রাজা রাজবল্লভ ছিলেন একজন ঘোরতর বিশ্বাসঘাতক এবং অর্থলোলুপ অমাত্য। রাজা রাজবল্লভ ঢাকা বিক্রমপুরের লোক। বাঙালি বৈদ্য। ঢাকায় জাহাজি ফৌজ বিভাগের কেরানী। তারপর ঢাকার গভর্নরের পেশকার। ঘসেটী বেগমের স্বামী নওয়াজিশ খাঁ যখন ঢাকার গভর্নর তখন রাজবল্লভ রাজা উপাধি পান।
রাজবল্লভ পূর্ববঙ্গে বৈদ্যদের মধ্যে প্রথম উপবীত চালু করেন নিজের বিধবা মেয়ের বিয়ে দিতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। হোসেন কুলী খাঁর মৃত্যুর পর রাজবল্লভ ঢাকার দেওয়ান হলেন। নওয়াজিশ খাঁ দুর্বল প্রকৃতির লোক সে কারণে ঢাকার প্রকৃত শাসনকার্য চালাতেন রাজবল্লভ। এই সূত্রে যেমন বিপুল সম্পত্তি ও অর্থের মালিক হয়েছিলেন তেমনি ঘসেটী বেগমের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে।
আলিবর্দী তখন অসুস্থ। রাজবল্লভ এসেছিলেন মুর্শিদাবাদ। সিরাজ তাকে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বন্দী করেন। অবশ্য আলিবর্দীর অনুরোধে রাজবল্লভ মুক্তি পান। সিরাজ দ্রুত লোক পাঠালেন ঢাকায় রাজবল্লভের অর্থ বাজেয়াপ্ত করার জন্য। কিন্তু অতি ধুরন্ধর রাজবল্লভ তার ছেলে কৃষ্ণ দাসের মাধ্যমে নৌকাভর্তি টাকাকড়ি কলকাতায় পাঠিয়ে দেন। কৃষ্ণ দাস তীর্থ যাত্রার নাম করে পুরী যাওয়ার পরিবর্তে কলকাতায় রোজার ড্রেকের ফোর্ট উইলিয়ামে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। কাশিমবাজার কুঠির ওয়াটস এ ব্যাপারে সব ব্যবস্থা করে রেখেছিল। তাই নবাবের লোক ঢাকায় গিয়ে কিছুই পেল না। নবাব কলকাতায় ড্রেককে লিখে পাঠালেন কৃষ্ণ দাসকে মুর্শিদাবাদ পাঠিয়ে দিতে। কিন্তু ঘুষখোর ড্রেক কৃষ্ণ দাসকে পাঠাননি।
নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য রাজবল্লভের ভূমিকা কম নয়। ঘসেটী বেগমের তিনি প্রিয় ব্যক্তি। ইংরেজদের সঙ্গে তার ছিল অর্থের লেনদেন। ওয়াটসের মাধ্যমে মুর্শিদাবাদের বিবিধ গোপন খবর কলকাতায় প্রেরণ করার ব্যাপারে রাজবল্লভ সর্বদাই ষড়যন্ত্র করেছেন। বাংলাদেশে ইংরেজ শক্তিকে স্থাপনের জন্য রাজবল্লভের বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্র বিশেষভাবে সহায়ক ছিল।
গ্রন্থনা : শামছুল হক রাসেল

No comments:
Post a Comment