Tuesday, February 25, 2014

বাড়িওয়ালার অসদাচরণের প্রতিকারসরূপ তিন ধরনের ব্যবস্থা

0 comments
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে ঢাকা শহরের প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ বাসা ভাড়া নিয়ে বাস করছে। তবে বেশিরভাগ মানুষই সম্পত্তির ভাড়া বিষয়ক আইন সম্পর্কে অজ্ঞত। ফলশ্রুতিতে ভাড়াটিয়ারা প্রায় কিছু অসাধু মালিকের দারা নিপীড়িত এমনকি মাঝেমাঝে প্রতারিতও হতে হচ্ছে।
বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রন আইন-১৯৯১ অনুযায়ী ভাড়াটিয়ারা কিছু অধিকার রাখে বাড়ি ভাড়া ধার্য করার ক্ষেত্রে। যদি কোন বাড়িওয়ালা উক্ত আইন ভঙ্গ করে তবে ভাড়াটিয়া হিসেবে যেকেউ নিচের ব্যবস্থাগুলি গ্রহন করতে পারেঃ

১. কোন বাড়িওয়ালা যদি নির্দিষ্ট প্রমাণ ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করে তাহলে, প্রথমবারেরমত তাকে জরিমানা করা হয়। এই জরিমানার পরিমাণ হচ্ছে যে পরিমাণ ভাড়া বেশি নেওয়া হয় সেটার দিগুন। এরপর একই ঘটনা ঘটলে এই জরিমানার পরিমাণ ৩ গুন হয়ে যাবে।

২. যদি কোন বাড়িওয়ালা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভাড়াটিয়ার নিকট কোন ধার্যকৃত ভাড়ার সাথে অধিক জামানত, প্রিমিয়াম অথবা অন্য কোন সালামি গ্রহন করে বা করতে চাই তাহলে, উক্ত বাড়িওয়ালা প্রথমবারের জন্য জরিমানার সম্মুখীন হবেন যার পরিমাণ ২০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। পরবর্তীতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে প্রতিক্ষেত্রে এই জরিমানার পরিমাণ বেড়ে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

৩. যদি কোন বাড়িওয়ালা বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রকের লিখিত আদেশ ছাড়া অগ্রিমবাবদ এক মাসের ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নেয়, তাহলে উক্ত বাড়িওয়ালা জরিমানার সম্মুখীন হবেন। প্রথমবার এই জরিমানার পরিমাণ হবে এক মাসের ভাড়ার চেয়ে বাড়তি টাকার দ্বিগুন পরিমাণ। পরবর্তীক্ষেত্রে এই জরিমানার পরিমাণ বেড়ে বাড়তি টাকার পরিমানের ৩ গুন হতে পারে।

Monday, February 17, 2014

জাবোয়া

0 comments
মাছের বাজারে গিয়ে দর-কষাকষি ছাড়া কেউ মাছ কিনেছেন, এমন ঘটনা বিরল। কিন্তু মাছের বাজারে যৌনতার বিনিময়ে মাছ কেনা ও তা নিয়ে দর-কষাকষির কথা শোনেননি নিশ্চয়ই! হ্যাঁ, বহু বছর ধরে পশ্চিম কেনিয়ার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমনটিই ঘটে আসছে। এখানে জেলে কিংবা মাছ বিক্রেতার কাছে যৌনতার বিনিময়ে মাছ ‘কিনে’ নিয়ে যান এ অঞ্চলের নারীরা।
বিবিসির খবরে বলা হয়, পশ্চিম কেনিয়ার ভিক্টোরিয়া হ্রদে সারা রাত মাছ ধরে সকালে তীরে জেলেদের নৌকা এসে দাঁড়াতেই অনেকটা ভিড় জমে যায়। কেউ নিজে খাওয়ার জন্য আর কেউবা জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য দরদাম শুরু করে দেন। দরদামকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। তবে এই নারীরা অর্থের বিনিময়ে মাছ কেনেন না। নারীরা মাছের বিনিময়ে জেলেদের সঙ্গে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হন। আর দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই বিনিময় ব্যবস্থা ‘সেক্স ফর ফিশ’ নামে পরিচিত। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ‘জাবোয়া’।
লুসি অধিয়াম্বো নামের ৩৫ বছর বয়সী ক্রেতা বলেন, ‘এখানে নারীদের হাত-পা বাঁধা। মাছ কেনার জন্য আমি জেলেদের সঙ্গে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হতে বাধ্য, কারণ আমার আর অন্য কোনো উপায় নেই। সাধারণত আমি সপ্তাহে দু-একজন জেলের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করি। আমি জানি যে এতে আমার রোগ হতে পারে, কিন্তু আমার তো আর কোনো উপায় নেই। এই কেনা মাছ বিক্রি করেই আমার সন্তানদের আবার স্কুলে পাঠাতে হয়। জাবোয়া (যৌনতা) একটি খারাপ অভ্যাস।’

