০০ এস এম রাজু ০০
‘বিল চলন গ্রাম কলম কাঁচাগোল্লার খ্যাতি
অর্ধ বালেশ্বরী রানী ভবানীর স্মৃতি
উত্তরা গণভবন রাজ-রাজন্যের ধাম
কাব্যে ইতিহাসে আছে নাটোরের নাম’।
ঐতিহ্যের জৌলুস, অতীতের রাজ-রাজন্যের স্মৃতি, প্রাচীনত্ব আর ইতিহাসের সোনালি দিনগুলোর নীরব সাক্ষী বরেন্দ্র অঞ্চলে বিখ্যাত জেলা নাটোর। জেলাটি রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত।
নামকরণের ইতিহাস
জনশ্রুতি আছে এখানকার কোনো এক স্থান ব্যাঙ সাপকে গ্রাস করেছিল এবং তা দেখে কয়েকজন বালিকা নৃত্য করেছিল। এ নৃত্যকে উপলক্ষ করে ওই স্থানের নাম হয় নাট্যপুর। পর্যায়ক্রমে নাট্যপুর, নাটাপুর, নাট্টর ও নাটোর হয়েছে। অন্য তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমান জেলা সদরের অবস্থান এত নিচু ছিল যে, এখানে পায়ে চলাচল প্রায় অসম্ভব। তাই স্থানটিকে বলা হতো ‘নাতর’ (না-অসম্ভব এবং তর-গমন); যা থেকে কালক্রমে নাটোর নামের উৎপত্তি হয়েছে। অন্য অভিমত হচ্ছে জেলা সদরের পাশ দিয়ে প্রবহমান নারদ নদীর নাম থেকে কালক্রমে নাটোর জেলার নামকরণ হয়েছে।
আয়তন ও অবস্থান
আয়তনের ভিত্তিতে নাটোর জেলা বাংলাদেশের ৩৬তম বৃহত্তম জেলা। এই জেলার মোট আয়তন ১৮৯৬.০৫ বর্গ কিমি, যা সমগ্র বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১.২৮%। ভৌগলিকভাবে নাটোর জেলা ২৪০২৫ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৪০৫র্৮ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮০০র্১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৮৮০৩০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। নাটোর জেলার উত্তরে নওগাঁ ও বগুড়া জেলা। দক্ষিণে পাবনা ও বগুড়া জেলা, পূর্বে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে রাজশাহী জেলা।
প্রশাসনিক পটভূমি
প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি পুণ্ড্র রাজ্যের অন্তর্গত পুণ্ড্রবর্ধন নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে মুঘল আমলে শাসনব্যবস্থা জমিদারিতে পরিণত হয়। নাটোর জমিদারির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা রঘুনন্দন পুঠিয়া রাজার উকিল হিসেবে নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর দরবারে কাজ করতেন। রঘুনন্দনের অগ্রজ রামজীবন জমিদারির প্রশাসনে সুখ্যাতি অর্জন করেন এবং এর জন্য নবাব ১৭০৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে অনেক জমিদারি পুরস্কার হিসেবে প্রদান করেন। ১৭৩০ সাল পর্যন্ত- রামজীবন এ জমিদারি পরিচালনা করেন। তার মৃত্যুর পর দত্তক পুত্র রামকান্ত- জমিদারি লাভ করে। ১৭৪৮ সালে রাজকাণ্ডের মৃত্যুর পর তার পত্নী রানী ভবানী জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব পান। তার রাজধানী ছিল রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, রংপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ জেলায়। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে বাংলা ইংরেজদের হাতে চলে যায়। ইংরেজ বেনিয়ারা এদেশে তাদের শাসন কার্যকর করতে চাইলেও রানী ভবানী ইংরেজদের সম¯- আধিপত্য অস্বীকার করে স্বাধীনভাবে তার জমিদারি পরিচালনা করে। ১৮০২ সালে রানী ভবানীর মৃত্যুর পর পর্যায়ক্রমে শাসনভার ইংরেজদের হাতে চলে যায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর নাটোরসহ এতদঞ্চল পূর্ব পাকিস্থানের অংশ হিসেবে শাসিত হতে থাকে। দেশ স্বাধীন হলে রাজশাহী বিভাগের মহকুমা হিসেবে শাসিত হয় এবং সবশেষে ১৯৮৪ সালে এটি জেলায় পরিণত হয়। বর্তমানে নাটোর জেলায় ৬টি উপজেলা, ৪টি পৌরসভা, ৫২টি ইউনিয়ন, ৩৬টি ওয়ার্ড, ৯৩টি মহল্লা, ১২৭২টি মৌজা ও ১৩৭৭টি গ্রাম আছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে নাটোর সদর, গুরুদাসপুর, লালপুর, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া।
