পৃথিবীর প্রাচীনতম শহরগুলোর মধ্যে ইস্তাম্বুল অন্যতম। ইস্তাম্বুল তুরস্কের সর্ববৃহৎ নগর ও সমুদ্র বন্দর। আর সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে ইস্তাম্বুলের একাংশ ইউরোপ এবং অপর অংশ এশিয়ায়। বোসপোরাস নামের যে সঙ্কীর্ণ প্রণালিটি এশিয়া থেকে ইউরোপকে বিচ্ছিন্ন করেছে তার ইউরোপীয় দিকেই বিশেষভাবে এ শহরটি অবস্থিত কিন্তু এশিয়ার দিকে এর শহরতলি অঞ্চলসমূহ রয়েছে। আর তাই কৃষ্ণ সাগরের প্রবেশপথ 'ইস্তাম্বুল' নিয়ন্ত্রণ করে। শহরটির মূল অংশ একটি ত্রিভুজাকৃতি শৈলান্তরীপের উপর অবস্থিত। শহরটির উত্তর ভাগ দিয়ে 'গোল্ডেন হর্ন' নামক জলাংশ প্রবাহিত হয়ে গেছে। রোম শহরের মতো এ শহরটিও সাতটি পাহাড়ের উপর নির্মিত। মহান বৈপ্লবিক ঘটনা দ্বারা ইস্তাম্বুলের ইতিহাস মহিমান্বিত। প্রাচীনকালে এর নাম ছিল 'বাইজেন্টাইন'। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০ অব্দে রোম সম্রাট কন্স্টানটাইন যখন একে তার পূর্ব বা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী করেন তখন এর নামকরণ হয় 'কনস্টানটিনোপল'। তখন থেকে ১৪৫৩ সালে তুরস্কবাসীদের দ্বারা অধিকৃত না হওয়া পর্যন্ত কনস্টানটিনোপল গ্রিক ও রোমান সংস্কৃতি সংরক্ষণ করে আসছিল যখন ওই সংস্কৃতি পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য অংশে বর্বর আক্রমণে ধ্বংস হচ্ছিল, এভাবে এ শহর প্রাচীন ও আধুনিক সভ্যতার যোগাযোগ স্থল ছিল। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ইস্তাম্বুল ভূমিকম্পপ্রবণ। তথাপি বহু শতাব্দী ধরে ভূমিকম্প সত্ত্বেও এ শহরের অনেক বস্তুই এখনও অটুটভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রাচীনতর কনস্টানটাইন গির্জার স্থানে ৫২৭ থেকে ৫৬৫ সালের মধ্যে প্রথম জাস্টিনিয়ান কর্তৃক নবনির্মিত সেন্ট সোফিয়া গির্জা সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত বাইজেন্টাইন অট্টালিকাগুলোর অন্যতম। তুর্কিদের আক্রমণের পর এটি মসজিদে পরিণত হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালের দিকে এটি মিউজিয়ামে পরিণত করা হয়।
প্রীতম সাহা সুদীপ
Saturday, October 30, 2010
হোয়াইট লজ
পৃথিবীতে যতগুলো বিখ্যাত ভবন, দালান, বাড়ি কিংবা স্থান রয়েছে তার মধ্যে লন্ডনের হোয়াইট লজ বা শ্বেতকুঠির অন্যতম। ইংল্যান্ডবাসীর কাছে হোয়াইট লজ ভবনটি জর্জিয়ান হাউস বলেই সুপরিচিত। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ বরাবর রিসমন্ড পার্কের কোল ঘেঁষে লন্ডন শহরের ঠিক মাঝখানে ১৭২৭ সালে হোয়াইট লজ নির্মাণ করা হয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৭২৭ সালে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় জর্জ হোয়াইট লজ ভবনটি নির্মাণ করেন। এই ভবনের মূল নকশাকার ছিলেন রোজার মরিচ। শুরুতে ভবনটির নাম ছিল স্টোন লজ, দ্বিতীয় জর্জ মারা যাওয়ার পর তার স্মৃতি রক্ষার্থে ভবনটির নামকরণ করা হয় জর্জ হাউস। কথিত আছে রানী ক্যারোলিন হোয়াইট লজের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে সেখানে বসবাস করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন, নিজের ইচ্ছানুযায়ী ১৭৩৭ সালে হোয়াইট লজে বসবাস শুরু করেন। রানী ক্যারোলিনের মৃত্যুর পর রবার্ট ওয়াল পোল এবং ওয়াল পোলের পর তার ছেলে ফার্স্ট ব্যারন ওয়াল পোল হোয়াইট লজে বসবাস করেন। ১৭৫৭ সালে রানী ক্যারোলিনের কন্যা প্রিন্সেস অ্যামিলিয়া হোয়াইট লজের পাশে একটি পার্ক তৈরি করেন। তিনি নিজের পছন্দমতো প্রায় ২০০ রকমের ফুল ও ফলের গাছ পার্কে রোপণ করেন। অ্যামিলিয়া পার্কের নাম দেন রিসমন্ড পার্ক। প্রিন্সেস অ্যামিলিয়া ছিলেন অতি সুন্দরী রমণী। রমণী মাত্রই প্রকৃতিপ্রেমী, অ্যামিলিয়াও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তিনি যখন হোয়াইট লজে বসবাস করতেন, তখন প্রতিদিনই পার্কের গাছ-গাছালির যত্ন নিতেন। ১৭৬০ সাল পর্যন্ত পার্কে সাধারণ লোকের প্রবেশ নিষেধ থাকলেও ১৭৬২ সালে জনগণের জন্য তা মুক্ত করে দেওয়া হয়। ১৭৬১ থেকে ১৭৯২ সাল পর্যন্ত হোয়াইট লজ ও রিসমন্ড পার্ক ছিল প্রিন্সেস অ্যামিলিয়ার নিয়ন্ত্রণে। প্রিন্সেসের মৃত্যুর পর হোয়াইট লজের পরিধি আরও বিস্তৃত করা হয়। ১৯৫২ সালের পর থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রিসমন্ড পার্ক ও হোয়াইট লজকে সংরক্ষিত স্থান বলে ঘোষণা করা হয়। হোয়াইট লজ স্থান হিসেবেও ইংল্যান্ডবাসীর কাছে কম জনপ্রিয় নয়। কেননা, এখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড। যাই হোক সবকিছু বিবেচনাপূর্বক হোয়াইট লজ বর্তমানে ব্রিটেনবাসীর কাছে অতি প্রিয় ভবন ও স্থান হিসেবে গৃহীত।
রকমারি
রকমারি
টেলিভিশন আবিষ্কারের ইতিকথা
বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে দেশ-বিদেশের খবর শোনা ও দেখা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির বদৌলতে। আর সেই টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেমের নাম টেলিভিশন। এ প্রক্রিয়ায় দূর হতে শব্দ ও ছবি আনা যায়। ব্রডকাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে টেলিভিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ওয়েব প্রযুক্তির যুগে বর্তমানে ইন্টারনেট থেকে টেলিভিশন সিস্টেম কার্যকর করা সহজ হয়েছে। একটি টেলিভিশন বিভিন্ন ব্রডকাস্টিং অথবা ভিডিও ফরমেট যেমন এইচডিটিভি ফরমেট গ্রহণ করে। কিন্তু কিভাবে এই টেলিভিশন আবিষ্কৃত হলো।
১৮৬২ সালে তারের মাধ্যমে প্রথম স্থির ছবি পাঠানো সম্ভব হয়। এ পদ্ধতির আবিষ্কার করেন অ্যাডোবি গিয়োভানা ক্যাসেলি। ১৮৭৩ সালে বিজ্ঞানী মে এবং স্মিথ ইলেকট্রনিক সিগন্যালের মধ্যে ছবি পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ১৮৭৬ সালে জর্জ ক্যারে প্রথম পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন পদ্ধতির চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন। ১৮৮৪ সালে পল নিপকো তারের মাধ্যমে মেটাল ডিস্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৮ লাইন রেজুলেশনসহ ছবি পাঠাতে পেরেছিলেন। ১৯০০ সালে প্যারিসে প্রথম ইন্টারন্যাশনাল কনগ্রেস অব ইলেকট্রিসিটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কনস্ট্যান্ট পারস্কভি নামক রাশিয়ান কর্তৃক তৈরিকৃত বিশ্বের প্রথম টেলিভিশন পরিচিতি লাভ করে। ১৯০৬ সালে বরিস রোজিং প্রথম মেকানিক্যাল টেলিভিশন পদ্ধতির আবিষ্কার করেন। ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন লগি বেয়ার্ড প্রথম কার্যকর টেলিভিশন তৈরি করেন। তবে টেলিভিশন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু হয় ১৯৪০ সালে। বেয়ার্ড ১৯৩৯ সালে ক্যাথোডরে টিউব ব্যবহার করে রঙিন টেলিভিশনের ব্যবহার দেখান। ১৯৪৪ সালে তিনি বিশ্বের প্রথম পূর্ণ ইলেকট্রনিক রঙিন টেলিভিশনের প্রদর্শন করতে সক্ষম হন। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ টেলিভিশনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
শামীম শিকদার
১৮৬২ সালে তারের মাধ্যমে প্রথম স্থির ছবি পাঠানো সম্ভব হয়। এ পদ্ধতির আবিষ্কার করেন অ্যাডোবি গিয়োভানা ক্যাসেলি। ১৮৭৩ সালে বিজ্ঞানী মে এবং স্মিথ ইলেকট্রনিক সিগন্যালের মধ্যে ছবি পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ১৮৭৬ সালে জর্জ ক্যারে প্রথম পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন পদ্ধতির চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন। ১৮৮৪ সালে পল নিপকো তারের মাধ্যমে মেটাল ডিস্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৮ লাইন রেজুলেশনসহ ছবি পাঠাতে পেরেছিলেন। ১৯০০ সালে প্যারিসে প্রথম ইন্টারন্যাশনাল কনগ্রেস অব ইলেকট্রিসিটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কনস্ট্যান্ট পারস্কভি নামক রাশিয়ান কর্তৃক তৈরিকৃত বিশ্বের প্রথম টেলিভিশন পরিচিতি লাভ করে। ১৯০৬ সালে বরিস রোজিং প্রথম মেকানিক্যাল টেলিভিশন পদ্ধতির আবিষ্কার করেন। ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন লগি বেয়ার্ড প্রথম কার্যকর টেলিভিশন তৈরি করেন। তবে টেলিভিশন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু হয় ১৯৪০ সালে। বেয়ার্ড ১৯৩৯ সালে ক্যাথোডরে টিউব ব্যবহার করে রঙিন টেলিভিশনের ব্যবহার দেখান। ১৯৪৪ সালে তিনি বিশ্বের প্রথম পূর্ণ ইলেকট্রনিক রঙিন টেলিভিশনের প্রদর্শন করতে সক্ষম হন। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ টেলিভিশনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
শামীম শিকদার
প্লাস্টিক আবিষ্কারের ইতিকথা
বর্তমান আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় প্লাস্টিক ছাড়া জীবন ভাবাই যায় না। বলা যায়, প্রতিদিন প্লাস্টিক আমাদের জীবনে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। কিন্তু কিভাবে প্লাস্টিক আবিষ্কৃত হলো?
১৮৫৫ সালে আলেকজান্ডার পার্ক প্রথম মানুষের তৈরি প্লাস্টিক আবিষ্কার করেন, যাকে বলা হতো পার্কসাইন। এটি ১৮৬২ সালে লন্ডনে এক আন্তর্জাতিক মেলায় অবমুক্ত করা হয়। ১৮৬৮ সালে জন ওয়েসলি হায়াট সেলুলয়েড প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রচলন করেন। এই সেলুলয়েড প্রথম সিনথেটিক প্লাস্টিক। এই প্লাস্টিক হাতির দাঁত, অ্যাম্বার, শিং ও কচ্ছপের ত্বকের মতো দামি বস্তুর পরিবর্তে ব্যবহার শুরু হয়। ১৯০৭ সালে লিও হ্যান্ড্রিক ব্যাকল্যান্ড কঠিন প্লাস্টিক বিশেষত ব্যাকেলাইট উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। ইলেকট্রনিক অন্তরক হিসেবে যে শেলাক ব্যবহার করা হতো তার পরিবর্তে এই ব্যাকেলাইট ব্যবহৃত হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে প্লাস্টিকের আরও উন্নয়ন সাধিত হয় এবং তা এখনও থেমে নেই। সম্প্রতি আইবিএম-এর গবেষকরা পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পেট্রোলিয়ামজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে তৈরি প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের প্লাস্টিক পচে না বা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যায় না। কিন্তু পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক ব্যবহারের পর মাটির সঙ্গে মিশে যাবে।
এই পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক তৈরিতে অর্গানিক ক্যাটালিস্ট নামের বিশেষ এক ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে যার সহায়তায় বারবার রিসাইকেলও করা যাবে এই প্লাস্টিক। এই পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক তৈরির কাজে আইবিএমের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে সৌদি আরবের কিং আব্দুল আজিজ সিটির বিজ্ঞানীরা।
আমিন রহমান নবাব
১৮৫৫ সালে আলেকজান্ডার পার্ক প্রথম মানুষের তৈরি প্লাস্টিক আবিষ্কার করেন, যাকে বলা হতো পার্কসাইন। এটি ১৮৬২ সালে লন্ডনে এক আন্তর্জাতিক মেলায় অবমুক্ত করা হয়। ১৮৬৮ সালে জন ওয়েসলি হায়াট সেলুলয়েড প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রচলন করেন। এই সেলুলয়েড প্রথম সিনথেটিক প্লাস্টিক। এই প্লাস্টিক হাতির দাঁত, অ্যাম্বার, শিং ও কচ্ছপের ত্বকের মতো দামি বস্তুর পরিবর্তে ব্যবহার শুরু হয়। ১৯০৭ সালে লিও হ্যান্ড্রিক ব্যাকল্যান্ড কঠিন প্লাস্টিক বিশেষত ব্যাকেলাইট উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। ইলেকট্রনিক অন্তরক হিসেবে যে শেলাক ব্যবহার করা হতো তার পরিবর্তে এই ব্যাকেলাইট ব্যবহৃত হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে প্লাস্টিকের আরও উন্নয়ন সাধিত হয় এবং তা এখনও থেমে নেই। সম্প্রতি আইবিএম-এর গবেষকরা পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পেট্রোলিয়ামজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে তৈরি প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের প্লাস্টিক পচে না বা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যায় না। কিন্তু পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক ব্যবহারের পর মাটির সঙ্গে মিশে যাবে।
এই পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক তৈরিতে অর্গানিক ক্যাটালিস্ট নামের বিশেষ এক ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে যার সহায়তায় বারবার রিসাইকেলও করা যাবে এই প্লাস্টিক। এই পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক তৈরির কাজে আইবিএমের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে সৌদি আরবের কিং আব্দুল আজিজ সিটির বিজ্ঞানীরা।
আমিন রহমান নবাব
রুশ বিপ্লব
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপজুড়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক আলোড়ন ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন চলছিল। ফরাসি দেশে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইংল্যান্ডে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের প্রচলন হয়। সামন্ততান্ত্রিক অভিজাত শ্রেণীর পতন ঘটতে থাকে এবং শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা নতুন শাসক শ্রেণীতে পরিণত হয়। কিন্তু রুশ দেশ তখনও প্রাচীন যুগে বাস করতে থাকে_ রুশীয় সম্রাট বা জারদের স্বেচ্ছাচারী শাসনাধীনে পড়ে থাকে। মধ্যবিত্ত শ্রেণী না থাকায় রাশিয়ায় শিল্পায়ন দেরিতে শুরু হয়_ ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে। রুশ পুঁজিপতিরা বিদেশি মূলধন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেন শ্রমিকদের মজুরি কেটে। তাতে শ্রমিকদের দুরবস্থা আরও বেড়ে যায়। শ্রমিকদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। এমনকি দুরবস্থার সামান্যতম সংস্কার সাধনেরও কোনো উপায় তাদের হাতে ছিল না। রুশ সম্রাট জার দ্বিতীয় নিকোলাস যার রাজত্বকালে বিপ্লব সংঘটিত হয়। তিনি রাজাদের স্বর্গীয় অধিকারে বিশ্বাস করতেন। সর্বেসর্বাভাবে রাজ্য শাসন করা তার পবিত্র কর্তব্য বলে তিনি মনে করতেন। একমাত্র অভিজাত শ্রেণী এবং উচ্চশ্রেণীর ধর্মীয় যাজকরাই তাকে সমর্থন করতেন। বিরাট রুশ সাম্রাজ্যের বাকি সব লোকই তার বিরুদ্ধবাদী ছিল। জাররা যে আমলাতন্ত্র গড়ে তোলেন তা ছিল মাথা ভারী, অনমনীয় এবং অকর্ম্য। কারণ তাদের কোনো যোগ্যতার ভিত্তিতে ভর্তি করা হতো না। তাদের দেওয়া হতো বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণীর মধ্য থেকে। রুশীয় জারদের ইউরোপ ও এশিয়াব্যাপী বিরাট সাম্রাজ্য ছিল। এসব রুশ সাম্রাজ্যভুক্ত দেশের জনসাধারণের ওপর তারা রুশ ভাষা চাপিয়ে দেয় এবং তাদের সংস্কৃতিতে মৌলিক পরিবর্তন ঘটায়। ফলে অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে তাদের বিরোধ ঘটে। নিপীড়িত শ্রমিক ও কৃষকশ্রেণী সমাজবাদী নীতি সম্পর্কিত মার্কসের শিক্ষা থেকে উদ্দীপনা লাভ করে। তারা ১৯১৭ সালে তখনকার শাসক জার দ্বিতীয় নিকোলাসের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ফলে জারের শাসনতন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে। কারণ যে সৈন্য বাহিনীকে গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয় তারাই গুলি করতে অস্বীকার করে। বরং তারা বিদ্রোহী শ্রমিকদের সঙ্গে যোগ দেয়। ১৯১৭ সালের ১২ মার্চ রাশিয়ায় তখনকার রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গ বিপ্লবীরা দখল করে। এরপর তারা মস্কো দখল করে। জার সিংহাসন ত্যাগ করে এবং লেনিন রাশিয়ার শক্তিশালী পুরুষ হিসেবে রুশ গগনে উদীয়মান হন। তার নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টি যুদ্ধের অবসানের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতি ঘোষণাসহ জমি কৃষকদের হাতে হস্তান্তর করে। এ বিপ্লবের ফলে রাশিয়ায় শ্রমজীবী শ্রেণীর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলস্বরূপ কৃষি ও শিল্পের ক্ষেত্রে রাশিয়া অত্যাশ্চর্য প্রগতি অর্জন করে! পুরনো সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়ে ওঠে। এ নতুন সমাজের সবাই স্বাধীন, সমান এবং ন্যায্য মজুরির অধিকারী।
