Saturday, February 1, 2014

বই মেলা

0 comments
আজকের বৃহত্তর বই মেলার শুরুটা ছিল একেবারেই ভিন্ন রকম। ছোট যে বীজ বপন হয়েছিল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে তা এখন মহিরুহ হয়ে উঠেছে। ক্রমেই বেড়ে চলছে এই প্রাণের রাজত্ব। বইমেলা যা অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামেও পরিচিত। বইমেলা'র জন্মদাতা হিসেবে উঠে আসে কয়েককটি নাম। যার মধ্যে রয়েছেন চিত্তরঞ্জন সাহা ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদ্দীন।

যেভাবে শুরু :


বইমেলার কথা প্রথম ভাবতে শুরু করেন জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদ্দীন। ১৯৬৫ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি (তৎকালীন পাবলিক লাইব্রেরি) প্রাঙ্গণে শিশু বইমেলার আয়োজন করেন। এ থেকেই শুরু হয় বইমেলার প্রথম যাত্রা।

তবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে বইমেলার বীজ বপনকারী হিসেবে শোনা যায় মুক্তধারা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জণ সাহাকে। একাই শুরু করেছিলেন। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে একটি চট বিছিয়ে কিছু বই নিয়ে বসেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা।

সময়টা ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। দেশ স্বাধীন হয়েছে মাত্র ৫৪ দিন আগে। ঢাকার রাস্তাঘাট, বাজার, হসপিটালে যুদ্ধের দগদগে স্মৃতি তখনও স্পষ্টভাবে লেগে আছে। সবার মনে বিধ্বস্ত সব স্মৃতি। সেই সময়টিতে চিত্তরঞ্জণ দেখেন অন্য রং। আঁকেন অন্য জীবনের ছবি। নতুন বাংলাদেশ গড়ার সময়টাতে চিত্তরঞ্জন এই উর্বর মাটিতে বুনে দিলেন বইমেলার বীজ।

তিনি ওই দিন বাংলা একাডেমি কর্মকর্তাদের কাছে অনুমতি নিয়ে বটতলায় বই নিয়ে বসেছিলেন। টেবিল চেয়ারের আয়োজন ছিল না বলে চট কিনে তাতে বই সাজিয়েছিলেন। ওই দিনই হলো আমাদের বই মেলার উদ্বোধন।

৭১ সালে যুদ্ধের সময় কলকাতায় তখন বাংলাদেশের বহু শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক আশ্রয় নিয়েছেন। কলকাতায় গিয়ে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর সেই সব লেখকদের লেখা বই প্রকাশের উদ্যোগ নেন। মুক্তধারা প্রকাশনীর জন্ম হয়।

ওই ৩২টি বই ছিল বাংলাদেশের জন্মের সময়ে বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম অভিব্যক্তি। আর কলকাতায় প্রকাশিত ও সেখান থেকে বয়ে আনা ওই বইগুলো ছিল ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারির বই মেলায় বিক্রির জন্য আনা প্রথম বই। কলকাতায় যে প্রকাশনা সংস্থা থেকে বইগুলো প্রকাশিত হয়েছিল তার নাম 'মুক্তধারা'। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকেই চিত্তরঞ্জন তার প্রকাশনা সংস্থার এমন নাম বেছে নিয়েছিলেন।

১৯৭২ সালে শুরু করে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত প্রায় একাই একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা চালিয়ে যান চিত্তরঞ্জন। ১৯৭৬ সালে অনুপ্রাণিত হয়ে তার সাথে যোগ দেন আরো কয়েকজন। শুরু হয় মেলার বিস্তারের যাত্রা।

এর দু’বছর পর ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী মেলার সাথে বাংলা একাডেমিকে সরাসরি সংযুক্ত করেন। জাতীয় গ্রন্থ উন্নয়ন সংস্থার সহায়তায় এ মেলাটি আয়োজিত হয়। ১৯৭৯ সালে মেলার সাথে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এ সংস্থাটিও সংগঠিত করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা।

১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা সাহেব যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন সম্পন্ন করেন। কিন্তু স্বৈরাচারি এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দুজন ছাত্র নিহত হয়। ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর সেই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়।

এরপর থেকে বিরতিহীন ভাবে চলতে থাকে বই মেলা। এ যাত্রা সময়ের সাথে সাথে আরো গতিময় হয়ে ওঠে। এখন মেলাকে ঘিরেই প্রকাশনা শিল্প শক্ত অবস্থানে দাড়াচ্ছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনেও ছড়িয়ে পড়েছে এর সুনাম।

মেলা শুধু নিজের প্রসারই নয় পাঠক প্রসারও ঘটাচ্ছে। প্রতিবছরই যেসব অসংখ্য পাঠককে দোলা দিয়ে বইয়ের ভালোবাসায় আটকে রাখে। আরো বেশি বই বান্ধব পাঠক তৈরি হচ্ছে বইমেলায়। লেখকরাও নতুন করে স্বপ্ন বুনেন। পাঠক-লেখক- প্রকাশকদের বুকে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের বইমেলা।

0 comments:

Post a Comment