখার সৌভাগ্য খুব কম জাপানির ভাগ্যে জোটে। কারণ কোথাও সুমো খেলার আয়োজন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। তবে টিকেটের দাম অতি বেশি হওয়ায় তা থাকে সাধারণ দর্শকদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

লিখেছেন: ইমরুল ইউসুফ

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

0 comments
১৪ই ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। জাতির একটি অত্যন্ত শোকাবহ দিন। হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী আর তাদের এদেশীয় দোসর বিশ্বাসঘাতক স্বাধীনতাবিরোধী চক্র–জামাত,আল বদর, আল শামস, রাজাকারদের নজিরবিহীন নৃশংসতা এবং এক ভয়ংকর নীলনকশা বাস্তবায়নের একটি প্রামাণ্য দলিল।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বাহ্নেই শোষক পাকিস্তানী প্রশাসন বুঝতে পেরেছিল এদেশের সহজ-সরল মানুষগুলোকে আর শাসন-শোষন করা যাবেনা। বাংগালী জেগে উঠেছে। এদেশে পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের পতন অনিবার্য। এটা কেবল কিছু সময়ের ব্যাপার মাত্র।এই পরাজয়কে সহজে মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। কি করেইবা হবে? সুজলা -সুফলা এই দেশটিকে শোষন করেই যে তাদের সমৃদ্ধি।

বাংগালীর এই জাগরণে এদেশের সূর্য -সন্তান বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল আলোকবর্তিকার।ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংগালীদের দমিয়ে রাখার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের যে কোন হীন-চক্রান্তের বিরুদ্ধে তাঁরা বারবার সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। এদেশের সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছেন।যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

পাকিস্তানীরা যেহেতু বুঝতে পেরেছিল এদেশে তাদের দিন শেষ হয়ে আসছে তারা এদেশের মানুষকে একটা মরণ কাঁমড় দেবার জন্য মরীয়া হয়ে উঠে।তাদের এই কুৎসিত ইচ্ছায় আরো ইন্ধন যোগায় এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দালালচক্র। এই স্বাধীনতাবিরোধী, দেশের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা দালালগুলো বুঝতে পেরেছিল এতদিন পাকিস্তানী প্রভুদের পা চাটার ,তাদের সাথে হাত মিলিয়ে হত্যা-ধর্ষণ-লুঠতরাজের যে জঘন্য ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে তার ফলশ্রুতিতে এদেশের মাটিতে বসবাস করা তাদের জন্যও অসম্ভব হয়ে উঠবে। কাজেই ঘাতক-দালাল চক্রের একটাই উদ্দেশ্য যেভাবে যতটুকু সম্ভব এদেশের ক্ষতি করা। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির যে কোন বিপর্যয়ে অগ্রনী ভূমিকা নিয়ে সমস্যা সমাধানের পন্থা নির্ধারণ করার যোগ্যতাসম্পন্ন ধীমান ব্যক্তিবর্গ তাদের এই ধবংস-প্রক্রিয়ার প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হন।এদেশকে মেধাশূন্য করে পঙ্গু করে ফেলার এক ভয়াবহ নীলনকশার পরিকল্পনা করে তারা ।যার ফল হবে এদেশের মানুষের জন্য মারাত্মক এবং সুদূরপ্রসারী। কোন জাতির অগ্রসরমানতা বা সার্বিক বিকাশের ধারাকে প্রতিহত করতে এর থেকে মোক্ষম অস্ত্র আর কি হতে পারে
 
২৫ শে মার্চের কালোরাত্রি থেকেই ঘাতক-দালালদের বুদ্ধিজীবী নিধন-যজ্ঞ শুরু হয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা,ফজলুর রহমান খান,গোবিন্দ চন্দ্র দেব সহ আরো অনেকেই এই কালোরাত্রিতেই শহীদ হন।শুধু ঢাকা কেন সমস্ত বাংলাদেশ(ত্তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান)জুড়েই চলছিল এই হত্যা প্রক্রিয়া।সিলেটে চিকিৎসারত অবস্থায় হত্যা করা হয় ডাক্তার শামসুদ্দিন আহমদকে।