প্রীতম সাহা সুদীপ
প্রীতম সাহা সুদীপ
মিশরীয় দেবী আইসিস এবং দেবতা ওসিরিস
হাজার বছরের প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অনেক কিছুই আজও রহস্যমণ্ডিত। মিসরীয় দেব-দেবীদের নিয়েও প্রচলিত আছে নানা কাহিনী আর রটনার। মিসরের এমনই দুই দেব দেবী হচ্ছেন দেবী আইসিস এবং দেবতা ওসিরিস। মিসরের সর্বশেষ সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রা নিজেকে আইসিসের মানব সংস্করণ এবং মার্ক অ্যান্টনিকে ওরিসিসের মানব সংস্করণ বলে দাবি করতেন। ইতিহাসের এই অমর জুটিকে নিয়ে লিখেছেন রিয়াজুল ইসলাম
আজ থেকে হাজার বছর আগে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আকাশ, তারা ও চন্দ্রের দেবী নাট। নাট ছিলেন সু ও ট্যাপলেটের সুযোগ্য কন্যা। পৃথিবীর অধিপতি গ্যাবের পত্নী। নাট গ্যাবের পত্নী হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের কোনো সন্তানাদি ছিল না। এমতাবস্থায় রিও নামক এক দেবতুল্য জ্যোতিষী মৃত্যুপূর্বকালীন সময়ে নাটকে কাছে ডেকে বলেছিলেন_ নাট তোমার যদি কোনো সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে তাদের মধ্য থেকে যেকোনো একজন তোমার শাসন, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলীন করে দিবে। সুতরাং তুমি কোনো সন্তানাদির প্রত্যাশ্যা করো না, কেননা তোমার জীবন অভিশপ্ত।
দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে নাট সাহায্যের জন্য গেলেন দ্রোহের কাছে। যিনি ছিলেন একাধারে বিজ্ঞ ব্যক্তি, দার্শনিক, ম্যাজিসিয়ান অব্যবহৃত দেবতা। তিনি জানতেন কেন বা কী কারণে রিও-নাটকে অভিশাপ দিয়েছেন। যাই হোক, দ্রোহ গেলেন কোনসুর কাছে, কোনসু ছিলেন চাঁদ ও খড়ার দেবতা। যিনি নিজে নিজে অনেক অসম্ভব ঘটনাকে সম্ভব করেছিলেন। দ্রোহের অনুরোধে নাটকে সান্ত্বনা দিলেন কোনসু। সান্ত্বনা দিয়ে বললেন যাও তোমার কোনো ভয় নেই, যে কোনো বিপদে আমি তোমার পাশে থাকব।
অভয়বাণীর পর নাটের উদর থেকে প্রথম সন্তান হিসেবে জন্ম নিল ওসিরিস, দ্বিতীয় সন্তান ডার্ক সিথ, তৃতীয় কন্যা সন্তান আইসিস, চতুর্থ সন্তান হিসেবে জন্ম নিল নেপসিস। এভাবে নাটের কয়েকটি সন্তান হওয়ায় রিওয়ের ভবিষ্যদ্বাণী সাময়িক ব্যর্থ হলো।
ওসিরিস প্রাপ্ত বয়সে তার বোন আইসিসকে মিসরের ফারাহ বংশের ঐতিহাসিক নিয়ম অনুযায়ী বিবাহ করেন। আর সিথ বিয়ে করেন নেপথিসকে। ওসিরিস-রিও বিগত হওয়ার পর মিসরের ক্ষমতায় আরোহণ করেন। সিথকে দেওয়া হয় অন্য প্রদেশের দায়িত্ব। আইসিস ও ওসিরিসের সময়ে মিসরের জনগণ সভ্যতা কি তা ভালোমতো বুঝত না। নিজেরা হানাহানি করে নিজেদের সম্পদ ও জীবন শেষ করে দিত। হত্যা, লুণ্ঠন, খুন ছিল সাধারণ জনগণের কাছে মামুলি ব্যাপার।
দুর্ভিক্ষ, বন্যা, খড়া, ছিল মিসরবাসীর নিত্যসঙ্গী। জনগণের কল্যাণের জন্য আইসিস নতুন ধরনের ফসল চাষের উদ্ভাবন করেন_ যা নীল নদের উপকূলে চাষ করার উপযুক্ত ছিল। ওসিরিসের সহায়তায় আর আইসিসের মেধায় জনগণ নতুন পদ্ধতির ফসল উৎপাদন করল দূর হয়ে গেল মিসরবাসীর সব দুঃখ, দুর্দশা।
এভাবে ক্রমেই মিসরীয়রা রুটি, সুস্বাদু খাদ্য তৈরি করতে শিখল। ওসিরিস ও আইসিস জনগণের জন্য তৈরি করলেন আইন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক মৈত্রীর জন্য গির্জা ও মন্দির। অসভ্য জাতি থেকে মিসরীয়রা সভ্য জাতিতে পরিণত হলো, আইসিস ও ওসিরিস সবার মধ্যমণি হিসেবে স্বীকৃত পেল।
ওসিরিস ও আইসিসের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, আবিষ্কার আর জনগণের ভালোবাসা সিথের হৃদয়ে কাঁটার মতো বিঁধতে লাগল। সবার কাছে প্রিয় আইসিস ও ওসিরিসকে হত্যা করতে চাইল সিথ। ওসিরিসের ভাই শয়তানের দেবতা সিথের চক্রান্ত টের পেয়ে আইসিস সব সময় সতর্ক থাকতে বলল ওসিরিসকে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সিথ তার প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন ওসিরিসকে। ভাইয়ের অনুরোধে একজন সঙ্গীসহ ওসিরিস সিথের প্রাসাদে এলো। সিথ ওসিরিসের সম্মানে নৈশভোজ ও নৃত্য পরিবেশনের আয়োজন করেন। আবলুস কাঠ ও স্বণখচিত হাতির দাঁতবেষ্টিত একটি সিন্দুক উপহার দেন সিথ ওসিরিসকে। এতকিছু পেয়ে অবাক হয়ে যান দেবতা ওসিরিস। আবেগ আর ভালোবাসায় সিথকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন ওসিরিস। প্রথম পরিকল্পনায় সিথ হত্যা করতে পারে না ওসিরিসকে। যাই হোক, নীল নদের উপকূলে যখন ওসিরিস সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করবেন, তখনই শয়তান সিথ ওসিরিস ও তার সঙ্গীকে সিন্দুকের মধ্য পুরে নীল নদে ভাসিয়ে দেয়। নীল নদের পানিতে ভাসতে ভাসতে দেবতা ওসিরিস পিউনিসিয়ার ব্যাবলস শহরের সমুদ্র বন্দরে এসে পেঁৗছে। খবরটি রাজা ম্যান কিলারভার ও রানীর কাছে দ্রুত পেঁৗছে যায়। তারা দেবতা ওসিরিসের লাশ ও সিন্দুক অতি যত্নের সঙ্গে সংগ্রহ করে।
এদিকে আইসিসের কর্ণকুহরে খবরটি পেঁৗছে যায়। স্বামীর শোকে শোকাহত আইসিস পিউনিসিয়ায় পেঁৗছে ওসিরিসের মৃতদেহ গ্রহণ করে। প্রতিশোধের নেশায় জ্বলতে থাকে আইসিস ও তার ছেলে হোরুজ। মনোদ্বন্দ্বের কারণে নেপথিস স্বামী সিথকে পরিহার করে যোগ দেয় আইসিসের দলে।
আইসিস ছিল অসম্ভব সুন্দরী, ম্যাজিসিয়ান ও ঐশ্বরিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত। তিনি ওসিরিসের দাফন না করিয়ে মৃতদেহকে গভীর রাতে নীল নদের উপকণ্ঠে এনে গভীর ধ্যানে মগ্ন হন। হঠাৎ আকাশ থেকে আলোকোজ্জ্বল্য আভা এসে মৃতদেহের ওপরে ঠিকরে পড়লে মুহূর্তেই জীবিত হয়ে যায় ওসিরিস।
মৃত পিতাকে জীবিত পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় হোরুজ। আবেগে আপ্লুত হয় আইসিস।
দেবতা ওসিরিস ছেলে হোরুজকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে শয়তান সিথের বিরুদ্ধে। যুদ্ধে হাজার হাজার সৈন্য নিহত হয় উভয়পক্ষের। প্রাণ হারায় সিথ। সব পরিকল্পনা ধূলিসাৎ হয়ে যায় সিথের। ওসিরিস হয়ে ওঠে মিসরীয় দেবতা আর আইসিস দেবী। হোরুজ হয় মিসরীয় রাজা। এভাবে চলতে থাকে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর।
আজ থেকে হাজার বছর আগে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আকাশ, তারা ও চন্দ্রের দেবী নাট। নাট ছিলেন সু ও ট্যাপলেটের সুযোগ্য কন্যা। পৃথিবীর অধিপতি গ্যাবের পত্নী। নাট গ্যাবের পত্নী হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের কোনো সন্তানাদি ছিল না। এমতাবস্থায় রিও নামক এক দেবতুল্য জ্যোতিষী মৃত্যুপূর্বকালীন সময়ে নাটকে কাছে ডেকে বলেছিলেন_ নাট তোমার যদি কোনো সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তাহলে তাদের মধ্য থেকে যেকোনো একজন তোমার শাসন, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলীন করে দিবে। সুতরাং তুমি কোনো সন্তানাদির প্রত্যাশ্যা করো না, কেননা তোমার জীবন অভিশপ্ত।
দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে নাট সাহায্যের জন্য গেলেন দ্রোহের কাছে। যিনি ছিলেন একাধারে বিজ্ঞ ব্যক্তি, দার্শনিক, ম্যাজিসিয়ান অব্যবহৃত দেবতা। তিনি জানতেন কেন বা কী কারণে রিও-নাটকে অভিশাপ দিয়েছেন। যাই হোক, দ্রোহ গেলেন কোনসুর কাছে, কোনসু ছিলেন চাঁদ ও খড়ার দেবতা। যিনি নিজে নিজে অনেক অসম্ভব ঘটনাকে সম্ভব করেছিলেন। দ্রোহের অনুরোধে নাটকে সান্ত্বনা দিলেন কোনসু। সান্ত্বনা দিয়ে বললেন যাও তোমার কোনো ভয় নেই, যে কোনো বিপদে আমি তোমার পাশে থাকব।
অভয়বাণীর পর নাটের উদর থেকে প্রথম সন্তান হিসেবে জন্ম নিল ওসিরিস, দ্বিতীয় সন্তান ডার্ক সিথ, তৃতীয় কন্যা সন্তান আইসিস, চতুর্থ সন্তান হিসেবে জন্ম নিল নেপসিস। এভাবে নাটের কয়েকটি সন্তান হওয়ায় রিওয়ের ভবিষ্যদ্বাণী সাময়িক ব্যর্থ হলো।
ওসিরিস প্রাপ্ত বয়সে তার বোন আইসিসকে মিসরের ফারাহ বংশের ঐতিহাসিক নিয়ম অনুযায়ী বিবাহ করেন। আর সিথ বিয়ে করেন নেপথিসকে। ওসিরিস-রিও বিগত হওয়ার পর মিসরের ক্ষমতায় আরোহণ করেন। সিথকে দেওয়া হয় অন্য প্রদেশের দায়িত্ব। আইসিস ও ওসিরিসের সময়ে মিসরের জনগণ সভ্যতা কি তা ভালোমতো বুঝত না। নিজেরা হানাহানি করে নিজেদের সম্পদ ও জীবন শেষ করে দিত। হত্যা, লুণ্ঠন, খুন ছিল সাধারণ জনগণের কাছে মামুলি ব্যাপার।
দুর্ভিক্ষ, বন্যা, খড়া, ছিল মিসরবাসীর নিত্যসঙ্গী। জনগণের কল্যাণের জন্য আইসিস নতুন ধরনের ফসল চাষের উদ্ভাবন করেন_ যা নীল নদের উপকূলে চাষ করার উপযুক্ত ছিল। ওসিরিসের সহায়তায় আর আইসিসের মেধায় জনগণ নতুন পদ্ধতির ফসল উৎপাদন করল দূর হয়ে গেল মিসরবাসীর সব দুঃখ, দুর্দশা।
এভাবে ক্রমেই মিসরীয়রা রুটি, সুস্বাদু খাদ্য তৈরি করতে শিখল। ওসিরিস ও আইসিস জনগণের জন্য তৈরি করলেন আইন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক মৈত্রীর জন্য গির্জা ও মন্দির। অসভ্য জাতি থেকে মিসরীয়রা সভ্য জাতিতে পরিণত হলো, আইসিস ও ওসিরিস সবার মধ্যমণি হিসেবে স্বীকৃত পেল।
ওসিরিস ও আইসিসের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, আবিষ্কার আর জনগণের ভালোবাসা সিথের হৃদয়ে কাঁটার মতো বিঁধতে লাগল। সবার কাছে প্রিয় আইসিস ও ওসিরিসকে হত্যা করতে চাইল সিথ। ওসিরিসের ভাই শয়তানের দেবতা সিথের চক্রান্ত টের পেয়ে আইসিস সব সময় সতর্ক থাকতে বলল ওসিরিসকে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সিথ তার প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন ওসিরিসকে। ভাইয়ের অনুরোধে একজন সঙ্গীসহ ওসিরিস সিথের প্রাসাদে এলো। সিথ ওসিরিসের সম্মানে নৈশভোজ ও নৃত্য পরিবেশনের আয়োজন করেন। আবলুস কাঠ ও স্বণখচিত হাতির দাঁতবেষ্টিত একটি সিন্দুক উপহার দেন সিথ ওসিরিসকে। এতকিছু পেয়ে অবাক হয়ে যান দেবতা ওসিরিস। আবেগ আর ভালোবাসায় সিথকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন ওসিরিস। প্রথম পরিকল্পনায় সিথ হত্যা করতে পারে না ওসিরিসকে। যাই হোক, নীল নদের উপকূলে যখন ওসিরিস সমুদ্রপথে যাত্রা শুরু করবেন, তখনই শয়তান সিথ ওসিরিস ও তার সঙ্গীকে সিন্দুকের মধ্য পুরে নীল নদে ভাসিয়ে দেয়। নীল নদের পানিতে ভাসতে ভাসতে দেবতা ওসিরিস পিউনিসিয়ার ব্যাবলস শহরের সমুদ্র বন্দরে এসে পেঁৗছে। খবরটি রাজা ম্যান কিলারভার ও রানীর কাছে দ্রুত পেঁৗছে যায়। তারা দেবতা ওসিরিসের লাশ ও সিন্দুক অতি যত্নের সঙ্গে সংগ্রহ করে।
এদিকে আইসিসের কর্ণকুহরে খবরটি পেঁৗছে যায়। স্বামীর শোকে শোকাহত আইসিস পিউনিসিয়ায় পেঁৗছে ওসিরিসের মৃতদেহ গ্রহণ করে। প্রতিশোধের নেশায় জ্বলতে থাকে আইসিস ও তার ছেলে হোরুজ। মনোদ্বন্দ্বের কারণে নেপথিস স্বামী সিথকে পরিহার করে যোগ দেয় আইসিসের দলে।
আইসিস ছিল অসম্ভব সুন্দরী, ম্যাজিসিয়ান ও ঐশ্বরিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত। তিনি ওসিরিসের দাফন না করিয়ে মৃতদেহকে গভীর রাতে নীল নদের উপকণ্ঠে এনে গভীর ধ্যানে মগ্ন হন। হঠাৎ আকাশ থেকে আলোকোজ্জ্বল্য আভা এসে মৃতদেহের ওপরে ঠিকরে পড়লে মুহূর্তেই জীবিত হয়ে যায় ওসিরিস।
মৃত পিতাকে জীবিত পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় হোরুজ। আবেগে আপ্লুত হয় আইসিস।
দেবতা ওসিরিস ছেলে হোরুজকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে শয়তান সিথের বিরুদ্ধে। যুদ্ধে হাজার হাজার সৈন্য নিহত হয় উভয়পক্ষের। প্রাণ হারায় সিথ। সব পরিকল্পনা ধূলিসাৎ হয়ে যায় সিথের। ওসিরিস হয়ে ওঠে মিসরীয় দেবতা আর আইসিস দেবী। হোরুজ হয় মিসরীয় রাজা। এভাবে চলতে থাকে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর।
Thursday, October 28, 2010
দেউল, ফরিদপুর
বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় যতগুলো প্রাচীন স্থাপত্য রয়েছে তার মধ্যে মধুখালী উপজেলার অন্তর্গত মথুরাপুর গ্রামের দেউল অন্যতম। মুঘল শাসনামলে সম্রাট আওরঙ্গজেবের একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী ছিলেন মুর্শিদকুলি খান। ১৭০০ সালে মুর্শিদকুলি খান বাংলার দেউয়ান হয়ে আসেন। বাংলার দেওয়ান হয়ে আসার পর তিনি বেশকিছু স্থাপনা নির্মাণ করেন। এমতাবস্থায় তিনি ফরিদপুর মহকুমায় একটি বিজয়স্তম্ভ নির্মাণের ইচ্ছা পোষণ করেন। মুর্শিদকুলি খানের ইচ্ছানুযায়ী ১০৫ ফুট উচ্চতার একটি বিজয় স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। ১৮০০ সাল পর্যন্ত দেউলটিকে মুর্শিদকুলি খানের বিজয় স্তম্ভ বলা হতো। ১৭২৩ সাল থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত দেউলটি বিজয় স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও ১৮২০ সালের দিকে অত্র এলাকার হিন্দু শাসক গৌরচন্দ্র এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মথুরাপুর দেউল। বর্তমান অবধি স্তম্ভটি সবার কাছে মথুরাপুর দেউল হিসেবেই পরিচিত। দেউলটি নিয়ে লোকমুখে নানা কথা প্রচলিত আছে। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি প্রাচীন মঠ যা হিন্দু জমিদাররা নির্মাণ করেন। অনেকে বলেন, দেউলটি কেউ নির্মাণ করেনি। এটি কোনো এক রাতে এমনিতেই তৈরি হয়েছে। তবে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য হলো_ দেউলটি সুবাদার মুর্শিদকুলি খান ১৭২৩ সালে নির্মাণ করেন। নির্মাণকালে তিনি লাল ইট, বালু, সিমেন্ট ও লোহার পাত ব্যবহার করেন। দেউলটি দেখতে সুন্দর হলেও এর মধ্যে ভয়ঙ্কর সব প্রাণী ও জন্তু বসবাস করে। স্থানীয় লোকজন বলেন, দেউলটির চারপাশে ৪টি দরজা। দরজা চারটি প্রায় ৫ বছর যাবৎ তালা দেওয়া, কেউ দেউলের ভিতর প্রবেশ করতে পারে না। তবে ৫ বছর আগে দরজা তালাবদ্ধ ছিল না। তখন কেউ আলো বা বাতি ছাড়া ভিতরে প্রবেশ করতে পারত না। যদি কেউ আলো বা টর্চ নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করত, সে ভিতরে গিয়ে আর কিছুই দেখতে পেত না। আবার দুই সিঁড়ি উপরে উঠার পর হাতের আলো নিভে যেত। শুরু হতো ভয়ঙ্কর সব আজগুবি প্রাণীর কিচিরমিচির শব্দ। অনেকেই ভিতরে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ত, অসুস্থ হয়ে যেত কিংবা কথা বলতে পারত না ১ সপ্তাহ পর্যন্ত। ইত্যাদি নানা সমস্যার কারণে কর্তৃপক্ষ ২০০৫ সালে দরজা চারটিতে তালা লাগিয়ে দেন। দেউলটি মধুখালী উপজেলা থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। মধুখালী রেলগেট থেকে বাসযোগে ৩ থেকে ৫ মিনিটে প্রাচীন এই রহস্যময় দেউলে পেঁৗছা যায়। বর্তমানে প্রাচীন এই দেউলটি শুধু ফরিদপুরবাসীর নয়, বাংলাদেশের মানুষের কাছে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
-মোঃ রিয়াজুল ইসলাম
আফ্রিদি
