পৃথিবী থেকে দুরাচারী দুষ্টদের দমন আর সজ্জনদের রক্ষার জন্যই মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ১৭ ভাদ্র স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাব-তিথিকে ভক্তরা শুভ জন্মাষ্টমী হিসেবে উদ্যাপন করে থাকেন।
এই মহাপুণ্য তিথিতে দেবকী ও বাসুদেবের আকুল প্রার্থনায় সাড়া দিয়া অত্যাচারী কংসের কারাকক্ষে পুত্ররূপে আবির্ভূত হন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। বসুদেব ও দেবকীর পুত্র শ্রীকৃষ্ণ। মানবপুত্র মানবই, ঈশ্বর হয় কি করে! আর তাঁর জন্মও হয়েছে একটি কারাগারে। স্বয়ং ভগবান কারাগারে জন্মাবেন কেন? আরাধ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে সেসব প্রশ্ন অনুধাবনযোগ্য।
শ্রীমদ্ভগবদগীতায় উল্লেখ আছে : যখনই পৃথিবীতে অধর্মের প্রাদুর্ভাবে ভক্ত ও সর্বসাধারণের জীবন দুর্বিষহ ও অতিষ্ঠ হইয়া ওঠে, দুরাচারীর অত্যাচার ও নিপীড়ন বৃদ্ধি পায়, তখন ধর্ম সংস্থাপনের জন্য কৃপাবশত ঈশ্বর ‘অবতার’ রূপে এই নশ্বর পৃথিবীতে আগমন করিয়া থাকেন। তখন তিনি ষড়গুন তথা ঐশ্বর্য, বীর্য, তেজ, জ্ঞান, শ্রী ও বৈরাগ্যসম্পন্ন ’পুণ্যাবতার’ রূপে প্রকাশিত হন। তাঁহার আবির্ভাবে ধরণী হয় পাপভারমুক্ত। সাধুসজ্জন ও ভক্তদের মনে সঞ্চারিত হয় অনাবিল আনন্দ। তাঁহার এই জন্মলীলাই জন্মাষ্টমী হিসাবে অভিহিত ও স্মরণীয়। কেননা তিনি অষ্টমী তিথিতে দৈবকীয় অষ্টম গর্ভে জন্ম নিয়াছিলেন। বলাবাহুল্য, ইহা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই পৃথিবীতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্মধারী শ্রীকৃষ্ণরূপে আবির্ভূত হইয়াছিলেন দ্বাপর যুগে। তাঁহার জন্ম হইয়াছিল বর্ণমালা পিতাসন পরিহিত অবস্থায়। সর্বাঙ্গে ছিল বহুমূল্য বলয় ও মণিমুক্তাখচিত অলংকারাদি। তাঁহার আগমনী বার্তায় কারাগারের লোহার শিকল ও বন্ধ দরজা আপনা-আপনি উন্মুক্ত হইয়া যায়। অঝোর বারিধারার সিঞ্চন হইতে রক্ষায় অনন্তদেব ফণা বিস্তার করিয়া চক্রধারণ করেন। ভরা ভাদ্রের প্রমত্তা যমুনা তাহার গমনপথ সুগম করিয়া দেয়। তিনি মানবদেহ ধারণ করিয়া ১২৫ বৎসর জীবিত ছিলেন। তাঁহার জীবনকালকে বিন্যস্ত করিলে দেখা যায় মথুরায় তাঁহার জন্ম, গোকুলে নন্দালয়ে পরিবর্ধন, মথুরায় কংস বধ, রাজ্যাধিকার, কুরুক্ষেত্রে পান্ডবদের সঙ্গে সখ্যতা, দ্বারকায় রাজধানী স্থানান্তর ও অতঃপর লীলাবসান।
শ্রীকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠ অবদান শ্রীমদ্ভগবদগীতা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত বাণীসমূহই এই মহাগ্রন্থে স্থান পাইয়াছে। সব বেদ ও উপনিষদের ইহাই সারসংক্ষেপ। গীতায় ঈশ্বর সাধনার বিভিন্ন পথ রহিয়াছে। জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তি যে কোন পথ ধরিয়া সাধনা করিলে ঈশ্বরকে লাভ করা যায়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের পরমাত্মীয় ও বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের আত্মা। ভারতবর্ষের ধর্ম ও ইতিহাসের এক আধ্যাত্মিক ও অবিস্মরণীয় পুরুষ। তাঁহার গীতা মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন। স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায়, বিশ্বাস ও প্রেমেই শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়া যায়।



No comments:
Post a Comment