অটিজম হলো শারীরিক অথবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর মতো জৈবিক সমস্যা বা ইমোশনাল বেস্ট ডিজঅর্ডার। এটা একটা স্নায়ুবিক সমস্যা, যেখানে সামাজিক কথা আদানপ্রদান, আচরণ এবং বুদ্ধি সম্পর্কিত সমস্যা থাকে। অনেক সময় তারা দেখা, শোনা এবং শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাড়াচাড়াতে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। অটিজম ব্যক্তির সেনসরি রেজিস্ট্রেশন, মডুলেশন এবং ইনটিগ্রেশন-এ সমস্যা থাকে এবং অনেক ব্যক্তিগত পরীক্ষায় পাওয়া গেছে যে, অটিজম শিশুর সেরিবেলাম এবং লিমবিক অঞ্চলে বুদ্ধিগত সমস্যা থাকে।
অটিজমের প্রধান কারণ এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি কিছু কারণ চিহ্নিত হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জৈবিক এবং জিনগত কারণ, ক্রোমজমাল কারণ, অস্বাভাবিকগত ব্রেনের গঠন, রক্তের সম্পর্ক, গর্ভবতী মা বিভিন্ন কারণে বিষণœতায় বা উদ্বিগ্ন থাকলে, জন্মের পর শিশু বিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ, পরিবেশ ও অনুভূতি না পেলে, কিছু টিকাদান ইত্যাদি।
অটিজম এমন একটি কন্ডিশন যা কখনো ভালো হবার নয়। এটাকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হয়। বাচ্চা কতটুকু ভালো হবে তা নির্ভর করে বাচ্চার সমস্যার ওপর। সমস্যা কম হলে উন্নতি বেশি হবে। বাংলাদেশে প্রতি ৫০০ জনে একজন অটিস্টিক শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশে ২.৫ লাখ শিশু অটিস্টিক। ইন্ডিয়াতেও ৫০০ জনে একজন, আমেরিকায় প্রতি ১০,০০০ জন শিশুর মধ্যে ৪.৫ জন শিশু অটিস্টিক। অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে ১৯৯০-২০০০ সালের মধ্যে। ছেলেরা বেশি ঝুঁকি সম্পন্ন মেয়েদের তুলনায়। এর অনুপাত ৪:৩:১। বয়স্ক পিতা অটিজম হওয়ার জন্য বেশি দায়ী বয়স্ক মায়ের তুলনায়। কারণ বেশি বয়স্ক স্পার্ম দিয়ে মিউটেশন কঠিন হয়। অটিজম সাধারণত সকল জাতি, বর্ণ, গোত্র ও দেশে দেখা যায়।
অটিজমকে আমরা কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারি:
জন্মের আগে গর্ভবতী মায়েদের অটিজম বিষয়ে একটি ধারণা থাকা প্রয়োজন। একজন মহিলা গর্ভবতী হওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তার দ্বারা পরীক্ষিত হওয়া প্রয়োজন যে, বাচ্চা ধারণ করার সকল সামর্থ্য (শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক) তার আছে। গর্ভাবস্থায় পরিমাণমতো পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত। নিয়মিত উদ্দীপনামূলক নাটক এবং অন্যান্য টেলিভিশন প্রোগ্রাম দেখা উচিত। গর্ভাবস্থায় কোনো অবস্থাতেই বিষণœ বা উদ্বিগ্ন হওয়া বা প্রচণ্ড ভয় পাওয়া এবং রাগ করা যাবে না। বেশি পরিশ্রম করা যাবে না। অধিক দূরত্ব এবং ঝাঁকুনি সম্পন্ন রাস্তা পরিভ্রমণ করা যাবে না। গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল টিকা সময়মতো নিতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। গাড়ির ও কলকারখানা কালো ধোঁয়া এবং রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকতে হবে। বাচ্চা প্রসবের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা (প্রশিক্ষিত দাই, অ্যাম্বুলেন্স, অর্থ, জায়গা) আগে থেকেই করে রাখতে হবে। বাচ্চা প্রসবের সময় কোনো রকমের জটিলটা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। জন্মের পর বাচ্চাকে অবশ্যই মায়ের শাল দুধ পান করাতে হবে। মায়ের বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে না পাওয়া গেলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণমূলক খাদ্য দিতে হবে। বাচ্চা জন্মের পর থেকেই যেন প্রাতঃউদ্দীপনামূলক পরিবেশ পায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চাকে যথেষ্ট পরিমাণ কার্যকরি সময় দিতে হবে গল্প, খেলা বা বেড়ানোর মাধ্যমে। শুধু মায়ের বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গেই নয়, প্রতিবেশীর সঙ্গেও বাচ্চার একটি সুসম্পর্ক এবং যোগাযোগ থাকতে হবে। বাচ্চা জন্মের পরের সকল টিকা সময়মতো নিতে হবে। টিকা নেয়ার সময় মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ভালো করে দেখে নিতে হবে। বাচ্চা যেন কোনো অবস্থাতেই মাথায় বা শরীরের কোনো জায়গায় কোনো রকমের আঘাত না পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বছরে অন্তত একবার বাচ্চাকে তার স্বাস্থ্য এবং বিকাশগত পরীক্ষা করাতে হবে। জন্মের পর থেকেই বাচ্চাকে যথেষ্ট পরিমাণ খেলার উপকরণ ও খেলার সাথি দিতে হবে। বাসায় একটি করে খেলার কর্নার রাখতে হবে। তিন বছর বয়স থেকেই বাচ্চাকে প্রাক প্রাথমিক প্রোগ্রামের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বাচ্চার যদি কোনোরকম অটিজম বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত বা সন্দেহ হয় তাহলে পিতামাতাকে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আমাদের শিশু বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার মহল, পিতামাতা, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের অটিজম বিষয়ে একটি সমূহ ধারণা দিতে হবে, যাতে করে নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠাতে পারেন। একজন অটিজম শিশুরও রয়েছে সাধারণ শিশুর মতো অফুরন্ত সম্ভাবনা, যদি তাকে পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ দেয়া হয়। আমাদের সরকার এবং সুধিসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং সকলের প্রচেষ্টায় গড়ে তুলতে পারি এক নতুন অধ্যায়। যেখানে অটিজম শিশুরা হাসবে খেলবে এবং উপভোগ করবে তাদের পরিপূর্ণ বিকাশের পূর্ণ অধিকার। আমাদের এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে যেখানে অটিজম শিশুর বিকাশের জন্য বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করা হবে, প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং অটিজম বিষয়ক রিসার্স করতে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
অকুপেশনালথেরাপিস্ট, শিশু প্রতিবন্ধী চিকিৎসা ও পূনর্বাসনে বিশেষজ্ঞ, শ্যামলী, ঢাকা
মো. জহির উদ্দিন আকন্দ
Friday, April 30, 2010
Wednesday, April 28, 2010
চড়ক পূজা
প্রতিবছরেই ২শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী ভয়ঙ্কর গা শিউরে ওঠা চড়ক উত্সব পালন হয়ে থাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। ফল পূজা, কাদা পূজা, নীল পূজার মতো সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন পূজা শেষে হয় এই ভয়ঙ্কর চড়কপূজা। চড়ক পূজায় পিঠে বাণ (বিশেষ বড়শি) ফুড়িয়ে চড়ক গাছের সঙ্গে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা বিশেষ চরকার ঝুলন্ত মাথায় দড়ির সঙ্গে বেঁধে দেয়া হয় পিঠের বড়শি। আর বাণবিদ্ধ সন্ন্যাসীরা ঝুলতে থাকে শূন্যে। রাতে নীলপূজার পর সন্ন্যাসীরা সবাই থাকেন নির্জলা উপোস। পরদিন বিকালে চড়কপূজা শেষে উপোস ভাঙেন তারা।
প্রথমে বালা (শিবপাঁচালী পাঠক) এসে মন্ত্র পড়া শুরু করলে, সন্ন্যাসীরা শিবধ্বনি দিতে দিতে নদীতে স্নান করতে যান। স্নান করে ফেরার সময় প্রত্যেকে মাটির কলসি ভরে জল আনেন। এরপর চড়ক গাছের গোড়ায় গোল হয়ে দাঁড়ান সন্ন্যাসীরা। আবারও শিবপাঁচালী পাঠ করতে লাগেন বালা। এবার সন্ন্যাসীরা সবাই চড়ক গাছে জল ঢেলে ভক্তি জানিয়ে প্রণাম করে চলে যান ফাঁকা একটি জায়গায়। সেখানে তাদেরকে বাণ বিদ্ধ তথা পিঠে বর্শি পোঠানো হয়। জলজ্যান্ত মানুষরা (সন্ন্যাসী) নিজের শরীর বানে (বড়শি) বিঁধে চড়ক গাছে ঝুলে ২৫ ফুট ওপরে শূন্যে ঘুরেন। সন্ন্যাসীর আশীর্বাদ লাভের আশায় শিশুসন্তানদের শূন্যে তুল দেন অভিভাবকরা। সন্ন্যাসীরা শূন্যে ঘুরতে ঘুরতে শিশুদের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেন। অনেক সময় কোলেও তুলে নেন। এক হাতে থাকা বেতের তৈরি বিশেষ লাঠি ঘোরান। অন্য হাতে দর্শনার্থীদের উদ্দেশে বাতাসা ছিটান ঝুলন্ত সন্ন্যাসীরা। দেবাদিদেব-মহাদেব শিবঠাকুরের সন্তুষ্টি লাভের আশায় প্রতিবছর এদিন এই নরক যন্ত্রণা ভোগ করেন সন্ন্যাসী শিবভক্তরা। তাদের বিশ্বাস—এ জগতে যারা স্বেচ্ছায় শিবঠাকুরের সন্তুষ্টি লাভের জন্য এত কঠিন আরাধনার পথ বেছে নিয়েছেন, পরলোকে শিবঠাকুর তাদের স্বর্গে যাওয়ার বর দেবেন।
চড়কপূজার সময় : চৈত্র মাসের শেষ থেকে বৈশাখ মাসের প্রথম পর্যন্ত ভক্তরা মহাদেব শিবঠাকুরের আরাধনা করেন। মহাদেবের সন্তুষ্টি লাভের আশায় সপ্তাহব্যাপী নানা পূজার আয়োজন করেন তারা। এরই সর্বশেষ আয়োজন চড়কপূজা। প্রতিবছর ভারতীয় পঞ্জিকার ২ বৈশাখ ও বাংলাদেশের ৩ বৈশাখ এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
চড়কপূজার ইতিহাস : এই ঐতিহাসিক চড়কপূজা কবে কীভাবে শুরু হয়েছিল, তার সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে জনশ্রুতি রয়েছে, ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পূজা প্রথম শুরু করেন। এই রাজবংশের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, আজকের মহেশপুর জেলা একসময় সুলতানপুর পরগনা নামে পরিচিত ছিল। সুলতানপুর পরগনার শাসনকর্তা ছিলেন সূর্য মাঝি নামের এক জমিদার। সে সময়ে এ এলাকারই ১৭ ব্রাহ্মণ চক্রান্ত করে সূর্য মাঝিকে হত্যা করেন এবং পরগনার মালিকানা দখল ও ভাগ করে নেন। সে সময়ের মহেশপুরের জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ হলেন হরিনারায়ণ চৌধুরী। তার সময় জমিদাররা মহেশপুরের প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেন। দেবতাদের সন্তুষ্ট রাখতে বিভিন্ন ধরনের পূজার আয়োজন করেন তারা। জনশ্রুতি আছে, তত্কালীন সময়ে কপোতাক্ষ ও বেতনা নদীর সংযোগস্থলে ধীরে ধীরে একটি নতুন চর জেগে ওঠে। এই চরে স্বয়ং আবির্ভূত হন মহেশ্বর, যার অন্য নাম বুড়ো শিব। তার নামানুসারেই প্রতিষ্ঠিত হয় মহেশ্বর (শিব) মন্দির। এর কিছুকাল পর ফতেপুর কপোতাক্ষ নদের পাশে আরও একটি চর জাগে। সেই চরে ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে ফতেপুর এলাকার জমিদার বংশের লোকজন অন্যান্য পূজার সঙ্গে চড়কপূজা শুরু করেন। রাজপরিবারের লোকজন এই পূজা আরম্ভ করলেও চড়কপূজা কখনই রাজ-রাজড়াদের পূজা ছিল না। এটি ছিল নিতান্তই হিন্দু সমাজের লোকসংস্কৃতি। পূজার সন্ন্যাসীরা প্রায় সবাই হিন্দু ধর্মের কথিত নিচু সম্প্রদায়ের মানুষ। এখনও এ পূজায় কোনো ব্রাহ্মণের প্রয়োজন পড়ে না।
সন্ন্যাসীরা জানান, শরীরে বড়শি ফোঁড়ানোর ফলে বড় বড় ক্ষতের সৃষ্টি হলেও রক্ত বের হয় সামান্য। আর এজন্য কোনো ওষুধেরও প্রয়োজন হয় না। ক্ষতস্থানে পূজোয় ব্যবহৃত সিঁদুর টিপে দিলেই হয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করে ৫ দিন ধরে চলে লোকজ মেলা। ৩ বৈশাখ চড়কপূজা অনুষ্ঠিত হলেও পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে ৫ বৈশাখ পর্যন্ত চড়ক মেলা চলে।
ছবি
প্রথমে বালা (শিবপাঁচালী পাঠক) এসে মন্ত্র পড়া শুরু করলে, সন্ন্যাসীরা শিবধ্বনি দিতে দিতে নদীতে স্নান করতে যান। স্নান করে ফেরার সময় প্রত্যেকে মাটির কলসি ভরে জল আনেন। এরপর চড়ক গাছের গোড়ায় গোল হয়ে দাঁড়ান সন্ন্যাসীরা। আবারও শিবপাঁচালী পাঠ করতে লাগেন বালা। এবার সন্ন্যাসীরা সবাই চড়ক গাছে জল ঢেলে ভক্তি জানিয়ে প্রণাম করে চলে যান ফাঁকা একটি জায়গায়। সেখানে তাদেরকে বাণ বিদ্ধ তথা পিঠে বর্শি পোঠানো হয়। জলজ্যান্ত মানুষরা (সন্ন্যাসী) নিজের শরীর বানে (বড়শি) বিঁধে চড়ক গাছে ঝুলে ২৫ ফুট ওপরে শূন্যে ঘুরেন। সন্ন্যাসীর আশীর্বাদ লাভের আশায় শিশুসন্তানদের শূন্যে তুল দেন অভিভাবকরা। সন্ন্যাসীরা শূন্যে ঘুরতে ঘুরতে শিশুদের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেন। অনেক সময় কোলেও তুলে নেন। এক হাতে থাকা বেতের তৈরি বিশেষ লাঠি ঘোরান। অন্য হাতে দর্শনার্থীদের উদ্দেশে বাতাসা ছিটান ঝুলন্ত সন্ন্যাসীরা। দেবাদিদেব-মহাদেব শিবঠাকুরের সন্তুষ্টি লাভের আশায় প্রতিবছর এদিন এই নরক যন্ত্রণা ভোগ করেন সন্ন্যাসী শিবভক্তরা। তাদের বিশ্বাস—এ জগতে যারা স্বেচ্ছায় শিবঠাকুরের সন্তুষ্টি লাভের জন্য এত কঠিন আরাধনার পথ বেছে নিয়েছেন, পরলোকে শিবঠাকুর তাদের স্বর্গে যাওয়ার বর দেবেন।
চড়কপূজার সময় : চৈত্র মাসের শেষ থেকে বৈশাখ মাসের প্রথম পর্যন্ত ভক্তরা মহাদেব শিবঠাকুরের আরাধনা করেন। মহাদেবের সন্তুষ্টি লাভের আশায় সপ্তাহব্যাপী নানা পূজার আয়োজন করেন তারা। এরই সর্বশেষ আয়োজন চড়কপূজা। প্রতিবছর ভারতীয় পঞ্জিকার ২ বৈশাখ ও বাংলাদেশের ৩ বৈশাখ এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
চড়কপূজার ইতিহাস : এই ঐতিহাসিক চড়কপূজা কবে কীভাবে শুরু হয়েছিল, তার সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে জনশ্রুতি রয়েছে, ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পূজা প্রথম শুরু করেন। এই রাজবংশের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, আজকের মহেশপুর জেলা একসময় সুলতানপুর পরগনা নামে পরিচিত ছিল। সুলতানপুর পরগনার শাসনকর্তা ছিলেন সূর্য মাঝি নামের এক জমিদার। সে সময়ে এ এলাকারই ১৭ ব্রাহ্মণ চক্রান্ত করে সূর্য মাঝিকে হত্যা করেন এবং পরগনার মালিকানা দখল ও ভাগ করে নেন। সে সময়ের মহেশপুরের জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ হলেন হরিনারায়ণ চৌধুরী। তার সময় জমিদাররা মহেশপুরের প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেন। দেবতাদের সন্তুষ্ট রাখতে বিভিন্ন ধরনের পূজার আয়োজন করেন তারা। জনশ্রুতি আছে, তত্কালীন সময়ে কপোতাক্ষ ও বেতনা নদীর সংযোগস্থলে ধীরে ধীরে একটি নতুন চর জেগে ওঠে। এই চরে স্বয়ং আবির্ভূত হন মহেশ্বর, যার অন্য নাম বুড়ো শিব। তার নামানুসারেই প্রতিষ্ঠিত হয় মহেশ্বর (শিব) মন্দির। এর কিছুকাল পর ফতেপুর কপোতাক্ষ নদের পাশে আরও একটি চর জাগে। সেই চরে ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে ফতেপুর এলাকার জমিদার বংশের লোকজন অন্যান্য পূজার সঙ্গে চড়কপূজা শুরু করেন। রাজপরিবারের লোকজন এই পূজা আরম্ভ করলেও চড়কপূজা কখনই রাজ-রাজড়াদের পূজা ছিল না। এটি ছিল নিতান্তই হিন্দু সমাজের লোকসংস্কৃতি। পূজার সন্ন্যাসীরা প্রায় সবাই হিন্দু ধর্মের কথিত নিচু সম্প্রদায়ের মানুষ। এখনও এ পূজায় কোনো ব্রাহ্মণের প্রয়োজন পড়ে না।
সন্ন্যাসীরা জানান, শরীরে বড়শি ফোঁড়ানোর ফলে বড় বড় ক্ষতের সৃষ্টি হলেও রক্ত বের হয় সামান্য। আর এজন্য কোনো ওষুধেরও প্রয়োজন হয় না। ক্ষতস্থানে পূজোয় ব্যবহৃত সিঁদুর টিপে দিলেই হয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করে ৫ দিন ধরে চলে লোকজ মেলা। ৩ বৈশাখ চড়কপূজা অনুষ্ঠিত হলেও পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে ৫ বৈশাখ পর্যন্ত চড়ক মেলা চলে।
ছবি
![]() |
| চড়ক পূজা |
চুলের যত্ন
রূপসচেতন নারীদের চুল নিয়ে ভাবনার যেমন শেষ নেই, তেমনি চুল নিয়ে সমস্যারও কমতি নেই। শীত-গরম সব সময়ই এর সমস্যা লেগে থাকে। চুলের খুশকি, চুল পড়া ছাড়াও নানা ধরনের চুলের যন্ত্রণায় কম-বেশি সবাই ভুগে থাকি। চুলের সমস্যায় অবহেলা না করে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে সমাধান করে ফেলা উচিত। কেননা নানা সমস্যায় চুল পড়তে পারে, এর মধ্যে খুশকিও একটা কারণ ধরা যায়। পরিচর্যার অভাবে চুল নিষ্প্রাণ হয়ে রুক্ষ হয়। আবার কখনও চুলের আগাও ফাটতে দেখা যায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব এর সমাধানে যাওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
চুলে খুশকি কেন হয় : অযত্ন ও অবহেলায় চুলের খুশকির উদ্ভব হয়। এছাড়াও শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলাবালিও এর অন্যতম কারণ। এ সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। চুল পড়ে যাওয়ার আর একটি কারণ হচ্ছে পেট। তাই পেটের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা জরুরি।
খুশকির ধরন : খুশকি সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি আকারে বড়, অন্যটি আকারে বেশ ছোট হয়। ছোট খুশকির তুলনায় বড় খুশকি বেশ মারাত্মক। বড় খুশকি চুল আঁচড়ানোর সময় চুলে ভেসে ওঠে এবং ত্বকে পড়লে ব্রণও হয়। আর ছোট খুশকি আঁঠালো টাইপের হয়, চুলের সঙ্গে ও চিরুণীতে লেগে থাকতে দেখা যায়। এই দুই ধরনের খুশকিই চুল পড়াতে সাহায্য করে। তাই শুরু থেকেই যত্নবান হওয়াটা জরুরি।
চুলের যত্ন : সুন্দর চুল সবারই কাম্য। কিন্তু খুশকিমুক্ত না হলে, চুলের পরিচর্যা ঠিকভাবে না করলে সুন্দর চুল আসা করা যায় না। নিয়ম করে একদিন পরপর চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন এবং পরে কন্ড্রিশনার অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে একদিন পিঁয়াজের রস লাগান চুলে এবং শ্যাম্পু করার আগে অবশ্যই আগের দিন রাতে তেল ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর পরদিন সকালে তুলার সাহায্যে সিরকা ঘষে ঘষে লাগাতে হবে। সিরকা লাগানোর ১ ঘণ্টা পরে শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে একবার মাথায় প্যাক লাগান।
প্রয়োজনীয় টিপস : মেহেদি পাতা বাটার সঙ্গে পরিমাণমত টক দই মিলিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন এবং এই মিশ্রণটি চুলে লাগান। ১ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন ঠাণ্ডা পানি দিয়ে। পরে শ্যাম্পু করে নিন।
ষষ সিকাকাই চুলের জন্য খুব উপকার দেয়। বাজারে প্যাকেটে কিনতে পাওয়া যায় সিকাকাই গুঁড়া চুলে লাগান। সিকাকাইয়ের সঙ্গে আমলকি গুঁড়া ও মেথি গুঁড়া মিশিয়ে লাগান অন্তত সপ্তাহে একদিন, উপকার পাবেন।
ষষ চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে পার্লারের সাহায্য নিতে পারেন। হেয়ার হিসেবে ডিপ কন্ডিশনার ও প্রোটিন ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুল রাফ হওয়া থেকে মুক্তি পাবে ও চুল পড়া বন্ধ হবে।
ষষ জবা ফুল বেটে নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ১০ মিনিট ফুটান। এরপর ঠাণ্ডা করে বোতলে ভরে রাখুন। সব সময় ব্যবহার করুন এই তেল, উপকার পাবেন।