ফেলিক্স অচিয়েং নামের ২৬ বছর বয়সী এক জেলে বলেন, তিনি বিবাহিত। তার পরও প্রতি সপ্তাহে তিনি মাছের বিনিময়ে তিনজন নারীর সঙ্গে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হন। তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবাও এই জাবোয়া করতেন। এটা আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। নারী ক্রেতারা মাছের অর্ধেক দাম শিলংয়ে (স্থানীয় অর্থ) পরিশোধ করে। আর বাকি অর্ধেক যৌনতা দিয়ে শোধ করে।’
এই কাজের জন্য লজ্জিত কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ফেলিক্স বলেন, ‘হ্যাঁ, এ কাজে আমি লজ্জিত। এটা খুবই খারাপ একটা ব্যাপার। তবে এখানে মাছ কিনতে আসা অনেক নারীই এ কাজে প্ররোচনা দেয়।’

Thursday, February 13, 2014

বিশ্ব বেতার দিবস

0 comments

বিশ্ব বেতার দিবস পরিচিতি :


জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কোর ৩ নভেম্বর, ২০১১ তারিখের সাধারণ সভায় বিশ্ব বেতার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্পেনের 'একাডেমিয়া এসপানোলা ডি লা রেডিও' বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার সংস্থা ও তাদের ইউনিয়নের সমর্থনে এ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের ১৮৭তম সেশনে স্পেনের স্থায়ী প্রতিনিধি আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব বেতার দিবস পালনের প্রস্তাব করলে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। ১৪ জানুয়ারি ২০১৩ জাতিসংঘের সাধারণ সভা আনুষ্ঠানিকভাবে 'বিশ্ব বেতার দিবস' পালনের ইউনেস্কোর সিদ্ধান্তটি অনুমোদন করে। মূলত ১৯৪৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ বেতার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেতার দিবস পালিত হচ্ছে। বিশ্ব বেতার দিবস ২০১৪ এর স্লোগান 'বেতার সবার জন্য, সব সময়ে, সবখানে'।

বেতারের ইতিহাস :

বাংলাদেশ বেতার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের উত্তরাধিকার, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও অতি প্রাচীন গণমাধ্যম। ১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর এর যাত্রা। বৃটিশ শাসনামলে এটি প্রতিষ্ঠিত হলেও বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যম হিসেবে এ দেশের গণমানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। একটি ৫ কি. ও. ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে পুরাতন ঢাকা শহরের নাজিমুদ্দিন সড়কের একটি ভাড়াবাড়ি থেকে তৎকালীন অল ইন্ডিয়া রেডিও এর ঢাকা কেন্দ্র নামে এই ভূখণ্ডে বেতার সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সে সময়ে শুধুমাত্র ঢাকার আশপাশের এলাকার শ্রোতারা অর্থাৎ দেশের শতকরা ৮ ভাগ জনগণ এই বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতে পেত।

বেতার সম্পর্কে পরিচিতি :


বাংলাদেশ বেতার তার পথ পরিক্রমায় ৭৫ বছরে পদার্পণ করেছে, গড়ে উঠেছে তার নিজস্ব স্থাপনা, বেড়েছে আয়তন ও কার্যক্রম, বেড়েছে সম্প্রচার সময়। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশ বেতার দেশের সংস্কৃতিকে ধারণ ও লালনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতার ৪৯টি ট্রান্সমিটারের সাহায্যে ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং ৮টি বিশেষায়িত ইউনিটের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ২৭৮ ঘণ্টা সম্প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছে। দেশের শতভাগ এলাকা এখন বাংলাদেশ বেতারের ট্রান্সমিটারের আওতাধীন। কাজেই সম্প্রচার পরিধি এবং সম্প্রচার সময় উভয় দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ বেতার দেশের বৃহত্তম ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যম। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারের এফ এম কাভারেজ ৬৪% এবং মিডিয়াম ওয়েভ কাভারেজ ১০০%।