বিশ্বে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে অতি প্রিয় একটি নাম শহীদ আফ্রিদি। মূলত আফ্রিদি হলো পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের ওয়াজিরিস্তানের উপজাতি। বিশ্ব বিখ্যাত ইতিহাসবিদ হিরোডেটাসের মতানুসারে আফ্রিদি নামক উপজাতির উদ্ভব প্যাক্টিয়ানস জাতিগোষ্ঠী থেকে, যারা বেশক'টি ভাগে বিভক্ত। অ্যাপারথিয়া, অ্যাপারটাই তাদের মধ্যে অন্যতম। অধিকাংশ ইতিহাসবিদ ও নৃবিজ্ঞানীরা মনে করেন অ্যাপারটা জাতিগোষ্ঠীই বর্তমানে আফ্রিদি উপজাতি হিসেবে স্বীকৃত। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে মধ্যপ্রাচ্যের তিরা নামক স্থান থেকে আফ্রিদি উপজাতি পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে এসে বসতি স্থাপন করে। পাকিস্তানের আফ্রিদিরা আজ থেকে ১০০ বছর আগেও সভ্য জাতি হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। তারা শিক্ষা-দীক্ষায়, পোশাক-পরিচ্ছদে অন্যান্য লোকজনের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার, উপজাতিদের উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়। সরকারের পূর্ণ সহযোগিতায় ধীরে ধীরে শিক্ষিত হতে থাকে আফ্রিদি উপজাতি, বর্তমানে অধিকাংশ আফ্রিদিই শিক্ষিত ও কর্মঠ। আগে মধ্যপ্রাচ্যে চলাচল করার জন্য আফ্রিদিরা খাইবার গিরিপথ ব্যবহার করত। কিন্তু বর্তমানে সরকারি সুযোগ-সুবিধার কারণে খাইবার পথ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। শুধু পাকিস্তানেই নয়, আফগানিস্তানের কাবুল, সংযুক্ত আরব আমিরাত এমনকি ইরাকেরও কিছু কিছু অঞ্চলে আফ্রিদি জাতির বসতি রয়েছে। গবেষক হারুন রশিদ বলেন, আফ্রিদিরা উপজাতি হলেও এদের কথাবার্তা, চালচলনে মনেই হয় না এরা উপজাতি। আফ্রিদিরা অতি নম্র-ভদ্র, সবার সঙ্গে সদয় ব্যবহার করে, কারও কোনো ক্ষতি করে না। শতকরা ৯৯ ভাগ আফ্রিদি উপজাতিই মুসলমান। যদিও অষ্টাদশ শতাব্দীতে আফ্রিদিরা যুদ্ধবিগ্রহ করত, তবে বর্তমানে তারা যুদ্ধবিগ্রহকে অপছন্দ করে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সাধারণ জনগণ আফ্রিদি উপজাতিদের পশতুন উপজাতি বা (ঞৎরনব) বলে সম্বোধন করে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন আফ্রিদিদের আগমন ঘটেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েল, ইউরোপের দেশ গ্রিক ও আফগানিস্তান থেকে। ধারণা করা হয়, মহাবীর আলেকজান্ডারের শাসনামলে গ্রিক থেকে আফ্রিদি উপজাতি বিতাড়িত হয়ে এশিয়া মহাদেশের আফগানিস্তানে আশ্রয় গ্রহণ করে। সেখান থেকেই আস্তে আস্তে এদের বিস্তৃতি ঘটে। ২০১০ সালের এক রিপোর্টে দেখা গেছে, আফগানিস্তানের পশতুন, ভারতের পাঠান ও পাকিস্তানের আফ্রিদি উপজাতিরা একই জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
মো. রিয়াজুল ইসলাম
মো. রিয়াজুল ইসলাম
বন্দুক
বন্দুক এমন এক অস্ত্র যার ব্যারেল নামক নল থেকে বুলেট বা গুলি ছোঁড়া হয়। যদিও চীন প্রায় এক হাজার বছর আগে কামানের বারুদ আবিষ্কার করে; কিন্তু প্রথম বন্দুক নির্মিত হয় চতুর্দশ শতাব্দীতে ইউরোপে। প্রথম বন্দুকগুলো ছিল ভারী কামান। যার একটি ব্যারেল ছিল একদিক খোলা এবং অপরদিক বন্ধ। এগুলো একটি কাঠের কাঠামোর ওপর স্থাপন করা হতো। কামান চালক কিছু বারুদ ব্যারেলের খোলা দিকে স্থাপন করত। যার নাম ছিল মাজল বা কামানের মুখ। তারপর সে এই বারুদ কামানের বন্ধ দিকে ঠেলে দেয়, যার নাম ব্রিচ। এরপর সে বারুদের সঙ্গে একটি কামানের গোলা ঢুকিয়ে দেয়। ব্রিচের মধ্যে একটি গর্তের ভিতর জ্বলন্ত পলিতা দিয়ে আগুনের শিখা জ্বালিয়ে কামান হামলা করা হতো। ষোড়শ শতাব্দীতে পিস্তল এবং অন্যান্য ধরনের বন্দুকের প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু সবগুলোতেই নলের মাজল দিয়ে গুলি ভরতে হতো। ঊনবিংশ শতাব্দীতে অন্য ধরনের বন্দুক আবিষ্কৃত হয়। এই বন্দুকের গুলি সামনের দিক দিয়ে না ঢুকিয়ে পিছন দিয়ে ঢুকান হয় এবং ধাতুর গোলার পরিবর্তে কার্তুজ ব্যবহার করা হয়। বন্দুকের পিছন দিকে এই কার্তুজ ভর্তি করা হয়। এই কার্তুজের পিছন দিকে এই কার্টিজ ভর্তি করা হয়। এই কার্টিজের ভিতর একটি বুলেট এবং কিছু বারুদ থাকত। ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো রাইফেল। এতে ব্যারেলের ভিতর মোচাকার খাঁজ থাকে। এর ফলে বুলেটটি ঘূর্ণায়মান অবস্থায় বেরিয়ে আসে এবং অনেক দূর পর্যন্ত সরলভাবে ছুটে যেতে পারে। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন আবিষ্কারক স্যাথুয়েল কল্ট একটি পিস্তল আবিষ্কার করেন, যা ঘূর্ণায়মান বুলেট ছুড়তে পারে। তিনি এর নাম দেন রিভলবার। এর একটি চেম্বার বা ঘরে পাঁচ বা ছয়টি কার্তুজ থাকে। কল্ট যে ধরনের রিভলবার আবিষ্কার করেন তা আধুনিক রিভলবারের মতোই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাইফেল বেশি ব্যবহৃত হলেও শেষের দিকে মেশিনগান আবিষ্কৃত হয়। এগুলো স্বয়ংক্রিয় হালকা বন্দুক এবং যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রিগার চেপে রাখা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত বুলেট ছুঁড়তে থাকে। তারপর ফিল্ড গান নামক ভারী বন্দুক আবিষ্কৃত হয়। আধুনিক ফিল্ড গানের ওজন প্রায় ৪ টন। এই গুলিতে ব্যবহৃত সেলগুলোর ওজন প্রায় ৪০ কিলোগ্রাম এবং এর আক্রমণ স্থলের দূরত্ব প্রায় ১০ মাইল। এর ব্যারেলগুলো সর্বাপেক্ষা উচ্চ গুণসম্পন্ন স্টিল দিয়ে নির্মিত এবং এটি খুবই ব্যয়বহুল।
শামীম রহমান রিজভী
শামীম রহমান রিজভী
রসমালাই
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের দই, মিষ্টি, রসমালাই এখনো স্বাদে-মানে অতুলনীয় এবং তার অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে নবীনগরে সাহা পরিবারের কয়েকজন মিষ্টির দোকান খোলেন। তারা এ দোকানে দই, রসগোল্লা, চমচম, লালমোহন, রাজভোগ, রসমালাই ও সন্দেশ প্রভৃতি মিষ্টি বিক্রি করতেন। তাদের দেখাদেখি আরও অনেকেই এ পেশা-ব্যবসা বেছে নেন। বহুকাল আগে থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বিভিন্ন উপজেলায় দুধ সস্তা। এখনো জুন-জুলাই মাসে খাঁটি গরুর দুধ ১৫-২০ টাকা কেজি দরে নেমে আসে প্রায়ই। আর ব্রিটিশ আমলে ১ বা ২ পয়সা সের দরে দুধ বিক্রি হতো। পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকেও নবীনগরে দুধের সের ছিল এক আনা। এরপর ধীরে ধীরে দাম বাড়তে থাকে। সস্তা দুধ পাওয়ায় এখানে নানা জাতের মিষ্টি তৈরি হতে থাকে, তবে সেকালে সাপ্তাহিক হাটের দিনেও বেশি মিষ্টি বিক্রি হতো তাছাড়া বিবাহ বা সামাজিক অনুষ্ঠানেও দই, রসগোল্লা, মিষ্টির ব্যাপক প্রচলন ছিল। জানা যায়, রসগোল্লা, দই প্রথম তৈরি হয় কলকাতার বাগবাজারে। আর রসগোল্লা নামকরণ করেছিলেন কবি নবীন চন্দ্র সেন। কলকাতা থেকে ময়রাগণ রসগোল্লা তৈরির কৌশল শিখে এসে এদেশের বিভিন্ন স্থানে এসবের দোকান খুলে বসে। আর একেক স্থানে একেক ধরনের মিষ্টি প্রসিদ্ধ হয়। যেমন নাটোরের কাঁচাগোল্লা, কুমিল্লার রসমালাই প্রসিদ্ধ। তখন থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দই, মিষ্টি জনপ্রিয়তা পায়। তবে গুণে-মানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের দই, মিষ্টি, রসমালাই অত্যন্ত ভালো। দামেও সস্তা। বর্তমানে কেজি ৮০-৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রবাসীরা নবীনগর থেকে এসব মিষ্টি বিদেশেও নিয়ে যান। এলাকার সুপরিচিত গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সাহা পরিবারসহ এমন অসংখ্য পরিবার তাদের পৈতৃক পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
লালমনিরহাট জাদুঘর
লালমনিরহাট জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন আশরাফুজ্জামান। তিনি জেলা শহরের পূর্ব থানাপাড়াস্থ নিজ বাড়ি সবুজ নীড়ে ২০০৩ সালের ১৮ মে 'লালমনিরহাট জেলা জাদুঘর' নামে একটি সংগ্রহশালার সূচনা করেন। ওই সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত আছে এরই মধ্যে ৩৫০ রকমের প্রাচীন ও আধুনিক মুদ্রা, বিভিন্ন তৈজসপত্র, বাদ্যযন্ত্র, অলঙ্কার, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, প্রাচীন দলিল, পুঁথি, পাণ্ডুলিপি, দুই হাজার গ্রন্থ, স্মরণিকা, পত্রপত্রিকা, কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গের ছবি ও পরিচিতিসহ নানা ঐতিহাসিক উপকরণ। তার জাদুঘর এরই মধ্যে লালমনিরহাটের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তার জাদুঘর ব্যবহারের জন্য আসছেন। বাংলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল জলিল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি তরিক আলী, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ অনেক দেশবরেণ্য ব্যক্তি আশরাফুজ্জামানের জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন। এসেছেন জাপান ও নরওয়ের পর্যটক। আশরাফুজ্জামান এরই মধ্যে 'লালমনিরহাট জেলার ইতিহাস' নামক একটি পুস্তক রচনা করেছেন। তার ইচ্ছা আগামীতে এ জাদুঘরটি আরও সমৃদ্ধ করা, সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানো। ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ জাদুঘর আর্থিক সহায়তা পেলে আরও বড় হবে।
রেজাউল করিম, লালমনিরহাট
Tuesday, October 26, 2010
ঝিনাইদহ
ঢাকা থেকে সড়কপথে ২১০ কিলোমিটার দূরে খুলনা বিভাগের জেলা ঝিনাইদহ। উত্তরে কুষ্টিয়া জেলা, দক্ষিণে যশোর ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে রাজবাড়ী ও মাগুরা জেলা এবং পশ্চিমে চুয়াডাঙ্গা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। গড়াই, কুমার, ভৈরব, চিত্রা, কপোতাক্ষ, কালীগঙ্গা, ইছামতি, নবগঙ্গা প্রভৃতি এ জেলার উলেস্নখযোগ্য নদ-নদী।
মিয়ার দালান : জেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নবগঙ্গা নদীর তীরে মুরারীদহ গ্রামে প্রাচীন জমিদার বাড়ি মিয়ার দালান অবস্থিত। বাড়িটির প্রধান প্রবেশপথে এখনো কাব্যিক ভাষায় খোদাই করা আছে_'শ্রী শ্রী রাম, মুরারীদহ গ্রাম ধাম, বিবি আশরাফুন্নেসা নাম, কি কহিব হুরির বাখান, ইন্দ্রের আরামপুর নবগঙ্গার উত্তর ধার, ৭৫,০০০ টাকায় করিলাম নির্মাণ, এদেশে কাহার সাধ্য বাধিয়া জলমাঝে কমল সমান, কলিকাতার রাজ চন্দ্ররাজ, ১১২৯ সালে শুরু করি কাজ, ১২৩৬ সালে সমাপ্ত দালান'। এ থেকেই জানা যায় নবগঙ্গা নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলা ১২৩৬ সালে এ প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয় তৎকালীন ৭৫,০০০ টাকা ব্যয়ে। সংরক্ষণের অভাবে বর্তমানে বাড়িটি ধ্বংসের পথে।
নলডাঙ্গা সিদ্ধেশ্বরী মন্দির : জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা সদরের দুই কিলোমিটার পশ্চিমে নলডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। বর্গাকারে নির্মিত এ মন্দিরটির প্রত্যেক পাশের দৈঘর্্য প্রায় ৩৯ ফুট। এর ভেতরে একটি মূর্তি কোঠা ও একটি বারান্দা আছে। মন্দিরের সামনের দোয়ার পোড়ামাটির অলঙ্করণসমৃদ্ধ। ১৮৬৫ সালের কিছুকাল আগে নলডাঙ্গা জমিদার পরিবার কর্তৃক মন্দিরটি নির্মিত বলে জানা যায়। জেলা শহর থেকে জায়গাটির দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার।
বারোবাজার : জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নে রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন স্থাপনা। ধারণা করা হয়, বহুকাল আগে এখানে সমৃদ্ধ একটি শহরের অস্তিত্ব ছিল। এখানে এর বেশ কিছু সমৃদ্ধ স্থাপনা টিকে আছে এখনো। এসবের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো_গোরাই মসজিদ, গলাকাটা মসজিদ, জোড়বাংলা মসজিদ, সাতগাছিয়া মসজিদ, হাসিলবাগগড় ইত্যাদি।
গোরাই মসজিদ : ১৯৮৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ মসজিদটির সংস্কার করে। প্রায় পাঁচ ফুট চওড়া দেয়ালের এ মসজিদে পূর্ব দিকে তিনটি প্রবেশপথ আছে। উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে দুটি বড় ও দুটি ছোট প্রবেশপথ ছিল। বর্তমানে এগুলো জানালা হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। পশ্চিম ও দক্ষিণ দেয়ালে দুটি করে কালো পাথরের স্তম্ভ আর পশ্চিম দেয়ালে আছে তিনটি মিহরাব। ভেতর এবং বাইরের দেয়াল পোড়ামাটির নকশায় পরিপূর্ণ।
গলাকাটা মসজিদ : বারোবাজার-তাহিরপুর সড়কের পাশে অবস্থিত পোড়ামাটির কারুকাজ-সমৃদ্ধ প্রাচীন মসজিদ। বর্গাকারে নির্মিত প্রায় ২৫ ফুট দীর্ঘ এ মসজিদের দেয়াল পাঁচ ফুট চওড়া। স্তম্ভ দুটির সামনে পেছনে দুই সাড়িতে ছয়টি মাঝারি আকৃতির গম্বুজ আছে। মসজিদে পাওয়া আরবি-ফারসিতে লেখা শিলালিপি অনুযায়ী ৮০০ হিজরিতে সুলতান মাহমুদ ইবনে হুসাইনের আমলে মসজিদটি নির্মিত।
জোড়বাংলা মসজিদ : ১৯৯২-৯৩ সালে খননের ফলে বারোবাজারের এ মসজিদটি আবিষ্কৃত হয়। পাতলা ইটে নির্মিত এ মসজিদটি উঁচু একটি বেদির ওপরে নির্মিত। এ মসজিদের প্রধান প্রবেশপথটি উত্তর-পূর্ব কোনে। এখান থেকে একটি পাকা পথ মসজিদের পাশর্্ববতর্ী দিঘির সিঁড়ি হয়ে তলদেশ পর্যন্ত চলে গেছে। মসজিদের পাশের দিঘিটি অন্ধপুকুর নামে পরিচিত।
সাতগাছিয়া মসজিদ : বারোবাজার থেকে এ মসজিদের দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। এ মসজিদটি ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম স্থানীয় জনগণ আবিষ্কার করে। এর দশ বছর পরে ১৯৯৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটি খনন করে। বর্তমানে মসজিদটির মূল ছাদ নেই। তবে এতে ৪৮টি স্তম্ভের উপর ৩৫টি গম্বুজ ছিল। বর্তমানে মসজিদটির পূর্ব, উত্তর দক্ষিণ দেয়ালে সতেরটি প্রবেশপথ রয়েছে, পশ্চিম দেয়ালে আছে সাতটি মিহরাব।
কালু ও চম্পাবতীর সমাধি : বারোবাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গাজী-কালু ও চম্পাবতীর সমাধি। গাজী-কালু ও চম্পাবতীর সমাধি নিয়ে নানান লোককাহিনি প্রচলিত আছে। এরকম একটি হলো বিরাট নগরের শাসক দরবেশ সিকান্দারের পুত্র গাজী। কালু ছিলেন সিকান্দারের পোষ্যপুত্র। কালু গাজীকে খুবই ভালোবাসতেন এবং তাকে অনুসরণ করে চলতেন। গাজীর সঙ্গে ছাপাই নগরের সামন্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে মুকুট রাজার মেয়ে চম্পাবতীর সাক্ষাৎ হলে ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে তারা প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। মুকুট রাজা গাজী ও চম্পাবতীর প্রেমে ক্ষুব্ধ হয়ে তার সৈন্যদের হুকুম দেন গাজী ও কালুকে শায়েস্তা করতে। এ যুদ্ধে মুকুট রাজার সেনাপতি দক্ষিণা রায় গাজী-কালুর কাছে পরাজিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে গাজীর অনুসারী হয়ে যান। এদিকে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মুকুট রাজা চম্পাবতীকে নিয়ে অন্যত্র চলে যান। সেখানেও চলে যান গাজী তার সঙ্গী কালুকে নিয়ে। অবশেষে অনেক যুদ্ধের পর মুকুট রাজার কাছ থেকে চম্পাবতীকে উদ্ধার করে বারোবাজার নিয়ে আসেন। কিন্তু শাহ সিকান্দার চম্পাবতীকে মেনে নিতে পারেননি বলে সঙ্গী কালু ও দক্ষিণা রায়কে নিয়ে জঙ্গলে বেরিয়ে পড়েন।
এখানে গাজী-কালু ও চম্পাবতীর সমাধি ছাড়াও দক্ষিণা রায়ের সমাধিও রয়েছে। গাজী-কালু ও চম্পাবতীকে নিয়ে নানান লোক কাহিনির মতোই এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে তাদের নামে বিভিন্ন সমাধিও আছে।
শৈলকুপা শাহী মসজিদ : জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে শৈলকুপা বাজারের পাশেই অবস্থিত প্রাচীন স্থাপনা শৈলকুপা শাহী মসজিদ। ইটের তৈরি এ মসজিদটিতে সুলতানী আমলের স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
মলিস্নকপুরের বটবৃক্ষ : জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে দশ কিলোমিটার পূর্বে মলিস্নকপুরে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি বটবৃক্ষ। এশিয়ার সবচেয়ে বড় বট বৃক্ষ বলা হয় এটিকে। প্রায় ১১ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে এ গাছটি। এ জায়গাটির মালিক ছিলেন রায় গ্রামের নগেন সেনের স্ত্রী শৈলবালা সেন। পরবতর্ীতে এটি সরকারি খাস জমি হয়ে যায়।
কিভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সড়কপথে সরাসরি ঝিনাইদহ যাওয়া যায়। গাবতলী বাস স্টেশন থেকে জে আর পরিবহন (০১৭১৯৮১৮৪৮৩), পূর্বাশা পরিবহন (০১৭১৯৮৮৮৪২৪), চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স (০১৭১২০১৭৪৯৬), শ্যামলী পরিবহন, ঈগল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এসবি পরিবহন, দিগন্ত পরিবহনসহ আরো অনেক বাস ঝিনাইদহ যায়। ভাড়া ২৫০-২৮০ টাকা।
কোথায় থাকবেন : মাওলানা ভাসানী সড়কে হোটেল ঝিনুক (০৪৫১-৬১৪৬০, নন এসি একক ১০০ টাকা, নন এসি দ্বৈত ২৫০ টাকা, এসি দ্বৈত ৪০০ টাকা)। পোস্ট অফিস মোড়ে হোটেল জামান (০১৭১১১৫২৯৫৪, নন এসি একক ৬০ টাকা, নন এসি দ্বৈত ১২০ টাকা)।
Monday, October 25, 2010
মার্সিডিজ
গাড়ি নির্মাতা ডেইমলার নতুন মডেলের একটি গাড়ির নামকরণ করেছিলেন নিজের মেয়ে মার্সিডিজ-এর নামে। সেটাই আজকের সুপরিচিত ও দামি গাড়ি মার্সিডিজ।
নোবেল প্রাইজ কি?