সতর্কতা : খুশকিমুক্ত চুল পেতে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। চুল সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং সঙ্গে, চিরুনি, ব্রাশ, তোয়ালে, বালিশের কভার, বিছানার চাদর এগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। কখনোই অন্যের জিনিস ব্যবহার করা ঠিক হবে না। এমনকি নিজের জিনিসও ব্যবহার করতে দেয়াটা ঠিক হবে না। ব্যস্ততার কারণে যারা নিয়মিত চুলের পরিচর্যা করতে পারেন না তারা মাসে অন্তত ২ বার পার্লারে গিয়ে হেয়ার ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন। পার্লারে গিয়ে হেয়ার স্পা করাতে পারেন। ঝলমলে চুল পেতে এই ট্রিটমেন্টগুলো জরুরি।
চুলে খুশকি কেন হয় : অযত্ন ও অবহেলায় চুলের খুশকির উদ্ভব হয়। এছাড়াও শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলাবালিও এর অন্যতম কারণ। এ সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। চুল পড়ে যাওয়ার আর একটি কারণ হচ্ছে পেট। তাই পেটের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা জরুরি।
খুশকির ধরন : খুশকি সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি আকারে বড়, অন্যটি আকারে বেশ ছোট হয়। ছোট খুশকির তুলনায় বড় খুশকি বেশ মারাত্মক। বড় খুশকি চুল আঁচড়ানোর সময় চুলে ভেসে ওঠে এবং ত্বকে পড়লে ব্রণও হয়। আর ছোট খুশকি আঁঠালো টাইপের হয়, চুলের সঙ্গে ও চিরুণীতে লেগে থাকতে দেখা যায়। এই দুই ধরনের খুশকিই চুল পড়াতে সাহায্য করে। তাই শুরু থেকেই যত্নবান হওয়াটা জরুরি।
চুলের যত্ন : সুন্দর চুল সবারই কাম্য। কিন্তু খুশকিমুক্ত না হলে, চুলের পরিচর্যা ঠিকভাবে না করলে সুন্দর চুল আসা করা যায় না। নিয়ম করে একদিন পরপর চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন এবং পরে কন্ড্রিশনার অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে একদিন পিঁয়াজের রস লাগান চুলে এবং শ্যাম্পু করার আগে অবশ্যই আগের দিন রাতে তেল ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর পরদিন সকালে তুলার সাহায্যে সিরকা ঘষে ঘষে লাগাতে হবে। সিরকা লাগানোর ১ ঘণ্টা পরে শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে একবার মাথায় প্যাক লাগান।
প্রয়োজনীয় টিপস : মেহেদি পাতা বাটার সঙ্গে পরিমাণমত টক দই মিলিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন এবং এই মিশ্রণটি চুলে লাগান। ১ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন ঠাণ্ডা পানি দিয়ে। পরে শ্যাম্পু করে নিন।
ষষ সিকাকাই চুলের জন্য খুব উপকার দেয়। বাজারে প্যাকেটে কিনতে পাওয়া যায় সিকাকাই গুঁড়া চুলে লাগান। সিকাকাইয়ের সঙ্গে আমলকি গুঁড়া ও মেথি গুঁড়া মিশিয়ে লাগান অন্তত সপ্তাহে একদিন, উপকার পাবেন।
ষষ চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে পার্লারের সাহায্য নিতে পারেন। হেয়ার হিসেবে ডিপ কন্ডিশনার ও প্রোটিন ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুল রাফ হওয়া থেকে মুক্তি পাবে ও চুল পড়া বন্ধ হবে।
ষষ জবা ফুল বেটে নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ১০ মিনিট ফুটান। এরপর ঠাণ্ডা করে বোতলে ভরে রাখুন। সব সময় ব্যবহার করুন এই তেল, উপকার পাবেন।
সতর্কতা : খুশকিমুক্ত চুল পেতে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। চুল সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে এবং সঙ্গে, চিরুনি, ব্রাশ, তোয়ালে, বালিশের কভার, বিছানার চাদর এগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। কখনোই অন্যের জিনিস ব্যবহার করা ঠিক হবে না। এমনকি নিজের জিনিসও ব্যবহার করতে দেয়াটা ঠিক হবে না। ব্যস্ততার কারণে যারা নিয়মিত চুলের পরিচর্যা করতে পারেন না তারা মাসে অন্তত ২ বার পার্লারে গিয়ে হেয়ার ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন। পার্লারে গিয়ে হেয়ার স্পা করাতে পারেন। ঝলমলে চুল পেতে এই ট্রিটমেন্টগুলো জরুরি।
Sunday, April 25, 2010
ঘরোয়া রূপচর্চায় হারবাল পরিচর্যা
কোনো ধরনের কেমিক্যালের স্পর্শ ছাড়াই ঘরে বসে আপনি হারবাল সামগ্রী দিয়ে নিশ্চিন্তে রূপচর্চা করতে পারেন। প্রথমেই চুল। চুলকে সুন্দর রাখতে রাতে নারকেল তেলের সঙ্গে মেথি বাটার মিশ্রণ লাগাতে পারেন। পাকা কলা ও পাকা পেঁপের মিশ্রণ লাগাতে পারেন ২ দিন পরপর। কালো চুল চাইলে রক্তজবা ফুলের কুড়ি কিংবা আমের আঁটির ভেতরের অংশ বেটে লাগাতে পারেন। মাসে অবশ্যই চারবার মেহেদি পাতার রস ও দুবার আমলকি বাটা লাগাতে পারেন।
ত্বকের যতেœ প্রতিদিন মসুর ডাল বাটা লেবু-দুধ সমপরিমাণ নিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে পারেন। রেগুলার প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ফলের ক্বাথ। পাকা পেঁপে ও মুধ ত্বককে কোমল করে। লেবু ও মধু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। টমেটো রস ব্লিচের কাজ করে, শসা ও আলুর রস চোখের নিচের কালো দাগ দূর করে। সপ্তাহে একদিন ২০ মিনিটের ভারী প্যাক হিসেবে পরিমাণমতো উপকরণÑ (কাঁচা হলুদ বাটা+মসুর ডাল বাটা+পাকা পেঁপে+কাঁচা দুধ+ডাবের পানি)। এ প্যাকটি মুখে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন ময়েশ্চরাইজারের কাজ করবে। ঠা-া গোলাপজল/শসার রস হতে পারে আপনার উপযুক্ত স্কিন টোনার।
-সায়মা তুলি
ত্বকের যতেœ প্রতিদিন মসুর ডাল বাটা লেবু-দুধ সমপরিমাণ নিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে পারেন। রেগুলার প্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ফলের ক্বাথ। পাকা পেঁপে ও মুধ ত্বককে কোমল করে। লেবু ও মধু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। টমেটো রস ব্লিচের কাজ করে, শসা ও আলুর রস চোখের নিচের কালো দাগ দূর করে। সপ্তাহে একদিন ২০ মিনিটের ভারী প্যাক হিসেবে পরিমাণমতো উপকরণÑ (কাঁচা হলুদ বাটা+মসুর ডাল বাটা+পাকা পেঁপে+কাঁচা দুধ+ডাবের পানি)। এ প্যাকটি মুখে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন ময়েশ্চরাইজারের কাজ করবে। ঠা-া গোলাপজল/শসার রস হতে পারে আপনার উপযুক্ত স্কিন টোনার।
-সায়মা তুলি
Friday, April 23, 2010
লক্ষ্ণৌ
আমাদের এই উপমহাদেশের, বর্তমান ভারতীয় উত্তর প্রদেশ ইউনিয়নের জৌলুসময় এক নগরী লক্ষ্ণৌ(হিন্দিতে: लखनऊ, উর্দুতে: لکھنؤ লাখ্নাউ)। নবাবী শহর, রাজনীতির নগরী, শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির নগরী, সঙ্গীতের নগরী এবং অপরূপ স্থাপত্যশিল্পের নগরী লখনৌ। অযোধ্যার নবাবের লক্ষ্মৌ, ইতিহাসে এই তার জনপ্রিয় পরিচিতি হলেও আজকের ভারতে উত্তর প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী লখনউ।পৌরাণিক কাহিনী কী বলে? রামায়ণে উল্লেখ রয়েছে, রামচন্দ্রের বনবাসের পর তিনি লক্ষ্মণের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এই অঞ্চল। রামানুজ লক্ষ্মণের নাম অনুসারে এর নাম হলো লক্ষ্মনাবতী। এবং ক্রমে অপভ্রংশ হয়ে লক্ষৌতে রূপান্তরিত হলো। আর ভিন্ন একটি মত বলছে: জৌনপুরের মুসলিম শাসক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই নগরী। তার নির্দেশে হিন্দু স্থপতি লখনা নির্মাণ করেন একে। সেই স্থপতি লখনার নামই পরিবর্তিত রূপ নিয়ে লক্ষৌ হয়ে বেঁচে আছে নগরীর জৌলুসময় আবেদনের মধ্যে। তবে নামের ইতিহাসের বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। আর কোনটিই চূড়ান্ত হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনও পায়নি।
কলকাতা থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরত্বে লক্ষ্ণৌ রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে কিন্তু নতুন যে কারো অবাক না হয়ে উপায় নেই। আর দশটা প্রচলিত ছোট কিংবা বড় রেলওয়ে স্টেশনের সাথে একদম মিল নেই এই স্টেশন ভবনের। প্রথম কেউ এলে একেবারে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে হবে। স্টেশন ভবনে সেকালের স্থাপত্যরীতির উঁচু মিনার সম্বলিত নকশা। রাজপ্রাসাদ কিংবা উচ্চ রাজ কার্যালয় বলেই ভ্রম হতে পারে যে কারো। নগরীর বহু এলাকাতেই এখনকার কিংবা আধুনিক মোটর গাড়ির পাশাপাশি চলছে ঘোড়ায় টানা গাড়ি, স্থানীয়ভাবে যাকে বলে টাঙ্গা। এর ঘোড়া ও চালক দেখে মনে হয় না সময়টা আড়াই শ’ বছরের বেশি গড়িয়ে গেছে। কিংবা মনে হয়, এই ঘোড়া আর টাঙ্গার চালক উঠে এসেছে আড়াই তিনশ’ বছর আগের লক্ষ্ণৌ থেকে।
নগরীর চৌক নামক স্থানে রয়েছে বড় ইমামবাড়া অর্থাৎ নবাব আসফ-উদ-দৌলার মূল প্রাসাদ। লক্ষৌতে পদার্পণের নয় বছর পর ১৭৮৪ সালে বড় ইমামবাড়া নির্মাণ করেছিলেন তিনি। চারতলা এই প্রাসাদ যেন এক রহস্যময় জগৎ। বহু সুরঙ্গপথে ভরা এর অভ্যন্তর ভাগ। হিসেবে সামান্য ভুল হলেই রীতিমত বেওকুফ বনে যেতে হবে, অনেক কষ্টে আবার ফিরে পেতে হবে সঠিক পথ। এই প্রাসাদেরই নিচতলায় দরবার ঘরে সমাধিস্থ রয়েছেন নবাব আসফ-উদ-দৌলা ও তাঁর প্রিয়তমা পত্নী। এ কারণে বড় ইমামবাড়ার মূল চত্বরে ঢোকার আগে জুতা খুলে রেখে যেতে হয়। লক্ষ্মৌরের অন্যতম প্রধান উত্সব মহররম। এ সময় বড় ইমামবাড়াসহ পুরো নগরী আলোর বন্যায় ভেসে যায়। দরবার কক্ষে সজ্জিত রয়েছে মহররমের তাজিয়ার অনুকৃতি। প্রাসাদ কমপ্লেক্সের একাংশ রয়েছে শাহী বাওলি জলাধার। এখানে স্বচ্ছ পানির পাতালছোঁয়া বিশাল এক কুয়োকে ঘিরে রয়েছে তিনতলা মনোহর ইমারত। এরই বাঁদিকে আসাফি মসজিদ। মসজিদের মিনার যেন আকাশের নীলকে ছুঁয়ে দেখতে চায়। এখানকার সিঁড়ির বৈচিত্র্য মনোমুগ্ধকর। বড় ইমামবাড়ার প্রধান প্রবেশপথ হাওয়া মহল, গঠনশৈলি ও বিশালত্ব দেখে মন আপনা থেকেই বলে ওঠে: অসামান্য! হাওয়া মহলের উল্টোদিকেই নহবতখানা। নিদারুণ অযত্নের শিকার, তাই ভেঙ্গে পড়েছে। কিন্তু তারপরও নবাবী জৌলুস এখনো যেন ঝরে পড়ছে। হাওয়া মহল থেকে রাস্তার বাঁদিকে একটু এগিয়ে গেলেই বিশাল প্রবেশ তোরণ, রুমি দরওয়াজা। অনবদ্য এর গঠনশৈলী, কারুকাজও চমকে দেয়ার মত। ১৭৮৬ সালে তুরস্কের তত্কালীন রাজধানী ইস্তাম্বুলের দরওয়াজার অনুসরণে এই রুমি দরওয়াজা তৈরি করিয়েছিলেন নবাব আসফ-উদ-দৌলা। তাই এর আরেক নাম টার্কিশ গেট।
রুমি দরওয়াজা পেরিয়ে ৫/৬শ’ গজ দূরেই ছোট ইমামবাড়া, যার পোশাকি নাম হুসেনাবাদ। ১৮৩৭ সালে নবাব মোহাম্মদ আলি শাহ নির্মাণ করেছিলেন ছোট ইমামবাড়া নামের এই প্রাসাদ। তাঁর এবং তাঁর মায়ের সমাধিও রয়েছে এখানে। প্রাসাদের ভেতরটা এখন খুবই শান্ত, একেবারে যাকে বলে পিনপতন নিস্তব্ধতা। অনিন্দ্য সুন্দর সব ঝাড়বাতি ও আরো নানা আলোর বাতি, গিল্টি করা আয়না আর দেওয়ালে চারুময় কারুকাজ দেখে যে কারো চক্ষুস্থির হয়ে যাবে। এই প্রাসাদের কয়েকটি গম্বুজের মধ্যে বড় গম্বুজটি সোনার, অন্তত ওতে সোনার কারুকাজ রয়েছে এমন জনপ্রিয় বহুলশ্রুত জনশ্রুতি রয়েছে। মহররম উত্সবের সময় প্রাসাদের সব ঝাড় লক্তন আর আলোর বাতি এক সাথে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তখন সে এক আশ্চর্য আলোকময় রাত। নবাব মোহাম্মদ আলি শাহ আরেকটি বিশাল বাড়ি তৈরি করিয়েছিলেন, নাম বারোদুয়ারী। বড় আকারের বারোটি দরজা থাকার কারণেই এর নাম বারোদুয়ারী। তবে সে নাম প্রচলিত নয়, এখন নাম হয়েছে পিকচার গ্যালারি। বড় ধরনের চিত্রশালা হিসেবে গড়ে উঠেছে। নবাবদের লাইফ সাইজ সব প্রতিকৃতি সযত্নে সংরক্ষিত ও প্রদর্শিত এখানে। বারোদুয়ারী থেকে কিছু দূরেই ক্লক টাওয়ার, সুউচ্চ মিনারের মাথায় চারদিকে বিশাল চারটি ঘড়ি বসানো। ১৮৮৭ সালে নবাব নাসির-উদ-দীন হায়দরের নির্দেশ তৈরি এই ক্লক টাওয়ার চরিত্রের দিকে থেকে ব্রিটিশ স্থাপত্য। টাওয়ারের আয়তন কুড়ি বর্গফুট আর ২২১ ফুট উচ্চতায় উঠে একইসাথে চারদিকের মানুষকে সময় জানান দিচ্ছে বিগত সোয়া শ’ বছর ধরে। গান মেটালে তৈরি ঘড়িগুলোর যাবতীয় কিছু এসেছিল লন্ডন থেকে।
লক্ষ্মৌয়ের আরেক বিখ্যাত স্থাপত্য রেসিডেন্সি। এরও নির্মাতা বা মূল প্রতিষ্ঠাতা নবাব আসফ-উদ-দৌলা। ১৭৭৫ সালে ব্রিটিশ রাজ প্রতিনিধি ও পর্যটকদের বিশ্রামাগার হিসেবে এই রেসিডেন্সি কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। তবে শেষ হয়েছিল ১৮০০ সালে নবাব সাদাৎ আলি খানের আমলে। কিন্তু ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় রেসিডেন্সি নামের এই অপরূপ স্থাপত্য। ভাঙ্গাচোরা দেয়াল, ঝুলে থাকা ছাদ, কামানের গোলা আর রাইফেলের গুলির স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে সিপাহী বিপ্লবের সেই ভয়ঙ্কর গৌরব গাথার দুর্দমনীয় দিনগুলোর স্মারক হয়ে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো প্রতি সন্ধ্যায় আলোক সাজে রেসিডেন্সি হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর সুন্দর। এখানে রয়েছে স্মৃতি জাদুঘর আর এর বিপরীতেই শহীদ পার্ক। নতুন লক্ষ্মৌয়ের শুরুর আগেই শাহ নজফ ইমামবাড়া। লক্ষ্মৌতে এখান থেকেই শুরু হয়েছিল সিপাহি বিপ্লবের আগুন। ১৮১৪ সালে গাজী-উদ-দিন হায়দার ইরাকের নজফে হযরত আলীর সমাধির অনুসরণে এই ইমামবাড়া নির্মাণ করান। দেখতে অনেকটা ছোট ইমামবাড়ার মত। লখনউ শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে গোমতী নদী। সন্ধ্যায় অস্তমান রবির আলো ঠিকরে পড়ে গোমতীর বুকে, ভাদ্রের ভরাযৌবনা কিংবা শীতের তন্বী তরুণী গোমতী তখন লালে লাল হয়ে ওঠে। সে যেন সিপাহী বিপ্লবে গৌরবদীপ্ত ভূমিকা পালনকারী নগরী লক্ষ্মৌয়ের রক্তিম আর অগ্নিময় ভূমিকার প্রতিরূপ। লখনউতে জীবন বাজি রেখে সে সময় বিদেশি ইংরেজ বিতাড়নে অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নবাব পরিবারেরই বেগম হজরত মহল। কোন অবস্থাতেই আত্মসমর্পণ করেননি।
গঙ্গার শাখা নদী গোমতী লক্ষ্মৌয়ের ভেতর দিয়ে বয়ে গিয়ে আবার অযোধ্যার বিখ্যাত নদী সরযূর সাথেও মিলেছে। নগর এলাকায় গোমতীর দুই পাড়কে জুড়ে দিয়েছে একাধিক সেতু। নবাবী আমলের সেতু। নবাবদের জনহিতকর চরিত্র ও মানসিকতা এবং সেই আমলেই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ ও সুগম করে তোলার প্রবণতা ফুটে উঠেছে এসব বড় সেতুর স্তরে স্তরে। তুর্কী ও ইরানী স্থাপত্য কৌশল প্রভাবিত তত্কালীন ব্রিটিশ স্থাপত্য রীতিতে নির্মাণ করা হয়েছিল এগুলো।
কিন্তু উত্তর প্রদেশ পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ লক্ষ্মৌয়ের এসব ঐতিহাসিক স্থাপত্যকীর্তি সংরক্ষণে যথেষ্ট যত্নবান নয়। বড় ইমামবাড়া প্রাসাদের বেশিরভাগ সুরঙ্গপথ আজ বন্ধ। সেগুলো খুলে দেয়ার কোন উদ্যোগও নেই। গণপ্রস্রাবাগার বানিয়ে ফেলায় শাহী বাওলিতেও দুর্গন্ধ। তারপরও চুপচাপ পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব দপ্তরের লোকজন। তাহলে কি আস্তে আস্তে এসব কিছু ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হবে? এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে চেতনাঋদ্ধ ভারতীয়দের মনে।
এখানে বাঙ্গালিদের একটি আখড়া রয়েছে। ইন্দিরা রোডের রবীন্দ্রপল্লীকে বাঙ্গালিদের আখড়া মনে করা হয়। আড়াইশ’র মত বাঙ্গালি পরিবারের বসবাস এখানে। বাঙ্গালি হিন্দুর লোকচর্চার হেন উত্সব নেই যা সেখানে পালিত হয় না। এখানকার বাঙ্গালিরাও খুব সংস্কৃতিমনা। আর সে তো লক্ষ্ণৌরই ঐতিহ্য, যাকে এক কথায় বলা চলে তাহজিব বা তমদ্দুন, যার মানে কৃষ্টি।
নতুন পুরাতনের এক আশ্চর্য সহাবস্থান চলছে লক্ষ্মৌতে। নগরীর পুরনো এলাকা নতুন যে কাউকে টেনে নিয়ে যাবে তার অতীতের স্মৃতিময় দিনগুলোতে। পাশাপাশি নগরীর বর্ধিত নতুন এলাকা ঘুরলে মন মানতে চাইবে না যে, পুরনো দিনের সেই মায়াময় ঐতিহ্য লালনকারী লক্ষ্ণৌ বলে কিছু টিকে আছে এখনো। নতুন শহরে চকচকে ঝকঝকে কার্পেটিং রাজপথ আর দু’পাশে আধুনিক অট্টালিকা সজ্জিত এভিনিউ অতীতের সেই আবেগস্পর্শী নগরীর কথা ভুলিয়ে দেবার মত। সাহারা শহর নগরীর এমনই একটি অংশ। পুরনো এমনকি নতুন শহরেও আধুনিক মোটরযান আর সর্বাধুনিক মডেলের মহামূল্য বিলাসবহুল মোটরগাড়ির পাশেই চলছে সেই ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গা। অত্যন্ত মসৃণ কার্পেটিং রাজপথে মানুষের গায়ে চাকচিক্যময় পোশাক। তারা যখন টাঙ্গায় সওয়ার হয়, মনে হয়, নবাবী লক্ষ্ণৌতে ফিরে গেছি। পুরনো শহরে রাস্তার পাশে পায়রা ও অন্যান্য পাখির দোকানে উপচেপড়া ভিড়, মুয়াজ্জিনের সুললিত আজানের সুর, শিশু-কিশোরদের লাঠিখেলা আর পায়রা ওড়ানো। সব মিলেমিশে মনে হবে এ যেন সত্যি সত্যিই নবাব আসফ-উদ-দৌলার সময়ে এসে পড়েছি। এখানে ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা চলে টক! টক!! ধ্বনি তুলে। তার পেছনের ছইয়ের তলায় বসলে যে কারো নিজেকে সেই নবাবী আমলের মানুষ বলে ভাবতে কষ্ট হবে না।
পুরনো শহরের খুব নামকরা ব্যবসা কেন্দ্র আমিনাবাদ্। নবাব এমদাদ খান আমিন-উদ্-দৌলার স্মৃতি বহন করছে এই আমিনাবাদ্। পুরনো লক্ষ্মৌতে নবাবী আমলের বাজার। কী নেই এখানে? লক্ষ্মৌয়ের বিখ্যাত সূক্ষ্ম কারুকাজের পোশাক, শাড়ি সালোয়ার, কুর্তা, পাঞ্জাবি, পায়জামা আরো কত কি। খাবারের দোকানে আর হোটেলের সামনের ভাগে ঐতিহ্যময় আর লোভনীয় সব পসরা: প্রাণী আর পাখির মাংসের কাবাব, বিরিয়ানি, মুরগি মুসল্লম।
আধুনিক লক্ষ্মৌয়ের এক সেরা বাণিজ্যিকেন্দ্র হযরতগঞ্জ। মনে হয় সিপাহি বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী বেগম হযরত মহলের স্মৃতিতেই এই নামকরণ। এখানেই উত্তর প্রদেশ বিধানসভা ভবন, বিশাল এলাকা জুড়ে এক ইমারত। পাশেই রাজ ভবন, রাজ্যপালের দপ্তর ও বাসস্থান। হযরতগঞ্জ এবং লক্ষ্মৌ নগরীর বিশাল অংশ জুড়ে যে দৃশ্য তাতে মনে হবে যেন বিদেশ থেকে তুলে এনে এখানে বসানো হয়েছে লক্ষ্মৌকে। দেশী বিদেশি অত্যাধুনিক সব মোটরগাড়ি, চকচকে-ঝকমকে আধুনিক রেস্তোরাঁ, শপিং মল আর তার সাথে চকমকে মানুষের প্রাচুর্য। এ এক অন্য লখনউ।
দু’টো সমান্তরাল চারিত্র্য নিয়ে পাশাপাশি বাস করছে লখনউ। পুরনো আর আধুনিকতার মাঝে কোন বিরোধ নেই এখানে। কেউ কাউকে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করে না। কারো উপরে কারো চাপাচাপি নেই। কাবাবের সাথে পিত্জার, টাঙ্গার সাথে মার্সির্ডিজের, মুয়াজ্জিনের সুললিত আজানের ধ্বনির সাথে পুরোহিতের মধুর মন্ত্রোচ্চারণের, সূক্ষ্ম কারুকাজের কামিজের সাথে ইউরোপীয় কোটের কোন বিরোধ নেই এখানে। অবাক করা সহাবস্থানের এমন নজির কেবল আমাদের এই উপমহাদেশের কেন, গোটা দুনিয়াতেই বিরল। কিন্তু তারপরও ইতিহাসপ্রেমী চেতনায় সমর্পিতপ্রাণ মানুষ ছুটে যায় সেই পুরনো লক্ষ্মৌতে, অযোধ্যার সঙ্গীতপ্রেমী স্বাধীন নবাব আসফ-উদ-দৌলার লক্ষ্মৌতে। রাজনৈতিক ইতিহাস আর সঙ্গীত ও সংস্কৃতির ইতিহাসের খোলা জানালায় বাতাস যেন ডেকে বলে যায়- হ্যাঁ! ঐ তো আসল লখনউ!!
