সিলেট নগরীর ব্যস্ততম এলাকা জিন্দাবাজার শুকরিয়া মার্কেটের চতুর্থ তলায় গড়ে তোলা হয়েছে 'ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীন আহমদ স্মৃতি সংগ্রহশালা'। দুর্লভ, দুষ্প্রাপ্য প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনে সাজানো এ সংগ্রহশালার কথা নগরীর প্রায় সবাই জানেন। প্রতিদিন শুকরিয়া মার্কেটে অসংখ্য দর্শনার্থী এটি দেখতে আসেন। সংগ্রহশালাটি তৈরি হয়েছে মূলত ভাষাসৈনিক মতিন উদ্দীনের সংগ্রহে থাকা দুর্লভ প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন দিয়ে। মতিন উদ্দীন আহমদ সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৯০০ সালে। পড়াশোনা শেষে তিনি কিছুদিন আইন পেশায় যুক্ত থেকে, পরে যোগ দেন সিভিল সার্ভিসে। তিনি সিলেটের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। মহান ভাষা আন্দোলনে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং বিদেশ ভ্রমণকালে শখের বসে দুর্লভ প্রত্নতাত্তি্বক দ্রব্যাদি সংগ্রহ করেন। এতদিন নিজ বাড়িতেই এসব দ্রব্য সংরক্ষিত ছিল। তিনি প্রয়াত হওয়ার আগে তার সংগ্রহ নিয়ে একটি সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠার জন্য নাতি ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরীকে তাগিদ দিয়ে যান। পরে ডা. মোস্তফা এই সংগ্রহশালা গড়ে তোলেন। এখানে সংরক্ষিত নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের ব্যবহৃত কলম, বার্মায় জাপানের স্বল্পকালীন শাসনামলের দুর্লভ একটি ব্যাংক নোট, প্রায় দেড়শ' বছরের পুরনো টাইপরাইটার, লেটার প্রেস, নেপালি কুড়কি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত কামানের শেলের খোসা, বন্দুক, নেপালের রাজা বিক্রম শাহ দেব কর্তৃক মতিন উদ্দীনকে দেওয়া হাতির দাঁতের তৈরি দাবার ঘুঁটি, ১৮শ' শতাব্দীর বেশ কয়েকটি ঘড়ি, লোহার তৈরি সিঁড়ি, প্রাচীন আমলের গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত নানা বস্তু ও দ্রব্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন। এখানে রয়েছে সুলতান মাহমুদের শাসনামল, মুঘল আমল ও প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন শাসনামলেরও মুদ্রাসহ শতাধিক দেশের মুদ্রা ও ডাকটিকিট। রয়েছে ১৮৭৪ সালে প্রকাশিত চেম্বার্স এনসাইক্লোপেডিয়া ডিকশনারির এক সেটসহ প্রায় ৫ হাজার দুর্লভ বইয়ের সংগ্রহ। এছাড়াও সোনার জরি খচিত কয়েকটি শাড়ি। রয়েছে আড়াইশ' বছর আগে মানুষ কেনাবেচনার একটি ঐতিহাসিক দলিল। মতিন উদ্দীনের ব্যবহৃত পোশাকও স্থান পেয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ রকম সংগ্রহশালা স্থানীয় পর্যায়ে ইতিহাস চর্চায় বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এ প্রসঙ্গে এর তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোস্তফা জানান, সংগ্রহশালা নিয়ে আমাদের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। একটি ক্যাটালগ তৈরি করব। আমাদের পর্যাপ্ত জনবলও নেই। চেষ্টা করছি এটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে।
-শাহ্ দিদার আলম, সিলেট

No comments:
Post a Comment