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয় নোবেল প্রাইজকে। বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামানুসারে ১৯০১ সাল থেকে এ পুরস্কার চালু হয়। নোবেল তার মৃত্যুর আগে অগাধ সম্পত্তি উইল করে যান এ পুরস্কারের জন্য। ওই সম্পত্তির বার্ষিক আয় থেকে পুরস্কারের অর্থ জোগান দেওয়া হয়। প্রথমদিকে পুরস্কার দেওয়া হতো শান্তি, বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, সাহিত্য, চিকিৎসা, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায়। ১৯৬৯ সালে এগুলোর সঙ্গে যোগ হয় অর্থনীতি।
নাজমুল হক ইমন
নাজমুল হক ইমন
বিখ্যাতদের ফোবিয়া
হ্যারিয়েট মার্টিনু, এডমন্ড ইয়েটস, উইকি কলিন্স এবং গিয়াকোমো মেয়ারবিয়ার :
এদের সবাই ট্যাফো ফোবিয়ায় (অকাল মৃত্যুর ভয়) ভুগতেন। ভাবতেন তাদের জ্যান্ত কবর দেওয়া হবে। এ ধরনের ভয় উনিশ শতকে অনেকের মাঝে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে, বিষয়টির ওপর দুশ'রও বেশি বই লেখা হয়েছে। এ ভয়কে জয় করার জন্য গঠিত হয়েছিল বিশেষ সমাজ। লেখিকা হ্যারিয়েট মার্টিনু নিজের ডাক্তারকে ১০ পাউন্ড দিয়ে উপদেশ দিয়েছিলেন তাকে কবর দেওয়ার আগে যেন ভালোভাবে শরীর পরীক্ষা করে দেখা হয় তিনি বেছে আছেন কিনা। পরীক্ষার পর যদি জানা যায়_ না, তিনি সত্যি মারা গেছেন, তখন যেন ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় মুণ্ডু।
উপন্যাসিক এডমন্ড ইয়েসিও ২০ গিনি ফি রেখে যান এ জন্য যে, কবর দেওয়ার আগে জুগুলার ভেইন কেটে ফেলার সময় যেন ডাক্তার যথেষ্ট সতর্কভাবে পরীক্ষা করে দেখেন তার সত্যি মৃত্যু হয়েছে কিনা। আরেক বিখ্যাত উপন্যাসিক উইকি কলিন্সের সঙ্গে সবসময় একটি চিঠি থাকত। তাতে লেখা ছিল, তাকে মৃত বলে ঘোষণা করার আগে অবশ্যই যেন কোনো ডাক্তার তার শরীর পরীক্ষা করে দেখেন।
নিকোলাই চসেস্কু ও মার্লিন ডিয়েট্রিচ : বার্সিলো ফোবিয়া (জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয়) :
প্রাক্তন রুমানিয়ান স্বৈরশাসক চসেস্কু ও তার স্ত্রীকে একবার পাবলিসিটির কারণে বেশকিছু শিশুর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে হয়েছিল, চুমু খেতে হয়েছিল তাদেরকে। এর আগে সিক্রেট পুলিশ কয়েকটি শিশুকে বিশেষ একটি জাযগায় আটকে রেখে নিয়মিত তাদের পরিচ্ছন্ন থাকতে বাধ্য করে ওই বিশেষ দিনটির জন্য। তারপর তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে হ্যান্ডশেক করেছিলেন চসেস্কু ও তার স্ত্রী। আর অভিনেত্রী মার্লিন ডিয়েট্রিচও একই ফোবিয়ায় ভুগতেন। সব সময় শঙ্কিত থাকতেন লোকের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে গিয়ে না আবার জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়েন। বলিউড নায়িকা আমিশা প্যাটেল ও ব্যাসিলো ফোবিয়ার রোগী। তিনি কারও সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার পর প্রথম ডেটল, তারপর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলেন।
জর্জ বার্নাডশ : কোইটোফোবিয়া (যৌন মিলনের ভয়) :
বিশ্ববিখ্যাত এই নাট্যকার ২৯ বছর বয়সে এক প্রৌঢ়া বিধবার কাছে কৌমার্য হারান। কিন্তু অভিজ্ঞতাটা মোটেই সুখপ্রদ ছিল না তার কাছে। ফলে অন্তত দেড় দশক কোনো মেয়ের ধারে- কাছেও ঘেঁষেননি তিনি।
রাজা পঞ্চদশ লুই : সাইপ্রিডোফোবিয়া (সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়) :
রাজা পঞ্চদশ লুই শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে সবসময় বেছে নিতেন ১৪ থেকে ১৯ বছরের কিশোরীদের, যাদের সিফিলিস রোগ নেই বলে বিশ্বাস করতেন তিনি।
সুইডেনের রানী ক্রিস্টিনা : এনটোমোফোবিয়া (মাছির ভয়) :
সতেরো শতকের মানসিক প্রতিবন্ধী এ রানী মাছি খুব ভয় পেতেন। শোবার ঘরে যেন মাছি ঢুকতে না পারে, মাছি তাড়ানোর জন্য তিনি বিশেষ অর্ডার দিয়ে তৈরি করেছিলেন চার ইঞ্চি লম্বা একটি কামান। বেশিরভাগ সময় তাকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত কামানটি নিয়ে; গোলা ছুড়ছেন জানের শত্রু মাছির গায়ে!
স্যামুয়েল জনসন : লিসোফোবিয়া (পাগল হওয়ার ভয়):
জনসন প্রায়ই তার স্ত্রীকে বলতেন, তাকে ঘরে আটকে রেখে পায়ে শিকল পরিয়ে দিতে। জনসন ভাবতেন, তিনি পাগল হয়ে যাবেন।
সিগমুন্ড ফ্রয়েড, বিখ্যাত দার্শনিক : সাইডারোড্রমোফোবিয়া (ট্রেনের চড়ার ভয়)। ফ্রয়েড পারতপক্ষে ট্রেনে চড়তে চাইতেন না।
ম্যাক্সিমিলিয়ান রবেসপিয়েরে : হেমাটোফোবিয়া (রক্তের ভয়) : রবেসপিয়েরে রক্ত দেখতেই পারতেন না। রক্ত দেখলে হয় বমি করতেন, নয়তো অজ্ঞান হয়ে যেতেন।
রবার্ট শুম্যান, মেটালোফোবিয়া :
(ধাতব জিনিসে ভয়) : খ্যাতিমান এই জার্মান সুরকার লোহার চাবি দেখলেই ভয় পেতেন।
নাটালি উড, আমেরিকান অভিনেত্রী : হাইড্রোফোবিয়া (পানিতে ডুবে মরার ভয়) :
তিনি ১৯৮১ সালে পানিতে ডুবে মারা যান ।
-শামীম শিকদার
এদের সবাই ট্যাফো ফোবিয়ায় (অকাল মৃত্যুর ভয়) ভুগতেন। ভাবতেন তাদের জ্যান্ত কবর দেওয়া হবে। এ ধরনের ভয় উনিশ শতকে অনেকের মাঝে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে, বিষয়টির ওপর দুশ'রও বেশি বই লেখা হয়েছে। এ ভয়কে জয় করার জন্য গঠিত হয়েছিল বিশেষ সমাজ। লেখিকা হ্যারিয়েট মার্টিনু নিজের ডাক্তারকে ১০ পাউন্ড দিয়ে উপদেশ দিয়েছিলেন তাকে কবর দেওয়ার আগে যেন ভালোভাবে শরীর পরীক্ষা করে দেখা হয় তিনি বেছে আছেন কিনা। পরীক্ষার পর যদি জানা যায়_ না, তিনি সত্যি মারা গেছেন, তখন যেন ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় মুণ্ডু।
উপন্যাসিক এডমন্ড ইয়েসিও ২০ গিনি ফি রেখে যান এ জন্য যে, কবর দেওয়ার আগে জুগুলার ভেইন কেটে ফেলার সময় যেন ডাক্তার যথেষ্ট সতর্কভাবে পরীক্ষা করে দেখেন তার সত্যি মৃত্যু হয়েছে কিনা। আরেক বিখ্যাত উপন্যাসিক উইকি কলিন্সের সঙ্গে সবসময় একটি চিঠি থাকত। তাতে লেখা ছিল, তাকে মৃত বলে ঘোষণা করার আগে অবশ্যই যেন কোনো ডাক্তার তার শরীর পরীক্ষা করে দেখেন।
নিকোলাই চসেস্কু ও মার্লিন ডিয়েট্রিচ : বার্সিলো ফোবিয়া (জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয়) :
প্রাক্তন রুমানিয়ান স্বৈরশাসক চসেস্কু ও তার স্ত্রীকে একবার পাবলিসিটির কারণে বেশকিছু শিশুর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে হয়েছিল, চুমু খেতে হয়েছিল তাদেরকে। এর আগে সিক্রেট পুলিশ কয়েকটি শিশুকে বিশেষ একটি জাযগায় আটকে রেখে নিয়মিত তাদের পরিচ্ছন্ন থাকতে বাধ্য করে ওই বিশেষ দিনটির জন্য। তারপর তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে হ্যান্ডশেক করেছিলেন চসেস্কু ও তার স্ত্রী। আর অভিনেত্রী মার্লিন ডিয়েট্রিচও একই ফোবিয়ায় ভুগতেন। সব সময় শঙ্কিত থাকতেন লোকের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করতে গিয়ে না আবার জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়েন। বলিউড নায়িকা আমিশা প্যাটেল ও ব্যাসিলো ফোবিয়ার রোগী। তিনি কারও সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার পর প্রথম ডেটল, তারপর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলেন।
জর্জ বার্নাডশ : কোইটোফোবিয়া (যৌন মিলনের ভয়) :
বিশ্ববিখ্যাত এই নাট্যকার ২৯ বছর বয়সে এক প্রৌঢ়া বিধবার কাছে কৌমার্য হারান। কিন্তু অভিজ্ঞতাটা মোটেই সুখপ্রদ ছিল না তার কাছে। ফলে অন্তত দেড় দশক কোনো মেয়ের ধারে- কাছেও ঘেঁষেননি তিনি।
রাজা পঞ্চদশ লুই : সাইপ্রিডোফোবিয়া (সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়) :
রাজা পঞ্চদশ লুই শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে সবসময় বেছে নিতেন ১৪ থেকে ১৯ বছরের কিশোরীদের, যাদের সিফিলিস রোগ নেই বলে বিশ্বাস করতেন তিনি।
সুইডেনের রানী ক্রিস্টিনা : এনটোমোফোবিয়া (মাছির ভয়) :
সতেরো শতকের মানসিক প্রতিবন্ধী এ রানী মাছি খুব ভয় পেতেন। শোবার ঘরে যেন মাছি ঢুকতে না পারে, মাছি তাড়ানোর জন্য তিনি বিশেষ অর্ডার দিয়ে তৈরি করেছিলেন চার ইঞ্চি লম্বা একটি কামান। বেশিরভাগ সময় তাকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত কামানটি নিয়ে; গোলা ছুড়ছেন জানের শত্রু মাছির গায়ে!
স্যামুয়েল জনসন : লিসোফোবিয়া (পাগল হওয়ার ভয়):
জনসন প্রায়ই তার স্ত্রীকে বলতেন, তাকে ঘরে আটকে রেখে পায়ে শিকল পরিয়ে দিতে। জনসন ভাবতেন, তিনি পাগল হয়ে যাবেন।
সিগমুন্ড ফ্রয়েড, বিখ্যাত দার্শনিক : সাইডারোড্রমোফোবিয়া (ট্রেনের চড়ার ভয়)। ফ্রয়েড পারতপক্ষে ট্রেনে চড়তে চাইতেন না।
ম্যাক্সিমিলিয়ান রবেসপিয়েরে : হেমাটোফোবিয়া (রক্তের ভয়) : রবেসপিয়েরে রক্ত দেখতেই পারতেন না। রক্ত দেখলে হয় বমি করতেন, নয়তো অজ্ঞান হয়ে যেতেন।
রবার্ট শুম্যান, মেটালোফোবিয়া :
(ধাতব জিনিসে ভয়) : খ্যাতিমান এই জার্মান সুরকার লোহার চাবি দেখলেই ভয় পেতেন।
নাটালি উড, আমেরিকান অভিনেত্রী : হাইড্রোফোবিয়া (পানিতে ডুবে মরার ভয়) :
তিনি ১৯৮১ সালে পানিতে ডুবে মারা যান ।
-শামীম শিকদার
Sunday, October 24, 2010
ত্রিভুজ প্রেমের জের ধরে বাকৃবিতে ছাত্রী পেটানোর দায়ে প্রেমিক গ্রেপ্তার
ত্রিভুজ প্রেমের জের ধরে গত শুক্রবার ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক ছাত্রীকে পিটিয়ে আহত করেছেন এক প্রেমিক। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হলে পুলিশ অভিযুক্ত প্রেমিককে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশা খাঁ হল থেকে গ্রেপ্তার করে।
সূত্র জানায়, শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের লেভেল-১, সেমিস্টার-২ এর তমা, তৃষ্ণা সাহা, কামরুন নাহার কান্তা, রিপন শেখ, শিপন, সাজ্জাদ একত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মপুত্র নদের নিঝুম দ্বীপ চরে যায়।
এ সময় তমা তার নতুন প্রেমিক রিপন শেখের সঙ্গে প্রেমলীলায় মত্ত হয়ে ওঠে। এ খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজির লেভেল-৩, সিমেস্টার-২ এর ছাত্র ও তমার পুরোনো প্রেমিক তনয় ও তার বন্ধু আরাফাত, ফরহাদ, ছাব্বির ও ঈশান নিঝুম দ্বীপ চরে যায়। এ সময় তমা ও তার নতুন প্রেমিক রিপনের সঙ্গে তাদের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে তনয়ের কথা কাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে তনয় ও তার বন্ধুরা মিলে তমাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। বাধা দিতে গিয়ে এ সময় প্রহারের শিকার হন তমার নতুন প্রেমিক রিপন। পরে আহত তমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তারের পরামর্শে শুক্রবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০নং ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে মেয়ের আহত হওয়ার খবর পেয়ে তমার মা-বাবা শুক্রবার সন্ধ্যায় জামালপুর থেকে ময়মনসিংহে আসেন এবং তারা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের ধারায় ৫ জনকে আসামি করে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ঈশা খাঁ হল থেকে অভিযুক্ত প্রধান আসামি তনয়কে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী তমার গ্রামের বাড়ি জামালপুর। আর তনয়ের বাড়ি বরিশাল।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি গোলাম সারোয়ার বলেন, তনয়কে প্রধান আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তনয়ের মোবাইলের ইনবক্সে তমার প্রেরিত প্রেমের প্রমাণস্বরূপ কয়েকটি এসএমএস পাওয়া গেছে। তবে তা সত্য কিনা তা যাচাই-বাছাই চলছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবু হাদী নূর আলী খান জানান, তনয়কে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো হাত নেই। ঘটনা ক্যাম্পাসের বাইরের। এর তদন্তসহ বিচারের দায়ভার পুলিশ প্রশাসনের।
Source: Bhorer Kagoj
সূত্র জানায়, শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের লেভেল-১, সেমিস্টার-২ এর তমা, তৃষ্ণা সাহা, কামরুন নাহার কান্তা, রিপন শেখ, শিপন, সাজ্জাদ একত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ব্রহ্মপুত্র নদের নিঝুম দ্বীপ চরে যায়।
এ সময় তমা তার নতুন প্রেমিক রিপন শেখের সঙ্গে প্রেমলীলায় মত্ত হয়ে ওঠে। এ খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজির লেভেল-৩, সিমেস্টার-২ এর ছাত্র ও তমার পুরোনো প্রেমিক তনয় ও তার বন্ধু আরাফাত, ফরহাদ, ছাব্বির ও ঈশান নিঝুম দ্বীপ চরে যায়। এ সময় তমা ও তার নতুন প্রেমিক রিপনের সঙ্গে তাদের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে তনয়ের কথা কাটাকাটি হয়।
একপর্যায়ে তনয় ও তার বন্ধুরা মিলে তমাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। বাধা দিতে গিয়ে এ সময় প্রহারের শিকার হন তমার নতুন প্রেমিক রিপন। পরে আহত তমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তারের পরামর্শে শুক্রবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০নং ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে মেয়ের আহত হওয়ার খবর পেয়ে তমার মা-বাবা শুক্রবার সন্ধ্যায় জামালপুর থেকে ময়মনসিংহে আসেন এবং তারা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের ধারায় ৫ জনকে আসামি করে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ঈশা খাঁ হল থেকে অভিযুক্ত প্রধান আসামি তনয়কে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী তমার গ্রামের বাড়ি জামালপুর। আর তনয়ের বাড়ি বরিশাল।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি গোলাম সারোয়ার বলেন, তনয়কে প্রধান আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তনয়ের মোবাইলের ইনবক্সে তমার প্রেরিত প্রেমের প্রমাণস্বরূপ কয়েকটি এসএমএস পাওয়া গেছে। তবে তা সত্য কিনা তা যাচাই-বাছাই চলছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবু হাদী নূর আলী খান জানান, তনয়কে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো হাত নেই। ঘটনা ক্যাম্পাসের বাইরের। এর তদন্তসহ বিচারের দায়ভার পুলিশ প্রশাসনের।
Source: Bhorer Kagoj
পৃথিবীর সংক্ষিপ্ত তথ্যপুঞ্জি
* পৃথিবীর আনুমানিক বয়স : কমপক্ষে ৪,৫০০ মিলিয়ন বছর।
* ওজন : ৬৫৮,৬৫৪,২৫০,০০০,০০০ কোটি টন।
* সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় : চেরাপুঞ্জি, আসাম, ভারত।
* বৃহত্তম মহাদেশ : এশিয়া।
* বৃহত্তম দেশ : রাশিয়া।
* ক্ষুদ্রতম দেশ : ভ্যাটিকান সিটি।
* বৃহত্তম পর্বত : হিমালয় পর্বত।
* বৃহত্তম হ্রদ : কাস্পিয়ান হ্রদ (রাশিয়া)।
* সর্বোচ্চ শৃঙ্গ : মাউন্ট এভারেস্ট, ৮.৮৪৮ মিটার।
* পৃথিবীর উঁচু মালভূমি : পামীর মালভূমি (চীন)।
* উঁচু শহর : প্যাশকো (পেরু)।
* বৃহত্তম মরুভূমি : সাহারা মরুভূমি (আফ্রিকা)।
* পৃথিবীর বৃহত্তম নদী : মিসিসিপি (আমেরিকা)।
* পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী : নীল নদ ( আফ্রিকা)।
* পৃথিবীর প্রশস্ত নদী : আমাজন (আমেরিকা)।
* পৃথিবীর বৃহত্তম বাঁধ : নিপার বাঁধ (রাশিয়া)।
* পৃথিবীর বৃহত্তম জলপ্রপাত : নায়াগ্রা জলপ্রপাত (আমেরিকা)।
* পৃথিবীর বৃহত্তম বিমানবন্দর : জেদ্দা বিমানবন্দর (সৌদি আরব)।
* পৃথিবীর বৃহত্তম রেলপথ : ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলপথ (রাশিয়া)।
* পৃথিবীর বৃহত্তম জাদুঘর : ব্রিটিশ মিউজিয়াম।
-ফারহানা মাহমুদ
* ওজন : ৬৫৮,৬৫৪,২৫০,০০০,০০০ কোটি টন।
* সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় : চেরাপুঞ্জি, আসাম, ভারত।
* বৃহত্তম মহাদেশ : এশিয়া।
* বৃহত্তম দেশ : রাশিয়া।
* ক্ষুদ্রতম দেশ : ভ্যাটিকান সিটি।
* বৃহত্তম পর্বত : হিমালয় পর্বত।
* বৃহত্তম হ্রদ : কাস্পিয়ান হ্রদ (রাশিয়া)।
* সর্বোচ্চ শৃঙ্গ : মাউন্ট এভারেস্ট, ৮.৮৪৮ মিটার।
* পৃথিবীর উঁচু মালভূমি : পামীর মালভূমি (চীন)।
* উঁচু শহর : প্যাশকো (পেরু)।
* বৃহত্তম মরুভূমি : সাহারা মরুভূমি (আফ্রিকা)।
* পৃথিবীর বৃহত্তম নদী : মিসিসিপি (আমেরিকা)।
* পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী : নীল নদ ( আফ্রিকা)।
* পৃথিবীর প্রশস্ত নদী : আমাজন (আমেরিকা)।
* পৃথিবীর বৃহত্তম বাঁধ : নিপার বাঁধ (রাশিয়া)।
* পৃথিবীর বৃহত্তম জলপ্রপাত : নায়াগ্রা জলপ্রপাত (আমেরিকা)।
* পৃথিবীর বৃহত্তম বিমানবন্দর : জেদ্দা বিমানবন্দর (সৌদি আরব)।
* পৃথিবীর বৃহত্তম রেলপথ : ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলপথ (রাশিয়া)।
* পৃথিবীর বৃহত্তম জাদুঘর : ব্রিটিশ মিউজিয়াম।
-ফারহানা মাহমুদ
সিনাই
