বিকাল না হতেই পাঠকের ঢল নামে কুমিল্লা টাউন হলে। আজ থেকে ১২৫ বছর আগে ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বীরচন্দ্র গণ-পাঠাগার ও নগর মিলনায়তন। ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে ১০ বিঘা জমির ওপর নিজ অর্থায়নে এ ভবন নির্মাণ করেন। এটিই কুমিল্লা টাউন হল নামে পরিচিত। এ অঞ্চলের শিক্ষা ও সাংস্কৃতি বিকাশে টাউন হলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানটির পঞ্চম রজতজয়ন্তী উপলক্ষে গত মঙ্গলবার বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
টাউন হলের মাঠ থেকেই কুমিল্লায় ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালিত হতো। এক সময় এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। যিনি পাকিস্তান গণ-পরিষদে বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মহান ভাষা আন্দোলনে তার অবদান জাতি বিশেষ শ্রদ্ধায় স্মরণ করে। অন্যদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধেও তার ব্যাপক অবদান ছিল। এ পর্যন্ত টাউন হলের দুইবার ১৯৩৩ ও ২০০২ সালে সংস্কার করা হয়েছে। তারপরও বৃষ্টি হলেই এর ভেতরে অনায়াসে পানি প্রবেশ করে।
জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি পরিচালনা পরিষদ টাউন হল পরিচালনা করে। বর্তমানে এর সাধারণ সদস্য সংখ্যা এক হাজার। টাউন হলে দুটি বিভাগ রয়েছে। একটি গণপাঠাগার, অন্যটি নগর মিলনায়তন। এর মধ্যে পাঠাগারের নিয়মিত সদস্য সংখ্যা ৬০০। আজীবন সদস্য ১৪ জন। পাঠাগারে এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটেনিকাসহ বিভিন্ন ভাষায় রচিত প্রায় ২৪ হাজার বই রয়েছে। ৬৩টি আলমিরায় বইগুলো সজ্জিত। সমৃদ্ধ এই পাঠাগারে উৎসাহী পাঠক যে কোনো সময় এখানে পড়ার সুযোগ পান। হলের নিচ তলায় রয়েছে দৈনিক পত্রিকা পড়ার জন্য একটি রিডিং রুম। যেখানে প্রতিদিন ৪৪টি জাতীয়, আঞ্চলিক দৈনিক ও সাময়িকী রাখা হয়। এ টাউন হলটি কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়ে মহারাজ বীরন্দ্রচন্দ্রের স্মৃতিকে ধরে রেখেছে।
মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

No comments:
Post a Comment