মুহ: আরিফ-উদ-দৌলা-লেখাটিতে আনন্দবাজার পত্রিকার সাহায্য নেয়া হয়েছে
Tuesday, April 20, 2010
ম্যানেজার'এর দ্বায়িত্ব
‘ম্যানেজার’ শব্দটি শুনলেই এক কথায় বুঝি তার কাজ হচ্ছে ম্যানেজ করা। ম্যানেজ করা শব্দটা বলা যতো সহজ বাস্তবে তা কার্যকর করা কিন্তু ততো সহজ নয়। একজন সফল ম্যানেজার যেমন তার কর্মীবাহিনীর কাছ থেকে কাজ আদায় করে প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের চরম শিখরে উঠিয়ে দিতে পারেন তেমনি একজন নিষ্কর্মা ম্যানেজার প্রতিষ্ঠানের লাল বাতিও জ্বালিয়ে দিতে পারেন সহজেই। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ম্যানেজারের গুরুত্ব কতোখানি।
একটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা যদি মানব দেহের সাথে তুলনা করি তাহলে তার মাথা বলতে পারি ঐ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারকে। একমাত্র তার পক্ষেই সম্ভব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকজনের সুপ্ত প্রতিভার সন্ধান পাওয়া ও সেই প্রতিভার সঠিক ব্যবহার করা। আপনারা যারা ইতোমধ্যে ম্যানেজার হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন বা ভবিষ্যতে হতে চান তাদেরকে কয়েকটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। এগুলো হলো।।
অনুপ্রেরণা দেয়া ঃ ধরুন, আপনি জানেন আপনার সহকর্মী ঐ কাজটা পারবে কিন্তু সে কাজটা করার জন্য যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নয়। এখন ম্যানেজার হিসেবে আপনার কাজ তাকে মটিভেটেড করা বা তার মধ্যে সে যে কাজটা করতে পারবে সেই বিশ্বাসটা তৈরি করে দেয়া।
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর ঃ সহকর্মী ও অধিনস্ত উভয়ের বিশ্বাস অর্জন করার মধ্যে একজন ম্যানেজারের সফলতা অনেকাংশেই নির্ভর করে। প্রতিষ্ঠানের উন্নতি আর সহকর্মীদের কল্যাণ সাধন যদি আপনার লক্ষ্য হয়ে থাকে তবে
বিশ্বস্ত ম্যানেজার উপাধিটি পেতে বেশি একটা সময় লাগবে না।
একের ভিতর তিন (অবজার্ভার, তত্ত্বাবধায়ক, পরামর্শদাতা) ঃ আপনি আপনার সহকর্মীদের কাছ থেকে কি ধরনের কাজ চান তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিন। কাজটা ঠিক মতো করা হচ্ছে কিনা তা অবজার্ভ করুন। ভুল হলে কিভাবে সংশোধন করতে হবে তা জানিয়ে দিন।
কর্তৃত্ববান নয় কর্তৃত্ব প্রদান করুন ঃ ম্যানেজার হিসেবে আপনার অন্যতম কাজ হচ্ছে অন্যদের দিয়ে কাজ করানো। অন্যদের দিয়ে কাজ আদায়ের মূল সূত্র হচ্ছে তাকে কাজটার ওপর কর্তৃত্ব দিতে হবে। তাই অন্যের ওপর কর্তৃত্ব ফলানোর পাশাপাশি প্রয়োজনমতো কর্তৃত্ব প্রদান করার ক্ষমতাও একজন সফল ম্যানেজারের থাকতে হবে।
একটি প্রতিষ্ঠানকে আমরা যদি মানব দেহের সাথে তুলনা করি তাহলে তার মাথা বলতে পারি ঐ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারকে। একমাত্র তার পক্ষেই সম্ভব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকজনের সুপ্ত প্রতিভার সন্ধান পাওয়া ও সেই প্রতিভার সঠিক ব্যবহার করা। আপনারা যারা ইতোমধ্যে ম্যানেজার হিসেবে কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন বা ভবিষ্যতে হতে চান তাদেরকে কয়েকটি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। এগুলো হলো।।
অনুপ্রেরণা দেয়া ঃ ধরুন, আপনি জানেন আপনার সহকর্মী ঐ কাজটা পারবে কিন্তু সে কাজটা করার জন্য যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নয়। এখন ম্যানেজার হিসেবে আপনার কাজ তাকে মটিভেটেড করা বা তার মধ্যে সে যে কাজটা করতে পারবে সেই বিশ্বাসটা তৈরি করে দেয়া।
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর ঃ সহকর্মী ও অধিনস্ত উভয়ের বিশ্বাস অর্জন করার মধ্যে একজন ম্যানেজারের সফলতা অনেকাংশেই নির্ভর করে। প্রতিষ্ঠানের উন্নতি আর সহকর্মীদের কল্যাণ সাধন যদি আপনার লক্ষ্য হয়ে থাকে তবে
বিশ্বস্ত ম্যানেজার উপাধিটি পেতে বেশি একটা সময় লাগবে না।
একের ভিতর তিন (অবজার্ভার, তত্ত্বাবধায়ক, পরামর্শদাতা) ঃ আপনি আপনার সহকর্মীদের কাছ থেকে কি ধরনের কাজ চান তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিন। কাজটা ঠিক মতো করা হচ্ছে কিনা তা অবজার্ভ করুন। ভুল হলে কিভাবে সংশোধন করতে হবে তা জানিয়ে দিন।
কর্তৃত্ববান নয় কর্তৃত্ব প্রদান করুন ঃ ম্যানেজার হিসেবে আপনার অন্যতম কাজ হচ্ছে অন্যদের দিয়ে কাজ করানো। অন্যদের দিয়ে কাজ আদায়ের মূল সূত্র হচ্ছে তাকে কাজটার ওপর কর্তৃত্ব দিতে হবে। তাই অন্যের ওপর কর্তৃত্ব ফলানোর পাশাপাশি প্রয়োজনমতো কর্তৃত্ব প্রদান করার ক্ষমতাও একজন সফল ম্যানেজারের থাকতে হবে।
Monday, April 19, 2010
ক্লান্তি দূর করতে স্পা
ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি ও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক উপায় হলো স্পা। স্পা কেন করবেন ও এর কার্যকারিতা কী এ সম্পর্কে জানাচ্ছেন হারমনি স্পার রূপ বিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানাবাহ্যিক নয়, বরং সৌন্দযর্কে ফুটিয়ে তুলতে হয় ভেতর থেকে। আর সৌন্দর্যকে ভেতর থেকে ফুটিয়ে তোলায় বড় ভূমিকা রাখে স্পা। স্পা শরীর ও মনের সজীবতা এনে দেয়। স্পা দুই রকমের। হেয়ার স্পা ও বডি স্পা।
কেন করবেন
ধুলা-বালিতে আমাদের চুল নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। অনেকের চুলে খুশকি হয়, অসময়ে চুল পড়ে যায়, চুল ভেঙে যায়। এসব সমস্যার সমাধান হতে পারে হেয়ার স্পা।
ক্লান্তি, মাইগ্রেন, বিষণ্নতা, ক্রনিক ব্যথা_এসব থেকে মুক্তি পেতে করতে পারেন বডি স্পা।
স্পার কার্যকারিতা
স্পা আসলে প্রাকৃতিক পদ্ধতি। সমস্যা না থাকলেও আপনি নরমাল স্পা করতে পারেন। এতে আপনি ভেতর থেকে সতেজ থাকবেন, ভালো ঘুম হবে। আপনার ধৈর্য বাড়বে।
আর যদি ব্রণ, মেসতা, শরীরে ব্যথা, মানসিক উদ্বেগ, বিষণ্নতা, অতিরিক্ত মেদ এসব সমস্যা থাকে, তবে সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সমস্যা অনুযায়ী আপনার উপযোগী স্পা করাতে পারেন। শরীরে ব্যথার জন্য স্পা করালে লক্ষ রাখবেন সেটা যেন অবশ্যই ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিউটিশিয়ানের হাতে করানো হয়। কারণ, এই ব্যথাগুলো থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে শরীরের আকুপাংচার পয়েন্টে প্রেসার দিয়ে ম্যাসেজ করানো হবে। এক্ষেত্রে যদি কোনো ভুল হয় তবে আপনার অন্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সাবধান থাকা ভালো।
শুধু সেন্টারে গিয়ে স্পা করালেই হবে না, পরিপূর্ণ সমাধানের জন্য আপনাকে বাড়িতে খাবার খেতে হবে। জীবনযাত্রায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। ক্রনিক যে সমস্যার জন্য স্পা করানো হয় তার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। সময়সীমায় নিয়ম মেনেই চলতে হবে। শরীর অনুযায়ী পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিয়ে খাবার খেতে হবে এবং সেন্টারে স্পার পাশাপাশি বাড়িতে কিছু পরিচর্যা করতে হবে।
কেন করবেন
ধুলা-বালিতে আমাদের চুল নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। অনেকের চুলে খুশকি হয়, অসময়ে চুল পড়ে যায়, চুল ভেঙে যায়। এসব সমস্যার সমাধান হতে পারে হেয়ার স্পা।
ক্লান্তি, মাইগ্রেন, বিষণ্নতা, ক্রনিক ব্যথা_এসব থেকে মুক্তি পেতে করতে পারেন বডি স্পা।
স্পার কার্যকারিতা
স্পা আসলে প্রাকৃতিক পদ্ধতি। সমস্যা না থাকলেও আপনি নরমাল স্পা করতে পারেন। এতে আপনি ভেতর থেকে সতেজ থাকবেন, ভালো ঘুম হবে। আপনার ধৈর্য বাড়বে।
আর যদি ব্রণ, মেসতা, শরীরে ব্যথা, মানসিক উদ্বেগ, বিষণ্নতা, অতিরিক্ত মেদ এসব সমস্যা থাকে, তবে সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সমস্যা অনুযায়ী আপনার উপযোগী স্পা করাতে পারেন। শরীরে ব্যথার জন্য স্পা করালে লক্ষ রাখবেন সেটা যেন অবশ্যই ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিউটিশিয়ানের হাতে করানো হয়। কারণ, এই ব্যথাগুলো থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে শরীরের আকুপাংচার পয়েন্টে প্রেসার দিয়ে ম্যাসেজ করানো হবে। এক্ষেত্রে যদি কোনো ভুল হয় তবে আপনার অন্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সাবধান থাকা ভালো।
শুধু সেন্টারে গিয়ে স্পা করালেই হবে না, পরিপূর্ণ সমাধানের জন্য আপনাকে বাড়িতে খাবার খেতে হবে। জীবনযাত্রায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। ক্রনিক যে সমস্যার জন্য স্পা করানো হয় তার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। সময়সীমায় নিয়ম মেনেই চলতে হবে। শরীর অনুযায়ী পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিয়ে খাবার খেতে হবে এবং সেন্টারে স্পার পাশাপাশি বাড়িতে কিছু পরিচর্যা করতে হবে।
ত্রিশোর্ধ্ব পুরুষের ত্বক-চুলের যত্ন
শাকিল আহমেদ, সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক, মেনস লুকত্রিশ থেকেই সাধারণত ত্বকের ধরন বদলাতে থাকে। পুরুষের ক্ষেত্রেই ত্বকের পরিবর্তনের প্রভাবটা বেশি করে দেখা যায়। ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর রাখার জন্য দরকার নিয়মিত পরিচর্যা।
ত্বক : ত্রিশের পর তৈলাক্ত ত্বকের তৈলাক্ততা বাড়তে থাকে। এ ধরনের ত্বক পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করুন ফেসওয়াশ। মুখ ধোয়ার পর অ্যাস্ট্রিনজেন লাগিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট রাখুন। রোদে বেরোলে সানস্ক্রিন লাগান।
স্বাভাবিক এবং রুক্ষ ত্বকে ক্লিনজিং মিল্ক ব্যবহার করলে ক্লিনজিং ক্রিম ব্যবহার করবেন না। ত্বকের ধরন অনুযায়ী স্কিন টনিক ব্যবহার করুন। রুক্ষ ত্বকে স্কিন টনিকের বদলে অ্যাস্ট্রিনজেন লাগাবেন না। স্বাভাবিক ত্বকে স্কিন টনিক লাগানোর পর ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন।
শরীরের যত্ন : ত্বকের পাশাপাশি শরীর ও হাত-পায়ের যত্ন নিন। বডি শ্যাম্পু বা বডিওয়াশ ব্যবহার করুন। সাবান ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। গোসলের পর বডি লোশন নিয়ে ভেজা গায়ে ম্যাসেজ করুন। মাসে একবার মেনিকিউর ও পেডিকিউর করার চেষ্টা করুন।
চুলের যত্ন : এই বয়সে চুল পড়লে নতুন চুল আর গজানোর সম্ভাবনা থাকে না। তাই অনেক দিন ধরে চুল পড়তে থাকলে তখন যত্ন নেওয়া একান্ত জরুরি। চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, চুল পড়া কমানোর জন্য প্রথম শর্ত ব্যালান্স ডায়েট। নিয়মিত চুলের যত্ন নিন। চুলের যত্নের তিনটি ধাপ আছে_তেল লাগানো শ্যাম্পু করা, কন্ডিশনিং। তৈলাক্ত চুলের ক্ষেত্রে শ্যাম্পুর আগে চুলে তেল লাগানোর প্রয়োজন নেই। এছাড়া প্রোটিন ট্রিটমেন্ট, হেয়ার স্পা করাতে পারেন।
ত্বক : ত্রিশের পর তৈলাক্ত ত্বকের তৈলাক্ততা বাড়তে থাকে। এ ধরনের ত্বক পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করুন ফেসওয়াশ। মুখ ধোয়ার পর অ্যাস্ট্রিনজেন লাগিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট রাখুন। রোদে বেরোলে সানস্ক্রিন লাগান।
স্বাভাবিক এবং রুক্ষ ত্বকে ক্লিনজিং মিল্ক ব্যবহার করলে ক্লিনজিং ক্রিম ব্যবহার করবেন না। ত্বকের ধরন অনুযায়ী স্কিন টনিক ব্যবহার করুন। রুক্ষ ত্বকে স্কিন টনিকের বদলে অ্যাস্ট্রিনজেন লাগাবেন না। স্বাভাবিক ত্বকে স্কিন টনিক লাগানোর পর ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন।
শরীরের যত্ন : ত্বকের পাশাপাশি শরীর ও হাত-পায়ের যত্ন নিন। বডি শ্যাম্পু বা বডিওয়াশ ব্যবহার করুন। সাবান ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। গোসলের পর বডি লোশন নিয়ে ভেজা গায়ে ম্যাসেজ করুন। মাসে একবার মেনিকিউর ও পেডিকিউর করার চেষ্টা করুন।
চুলের যত্ন : এই বয়সে চুল পড়লে নতুন চুল আর গজানোর সম্ভাবনা থাকে না। তাই অনেক দিন ধরে চুল পড়তে থাকলে তখন যত্ন নেওয়া একান্ত জরুরি। চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, চুল পড়া কমানোর জন্য প্রথম শর্ত ব্যালান্স ডায়েট। নিয়মিত চুলের যত্ন নিন। চুলের যত্নের তিনটি ধাপ আছে_তেল লাগানো শ্যাম্পু করা, কন্ডিশনিং। তৈলাক্ত চুলের ক্ষেত্রে শ্যাম্পুর আগে চুলে তেল লাগানোর প্রয়োজন নেই। এছাড়া প্রোটিন ট্রিটমেন্ট, হেয়ার স্পা করাতে পারেন।
বাবুনাই
লিখেছেন : সোমা
নামটি আমার বলি - বাবুনাই
ইংরেজিতে বলি - White-eye
বৈজ্ঞানিক নাম - Zosterops palpebrosa
আমার যত নাম -শিতাক্ষী,বাবুনাই,বাবুনি,চশমা পাখি।
দেখতে আমি যেমন - আকারে প্রায় ৯ থেকে ১০ সে.মি লম্বা, হলদে জলপাই গায়ের রং আর বুক পেট ধূসর বর্ণের,পাখার পালক আর রেজের পালক কিছুটা মেটে রংয়ের,কালচে সরু দু’খানা পা। চোখের চার পাশে সাদা বৃত্ত আছে।মেয়ে পাখি আর ছেলে পাখি দেখতে প্রায় একই রকম।
যেথায় আমার বাস-নিবাস -সারা পৃথিবীময় আমার বিভিন্ন প্রজাতির ভাই বেরাদাররা কম বেশি বাস করে তবে মরু অঞ্চলে আমার দেখা মেলেনা।বন-জঙ্গল,ছোট ঝোপ-ঝাড়ে আমি তিড়িং বিড়িং করে নেচে দিন কাটাই।বুনো ঘাস আর লতা-পাতা দিয়ে পেয়ালার মতো বাসা বানাই।
আমার খাবার মেন্যু - বুনো ফল আর ছোট কীট-পতঙ্গ।
প্রজনন সময়- ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর।ডিম সংখ্যা-২-৩ টি,নীলাভ বর্ণের,ডিম ফুটে ছানা বেড়ুতে ১০ দিন সময় লাগে।
নামটি আমার বলি - বাবুনাই
ইংরেজিতে বলি - White-eye
বৈজ্ঞানিক নাম - Zosterops palpebrosa
আমার যত নাম -শিতাক্ষী,বাবুনাই,বাবুনি,চশমা পাখি।
দেখতে আমি যেমন - আকারে প্রায় ৯ থেকে ১০ সে.মি লম্বা, হলদে জলপাই গায়ের রং আর বুক পেট ধূসর বর্ণের,পাখার পালক আর রেজের পালক কিছুটা মেটে রংয়ের,কালচে সরু দু’খানা পা। চোখের চার পাশে সাদা বৃত্ত আছে।মেয়ে পাখি আর ছেলে পাখি দেখতে প্রায় একই রকম।
যেথায় আমার বাস-নিবাস -সারা পৃথিবীময় আমার বিভিন্ন প্রজাতির ভাই বেরাদাররা কম বেশি বাস করে তবে মরু অঞ্চলে আমার দেখা মেলেনা।বন-জঙ্গল,ছোট ঝোপ-ঝাড়ে আমি তিড়িং বিড়িং করে নেচে দিন কাটাই।বুনো ঘাস আর লতা-পাতা দিয়ে পেয়ালার মতো বাসা বানাই।
আমার খাবার মেন্যু - বুনো ফল আর ছোট কীট-পতঙ্গ।
প্রজনন সময়- ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর।ডিম সংখ্যা-২-৩ টি,নীলাভ বর্ণের,ডিম ফুটে ছানা বেড়ুতে ১০ দিন সময় লাগে।
চোখগেলো
লিখেছেন : সোমা
নামটি আমার বলি - চোখগেলো
ইংরেজিতে বলি -Common Hawk Cuckoo
বৈজ্ঞানিক নাম - Cuculus varius
আমার যত নাম – চোখগেলো,পিউকাহা,
দেখতে আমি যেমন - আকারে ৩৫সেমি লম্বা। আমরা মেয়ে পাখি আর ছেলে পাখি দেখতে প্রায় একই রকম। পিঠ,পাখা আর লেজের উপরের অংশ মেটে ধূসর।গলা,বুক আর লেজের নিচের অংশ বাদামী বর্ণের,চোখে হলুদ বৃত্তের মাঝে কালো ফোঁটা,পা হলুদ,লেজ খানিকটা লম্বা।
যেথায় আমার বাস-নিবাস - আমি ভারতীয় উপমহাদেশের পাখি।
আমার খাবার মেন্যু - পোকা-মাকড়। ছবিতে দেখতেই পাচ্ছো শূয়োপোকা খেতে আমি কত্ত ভালোবাসি
যভোবে আমি ডাকি - পি পিইই হা বা পিউউ কাহা
Saturday, April 17, 2010
স্কার্ট
স্কার্ট (ইংরেজি ভাষায়: Skirt) হচ্ছে মেয়েদের পরিহিত এক প্রকার বস্ত্র। স্কার্ট অনেকরকম হয়ে থাকে। স্থানভোদে এর নামও হয়ে থাকে একেকরকম। তবে ডিজাইনারদের ভাষায় স্কার্ট চার ধরনের- মিনি, লং, পেন্সিল এবং ফ্লোটিং। এদের মধ্যে মিনি স্কার্টের প্রচলন আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। আমাদের দেশে স্কার্ট বলতে লং স্কার্টকেই বুঝায়। এটা হতে পারে জিন্স কিংবা অন্য কোনো কাপড়ে গড়া ইংলিশ স্টাইলের। অথবা ভারতের রাজস্থানী স্টাইলের নন্দিনী। ইংলিশ স্টাইলের ফ্লোটিং স্কার্ট আমাদের দেশে সাধারন মানুষের মাঝে খুব একটা জনপ্রিয় নয়। এধরনের স্কার্ট সেলিব্রেটিদের মাঝেই জনপ্রিয়। তবে ভারতী স্টাইলের লং স্কার্ট জনপ্রিয়তা পাচ্ছে দ্রুত। দেশী ফ্যাশনহাউসগুলো এই স্কার্টগুলো তৈরি হচ্ছে দেশী ঐতিহ্য মিশিয়ে। জড়ি-পুতির কাজে এধরনের স্কার্ট এখন উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত সব স্তরেই সমাদৃত। এই দুই ধরনের বাইরে পেন্সিল এবং ফ্লোয়িং ধরন দুটি তেমন একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে ডেনিম কাপড়ের পেনসিল স্কার্ট আমাদের দেশের অনেক মেয়ে ঘরে পড়ে থাকে।
Long Skirts
Short Skirt
Pencil Skirt
Floating Skirts
হিপ হোপ জাতি
মিউজিক এর অন্যসব গানের মতো বাংলাদেশে সম্প্রতি হিপ হোপ-এর মিউজিকের ব্যাপক প্রচার এবং প্রসার লক্ষ্য করা যায়। রেকর্ড লেবেল কোম্পানিগুলো এখন বছরে অন্তত ২টি হিপ হোপ অ্যালবাম রিলিজ করছে। ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট ফার্মগুলো হিপ হোপ কনসার্ট-এর আয়াজন করছে। মাত্র ৫ বছর আগেও হিপ হোপ ছোট একটি পরিসরিরর মধ্যে গণ্ডিবদ্ধ থাকলেও এখন অনেকেই দেশি হিপ হোপ-এর সাথে পরিচিত। আমাদর পাশের দেশ ভারতেও হিপ হোপ-এর প্রসার লক্ষনীয়। বাংলাদেশে র্যাপ মিউজি-এর ইতিহাসে যে ব্যান্ডগুলোর নাম না বললেই নয়। টিওআর (Theology of rap) তাদের মধ্যে অন্যতম। ৪ জন স্বদেশের এই বাংলাদেশি হিপ হোপ ব্যান্ডটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালে। প্রতিষ্ঠাতা শাফায়েত আহমেদ (SKYLLS) তার সহপাঠী আদনান বিন আহমেদকে (Ady) নিয়ে T.O.R শুরু করেন। জাহিন হোসেইন (Zax) যোগদান করলে পরবর্তীতে এই ব্যান্ডটির নাম রাখা হয় Thugz on roids ২০০৯ সালে সলো আার্টিস্ট তায়েফ নাজিব (Grand T) এই ব্যান্ডটিতে রেপার এবং মিউজিক কম্পোজার হিসেবে যোগদান করেন। তারপর T.O.Rকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি হিপ হোপ কনসার্ট এ অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে T.O.R শ্রোতাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ২০০৯ সালে এই ব্যান্ডটি তাদের প্রথম অ্যালবাম-এর জন্য Deadline Music এর সাথে চুক্তি করে। তাদের দেব্যু অ্যালবাম Hip Hop Jaati ১৪ এপ্রিল ২০১০-এ সারাদেশে রিলিজ করা হয়। এই অ্যালবামের বেশিরভাগ গানের বিট কম্পোজ করেছেন Grand T. এই সময়ের আরেক তরুণ সঙ্গীত শিল্পী Jihan Jasper Al Rashid এর তত্ত্বাবধানে Hip Hop Jaatir রিক্সিং এবং মাস্টারিং Jasper Lobworks এ করা হয়েছে। ২০০৯ সালেই THUGZ ON ROIDS -এর নাম পরিবর্তন করে Thology of Rab করা হয়। অ্যালবামটিতে আরো আছেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা রেপার আমজি, গিটারিস্ট তানবির কবির, তাসনিম এবং জেসপার আল রাশিদ, Hip Hop Jaati -এ মোট ১৫টি ট্রাক রয়েছে। যাদের একটি অন্যটি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই অ্যালবামটি স্পন্সর করেছেন Fare Trade Group এবং Dana Group T.O.R -এর দেব্যু অ্যালবাম Hip Hop Jaati বাঙ্গালি হিপ হোপ এর ইতিহাসে আরো একটি উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে থাকবে বলে আশা করা যায়।
মাঘী পূর্ণিমা
মাঘী পূর্ণিমা কথাটি উচ্চারণমাত্র এ দেশের বৌদ্ধ সংস্কৃতির কথা মনে আসে। বিভিন্ন অঞ্চলের বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঘী পূর্ণিমা পালন করে থাকে। ঢাকার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের রাউজান ও ঠেগরপুনিতে এই পূর্ণিমা উপলক্ষে মেলা বসে। মাঘী পূর্ণিমায় মূলত বুদ্ধপূজা, ভিক্ষুসংঘের পিণ্ডদান, শীল গ্রহণ, ধর্মসভা, প্রদীপপূজা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন বৌদ্ধ নর-নারীরা বিহারে বিহারে গিয়ে বুদ্ধমূর্তির সামনে প্রদীপ ও বাতি জ্বালায়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, এদিন বুদ্ধ শিষ্যদের দুঃখজয়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর এদিনই তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন, তাঁর ধর্ম সম্পর্কে শিষ্যদের মধ্যে কোনো সংশয় নেই।
মাইজভাণ্ডারী মেলা
প্রতিবছর মাঘ মাসের ১০ তারিখে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বসে মাইজভাণ্ডারী মেলা। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মাইজভাণ্ডারী তরিকার প্রবর্তক শাহ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী পরলোকগমন করেন। সেই ‘ওফাত দিবস’ উপলক্ষেই প্রতিবছর ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার শরীফে মাইজভাণ্ডারী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ মেলা উপলক্ষে রচিত একটি গান একসময় অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল—দেখে যা রে মাইজভাণ্ডারী হইতাছে নূরের খেলা।
মাইজভাণ্ডারী মেলা মূলত ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক মিলনমেলা হলেও আরও কিছু চরিত্র এই মেলা অর্জন করেছে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অবাধ গমনাগমন, আশপাশের উপজাতীয় এবং স্থানীয় কৃষিজীবী ও কুটিরশিল্পের পণ্য উত্পাদনকারী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ। তার পরও এই মেলার শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ মাইজভাণ্ডারীসংগীত। এই মেলায় ক্ষুদ্র বই প্রকাশকেরা তাঁদের নতুন-পুরোনো মাইজভাণ্ডারী গানের বই বিক্রি করতে চলে আসেন।
মেলায় যখন গ্রাম্য কবিয়ালেরা সুর করে কবিতা পড়েন, তখন শ্রোতার দল তাঁকে ঘিরে শুনতে থাকে লোকায়ত গান। শ্রোতারা শুধু আগ্রহভরে গান শোনে না, যাওয়ার সময় কবিয়ালের কাছ থেকে দু-একটি কবিতার পুঁথি কিনে নেয়।
সুফি-সাধকদের ঐতিহ্যের ধারায় সমন্বয়ধর্মীর বিশেষত্বে মাইজভাণ্ডারী তরিকা সৃষ্টি। তাই স্বাভাবিকভাবে মাইজভাণ্ডারী ওরসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সর্বধর্মের মানুষের এক মহামিলন ক্ষেত্র।