প্রাচীন মিসরের সবচেয়ে নামকরা মরুভূমি হলো সিনাই মরুভূমি বা সিনাই মরু অঞ্চল। আরবীয়দের কাছে সিনাই পিনিসুলা বা ত্রিভুজ সিনাই নামে অধিক পরিচিত। সিনাই মরু অঞ্চলের উত্তরে রয়েছে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণে লোহিত সাগর। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র হিসেবে আছে সুদান, জর্ডান ও ইসরাইল। প্রায় ৬০ হাজার কি. মি. আয়তনের এই মরুভূমিটি দেখতে উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা ও সর্পিল প্রকৃতির। এটি এশিয়া মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত মিসরে অবস্থিত। এর বিপরীত দিকে রয়েছে আফ্রিকা মহাদেশ। অধিকন্তু এটি মিসরের অন্তর্ভুক্ত একটি মরুভূমি হলেও একে 'ল্যান্ড অব ফাওয়ারোজ' বলা হয়, যার মূলভিত্তি প্রাচীন মিসরীয় ডুমাক ক্যাট। মজার কথা হলো ফাওয়ারোজ ও ডুমাক ক্যাটের অর্থ প্রায় সমমানের। সিনাই পিনিসুলা মরু অঞ্চলটি বিভক্ত হয়েছে দুইজন মিসরীয় শাসক দ্বারা। তাদের মধ্যে একজন হলো মাহমুদ আলী ড্রাইনেসটি, আরেক হলো মামলুক। সিনাই মরু অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন রাজনীতি, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এর প্রধান কারণ হলো সিনাই মরু অঞ্চল হলেও ভৌগলিক দিক দিয়ে অত্যন্ত ভালো জায়গায় এর অবস্থান। সিনাই মরুভূমির চারপাশে শুধু ধু-ধু বালুচর। লোকসংখ্যা ৯.৬ মিলিয়ন। অধিকাংশ সিনাইবাসী উট পালন ও খেজুর চাষ করে জীবনযাপন করে। তবে অনেক সিনাইবাসীই ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। সিনাই মরু অঞ্চলের পাশেই ইসরাইল সীমান্ত। যার হুমকিতে মাঝে মাঝে সিনাইবাসী আতঙ্কিত ও ভীত হয়ে পড়ে। তবে সম্প্রতি ইসরাইলের কাছ থেকে সিনাইবাসীকে রক্ষার জন্য মিসরীয় সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা মহাদেশের দেশ হলেও সিনাই মরু অঞ্চলটির অবস্থান এশিয়া মহাদেশের ইসরাইলের কোলঘেঁষে। সিনাইবাসী ফলমূলের চেয়ে রুটি বেশি পছন্দ করে। সিনাই অঞ্চলে বহির্বিশ্ব থেকে যারা উটযোগে ব্যবসা বাণিজ্য করতে আসে পানির অভাবে তাদের অনেকে মারা যায়। যেকারণে কোনো ব্যবসায়ী অতিরিক্ত পানি ছাড়া সিনাই অঞ্চলে আসে না। ইসরাইল ও আরব বিশ্বের মধ্যে যতগুলো যুদ্ধ হয়েছে তার অধিকাংশই সিনাইকে কেন্দ্র করে যেমন : ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধ। কেননা এই মরু অঞ্চলে রয়েছে বড় বড় তেলের খনি, যা রক্ষার্থে আরববিশ্ব বদ্ধপরিকর।
-মো. রিয়াজুল ইসলাম
-মো. রিয়াজুল ইসলাম
১১
সাম্প্রতিক কিছু আলোচিত বিষয়ের পর্যালোচনায় দেখা যায় বিভিন্ন ঘটনাবহুল প্রসঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্রমিক সংখ্যা ১১-এর চমকপ্রদ সম্বন্ধ রয়েছে। ইংরেজিতে নিউইয়র্ক সিটি শব্দটি লিখতে মোট ১১ অক্ষর প্রয়োজন হয়। ইংরেজিতে আফগানিস্তান শব্দটি লিখতেও একইভাবে ১১টি অক্ষর প্রয়োজন হয়। রামসিন ইউসেব নামের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী; সে ১৯৯৩ সালে সর্বপ্রথম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুইন টাওয়ার ধ্বংসের হুমকি দেয়, তার নাম ইংরেজিতে লিখতেও ১১টি অক্ষর প্রয়োজন। বিষয়টি খুবই কাকতালীয় বলেই আপাতত মনে হচ্ছে।
কিন্তু যখন জানা যায়, নিউইয়র্ক সিটি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রদেশক্রম তালিকার অন্তর্ভুক্ত ১১তম প্রদেশ, তখন আরেকটু অবাক হতেই হয়। টুইন টাওয়ারের উত্তর বিল্ডিংয়ে যে বিমানটি প্রথম আঘাত করে সেটির ফ্লাইট নম্বরও ছিল ১১। এই বিমানে মোট যাত্রী সংখ্যা ছিল ৯২ জন (৯+২=১১)। দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত করা দ্বিতীয় বিমানটির যাত্রী সংখ্যা ছিল ৬৫ জন (৬+৫=১১)। যে সন্ত্রাসী হামলার কথা বলা হচ্ছে সেটি সংঘটিত হয়েছিল ১১ সেপ্টেম্বর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে এ দিনটি ৯/১১ নামে পরিচিত। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি কলের নম্বরও ৯১১। কাকতালীয়ভাবে সংখ্যাগুলোকে যোগ করলেও যোগফল হয় ১১ (৯+১+১=১১)। ১১ সেপ্টেম্বরের সমগ্র সন্ত্রাসী হামলায় ছিনতাইকৃত বিমানগুলোর মোট যাত্রী সংখ্যা ছিল ২৪৫ জন। সংখ্যাগুলো যোগ করলেও যোগফল ১১ হয় (২+৪+৫=১১)। পঞ্জিকা অনুযায়ী ৩৬৫ দিনে এক বছর। সেই হিসাবে ১১ সেপ্টেম্বর হচ্ছে ২৫৪তম দিবস। দিবসটি সংখ্যাগুলোকে একত্রে যোগ করলেও ফলাফল ১১ হয় (২+৫+৪=১১)। পরবর্তীতে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে ধারাবাহিকভাবে যে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয় তার তারিখ ছিল ০৩-১১-২০০৪। সংখ্যাগুলোর যোগফলও ১১ (৩+১+১+২+০+০+৪=১১)। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের আন্ডারগ্রাউন্ড গাড়ি পার্কিং এরিয়াতে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে ট্রেড সেন্টারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রথম সন্ত্রাসী হামলার ঠিক ৯১১ দিন পর দ্বিতীয় হামলায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কাকতালীয়ভাবেই হোক বা অন্য যেভাবেই হোক, আবার ফিরে আসে সেই ৯/১১, পুনরায় মনে করিয়ে দেয় ৯/১১, যার যোগফল ১১(৯+১+১=১১)। হতে পারে সবই কাকতালীয়। কিন্তু বিশেষ ঘটনাসমূহে সংখ্যা ১১-এর উপস্থিতি সত্যি অবিশ্বাস্য।
-ফরহানা মাহমুদ তন্বী
কিন্তু যখন জানা যায়, নিউইয়র্ক সিটি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রদেশক্রম তালিকার অন্তর্ভুক্ত ১১তম প্রদেশ, তখন আরেকটু অবাক হতেই হয়। টুইন টাওয়ারের উত্তর বিল্ডিংয়ে যে বিমানটি প্রথম আঘাত করে সেটির ফ্লাইট নম্বরও ছিল ১১। এই বিমানে মোট যাত্রী সংখ্যা ছিল ৯২ জন (৯+২=১১)। দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত করা দ্বিতীয় বিমানটির যাত্রী সংখ্যা ছিল ৬৫ জন (৬+৫=১১)। যে সন্ত্রাসী হামলার কথা বলা হচ্ছে সেটি সংঘটিত হয়েছিল ১১ সেপ্টেম্বর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে এ দিনটি ৯/১১ নামে পরিচিত। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি কলের নম্বরও ৯১১। কাকতালীয়ভাবে সংখ্যাগুলোকে যোগ করলেও যোগফল হয় ১১ (৯+১+১=১১)। ১১ সেপ্টেম্বরের সমগ্র সন্ত্রাসী হামলায় ছিনতাইকৃত বিমানগুলোর মোট যাত্রী সংখ্যা ছিল ২৪৫ জন। সংখ্যাগুলো যোগ করলেও যোগফল ১১ হয় (২+৪+৫=১১)। পঞ্জিকা অনুযায়ী ৩৬৫ দিনে এক বছর। সেই হিসাবে ১১ সেপ্টেম্বর হচ্ছে ২৫৪তম দিবস। দিবসটি সংখ্যাগুলোকে একত্রে যোগ করলেও ফলাফল ১১ হয় (২+৫+৪=১১)। পরবর্তীতে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে ধারাবাহিকভাবে যে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয় তার তারিখ ছিল ০৩-১১-২০০৪। সংখ্যাগুলোর যোগফলও ১১ (৩+১+১+২+০+০+৪=১১)। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের আন্ডারগ্রাউন্ড গাড়ি পার্কিং এরিয়াতে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে ট্রেড সেন্টারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রথম সন্ত্রাসী হামলার ঠিক ৯১১ দিন পর দ্বিতীয় হামলায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কাকতালীয়ভাবেই হোক বা অন্য যেভাবেই হোক, আবার ফিরে আসে সেই ৯/১১, পুনরায় মনে করিয়ে দেয় ৯/১১, যার যোগফল ১১(৯+১+১=১১)। হতে পারে সবই কাকতালীয়। কিন্তু বিশেষ ঘটনাসমূহে সংখ্যা ১১-এর উপস্থিতি সত্যি অবিশ্বাস্য।
-ফরহানা মাহমুদ তন্বী
পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেলপথ
বর্তমানকালে যাতায়াতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে রেলপথ। প্রতিদিন পৃথিবীতে হাজার হাজার ট্রেন রেলপথের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। কিছু ট্রেন যাত্রী বহন করে আবার কিছু ট্রেন খাদ্য-শস্য, কাঠ, কয়লা, যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি বহন করে থাকে। সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেনগুলো ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি বেগে চলাচল করে। একটি সাধারণভাবে ব্যবহৃত মালগাড়ি এক মহাদেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত হাজার হাজার টন ওজনের মাল বহন করে চলতে পারে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সবদেশেই রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেলপথটি পেরুতে অবস্থিত। এ রেলপথের একটি শাখা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫ হাজার ৮৪৪ ফুট উপরে উঠে গেছে। কিন্তু মূল রেলপথের সর্বোচ্চ স্থান ১৫ হাজার ৬৮৮ ফুট উঁচুতে লা গ্যালেরা নামক সুড়ঙ্গে অবস্থিত। পেরুর সব রেলপথ সেন্ট্রাল রেলওয়ে অব পেরুর নিয়ন্ত্রণাধীন। ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার মতো পেরুর রেলপথগুলোও সুনির্দিষ্টি মাপের স্ট্যান্ডার্ড গেজে ৪ ফুট সাড়ে ৮ ইঞ্চি। পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেলস্টেশন লা গ্যালেরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫,৬৮৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এ অদ্বিতীয় রেলপথ নির্মাণের কৃতিত্বের অধিকারী হেনরি ডিগস নামক একজন ইঞ্জিনিয়ার। প্রায় ১০০ বছর আগে এ বিশাল রেলপথটি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। এছাড়াও পৃথিবীর দীর্ঘতম রেলপথ সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থিত, যা ৯০১০ কিলোমিটার (৫৬০০ মাইল) লম্বা এবং মস্কো থেকে ব্লাডিভোস্টোক পর্যন্ত বিস্তৃত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া প্রায় সব দেশেই কেন্দ্রীয় সরকার রেলপথগুলোকে পরিচালনা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো সব রেলপথ পরিচালনা করে। কানাডারও দুটি প্রধান রেলপথের একটি সরকার কর্তৃক পরিচালিত এবং অপরটি প্রাইভেট কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত। জাপানের যাত্রীবাহী ট্রেনগুলো পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা দ্রুতগামী। জাপানের অনেক ট্রেন গড়ে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটারেরও বেশি বেগে চালিত হয়। জাপানে সবচেয়ে দ্রুতগামী ট্রেন টোকিও থেকে ওসাকা পর্যন্ত চলে, যেগুলো প্রতি ৩ ঘণ্টায় ৫১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গমন করতে পারে।
জেরিকো
জেরিকোকে পৃথিবীর প্রাচীনতম শহর বলা হয়ে থাকে। এটি ইসরায়েলের নিকটবর্তী জর্ডানের পশ্চিমভাগে অবস্থিত। ডেড সির ৬ মাইল উত্তরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮২৫ ফুট নিচে এটি অবস্থিত। ১৯৬৭ সালে এ শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৬ হাজার ৮২৯ জন। জেরিকোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব এই যে, পৃথিবীর প্রাচীনতম ধারাবাহিক মানব বসতির প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন এখানে পাওয়া গেছে। কাজেই সভ্যতার প্রথম পদক্ষেপ যা সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব দশম মিলেনিয়ামে ঘটে তার সাক্ষ্যও রয়েছে। বাইবেলে উল্লেখ আছে, ইসরায়েলিরা জর্ডান অতিক্রম করার পর এ শহরকেই প্রথম দখল করে। ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং নিউ টেস্টামেন্টেও জেরিকোর কথা উল্লেখ আছে। মহান হিরোড সেখানে তার শীতকালীন অবস্থানের স্থান প্রতিষ্ঠা করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪ অব্দে তিনি সেখানে মারা যান। খ্রিস্টপূর্ব ৯ হাজার অব্দে মেসোলিথিক শিকারিদের এখানে আসার এবং দীর্ঘকাল তাদের বংশধরদের এখানে বসবাসের নিদর্শন রয়েছে। শুরুতে তারা জীর্ণ কুটিরে বসবাস করত। এ কুটির থেকে তারা ক্রমেই সুদৃঢ় গৃহ নির্মাণ করতে লাগল। সে সময় প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে তাদের বসতি ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৮ হাজার অব্দে এখানকার আদিবাসীরা একটি সুসংগঠিত সমাজে পরিণত হয় এবং তাদের বসতিস্থলের চারপাশে পাথর দিয়ে সুদৃঢ় দেয়াল তৈরি করতে শুরু করে। এ দেয়াল দিয়ে ঘেরা বসতিস্থলকে শহর বলা যায়, যেখানে সে সময় লোকসংখ্যা ছিল ২ থেকে ৩ হাজার। এভাবেই ভ্রাম্যমাণ শিকারির জীবন থেকে তারা কৃষি উপনিবেশের জীবনযাত্রায় উন্নত হয়ে উঠলো। পরবর্তী ২ হাজার বছর তারা লিওলিথিক যুগের মধ্য দিয়ে জীবনযাত্রা অতিক্রম করল। খ্রিস্টপূর্ব ৫ হাজার অব্দে তারা মৃৎ পাত্র ব্যবহার শুরু করলো। পরবর্তী ২ হাজার বছর তাদের বৃত্তি অনিশ্চিত এবং সম্ভবত অনিয়মিত ছিল। খিস্টপূর্ব চতুর্থ মিলেনিয়ামের শেষ ভাগে প্যালেস্টাইনের অন্যান্য অংশের মতো জেরিকোতে আবার নাগরিক সংস্কৃতির উদ্ভব হয়। জেরিকো আবার দেয়ালে ঘেরা শহরে পরিণত হয় এবং দেয়ালগুলো বহুবার পুনর্নির্মিত হয়। প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২ হাজার ৩০০ অব্দে আবার নাগরিক জীবনে বিঘ্ন ঘটে। ক্রুসেডার যুগে জেরিকো তৃতীয় স্থানে অবস্থিত ছিল। ওল্ড টেস্টামেন্টে উলি্লখিত স্থান থেকে এক মাইল পূর্বদিকে এবং এখানে একটি আধুনিক শহর গড়ে উঠেছিল। অবশ্য ১৯৪৯ সালে এটি জর্ডানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর বিশেষভাবে প্রসারিত হয়।
-প্রীতম সাহা সুদীপ
-প্রীতম সাহা সুদীপ
Saturday, October 23, 2010
নাটোরের কাঁচাগোল্লা
নামে কাঁচাগোল্লা হলেও এটি কিন্তু গোল্লাজাতীয় নয়, আদতে দুধের ছানা থেকে তৈরি শুকনো মিষ্টি। কাঁচাগোল্লার জন্য প্রথমে দুধের ছানা তৈরি করে পানি নিংড়ে নিতে হয়। এরপর গরম চিনির শিরার সঙ্গে মিশিয়ে নাড়তে হয়। শুকিয়ে এলে তৈরি হয় কাঁচাগোল্লা। কাঁচাগোল্লা তৈরির পেছনে একটি গল্প এখনো নাটোরের মানুষের মুখে মুখে ফেরে। রানি ভবানীকে নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন লালবাজারের মিষ্টি বিক্রেতা মধুসূদন দাস। একবার তিনি মিষ্টি তৈরির জন্য দুই মণ ছানা কেটে রাখেন। কিন্তু সকালে তাঁর প্রধান কর্মচারী দোকানে না এলে তিনি বিপাকে পড়েন। ছানা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তিনি চিনির গরম শিরায় ছানা ঢেলে দিয়ে নাড়তে থাকেন। শুকিয়ে এলে খেয়ে দেখেন মন্দ হয়নি। ভয়ে ভয়ে এর কিছু অংশ রানির কাছে পাঠিয়ে দেন। তা খেয়ে রানি ধন্য ধন্য করেন। শুধু ছানা দিয়ে তৈরি করা হয় বলে নাম রাখা হয় কাঁচাগোল্লা।
নাটোরের লালবাজারের কালীবাড়ীর কাঁচাগোল্লা তৈরিতে সুনাম আছে। দ্বারিক ভাণ্ডার, জয়কালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও নিমতলার মৌচাক কাঁচাগোল্লার জন্য খ্যাত। নাটোরের সব দোকানেই কাঁচাগোল্লা পাওয়া যায়। ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। নাটোর বাসটার্মিনাল থেকে মাত্র ১০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে নাটোরের নিমতলার মিষ্টির দোকানগুলোয় অথবা লালবাজার, কালীবাড়ীর মিষ্টির দোকানে যাওয়া যায়। আর অটোবাইকে মাত্র পাঁচ টাকা ভাড়া।
লেখা ও ছবি : রেজাউল করিম রেজা
নাটোরের লালবাজারের কালীবাড়ীর কাঁচাগোল্লা তৈরিতে সুনাম আছে। দ্বারিক ভাণ্ডার, জয়কালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও নিমতলার মৌচাক কাঁচাগোল্লার জন্য খ্যাত। নাটোরের সব দোকানেই কাঁচাগোল্লা পাওয়া যায়। ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। নাটোর বাসটার্মিনাল থেকে মাত্র ১০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে নাটোরের নিমতলার মিষ্টির দোকানগুলোয় অথবা লালবাজার, কালীবাড়ীর মিষ্টির দোকানে যাওয়া যায়। আর অটোবাইকে মাত্র পাঁচ টাকা ভাড়া।
লেখা ও ছবি : রেজাউল করিম রেজা
প্রেমিককে উচ্ছৃক্সখল জীবন থেকে ফেরাতে গিয়ে খুন হন সারিমা
প্রেমিক সৌরভকে উচ্ছৃক্সখল জীবন থেকে সরিয়ে আনতে গিয়ে নিজেই চিরবিদায় নিলেন ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্রী সারিমা রহমান মৃধাত। পুলিশের কাছে আটক ঘাতক সৌরভের বন্ধু ইশতিয়াক এ তথ্য দিয়েছে। মৃধাত হত্যাকাণ্ডের পর দুই দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও ঘটনার মূল নায়ক এসএম তোহা সৌরভকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এস আই মোহাম্মদ মোহসীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'মৃধাতের ঘাতক সৌরভকে গ্রেফতার করতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে। আশা করছি আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে সৌরভকে গ্রেফতার করতে পারব বলে আশা করছি।
মৃধাত ও সৌরভের কয়েকজন বন্ধু জানান, দীর্ঘ সাত বছর ধরে সৌরভ এবং মৃধাতের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। সৌরভ এইচএসসিতে ফেল করলে সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে উচ্ছৃক্সখল জীবনযাপন শুরু করে। মৃধাত তাকে এ জীবনযাপন থেকে সরিয়ে আনতে বারবার চেষ্টা করলেও সৌরভ সরে আসেনি। একসময় মৃধাত সৌরভের জীবন থেকে সরে আসে। তাই ক্ষুব্ধ সৌরভ তাকে হত্যা করে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে প্রেমিকের হাতে খুন হলেন ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সারিমা রহমান মৃধাত (১৯)। গতকাল বিকাল সাড়ে পাঁচটায় নগরীর আমিরবাগ আবাসিক এলাকার একটি বাসার ছাদে ছুরিকাঘাত করে তাকে খুন করল প্রেমিক সৌরভ। এ ঘটনায় সৌরভের বন্ধু সাফায়াত ইশতিয়াককে আটক করেছে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে জানা গেছে, সারিমা রহমান মৃধাত নগরীর স্বনামখ্যাত গাইনি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহনাজ আহমেদ ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এম রহমানের মেয়ে। সাত বছর ধরে নগরীর বায়েজীদ এলাকার সৌরভ নামের এক যুবকের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। কিন্তু ইদানীং সৌরভ উচ্ছৃক্সখল হয়ে যাওয়ায় দুজনের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। গতকাল ছিল আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের সম্পর্কের ইতি টানার দিন। এ অবস্থায় বিকালে সৌরভ মৃধাতকে ফোন করে আমিরবাগ আবাসিক এলাকায় আসতে বলে। পাঁচটার দিকে মৃধাত বান্ধবী তাসরিয়াকে নিয়ে সৌরভের সঙ্গে দেখা করতে এলে সৌরভ ইশতিয়াককে নিয়ে আইডিয়াল হাউস নামের একটি বাড়ির ছাদে নিয়ে যায় মৃধাত ও তাসরিয়াকে। এই বাড়িতেই ভাড়ায় থাকে ইশতিয়াকদের পরিবার। ছাদে যাওয়ার পর তাসরিয়া ও ইশতিয়াক এক পাশে এবং অন্য পাশে মৃধাত ও সৌরভ কথা বলছিল। একপর্যায়ে সৌরভ উত্তেজিত হয়ে মৃধাতকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাসরিয়া ও ইশতিয়াক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আমেনা বেগম সৌরভের বন্ধু ইশতিয়াককে হাসপাতাল থেকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। এ ব্যাপারে রাত পৌনে নয়টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং সৌরভকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া কোতোয়ালি থানায় এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি জানান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এস আই মোহাম্মদ মোহসীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'মৃধাতের ঘাতক সৌরভকে গ্রেফতার করতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে। আশা করছি আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে সৌরভকে গ্রেফতার করতে পারব বলে আশা করছি।
