Saturday, November 27, 2010

কোলাপাথর সমাধিস্থল, আখাউড়া

১৯৭১-এ কসবায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য স্মৃতিচিহ্ন। যার মধ্যে রয়েছে টর্চারসেল, একাধিক গণকবর। কিন্তু সেসব থেকে একটু আলাদা কোলাপাথর সমাধিস্থল। কারণ এখানে জাতপাতের ধার না ধারে ৩৯ বছর ধরে পাশাপাশি ঘুমিয়ে আছেন হিন্দু-মুসলমান, কৃষক-বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র থেকে শুরু করে সেনাসদস্য। তারা আমাদের ৫১ জন বীর সন্তান। কোল্লাপাথরেই পাওয়া যাবে সেই আবহমান বাংলার সাম্যের প্রতিচ্ছবি। প্রকৃতি সেখানে আপন হাতে সাজিয়েছে নিজেকে।

সে সময় ২ নম্বর সেক্টরের ২নং সাব সেক্টরের অধীনে ছিল কোলাপাথার। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল করিম পালন করেছেন অন্যরকম অনন্য এক ভূমিকা। রচনা করেছেন ইতিহাসের আরেক অধ্যায়। এ অঞ্চলে যেসব মুুক্তিযোদ্ধা শহীদ হওয়ার খবর জেনেছেন সেখানেই ছুটে গেছেন আবদুল করিম ও তার বাবা আব্দুল মান্নান। কাঁধে মৃতদেহ বয়ে নিয়ে এসেছেন তার বাড়িতে। বাবা, মা আর সন্তান আবদুল করিম মিলে পরম মমতায় গোসলাদি সম্পন্ন করে কবর দিয়েছেন বাড়ির পাশে নিজ ভূমিতেই। তৎকালীন সিও এবং পরবর্তীতে এইচএম গাফফার (বীর উত্তম)-এর নেতৃত্বে যু্দ্ধ করেন এ আবদুল করিম এবং তার কথামতোই কবর দেওয়া হয়েছিল ৫১ জন বীর সেনানীকে। স্মৃতি আওড়ে আ. করিম জানান, ঢাকা বিশ্ব্যাবিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল কাশেম (এমএসসি) সন্ধ্যায় ব্রিজ উড়ানোর জন্য তার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিল। ব্রিজ উড়াতে গিয়েই শহীদ হন তিনি। নায়েব সুবেদার বেলায়েত হুসেন সম্মুখযুদ্ধে মেশিনগান চালাতে চালাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। যার শুরুটা ২২ আষাঢ় হাবিলদার তৈয়ব আলীকে দিয়ে। তিনি মইনপুর সীমান্ত ফাঁড়িতে পাকবাহিনীর আর্টিলার সেলের আঘাতে মৃত্যুবরণ করলে যথাযোগ্য মর্যাদায় তার পরিবার নিজ ভূমিতে তার দাফন সম্পন্ন করেন। আর তারপর একে একে আসতে থাকে ৫১ শহীদের মৃতদেহ। এরা সবাই ঘুমিয়ে আছে প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত এই কোলাপাথরে। ইতিহাস আপনাআপনি হাজির হয় না। তাকে জীবন্ত রাখতে হয়। আর এই জীবন্ত রাখার কাজটি ৩৯ বছর ধরে করে চলেছে আ. করিমের পরিবার।



-সমীর চক্রবর্তী, আখাউড়া

No comments:

Post a Comment