মাইজভাণ্ডারী মেলা মূলত ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক মিলনমেলা হলেও আরও কিছু চরিত্র এই মেলা অর্জন করেছে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অবাধ গমনাগমন, আশপাশের উপজাতীয় এবং স্থানীয় কৃষিজীবী ও কুটিরশিল্পের পণ্য উত্পাদনকারী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ। তার পরও এই মেলার শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ মাইজভাণ্ডারীসংগীত। এই মেলায় ক্ষুদ্র বই প্রকাশকেরা তাঁদের নতুন-পুরোনো মাইজভাণ্ডারী গানের বই বিক্রি করতে চলে আসেন।
মেলায় যখন গ্রাম্য কবিয়ালেরা সুর করে কবিতা পড়েন, তখন শ্রোতার দল তাঁকে ঘিরে শুনতে থাকে লোকায়ত গান। শ্রোতারা শুধু আগ্রহভরে গান শোনে না, যাওয়ার সময় কবিয়ালের কাছ থেকে দু-একটি কবিতার পুঁথি কিনে নেয়।
সুফি-সাধকদের ঐতিহ্যের ধারায় সমন্বয়ধর্মীর বিশেষত্বে মাইজভাণ্ডারী তরিকা সৃষ্টি। তাই স্বাভাবিকভাবে মাইজভাণ্ডারী ওরসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সর্বধর্মের মানুষের এক মহামিলন ক্ষেত্র।
Friday, April 16, 2010
পড়া মনে রাখার কৌশল
০০ শারমিন জাহান ০০
আমাদের মস্তিষ্ক এক বিচিত্র তথা জটিল কারখানা এবং এর কাজ করার মতা অপরিসীম। এক কাজে লাগাতে হলে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। খুব সহজ, তবে নিয়মিত চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা আমাদের মস্তিষ্কের অতি সামান্য অংশই মাত্র ব্যবহার করে থাকি। শতকরা হিসেবে মাত্র ৫% থেকে ৭%। বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানী, মেধাবী ব্যক্তিগণ সর্বোচ্চ ১৫% থেকে ১৮% মস্তিষ্ককে কাজে লাগাতে পেরেছেন। বাকি বিশাল অংশ অলস বসে থাকে। এই বিশাল অলস মস্তিষ্ককে কাজে লাগাতে পারলে মানুষ কি অসাধ্যই না সাধন করতে পারবে; একবার ভেবে দেখুন।
মনে রাখার টিপস্ ঃ
০০ নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন।
০০ এখনই কাজ শুরু করুন, এখনই।
০০ ঘুমের সময় নির্ধারণ করতে হবে এবং তা করতে হবে আপনার ‘বায়োলজিক্যাল ব্লক’ অনুযায়ী।
০০ সকাল হচ্ছে উত্তম সময় পড়ালেখা মনে রাখার। আরো অধিক উত্তম সময় হচ্ছে, সূর্যোদয়ের এক ঘণ্টা পূর্বে।
০০ প্রথমত শব্দ করে পড়তে হবে। এরপর ইচ্ছে হলে শব্দহীনভাবে পড়তে পারেন।
০০ প্রথমে সম্পূর্ণ বিষয়টি একবার বা দু’বার মনযোগ সহকারে পড়ে তারপর দু’তিন লাইন করে মুখস্ত করুন।
০০ একটানা অনেকক্ষণ পড়তে হলে মাঝখানে বিরতি দেয়া উত্তম। এক কিংবা দু’ঘণ্টা পর পর অন্ততঃ পাঁচ মিনিট বিরতি দিতে হবে। এ সময় একটা গান শুনতে পারেন কিংবা সটান শুয়ে পড়তে পারেন। আর যদি আপনি ধর্মে বিশ্বাসী হন তাহলে আপনার ধর্ম নিয়ে ভাবুন এবং মুসলমান হলে আল্লাহর ‘জিকির’ করুন।
০০ পছন্দের তালিকায় মিষ্টি জাতীয় খাবার রাখুন। চিনির শরবত, সাথে লেবু কিংবা শুধু লেবুর শরবত। গ্লুকোজ পানিও পান করতে পারেন। সাবধান! ডায়াবেটিক থাকলে অবশ্যই এসব পরিহার করুন। খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি, ফলফলাদি রাখুন। স্বাভাবিক পুস্টিকর খাবার খেতে চেষ্টা করুন। ধূমপান পরিহার করুন।
০০ অল্প হলেও প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়ুন।
০০ কম হলেও প্রতিদিন অন্ততঃ ৩০ মিনিট হালকা শরীরচর্চা করুন।
০০ প্রতিদিন অন্ততঃ ৫/৭ মিনিট মন খুলে হাসুন।
০০ অযথা কথা পরিহার করুন।
০০ অতিরিক্ত রাত করে ঘুমোতে যাবেন না।
০০ পড়াতে মন না বসলেও প্রথম প্রথম অনিচ্ছা সত্ত্বেও পড়তে বসুন।
আমাদের মস্তিষ্ক এক বিচিত্র তথা জটিল কারখানা এবং এর কাজ করার মতা অপরিসীম। এক কাজে লাগাতে হলে আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। খুব সহজ, তবে নিয়মিত চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা আমাদের মস্তিষ্কের অতি সামান্য অংশই মাত্র ব্যবহার করে থাকি। শতকরা হিসেবে মাত্র ৫% থেকে ৭%। বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানী, মেধাবী ব্যক্তিগণ সর্বোচ্চ ১৫% থেকে ১৮% মস্তিষ্ককে কাজে লাগাতে পেরেছেন। বাকি বিশাল অংশ অলস বসে থাকে। এই বিশাল অলস মস্তিষ্ককে কাজে লাগাতে পারলে মানুষ কি অসাধ্যই না সাধন করতে পারবে; একবার ভেবে দেখুন।
মনে রাখার টিপস্ ঃ
০০ নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন।
০০ এখনই কাজ শুরু করুন, এখনই।
০০ ঘুমের সময় নির্ধারণ করতে হবে এবং তা করতে হবে আপনার ‘বায়োলজিক্যাল ব্লক’ অনুযায়ী।
০০ সকাল হচ্ছে উত্তম সময় পড়ালেখা মনে রাখার। আরো অধিক উত্তম সময় হচ্ছে, সূর্যোদয়ের এক ঘণ্টা পূর্বে।
০০ প্রথমত শব্দ করে পড়তে হবে। এরপর ইচ্ছে হলে শব্দহীনভাবে পড়তে পারেন।
০০ প্রথমে সম্পূর্ণ বিষয়টি একবার বা দু’বার মনযোগ সহকারে পড়ে তারপর দু’তিন লাইন করে মুখস্ত করুন।
০০ একটানা অনেকক্ষণ পড়তে হলে মাঝখানে বিরতি দেয়া উত্তম। এক কিংবা দু’ঘণ্টা পর পর অন্ততঃ পাঁচ মিনিট বিরতি দিতে হবে। এ সময় একটা গান শুনতে পারেন কিংবা সটান শুয়ে পড়তে পারেন। আর যদি আপনি ধর্মে বিশ্বাসী হন তাহলে আপনার ধর্ম নিয়ে ভাবুন এবং মুসলমান হলে আল্লাহর ‘জিকির’ করুন।
০০ পছন্দের তালিকায় মিষ্টি জাতীয় খাবার রাখুন। চিনির শরবত, সাথে লেবু কিংবা শুধু লেবুর শরবত। গ্লুকোজ পানিও পান করতে পারেন। সাবধান! ডায়াবেটিক থাকলে অবশ্যই এসব পরিহার করুন। খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি, ফলফলাদি রাখুন। স্বাভাবিক পুস্টিকর খাবার খেতে চেষ্টা করুন। ধূমপান পরিহার করুন।
০০ অল্প হলেও প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়ুন।
০০ কম হলেও প্রতিদিন অন্ততঃ ৩০ মিনিট হালকা শরীরচর্চা করুন।
০০ প্রতিদিন অন্ততঃ ৫/৭ মিনিট মন খুলে হাসুন।
০০ অযথা কথা পরিহার করুন।
০০ অতিরিক্ত রাত করে ঘুমোতে যাবেন না।
০০ পড়াতে মন না বসলেও প্রথম প্রথম অনিচ্ছা সত্ত্বেও পড়তে বসুন।
Friday, April 9, 2010
ডিজিটাল
ডিজিটাল বলতে কী বোঝায়
ডিজিটাল বলতে একটি ইলেকট্রনিক টেকনোলজি বা প্রযুক্তি যার মাধ্যমে তথ্য জেনারেট, তথ্য সংরক্ষণ এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করাকে বোঝায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাঝে উপযুক্ত সমন্বয় সাধন এবং এর সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকৃত ডিজিটাল রূপ।
ডিজিটাল বাংলাদেশে যা থাকবে
সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে যা থাকবে বা যা থাকা বাঞ্ছনীয় তার একটি ধারণা দেয়া যেতে পারে, যা নিম্নরূপ :
ম্যানুয়াল ফাইল ব্যবস্থাপনার অপসারণ
যে কোনো অফিসে ফাইলের ওপর ফাইল স্তূপ হয়ে থাকবে এবং সেখান থেকে প্রয়োজনমাফিক যে কোনো তথ্য খুঁজে বের করা সত্যিই সময় সাপেক্ষ। অর্থাত্ এতে করে যথেষ্ট সময়ের অপচয় ঘটে। বরং এর চেয়ে প্রতিটি ডেস্কে একটি কম্পিউটার থেকে যে কোনো সময় তথ্য খুঁজে নেয়া এই ভোগান্তিকে অনেকাংশে কমিয়ে দিবে। তবে এ ব্যাপারে দেশীয় সফটওয়্যারের উপর গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।
ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা
সার্বিকভাবে প্রতিটি সেক্টরে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা দরকার। ম্যানুয়াল ফাইল ব্যবস্থাপনার চেয়ে কম্পিউটারাইজড সিস্টেমে সব ইনফরমেশন বা তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। আর এভাবে প্রতিটি সেক্টরে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে ওঠবে। ইতিমধ্যে সরকার সাশ্রয়ী মূল্যে ল্যাপটপ ছাড়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। মালেয়শিয়ান প্রতিষ্ঠান টিএফটির প্রযুক্তিগত সহায়তায় বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর বাস্তবায়ন কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা দেখার বিষয়।
কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ানো
শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, আমরা চাই প্রতিশ্রুতির সঠিক বাস্তবায়ন। আমরা সামনের দিনে ডিজিটাল বাংলাদেশ, একটি প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ পাবার অপেক্ষায় রয়েছি। আর এজন্য শহর এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কম্পিউটারের ব্যবহার অধিক হারে বাড়ানো প্রয়োজন।
ই-গভর্নমেন্ট
ই-গভর্নমেন্ট অর্থাত্ ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট। বাংলাদেশে ই-গভর্নেন্সের সূচনা হয় ১৯৯০ সালের দিকে। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সরকার কম্পিউটার সামগ্রীর উপর থেকে কর প্রত্যাহার করে নেয়। ২০০১ সালের শুরুতে ‘জাতীয় আইসিটি টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আইসিটির প্রয়োগ এখনও সীমিত পর্যায়ে রয়েছে। জরুরি হয়ে পড়েছে নির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যাওয়া। কেবল কম্পিউটারায়নই যথেষ্ট নয়, চাই প্রতিটি সেক্টরে, প্রতিটি পর্যায়ে কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের সঠিক বাস্তবায়ন। ধরা যাক, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। এ ওয়েবসাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ সাইটগুলো টেক্সট কিংবা গ্রাফিক্সগুলো তথ্য বিবরণ থাকলে হবে না, বিশাল তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ ডেটাবেজ থাকা বাঞ্ছনীয় এবং একেকটি মন্ত্রণালয়ের সাথে আরেকটি মন্ত্রণালয়ের তথ্যের সম্পর্ক স্থাপন থাকবে অবশ্যই। অর্থাত্ প্রয়োজনমাফিক প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের মাঝে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে অনায়াসে। যে কোন সময় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য হালনাগাদ করা যাবে খুব সহজে। দেশের জনসাধারণ যেন এ ওয়েবসাইটগুলো থেকে প্রয়োজনানুসারে তথ্য নিতে পারে এর নিশ্চয়তা থাকা অপরিহার্য। কিছু কিছু তথ্য হতে পারে ব্যবহারকারীর নিজস্ব তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং ব্যবহারকারীর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকা ভালো। সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারী তার ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে তা নিয়ন্ত্রণ করবেন। এতে করে ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে।
টেলিসেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো
বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের এক হিসাবমতে, বাংলাদেশে দুই হাজারের অধিক টেলিসেন্টার বিদ্যমান রয়েছে। আর এ টেলিসেন্টারগুলো গড়ে ওঠছে প্রধানত বেসরকারি উদ্যোগেই। সরকারকে এ ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে, একটি নির্দিষ্ট কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিসেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো উচিত।
নাগরিক সেবাগুলো ডিজিটালাইজেশন
ডিজিটাল বাংলাদেশে জনসাধারণ ঘরে বসেই অধিকাংশ নাগরিক সুবিধা পাবেন। যেমন মানুষ অনলাইনে কিংবা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে সব বিল যেমন টেলিফোন, গ্যাস ইত্যাদি পরিশোধ করবেন। ইতিমধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবাও পাওয়া যাবে অনলাইনে। টেলিমেডিসিন সেবা এখন হাতের মুঠোয়। যানবাহনের সময়সূচি পাওয়া যাচ্ছে নির্দিষ্ট ওয়েব পোর্টাল থেকে। ডিজিটাল পাসপোর্ট প্রক্রিয়া অনেকটা স্তিমিত থাকলেও ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে মাত্র। ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে শুভ সূচনা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস কার্যক্রম চালু হয়েছে ২০০৯ সালের নভেম্বর থেকে। তবে আর একটি আশার কথা, বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ব্যাংককে পরীক্ষামূলকভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করার অনুমতি দিয়েছে।
নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবস্থা গড়ে তোলা
কেবল নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবস্থার মাধ্যমে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা গড়ে ওঠবে। ফলে বিকল্পভাবে ইন্টারনেট সার্ভিসসহ অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সিঙ্গাপুর বা হংকংয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। চড়া দামের ভি-স্যাট অব্যাহত রাখার প্রয়োজন আসবে না।
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা প্রসার রোধ করা উচিত
কিছুদিন হলো অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। সরকারের উচিত অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসার প্রসার ঘটতে না দেয়া। বরং বৈধভাবে ভিওআইপি প্রযুক্তির বিস্তারে সরকারকে যথার্থ উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স
সম্প্রতি সরকার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে একটি সার্কুলার জারি করে আইসিটি টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। বলা হচ্ছে, এই টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সরকার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা সম্ভব। এর আওতায় সংক্ষিপ্ত মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা জরুরি। এ কমিটি জাতীয় কার্যক্রমের একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবে। এক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি স্তরে ডিজিটাল রূপ দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে দ্রুতগতিতে।
চাই সঠিক বাস্তবায়ন
সরকারের সব কার্যক্রম এবং তথ্যাবলী ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত থাকবে। এতে বরং সুবিধা হবে সরকারের। যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের প্রতিটি পর্যায়ে আগে ডিজিটাইলেশন অর্থাত্ কম্পিউটারায়ন পদ্ধতির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। এসব না করলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন যে তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে যাবে।
ইমেইল : walisearch@yahoo.com /সাদ আবদুল ওয়ালী
ডিজিটাল বলতে একটি ইলেকট্রনিক টেকনোলজি বা প্রযুক্তি যার মাধ্যমে তথ্য জেনারেট, তথ্য সংরক্ষণ এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করাকে বোঝায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাঝে উপযুক্ত সমন্বয় সাধন এবং এর সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকৃত ডিজিটাল রূপ।
ডিজিটাল বাংলাদেশে যা থাকবে
সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে যা থাকবে বা যা থাকা বাঞ্ছনীয় তার একটি ধারণা দেয়া যেতে পারে, যা নিম্নরূপ :
ম্যানুয়াল ফাইল ব্যবস্থাপনার অপসারণ
যে কোনো অফিসে ফাইলের ওপর ফাইল স্তূপ হয়ে থাকবে এবং সেখান থেকে প্রয়োজনমাফিক যে কোনো তথ্য খুঁজে বের করা সত্যিই সময় সাপেক্ষ। অর্থাত্ এতে করে যথেষ্ট সময়ের অপচয় ঘটে। বরং এর চেয়ে প্রতিটি ডেস্কে একটি কম্পিউটার থেকে যে কোনো সময় তথ্য খুঁজে নেয়া এই ভোগান্তিকে অনেকাংশে কমিয়ে দিবে। তবে এ ব্যাপারে দেশীয় সফটওয়্যারের উপর গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।
ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা
সার্বিকভাবে প্রতিটি সেক্টরে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা দরকার। ম্যানুয়াল ফাইল ব্যবস্থাপনার চেয়ে কম্পিউটারাইজড সিস্টেমে সব ইনফরমেশন বা তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। আর এভাবে প্রতিটি সেক্টরে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে ওঠবে। ইতিমধ্যে সরকার সাশ্রয়ী মূল্যে ল্যাপটপ ছাড়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। মালেয়শিয়ান প্রতিষ্ঠান টিএফটির প্রযুক্তিগত সহায়তায় বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর বাস্তবায়ন কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা দেখার বিষয়।
কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ানো
শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, আমরা চাই প্রতিশ্রুতির সঠিক বাস্তবায়ন। আমরা সামনের দিনে ডিজিটাল বাংলাদেশ, একটি প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ পাবার অপেক্ষায় রয়েছি। আর এজন্য শহর এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কম্পিউটারের ব্যবহার অধিক হারে বাড়ানো প্রয়োজন।
ই-গভর্নমেন্ট
ই-গভর্নমেন্ট অর্থাত্ ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট। বাংলাদেশে ই-গভর্নেন্সের সূচনা হয় ১৯৯০ সালের দিকে। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সরকার কম্পিউটার সামগ্রীর উপর থেকে কর প্রত্যাহার করে নেয়। ২০০১ সালের শুরুতে ‘জাতীয় আইসিটি টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আইসিটির প্রয়োগ এখনও সীমিত পর্যায়ে রয়েছে। জরুরি হয়ে পড়েছে নির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যাওয়া। কেবল কম্পিউটারায়নই যথেষ্ট নয়, চাই প্রতিটি সেক্টরে, প্রতিটি পর্যায়ে কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের সঠিক বাস্তবায়ন। ধরা যাক, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। এ ওয়েবসাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ সাইটগুলো টেক্সট কিংবা গ্রাফিক্সগুলো তথ্য বিবরণ থাকলে হবে না, বিশাল তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ ডেটাবেজ থাকা বাঞ্ছনীয় এবং একেকটি মন্ত্রণালয়ের সাথে আরেকটি মন্ত্রণালয়ের তথ্যের সম্পর্ক স্থাপন থাকবে অবশ্যই। অর্থাত্ প্রয়োজনমাফিক প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের মাঝে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে অনায়াসে। যে কোন সময় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য হালনাগাদ করা যাবে খুব সহজে। দেশের জনসাধারণ যেন এ ওয়েবসাইটগুলো থেকে প্রয়োজনানুসারে তথ্য নিতে পারে এর নিশ্চয়তা থাকা অপরিহার্য। কিছু কিছু তথ্য হতে পারে ব্যবহারকারীর নিজস্ব তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং ব্যবহারকারীর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকা ভালো। সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারী তার ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে তা নিয়ন্ত্রণ করবেন। এতে করে ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে।
টেলিসেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো
বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের এক হিসাবমতে, বাংলাদেশে দুই হাজারের অধিক টেলিসেন্টার বিদ্যমান রয়েছে। আর এ টেলিসেন্টারগুলো গড়ে ওঠছে প্রধানত বেসরকারি উদ্যোগেই। সরকারকে এ ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে, একটি নির্দিষ্ট কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিসেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো উচিত।
নাগরিক সেবাগুলো ডিজিটালাইজেশন
ডিজিটাল বাংলাদেশে জনসাধারণ ঘরে বসেই অধিকাংশ নাগরিক সুবিধা পাবেন। যেমন মানুষ অনলাইনে কিংবা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে সব বিল যেমন টেলিফোন, গ্যাস ইত্যাদি পরিশোধ করবেন। ইতিমধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবাও পাওয়া যাবে অনলাইনে। টেলিমেডিসিন সেবা এখন হাতের মুঠোয়। যানবাহনের সময়সূচি পাওয়া যাচ্ছে নির্দিষ্ট ওয়েব পোর্টাল থেকে। ডিজিটাল পাসপোর্ট প্রক্রিয়া অনেকটা স্তিমিত থাকলেও ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে মাত্র। ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে শুভ সূচনা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস কার্যক্রম চালু হয়েছে ২০০৯ সালের নভেম্বর থেকে। তবে আর একটি আশার কথা, বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ব্যাংককে পরীক্ষামূলকভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করার অনুমতি দিয়েছে।
নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবস্থা গড়ে তোলা
কেবল নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবস্থার মাধ্যমে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা গড়ে ওঠবে। ফলে বিকল্পভাবে ইন্টারনেট সার্ভিসসহ অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সিঙ্গাপুর বা হংকংয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। চড়া দামের ভি-স্যাট অব্যাহত রাখার প্রয়োজন আসবে না।
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা প্রসার রোধ করা উচিত
কিছুদিন হলো অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। সরকারের উচিত অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসার প্রসার ঘটতে না দেয়া। বরং বৈধভাবে ভিওআইপি প্রযুক্তির বিস্তারে সরকারকে যথার্থ উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স