মৃধাত ও সৌরভের কয়েকজন বন্ধু জানান, দীর্ঘ সাত বছর ধরে সৌরভ এবং মৃধাতের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। সৌরভ এইচএসসিতে ফেল করলে সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে উচ্ছৃক্সখল জীবনযাপন শুরু করে। মৃধাত তাকে এ জীবনযাপন থেকে সরিয়ে আনতে বারবার চেষ্টা করলেও সৌরভ সরে আসেনি। একসময় মৃধাত সৌরভের জীবন থেকে সরে আসে। তাই ক্ষুব্ধ সৌরভ তাকে হত্যা করে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে প্রেমিকের হাতে খুন হলেন ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সারিমা রহমান মৃধাত (১৯)। গতকাল বিকাল সাড়ে পাঁচটায় নগরীর আমিরবাগ আবাসিক এলাকার একটি বাসার ছাদে ছুরিকাঘাত করে তাকে খুন করল প্রেমিক সৌরভ। এ ঘটনায় সৌরভের বন্ধু সাফায়াত ইশতিয়াককে আটক করেছে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে জানা গেছে, সারিমা রহমান মৃধাত নগরীর স্বনামখ্যাত গাইনি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহনাজ আহমেদ ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এম রহমানের মেয়ে। সাত বছর ধরে নগরীর বায়েজীদ এলাকার সৌরভ নামের এক যুবকের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। কিন্তু ইদানীং সৌরভ উচ্ছৃক্সখল হয়ে যাওয়ায় দুজনের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। গতকাল ছিল আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের সম্পর্কের ইতি টানার দিন। এ অবস্থায় বিকালে সৌরভ মৃধাতকে ফোন করে আমিরবাগ আবাসিক এলাকায় আসতে বলে। পাঁচটার দিকে মৃধাত বান্ধবী তাসরিয়াকে নিয়ে সৌরভের সঙ্গে দেখা করতে এলে সৌরভ ইশতিয়াককে নিয়ে আইডিয়াল হাউস নামের একটি বাড়ির ছাদে নিয়ে যায় মৃধাত ও তাসরিয়াকে। এই বাড়িতেই ভাড়ায় থাকে ইশতিয়াকদের পরিবার। ছাদে যাওয়ার পর তাসরিয়া ও ইশতিয়াক এক পাশে এবং অন্য পাশে মৃধাত ও সৌরভ কথা বলছিল। একপর্যায়ে সৌরভ উত্তেজিত হয়ে মৃধাতকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাসরিয়া ও ইশতিয়াক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আমেনা বেগম সৌরভের বন্ধু ইশতিয়াককে হাসপাতাল থেকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। এ ব্যাপারে রাত পৌনে নয়টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং সৌরভকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া কোতোয়ালি থানায় এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি জানান।
রকীয়ার বলি হলেন সোমা
'প্রেমিকা জেসমিন। সঙ্গে ১০ লাখ টাকার ব্যাগ। দুটোই এক সঙ্গে পেতে চেয়েছিলাম। বিভোর ছিলাম জেসমিনকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্নে। এত বড় সুযোগ পেয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারিনি। রাজি হই জেসমিনের কথায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে যাই প্রেমিকা জেসমিনের বর্তমান কর্মস্থল দক্ষিণ বনশ্রীর বাসায়। শ্বাসরোধ করে খুন করি গৃহকত্র্রী সোমা আক্তার সুমিকে। গতকাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা জানিয়েছে গৃহপরিচারিকা জেসমিনের প্রেমিক রহমতউল্লাহ। গৃহপরিচারিকা জেসমিনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত বৃহস্পতিবার ১২/২/১ নম্বর শ্যামলী থেকে পুলিশ রহমতউল্লাহকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যে আদাবরে একটি বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ব্যাগটি উদ্ধার করে পুলিশ। রহমতউল্লাহ জানায়, গত ছয় মাস আগে মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মাহফুজ উল্লাহর বাসায় বদলি গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করার সময় জেসমিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই বাসায় জেসমিন তিন বছর ধরে গৃহপরিচারিকার কাজ করত। পরিচয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে দুইজনই ওই বাসা থেকে চাকরি ছেড়ে দিলেও তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। প্রায়ই তারা গোপনে মিলিত হতো। তবে সোমাকে খুন করার পর সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ট্রাভেল ব্যাগে কোনো টাকা পায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গৃহপরিচারিকা জেসমিনের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডতে। ছয় বছর আগে আবদার আলী নামের এক রিকশাওয়ালাকে বিয়ে করে। তাদের এক বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তবে তার স্বামী বাচ্চাকে নিয়ে হরিণাকুণ্ডতেই থাকে।
তদন্ত কর্মকর্তারা আরও জানান, এক পরকীয়াকে বাস্তবে রূপ ও অন্য পরকীয়াকে নিশ্চিহ্ন করতেই খুন হন গৃহবধূ সোমা। ১১ অক্টোবর দক্ষিণ বনশ্রীর এফ ব্লকের ১০/৬ নম্বর রোডের ১১১ নম্বর বাড়ির চারতলায় মালিক নাদিরা বেগমের বাসায় সোমাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সোমার বাসার গৃহপরিচারিকা জেসমিন বেগমকে। মিশন সফল হলে তাকে ১ লাখ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেন নাদিরা বেগম। ওই বৈঠকে নাদিরার ভাগ্নে দ্বীপও উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, ঘরে ঢুকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখে কাপড় ঢুকিয়ে সোমার হাত-পা বেঁধে ফেলে রহমত। ওই সময় সোমা খাটে শুয়েছিলেন। পাশের আরেকটি খাটে ছিলেন সোমার প্রতিবন্ধী ছেলে নকিব। একপর্যায়ে সোমাকে লাথি দিয়ে খাট থেকে ফেলে দেয় জেসমিন। পরে দুইজনে মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর ট্র্যাভেল ব্যাগটি নিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় রহমত।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, একই বাসায় থাকার সুবাদে 'চাঁদ নুর ভবন'- এর মালিক নাদিরা বেগমের বোনের ছেলে দ্বীপ প্রায় একবছর ধরে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে নিচতলার ভাড়াটিয়া গৃহবধূ সোমার সঙ্গে। তবে সম্প্রতি দ্বীপ লন্ডন প্রবাসী এক মেয়েকে বিয়ে করে। এরপর কয়েকদফা সোমাকে বাসা ছেড়ে দিতে বলে নাদিরা। তবে সোমা তার কথায় কর্ণপাত করেনি। মানসিকভাবে অসুস্থ সোমা যেকোনো সময় তাদের সম্পর্ক ফাঁস করে দিলে দ্বীপের বিয়ে ভেঙে যেতে পারে_ এমন আশঙ্কায় সোমাকে খুন করা হয়। তবে মিশন শেষ করার পর নাদিরা জেসমিনকে কোনো টাকা দেননি বলে জানিয়েছে জেসমিন। খিলগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজিজুর রহমান জানান, ঘটনার রহস্য পরিপূর্ণভাবে উদঘাটিত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নিহত গৃহবধূ সোমার স্বামী রানার কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। পরকীয়ার সম্পর্ক ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছিল নাদিরা ও তার বোনের ছেলে দ্বীপ।
প্রসঙ্গত ১৫ অক্টোবর রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর এফ ব্লকের সাত নম্বর সড়কের ১১১ নম্বর বাসা থেকে পুলিশ গৃহবধূ সোমার লাশ উদ্ধার করে। ওই দিন রাতেই নিহতের ভাই মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই পুলিশ সোমার স্বামী মাহফুজুর রহমান রানা ও গৃহকর্মী জেসমিনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে। পরে ১৯ অক্টোবর বাড়িওয়ালা নাদিরা খন্দকার ও দ্বীপকে গ্রেফতার করে খিলগাঁও থানা পুলিশ।
**সাখাওয়াত কাওসার**
তদন্ত কর্মকর্তারা আরও জানান, এক পরকীয়াকে বাস্তবে রূপ ও অন্য পরকীয়াকে নিশ্চিহ্ন করতেই খুন হন গৃহবধূ সোমা। ১১ অক্টোবর দক্ষিণ বনশ্রীর এফ ব্লকের ১০/৬ নম্বর রোডের ১১১ নম্বর বাড়ির চারতলায় মালিক নাদিরা বেগমের বাসায় সোমাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সোমার বাসার গৃহপরিচারিকা জেসমিন বেগমকে। মিশন সফল হলে তাকে ১ লাখ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেন নাদিরা বেগম। ওই বৈঠকে নাদিরার ভাগ্নে দ্বীপও উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, ঘরে ঢুকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখে কাপড় ঢুকিয়ে সোমার হাত-পা বেঁধে ফেলে রহমত। ওই সময় সোমা খাটে শুয়েছিলেন। পাশের আরেকটি খাটে ছিলেন সোমার প্রতিবন্ধী ছেলে নকিব। একপর্যায়ে সোমাকে লাথি দিয়ে খাট থেকে ফেলে দেয় জেসমিন। পরে দুইজনে মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর ট্র্যাভেল ব্যাগটি নিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় রহমত।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, একই বাসায় থাকার সুবাদে 'চাঁদ নুর ভবন'- এর মালিক নাদিরা বেগমের বোনের ছেলে দ্বীপ প্রায় একবছর ধরে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে নিচতলার ভাড়াটিয়া গৃহবধূ সোমার সঙ্গে। তবে সম্প্রতি দ্বীপ লন্ডন প্রবাসী এক মেয়েকে বিয়ে করে। এরপর কয়েকদফা সোমাকে বাসা ছেড়ে দিতে বলে নাদিরা। তবে সোমা তার কথায় কর্ণপাত করেনি। মানসিকভাবে অসুস্থ সোমা যেকোনো সময় তাদের সম্পর্ক ফাঁস করে দিলে দ্বীপের বিয়ে ভেঙে যেতে পারে_ এমন আশঙ্কায় সোমাকে খুন করা হয়। তবে মিশন শেষ করার পর নাদিরা জেসমিনকে কোনো টাকা দেননি বলে জানিয়েছে জেসমিন। খিলগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজিজুর রহমান জানান, ঘটনার রহস্য পরিপূর্ণভাবে উদঘাটিত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নিহত গৃহবধূ সোমার স্বামী রানার কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। পরকীয়ার সম্পর্ক ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছিল নাদিরা ও তার বোনের ছেলে দ্বীপ।
প্রসঙ্গত ১৫ অক্টোবর রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রীর এফ ব্লকের সাত নম্বর সড়কের ১১১ নম্বর বাসা থেকে পুলিশ গৃহবধূ সোমার লাশ উদ্ধার করে। ওই দিন রাতেই নিহতের ভাই মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই পুলিশ সোমার স্বামী মাহফুজুর রহমান রানা ও গৃহকর্মী জেসমিনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে। পরে ১৯ অক্টোবর বাড়িওয়ালা নাদিরা খন্দকার ও দ্বীপকে গ্রেফতার করে খিলগাঁও থানা পুলিশ।
**সাখাওয়াত কাওসার**
Friday, October 22, 2010
রেড ইন্ডিয়ান
রকি পর্বতে বসবাসরত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসীদের বলা হয় রেড ইন্ডিয়ান। ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ সালে উত্তর আমেরিকা আবিষ্কার করেন। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারেরও কয়েক হাজার বছর আগে রেড ইন্ডিয়ান আদিবাসী রকি পর্বতে বসবাস করত। তবে ১৪৯৮ সালের আগে এই আদিবাসীদের রেড ইন্ডিয়ান বলা হতো না। তখন তাদের পিরু বলে সম্বোধন করা হতো। ১৪৯৮ সাল-পরবর্তী এদের নাম দেওয়া হয় রেড ইন্ডিয়ান। এত নাম থাকতে কেন এদের রেড ইন্ডিয়ান বলা হয়? এ নিয়ে একটি ছোট্ট কাহিনী আছে। কলম্বাস আমেরিকার আবিষ্কার করার সময় ১৪৯৩ সালে সর্বপ্রথম উত্তর আমেরিকা মহাদেশের এন্টিগুয়ার বারমুডায় পেঁৗছান। তিনি এভাবে বাহামা, ডোমিনিকান ইত্যাদি অঞ্চল ঘুরে দেখেন এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের রকি পর্বতে গিয়ে পেঁৗছান। তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন ফর্সা, নাক চ্যাপ্টা লোকজনের বাস। সেখানকার মাটি লাল। তিনি অনেক পর্যালোচনা করে এ অঞ্চলের আদিবাসীদের নাম দেন লাল মানুষ বা রেড ম্যান। পরবর্তীতে উত্তর আমেরিকার কতগুলো ক্ষুদ্র রাষ্ট্র নিয়ে ওয়েস্টইন্ডিজ গঠিত হলে রকি পর্বতের লোকদের নামকরণ করা হয় রেড ইন্ডিয়ান বা লাল ভারতীয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের রকি পর্বতে নয়, ডোমিনিকান রিপাবলিক, এল সালভাদর, গ্রানাডা এমনকি কিউবাতেও রেড ইন্ডিয়ানরা বসবাস করে। আমেরিকার সাধারণ জনগণের মতো এরাও রাজনীতি করে, ধর্ম পালন করে এবং যেকোনো ইস্যুতে একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ঐতিহ্যগতভাবে এরা শিকার সংগ্রহ করে জীবনযাপন করত। তবে আধুনিক আমেরিকানদের মতো এরাও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন চাকরি করে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। রেড ইন্ডিয়ান আদিবাসীরা নানা ধরনের ভাষা ব্যবহার করে। যেমন : সাইয়ান, নাহুয়াট, ইংরেজি ইত্যাদি। অধিকাংশ রেড ইন্ডিয়ান খ্রিস্টান ধর্মানুসারী হলেও সনাতন ধর্মেরও রয়েছে। তবে এদের মধ্যে ধর্মের কোনো মতবিরোধ নেই। আমেরিকান ইতিহাসবিদরা মনে করেন, প্রাচীন পালইও ইন্ডিয়ান জাতি থেকে রেড ইন্ডিয়ান জাতির উদ্ভব। প্রায় ১৬ হাজার বছরের পুরনো এই জাতি আমেরিকার ঐতিহ্য রক্ষায় বদ্ধপরিকর। রেড ইন্ডিয়ান শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয় আমেরিকা মহাদেশেরও প্রাচীন জাতি হিসেবে স্বীকৃত।
-রিয়াজুল ইসলাম
-রিয়াজুল ইসলাম
অ্যাটম বোমার পিছনের নারী
জাপানের 'হিরোসিমা' ও 'নাগাসাকি' শহরের ধ্বংসের কথা কে না শুনেছে। যেখানে ফেলা হয়েছিল অ্যাটম বোমা। আর বিস্ময়কর শক্তিশালী এই অ্যাটম বোমার ধ্বংসাত্মক রূপ দেখে শিউরে উঠে সবার হৃদয়। যা অবাক করেছে পুরো বিশ্বকে। আর এই অ্যাটম বোমা তৈরিতে যার অবদান সবচেয়ে বেশি। তিনি একজন নারী। অস্ট্রিয়ার ইহুদি লিজে মাইটনারের জন্ম ১৮৭৮ সালে। বাবা ছিলেন ভিয়েনিজ আইনজীবী, সংস্কৃতিমনা। লিজে মাইটনারের আদর্শ ছিলেন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী মেরী ক্যুরি। ইউরোপের সর্বশ্রেষ্ঠ এই মহিলা বিজ্ঞানীর সংস্পর্শে এসে তার অধীনে গবেষণা করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। এরপর লিজে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এর কাছে পড়াশোনা করার উদ্দেশে বার্লিনে যাওয়ার অনুমতি চাইলে বাবা অনুমতি দিলেন। বার্লিনে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের কাছে পড়াশোনা করার উদ্দেশ্যে বার্লিনে যাওয়ার অনুমতি চাইলে বাবা অনুমতি দিলেন। বার্লিনে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের কাছে অধ্যয়ন করে তিনি যথেষ্ট জ্ঞানার্জন করলে। এরপর সহকর্মী অটোহান্ এর সঙ্গে যুগ্মভাবে গবেষণা চালালেন প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা সম্বন্ধে। এ গবেষণার ফলে আবিষ্কৃত হলো 'প্রটোঅ্যাকটিনিয়াম' নামক এক তেজস্ক্রিয়া মৌলের। এরপর লিজে রেডিয়াম, থোরিয়াম এবং তাদের তেজস্ক্রিয় বিভাজনজাত পদার্থ নিয়ে গবেষণা চালালেন। বিটা রশ্মির প্রকৃতি এবং পরমাণু নিউক্লিয়াস সম্পর্কিত পদার্থ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তার গবেষণা সমসাময়িক গবেষকদের প্রেরণা জোগাল। ১৯৩০ সালের পর বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলের দৃষ্টি নিবন্ধ হলো ইউরেনিয়াম মৌলটির ওপর। ১৯৩৪ সালে এনরিকো ফার্সি ইউরেনিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসে আঘাত হানলেন নিউট্রন কণার দ্বারা। এ ফলে জন্ম নিল নতুন মৌল 'নেপচুনিয়াম'। অতি সামান্য ভর থেকে অসম শক্তি আহরণের তাত্তি্বক পথ দেখিয়েছেন মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন। পরমাণু বিভাজনের দ্বারাই অসম শক্তি আহরণ করা সম্ভব এটা বুঝতে পেরে বিজ্ঞানীরা চালিয়ে যাচ্ছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। বার্লিনে লিজে মাইটনার ও এ বিষয়ে মনোনিবেশ করেছেন। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে তার কাজ। এক মুহূর্তও নষ্ট করার মতো সময় নেই। সহকর্মী অটোহান্ এবং ফ্রেডারিক স্টাসম্যানের সহযোগিতায় লিজে মাইটনার উদ্ভাবন করলেন অতি সংবেদনশীল 'পরিমাণবিক মাইক্রোসকোপ' যন্ত্র। এ যন্ত্রের সাহায্যে সূক্ষ্ম রাসায়নিক ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হলো। এরপর ধীরগতি সম্পন্ন নিউট্রন কণার সাহায্যে ইউনিয়ামের নিউক্লিয়াসকে আঘাত হেনে তারা এক নতুন মৌল বেরিয়ামের সন্ধান পেলেন।