বাংলাদেশে বেসরকারী এফ এম রেডিও :


বিশ্ব এখন ইনফরমেশন সুপার হাইওয়েতে অবস্থান করছে। অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই যুগে দেশের সার্বিক কল্যাণ ও সুষম উন্নয়ন করতে হলে সরকারি সম্প্রচার গণমাধ্যমের পাশাপাশি বেসরকারি প্রচারমাধ্যমকেও সহমত প্রচারের সুযোগ দিতে হবে। আর এ জন্যই সরকার বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক এফ এম রেডিও সম্প্রচারের অনুমতি প্রদান করেছে। বর্তমানে দেশে ১১টি বেসরকারি এফ এম রেডিও কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়াও লাইসেন্সপ্রাপ্ত বেসরকারি এফ এম রেডিও স্টেশনের সংখ্যা ২৫টি।

বাংলাদেশে কমিউনিটি রেডিও :


বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালে কমিউনিটি রেডিও স্থাপন, সম্প্রচার ও পরিচালনা নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে, যা ছিলো ১৯৯৮ সাল থেকে নাগরিক সমাজের একটি প্রত্যাশা। নাগরিক সমাজের প্রত্যাশার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০৮ উপলক্ষে প্রকাশিত নির্বাচনী মেনিফেস্টো- "দিন বদলের সনদ" এর ১৯.১ অনুচ্ছেদে কমিউনিটি রেডিওকে অন্তর্ভুক্ত করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে তথ্য মন্ত্রণালয় প্রমবারের মত বাংলাদেশে মোট ১৪টি কমিউনিটি রেডিও পরিচালনায় অনুমোদন প্রদান করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কমিউনিটি রেডিওগুলোর মূল প্রভাব হলো দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজেদের কথা সরাসরিভাবে বলার সুযোগ করে দিতে পারে। অর্থাৎ হাতের কাছে একটি গণমাধ্যম থাকায় সম্প্রদায়ের মানুষের কথা বলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তৈরি হয়েছে কণ্ঠহীনদের কথা বলার ও শোনার সুযোগ। এই নয়া গণমাধ্যম সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে পল্লী অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে তথ্য এবং যোগাযোগের অধিকার এনে দিয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গণমানুষের কথা বলার এবং তথ্য ও জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করার ফলে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সুশাসন নিশ্চিতকরণে জনপ্রতিনিধি, সরকারি এবং বেসরকারি কর্মকর্তাদের সাথে জনসাধারণের সংলাপ আদান-প্রদানের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। জনগণের জীবনমান উন্নয়নে দেশে বর্তমানে ১৪টি কমিউনিটি রেডিও প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া আরও ১৬টি কমিউনিটি রেডিও বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

বিশ্ব বেতার দিবসের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব :


এ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বেতার মাধ্যমের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, মানুষকে বেতারমাধ্যমে তথ্য প্রবেশাধিকার দেওয়া এবং দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমের মধ্যে আন্তঃসংযোগ জোরদার করা। এ ছাড়া বেতারমাধ্যমকে সর্বাধিক ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নানা রকম অনুষ্ঠান আয়োজন, বেতার অনুষ্ঠান বিনিময়, অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় অংশগ্রহণের কর্মসূচি নেওয়া। বেতারের রয়েছে পৃথিবীর দুর্গমতম স্থানে পৌঁছানোর শক্তি। বিশ্বের শতকরা ৯৫ ভাগ এলাকা বেতার সম্প্রচারের আওতাধীন। এ গণমাধ্যম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এবং বিদ্যুতের সংকট একে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। নিরক্ষর, প্রতিবন্ধী, নারী, যুবা কিংবা গরিব মানুষের জন্য বেতারের দ্বার অবারিত। এর মাধ্যমে নাগরিকের মধ্যে সংলাপ, বির্তক এবং শিক্ষার বিস্তার ঘটানো সম্ভব। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ সম্পাদন করা এবং দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় বেতারের ভূমিকা অনন্য। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নতুন প্রযুক্তি বেতারকে আরো সম্ভাবনাময় করে তুলেছে। তবে এতকিছুর পরও বিশ্বের এক বিলিয়নের ওপর মানুষ বেতার সম্প্রচারের আওতায় আসতে পারেনি। এ সীমাবদ্ধতা অতিক্রমের চ্যালেঞ্জটি বিশ্ব বেতার দিবস উদযাপনের সামনে রয়েছে।

