Thursday, May 9, 2013

যেভাবে নির্বাচিত হন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট

0 comments
জাতি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব একটা পুরনো নয়। এর ইতিহাস মাত্র সোয়া পাঁচশ’ বছরের। পৃথিবীর মানচিত্রে এমন অনেক দেশ আছে যাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সভ্যতা আমেরিকা থেকে অনেক বেশি প্রাচীন ও গৌরবোজ্জ্বল। উদাহরণস্বরূপ  মিসর, সিরিয়া, ইরাক, ইরান, তুরস্ক, ইতালি, চীন, রাশিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারতবর্ষসহ অনেক দেশের নাম করা যায়। আমেরিকায় সভ্যতার সূচনা ধরা হয় ১৪৯২ সাল  থেকে যখন কলাম্বাস এ দেশ আবিষ্কার করেন, যদিও তার আগেও এখানে ন্যাটিভ ইন্ডিয়ানদের বসবাসের অনেক আলামত পাওয়া যায়। স্কুলে যেভাবে আমেরিকার ইতিহাস পড়ানো হয় তাতে এই পুরো সময়টাকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

প্রি-কলোনিয়াল পিরিয়ড (১৪৯২-১৬০৭); কলোনিয়াল পিরিয়ড (১৬০৭-১৭৭৬);  এবং পোস্ট-কলোনিয়াল বা স্বাধীন আমেরিকান পিরিয়ড (১৭৭৬ বর্তমান)।

সভ্যতার বিবেচনায় আমেরিকা অনেক জাতির তুলনায় নবীন হলেও তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ ও পাকাপোক্ত। তারা ২৩৬ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের চর্চা করে আসছে। আধুনিক বিশ্বে এমন দেশ খুব কমই আছে যাদের স্বাধীন গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য এত লম্বা ও উজ্জ্বল। পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষ যখন ইংরেজদের কাছে তার স্বাধীনতা হারায় তার মাত্র ২০ বছরের মাথায় আমেরিকা একই ইংরেজদের কাছ থেকে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাদের রাজনৈতিক মুক্তি অর্জন করে। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, স্বাধীনতার পর থেকেই তারা সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক উপায়ে নিজেরাই নিজেদের শাসন করছে। তবে তাদের গণতন্ত্র ইংল্যান্ড, ভারত কিংবা বাংলাদেশের মতো পার্লামেন্টারিয়ান পদ্ধতির নয়। আমেরিকার গণতন্ত্র প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির। এ পদ্ধতিতে সাধারণত জনগণের সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে থাকেন, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেলায় এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়। নির্বাচন কিভাবে হয় তার বিস্তারিত আলোচনায় একটু পরে আসছি।

আমেরিকা স্বাধীন হয় ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই। এরপর তারা তড়িঘড়ি করে যেনতেন প্রকারের একটি সংবিধান রচনা করেন। আমেরিকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যাদের সসম্মানে বলা হয় ‘ফাউন্ডিং ফাদারস’, তারা সময় নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা ও তর্ক-বিতর্ক করে দীর্ঘ ১১ বছরে জাতির জন্য তৈরি করেন একটি অমূল্য দলিল সংবিধান। এটা চূড়ান্ত রূপ নিয়ে গৃহীত হয় ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৭৮৭ সালে। এরপর দীর্ঘ ২২৫ বছরে মাত্র ২৭টি সংশোধনী নিয়ে সেই একই সংবিধান দেশে এখনো বলবৎ আছে। এ থেকে আমেরিকার ‘ফাউন্ডিং ফাদারদের’ দেশপ্রেম, গণতন্ত্রপ্রীতি, বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতার প্রমাণ পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে পাঠকেরা আমাদের দেশের কথা একবার ভেবে দেখুন, আমরা মাত্র ৯ মাসের গৌরবোজ্জ্বল ও বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করে অসম্ভবকে সম্ভব করেছি। আবার দুই বছরের মধ্যেই একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান রচনা করে আরেকটি রেকর্ড করে ফেললাম, কিন্তু তারপর মাত্র দুই বছরের মাথায় চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে সংবিধানের আওতায় বাকশাল কায়েম করলাম। তারপর আজ অবধি আমাদের জাতীয় জীবনের ওই পবিত্র দলিল নিয়ে যে কাটাছেঁড়া, বালখিল্য ও খিস্তিখেউড় চলছে তার শেষ কোথায় আমরা কেউ জানি না। মাত্র ৪০ বছরে আমরা ১৫টি সংশোধনী এনেছি। আরেকটি অত্যাসন্ন।