সম্প্রতি সরকার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে একটি সার্কুলার জারি করে আইসিটি টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। বলা হচ্ছে, এই টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সরকার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা সম্ভব। এর আওতায় সংক্ষিপ্ত মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা জরুরি। এ কমিটি জাতীয় কার্যক্রমের একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবে। এক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি স্তরে ডিজিটাল রূপ দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে দ্রুতগতিতে।
চাই সঠিক বাস্তবায়ন
সরকারের সব কার্যক্রম এবং তথ্যাবলী ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত থাকবে। এতে বরং সুবিধা হবে সরকারের। যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের প্রতিটি পর্যায়ে আগে ডিজিটাইলেশন অর্থাত্ কম্পিউটারায়ন পদ্ধতির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। এসব না করলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন যে তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে যাবে।
ইমেইল : walisearch@yahoo.com /সাদ আবদুল ওয়ালী
লালনে দোল
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া গ্রামে লালনের সমাধি প্রাঙ্গণে দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক সাধু-ফকিরের সমাবেশ ঘটে। আগে দোলপূর্ণিমার এই সাধু সমাবেশ সাধুসঙ্গ নামে পরিচিত ছিল। এই সাধুসঙ্গে লালনপন্থী সাধু-ফকির একত্র হয়ে গুরুকার্য পালন করতেন। লালন দোলপূর্ণিমার এই সাধুসঙ্গ প্রবর্তন করেছিলেন সাধু-ফকিরদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের পথ রচনা করার জন্য। তখনকার সাধুসঙ্গে সাধুগুরুরা একত্র হয়ে ভোরে গুরুকার্য সেরে দৈন্য গান গেয়ে নিয়ে দুপুর অবধি গোষ্ঠ গান পরিবেশন করতেন। এই গোষ্ঠ গানের অনুষ্ঠানের ফাঁকে মাঝখানে বাল্যসেবা ও দুপুরের স্নান সেরে নিতেন। দুপুরে গুরুকার্য, পারশ ইত্যাদির পর পূর্ণসেবা, সন্ধ্যায় গুরুকার্য ও প্রার্থনাগীতির পর মধ্যরাত্রি অবধি গান, জ্ঞানকথার আলাপন এবং শেষে অধিবাস অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমান লালন-প্রবর্তিত দোলপূর্ণিমার সাধুসঙ্গ সম্পূর্ণ রূপান্তরিত হয়েছে। এখন দোলপূর্ণিমার আয়োজন পুরোপুরিভাবে ‘লালনমেলা’ বা ‘লালন স্মরণোৎসব’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এর চরিত্রগুণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বারোয়ারি মেলার সব লক্ষণ। যেমন এই মেলার একটি প্রান্তজুড়ে থাকে বাউলদের বাদ্যযন্ত্র বিক্রির দোকান। এসব দোকানে সাজানো বিচিত্র ধরনের একতারা, দোতরা, ডুগি, প্রেমজুড়ি বা কাঠজুড়ি, মন্দিরার ভেতর থেকে দেশ-বিদেশের সাধুরা তাদের প্রয়োজনীয় বাদ্যযন্ত্রটি কিনে থাকেন। অন্য প্রান্তে থাকে লালনপন্থী তাঁতি সাধুদের তাঁতে তৈরি গামছা-লুঙ্গি বিক্রির দোকান। এ ছাড়া থাকে প্লাস্টিকের সামগ্রী, কারুপণ্য থেকে শুরু করে আসবাবসামগ্রী, পাটি, মাটির পুতুল, মাটির হাঁড়ি, গয়না ইত্যাদির দোকান। পাশাপাশি সাঁইজির গানের ক্যাসেটসহ গানের বইও বিক্রি হয়। তবে ছেঁউড়িয়ার দোলপূর্ণিমার অনুষ্ঠান এমন মেলার চেহারা পেয়েছে খুব বেশি দিন আগে নয়। আসলে বিগত শতকের পঞ্চাশ দশক পর্যন্ত উত্সবটি ছিল শুধু সাধু-ভক্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সে সময় এখানকার অনুষ্ঠানের একটি স্বতঃস্ফূর্ততাও বর্তমান ছিল। কিন্তু ষাটের দশকে লালন আখড়ার অনুষ্ঠান দুটি প্রশাসনিক সহায়তায় ক্রমশ আনুষ্ঠানিকতার ভেতরে আবদ্ধ হয়ে এর স্বতঃস্ফূর্ত রূপটি হারিয়ে ফেলে।

তার পরও এ বছর দোলপূর্ণিমার অনুষ্ঠানের মধ্যে লালনের সমাধিকে ঘিরে একটি ভেক খিলাফত অনুষ্ঠান হয়েছে।
তার পরও এ বছর দোলপূর্ণিমার অনুষ্ঠানের মধ্যে লালনের সমাধিকে ঘিরে একটি ভেক খিলাফত অনুষ্ঠান হয়েছে।
পুণ্যস্নান
সাধারণত চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমী বা অশোকাষ্টমী তিথিতে পুণ্যস্নান শাস্ত্রমতে নির্ধারিত। এ সময় নারায়ণগঞ্জ জেলার লাঙ্গলবন্দের আদি ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন ধর্মাবলম্বী কয়েক লাখ পুণ্যার্থী স্নান করেন। তাঁরা এই আদি ব্রহ্মপুত্র নদে নেমে ‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লোহিত্য, তুমি আমার পাপ হরণ করো’ এই মন্ত্র উচ্চারণ করেন। সঙ্গে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, আমের পল্লব প্রভৃতি সহযোগে পুণ্যস্নান করে থাকেন। এই স্নান উপলক্ষে লাঙ্গলবন্দের নদীতীরে সেখানকার ঐতিহ্যবাহী বাসন্তী মেলা বসে। এই মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার থেকে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যে বর্ণিল মেলা জমে ওঠে, তার পাশেই বসে সারা দেশ থেকে আগত সাধু-সন্ন্যাসীদের আস্তানা। মেলার প্রকৃত অলংকার দেশি-বিদেশি বিচিত্র সব শখের সামগ্রীর পসরা, যেমন—কাঠের ঘর সাজানোর উপকরণ, মাটি-কাঠ-ঝিনুক দিয়ে তৈরি গয়না, শাখা, নকশি জুতা-স্যান্ডেল। এর বাইরে পুণ্যার্থীদের পূজার উপকরণ ও বাহারি খাবারের দোকান তো আছেই।
দেশ-বিদেশের পুণ্যার্থীরা পাপ মোচনের আশায় লাঙ্গলবন্দ ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গান্ধীঘাট, রাজঘাট, ললিত সাধুর ঘাট, অন্নপূর্ণা মন্দির ঘাট, জয়কালী মন্দির ঘাট, দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ী ঘাট, আকরী সাধুর ঘাটসহ মোট ১৪টি ঘাটে স্নান সম্পন্ন করে ফিরে যাওয়ার পথে পুণ্যস্নান মেলা থেকে স্মৃতিস্বরূপ কিছু না কিছু কিনে নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া ময়মনসিংহ জেলার শহরের গাঙ্গিনার পাড়সংলগ্ন শম্ভুপুরের ব্রহ্মপুত্র নদেও হয় পুণ্যস্নান। সেখানেও নদীর পাড়ে মেলা বসে। ময়মনসিংহ ছাড়াও সুনামগঞ্জ ও দিনাজপুরের পার্বতীপুরসহ আরও কয়েকটি জেলায়ও জাঁকজমকভাবে পুণ্যস্নান মেলা বসে।
দেশ-বিদেশের পুণ্যার্থীরা পাপ মোচনের আশায় লাঙ্গলবন্দ ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গান্ধীঘাট, রাজঘাট, ললিত সাধুর ঘাট, অন্নপূর্ণা মন্দির ঘাট, জয়কালী মন্দির ঘাট, দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ী ঘাট, আকরী সাধুর ঘাটসহ মোট ১৪টি ঘাটে স্নান সম্পন্ন করে ফিরে যাওয়ার পথে পুণ্যস্নান মেলা থেকে স্মৃতিস্বরূপ কিছু না কিছু কিনে নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া ময়মনসিংহ জেলার শহরের গাঙ্গিনার পাড়সংলগ্ন শম্ভুপুরের ব্রহ্মপুত্র নদেও হয় পুণ্যস্নান। সেখানেও নদীর পাড়ে মেলা বসে। ময়মনসিংহ ছাড়াও সুনামগঞ্জ ও দিনাজপুরের পার্বতীপুরসহ আরও কয়েকটি জেলায়ও জাঁকজমকভাবে পুণ্যস্নান মেলা বসে।
হোলি উত্সব
প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা, তথা দোলপূর্ণিমায় বাংলাদেশের হিন্দু-বৈষ্ণব মানুষেরা হোলি উত্সব উদ্যাপন করেন। কথিত আছে, একদিন শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধা তাঁদের সখাসখি বা ভক্তদের সঙ্গে এক জায়গায় বসে আলাপ করছিলেন। একসময় আকস্মিকভাবে শ্রীরাধার ঋতুস্রাব ঘটে। সখাসখি বা ভক্তদের কাছে শ্রীরাধা যেন বিব্রত না হন, সে জন্য হোলির আয়োজন করেন শ্রীকৃষ্ণ। অন্যদিকে একথাও বলা হয়, বর্ষ শুরুর আগে দেহ অশুচি থাকলে যমদূত কাউকে স্পর্শ করতে পারে না। তাই হোলি উত্সব করে রং মেখে দেহকে রাঙিয়ে তোলা হয়। প্রকৃতির বিচিত্র-বর্ণিল রঙের প্রতি একাত্ম হতেই হোলির প্রচলন হয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। হোলি উত্সব বিভিন্ন বর্ণের তরল রং একে অপরকে কখনো দূর থেকে ছিটিয়ে দেয়। কখনো আবার কাছে গিয়ে গায়ে-মুখে হাত দিয়ে হাস্যোজ্জ্বল হয়ে তরল রং মাখিয়ে দেয়। হোলি উত্সব শুষ্ক রং মাখানো তেমন একটা চোখে পড়ে না।
শুধু রং ছিটানোই হোলি উত্সব প্রধান আনন্দ নয়, হোলি উত্সবে বিভিন্ন স্থানে আদি রসাত্মক গানও পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশে হোলি উৎসবে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে যুবক ও পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিরা, এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরও অংশ নিতে দেখা যায়। এসব অনুষ্ঠানে আজকাল হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমান-খ্রিষ্টানদেরও অংশ নিতে দেখা যায়। এ দেশের সবচেয়ে জমজমাট হোলি উৎসব হয় পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার কালীমন্দির এলাকায়।
শুধু রং ছিটানোই হোলি উত্সব প্রধান আনন্দ নয়, হোলি উত্সবে বিভিন্ন স্থানে আদি রসাত্মক গানও পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশে হোলি উৎসবে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে যুবক ও পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিরা, এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরও অংশ নিতে দেখা যায়। এসব অনুষ্ঠানে আজকাল হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমান-খ্রিষ্টানদেরও অংশ নিতে দেখা যায়। এ দেশের সবচেয়ে জমজমাট হোলি উৎসব হয় পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার কালীমন্দির এলাকায়।
শাড়ি
উড়ছে শাড়ি, উড়ছে আঁচল_পৃথিবীর যেখানেই হোক, এই ছবি আমাদের বাঙালি বা ভারতীয় নারীর চিরায়ত রূপ। তবে কালে কালে পাল্টেছে শাড়ির রকম, পরার ধরণধারন। ১ এপ্রিল এই শাড়ির বিবর্তন নিয়েই সিটি ব্যাংক ও আমেরিকান এক্সপ্রেসের সহযোগিতায় আহসান মঞ্জিলে '১০০ বছরে শাড়ীর বিবর্তন' শীর্ষক একটি শো করলেন ডিজাইনার তুতলী রহমান। সেই শো নিয়েই আজকের আয়োজন। লেখা : রিদওয়ান আক্রাম, ছবি : মোহাম্মদ আসাদশাটী থেকে শাড়ি
শাড়ির চল হয়েছিল ঠিক কবে? নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। খানিকটা অনুমান করে নেওয়া যায়! সূত্র হিসেবে নেওয়া যাক 'শাড়ি' শব্দটির উৎস-সময়কালকে। সংস্কৃত 'শাটী' থেকে এসেছে 'শাড়ি'। তবে অনেকের ধারণা, সংস্কৃত হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও আদতে 'শাটী' ধার করা শব্দ। আর্যরা ভারতবর্ষে আসার আগেই নাকি 'শাটী' শব্দটির অস্তিত্ব ছিল। সেই হিসেবে বলা যেতেই পারে, শাড়ির ইতিহাস সাড়ে তিন হাজার বছর কিংবা তারও বেশি পুরনো। আর্য ভাষায় 'শাড়ি'কে আরো বিভিন্ন শব্দে আখ্যায়িত করা হয়েছে_'সাটক', 'সাটিকা'। আবার 'মহাভারত'-এ উলি্লখিত দ্রৌপদীর যে 'বস্ত্রহরণ' করা হয়েছিল, অনুমিত হয়, সেটাও শাড়িই ছিল। গুপ্ত যুগের (আনুমানিক ৩০০ থেকে ৫০০ সাল পর্যন্ত) বিখ্যাত কবি কালিদাসের 'কুমারসম্ভব'-এ শাড়ির কথা উল্লেখ আছে। গুপ্ত আমলের ইলোরা অজন্তা গুহার প্রাচীন চিত্রাবলি বলে দেয়, খ্রিস্টাব্দ শুরুর সময়ে শাড়ির অস্তিত্ব ছিল। পাহাড়পুর-ময়নামতির পোড়া ফলক থেকেও প্রমাণ যায়, হাজার বছর আগে এই পূর্ববঙ্গে শাড়ির চল ছিল। তবে এসব শাড়ির সঙ্গে আজকের শাড়ির তফাৎ রয়েছে। ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, আদিমকালে পূর্ব-দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে সেলাই করা কাপড় পরার চল ছিল না। এই অখণ্ড বস্ত্রটি পুরুষ পরলে হতো ধুতি আর মেয়েরা পরলে শাড়ি। উভয়ের শরীরের ওপরের অংশই থাকত উন্মুক্ত। তবে পালা-পার্বণে উচ্চবংশীয় নারীরা ওড়না জাতীয় কাপড়ে নিজেকে ঢেকে নিত।
মধ্যযুগের কবিদের কাছ থেকে শুধু শাড়ির কথাই জানা যায় না, শাড়ির রঙের কথাও জানা যায়। চৌদ্দ শতকের কবি চণ্ডীদাস লিখেছেন, 'নীল শাড়ি মোহনকারী/উছলিতে দেখি পাশ'। প্রথম মা হওয়া নারীকে উপহার হিসেবে দেওয়া হতো লাল শাড়ি। শাড়ি পরার ক্ষেত্রে ধনী-গরিব বিভাজন ছিল। ধনীরা পরতেন মিহি মখমল কাপড়ের শাড়ি আর গরিবের শাড়ি ছিল সাধারণ সুতি।
মুসলমানরা আগমনের ফলে আরও অনেক কিছুর পাশাপাশি পোশাক-পরিচ্ছদেও লাগে পরিবর্তনের হাওয়া। তুর্কি-আফগান-মোগল সংস্কৃতির ধারা স্থানীয়রাও গ্রহণ করে। পাগড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও পায়জামার মতো পোশাক জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও শাড়ির গুরুত্ব কিন্তু কমে যায়নি। দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের নারীরা শাড়িকেই নিজেদের পরিধানের প্রধান বস্ত্র হিসেবে আঁকড়ে ধরে থাকে। সম্ভবত মোগল আমলেই চালু হয় ব্লাউজ ও উর্ধ্বাঙ্গ ঢাকার রীতি। তবে তা উচ্চবিত্তদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
মাদাম বেলনোসের চিত্রে উনিশ শতকের প্রথমদিকে গ্রামবাংলার অন্তঃপুরের যে ছবি পাওয়া যায়, তাতে দেখা যায়, এক প্যাঁচেই শাড়ি পরেছেন বাংলার নারী। অধিকাংশ শাড়ির রংই সাদা। তবে পাড় হতো চিকন এবং লাল। সায়া-ব্লাউজ কিংবা অন্তর্বাসের চল ছিল না।
১৮৮৯ সালে ঢাকা জেলার একটি হিন্দু পরিবারের ওপর করা জরিপে দেখা যায়, একজন মহিলা বছরে পাঁচ-ছয়টি শাড়ি ব্যবহার করে থাকেন। এগুলোর পেছনে খরচ হতো ৪ রুপি। ফ্যানি পার্কস ১৮৫১ সালে তাঁর বইয়ে লিখেছেন, 'ধনী মহিলারাও শাড়ি পরত। শীতের সময় ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়তি হিসেবে ব্যবহার করত চাদর।' তবে তখনো ব্লাউজ-সায়া-পেটিকোটের চল হয়নি, চালু করল কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল। ফুলহাতা ব্লাউজ এবং কুচিছাড়া শাড়িই ছিল সেই সময় উঁচু সমাজের নারীদের প্রধান ফ্যাশন। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শাড়ি আর ব্লাউজ নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে; এবং ভবিষ্যতেও হতে থাকবে।
তবে শাড়ির কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে, তা বলা যাবে না। ভারতবর্ষে শাসক গোষ্ঠী পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নাটকীয়ভাবে বদলেছে পুরুষদের পোশাক কিন্তু শাড়িকে তার প্রধান পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে আঁকড়ে রেখেছে নারী। তাই বলা যেতেই পারে, শাড়ি আর ভারতীয় নারী একে অপরের পরিপূরক।মোগল যুগ
মোগলদের মধ্যে সম্রাট আকবরই প্রথম ভারতবর্ষের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা শুরু করেন। ভারতীয় নারীদের নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মোগল সংস্কৃতির সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন। সেই ধারাবাহিকতায়ই মোগলাই আভিজাত্যে যোগ হল শাড়ি।
নানা রকম দামি পাথর ছাড়াও সোনা-রূপার সুতা দিয়ে শাড়িতে নকশার কাজ করা হতো। মোগলদের আগ্রহের জন্য মসলিনের শাড়ির উপস্থিতিও থাকত জেনানা মহলে। মোগলদের জন্য মসলিন কাপড় সংগ্রহের জন্য সরকারি লোক নিয়োগ দেওয়া হতো।জমিদারি আমল
মোগলদের বাংলা জয়ের পর 'জমিদার' একটি বিশেষ পদবি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। জমিদার মানেই বিশাল সম্পত্তির মালিক। স্বাভাবিকভাবেই সেই সময়ে ধনিক শ্রেণী হিসেবে 'জমিদার' গোষ্ঠীর আত্দপ্রকাশ ঘটে। তাদের সময়ে শাড়ি পরা হতো এক প্যাঁচে। ব্লাউজও এ সময়ে শাড়ির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিশেষ করে ঠাকুর পরিবারের মেয়েরা ব্লাউজকে সাধারণের কাছে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন।ষাটের দশক
ষাটের দশকের শেষ থেকে সত্তরে প্রথম দিকে হিপ্পীদর স্লোগান ছিল 'ফুলের শক্তি'। সমসাময়িক সময়ে চলা ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে 'ফুল'। পোশাকের নকশাতেও থাকত ফুলের প্রাধান্য, এমনকি সাজসজ্জায়ও। পরে এ ফ্যাশনে নতুন মাত্রা আনে হিন্দি সিনেমার বহুল প্রচলিত 'মিনি শাড়ি'। বিশেষ করে বলা যেতে পারে 'সত্যম শিবম সুন্দরম' সিনেমাতে জিনাত আমানের পরা শাড়ির কথা। মিনি শাড়ির পাশাপাশি 'টেডি শাড়ি'র কথাও বলা যায়, যা অভিনেত্রী মমতাজ জনপ্রিয় করেছিলেন। শাড়ির সঙ্গে সঙ্গে ব্লাউজেও লাগে পরিবর্তনের হাওয়া। ব্লাউজের গলা করা হয় অনেকটা নৌকার আদলে এবং ব্লাউজের পেছনের দিকটা আটকানোর জন্য থাকত মেগি ক্যাপের বোতামভিক্টোরীয় যুগ
উনিশ শতকের চলি্লশ দশক থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কে বলা হয়ে থাকে 'ভিক্টোরিয়ান যুগ'। এ যুগে ফ্যাশনের মূল কথাই ছিল কাপড়ে সারা শরীর ঢাকা থাকতে হবে। এমনকি গোড়ালি দেখানোটাও অসম্মানকর হিসেবে বিবেচিত হতো। ভারতের সেই গরমেও ইংরেজরা ভিক্টোরিয়ান ফ্যাশনের পোশাক পরতে পিছপা হননি। ব্রিটিশদের সংস্পর্শে থাকা জমিদার ও স্থানীয় ধনীদের পোশাক-পরিচ্ছদেও যোগ হয় ভিক্টোরিয়ান ফ্যাশনের স্টাইল। এ সময়ে শাড়ির সঙ্গে ফুলহাতা ব্লাউজ এবং পেটিকোট পরার চল শুরু হয়। এই রীতিতে শাড়ি পরাটা বাঙালি নারীর চিরায়ত এক প্যাঁচে শাড়ি পরার ধারণাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়।১৯৪০-৫০ দশক
ব্রিটিশমুক্ত ভারতে ১৯৪০ দশকের শেষের দিক থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিল হিন্দি চলচ্চিত্রের 'সোনালি সময়'। এসব চলচ্চিত্রের নায়িকারা ছিলেন তখনকার ফ্যাশন আইকন। নার্গিস, মধুবালা এবং বৈজয়ন্তীমালার মতো নায়িকাদের পোশাক ভাবনা ভারত উপমহাদেশের নারীদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করা শুরু করে। পাশাপাশি বাঙালি নারীদের সামনে ছিল সুচিত্রা সেন। তাঁর ছোট আস্তিন এবং লম্বা গলার ব্লাউজের স্টাইলগুলো ছিল দারুণ অনুকরণীয়। শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজও এ সময়ে হয়ে ওঠে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে সাধারণ ব্লাউজও সমানভাবে জনপ্রিয় হয়১৯৭০-৮০ দশক
দীর্ঘ সংগ্রামের পর বাংলাদেশ ১৯৭১-এ স্বাধীন এক দেশ হিসেবে আত্দপ্রকাশ করে। বাংলাদেশিরা নিজেদের সব কিছুর মধ্যে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করা শুরু করে। তাদের পছন্দের শাড়ির মধ্যে জায়গা করে নেয় দেশি খাদি এবং তাঁতের শাড়ি। আর এসব শাড়ির সঙ্গে চুলের সাজও ছিল আলাদা, করা হতো লম্বা বেণি কিংবা খোঁপা। ফুল দিয়েই সারা হতো খোঁপা অলঙ্কৃত করার কাজ। সে সময় আমরা পোশাকে অনুকরণীয় হিসেবে পেয়েছিলাম কবরী, শাবানা এবং ববিতার মতো অভিনেত্রী।
আন্তর্জাতিক সংগীতে একদিকে তখন ডায়ানা রসের ডিস্কো এবং অন্যদিকে বি জিসের জনপ্রিয় গান। এসবের সঙ্গে যোগ হওয়া ঝলমলে, জমকালো এবং চকচকে পোশাক পরার রীতি এ সময়ের শাড়ির ধরন ঠিক করে দেয়। ঠিক তখনই দৃশ্যপটে আসে হিন্দি চলচ্চিত্র 'সিলসিলা'য় অভিনেত্রী রেখার পরা 'সিলসিলা' শাড়ি। ঘন রঙের এই শাড়ির সঙ্গে পরা হতো হাতাবিহীন কিংবা হোল্টার গলার ব্লাউজ। আর সাজসজ্জার অনুষঙ্গ হিসেবে থাকত সুরমা, গাঢ় রঙের লিপস্টিক আর চিকন ভ্রূ। এ সময়ে শাড়ির সঙ্গে মিল করে কেশবিন্যাস নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। অনেকে পছন্দ করেছেন রেখার মতো চুলকে লম্বা করে ছেড়ে দিতে আবার কেউবা অভিনেত্রী ফারাহ ফসেটের মতো ঢেউ খেলানো চুলই পছন্দ করেছেন। নব্বইয়ের দশক
এ দশকে এসে মনে হলো বাংলাদেশ ফ্যাশন ডিস্কোর অনেক গ্ল্যামার এবং চাকচিক্য দেখেছে। এবার নিজের স্বরূপ চেনার সময় এসেছে। ব্লক প্রিন্ট, নকশিকাঁথা, জামদানী, এবং টাঙ্গাইল সিল্ক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশী নারীদের কাছে। পাশাপাশি মিরপুর কাতান শাড়িও বিয়ের শাড়ি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ যেন নিজের হারানো ঐতিহ্যকেই পুনঃআবিস্কার। বিখ্যাত মসলিনের সঙ্গে প্রাচীন বাংলার কাপড় বুননের রীতির সংমিশ্রণে গড়ে ওঠে এই জামদানি। জামদানির নকশা মূলত জ্যামিতিক। এতে লতাপাতা এবং ফুলের উপস্থিতি থাকে পূর্ণমাত্রায়। বলা হয়ে থাকে এই ধারা এসেছে ইরানী এবং মোগলদের কাছ থেকে। সাধারণত অভিজাতরাই এ শাড়ি পরে থাকতো।
২০০০ ও অতঃপর
বিশ্বায়ন আমাদেরকে একে অপরের কাছে নিয়ে এসেছে। কাছে নিয়েছে এসেছে সংস্কৃতি এবং মানুষদেরকে, আগে যা কল্পনাও করা যায়নি। উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে আজকের ফ্যাশন হচ্ছে বিভিন্ন উপাদানে প্রস্তুত এক নতুন ধারা। এমন কি হলিউড এবং বলিউড একে অপরের স্টাইল গ্রহণ করছে। সম্প্রতি বলিউডে শাড়ি থেকে ব্লাউজকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আর বাংলাদেশ এই পূর্ব পশ্চিমের মিশ্রিত রূপই গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন এখন জামদানিতে এমব্রয়ডরি হাতে করা রং স্লিক ওমসলিন Source: Kaler Kontho
শাড়ির চল হয়েছিল ঠিক কবে? নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। খানিকটা অনুমান করে নেওয়া যায়! সূত্র হিসেবে নেওয়া যাক 'শাড়ি' শব্দটির উৎস-সময়কালকে। সংস্কৃত 'শাটী' থেকে এসেছে 'শাড়ি'। তবে অনেকের ধারণা, সংস্কৃত হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও আদতে 'শাটী' ধার করা শব্দ। আর্যরা ভারতবর্ষে আসার আগেই নাকি 'শাটী' শব্দটির অস্তিত্ব ছিল। সেই হিসেবে বলা যেতেই পারে, শাড়ির ইতিহাস সাড়ে তিন হাজার বছর কিংবা তারও বেশি পুরনো। আর্য ভাষায় 'শাড়ি'কে আরো বিভিন্ন শব্দে আখ্যায়িত করা হয়েছে_'সাটক', 'সাটিকা'। আবার 'মহাভারত'-এ উলি্লখিত দ্রৌপদীর যে 'বস্ত্রহরণ' করা হয়েছিল, অনুমিত হয়, সেটাও শাড়িই ছিল। গুপ্ত যুগের (আনুমানিক ৩০০ থেকে ৫০০ সাল পর্যন্ত) বিখ্যাত কবি কালিদাসের 'কুমারসম্ভব'-এ শাড়ির কথা উল্লেখ আছে। গুপ্ত আমলের ইলোরা অজন্তা গুহার প্রাচীন চিত্রাবলি বলে দেয়, খ্রিস্টাব্দ শুরুর সময়ে শাড়ির অস্তিত্ব ছিল। পাহাড়পুর-ময়নামতির পোড়া ফলক থেকেও প্রমাণ যায়, হাজার বছর আগে এই পূর্ববঙ্গে শাড়ির চল ছিল। তবে এসব শাড়ির সঙ্গে আজকের শাড়ির তফাৎ রয়েছে। ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, আদিমকালে পূর্ব-দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে সেলাই করা কাপড় পরার চল ছিল না। এই অখণ্ড বস্ত্রটি পুরুষ পরলে হতো ধুতি আর মেয়েরা পরলে শাড়ি। উভয়ের শরীরের ওপরের অংশই থাকত উন্মুক্ত। তবে পালা-পার্বণে উচ্চবংশীয় নারীরা ওড়না জাতীয় কাপড়ে নিজেকে ঢেকে নিত।