বাংলায় সুফিবাদের আগমন

0 comments
বাংলায় সুফিবাদের আবির্ভাবকাল সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এদেশে সুফিবাদের সর্বাধিক প্রচার ও প্রসার হয়েছে বলে জানা যায়।আরব, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, মধ্য এশিয়া ও উত্তর ভারত থেকে সুফিরা এসে বঙ্গদেশে সুফিবাদ প্রচার করেন। তাদের মৃত্যুর পর কিছু অতিভক্তগন কর্তৃক প্রচলিত হয়ে যায় যে তারা বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, লিখা হয় বিভিন্ন গাঁজাখুরি কিচ্ছা কাহিনি যা ইসলামের সাথে সরাসরি বিরোধ করে ও তারা নাকি আমাদের প্রিয় রাসুল (সাঃ) এবং সাহাবাদের (রাঃ) থেকেও বেশি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, এই সব কথা লিখা হয়েছে তাদের বই গুলোতে এবং তাতে স্পষ্ট শিরক ও কুফর লক্ষ্য করা যায়। সুফিদের চালচলন, মানবপ্রেমের ইত্যাদির কারণে এদেশের সাধারণ কিছু মানুষ সুফিবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠে । এভাবে ক্রমশ বঙ্গদেশে সুফিবাদ প্রসার লাভ করে। ১২০৪-৫ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজী কর্তৃক বাংলাদেশ বিজিত হলে ইসলামের শরীআত ও মারিফত উভয় ধারার প্রচার ও প্রসার তীব্রতর হয়। শাসকশ্রেণীর সঙ্গে বহু পীর-দরবেশ এদেশে আগমন করে নিজস্ব তরীকায় ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। এরা নিজ রচিত সুফিবাদের আধ্যাত্মিক
তত্ত্ব চমৎকারভাবে তুলে ধরে সাধারণ কিছু মূর্খ মানুষকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেন, ফলে বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে এই মতবাদ প্রসার লাভ করে। সুফিগণ নিজেদের রচিত বিভিন্ন তরীকা এবং মানুষের মাঝে প্রেম-ভ্রাতৃত্ব-সাম্যের মধুর বাণী প্রচার করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের কিছু সাধারণ মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হন।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ লোকমুখে কিংবদন্তি-পুরুষে পরিণত হয়েছেন। এদের অনেকের মাযার তৈরি হয়েছে, যেগুলোকে পবিত্র ও পুণ্য স্থান বিবেচনা করা হয় । এমন কি কেউ কেউ নিয়মিত যিয়ারত করে ও পার্থিব কামনা-বাসনায় মানত
করে, মাজারে টাকা পয়সা, ফুল, মোমবাতি, আগরবাতি ইত্যাদি দেয়াকে ছওয়াব মনে করে ! এই সুফিবাদ দ্বারা পরবর্তীতে বৈষ্ণবধর্ম, লৌকিক মরমিবাদ, বাউল ধর্মমত ও অন্যান্য ভক্তিবাদও কমবেশি প্রভাবিত হয়।

Saturday, February 1, 2014

বই মেলা

0 comments
আজকের বৃহত্তর বই মেলার শুরুটা ছিল একেবারেই ভিন্ন রকম। ছোট যে বীজ বপন হয়েছিল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে তা এখন মহিরুহ হয়ে উঠেছে। ক্রমেই বেড়ে চলছে এই প্রাণের রাজত্ব। বইমেলা যা অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামেও পরিচিত। বইমেলা'র জন্মদাতা হিসেবে উঠে আসে কয়েককটি নাম। যার মধ্যে রয়েছেন চিত্তরঞ্জন সাহা ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদ্দীন।

যেভাবে শুরু :


