একসময় বাংলার বেশির ভাগ মানুষই ছিল কৃষক। কৃষিপ্রধান সমাজে এই কৃষকরা ফসল উৎপাদনের নানা সময়ে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করত। এই অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রধান উৎসব হলো নবান্ন উৎসব। 'নবান্ন' শব্দের অর্থ 'নতুন অন্ন'। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকে। কৃষকের ধানের গোলাগুলো আমন ধানে ভরে ওঠে। এই আমন ধান থেকে যে চাল হয়, তা দিয়ে প্রথম রান্না উপলক্ষে এই নবান্ন উৎসবের আয়োজন। সাধারণত পহেলা অগ্রহায়ণে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে কোথাও কোথাও মাঘ মাসেও নবান্ন উদ্যাপনের প্রথা রয়েছে। অমুসলিম রীতিতে নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎসর্গ করে। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা। তারা বিশ্বাস করে কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই বিষয়টিকে বলে 'কাকবলী'। অতীতে পৌষসংক্রান্তির দিনও গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল। নবান্ন উৎসব হিন্দুদেরও একটি প্রাচীন প্রথা। হিন্দুশাস্ত্রে নবান্নের উল্লেখ ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকে। এই কারণে হিন্দুরা পার্বণ বিধি অনুযায়ী নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকে। হিন্দু শাস্ত্রমতে নবান্ন শ্রাদ্ধ না করে নতুন অন্নগ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়।

No comments:
Post a Comment