মধ্যযুগের কবিদের কাছ থেকে শুধু শাড়ির কথাই জানা যায় না, শাড়ির রঙের কথাও জানা যায়। চৌদ্দ শতকের কবি চণ্ডীদাস লিখেছেন, 'নীল শাড়ি মোহনকারী/উছলিতে দেখি পাশ'। প্রথম মা হওয়া নারীকে উপহার হিসেবে দেওয়া হতো লাল শাড়ি। শাড়ি পরার ক্ষেত্রে ধনী-গরিব বিভাজন ছিল। ধনীরা পরতেন মিহি মখমল কাপড়ের শাড়ি আর গরিবের শাড়ি ছিল সাধারণ সুতি।
মুসলমানরা আগমনের ফলে আরও অনেক কিছুর পাশাপাশি পোশাক-পরিচ্ছদেও লাগে পরিবর্তনের হাওয়া। তুর্কি-আফগান-মোগল সংস্কৃতির ধারা স্থানীয়রাও গ্রহণ করে। পাগড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও পায়জামার মতো পোশাক জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও শাড়ির গুরুত্ব কিন্তু কমে যায়নি। দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের নারীরা শাড়িকেই নিজেদের পরিধানের প্রধান বস্ত্র হিসেবে আঁকড়ে ধরে থাকে। সম্ভবত মোগল আমলেই চালু হয় ব্লাউজ ও উর্ধ্বাঙ্গ ঢাকার রীতি। তবে তা উচ্চবিত্তদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
মাদাম বেলনোসের চিত্রে উনিশ শতকের প্রথমদিকে গ্রামবাংলার অন্তঃপুরের যে ছবি পাওয়া যায়, তাতে দেখা যায়, এক প্যাঁচেই শাড়ি পরেছেন বাংলার নারী। অধিকাংশ শাড়ির রংই সাদা। তবে পাড় হতো চিকন এবং লাল। সায়া-ব্লাউজ কিংবা অন্তর্বাসের চল ছিল না।
১৮৮৯ সালে ঢাকা জেলার একটি হিন্দু পরিবারের ওপর করা জরিপে দেখা যায়, একজন মহিলা বছরে পাঁচ-ছয়টি শাড়ি ব্যবহার করে থাকেন। এগুলোর পেছনে খরচ হতো ৪ রুপি। ফ্যানি পার্কস ১৮৫১ সালে তাঁর বইয়ে লিখেছেন, 'ধনী মহিলারাও শাড়ি পরত। শীতের সময় ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়তি হিসেবে ব্যবহার করত চাদর।' তবে তখনো ব্লাউজ-সায়া-পেটিকোটের চল হয়নি, চালু করল কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল। ফুলহাতা ব্লাউজ এবং কুচিছাড়া শাড়িই ছিল সেই সময় উঁচু সমাজের নারীদের প্রধান ফ্যাশন। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শাড়ি আর ব্লাউজ নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে; এবং ভবিষ্যতেও হতে থাকবে।
তবে শাড়ির কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে, তা বলা যাবে না। ভারতবর্ষে শাসক গোষ্ঠী পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নাটকীয়ভাবে বদলেছে পুরুষদের পোশাক কিন্তু শাড়িকে তার প্রধান পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে আঁকড়ে রেখেছে নারী। তাই বলা যেতেই পারে, শাড়ি আর ভারতীয় নারী একে অপরের পরিপূরক।মোগল যুগ
মোগলদের মধ্যে সম্রাট আকবরই প্রথম ভারতবর্ষের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা শুরু করেন। ভারতীয় নারীদের নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মোগল সংস্কৃতির সঙ্গে ভারতীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন। সেই ধারাবাহিকতায়ই মোগলাই আভিজাত্যে যোগ হল শাড়ি।
নানা রকম দামি পাথর ছাড়াও সোনা-রূপার সুতা দিয়ে শাড়িতে নকশার কাজ করা হতো। মোগলদের আগ্রহের জন্য মসলিনের শাড়ির উপস্থিতিও থাকত জেনানা মহলে। মোগলদের জন্য মসলিন কাপড় সংগ্রহের জন্য সরকারি লোক নিয়োগ দেওয়া হতো।জমিদারি আমল
মোগলদের বাংলা জয়ের পর 'জমিদার' একটি বিশেষ পদবি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। জমিদার মানেই বিশাল সম্পত্তির মালিক। স্বাভাবিকভাবেই সেই সময়ে ধনিক শ্রেণী হিসেবে 'জমিদার' গোষ্ঠীর আত্দপ্রকাশ ঘটে। তাদের সময়ে শাড়ি পরা হতো এক প্যাঁচে। ব্লাউজও এ সময়ে শাড়ির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিশেষ করে ঠাকুর পরিবারের মেয়েরা ব্লাউজকে সাধারণের কাছে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন।ষাটের দশক
ষাটের দশকের শেষ থেকে সত্তরে প্রথম দিকে হিপ্পীদর স্লোগান ছিল 'ফুলের শক্তি'। সমসাময়িক সময়ে চলা ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে 'ফুল'। পোশাকের নকশাতেও থাকত ফুলের প্রাধান্য, এমনকি সাজসজ্জায়ও। পরে এ ফ্যাশনে নতুন মাত্রা আনে হিন্দি সিনেমার বহুল প্রচলিত 'মিনি শাড়ি'। বিশেষ করে বলা যেতে পারে 'সত্যম শিবম সুন্দরম' সিনেমাতে জিনাত আমানের পরা শাড়ির কথা। মিনি শাড়ির পাশাপাশি 'টেডি শাড়ি'র কথাও বলা যায়, যা অভিনেত্রী মমতাজ জনপ্রিয় করেছিলেন। শাড়ির সঙ্গে সঙ্গে ব্লাউজেও লাগে পরিবর্তনের হাওয়া। ব্লাউজের গলা করা হয় অনেকটা নৌকার আদলে এবং ব্লাউজের পেছনের দিকটা আটকানোর জন্য থাকত মেগি ক্যাপের বোতামভিক্টোরীয় যুগ
উনিশ শতকের চলি্লশ দশক থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কে বলা হয়ে থাকে 'ভিক্টোরিয়ান যুগ'। এ যুগে ফ্যাশনের মূল কথাই ছিল কাপড়ে সারা শরীর ঢাকা থাকতে হবে। এমনকি গোড়ালি দেখানোটাও অসম্মানকর হিসেবে বিবেচিত হতো। ভারতের সেই গরমেও ইংরেজরা ভিক্টোরিয়ান ফ্যাশনের পোশাক পরতে পিছপা হননি। ব্রিটিশদের সংস্পর্শে থাকা জমিদার ও স্থানীয় ধনীদের পোশাক-পরিচ্ছদেও যোগ হয় ভিক্টোরিয়ান ফ্যাশনের স্টাইল। এ সময়ে শাড়ির সঙ্গে ফুলহাতা ব্লাউজ এবং পেটিকোট পরার চল শুরু হয়। এই রীতিতে শাড়ি পরাটা বাঙালি নারীর চিরায়ত এক প্যাঁচে শাড়ি পরার ধারণাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়।১৯৪০-৫০ দশক
ব্রিটিশমুক্ত ভারতে ১৯৪০ দশকের শেষের দিক থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিল হিন্দি চলচ্চিত্রের 'সোনালি সময়'। এসব চলচ্চিত্রের নায়িকারা ছিলেন তখনকার ফ্যাশন আইকন। নার্গিস, মধুবালা এবং বৈজয়ন্তীমালার মতো নায়িকাদের পোশাক ভাবনা ভারত উপমহাদেশের নারীদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করা শুরু করে। পাশাপাশি বাঙালি নারীদের সামনে ছিল সুচিত্রা সেন। তাঁর ছোট আস্তিন এবং লম্বা গলার ব্লাউজের স্টাইলগুলো ছিল দারুণ অনুকরণীয়। শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজও এ সময়ে হয়ে ওঠে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে সাধারণ ব্লাউজও সমানভাবে জনপ্রিয় হয়১৯৭০-৮০ দশক
দীর্ঘ সংগ্রামের পর বাংলাদেশ ১৯৭১-এ স্বাধীন এক দেশ হিসেবে আত্দপ্রকাশ করে। বাংলাদেশিরা নিজেদের সব কিছুর মধ্যে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করা শুরু করে। তাদের পছন্দের শাড়ির মধ্যে জায়গা করে নেয় দেশি খাদি এবং তাঁতের শাড়ি। আর এসব শাড়ির সঙ্গে চুলের সাজও ছিল আলাদা, করা হতো লম্বা বেণি কিংবা খোঁপা। ফুল দিয়েই সারা হতো খোঁপা অলঙ্কৃত করার কাজ। সে সময় আমরা পোশাকে অনুকরণীয় হিসেবে পেয়েছিলাম কবরী, শাবানা এবং ববিতার মতো অভিনেত্রী।
আন্তর্জাতিক সংগীতে একদিকে তখন ডায়ানা রসের ডিস্কো এবং অন্যদিকে বি জিসের জনপ্রিয় গান। এসবের সঙ্গে যোগ হওয়া ঝলমলে, জমকালো এবং চকচকে পোশাক পরার রীতি এ সময়ের শাড়ির ধরন ঠিক করে দেয়। ঠিক তখনই দৃশ্যপটে আসে হিন্দি চলচ্চিত্র 'সিলসিলা'য় অভিনেত্রী রেখার পরা 'সিলসিলা' শাড়ি। ঘন রঙের এই শাড়ির সঙ্গে পরা হতো হাতাবিহীন কিংবা হোল্টার গলার ব্লাউজ। আর সাজসজ্জার অনুষঙ্গ হিসেবে থাকত সুরমা, গাঢ় রঙের লিপস্টিক আর চিকন ভ্রূ। এ সময়ে শাড়ির সঙ্গে মিল করে কেশবিন্যাস নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। অনেকে পছন্দ করেছেন রেখার মতো চুলকে লম্বা করে ছেড়ে দিতে আবার কেউবা অভিনেত্রী ফারাহ ফসেটের মতো ঢেউ খেলানো চুলই পছন্দ করেছেন। নব্বইয়ের দশক
এ দশকে এসে মনে হলো বাংলাদেশ ফ্যাশন ডিস্কোর অনেক গ্ল্যামার এবং চাকচিক্য দেখেছে। এবার নিজের স্বরূপ চেনার সময় এসেছে। ব্লক প্রিন্ট, নকশিকাঁথা, জামদানী, এবং টাঙ্গাইল সিল্ক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশী নারীদের কাছে। পাশাপাশি মিরপুর কাতান শাড়িও বিয়ের শাড়ি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ যেন নিজের হারানো ঐতিহ্যকেই পুনঃআবিস্কার। বিখ্যাত মসলিনের সঙ্গে প্রাচীন বাংলার কাপড় বুননের রীতির সংমিশ্রণে গড়ে ওঠে এই জামদানি। জামদানির নকশা মূলত জ্যামিতিক। এতে লতাপাতা এবং ফুলের উপস্থিতি থাকে পূর্ণমাত্রায়। বলা হয়ে থাকে এই ধারা এসেছে ইরানী এবং মোগলদের কাছ থেকে। সাধারণত অভিজাতরাই এ শাড়ি পরে থাকতো।
২০০০ ও অতঃপর
বিশ্বায়ন আমাদেরকে একে অপরের কাছে নিয়ে এসেছে। কাছে নিয়েছে এসেছে সংস্কৃতি এবং মানুষদেরকে, আগে যা কল্পনাও করা যায়নি। উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে আজকের ফ্যাশন হচ্ছে বিভিন্ন উপাদানে প্রস্তুত এক নতুন ধারা। এমন কি হলিউড এবং বলিউড একে অপরের স্টাইল গ্রহণ করছে। সম্প্রতি বলিউডে শাড়ি থেকে ব্লাউজকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আর বাংলাদেশ এই পূর্ব পশ্চিমের মিশ্রিত রূপই গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন এখন জামদানিতে এমব্রয়ডরি হাতে করা রং স্লিক ওমসলিন Source: Kaler Kontho
লালনের দর্শন
লিখেছেনঃ মোমেন
চৈতে-নিত্যে-অদ্বৈ এই তিন পাগলের ভাবশিস্য বাউল ধর্মের শিরোমনি সিদ্ধপুরুষ ফকির লালন শাহবাঙালির ধর্ম প্রচারক কলিকালের অবতার চৈতন্য।জাত-পাতের যাঁতাকলে পিষ্ট দরিদ্র মানুষের গৌরাঙ্গ-জাতহীন। নারী পুরুষ এক দেহে ধারণ করে আবির্ভূত।সিদ্ধপুরুষ লালন বাংলা ও এর বাইরে থেকে আসা সমস্ত মতবাদ আত্তীকরণের সর্বোচ্চ বঙ্গীয় প্রকাশ।'রবি ঠাকুরকে কিছুটা আধুনিককালের লালন বলা যেতে পারে'।
আমার লালনকে জানার ক্ষুদ্র চেষ্টার প্রথম কিস্তি।

সমগ্র সিন্দ্ধু ও গাঙ্গেয় উপত্যকা তথা ভারতবর্ষ হাজার হাজার বছর ধরে ধারণ করছে অসংখ্য মানবের জীবন।নৃতাত্বিকভাবে জন্ম হয়েছে অনেক ভাষা, সংস্কৃতি বা এর বিশেষ রূপ ধর্ম।শত শত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের হাজারো রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান, পূজা-অর্চনার যে সনাতনী সংস্কৃতি তাই পরবর্তিতে হিন্দু ধর্ম নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।পারসিয়ান ও আরবীয়রা মশলার ব্যবসাসূত্রে ভারতের সাথে পরিচিত হয়। এবং সিন্দ্ধু অঞ্চলের মানুষদেরকে সিন্দ্ধ্ বা ইন্দু (Indus Valley) বা হিন্দু বলে তারা অভিহিত করে ফলশ্রুতিতে তাবত দুনিয়ার মানুষের কাছে ভারতীয়রা হিন্দু ও তাদের সংস্কৃতি বা ধর্ম হিন্দু ধর্ম নাম লাভ করে বলে অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মত। বহুবিধ তণ্ত্র-মণ্ত্র- ডাক-যোগ দর্শনের প্রকাশ্য ও গোপন চর্চা অথবা কপিল, বৃহস্পতিদের বস্তুবাদী চার্বাক দর্শনের অভূতপূর্ব ভূমি ইন্ডিয়া। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় বা দার্শনিক সম্প্রদায়ের সহ অবস্থানের ফলে জীবনাচরনের মিলন (fusion), ভিন্নতা (fission), ধর্মের ক্রমবিকাশ, নতুন নতুন ধর্মের আবির্ভাবে ভারত যেন এক গরম তাওয়া (melting pot)।এখানে উদ্ভুত বৌদ্ধ ধর্ম পারস্য, মধ্যপ্রাচ্য আর মধ্য এশিয়া বাদ দিলে সমগ্র এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে।ভারতীয় ধর্ম বিস্তারিত (diffusion) হয়েছে অর্থাৎ রাষ্ট্রক্ষমতা ছাড়া ধর্মের অনুপ্রবেশ আর সেমেটিক(Semitic) ধর্মসমূহ প্রবাহিত (current/tide) হয়েছে অর্থাৎ রাষ্ট্রক্ষমতা ও ধর্ম অনুপ্রবেশ করেছে যুগপৎভাবে।দার্শনিক এই অবস্থানের কারণেই হয়তো ভারতীয়রা উপনিবেশ গড়ে তুলে নি কখনো কিন্তু উপনিবশিত হয়েছে বার বার।উপনিবেশকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মোগল আর ইংরেজরা।
সপ্তম শতকের তিরিশের দশকে মক্কা জয়ের পর আরবরা ইসলামের দর্শন হাতে নিয়ে দিগ্বিজয়ে বের হয় এবং ইসলাম ধর্ম প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম দিকে মরোক্ক পর্যন্ত পুরানো সকল সংস্কৃতি খোলনলচে পালটে ফেলে এমন কী মুখের ভাষা পর্যন্ত প্রতিস্থাপিত করে কায়েম করে আরব বিশ্ব।এ প্রবাহের অতিরিক্ত সংযোজন স্পেন, এরপর ফ্রান্সের গলে গিয়ে ক্ষান্ত হয় আরবদের পশ্চিমমূখী যাত্রা। পূর্ব প্রবাহ ব্যাপকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয় পারস্যে।পারসিক সংস্কৃতির কাছে মুষড়ে পড়ে আরব সংস্কৃতি।ইরানে ইসলাম রূপান্তরিত হয়। ইরানের পার্শ্বে বাগদাদ দীর্ঘ দিন ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।আব্বাসীয়রা মুতাজিলাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ইসলামে যৌক্তিকভাবে আল্লার উপস্থিতি প্রমাণে প্রভাব বিস্তারকারী মুতাজিলারা ব্যর্থ হলে প্রভাব বিস্তার করে সূফীজম।যার উর্বর ভূমি হলো পারস্য বা ইরান।
সপ্তম শতক থেকে শুরু করে ত্রয়োদশ শতকে এসে মুসলমানরা মোটামুটি পুরো ভারতবর্ষ দখল করে।কিন্তু ততোদিনে ইরানে দেয়ালে ধাক্কা খাওয়া ইসলাম অনেকটা ভিন্নরূপে যা কীনা প্রধানত ইরানের সূফীদের দ্বারা প্রচারিত হয় ভারতে।মোহাম্মদ ও খোলেফায়ে রাশেদীনের পরে যে নামগুলেো শুনা যায় তা হলো-বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী, খাজা বাবা মইনূদ্দীন চিশতী, বাবা ফরীদ, নিজাম উদ্দীন আউলিয়া, শাহ জালাল ইত্যাদি যারা সকলেই সূফী।পারস্য আর মধ্য এশিয়া থেকে ঝাকে ঝাকে পীর-আউলিয়ারা ভারতে ধর্ম প্রচার করে যাকে বলা যায় ইসলামের বিস্তার(diffusion)।
মরমি কবি ফকির লালনকে জানার চেষ্টার প্রারম্ভে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা বিধৌত ব-দ্বীপের অনিশ্চিত কৃষিভিত্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন এবং সনাতনী তথা হিন্দু , বৌদ্ধ এবং ইসলাম এই তিন ধর্মের মিথষ্ক্রিয়ার মানস জগৎ বিবেচনায় রাখা দরকার। হিন্দু ধর্মজাত বৈষ্ণব ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্মের সহজিয়া মতবাদ, ইসলামের সূফী মতবাদ বাংলায় যা মূলত মারেফত বা মাইজভাণ্ডারী নামে পরিচিত- এই তিন মূল ধারার মিলনের ফলে উদ্ভূত বাংলার ধর্ম হলো বাউল ধর্ম।
বাউল একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়।বাউলদের ধর্মের তত্ত্ব ও দর্শন আছে, সাধন পদ্ধতি আছে, সাধক জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা আছে, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে তাদের একটি দৃষ্টিভঙ্গি আছে, এ সমস্তই ব্যক্ত হয়েছে তাদের গানে।এই সম্প্রদা্য়ের সাধকগণের তত্ত্ব দর্শন ও সাধনা সংবলিত গানই বাউল গান।
রূপ থেকে স্বরূপে ওঠাই বাংলার বাউলদের সাধনা।
কীভাবে পুরূষ-প্রকৃতি ( জীবাত্মা-পরমাত্মা/ নারী-পুরুষ) বিভক্ত হ'ল এবং কীভাবে দুই দেশে না থেকে একত্রে রইল। পদ্ম কোথায় প্রস্ফুটিত হয়, পদ্ম পুস্পের রসে কীভাবে সাধন হয় এবং সহস্রদল হতে রজঃস্রোতের সঙ্গে রসরাজ লীলা করতে করতে অগ্রসর হয়ে তিন দিন তিন রূপ ধারণ করে শেষে সহজ মানুষ রূপে আত্মপ্রকাশ করেন।তারপর প্রকৃতি-পুরুষের শৃঙ্গার দ্বারা উর্ধ্বগত হয়ে স্বস্থানে যেয়ে যুগল হয়ে নিত্যরস লীলা আস্বাদন করেন- বাউল সাধনার মূলভাবটি মোটামুটি এর মধ্যে ব্যক্ত। এর থেকে বোঝা যায় বা্উল সাধনা নারী-পুরুষের যৌথ সাধন পদ্ধতি।
অদ্বৈতাচার্য ও নিত্যানন্দ প্রকৃতি- পুরুষ-মিলন-ঘটিত ধর্মসাধনার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। নিত্যানন্দের পুত্র বীরভদ্রের সময় হতে বাউলরা সম্প্রদায় হিসেবে প্রকাশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং গুরু পরম্পরায় ব্যাপ্ত হয় সারা বাংলায়।
বাউল সাধনার তিন স্তর
প্রবর্ত-- ভগবানের নিকট দৈন্য ও গুরুর করুণা প্রার্থনা।
সাধক-- দেহতত্ত্ব, মনের মানুষ, সাধনার স্বরূপের জ্ঞান লাভ।
সিদ্ধ--সাধনার পূর্ণতার স্বরূপ।
ফকির লালন ছিলেন সিদ্ধপুরুষ। বিশাখা লালনের সাধিকা।
লালন তথা বাউলদের যৌন সাধন।
বাঙালির কাছে যৌনতা বিষয়টি অনেক বড় ট্যাবু।নিয়মিত যৌন কাজে লিপ্ত হবে কিন্তু মুখে বলবেনা। চিন্তা করুন লালনের জীবন কাল আঠার শতকের শেষের দিক থেকে উনিশ শতক, সমগ্র ভারত বৃটিশদের দখলে। তথাকথিত মুসলমানদের (মোঘল) হাত থেকে নাছারারা ক্ষমতা দখল করেছে, মুসলমানরা জাত যাওয়ার ভয়ে শিক্ষা-দীক্ষা বাদ দিয়ে না বুঝে কোরান মুখস্ত করে জাত রক্ষায় ব্যস্ত।হিন্দুরা জাত-পাতের ঘেরাটোপ আর ইংরেজি শব্দ মুখস্ত করে অফিসের কেরানী বা বাবুগিরির মধ্যে ঘোড়পাক খাচ্ছে।
এমন সমাজে সম্পুর্ণ ভিন্ন স্কুল হল বাউলদের।
আধ্যাত্বিকতার চর্চায় মানবদেহকে ঈশ্বরের আবাস (বারামখানা) মনে করে বলে লালন/বাউলরা দেহ্তত্ত্বে (Physiology) ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করে। লালনের গানের বিশাল অংশ জুড়ে দেহতত্ত্বের গান।দেহ থেকে দেহে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ঈশ্বরের ধারাবাহিকতায় সঙ্গম বা নারী-পুরুষের মিলন বাউলদের সাধনার মূল কেন্দ্রবিন্দু।ডঃ উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের মতে-''কীভাবে পুরূষ-প্রকৃতি ( জীবাত্মা-পরমাত্মা/ নারী-পুরুষ) বিভক্ত হ'ল এবং কীভাবে দুই দেশে না থেকে একত্রে রইল। পদ্ম কোথায় প্রস্ফুটিত হয়, পদ্ম পুস্পের রসে কীভাবে সাধন হয় এবং সহস্রদল হতে রজঃস্রোতের সঙ্গে রসরাজ লীলা করতে করতে অগ্রসর হয়ে তিন দিন তিন রূপ ধারণ করে শেষে 'সহজ মানুষ' রূপে আত্মপ্রকাশ করেন।তারপর প্রকৃতি-পুরুষের শৃঙ্গার দ্বারা উর্ধ্বগত হয়ে স্বস্থানে যেয়ে যুগল হয়ে নিত্যরস লীলা আস্বাদন করেন- বাউল সাধনার মূলভাবটি মোটামুটি এর মধ্যে ব্যক্ত।" এর থেকে বোঝা যায় বাউল সাধনা নারী-পুরুষের যৌথ সাধন পদ্ধতি।
যে কথা বলছিলাম লালনের সময়কালে বা তার আগে পরে বাউলরা সবসময় নিজেদের সাধন পদ্ধতির ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করতো।যেহেতু তাদের আখড়ায় অনেক সাধিকা থাকতো এবং বাইরের মানুষকে তারা নিজেদের জীবনাচরণ বলতোনা ফলে সহজেই নানারকম কুৎসা রটনা করেতে পেরেছে নিন্দুকেরা। আবদ্ধ সমাজে যৌনতা বিষয়ে গুজব ছড়ানো খুবই সহজ।আর বিশাল এই সম্প্রদায়ের কোথাও কোথাও নাকি বিপথগামী কিছু বাউল আখড়ার পাশে পতিতালয় গড়ে নিতো। এটি মূল ধারা নয়।
এবার আসা যাক সোজা কথায় তাদের সাধনা কী? লালনের গানে প্রায়ই শোনা যায় 'সহজ মানুষ' বা 'অটল রূপ' 'মনের মানুষ' 'অচিন পাখি' বা আলেকজনা এর দ্বারা কী বুঝায়? খুব সহজ ভাবে বললে এর দ্বারা গুরু, মুর্শিদ, রাসুল, আদম, ভগবান, আল্লা, ঈশ্বর ইত্যাদিকে বুঝায়। কিন্তু লালন ঈশ্বরের সর্বোচ্চ রূপ মানবদেহের প্রানের ধারার সাথে কীভাবে মিশে থাকে সে রহস্য উৎঘাটনে সচেষ্ট ছিলেন। লালন তথা বাউলদের এ লক্ষ্যে সাধন পদ্ধতির সম্পর্কে যৎসামান্য জানা যায় তা হলোঃ
পুরুষের বীজ আর নারীর রজঃ মিলিত হয়ে মানবের জন্ম।আর এই দু'য়ের উৎপত্তি সঙ্গমকালে।যৌন উত্তেজনার চুড়ান্ত পর্যায়ে (Orgasm) সহজ মানুষ বা ঈশ্বরের অটলরূপ উপস্থিত হয়। বাউলরা এই স্তরে পৌঁছে স্থির থেকে সাধন করতে চায়।কাম নদীর নিন্মমূখী ধারাকে ঊর্ধমূখী করে যারা দীর্ঘক্ষণ ধরে অরগাজমে থেকে সহজ মানুষ সাধন করতে পারে তারা হলো সিদ্ধ পুরুষ।ফকির লালন একজন সিদ্ধপুরুষ।এবার দেখি লালন তার গানে কী বলছে
আমি কী সন্ধানে যাই সেখানে
মনের মানুষ যেখানে।
আঁধার ঘরে জ্বলছে বাতি
দিবা রাতি নাই সেখানে।
যেতে পথে কাম নদীতে
পারি দিতে ত্রিবিণে (ত্রিবেণী)
কত ধনীর ধারা যাচ্ছে মারা
পইড়ে নদীর তোড় তুফানে।
রসিক যারা চতুর তারা
তারাই নদীর ধারা চিনে
উজান তরী যাচ্ছে বেয়ে
তারাই স্বরূপ সাধন জানে।
লালন বলে মইলাম জ্বলে
মইলাম আমি নিশি দিনে
আমি মনিহারা ফণির মতো
হারা হলাম পিতৃধনে।
এমন অসংখ্য গানে গানে লালন বা বাংলার অন্যান্য বাউলরা নিজেদের প্রেম,কাম, সাধনের কথা বলে গেছেন। রূপ (ঈশ্বর বা পরমাত্মা) থেকে স্বরূপে (মানব ও ঈশ্বর লীন) ওঠাই বাংলার বাউলদের সাধনা।
আমি আগের কিস্তিতে বলেছিলাম গুরু রবি ঠাকুর আধুনিক কালের বাউল। তার গানে গানে কবিতায় কবিতায় আধ্যাত্বিকতার সরব উপস্থিতি।সোনার তরীর হিং টিং ছট কবিতায় রাজা হবুচন্দ্র ভূপের স্বপ্নের খোয়াব নামায় দেখুন।গৌড়ের তথা বাংলার গুরুমারা চেলার উলট-পালট তাফসির-
‘ নিতান্ত সরল অর্থ , অতি পরিষ্কার ,
বহু পুরাতন ভাব , নব আবিষ্কার ।
ত্র্যম্বকের ত্রিনয়ন ত্রিকাল ত্রিগুণ
শক্তিভেদে ব্যক্তিভেদ দ্বিগুণ বিগুণ ।
বিবর্তন আবর্তন সম্বর্তন আদি
জীবশক্তি শিবশক্তি করে বিসম্বদী ।
আকর্ষণ বিকর্ষণ পুরুষ প্রকৃতি
আণব চৌম্বকবলে আকৃতি বিকৃতি ।
কুশাগ্রে প্রবহমান জীবাত্মবিদ্যুৎ
ধারণা পরমা শক্তি সেথায় উদ্ভূত ।
ত্রয়ী শক্তি ত্রিস্বরূপে প্রপজ্ঞে প্রকট —
সংক্ষেপে বলিতে গেলে , হিং টিং ছট্ । '
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান ,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে , শুনে পুণ্যবান ।
তাহে এক পাগলা ব্যটা বসে একা একেশ্বরে--লালন (৩য় পর্ব)
ছোটবেলা থেকে শুনতাম আল্লা থাকে সাত আসমানের উপরে।মনে করতাম আমরা তো এক আসমান দেখি তার উপরে বুঝি বাকীগুলো।বিজ্ঞানের হাতেখড়িতেই গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদি পড়ে সব কিছু কেমন যেন হয়ে গেলো।হিসেব মেলে না। ছোট বেলাতেই গ্রামের লোকজনের মুখে শুনেছি 'খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়... আট কুঠুরী নয় দরজা...।' কার গান কি বলছে কিছুই বুঝতাম না।কাউকে জিজ্ঞেস করলে আমাদের দেহে আত্মার যাওয়া আসা পর্যন্ত উত্তর মিলতো।কিন্তু কোথায় আট কুঠুরী নয় দরজা বা সাত আসমান?