এখানে একটি কথা আমি মোটা দাগে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ ও পাঠকদের বলে রাখতে চাই, একটি দেশের সংবিধান সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের সব নাগরিকের বিশ্বাস ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনসহ এক পবিত্র দলিল। এটা কস্মিনকালেও কোনো রাজনৈতিক দলের মেনিফেস্টো হতে পারে না। একটি দল কোনো বিশেষ সময়ে, বিশেষ কারণে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেলেই দলীয় বিবেচনায় সংবিধানে সংশোধনী আনতে পারে না।’

মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আর দশ-পাঁচটি দেশের মতো সাদাসিধে ধরনের নয়। যেহেতু প্রেসিডেন্টের হাতে যাবতীয় নির্বাহী ক্ষমতা, তাই তাদের ‘ফাউন্ডিং ফাদাররা’ নানা কিসিমের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটি কঠিন ও জটিল পরোক্ষ পদ্ধতি আবিষ্কার করে গেছেন। বিভিন্ন সময়ে উদ্ভূত ছোটখাটো সমস্যা সামাল দিতে গিয়ে তারা ওই নিয়ম-কানুনে কিছু পরিবর্তন এনেছেন, কিন্তু সেই পুরনো মৌলিক পদ্ধতি এখনো বহাল আছে। আর মাত্র কিছু দিন পরই হতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই এ নির্বাচনের প্রাক্কালে আমার পাঠকদের সম্ভাব্য কৌতূহলী মনের খোরাক জোগাতে লিখছি আজকের এই কলামটি।

মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী একজন প্রেসিডেন্টপ্রার্থী তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে কমসংখ্যক জনসমর্থন নিয়েও শুধু ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যাধিক্যে নির্বাচিত হয়ে হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে বসতে পারেন। সাম্প্রতিক ইতিহাসে আমাদের চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটেছেও। ২০০০ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ জুনিয়র আল গোর থেকে অনেক কম জনভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে কারণে-অকারণে যুদ্ধ করে আমেরিকা ও পশ্চিমা অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে গেছেন।

এবার দেখা যাক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজ কিভাবে কাজ করে। এ দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় চার বছর অন্তর অন্তর। পরপর দুই টার্মের বেশি কেউ প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হতে পারেন না। যদিও বলা হয়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, কিন্তু আসলে এর সাথে সব কংগ্রেসম্যান অর্থাৎ ফেডারেল প্রতিনিধি পরিষদের (কেন্দ্রীয় নিম্নকক্ষ) সদস্য এবং কিছুসংখ্যক সিনেটরের (কেন্দ্রীয় উচ্চকক্ষ) নির্বাচন হয়। সিনেটররা রোটেশনের ভিত্তিতে ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন।

নির্বাচনের প্রায় এক বছর আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা পার্টি নমিনেশনের জন্য লড়াইয়ের মাঠে নেমে পড়েন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট যেহেতু আপনাআপনি পার্টি নমিনেশন পেয়ে যান, তাই তিনি মাঠে নামেন আরেকটু পরে। প্রার্থীরা নিজের পকেট থেকে এবং ব্যক্তিগত ও পার্টি উদ্যোগে দেশের ভেতরে আইনানুযায়ী যে চাঁদা আদায় করেন, তা দিয়েই নির্বাচনী ব্যয় সঙ্কুলান করে থাকেন। এ দেশে প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময়ে আমাদের দেশের মতো মাঠে-ময়দানে বড় বড় সভা সমাবেশ হয় না। মিটিং যা হয় তার সবই ঘরোয়া-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম মিটিং অথবা টাউন হলজাতীয় জমায়েত। বাকি সব প্রচার-প্রচারণা চলে মিডিয়ার মাধ্যমে। পত্রপত্রিকা, টিভি অ্যাড, টকশো, বিতর্ক, ইন্টারভিউ, এর সাথে আজকাল ই-মেইল, ফেসবুক, টুইটারও যোগ হয়েছে বটে। ক্যাম্পেইনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো নির্বাচনে তিন-চার সপ্তাহ আগে প্রার্থীদের মুখোমুখি জাতীয়ভাবে টিভি বিতর্ক।

