বায়ুচালিত কল (Windmill) হলো এমন একটি যন্ত্র যা কোনো নির্দিষ্ট কাজের জন্য বাতাসের শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। এ ধরনের কলগুলোর একটি চাকা থাকে এবং এ চাকার সঙ্গে যুক্ত থাকে চারটি বায়ু দিক নির্ণায়ক যন্ত্র বা (Vanes)। যন্ত্রপাতির গোটা সমাবেশটিকে একটি উঁচু গম্বুজ বা মিনারের ওপর স্থাপন করা হয়। বাতাস যখন বায়ু দিক নির্ণায়ক যন্ত্রটিতে ধাক্কা খায়, তখন চাকাটি ঘুরতে থাকে। চাকাটি ঘুরতে ঘুরতে অক্ষ দণ্ডকেও ঘুরিয়ে দেয়। অক্ষদণ্ডের ঘূর্ণল বলকে (Turning Force) তখন গিয়ারের (Gears) সাহায্যে বিভিন্ন কাজে স্থানান্তর করা হয়। শস্যকণা পিষতে কিংবা পাম্পের সাহায্যে পানি উঠাতে প্রধানত এ বায়ুচালিত কল ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের বায়ুচালিত কলের সংখ্যা হল্যান্ডেই সব থেকে বেশি। এর কারণ হলো হল্যান্ডের অধিকাংশ কৃষি জমি সমুদ্র-সমতল থেকে নিচে। নিচু জমিতে যেখানে পানি জমে তখন সেখান থেকে পানি পাম্প করে খালে ফেলার জন্য বায়ুচালিত কল ব্যবহার করা হয়। আজকাল তড়িৎচালিত পাম্পেরও সেখানে ব্যবহার হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ইউরোপে বায়ুচালিত কলের ব্যবহার শুরু হয় দ্বাদশ শতাব্দীতে। প্রথম দিকে হল্যান্ড ও জার্মানি এ কলকে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগায়। জার্মানির তৈরি বায়ুচালিত কলের অশ্বশক্তির (Horse-Power) পাল্লা ছিল ২ থেকে ৮ ঐ. চ. হল্যান্ডে তৈরি (Dutch) কলের অশ্বশক্তি উন্নীত হয় ৬ থেকে ১৪ ঐ. চ. তে। চতুর্দশ শতাব্দীতে শুধুমাত্র হল্যান্ডেই ছিল ৮ হাজার বায়ুকল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র (U.S.A) পানির পাম্প করার জন্য বায়ুকলের ব্যবহার শুরু করে। বর্তমানে বায়ুকলের জনপ্রিয়তা এতটা নেই। কারণ বৈদ্যুতিক মোটর খুব দ্রুতগতিতেই এদের স্থান দখল করে নিয়েছে।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

No comments:
Post a Comment