শিক্ষাবিদ,চিকিৎসক,প্রকৌশলী,সাহিত্যিক,সাংবাদিক,ব্যবসায়ী,রাজনীতিক,ছাত্র কেউই এই ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পাননি।প্রতিদিনই কারো না কারো বাসায় ঢুকে বিশেষ কোন ব্যক্তিকে ধরে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতো অজ্ঞাত কোন স্থানে।যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হতো নারকীয় নির্যাতনের পরে তাদের সবাইকেই মেরে ফেলা হতো।ওরা কেউ আর ঘরে ফিরে আসেনি।দু,একটা ব্যতিক্রম হয়তবা ছিল।কিন্তু সেইসব ভাগ্যবানের সংখ্যা উল্লেখ করার মতো ছিলনা।

২৫ শে মার্চের মাঝরাত থেকেই দেশ জুড়ে হত্যা -ধর্ষণ-লুঠতরাজের পাশাপাশি বাছাই করে করে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের নিধন-পর্বও চলছিল প্রায় প্রতিদিনই। স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো নয় মাসই সুপরিকল্পিতভাবে একের পর এক বুদ্ধিজীবী হত্যা চলতে থাকে। পাকিস্তানীঘাতকদের আত্মসমর্পনের ঠিক দুই দিন আগে ১৪ ডিসেম্বরের বীভৎস- নারকীয়- পাশবিক হত্যাকান্ডের কোন তুলনাই হয়না। একসাথে এত বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা এর আগে আর ঘটেনি।

১৪ই ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক জঘন্য বর্বর ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। ঘাতক-দালাল চক্র এই পৈশাচিক-নির্মম নিধন যজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। ১৬ই ডিসেম্বরপাক-বাহিনীর আত্মসমর্পণের পরে আত্মীয়-স্বজনেরা মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে তাঁদের লাশ খুঁজে পায়। ঘাতকবাহিনী আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেছিল। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা,”আর একটু এগিয়ে যেতেই বাঁ হাতের যে মাটির ঢিপিটি ছিল তারই পাদদেশে একটি মেয়ের লাশ। মেয়েটির চোখ বাঁধা।গামছা দুটো আজও অখানে পড়ে আছে।পরনে কালো ঢাকাই শাড়ী ছিল। এক পায়ে মোজা ছিল। মুখ ও নাকের কোন আকৃতি নেই। কে যেন অস্ত্র দিয়ে তা কেটে খামচিয়ে তুলে নিয়েছে।যেন চেনা যায় না। মেয়েটি ফর্সা এবং স্বাস্থ্যবতী। স্তনের একটা অংশ কাটা। লাশটা চিৎহয়ে পড়ে আছে। বিভৎস চেহারার দৃশ্য বেশীক্ষণ দেখা যায়না।তাকে আমি চিনতে পারিনি।পরে অবশ্য সনাক্ত হয়েছে যে ,মেয়েটি সেলিনা পারভীন। ’শিলালিপি’র এডিটর। তার আত্মীয়রা বিকেলে খবর পেয়ে লাশটি তুলে নিয়ে গেছে।”

আরেকটি বর্ণনা,”পাশে দুটো লাশ, তার একটির হৃৎপিন্ড কে যেন ছিঁড়ে নিয়েছে।সেই হৃৎপিন্ড ছেঁড়া মানুষটিই হল ডঃ রাব্বী।—————-ডঃ রাব্বীর লাশটা তখনও তাজা।জল্লাদ বাহিনী বুকের ভেতর থেকে কলিজাটা তুলে নিয়েছে। তারা জানতো যে তিনি চিকিৎসক ছিলেন।তাই তার হৃৎপিন্ডটা ছিঁড়ে ফেলেছে।”"