প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে হয় পরপর তিনটি ডিবেট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের মাঝে হয় একটি। এসব ডিবেট ও তাদের ফলাফলকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যে দেখা যায় দারুণ উত্তাপ ও উত্তেজনা। শেষ মুহূর্তে আনডিসাইডেড ভোটারদের সিদ্ধান্তে এসব ডিবেট বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

নির্বাচনটি যদিও ফেডারেল, তথাপি এই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য নেই কোনো ফেডারেল নির্বাচন কমিশন। গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ার দেখভাল ও পরিচালনার দায়িত্ব ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও স্বতন্ত্র টেরিটোরি দেশের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির। প্রতিটি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে নিজ নিজ কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে ভোটার তালিকা করা থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণ, ভোট গণনা, রেজাল্ট সার্টিফাই করা ইত্যাদি যাবতীয় কাজ করে থাকে। এ ব্যাপারে তাদের প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব আইন, রাজ্যে রাজ্যে এ আইনের তফাৎও আছে বিস্তর।

কোন সরকারের অধীনে, কোন কমিশনের হেফাজতে, কোন তারিখে, কিভাবে নির্বাচন হবে এ নিয়ে এ দেশে কোনো বিতর্ক নেই। নির্বাচনের দিন-তারিখ সাংবিধানিকভাবে আগে থেকেই ঠিক করা। নির্বাচন হবে প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর (বছরটি কাকতালীয়ভাবে লিপইয়ার) নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মঙ্গলবারে। তবে নভেম্বরের প্রথম দিন যদি মঙ্গলবার হয় সে ক্ষেত্রে নির্বাচন হবে মাসের দ্বিতীয় মঙ্গলবারে। অর্থাৎ মাসের প্রথম দিন কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন হতে পারবে না। নিশ্চয়ই এর কোনো মাজেজা আছে, কিন্তু বিষয়টি এখনো আমার মাথায় আসে না। ভোটের তারিখ নির্দিষ্ট থাকলেও ওই দিনের ভিড় এড়ানোর জন্য দুই-তিন সপ্তাহ আগ থেকেই স্বল্পপরিসরে অগ্রিম ভোটদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তার নিয়মও একেক রাজ্যে একেক রকম।

নির্বাচনের দিন ভোটাররা ভোট দেন, কিন্তু প্রার্থীরা সরাসরি সে ভোট পান না। ভোট পড়ে তাদেরই মনোনীত ইলেক্টোরাল কলেজের সপক্ষে। পরবর্তী পর্যায়ে এই ইলেক্টোরাল কলেজের দ্বারা আলাদাভাবে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আমেরিকার ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসি এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে থাকে। সারা দেশে ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্য সংখ্যা ৫৩৮ জন। আমেরিকার কেন্দ্রীয় আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট। জনসংখ্যার অনুপাতে ৫০টি অঙ্গরাজ্য থেকে মোট ৪৩৫ জন সদস্য দুই বছর পরপর প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচিত হন এবং প্রতি ছয় বছর পরপর পর্যায়ক্রমে রোটেশনের মাধ্যমে ছোট-বড় প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে সমানসংখ্যক অর্থাৎ দুজন করে মোট ১০০ সদস্য সিনেটে নির্বাচিত হয়ে আসেন। এই দুইয়ের সমষ্টি ৫৩৫। তার সাথে যোগ হয় ওয়াশিংটন ডিসির জন্য আরো তিনজন। এ নিয়ে সর্বমোট ৫৩৮ জন। এই ৫৩৮ জনই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইলেক্টোরাল কলেজ।