বাউলদের সম্পর্কে জানা খুবই কঠিন কাজ। বলা হয়ে থাকে 'শম্ভুকের মতো আত্মসংকোচনশীল, আত্মগোপনশীল জীবন যাত্রার রীতি এই বাউলদের'। বাউলরা তাদের আধ্যাত্বিকতায় ব্যবহার করেছে ভারত পারস্য ও আরবের মিথ।ভারত হলো মিথের মক্কা।ফলে ধর্মের তত্ত্ব ও মিথের সহযোগিতায় তাদের সম্পর্কে কিছু ধারণা করা যেতে পারে।
লালনের খুবই পরিচিত একটি গানের কথায় আসা যাক--
ধন্য ধন্য বলি তারে
বেঁধেছে এমনও ঘর শুন্যের উপর
আ মরি শুন্যের উপর পোস্তা করে
ধন্য ধন্য বলি তারে।
খুব সুন্দর বুঝা যাচ্ছে ঈশ্বর তার বারামখানা এই মানব দেহ শক্ত করে তৈরী করেছে। কিন্তু কোথায়? শুন্যের উপর। শুন্য কী? বিজ্ঞানে এর কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। যে কোন কিছুকে আমরা আপেক্ষিকভাবে শুন্য ধরতে পারি। শুন্যের জন্মভূমি ভারত।বুদ্ধের মূল দর্শনই হলো শুন্যবাদ।নাগার্জুন শুন্য সম্পর্কে বলেছেন " অস্তি-নাস্তি-তদুভয়ানুভয়চতুষ্কোটি বিনির্মুক্তং শুন্যরূপম"। সহজ ভাবে বললে দাঁড়ায়-
আছে যে তা নয়
নাই যে তাও নয়
আছে নাই উভয়ই তাও নয়
আছে নাই উভয়ই যে নয় তাও নয়। এই চার মুক্ত কোন কিছু হলো শুন্য।এরই উপর ঈশ্বর পোস্তা করে ঘর বেঁধেছে। তাই ফকির লালন বলছে-ধন্য ধন্য বলি তারে।
ঘরে মাত্র একটি খুঁটি
খুঁটির গোড়ায় নাইকো মাটি
কিসে ঘর রবে খাড়ি
ঝড়ি-তুফান এলে পড়ে।
ঘরের একটি খুটি বলতে কী বুঝায়? প্রাণিবিজ্ঞানে পড়েছি সমস্ত প্রানিজগতকে মোটা দাগে দুভাগে ভাগ করা যায় মেরুদণ্ডী অমেরুদণ্ডী।এই মেরুদণ্ড প্রাণির বিবর্তনের খুবই বড় একটি ধাপ।মেরুদণ্ডের কশেরুকার ভিতর দিয়ে তিনটি স্নায়ু পেচিয়ে পেচিয়ে (কুণ্ডলী স্ত্রীবাচক কুণ্ডলিনী) মাথায় গিয়ে মিলেছে।যা ভারতীয় তান্ত্রিকদের কাছে অনেক সময় ত্রিবেণী নামেও পরিচিত।সুষুন্মা, ইড়া,পিঙ্গলা।সুষুন্মা অক্ষের মতো যাকে পেচিয়ে বাকি দুটি। ইড়া বাম শুক্রাশয় থেকে ডান নাসারন্ধ্র পর্যন্ত। শ্বেত বর্ণের শান্ত সৌম্য ও চাঁদের সাথে তুলনীয়। পিঙ্গলা (লাল) ডান শুক্রাশয় থেকে বাম নাসারন্ধ্র পর্যন্ত বর্ধিত। ইহা ভয়াবহ শক্তিশালী ও সূর্যের সাথে তুলনীয়।
ত্রিবেণীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্তরে স্তরে বিভিন্ন কুঠুরী বা পদ্ম ফুলের বর্ণনা করা হয়েছে। পদ্ম গাঙ্গেয় অঞ্চলের খুব সাধারণ ফুল এবং প্রচুর মিথ। ব্রহ্মা স্বপ্ন দেখেন তার নাভিমূল থেকে পদ্ম ফুল ফুটে। স্বরস্বতী পদ্মফুলের উপর আবির্ভূত হন। প্রাণির দেহে ফুলের সনাক্তকরণ যাদের গ্রামদেশে বাড়ী তারা সহজেই করতে পারবেন। গরু ছাগলের বাছুর হওয়ার পর লোকজন পাহাড়া থাকে যেন ফুল না খেয়ে ফেলে। গরু তৃণভোজী কিন্তু এই আমিষ জাতীয় খাদ্য সরিয়ে না ফেললে সে অবশ্যই খায়। লালন তার গানে সরাসরি ফুল শব্দটিও ব্যবহার করেছেন।
কমল কোঠা কারে বলি
কোন মোকাম তার কোথা গলি
সেইখানে পড়ে ফুলি
মধু খায় সে অলি জনা।
একমাত্র খুঁটি সুষুন্মার শুরু থেকে শেষ অবধি কুণ্ডলিনীর (ত্রিবেণী) বিভিন্ন স্তরে সাধনার মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন চৈতন্য জাগ্রত করে শেষে ঈশ্বরের সাথে লীন হওয়াই দুনিয়ার সমস্ত সাধকের উদ্দেশ্য। সাধকের রূপান্তরের এই স্তর বা চক্র বা ফুল বা কুঠুরী বা আসমান উপমায় কখনও সাত কখনও আট বা নয় ধরনের স্তরের কথা বলা হয়ে থাকে। লালন ৭, ৮, ৯, সবই ব্যবহার করেছে-
দেশ দেশান্তর দৌঁড়ে কেন মরছ রে হাপিয়ে
আদি মক্কা এই মানব দেহে
দেখনারে মন ধ্যেয়ে।
মানুষ মক্কা কুদরতি কাজ
উঠেছে আজগবি আওয়াজ সাত তলা ভেদিয়ে।
আছে সিং দরজায় তারি একজন নিদ্রা ত্যাগি হয়ে
দেখনারে মন ধ্যেয়ে।
অথবা যে গানটি ধরে আলোচনা করছি তার পরের অন্তরায়-
মূলাধার কুঠুরী নয়টা
তার উপরে চিলে কোঠা
তাহে এক পাগলা ব্যটা
বসে একা একেশ্বরে।
ভারতীয় মিথে সাধনার এই স্তরসমূহকে মুলতঃ সাত চক্রেই আলোচনা করা হয়েছে। কোথাও বা উপবিভাগ করেছে আট বা নয় চক্রে।
সুষুন্মার ভিত্তি বা মূলকে বলা হয় মূলাধার চক্র।
মূলাধারের অবস্থান যৌনাঙ্গ ও পায়ু পথের মাঝে। চিত্রে বৃত্তের ভিতর চতুর্ভূজের দ্বারা বুঝানো হয়েছে পার্থিব বিষয় আশয়। হাতির পিঠের উপর নিন্মগামী ত্রিভূজ দ্বারা যোনী তথা বিশ্বমাতা, এর মাঝখানে পুরুষ প্রতীক শিবলিঙ্গ যাকে সাড়ে তিন প্যাচে জড়িয়ে সর্প দেবী কুণ্ডলিনী। এবার আসা যাক হাতির কথায়। হাতি ভারতে একটি মিথিক চরিত্র। মিথ অনুসারে 'একদা হাতি মেঘের মতো রূপ পরিবর্তন করতে পারতো, উড়তে পারতো।একদিন সে উড়ে গিয়ে বসলো এক ডালে। ঐ গাছের নীচে এক সাধু তার শিস্যদের পড়াচ্ছিলেন।এমন সময় ডাল ভেঙ্গে কয়েকজন শিস্য মারা গেল আর হাতি সুন্দর উড়ে গিয়ে বসলো অন্য ডালে। সাধু সাথে সাথে রেগে গিয়ে সমস্ত হাতি জাতিকে অভিশাপ দিলেন। হাতি তার রূপ পরিবর্তন ও উড়ার ক্ষমতা হারালো। এর পর থেকে হাতি পৃথিবীতে হেঁটে চলা একখণ্ড অভিশপ্ত মেঘ।' হাতির এই সিম্বল থেকে বুঝা যায় শর্তমুক্ত হলে সহজেই পৌঁচা যায় পরবর্তি কুঠুরীতে। মূলাধার স্তর সাধকদের কাছে খুবই স্থুল পর্যায়। এর দ্বারা পরিচালিত মানুষজন সক্রিয় নয়।
পরের চক্র স্বধিস্থান(Svadisthana) ।
এটি কুণ্ডলিনীর বিশেষ আবাস।শরীরের যৌনাঙ্গ বরাবর এর অবস্থান। এই চক্রে কুণ্ডলিনী জাগ্রত হলে জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয় সেক্স। চিত্রে পানির অসুর মকর এর প্রধান উপাদান। ফ্রয়েড জীবনের এই চক্রের আলোচনা করেছেন ভালোভাবে। ভারতীয় সাধকেরা এই কুঠুরী উত্তরণের ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত। একটি ধারা কামকে হ্যা বলেছে অন্যটি না। বাউলরা প্রথমটি।
৩য় তলা হলো মনিপুর-
নাভির লেভেলে এর অবস্থান। মানুষের ভোগবাদীতা,দখল মনোবৃত্তি ইত্যাদির প্রকাশ এখানে। বর্তমান পশ্চিমা জগতের জীবনে এই চক্রের প্রাধান্য।
উল্লেখিত চক্রসমূহ সাদামাঠা। যারা এর মধ্যে জীবন যাপন করে তাদের জাগতিক চাওয়া পাওয়াই নির্ধারণ করে জীবনের সুখ-দুঃখ।এরা নিষক্রিয় বা প্রতিক্রিয়াশীল। গুরু ঠাকুর বলেছেন 'পনের আনা মানুষ আসে খায় সন্তান উৎপাদন করে মারা যায়।'
পরবর্তি চক্র সমূহ উঁচু স্তরের।অনেকটা শরিয়ত-মারিফতের পার্থক্যের মতো। দান্তের মতে নতুন জীবনের শুরু।
চক্র চারঃ অনাহত(Anahata)
হৃদপিণ্ডের বরাবর এই পদ্ম। অনাহত মানেই আঘাত হীন।আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা হলো আঘাত ছারা শব্দ অসম্ভব। কিন্তু বিজ্ঞানের Big Bang আল্লার কুন বা ভারতের ওঁম এই সব শব্দ আমাদের চেনা বস্তুর আগে। সাধকেরা চিরন্তন সেই আঘাতহীন শব্দ শোনার সাধনা করে। রাবেয়া বসরী বলেছেন নৈশব্দই সেরা ইবাদত। তিনি নদীর পারে বসে এই ইবাদতই করতেন।অনাহত শব্দ শুনার পরে পরবর্তি কুঠুরীতে গমন।
চক্র পাঁচ বিশুদ্ধ ( Vishuddha)
এর অবস্থান গলায়। কুণ্ডলিনী যখন এই তলে পৌঁছা্য় তখন সাধকের সাথে ঈশ্বরের কথাপকথোন হয়। চিত্রে নিন্মমূখী ত্রিভূজের ভিতর পূর্ণ বৃত্ত হলো পূর্ণ চন্দ্র। লালন তার বহু গানে বলেছে এই চাঁদের কথা। এখানকার দেবতা হলো অর্ধনরেশ্বর শিব। সাধকেরা দেখতে পান পারে যাওয়ার তরী।
লালন অসংখ্য গান লিখেছে পারাপার তত্ত্বের। চির মুক্তি লাভের এই যাত্রা খুবই বিপদ সংকুল। ঠিক সেই ফুলসেরাতের পুলের বর্ণনা।ওপারে আছে চির যৌবন অনন্ত ভূমি এক কথায় স্বর্গ।
সিদ্ধ পুরুষ হতে আর দু চক্র বাকী।
অহনা(Ajna) ষষ্ঠ চক্র
দুই ভ্রুর মাঝে উপরে মেয়েরা যেখানে টিপ পড়ে সেখানে এই চক্রের অবস্থান। সূফীদের ফানা ফিল্লা্হ বা ঈশ্বরের সাক্ষাৎ বা দিদার। রামকৃষ্ণের বর্ণনায় এ স্তরে কিছুটা আমি বা (Ego) থেকে যায়। তিনি বলেন এ যেন ঠিক কাঁচে ঘেরা বাতি। সবই দেখা যায় তবু থেকে যায় বাঁধা। মোহাম্মদের মিরাজে আল্লা ও তার মাঝে একটি পর্দা ছিল।
সহস্র( Sahasrara) ৭ম চক্র
এই স্তর হলো বাকা বিল্লাহ।ইউসুফ হাল্লাজের 'আয়নাল হক' বা আমিই সত্য। রামকৃষ্ণের বর্ণনায় কোন ধরণের বাঁধার অস্তিত্ত্ব নেই। শুধুই আলোর ঝলকানী। লালনের মতে দিবা রাতি নাই সেখানে। লালনের গানে দেখুন সহস্রের কথা
যে রূপে সাঁই বিরাজ করে দেহ ভূবনে
গুরুর দয়া যারে হয় সেই জানে।
শহরে সহস্র পারা তিনটি পদ্মার এক মহেরা
আলেক ছোঁয়ার পবন খোড়া ফিরছে সেখানে।
গুরুর দয়া যারে হয় সেই জানে।
সহস্রের উপরে চিলে কোঠায়ই পাগলা ব্যাটা থাকেন। এর পর লালন বলে-
উপর নীচে সারি সারি
সাড়ে নয় দরজা তারি
লালন কয় যতে পারি
কোন দরজা খুলে ঘরে।
সাড়ে নয় দরজা বলতে দুই চোখ, দুই কান, দুই নাক, মুখ, যৌনাঙ্গ, পায়ু। যৌনাঙ্গে নারীর দুই দরজা পুরুষের একটা গড়ে সাড়ে নয়।
ধন্য ধন্য বলি তারে
বেঁধেছে এমনও ঘর শুন্যের উপর
আ মরি শুন্যের উপর পোস্তা করে
ধন্য ধন্য বলি তারে।
চৈতে-নিত্যে-অদ্বৈ এই তিন পাগলের ভাবশিস্য বাউল ধর্মের শিরোমনি সিদ্ধপুরুষ ফকির লালন শাহবাঙালির ধর্ম প্রচারক কলিকালের অবতার চৈতন্য।জাত-পাতের যাঁতাকলে পিষ্ট দরিদ্র মানুষের গৌরাঙ্গ-জাতহীন। নারী পুরুষ এক দেহে ধারণ করে আবির্ভূত।সিদ্ধপুরুষ লালন বাংলা ও এর বাইরে থেকে আসা সমস্ত মতবাদ আত্তীকরণের সর্বোচ্চ বঙ্গীয় প্রকাশ।'রবি ঠাকুরকে কিছুটা আধুনিককালের লালন বলা যেতে পারে'।
আমার লালনকে জানার ক্ষুদ্র চেষ্টার প্রথম কিস্তি।
সমগ্র সিন্দ্ধু ও গাঙ্গেয় উপত্যকা তথা ভারতবর্ষ হাজার হাজার বছর ধরে ধারণ করছে অসংখ্য মানবের জীবন।নৃতাত্বিকভাবে জন্ম হয়েছে অনেক ভাষা, সংস্কৃতি বা এর বিশেষ রূপ ধর্ম।শত শত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের হাজারো রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান, পূজা-অর্চনার যে সনাতনী সংস্কৃতি তাই পরবর্তিতে হিন্দু ধর্ম নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।পারসিয়ান ও আরবীয়রা মশলার ব্যবসাসূত্রে ভারতের সাথে পরিচিত হয়। এবং সিন্দ্ধু অঞ্চলের মানুষদেরকে সিন্দ্ধ্ বা ইন্দু (Indus Valley) বা হিন্দু বলে তারা অভিহিত করে ফলশ্রুতিতে তাবত দুনিয়ার মানুষের কাছে ভারতীয়রা হিন্দু ও তাদের সংস্কৃতি বা ধর্ম হিন্দু ধর্ম নাম লাভ করে বলে অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মত। বহুবিধ তণ্ত্র-মণ্ত্র- ডাক-যোগ দর্শনের প্রকাশ্য ও গোপন চর্চা অথবা কপিল, বৃহস্পতিদের বস্তুবাদী চার্বাক দর্শনের অভূতপূর্ব ভূমি ইন্ডিয়া। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় বা দার্শনিক সম্প্রদায়ের সহ অবস্থানের ফলে জীবনাচরনের মিলন (fusion), ভিন্নতা (fission), ধর্মের ক্রমবিকাশ, নতুন নতুন ধর্মের আবির্ভাবে ভারত যেন এক গরম তাওয়া (melting pot)।এখানে উদ্ভুত বৌদ্ধ ধর্ম পারস্য, মধ্যপ্রাচ্য আর মধ্য এশিয়া বাদ দিলে সমগ্র এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে।ভারতীয় ধর্ম বিস্তারিত (diffusion) হয়েছে অর্থাৎ রাষ্ট্রক্ষমতা ছাড়া ধর্মের অনুপ্রবেশ আর সেমেটিক(Semitic) ধর্মসমূহ প্রবাহিত (current/tide) হয়েছে অর্থাৎ রাষ্ট্রক্ষমতা ও ধর্ম অনুপ্রবেশ করেছে যুগপৎভাবে।দার্শনিক এই অবস্থানের কারণেই হয়তো ভারতীয়রা উপনিবেশ গড়ে তুলে নি কখনো কিন্তু উপনিবশিত হয়েছে বার বার।উপনিবেশকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মোগল আর ইংরেজরা।
সপ্তম শতকের তিরিশের দশকে মক্কা জয়ের পর আরবরা ইসলামের দর্শন হাতে নিয়ে দিগ্বিজয়ে বের হয় এবং ইসলাম ধর্ম প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম দিকে মরোক্ক পর্যন্ত পুরানো সকল সংস্কৃতি খোলনলচে পালটে ফেলে এমন কী মুখের ভাষা পর্যন্ত প্রতিস্থাপিত করে কায়েম করে আরব বিশ্ব।এ প্রবাহের অতিরিক্ত সংযোজন স্পেন, এরপর ফ্রান্সের গলে গিয়ে ক্ষান্ত হয় আরবদের পশ্চিমমূখী যাত্রা। পূর্ব প্রবাহ ব্যাপকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয় পারস্যে।পারসিক সংস্কৃতির কাছে মুষড়ে পড়ে আরব সংস্কৃতি।ইরানে ইসলাম রূপান্তরিত হয়। ইরানের পার্শ্বে বাগদাদ দীর্ঘ দিন ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।আব্বাসীয়রা মুতাজিলাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ইসলামে যৌক্তিকভাবে আল্লার উপস্থিতি প্রমাণে প্রভাব বিস্তারকারী মুতাজিলারা ব্যর্থ হলে প্রভাব বিস্তার করে সূফীজম।যার উর্বর ভূমি হলো পারস্য বা ইরান।
সপ্তম শতক থেকে শুরু করে ত্রয়োদশ শতকে এসে মুসলমানরা মোটামুটি পুরো ভারতবর্ষ দখল করে।কিন্তু ততোদিনে ইরানে দেয়ালে ধাক্কা খাওয়া ইসলাম অনেকটা ভিন্নরূপে যা কীনা প্রধানত ইরানের সূফীদের দ্বারা প্রচারিত হয় ভারতে।মোহাম্মদ ও খোলেফায়ে রাশেদীনের পরে যে নামগুলেো শুনা যায় তা হলো-বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী, খাজা বাবা মইনূদ্দীন চিশতী, বাবা ফরীদ, নিজাম উদ্দীন আউলিয়া, শাহ জালাল ইত্যাদি যারা সকলেই সূফী।পারস্য আর মধ্য এশিয়া থেকে ঝাকে ঝাকে পীর-আউলিয়ারা ভারতে ধর্ম প্রচার করে যাকে বলা যায় ইসলামের বিস্তার(diffusion)।
মরমি কবি ফকির লালনকে জানার চেষ্টার প্রারম্ভে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা বিধৌত ব-দ্বীপের অনিশ্চিত কৃষিভিত্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন এবং সনাতনী তথা হিন্দু , বৌদ্ধ এবং ইসলাম এই তিন ধর্মের মিথষ্ক্রিয়ার মানস জগৎ বিবেচনায় রাখা দরকার। হিন্দু ধর্মজাত বৈষ্ণব ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্মের সহজিয়া মতবাদ, ইসলামের সূফী মতবাদ বাংলায় যা মূলত মারেফত বা মাইজভাণ্ডারী নামে পরিচিত- এই তিন মূল ধারার মিলনের ফলে উদ্ভূত বাংলার ধর্ম হলো বাউল ধর্ম।
বাউল একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়।বাউলদের ধর্মের তত্ত্ব ও দর্শন আছে, সাধন পদ্ধতি আছে, সাধক জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা আছে, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে তাদের একটি দৃষ্টিভঙ্গি আছে, এ সমস্তই ব্যক্ত হয়েছে তাদের গানে।এই সম্প্রদা্য়ের সাধকগণের তত্ত্ব দর্শন ও সাধনা সংবলিত গানই বাউল গান।
রূপ থেকে স্বরূপে ওঠাই বাংলার বাউলদের সাধনা।
কীভাবে পুরূষ-প্রকৃতি ( জীবাত্মা-পরমাত্মা/ নারী-পুরুষ) বিভক্ত হ'ল এবং কীভাবে দুই দেশে না থেকে একত্রে রইল। পদ্ম কোথায় প্রস্ফুটিত হয়, পদ্ম পুস্পের রসে কীভাবে সাধন হয় এবং সহস্রদল হতে রজঃস্রোতের সঙ্গে রসরাজ লীলা করতে করতে অগ্রসর হয়ে তিন দিন তিন রূপ ধারণ করে শেষে সহজ মানুষ রূপে আত্মপ্রকাশ করেন।তারপর প্রকৃতি-পুরুষের শৃঙ্গার দ্বারা উর্ধ্বগত হয়ে স্বস্থানে যেয়ে যুগল হয়ে নিত্যরস লীলা আস্বাদন করেন- বাউল সাধনার মূলভাবটি মোটামুটি এর মধ্যে ব্যক্ত। এর থেকে বোঝা যায় বা্উল সাধনা নারী-পুরুষের যৌথ সাধন পদ্ধতি।