এ গবেষণা আরো চালিয়ে যাওয়া কিছুকাল বন্ধ রাখতে হলো। কেননা জার্মানদের ইহুদি বিদ্বেষ তখন চরমে উঠেছে। ইহুদি লিজে মাইটনার তখন বার্লিনের 'কাইজার উইলহেল্ম ইনস্টিটিউট-এর পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধানরূপে কাজ করছিলেন। জার্মানির রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে অসুবিধা হলো না এ প্রতিভাময়ী মহিলার। তিনি বুঝতে পারলেন তার গ্রেফতার আসন্ন। আসলে নাজি পুলিশ বাহিনী তখন তাকে খুঁজছে গ্রেফতারের জন্য। আর গ্রেফতার হলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। এটা অনুমান করে লিজে তার জামাকাপড় সুটকেশে ভরে এক সপ্তার ছুটি কাটাবার নাম করে ট্রেন যোগে হল্যান্ড অভিমুখে রওনা হলেন। সেখান থেকে গোপনে পালিয়ে গেলেন স্টকহোমে। এই মহিলা বিজ্ঞানীরা জার্মানি থেকে পশ্চিমা দেশে অন্তর্ধান, পশ্চিমী দেশগুলোরর পক্ষে শাপে বর হল; কেননা তার পরবর্তী জীবনের গবেষণা এনরিকো ফার্মির পরমাণু তত্ত্বকে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করলো। আর পরমাণু বোমা বানানোর দুরন্ত প্রতিযোগিতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানিকে পরাস্ত করতে সক্ষম হলো।
এরপর লিজে কোপেনহেগেনে তার ভাইপো অটো ফ্রিশের কাছে গেলেন। অটো ফ্রিশ তখন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী নীল্স বোরের সঙ্গে গবেষণা করছেন। এদিকে হানও স্ট্রাসম্যান লিজের অসমাপ্ত গবেষণা সম্পন্ন করতে লাগলেন। আর তার ফলাফল নিয়মিত জানাতে লাগলেন লিজকে।
২৩৮ এর বিশিষ্ট ইউরেনিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসে এই দুই জার্মান বিজ্ঞানী পারমাণবিক গুরুত্ব সম্পন্ন দুটি মৌলের সন্ধান-পেলেন। ইউরেনিয়াম পরমাণু বিভাজন হলেও হান ও স্টাসম্যান তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ঠিকমতো দিতে পারলেন না। তখন লিজে মাইটনার আবার শুরু করলেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এ পরীক্ষায় লিজে দেখলেন ইউরেনিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াস তৈরি হয়েছে বেরিয়াম ও ক্রিমট্রন মৌলের দুটি নিউক্লিয়াস এবং এই সময় মুক্তি পেয়েছে প্রচণ্ড শক্তি।
১৯৩৯ সালে লিজে মাইটনার ব্রিটিশ বিজ্ঞান পত্রিকা 'নেচার'-এ এই পরীক্ষার বিবরণ প্রকাশ করলেন। এভাবে শক্তির উদ্ভব ঘটানোর এ প্রক্রিয়ার নাম দিলেন তিনি 'ফিসন'। এ প্রবন্ধ পড়ামাত্রই বিখ্যাত ভ্যানিস পদার্থবিজ্ঞানী নীলস্ বোর ছুটে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে আলবার্ট আইনস্টাইন ও এনরিকো ফার্সির সঙ্গে পরামর্শ করতে। আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টকে লিজে মাইটনারের গবেষণার বিষয়বস্তু ও ফলাফল সম্পর্কে জানানো হলো। রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টের আদেশে আমেরিকায় 'ম্যানহাট্রান প্রজেক্ট' গড়ে তোলা হলো পরমাণু বোমা তৈরির জন্য। তৈরি হলো 'অ্যাটম বোম'। জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকি শহর দু'টির উপর যখন সেই অ্যাটম বোমা ফেলা হলো তখন মানুষ জানতে পারল এই বোমা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী লিজে মাইটারের অবদান কতটুকু। লিজে মাইটনার এমন এক মারাত্মক অস্ত্র প্রস্তুতের সঙ্গে নিজের নাম যুক্ত হওয়ায় দারুণ অস্বস্তিবোধ করলেন।
তিনি বললেন, 'অ্যাটম বোম প্রস্তুতির মধ্য দিয়েই হয়তো ভবিষ্যতে বিশ্বে ভয়াবহ যুদ্ধ বন্ধের সূচনা ঘটবে এবং মানবকল্যাণে পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগিয়েই মানুষ হয়তো অ্যাটম বোমার মতো মারাত্মক অস্ত্র তৈরির মতো পাপ কাজের প্রায়শ্চিত্ত করবে।
-লায়লা হাসিনা
এ গবেষণা আরো চালিয়ে যাওয়া কিছুকাল বন্ধ রাখতে হলো। কেননা জার্মানদের ইহুদি বিদ্বেষ তখন চরমে উঠেছে। ইহুদি লিজে মাইটনার তখন বার্লিনের 'কাইজার উইলহেল্ম ইনস্টিটিউট-এর পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধানরূপে কাজ করছিলেন। জার্মানির রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতে অসুবিধা হলো না এ প্রতিভাময়ী মহিলার। তিনি বুঝতে পারলেন তার গ্রেফতার আসন্ন। আসলে নাজি পুলিশ বাহিনী তখন তাকে খুঁজছে গ্রেফতারের জন্য। আর গ্রেফতার হলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। এটা অনুমান করে লিজে তার জামাকাপড় সুটকেশে ভরে এক সপ্তার ছুটি কাটাবার নাম করে ট্রেন যোগে হল্যান্ড অভিমুখে রওনা হলেন। সেখান থেকে গোপনে পালিয়ে গেলেন স্টকহোমে। এই মহিলা বিজ্ঞানীরা জার্মানি থেকে পশ্চিমা দেশে অন্তর্ধান, পশ্চিমী দেশগুলোরর পক্ষে শাপে বর হল; কেননা তার পরবর্তী জীবনের গবেষণা এনরিকো ফার্মির পরমাণু তত্ত্বকে ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করলো। আর পরমাণু বোমা বানানোর দুরন্ত প্রতিযোগিতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানিকে পরাস্ত করতে সক্ষম হলো।
এরপর লিজে কোপেনহেগেনে তার ভাইপো অটো ফ্রিশের কাছে গেলেন। অটো ফ্রিশ তখন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী নীল্স বোরের সঙ্গে গবেষণা করছেন। এদিকে হানও স্ট্রাসম্যান লিজের অসমাপ্ত গবেষণা সম্পন্ন করতে লাগলেন। আর তার ফলাফল নিয়মিত জানাতে লাগলেন লিজকে।
২৩৮ এর বিশিষ্ট ইউরেনিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসে এই দুই জার্মান বিজ্ঞানী পারমাণবিক গুরুত্ব সম্পন্ন দুটি মৌলের সন্ধান-পেলেন। ইউরেনিয়াম পরমাণু বিভাজন হলেও হান ও স্টাসম্যান তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ঠিকমতো দিতে পারলেন না। তখন লিজে মাইটনার আবার শুরু করলেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এ পরীক্ষায় লিজে দেখলেন ইউরেনিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াস তৈরি হয়েছে বেরিয়াম ও ক্রিমট্রন মৌলের দুটি নিউক্লিয়াস এবং এই সময় মুক্তি পেয়েছে প্রচণ্ড শক্তি।
১৯৩৯ সালে লিজে মাইটনার ব্রিটিশ বিজ্ঞান পত্রিকা 'নেচার'-এ এই পরীক্ষার বিবরণ প্রকাশ করলেন। এভাবে শক্তির উদ্ভব ঘটানোর এ প্রক্রিয়ার নাম দিলেন তিনি 'ফিসন'। এ প্রবন্ধ পড়ামাত্রই বিখ্যাত ভ্যানিস পদার্থবিজ্ঞানী নীলস্ বোর ছুটে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে আলবার্ট আইনস্টাইন ও এনরিকো ফার্সির সঙ্গে পরামর্শ করতে। আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টকে লিজে মাইটনারের গবেষণার বিষয়বস্তু ও ফলাফল সম্পর্কে জানানো হলো। রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টের আদেশে আমেরিকায় 'ম্যানহাট্রান প্রজেক্ট' গড়ে তোলা হলো পরমাণু বোমা তৈরির জন্য। তৈরি হলো 'অ্যাটম বোম'। জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকি শহর দু'টির উপর যখন সেই অ্যাটম বোমা ফেলা হলো তখন মানুষ জানতে পারল এই বোমা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী লিজে মাইটারের অবদান কতটুকু। লিজে মাইটনার এমন এক মারাত্মক অস্ত্র প্রস্তুতের সঙ্গে নিজের নাম যুক্ত হওয়ায় দারুণ অস্বস্তিবোধ করলেন।
তিনি বললেন, 'অ্যাটম বোম প্রস্তুতির মধ্য দিয়েই হয়তো ভবিষ্যতে বিশ্বে ভয়াবহ যুদ্ধ বন্ধের সূচনা ঘটবে এবং মানবকল্যাণে পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগিয়েই মানুষ হয়তো অ্যাটম বোমার মতো মারাত্মক অস্ত্র তৈরির মতো পাপ কাজের প্রায়শ্চিত্ত করবে।
-লায়লা হাসিনা
মৌলভীবাজার
দেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত চা-বাগান-খ্যাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলা। পাহাড়ের গায়ে ঢেউ খেলানো বাগানের নৈসর্গিক সৌন্দর্য রয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়। আরো আছে দেশের একমাত্র জলপ্রপাত, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত।
নামকরণের ইতিহাস
১৮১০ সালে মৌলভী সৈয়দ কুদরত উলস্নাহ মনু নদীর পশ্চিম তীরে জনসাধারণের সুবিধার্থে নিজস্ব মিরাসদারিভুক্ত জমির উপর একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রতিষ্ঠিত বাজারটি মৌলভী সাহেবের বাজার নামে পরিচিতি লাভ করে। যা পরবতর্ীতে মৌলভীবাজার নামে পরিচিত হয়।
আয়তন ও অবস্থান
আয়তনের ভিত্তিতে মৌলভীবাজার বাংলাদেশের ২০তম বৃহত্তম জেলা। মৌলভীবাজার জেলার মোট আয়তন ২৭৯৯.৩৯ বর্গ কি.মি. যা সমগ্র বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১.৮৮%। ভৌগোলিকভাবে জেলাটি ২৪০০৮ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৪০৩৯ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১০৩৬ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯২০১৭ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এই জেলার উত্তরে সিলেট জেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলা।
প্রশাসনিক পটভূমি
সিলেট সদর মহকুমা অত্যধিক বড় বিবেচনায় ১৮৮২ সালের ১ এপ্রিল সদর মহকুমাকে ভাগ করে উত্তর সিলেট মহকুমা হিসেবে ভাগ করা হয়। ১৯৬০ সালে দক্ষিণ সিলেটের নাম পরিবর্তন করে মৌলভীবাজার রাখা হয়। সরকারের ব্যাপক প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের আওতায় মৌলভীবাজার জেলা ১৯৮৪ সালে জেলার মর্যাদা পায়। বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলায় ৭টি উপজেলা, ৬৭টি ইউনিয়ন ও ২১৩৪টি গ্রাম রয়েছে।
উপজেলার মধ্যে রয়েছে মৌলভীবাজার সদর, শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, কুলাউড়া, বড়লেখা, কমলগঞ্জ ও জুড়ি।
নদ-নদী :ধলাই, মনু, জুড়ি। এছাড়া মৌলভীবাজারে রয়েছে অনেক হাওড়। যেমন_হাকালুকি, হাইল, কাউয়াদিঘি।
জলবায়ু : সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩০.২০ সে. এবং সর্বনিম্ন ১৩.১০ সে,। বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৩৩৩৪ মি.মি.।
দর্শনীয় স্থানসমূহ :
খোয়াজ মসজিদ (অষ্টাদশ শতাব্দী, বড়লেখা), মাধবমন্দির, রঙ্গিরকূল বিদ্যাশ্রম (উনবিংশ শতাব্দী, কুলাউড়া), পৃথি্বম পাশার নবাববাড়ি (অষ্টাদশ শতাব্দী), খোজার মসজিদ (চতুর্দশ শতাব্দী), অজ্ঞান ঠাকুরের মন্দির, নিমাই শিববাড়ি (১৪৫৪), মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, ব্রাহ্মণগাঁয়ের কাজী খন্দকার (র.)-এর মাজারের গায়েবি ইটের মসজিদ, চাঁনগ্রাম দীঘি (কুলাউড়া), চা-বাগান ও হাকালুকি হাওড়।
যোগাযোগ ব্যবস্থা :ঢাকা থেকে সড়কপথে বাসে সরাসরি মৌলভীবাজার যাওয়া যায়। শ্যামলী, হানিফ প্রভৃতি পরিবহনে মৌলভীবাজার যাওয়া যায়। এছাড়া আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস কিংবা জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে শ্রীমঙ্গল নেমে এরপর বাস ধরে মৌলভীবাজার যাওয়া যায়।
ওকিনাওয়া
এটি প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর অবস্থিত একটি দ্বীপ। এটি জাপান থেকে প্রায় ৩০০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। এ দ্বীপটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছিলো। কিন্তু জাপান সরকার এ দ্বীপের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং হস্তান্তরের ব্যাপারে চাপ দেয়। অতঃপর ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের নিকট এ দ্বীপটি হস্তান্তর করে।
সেন্ট হেলেনা
আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপের নাম সেন্ট হেলেনা। এটি আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল হতে ১২০০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত। এর রাজধানীর নাম জেমসটাউন। আয়তন ৪৭ বর্গমাইল। এটি ব্রিটিশ কলোনি হিসেবে পরিচিত। নেপোলিয়ান বনাপোর্টকে এ স্থানে নির্বাসন দেয়া হয় এবং এখানে, তার মৃতু্য হয়।
সেন্ট হেলেনা
আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপের নাম সেন্ট হেলেনা। এটি আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল হতে ১২০০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত। এর রাজধানীর নাম জেমসটাউন। আয়তন ৪৭ বর্গমাইল। এটি ব্রিটিশ কলোনি হিসেবে পরিচিত। নেপোলিয়ান বনাপোর্টকে এ স্থানে নির্বাসন দেয়া হয় এবং এখানে, তার মৃতু্য হয়।
এন্টার্কটিকা
প্রায় সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন বর্গমাইল আয়তনের এন্টার্কটিকা মহাদেশের পুরোটাই বরফে ঢাকা রয়েছে। স্থান বিশেষে এই বরফের পুরুত্ব কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। পানির ওপর ভেসে থাকা বরফের পাহাড়ের কারণেই অন্য যে কোনো মহাদেশের তুলনায় দক্ষিণ মেরুর গড় উচ্চতা বেশি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও এর ফলে সম্ভাব্য জলবায়ু পরিবর্তনে দরুন ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এসব বরফখণ্ড গলতে শুরু করেছে। আর এর ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এরচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে যদি সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সমুদ্রের পানির উষ্ণতা যদি বর্তমানের চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায়, তাহলে এন্টার্কটিকার বিশাল বরফ সাম্রাজ্যে নেমে আসবে ধস। অর্থাৎ পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সেখানে যেসব বরফের পাহাড় রয়েছে সেগুলো গলতে শুরু করবে এবং এক পর্যায়ে পশ্চিম এন্টার্কটিকার বিরাট অংশ পানিতে তলিয়ে যাবে। গবেষকরা আরো জানিয়েছেন, যদি এরকম ঘটনা ঘটে তবে সারা বিশ্বের সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে ৫ মিটার। এর ফলে সমুদ্রের উপকূলবর্তী দেশগুলো ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর আর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, সমুদ্রের তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে হয়তো আরো কয়েক শতাব্দী লেগে যেতে পারে।
এ ক ন জ রে
এন্টার্কটিকা মহাদেশ
আয়তন : ১ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার বর্গ কিমি।
সর্বোচ্চ বিন্দু : ভিন্সন ম্যাজিক (৫১৪০ মিটার)
সর্বনিম্ন বিন্দু : বেন্টলে সাব গস্ন্যাসিয়াল ট্রেঞ্চ (২৫৫৫ মিটার)
জলবায়ু : শৈত্যপ্রবাহ, তুষারঝড়, মেঘময় ও কুয়াশাচ্ছন্ন মেরুদেশীয় আবহাওয়া। বড় বড় বরফখণ্ড বা আইসবার্গ উপকূল অঞ্চলকে ঘিরে রেখেছে।
সক্রিয় আগ্নেয়গিরি : মাউন্ট ইরেবাস
এ ক ন জ রে
এন্টার্কটিকা মহাদেশ
আয়তন : ১ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার বর্গ কিমি।
সর্বোচ্চ বিন্দু : ভিন্সন ম্যাজিক (৫১৪০ মিটার)
সর্বনিম্ন বিন্দু : বেন্টলে সাব গস্ন্যাসিয়াল ট্রেঞ্চ (২৫৫৫ মিটার)
জলবায়ু : শৈত্যপ্রবাহ, তুষারঝড়, মেঘময় ও কুয়াশাচ্ছন্ন মেরুদেশীয় আবহাওয়া। বড় বড় বরফখণ্ড বা আইসবার্গ উপকূল অঞ্চলকে ঘিরে রেখেছে।
সক্রিয় আগ্নেয়গিরি : মাউন্ট ইরেবাস
দেবী বিসর্জনে যান, দানব যায় না...আফজাল হোসেন
পূজার মাতামাতি শেষ হয়ে গেল। ঢাকার চারদিকে ঢাকের বাজনা শেষ। শুক্রবার ভেবেছিলাম, বিকেলবেলায় কোনো পূজা প্যান্ডেলে গেলে হয়। বনানী মাঠের পূজামণ্ডপে ঢুকতে যত লম্বা লাইন দেখলাম, ইচ্ছেকে গুটিয়ে আবার জায়গামতো তুলে রাখতে হলো। গাড়িতে বসে জ্যামের ভেতর দিয়ে এগোতে এগোতে ভাবছিলাম, লাইন ছাড়া উপায় বা কী, লাইনে সবাই ঢুকছে বলে হুলস্থুল নেই, হুটোপুটি নেই, শান্তি আছে।
যখন ছোট ছিলাম, গ্র্রামে পূজার আনন্দ শুরু হয়ে যেত ঠাকুরবাড়িতে প্রতিমা বানানো শুরু হলে। এক এক পাড়ায় তখন এক এক রকম আয়োজন, তবে জমজমাট পূজা হতো বাজারের মণ্ডপে। অন্যগুলোর চেয়ে সেখানকার বৈশিষ্ট্য ছিল, পূজামণ্ডপ ঘিরে বিরাটকায় মেলা বসত। সে মেলা হিন্দু-মুসলমানের মিলিত মেলা ছিল।
ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, আমাদের বাড়ির পাশে মসজিদ, তার ৩০ ফুট দূরে কালীমন্দির। এক একটি শাসনামল এসেছে এবং গেছে, ওই আসা-যাওয়ার মধ্যে খুটখাট এটা-ওটা ঘটেছে, কিন্তু শেষমেশ মসজিদ আর মন্দির পাশাপাশিই দাঁড়িয়ে থেকেছে সগৌরবে।
খুটখাটের কথা বললাম, সেসব সামান্য সংখ্যার একদল মানুষের অভিপ্রায়। লাই পেয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, আবার অদৃশ্য ইশারায় বসে গেছে, শুয়ে গেছে। ওই যে অদৃশ্য ইশারা বললাম, সেটা আসলে স্পষ্ট করে দায়ী পক্ষকে দেখানোর চেষ্টা। আমাদের মধ্যে দায়ী পক্ষকে দেখিয়ে আনন্দিত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে এবং ‘আমি মোটেও দায়ী নই, আমাদের মতো ভালো আর জগতে নেই’ এমন ভেবে আহ্লাদে আটখানা হয়ে শান্তি পাই এক পক্ষ। এ দুটোই যে অশান্তির, সেটা ভেবে দেখার সময় ও সুযোগ কারও হয় না।
ভালো ও মন্দের বসবাস শুধু আমাদের বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীজুড়ে। সেটা থাকুক, মন্দ বিনা ভালোকে আমরা অনুভব করব কীভাবে? ভালোর সঙ্গে থাকাই মানবধর্ম। কিন্তু মানুষের ধর্ম হচ্ছে, নিজের সুবিধা-অসুবিধা, ভালো ও মন্দের সংজ্ঞা নিজেই নির্ধারণ করে নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া। এমন সংজ্ঞামতো, বুশ সাহেব ভাবলেন, তিনি ভালো আর সাদ্দাম লোকটা খুবই মন্দ। নেমে পড়লেন লঙ্কাকাণ্ডে। পৃথিবীর মানুষের জন্য সেটা ভালো হলো না।
এক লাফে অত দূরে না গিয়ে ভাবা যাক নিকট নিয়ে। মন্দ-ভালো নিয়ে আমাদের বিপুল মাথাব্যথা; সুবিধামতো ভালো ও মন্দের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে নিচ্ছি, এতে আত্মতৃপ্তি হচ্ছে, সুখ জুটছে। কিন্তু চোখে দেখতে পাই না, অসুখ ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে। অশান্তি লেজ নাড়িয়ে বলছে, ‘দাঁড়াও, দেখাচ্ছি মজা!’ শান্তি ও সুখের জন্য সর্বদা চোখে পট্টি বেঁধে যে পথটা বেছে নিচ্ছি, সে পথের শেষে আনন্দের অধ্যায় কি পাব?