রাজ্যওয়ারি ইলেক্টোরাল কলেজের বিন্যাস এ রকম। আলাবামা-৯, আলাস্কা-৩, অ্যারিজোনা-১১, আরকানসা-৬, ক্যালিফোর্নিয়া ৫৫, কলোরাডো-৯, কানেটিকাট-৭, ডেলাওয়ার-৩, ওয়াশিংটন ডিসি-৩, ফ্লোরিডা-২৯, জর্জিয়া-১৬, হাওয়াই-৪, আইডাহো-৪, ইলিনয়-২০, ইন্ডিয়ানা-১১, আইওয়া-৬, ক্যানসাস-৬, কেন্টাকি-৮, লুইজিয়ানা-৮, মেঈন-৪, ম্যারিল্যান্ড ১০, মন্টানা-৩, নেব্রাস্কা-৫, নেভাডা-৬, নিউ হ্যাম্পশায়ার-৪, নিউজার্সি-১৪, নিউ মেক্সিকো-৫, নিউ ইয়র্ক-২৯, নর্থ ক্যারোলাইনা-১৫, নর্থ ড্যাকোটা-৩, ওহাইও-১৮, ওকলাহোমা-৭, অরিগন-৭, প্যানসিলভানিয়া-২০, রোড আয়ল্যান্ড-৪, সাউথ ক্যারোলিনা-৯, সাউথ ড্যাকোটা-৩, টেনেসি-১১, টেক্সাস-৩৮, ইউটা-৬, ভারমন্ট-৩, ভার্জিনিয়া-১৩, ম্যাসাচুসেটস-১১, মিশিগান-১৬, মিনেসোটা-১০, মিসিসিপি-৬, মিসৌরি-১০, ওয়াশিংটন স্টেট-১২, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া-৫, উইসকনসিন-১০, ওয়ায়োমিং-৩। জনসংখ্যার ওঠানামার সাথে এই বিন্যাস অদলবদল হয়, কিন্তু মূল সংখ্যা ৫৩৮-এ স্থির থাকে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটা জাতীয় নির্বাচন হলেও কোনো একক জাতীয় নিয়মের ভিত্তিতে হয় না এ নির্বাচন। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে তার নিজস্ব নিয়ম ও আইনের ভিত্তিতে ভোট গ্রহণকার্যক্রম পরিচালিত হয়। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এমনটি হয় বলে আমার জানা নেই। মেইন ও নেব্রাস্কা ছাড়া বাকি সব ক’টি অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী বেশির ভাগ পপুলার ভোট পাবেন সে রাজ্যে তার মনোনীত ইলেক্টোরাল কলেজের সবাই জিতল বলে বিবেচিত হয়। পরবর্তীকালে আনুষ্ঠানিক এবং অফিসিয়াল নির্বাচনে তার ইলেক্টোরাল কলেজেই তার সপক্ষে ভোট দেয়ার সুযোগ পায়। পক্ষান্তরে প্রতিদ্বন্দ্বী পার্টির সব ইলেক্টোরাল কলেজই পরাজিত বলে গণ্য হয়।

মেইন ও নেব্রাস্কার বেলা এই সরল নিয়ম প্রযোজ্য নয়। ওই দুই রাজ্যে যে প্রার্থী পপুলার ভোটে জয়লাভ করবেন তিনি পাবেন রাজ্যের দুই সিনেটারের বিপরীতে দুটো ইলেক্টোরাল কলেজ, বাকিগুলো নির্ভর করবে আনুপাতিক প্রাপ্ত ভোটের ওপর। অর্থাৎ যে প্রার্থী যে ক’টি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে জেতবে তিনি পাবেন আরো ততটি ইলেক্টোরাল কলেজ। এভাবে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে যিনি ন্যূনতম ২৭০টি পাবেন, তিনিই বেসরকারিভাবে নির্বাচিত বলে ঘোষিত হবেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তার রানিং মেট আপনা-আপনিই নির্বাচিত হয়েছেন বলে বিবেচিত হবেন।

এখানেই শেষ নয়। সরকারি ফল ঘোষণার আগে সারা দেশের সব ইলেক্টোরাল কলেজ এক জায়গায় জমায়েত হয়ে তাদের প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেন। সেটা গণনা করা হয়, সার্টিফাই করা হয়, তারপর সরকারি ফল ঘোষিত হয়। এখন প্রশ্ন হলো, একজন প্রার্থীর মনোনীত ইলেক্টোরাল কলেজ কি আনুষ্ঠানিক সরকারি ভোটের সময় তার বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারে? বাস্তবে হয় না, তবে তাত্ত্বিকভাবে এটা সম্ভব।

ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই, তবে অতীতে কোনো সময় হলে হয়েও থাকতে পারে। ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে পাঠকদের জন্য এ জাতীয় কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য উদঘাটন করতে পারিনি। তবে দুইজন প্রার্থী যদি সমান সমান ইলেক্টোরাল কলেজ জেতেন তাহলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার মালিক কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ-প্রতিনিধি পরিষদ। এ রকম ঘটনা ইতিহাসে ঘটেছে বৈকি।

লেখক: আবু এন এম ওয়াহিদ; অধ্যাপক, টেনেসি স্টেইট ইউনিভার্সিটি

এডিটর, জার্নাল অব ডেভেলপিং এরিয়াজ

সূত্র: নয়াদিগন্ত, ৩০ অক্টোবর ২০১২

0 comments:

Post a Comment