বিশ্বের প্রাচীন মৃত্যুপুরী নীলনদের দৈর্ঘ্য ৬৮২৫ কিলোমিটার। আফ্রিকা মহাদেশের ১০টি দেশের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত এ নদ প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহ্য বয়ে বেড়াচ্ছে। নীলনদ শুধু মিসরের গৌরব নয়, দুঃখও বটে। কেননা প্রাচীনকাল থেকে এখানে হাজার হাজার মনীষী তাদের জীবন হারিয়েছেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রাকৃতিক শক্তি ও নীলনদের দেবতা হিসেবে পরিচিত ওসিরিসকেই প্রথম তার ভাই শয়তানের দেবতা সিথ টুকরো টুকরো করে কেটে সিন্দুকে পুরে নীলনদে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ওসিরিসের ছেলে হোরাস সিথকে হত্যা করে নীলনদে ছুড়ে ফেলে। এভাবে নীলনদ মৃত্যুপরীতে পরিণত হয়।
খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে মিশরীয়রা নীলনদের তীরে স্থায়ী বসবাস শুরু করে। তৎকালীন মিশরীয় সমাজে ডায়াট নামে এক শিশু জাদুকর যে কারও রূপ ধারণ করতে পারত। তার পিতার নাম ছিল, সেটনা। তিনি নীলনদের দেবতা ওসিরিস ও দেবী আইসিসের ভক্ত ছিলেন। প্রতি সন্ধ্যায় তিনি নীলনদের তীরে দেবতা ওসিরিসের সম্মানে সুস্বাদু খাবার সামনে নিয়ে প্রার্থনা করতেন। একদা প্রার্থনারত অবস্থায় ডায়েট দেবতা ওসিরিসকে দেখতে পায়। দেবতার সানি্নধ্য লাভের অকৃতিম ইচ্ছায় নীলনদের পানিতে প্রাণ দেয় ডায়েট। পুত্র শোকে কাতর সেটনা পুত্র ফিরে পেতে প্রার্থনায় মশগুল হয় দেবী আইসিসের উদ্দেশ্য। আইসিস স্বপ্নে সেটনাকে উদ্দেশ্য করে বলে- সেটনা তোমার যা চাওয়ার আর পাওয়ার তা নীলনদের দেবতার কাছেই চাও। স্বপ্ন অনুসারে সেটনা যায় নীলনদের কাছে। গিয়ে দেবতা ওসিরিসের উদ্দেশ্যে বলে_'হে দেবতা আমি পবিত্র, আমার সন্তান পবিত্র, তবে কেন-তার এই অকাল মৃত্যু'। হঠাৎ দৈববানী আসে 'হে সেটনা তুমি যাকে পবিত্র বলছ আমি জানি সে পবিত্র তার পবিত্র আত্মার পরম শান্তির জন্যই আমি তাকে নীলনদের পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছি। প্রাচীন মিসরীয়রা সূর্যদেবতা রে'র চেয়ে নীলনদের ও শস্যের দেবতা ওসিরিস ও দেবী আইসিসকে বেশি সম্মান ও ভালবাসত। নীলনদের দেবতা ওসিরিস ইচ্ছা করলে অনেককে জীবন দিতে পারত, আবার পাপের জন্য জীবন নিতেও পারতেন। প্রাচীন কালে মিসরীয়- কে ভালো? কে খারাপ? তা নির্ণয়ের জন্য নীলনদের তীরে সবাইকে যেতে হতো _সেখানে তারা প্রার্থনা করত। এভাবে চলতে থাকত বছরের পর বছর দিনের পর দিন। যে কারণে মিসরীয়রা সহজে কোনো অন্যায় কাজ করতে পারত না। তাদের একটাই ভয় ছিল অন্যায় কাজ করলে দেবতা ওসিরিস দেখে ফেলে এবং নীলনদের পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তাই অধিকাংশ জনগণই মৃত্যু ভয়ে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকত। খরা, বন্যা ও ফসলহানির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মিসরীয়রা নীলনদের দেবতা ওসিরিসের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করত, তাদের বিশ্বাস ছিল দেবতা ওসিরিসই তাদের সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন। নীলনদ মায়ায় তাদেরকে আবৃত করে নিত। যে কারণে নীলনদ ছিল তৎকালীন সময়ে ভয়াল মৃত্যুপুরী।
রিয়াজুল ইসলাম

No comments:
Post a Comment