অদ্বৈতাচার্য ও নিত্যানন্দ প্রকৃতি- পুরুষ-মিলন-ঘটিত ধর্মসাধনার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। নিত্যানন্দের পুত্র বীরভদ্রের সময় হতে বাউলরা সম্প্রদায় হিসেবে প্রকাশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং গুরু পরম্পরায় ব্যাপ্ত হয় সারা বাংলায়।
বাউল সাধনার তিন স্তর
প্রবর্ত-- ভগবানের নিকট দৈন্য ও গুরুর করুণা প্রার্থনা।
সাধক-- দেহতত্ত্ব, মনের মানুষ, সাধনার স্বরূপের জ্ঞান লাভ।
সিদ্ধ--সাধনার পূর্ণতার স্বরূপ।
ফকির লালন ছিলেন সিদ্ধপুরুষ। বিশাখা লালনের সাধিকা।
লালন তথা বাউলদের যৌন সাধন।
বাঙালির কাছে যৌনতা বিষয়টি অনেক বড় ট্যাবু।নিয়মিত যৌন কাজে লিপ্ত হবে কিন্তু মুখে বলবেনা। চিন্তা করুন লালনের জীবন কাল আঠার শতকের শেষের দিক থেকে উনিশ শতক, সমগ্র ভারত বৃটিশদের দখলে। তথাকথিত মুসলমানদের (মোঘল) হাত থেকে নাছারারা ক্ষমতা দখল করেছে, মুসলমানরা জাত যাওয়ার ভয়ে শিক্ষা-দীক্ষা বাদ দিয়ে না বুঝে কোরান মুখস্ত করে জাত রক্ষায় ব্যস্ত।হিন্দুরা জাত-পাতের ঘেরাটোপ আর ইংরেজি শব্দ মুখস্ত করে অফিসের কেরানী বা বাবুগিরির মধ্যে ঘোড়পাক খাচ্ছে।
এমন সমাজে সম্পুর্ণ ভিন্ন স্কুল হল বাউলদের।
আধ্যাত্বিকতার চর্চায় মানবদেহকে ঈশ্বরের আবাস (বারামখানা) মনে করে বলে লালন/বাউলরা দেহ্তত্ত্বে (Physiology) ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করে। লালনের গানের বিশাল অংশ জুড়ে দেহতত্ত্বের গান।দেহ থেকে দেহে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ঈশ্বরের ধারাবাহিকতায় সঙ্গম বা নারী-পুরুষের মিলন বাউলদের সাধনার মূল কেন্দ্রবিন্দু।ডঃ উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের মতে-''কীভাবে পুরূষ-প্রকৃতি ( জীবাত্মা-পরমাত্মা/ নারী-পুরুষ) বিভক্ত হ'ল এবং কীভাবে দুই দেশে না থেকে একত্রে রইল। পদ্ম কোথায় প্রস্ফুটিত হয়, পদ্ম পুস্পের রসে কীভাবে সাধন হয় এবং সহস্রদল হতে রজঃস্রোতের সঙ্গে রসরাজ লীলা করতে করতে অগ্রসর হয়ে তিন দিন তিন রূপ ধারণ করে শেষে 'সহজ মানুষ' রূপে আত্মপ্রকাশ করেন।তারপর প্রকৃতি-পুরুষের শৃঙ্গার দ্বারা উর্ধ্বগত হয়ে স্বস্থানে যেয়ে যুগল হয়ে নিত্যরস লীলা আস্বাদন করেন- বাউল সাধনার মূলভাবটি মোটামুটি এর মধ্যে ব্যক্ত।" এর থেকে বোঝা যায় বাউল সাধনা নারী-পুরুষের যৌথ সাধন পদ্ধতি।
যে কথা বলছিলাম লালনের সময়কালে বা তার আগে পরে বাউলরা সবসময় নিজেদের সাধন পদ্ধতির ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করতো।যেহেতু তাদের আখড়ায় অনেক সাধিকা থাকতো এবং বাইরের মানুষকে তারা নিজেদের জীবনাচরণ বলতোনা ফলে সহজেই নানারকম কুৎসা রটনা করেতে পেরেছে নিন্দুকেরা। আবদ্ধ সমাজে যৌনতা বিষয়ে গুজব ছড়ানো খুবই সহজ।আর বিশাল এই সম্প্রদায়ের কোথাও কোথাও নাকি বিপথগামী কিছু বাউল আখড়ার পাশে পতিতালয় গড়ে নিতো। এটি মূল ধারা নয়।
এবার আসা যাক সোজা কথায় তাদের সাধনা কী? লালনের গানে প্রায়ই শোনা যায় 'সহজ মানুষ' বা 'অটল রূপ' 'মনের মানুষ' 'অচিন পাখি' বা আলেকজনা এর দ্বারা কী বুঝায়? খুব সহজ ভাবে বললে এর দ্বারা গুরু, মুর্শিদ, রাসুল, আদম, ভগবান, আল্লা, ঈশ্বর ইত্যাদিকে বুঝায়। কিন্তু লালন ঈশ্বরের সর্বোচ্চ রূপ মানবদেহের প্রানের ধারার সাথে কীভাবে মিশে থাকে সে রহস্য উৎঘাটনে সচেষ্ট ছিলেন। লালন তথা বাউলদের এ লক্ষ্যে সাধন পদ্ধতির সম্পর্কে যৎসামান্য জানা যায় তা হলোঃ
পুরুষের বীজ আর নারীর রজঃ মিলিত হয়ে মানবের জন্ম।আর এই দু'য়ের উৎপত্তি সঙ্গমকালে।যৌন উত্তেজনার চুড়ান্ত পর্যায়ে (Orgasm) সহজ মানুষ বা ঈশ্বরের অটলরূপ উপস্থিত হয়। বাউলরা এই স্তরে পৌঁছে স্থির থেকে সাধন করতে চায়।কাম নদীর নিন্মমূখী ধারাকে ঊর্ধমূখী করে যারা দীর্ঘক্ষণ ধরে অরগাজমে থেকে সহজ মানুষ সাধন করতে পারে তারা হলো সিদ্ধ পুরুষ।ফকির লালন একজন সিদ্ধপুরুষ।এবার দেখি লালন তার গানে কী বলছে
আমি কী সন্ধানে যাই সেখানে
মনের মানুষ যেখানে।
আঁধার ঘরে জ্বলছে বাতি
দিবা রাতি নাই সেখানে।
যেতে পথে কাম নদীতে
পারি দিতে ত্রিবিণে (ত্রিবেণী)
কত ধনীর ধারা যাচ্ছে মারা
পইড়ে নদীর তোড় তুফানে।
রসিক যারা চতুর তারা
তারাই নদীর ধারা চিনে
উজান তরী যাচ্ছে বেয়ে
তারাই স্বরূপ সাধন জানে।
লালন বলে মইলাম জ্বলে
মইলাম আমি নিশি দিনে
আমি মনিহারা ফণির মতো
হারা হলাম পিতৃধনে।
এমন অসংখ্য গানে গানে লালন বা বাংলার অন্যান্য বাউলরা নিজেদের প্রেম,কাম, সাধনের কথা বলে গেছেন। রূপ (ঈশ্বর বা পরমাত্মা) থেকে স্বরূপে (মানব ও ঈশ্বর লীন) ওঠাই বাংলার বাউলদের সাধনা।
আমি আগের কিস্তিতে বলেছিলাম গুরু রবি ঠাকুর আধুনিক কালের বাউল। তার গানে গানে কবিতায় কবিতায় আধ্যাত্বিকতার সরব উপস্থিতি।সোনার তরীর হিং টিং ছট কবিতায় রাজা হবুচন্দ্র ভূপের স্বপ্নের খোয়াব নামায় দেখুন।গৌড়ের তথা বাংলার গুরুমারা চেলার উলট-পালট তাফসির-
‘ নিতান্ত সরল অর্থ , অতি পরিষ্কার ,
বহু পুরাতন ভাব , নব আবিষ্কার ।
ত্র্যম্বকের ত্রিনয়ন ত্রিকাল ত্রিগুণ
শক্তিভেদে ব্যক্তিভেদ দ্বিগুণ বিগুণ ।
বিবর্তন আবর্তন সম্বর্তন আদি
জীবশক্তি শিবশক্তি করে বিসম্বদী ।
আকর্ষণ বিকর্ষণ পুরুষ প্রকৃতি
আণব চৌম্বকবলে আকৃতি বিকৃতি ।
কুশাগ্রে প্রবহমান জীবাত্মবিদ্যুৎ
ধারণা পরমা শক্তি সেথায় উদ্ভূত ।
ত্রয়ী শক্তি ত্রিস্বরূপে প্রপজ্ঞে প্রকট —
সংক্ষেপে বলিতে গেলে , হিং টিং ছট্ । '
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান ,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে , শুনে পুণ্যবান ।
তাহে এক পাগলা ব্যটা বসে একা একেশ্বরে--লালন (৩য় পর্ব)
ছোটবেলা থেকে শুনতাম আল্লা থাকে সাত আসমানের উপরে।মনে করতাম আমরা তো এক আসমান দেখি তার উপরে বুঝি বাকীগুলো।বিজ্ঞানের হাতেখড়িতেই গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদি পড়ে সব কিছু কেমন যেন হয়ে গেলো।হিসেব মেলে না। ছোট বেলাতেই গ্রামের লোকজনের মুখে শুনেছি 'খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়... আট কুঠুরী নয় দরজা...।' কার গান কি বলছে কিছুই বুঝতাম না।কাউকে জিজ্ঞেস করলে আমাদের দেহে আত্মার যাওয়া আসা পর্যন্ত উত্তর মিলতো।কিন্তু কোথায় আট কুঠুরী নয় দরজা বা সাত আসমান?
বাউলদের সম্পর্কে জানা খুবই কঠিন কাজ। বলা হয়ে থাকে 'শম্ভুকের মতো আত্মসংকোচনশীল, আত্মগোপনশীল জীবন যাত্রার রীতি এই বাউলদের'। বাউলরা তাদের আধ্যাত্বিকতায় ব্যবহার করেছে ভারত পারস্য ও আরবের মিথ।ভারত হলো মিথের মক্কা।ফলে ধর্মের তত্ত্ব ও মিথের সহযোগিতায় তাদের সম্পর্কে কিছু ধারণা করা যেতে পারে।
লালনের খুবই পরিচিত একটি গানের কথায় আসা যাক--
ধন্য ধন্য বলি তারে
বেঁধেছে এমনও ঘর শুন্যের উপর
আ মরি শুন্যের উপর পোস্তা করে
ধন্য ধন্য বলি তারে।
খুব সুন্দর বুঝা যাচ্ছে ঈশ্বর তার বারামখানা এই মানব দেহ শক্ত করে তৈরী করেছে। কিন্তু কোথায়? শুন্যের উপর। শুন্য কী? বিজ্ঞানে এর কোন সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। যে কোন কিছুকে আমরা আপেক্ষিকভাবে শুন্য ধরতে পারি। শুন্যের জন্মভূমি ভারত।বুদ্ধের মূল দর্শনই হলো শুন্যবাদ।নাগার্জুন শুন্য সম্পর্কে বলেছেন " অস্তি-নাস্তি-তদুভয়ানুভয়চতুষ্কোটি বিনির্মুক্তং শুন্যরূপম"। সহজ ভাবে বললে দাঁড়ায়-
আছে যে তা নয়
নাই যে তাও নয়
আছে নাই উভয়ই তাও নয়
আছে নাই উভয়ই যে নয় তাও নয়। এই চার মুক্ত কোন কিছু হলো শুন্য।এরই উপর ঈশ্বর পোস্তা করে ঘর বেঁধেছে। তাই ফকির লালন বলছে-ধন্য ধন্য বলি তারে।
ঘরে মাত্র একটি খুঁটি
খুঁটির গোড়ায় নাইকো মাটি
কিসে ঘর রবে খাড়ি
ঝড়ি-তুফান এলে পড়ে।
ঘরের একটি খুটি বলতে কী বুঝায়? প্রাণিবিজ্ঞানে পড়েছি সমস্ত প্রানিজগতকে মোটা দাগে দুভাগে ভাগ করা যায় মেরুদণ্ডী অমেরুদণ্ডী।এই মেরুদণ্ড প্রাণির বিবর্তনের খুবই বড় একটি ধাপ।মেরুদণ্ডের কশেরুকার ভিতর দিয়ে তিনটি স্নায়ু পেচিয়ে পেচিয়ে (কুণ্ডলী স্ত্রীবাচক কুণ্ডলিনী) মাথায় গিয়ে মিলেছে।যা ভারতীয় তান্ত্রিকদের কাছে অনেক সময় ত্রিবেণী নামেও পরিচিত।সুষুন্মা, ইড়া,পিঙ্গলা।সুষুন্মা অক্ষের মতো যাকে পেচিয়ে বাকি দুটি। ইড়া বাম শুক্রাশয় থেকে ডান নাসারন্ধ্র পর্যন্ত। শ্বেত বর্ণের শান্ত সৌম্য ও চাঁদের সাথে তুলনীয়। পিঙ্গলা (লাল) ডান শুক্রাশয় থেকে বাম নাসারন্ধ্র পর্যন্ত বর্ধিত। ইহা ভয়াবহ শক্তিশালী ও সূর্যের সাথে তুলনীয়।
ত্রিবেণীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্তরে স্তরে বিভিন্ন কুঠুরী বা পদ্ম ফুলের বর্ণনা করা হয়েছে। পদ্ম গাঙ্গেয় অঞ্চলের খুব সাধারণ ফুল এবং প্রচুর মিথ। ব্রহ্মা স্বপ্ন দেখেন তার নাভিমূল থেকে পদ্ম ফুল ফুটে। স্বরস্বতী পদ্মফুলের উপর আবির্ভূত হন। প্রাণির দেহে ফুলের সনাক্তকরণ যাদের গ্রামদেশে বাড়ী তারা সহজেই করতে পারবেন। গরু ছাগলের বাছুর হওয়ার পর লোকজন পাহাড়া থাকে যেন ফুল না খেয়ে ফেলে। গরু তৃণভোজী কিন্তু এই আমিষ জাতীয় খাদ্য সরিয়ে না ফেললে সে অবশ্যই খায়। লালন তার গানে সরাসরি ফুল শব্দটিও ব্যবহার করেছেন।
কমল কোঠা কারে বলি
কোন মোকাম তার কোথা গলি
সেইখানে পড়ে ফুলি
মধু খায় সে অলি জনা।
একমাত্র খুঁটি সুষুন্মার শুরু থেকে শেষ অবধি কুণ্ডলিনীর (ত্রিবেণী) বিভিন্ন স্তরে সাধনার মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন চৈতন্য জাগ্রত করে শেষে ঈশ্বরের সাথে লীন হওয়াই দুনিয়ার সমস্ত সাধকের উদ্দেশ্য। সাধকের রূপান্তরের এই স্তর বা চক্র বা ফুল বা কুঠুরী বা আসমান উপমায় কখনও সাত কখনও আট বা নয় ধরনের স্তরের কথা বলা হয়ে থাকে। লালন ৭, ৮, ৯, সবই ব্যবহার করেছে-
দেশ দেশান্তর দৌঁড়ে কেন মরছ রে হাপিয়ে
আদি মক্কা এই মানব দেহে
দেখনারে মন ধ্যেয়ে।
মানুষ মক্কা কুদরতি কাজ
উঠেছে আজগবি আওয়াজ সাত তলা ভেদিয়ে।
আছে সিং দরজায় তারি একজন নিদ্রা ত্যাগি হয়ে
দেখনারে মন ধ্যেয়ে।
অথবা যে গানটি ধরে আলোচনা করছি তার পরের অন্তরায়-
মূলাধার কুঠুরী নয়টা
তার উপরে চিলে কোঠা
তাহে এক পাগলা ব্যটা
বসে একা একেশ্বরে।
ভারতীয় মিথে সাধনার এই স্তরসমূহকে মুলতঃ সাত চক্রেই আলোচনা করা হয়েছে। কোথাও বা উপবিভাগ করেছে আট বা নয় চক্রে।
সুষুন্মার ভিত্তি বা মূলকে বলা হয় মূলাধার চক্র।
মূলাধারের অবস্থান যৌনাঙ্গ ও পায়ু পথের মাঝে। চিত্রে বৃত্তের ভিতর চতুর্ভূজের দ্বারা বুঝানো হয়েছে পার্থিব বিষয় আশয়। হাতির পিঠের উপর নিন্মগামী ত্রিভূজ দ্বারা যোনী তথা বিশ্বমাতা, এর মাঝখানে পুরুষ প্রতীক শিবলিঙ্গ যাকে সাড়ে তিন প্যাচে জড়িয়ে সর্প দেবী কুণ্ডলিনী। এবার আসা যাক হাতির কথায়। হাতি ভারতে একটি মিথিক চরিত্র। মিথ অনুসারে 'একদা হাতি মেঘের মতো রূপ পরিবর্তন করতে পারতো, উড়তে পারতো।একদিন সে উড়ে গিয়ে বসলো এক ডালে। ঐ গাছের নীচে এক সাধু তার শিস্যদের পড়াচ্ছিলেন।এমন সময় ডাল ভেঙ্গে কয়েকজন শিস্য মারা গেল আর হাতি সুন্দর উড়ে গিয়ে বসলো অন্য ডালে। সাধু সাথে সাথে রেগে গিয়ে সমস্ত হাতি জাতিকে অভিশাপ দিলেন। হাতি তার রূপ পরিবর্তন ও উড়ার ক্ষমতা হারালো। এর পর থেকে হাতি পৃথিবীতে হেঁটে চলা একখণ্ড অভিশপ্ত মেঘ।' হাতির এই সিম্বল থেকে বুঝা যায় শর্তমুক্ত হলে সহজেই পৌঁচা যায় পরবর্তি কুঠুরীতে। মূলাধার স্তর সাধকদের কাছে খুবই স্থুল পর্যায়। এর দ্বারা পরিচালিত মানুষজন সক্রিয় নয়।
পরের চক্র স্বধিস্থান(Svadisthana) ।
এটি কুণ্ডলিনীর বিশেষ আবাস।শরীরের যৌনাঙ্গ বরাবর এর অবস্থান। এই চক্রে কুণ্ডলিনী জাগ্রত হলে জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয় সেক্স। চিত্রে পানির অসুর মকর এর প্রধান উপাদান। ফ্রয়েড জীবনের এই চক্রের আলোচনা করেছেন ভালোভাবে। ভারতীয় সাধকেরা এই কুঠুরী উত্তরণের ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত। একটি ধারা কামকে হ্যা বলেছে অন্যটি না। বাউলরা প্রথমটি।
৩য় তলা হলো মনিপুর-
নাভির লেভেলে এর অবস্থান। মানুষের ভোগবাদীতা,দখল মনোবৃত্তি ইত্যাদির প্রকাশ এখানে। বর্তমান পশ্চিমা জগতের জীবনে এই চক্রের প্রাধান্য।
উল্লেখিত চক্রসমূহ সাদামাঠা। যারা এর মধ্যে জীবন যাপন করে তাদের জাগতিক চাওয়া পাওয়াই নির্ধারণ করে জীবনের সুখ-দুঃখ।এরা নিষক্রিয় বা প্রতিক্রিয়াশীল। গুরু ঠাকুর বলেছেন 'পনের আনা মানুষ আসে খায় সন্তান উৎপাদন করে মারা যায়।'
পরবর্তি চক্র সমূহ উঁচু স্তরের।অনেকটা শরিয়ত-মারিফতের পার্থক্যের মতো। দান্তের মতে নতুন জীবনের শুরু।
চক্র চারঃ অনাহত(Anahata)
হৃদপিণ্ডের বরাবর এই পদ্ম। অনাহত মানেই আঘাত হীন।আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা হলো আঘাত ছারা শব্দ অসম্ভব। কিন্তু বিজ্ঞানের Big Bang আল্লার কুন বা ভারতের ওঁম এই সব শব্দ আমাদের চেনা বস্তুর আগে। সাধকেরা চিরন্তন সেই আঘাতহীন শব্দ শোনার সাধনা করে। রাবেয়া বসরী বলেছেন নৈশব্দই সেরা ইবাদত। তিনি নদীর পারে বসে এই ইবাদতই করতেন।অনাহত শব্দ শুনার পরে পরবর্তি কুঠুরীতে গমন।
চক্র পাঁচ বিশুদ্ধ ( Vishuddha)
এর অবস্থান গলায়। কুণ্ডলিনী যখন এই তলে পৌঁছা্য় তখন সাধকের সাথে ঈশ্বরের কথাপকথোন হয়। চিত্রে নিন্মমূখী ত্রিভূজের ভিতর পূর্ণ বৃত্ত হলো পূর্ণ চন্দ্র। লালন তার বহু গানে বলেছে এই চাঁদের কথা। এখানকার দেবতা হলো অর্ধনরেশ্বর শিব। সাধকেরা দেখতে পান পারে যাওয়ার তরী।
লালন অসংখ্য গান লিখেছে পারাপার তত্ত্বের। চির মুক্তি লাভের এই যাত্রা খুবই বিপদ সংকুল। ঠিক সেই ফুলসেরাতের পুলের বর্ণনা।ওপারে আছে চির যৌবন অনন্ত ভূমি এক কথায় স্বর্গ।
সিদ্ধ পুরুষ হতে আর দু চক্র বাকী।
অহনা(Ajna) ষষ্ঠ চক্র
দুই ভ্রুর মাঝে উপরে মেয়েরা যেখানে টিপ পড়ে সেখানে এই চক্রের অবস্থান। সূফীদের ফানা ফিল্লা্হ বা ঈশ্বরের সাক্ষাৎ বা দিদার। রামকৃষ্ণের বর্ণনায় এ স্তরে কিছুটা আমি বা (Ego) থেকে যায়। তিনি বলেন এ যেন ঠিক কাঁচে ঘেরা বাতি। সবই দেখা যায় তবু থেকে যায় বাঁধা। মোহাম্মদের মিরাজে আল্লা ও তার মাঝে একটি পর্দা ছিল।
সহস্র( Sahasrara) ৭ম চক্র
এই স্তর হলো বাকা বিল্লাহ।ইউসুফ হাল্লাজের 'আয়নাল হক' বা আমিই সত্য। রামকৃষ্ণের বর্ণনায় কোন ধরণের বাঁধার অস্তিত্ত্ব নেই। শুধুই আলোর ঝলকানী। লালনের মতে দিবা রাতি নাই সেখানে। লালনের গানে দেখুন সহস্রের কথা
যে রূপে সাঁই বিরাজ করে দেহ ভূবনে
গুরুর দয়া যারে হয় সেই জানে।
শহরে সহস্র পারা তিনটি পদ্মার এক মহেরা
আলেক ছোঁয়ার পবন খোড়া ফিরছে সেখানে।
গুরুর দয়া যারে হয় সেই জানে।
সহস্রের উপরে চিলে কোঠায়ই পাগলা ব্যাটা থাকেন। এর পর লালন বলে-
উপর নীচে সারি সারি
সাড়ে নয় দরজা তারি
লালন কয় যতে পারি
কোন দরজা খুলে ঘরে।
সাড়ে নয় দরজা বলতে দুই চোখ, দুই কান, দুই নাক, মুখ, যৌনাঙ্গ, পায়ু। যৌনাঙ্গে নারীর দুই দরজা পুরুষের একটা গড়ে সাড়ে নয়।
ধন্য ধন্য বলি তারে
বেঁধেছে এমনও ঘর শুন্যের উপর
আ মরি শুন্যের উপর পোস্তা করে
ধন্য ধন্য বলি তারে।

































