বর্তমানে ভারতের যে স্থানে অমৃতসর অবস্থিত, শত শত বছর আগে ওই স্থানে ছিল ঘন জঙ্গল। এই বনের মধ্যে একটি পুকুর ছিল। শিখদের চতুর্থ গুরু, গুরু রামদাস এ স্থানে একটি গ্রামের প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম ছিল 'গুরুর চক'। ধীরে ধীরে এ গ্রামটি বৃদ্ধি লাভ করে একটি শহরে পরিণত হয় যার নাম দেওয়া হয় 'রামদাসপুর'। ১৫৮৯ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চম গুরু শ্রী অর্জুন দেব এখানে একটি পুকুর তৈরি করেন, যার নামকরণ হয় 'অমৃত সরোবর' (অমৃতসর) এবং এ কারণেই পরবর্তীতে শহরটির নাম হয় 'অমৃতসর'। এই সরোবরের মধ্যস্থানে তিনি একটি স্বর্ণমন্দির নির্মাণ করেন। ১৬০১ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। এ স্বর্ণমন্দিরকে 'দরবার শাহী'ও বলা হয়। স্বর্ণমন্দিরটি অমৃতসরের গৌরব এবং শিখ ধর্ম ও ভক্তির অন্যতম কেন্দ্র। এ দোতলা মন্দিরটি সরোবরের মধ্যস্থলে ৬৭ বর্গ ফুট আয়তনের একটি প্লাটফর্ম অর্থাৎ উন্নত স্থানের ওপর নির্মিত। মন্দিরটির গম্বুজ স্বর্ণখচিত। এর চারদিকে চারটি প্রবেশদ্বার রয়েছে যার দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়, সব ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিই এ মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন। মন্দিরটির ব্রোঞ্জ নির্মিত প্লেটগুলো বিশুদ্ধ সোনার পাত দিয়ে গভীরভাবে আবৃত। সূর্যালোকে এটি ঝলমল করতে থাকে এবং সরোবরের শান্ত জলে এর প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। সরোবরের চতুর্দিকে সাদা মার্বেল পাথরের নির্মিত চলাচল পথ রয়েছে। সরোবরের পশ্চিম দিকে ২৪ ফুট দীর্ঘ এবং ২১ ফুট প্রস্থ একটি বাঁধানো পথ আছে যা মন্দির পর্যন্ত বিস্তৃত। কারুকার্যের পরম উৎকর্ষতা এবং বিশালতার জন্য এ মন্দিরটি বিখ্যাত। পবিত্র উপাসনার স্থানে একটি চাঁদোয়ার নিচে শিখদের ধর্মগ্রন্থ 'গ্রন্থ সাহিব' রক্ষিত রয়েছে। ধর্ম সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে পুরোহিতগণ এর শ্লোকগুলো আবৃত্তি করেন। পবিত্র সরোবরের চতুর্দিকে অট্টালিকাগুলো দূরবর্তী স্থান থেকে উপাসনার জন্য আগত তীর্থ যাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা আছে। সরোবরের তীরে অবস্থিত অকাল তখ্ত শিখ ধর্মের স্থানীয়দের সর্বোচ্চ কেন্দ্র।
এখানে অনেক প্রাচীন স্মৃতিচিহ্ন রক্ষিত আছে। প্রতিদিন একটি সোনার পালকিতে 'গুরু গ্রন্থ সাহিব' অকাল তখ্ত থেকে স্বর্ণমন্দির পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। মন্দিরে প্রবেশ করার আগে আগত তীর্থ যাত্রীদের পায়ের জুতা খুলে নিতে হয় এবং মাথা ঢেকে নিতে হয়। বাবা অটল অট্টালিকা নামে একটি পৃথক হর্ম্যে গুরু নানকের জীবন কাহিনীর অনেক দৃশ্য মনোরমভাবে চিত্রিত আছে। সব ধর্মাবলম্বী লোকই স্বর্ণমন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন।

No comments:
Post a Comment