নদ-নদী: আত্রাই, বড়াল, নারদ, নন্দকুঁজা ইত্যাদি।
চলনবিল জেলার প্রধান বিল।
জলবায়ু: সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩৭.৮০ সে. এবং সর্বনিম্ন ১১.২০ সে.। বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৮৫২ মিমি।
দর্শনীয় স্থানসমূহ
উত্তরা গণভবন (সাবেক দীঘাপাতিয়া রাজপ্রাসাদ) চলনবিল, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল, বাংলাদেশের উষ্ণতম স্থান লালপুর, দয়ারামপুর, রাজবাড়ি, লালপুরের বুধপাড়া কালীমন্দির, হুরুম চৌধুরীর বাগান, গুরুদাসপুরের চলবনবিল জাদুঘর ইত্যাদি।
যোগাযোগ: ঢাকা থেকে সড়ক পথে হানিফ, এনপি এলিগেন্স, মডার্ন প্রভৃতি পরিবহনে নাটোর যাওয়া যায়। ঢাকা-নাটোরের দুরুত্ব ২২৩ কিমি এবং বাসে যেতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় লাগে।
রানী ভবানী রাজপ্রাসাদ
নাটোর জেলা শহরের বঙ্গজ্জল এলাকায় রয়েছে রানী ভবানী রাজপ্রাসাদ। তোরণ পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়বে রাজবাড়ির কামান। রাজবাড়িটির ভেতরে রয়েছে ৬টি দিঘি। আর পুরো রাজবাড়িটি বাইরের দিক থেকে লেক আকৃতির দিঘি দিয়ে ঘেরা। ভেতরে রয়েছে বড় তরফ ভবন নামে পরিচিত রানী ভবানীর রাজপ্রাসাদ। সপ্তদশ শতাব্দিতে নির্মিত সুরম্য এ ভবনটি আজও সবার দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। জানা যায়, রাজা রামজীবন ১৭০৬-১৭১০ সালের কোনো এক সময় পুঠিয়ার রাজার নিকট থেকে প্রায় ১৮০ বিঘার একটি বিল দান হিসেবে গ্রহণ করে সেখানে এই রাজপ্রাসাদ গড়ে তোলেন। রাজা রামজীবনের একমাত্র ছেলে কলিকা প্রসাদ মারা গেলে তার দত্তক ছেলের সঙ্গে রানী ভবানীর বিয়ে দেন।
চলনবিল
দেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিলের একটি অংশ পড়েছে নাটোরে। জেলার সিংড়া উপজেলায় রয়েছে চলনবিলের বড় একটি অংশ। এছাড়া সিরাজগঞ্জের হাটিকুমড়ুল থেকে বনপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক তৈরি হয়েছে চলনবিলের ওপর দিয়েই। শীতে এসব বিলের পানি শুকিয়ে গেলেও বর্ষায় থাকে পরিপূর্ণ। সড়কের দু’পাশে এ সময় যেদিকে চোখ যায় শুধু অথৈ জলরাশি। নিজস্ব গাড়িতে গেলে যাত্রাপথেই চলনবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব।
চলনবিল জাদুঘর
জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর গ্রামে আছে চলনবিল জাদুঘর। স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হামিদ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নিজ বাড়িতে ১৯৭৮ সালে গড়ে তুলেছেন বিচিত্র এ জাদুঘর। চলনবিলে প্রাপ্ত নানা নিদর্শন, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ছাড়াও এখানে আছে অনেক দুর্লভ সংগ্রহ। নাটোর থেকে বাসে গুরুদাসপুর উপজেলায় এসে সেখান থেকে নদী পার হয়ে রিকশায় আসা যাবে খুবজিপুর গ্রামের এ জাদুঘরে। শনিবার জাদুঘরটি বন্ধ থাকে।
হাইতি বিল
জেলাশহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে নলডাঙ্গা উপজেলায় আছে হাইতি বিল। প্রায় ৪৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ বিলটি দেশের সবচেয়ে গভীর বিল। প্রায় বারো মিটার গভীর এ বিলে সারা বছরই পানি থাকে। তবে বর্ষায় পানির পরিমাণ বেড়ে যায় অনেক বেশি।
→

What a stuff of un-аmbіguity anԁ preservenesѕ of
ReplyDeletevaluable know-how on the topic of unexpected emotions.
Feel free to suгf to my blog post chatroulette