এমনি আরো অজস্র লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়।সেইসব মর্মান্তিক ঘটনার শুনে বারবার শিউরে উঠতে হয়। এই ঘাতকদালালচক্রের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করার মতো উপযুক্ত ভাষা পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়না। এই ঘাতকদালালচক্র দেশের সাথে ,স্বজনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার চূড়ান্ত ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম জায়গায় । মীরজাফর,মীরনের পাশাপাশি এদেশের মানুষ আজীবন ঘৃণা ভরে” রাজাকার ‘শব্দটিও উচ্চারণ করে যাবে।

যুদ্ধকালীন সমস্ত সময় জুড়েই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হলেও ১৪ই ডিসেম্বরের মতো একসাথে এত বুদ্ধিজীবীকে এর আগে হত্যা করা হয়নি ,এজন্যই এই দিনটিকেই “শহীদ বুদ্ধীজীবী দিবস” রূপে পালন করা হয়। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ১৪ই ডিসেম্বরকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস” বলে ঘোষণা দেন। প্রতি বৎসর এই দিনটিতে আমরা আমাদের অকাল-প্রয়াত শ্রেষ্ট সন্তানদের আবেগ-আপ্লুত হয়ে স্মরণ করলেও স্বাধীনতার ৪০ বৎসর পরেও সেইসব ঘাতকদালালদের বিচার করতে পারিনি যারা ছিল এই হত্যাকান্ডগুলোর প্রত্যক্ষ হোতা। এর অন্যতম কারন হয়ত এজন্যই যে এই ঘাতকদালাল চক্র এবং এদের দ্বারা মগজধোলাইকৃত উত্তরসূরিরা এদেশের আনাচে-কানাচে প্রবলভাবে সক্রিয়।

জাতিকে মেধাশূন্য করার যে প্রক্রিয়া একাত্তরের ঘাতকচক্র শুরু করেছিল তাদের উত্তরসূরিরাও একই উদ্দেশ্যে এই দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে নানা ভুল তথ্য ,ভুল ইতিহাস পরিবেশন করে যাচ্ছে যাতে করে এদেশের মানুষ একটা বিভ্রান্ত জাতিতে পরিণত হয়।এই ঘাতকদালালদের সম্পূর্ণরূপে নির্মুল করা নাহলে জাতির সামনে আরো ভয়াবহ সময় আসবে এতে কোন ভুল নেই।

Saturday, January 5, 2013

ইন্টারনেট

0 comments
যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিক মাধ্যম ইন্টারনেট। ১৯৮৩ সালের ১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তির এই প্রধান বাহন। ১৯৬৯ সাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষক দল। ১৯৮০ সালে সফটওয়্যার প্রকৌশলী টিম বার্নার্স লি ভাবলেন এমন কোনো প্রোগ্রামের কথা, যা মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করবে। তিনি ডেভেলপ করলেন 'হাইপার টেক্সট' নামে নতুন সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে নিজের কম্পিউটারের মেমোরির তথ্য অন্যান্য কম্পিউটারের সঙ্গে জুড়ে দিতে সমর্থ হলেন। প্রত্যেকটি তথ্যকে আবার আলাদা নম্বর হিসেবে চিহ্নিত করতেও সমর্থ হন তিনি। এর রেশ ধরেই ১৯৮৩ সালের শেষ নাগাদ জন্ম হয় ইন্টারনেটের। বর্তমানে যোগাযোগের অন্যতম শীর্ষ মাধ্যমে পরিণত হয়েছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটে নানা ধরনের সেবা প্রচলন হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।
ইন্টারনেট ওয়ার্ল্ড স্ট্যাট পরিচালিত সাম্প্রতিক জরিপ মতে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৪০ কোটি। এর মধ্যে ব্যবহারকারী সংখ্যার হিসাবে মহাদেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে এশিয়া। এশিয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এখন ১০৭ কোটি। তবে ইন্টারনেটের সুবিধা গ্রহণে এগিয়ে রয়েছে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো। অন্যদিকে ইন্টারনেট সুবিধা থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে আফ্রিকা মহাদেশ। এখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র সাড়ে ১৬ কোটি। 

আমিনুর রহমান