বইমেলার কথা প্রথম ভাবতে শুরু করেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদ্দীন। ১৯৬৫ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি (তৎকালীন পাবলিক লাইব্রেরি) প্রাঙ্গণে শিশু বইমেলার আয়োজন করেন। এ থেকেই শুরু হয় বইমেলার প্রথম যাত্রা।

তবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে বইমেলার বীজ বপনকারী হিসেবে শোনা যায় মুক্তধারা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জণ সাহাকে। একাই শুরু করেছিলেন। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে একটি চট বিছিয়ে কিছু বই নিয়ে বসেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা।

সময়টা ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। দেশ স্বাধীন হয়েছে মাত্র ৫৪ দিন আগে। ঢাকার রাস্তাঘাট, বাজার, হসপিটালে যুদ্ধের দগদগে স্মৃতি তখনও স্পষ্টভাবে লেগে আছে। সবার মনে বিধ্বস্ত সব স্মৃতি। সেই সময়টিতে চিত্তরঞ্জণ দেখেন অন্য রং। আঁকেন অন্য জীবনের ছবি। নতুন বাংলাদেশ গড়ার সময়টাতে চিত্তরঞ্জন এই উর্বর মাটিতে বুনে দিলেন বইমেলার বীজ।

তিনি ওই দিন বাংলা একাডেমি কর্মকর্তাদের কাছে অনুমতি নিয়ে বটতলায় বই নিয়ে বসেছিলেন। টেবিল চেয়ারের আয়োজন ছিল না বলে চট কিনে তাতে বই সাজিয়েছিলেন। ওই দিনই হলো আমাদের বই মেলার উদ্বোধন।

৭১ সালে যুদ্ধের সময় কলকাতায় তখন বাংলাদেশের বহু শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক আশ্রয় নিয়েছেন। কলকাতায় গিয়ে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর সেই সব লেখকদের লেখা বই প্রকাশের উদ্যোগ নেন। মুক্তধারা প্রকাশনীর জন্ম হয়।

ওই ৩২টি বই ছিল বাংলাদেশের জন্মের সময়ে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম অভিব্যক্তি। আর কলকাতায় প্রকাশিত ও সেখান থেকে বয়ে আনা ওই বইগুলো ছিল ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারির বই মেলায় বিক্রির জন্য আনা প্রথম বই। কলকাতায় যে প্রকাশনা সংস্থা থেকে বইগুলো প্রকাশিত হয়েছিল তার নাম 'মুক্তধারা'। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকেই চিত্তরঞ্জন তার প্রকাশনা সংস্থার এমন নাম বেছে নিয়েছিলেন।

১৯৭২ সালে শুরু করে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত প্রায় একাই একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা চালিয়ে যান চিত্তরঞ্জন। ১৯৭৬ সালে অনুপ্রাণিত হয়ে তার সাথে যোগ দেন আরো কয়েকজন। শুরু হয় মেলার বিস্তারের যাত্রা।

এর দু’বছর পর ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী মেলার সাথে বাংলা একাডেমিকে সরাসরি সংযুক্ত করেন। জাতীয় গ্রন্থ উন্নয়ন সংস্থার সহায়তায় এ মেলাটি আয়োজিত হয়। ১৯৭৯ সালে মেলার সাথে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এ সংস্থাটিও সংগঠিত করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা।

১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা সাহেব যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন সম্পন্ন করেন। কিন্তু স্বৈরাচারি এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দুজন ছাত্র নিহত হয়। ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর সেই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়।

এরপর থেকে বিরতিহীন ভাবে চলতে থাকে বই মেলা। এ যাত্রা সময়ের সাথে সাথে আরো গতিময় হয়ে ওঠে। এখন মেলাকে ঘিরেই প্রকাশনা শিল্প শক্ত অবস্থানে দাড়াচ্ছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনেও ছড়িয়ে পড়েছে এর সুনাম।

মেলা শুধু নিজের প্রসারই নয় পাঠক প্রসারও ঘটাচ্ছে। প্রতিবছরই যেসব অসংখ্য পাঠককে দোলা দিয়ে বইয়ের ভালোবাসায় আটকে রাখে। আরো বেশি বই বান্ধব পাঠক তৈরি হচ্ছে বইমেলায়। লেখকরাও নতুন করে স্বপ্ন বুনেন। পাঠক-লেখক- প্রকাশকদের বুকে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের বইমেলা।