হিন্দু ও মুসলমান এ বঙ্গে ভাই ভাই কবে ছিল না? সংকটের অনুগল্পগুলো বৃহৎ-দর্শন কাচের নিচে ফেলে দেখে লাভ কাদের? সুখী হয় কারা? প্রগতিশীলতার আচকান পরে সময়মতো দুই ছত্র হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির কথা বলা হলো, তার মধ্যে তিন টেবিল-চামচ সাম্প্রদায়িকতার প্রচ্ছন্ন উসকানি আর এক মুঠো অতীত-বর্তমানের বিশ্লেষণ ঢেলে দিলে হাততালির ঝাঁকুনিতে তা একপক্ষের জন্য বেশ উপাদেয় বলবর্ধক সালসা হয়, কিন্তু তাতে জন্মভূমির মুখে কিন্তু হাসি ফোটে না। দেশমাতার অস্বস্তি কিন্তু এমন পক্ষ-অবলম্বনে ঘোচে না।
ধর্মের প্রসঙ্গ এলে বলা আছে অনেক কিছু। জ্ঞানও তো মানুষকে দেওয়া হয়েছে। একটা কথার মানে জ্ঞান-অনুযায়ী মানুষ অনেক রকম ভেবে নিতে পারে। কিন্তু যে জ্ঞানে, যে অর্থে মনুষ্য সম্প্রদায়ের মঙ্গল হবে না তা জ্ঞান নয়, অন্ধত্ব। যে অর্থ প্রকাশে জীবনে নেমে আসে অনর্থ, তা কি প্রয়োজনহীন নয়?
একটা গল্প বলি, এক বন্ধু গেছেন হজে। মিনাতে গিয়ে লাখ লাখ মানুষের সমুদ্রে পড়ে অভিভূত তিনি। সফেদ ঢেউয়ের মধ্যে ভাসতে ভাসতে নিজের মনে হঠাৎ এক কষ্টের কাঁটার খোঁচা অনুভব করলেন। সাথি ছিলেন ঢাকার বড় এক মসজিদের তরুণ বয়সী ইমাম। তাঁকে প্রশ্ন করলেন বন্ধুটি, ‘ইমাম সাহেব, আমি পুরান ঢাকায় বসবাস ও ব্যবসা করি, সেখানে হিন্দুসম্প্রদায় পূজা-অর্চনা করে। নিজের এলাকায় পূজা হলে প্রতিবেশীরা আপন মনে করে পূজায় চাঁদা দিতে বলে, আমি দিই, মনে কখনো প্রশ্ন জাগেনি। আজ মনে হচ্ছে, আমি কি অন্যায় করেছি?’ একটু সময় নিয়ে ভাবলেন ইমাম সাহেব, তারপর উত্তর করেন, ‘এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর কোথাও লেখা দেখিনি। তবে নিজের জ্ঞানে বলতে পারি, আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৎ পথে, মঙ্গলের পক্ষে থাকতে বলেছেন, মানুষের মঙ্গলকাজে সহায়তা দেওয়া উত্তম কাজ। সে অনুযায়ী আপনি তো মঙ্গলের পথেই রয়েছেন।’ এ ব্যাখ্যায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন সেই বন্ধু।
পশ্চিমবঙ্গে আমার মামাবাড়ি। অনেক পূজা আমি সেখানে কাটিয়েছি। নিজের চোখে দেখেছি, আমার চেয়ে বছর চারেকের বড় আমার ছোট মামা অন্য বন্ধুদের সঙ্গে পূজামণ্ডপে কাঁধে বয়ে প্রতিমা এনে স্থাপন করছেন। দেখেছি, আরতিতে দুর্গাদেবীর সামনে ধুনচি হাতে নিয়ে নাচছেন। বিসর্জনে কাঁধে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রতিমা।
এ গল্পে কারও কারও ভাবার সুযোগ থেকে যায়, সে দেশে মুসলমানদের টিকে থাকার করুণ চিত্র এটা। জোঁকের মুখে নুন দেওয়ার মতো আর একটা সত্য ঘটনা বয়ান করি। ১৯৭১ সালে বড় মামা মহসীন সরদার ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় বড় নেতা। তাঁর বাড়িতে আগুন দিতে মিছিল করে এসেছিল একদল মানুষ। সেই আগুনের সংকল্প ঠেকিয়েছিল আরও একদল মানুষ। উভয়ের ধর্মীয় পরিচয় হিন্দু। কিন্তু সে বিবেচনা না করে শ্রেয়তর বিবেচনা হচ্ছে—মন্দ মানুষ, ভালো মানুষ। মন্দ লোকেরা পোড়াতে আসে, জ্বালাতে আসে; ভালোরা থাকে প্রতিরোধে, নেভাতে।
১৬ বছর আগে আমার পিতার মৃত্যু হয়েছে। ছোটবেলা থেকে বৈদ্য নামের প্রায় সমবয়সী একজন আমাদের সংসার, জমিজমা দেখাশোনার দায়িত্বে আছে। বৈদ্যনাথ আমার আব্বার দুই হাতের এক হাত যেন। আব্বার আকস্মিক মৃত্যুতে আমাদের মতো তার মনেও হাহাকার, চোখে জল। আব্বার স্পন্দনহীন দেহটা চাদরমুুড়ি দেওয়া। সৎকারের আয়োজন শুরু হয়ে গেল। আমি সামলাচ্ছি আম্মা, ছোট ভাই আর ছোট বোনটাকে। বৈদ্যকে বলেছি জোগাড়যন্তর শুরু করতে। দোকান থেকে সে কিনে আনে আগরবাতি আর গোলাপজল। এক ধর্মপ্রাণ ঘনিষ্ঠজন আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে একান্তভাবে বললেন, ‘ওকে দিয়ে ওসব আনা কি ঠিক হচ্ছে?’ এ প্রশ্নে খুব অবাক হই। নাম, ধর্ম—এসব তো আমার মাথায় আসেনি। মনে ভেবেছি, আব্বার মৃত্যু হয়েছে, বৈদ্যের মামারও মৃত্যু হয়েছে। বৈদ্য আব্বাকে ডাকত ‘মামা’। আমি পুত্র হয়ে যত দিন যত মুহূর্ত তাঁর পাশে থাকতে পারিনি, বৈদ্যনাথ সরকার তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি আব্বার সঙ্গে ছিল। তাহলে অধিকার আমার একচ্ছত্র হয় কী করে? তার ও আমার শোক, আমার ও তার কান্না একই রকম, তাহলে কেন এই ভেদাভেদ?
হিন্দু-মুসলমান—এই পরিচয় পাশে সরিয়ে রাখি, পৃথিবীতে আরও দ্বন্দ্বের বিষয় রয়েছে। আছে সাদা-কালোর সংঘাত। ধনী দরিদ্রের ওপর সওয়ার হয়ে আছে, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চলছে সগৌরবে। রাজনীতির নামে, মঙ্গলের অজুহাতে অমঙ্গলের রাস্তায় মানুষকে ঠেলে দেওয়ার আয়োজনের শেষ নেই। দলের নামে, পক্ষের গায়ে ভালো ও মন্দের ছাপ লাগানো চলছে। এই ভালো ও মন্দের নির্ধারক হয়ে কী লাভ? অন্যের লোকসানের জন্য ফলবান চেষ্টা করে, নিজের লাভের গুড় যে পিঁপড়ে খেয়ে যায় তাকিয়ে দেখা হয় না।
আমাদের শোনা হয়, অমুক মুসলমান তমুক হিন্দুর জমি দখল করেছে। মন্দির ভেঙেছে, ঘরে আগুন দিয়েছে। এমন কর্ম কি এক মুসলমান অন্য মুসলমানের বিপক্ষে ঘটায় না? ভাই কি ভাইয়ের জমি দখল করে না? ছেলে বাবাকে হত্যা করেছে—এ গল্প কি শোনা হয় না? স্ত্রীর মুখ এসিডে ঝলসে দিয়েছে স্বামী—এমন গল্পে হিন্দু-মুসলমানের দ্বন্দ্ব কোথায়?
গুজরাটে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছিল। সে গল্প নিয়ে ভারতে একটা সিনেমা তৈরি হয়েছে। ছবির নাম ফিরাক। অভিনেত্রী নন্দিতা দাশ সে ছবির পরিচালক। ছবি মুক্তির পর হইহই করে উঠেছিল একদল মানুষ। তারা ভেবেছিল, এ কেমন কথা, পরিচালক নিজে হিন্দু হয়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে যায় এমন ছবি বানালেন? এমন ভাবনা, অভিযোগ কিন্তু তেমন সুবিধা করতে পারেনি। কেননা, সুচিন্তাকে রক্ষা করতে সুস্থ ভাবনা দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ওই গেল গেল করা মানুষদের আয়তনের চেয়ে বড় করে ভেবে লাভ নেই। হিন্দু নয়, মুসলমান নয়, একজন মানুষ মানুষের দৃষ্টিতে সব দেখবে—পৃথিবীর প্রকৃত নিয়ম সেটাই। অথচ আমরা, মানুষেরা ঠিক করে নিয়েছি, ভাবতে হবে, বলতে হবে, করতে হবে স্বার্থমতো। চোখ খুলে দেখা হয় না, সমস্যা শেকড়বাকড় মেলে শুষে নিচ্ছে জীবনের সৌরভ।
দোষারোপে ক্লান্তিহীন সবাই। কিন্তু নিজেদের মধ্যে দুষ্ট স্বভাব ত্যাগে সামান্য আগ্রহ চোখে পড়ে না; হাব ও ভাবে আশাও জাগে না মনে। এক পক্ষ মানুষের কল্যাণ হবে ভেবে, মঙ্গল প্রতিষ্ঠার বিবেচনায় অন্য পক্ষের ওপর হামলে পড়ছে। আমাদের শুনতে হচ্ছে, দেখতে হচ্ছে—অমুক পক্ষের অমুক তমুক পক্ষের তমুককে কুপিয়ে হত্যা করেছে বা গুলিতে মেরে ফেলেছে। পাল্টাপাল্টি ঘটনাও ঘটে যাচ্ছে। জয় এবং জোর প্রতিষ্ঠার জন্য শুনতে পাই, এবার অমুক পক্ষের অমুককে পিটিয়ে বা পুড়িয়ে মেরেছে তমুক পক্ষের লোকেরা।
অমুক-তমুক বাদ দিয়ে মূল পরিচয় মানুষ। মানুষ মানুষকে মারছে—গল্পটা কিন্তু এক লাইনের এবং খুবই সরল। এই নির্মম সত্যে কোনো পক্ষের আনন্দিত হওয়ার সামান্যতম সুযোগ নেই। আনন্দিত হওয়া পাপ। ‘বেশ হয়েছে’ এমন অব্যক্ত অনুভবও পাপ। যদি কারও মুখ থেকে ব্যক্ত হয় হত্যাকারীর জন্য প্রশ্রয় জোগানো প্রচ্ছন্ন ভাষা, সেও প্রচণ্ড অন্যায়। মানুষের বিরুদ্ধে মানুষকে দাঁড় করানো, অন্যায়ে লিপ্ত করার মতো উৎসাহ জোগানো, আগুন জ্বালো, পোড়াও, হত্যা করো, রক্ত ঝরাও—এমন উদ্যোগে ভূমিকা রাখতে দেখছি আমরা, সাধারণ মানুষেরা। আমরা এও দেখছি, অন্যে করলে যেটা পাপ ও ভয়ংকর অন্যায় বিবেচনা করা হয়, নিজের বেলায় সে পাপই পুণ্য, সে অন্যায় খুবই ন্যায়।
মানে দাঁড়াচ্ছে, পক্ষ রক্ষা করতে, পক্ষের মান বাঁচাতে, মন্দকে প্রশ্রয় দিতে সামান্য বুক কাঁপছে না কারও। টিকে থাকতে হলে সংঘাত চাই। মুখে সর্বদা মুখস্থ বুলি ‘শান্তি শান্তি’, কিন্তু শান্তি থাকলে পক্ষ টিকে থাকবে না, তাই পক্ষ টিকিয়ে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে। মনুষ্যত্ব, মানবতা, মানুষ—কারও বেঁচে থাকার উপায় থাকছে না।
দেবী গেলেন বিসর্জনে। ভালোয় ভালোয় হয়ে গেল সব। পূর্বে হয়েছে, পরেও হবে। আমাদের বাংলা মায়ের কোলে মুসলমান বা হিন্দু কখনোই আলাদা ছিল না। কালে কালে পক্ষেরা পক্ষ বাঁচাতে নিন্দা করেছে, প্রশস্তি গেয়েছে। সদাসর্বদা ভালো-মন্দের হিসাব-নিকাশ চলছে। দুঃখের বিষয়, মন্দকে মন্দ বলা হয়েছে অবিরাম, তবু মন্দ আশ্রয়হীন হয়নি। প্রশ্ন জাগে, দিনের পর দিন মন্দের উল্লাসধ্বনি কেন বেড়ে উঠেছে?
টিকে থাকার জন্য মন্দের প্রশ্রয় ছাড়া উপায় নেই—এমন অসহায় ভাবনার মৃত্যু হওয়া দরকার। দরকার মানুষের মৃত্যু থামানো। কুঁজো পিঠ নিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখতে চাইলে কি তা সম্ভব হবে? হিংসা, প্রতিহিংসা বেঁচে থাকলে মানুষ মরবে; আর আমরা ভাবতে থাকব, ভাবতেই থাকব, ‘আমাদের পক্ষ বেঁচে থাকছে’। এমন স্বার্থপর আনন্দে দেশ আনন্দিত হয় না, সে বিষণ্ন হয় আরও।
আফজাল হোসেন: অভিনেতা, নির্মাতা।
fzalhossin1515@yahoo.com
যখন ছোট ছিলাম, গ্র্রামে পূজার আনন্দ শুরু হয়ে যেত ঠাকুরবাড়িতে প্রতিমা বানানো শুরু হলে। এক এক পাড়ায় তখন এক এক রকম আয়োজন, তবে জমজমাট পূজা হতো বাজারের মণ্ডপে। অন্যগুলোর চেয়ে সেখানকার বৈশিষ্ট্য ছিল, পূজামণ্ডপ ঘিরে বিরাটকায় মেলা বসত। সে মেলা হিন্দু-মুসলমানের মিলিত মেলা ছিল।
ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, আমাদের বাড়ির পাশে মসজিদ, তার ৩০ ফুট দূরে কালীমন্দির। এক একটি শাসনামল এসেছে এবং গেছে, ওই আসা-যাওয়ার মধ্যে খুটখাট এটা-ওটা ঘটেছে, কিন্তু শেষমেশ মসজিদ আর মন্দির পাশাপাশিই দাঁড়িয়ে থেকেছে সগৌরবে।
খুটখাটের কথা বললাম, সেসব সামান্য সংখ্যার একদল মানুষের অভিপ্রায়। লাই পেয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, আবার অদৃশ্য ইশারায় বসে গেছে, শুয়ে গেছে। ওই যে অদৃশ্য ইশারা বললাম, সেটা আসলে স্পষ্ট করে দায়ী পক্ষকে দেখানোর চেষ্টা। আমাদের মধ্যে দায়ী পক্ষকে দেখিয়ে আনন্দিত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে এবং ‘আমি মোটেও দায়ী নই, আমাদের মতো ভালো আর জগতে নেই’ এমন ভেবে আহ্লাদে আটখানা হয়ে শান্তি পাই এক পক্ষ। এ দুটোই যে অশান্তির, সেটা ভেবে দেখার সময় ও সুযোগ কারও হয় না।
ভালো ও মন্দের বসবাস শুধু আমাদের বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীজুড়ে। সেটা থাকুক, মন্দ বিনা ভালোকে আমরা অনুভব করব কীভাবে? ভালোর সঙ্গে থাকাই মানবধর্ম। কিন্তু মানুষের ধর্ম হচ্ছে, নিজের সুবিধা-অসুবিধা, ভালো ও মন্দের সংজ্ঞা নিজেই নির্ধারণ করে নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া। এমন সংজ্ঞামতো, বুশ সাহেব ভাবলেন, তিনি ভালো আর সাদ্দাম লোকটা খুবই মন্দ। নেমে পড়লেন লঙ্কাকাণ্ডে। পৃথিবীর মানুষের জন্য সেটা ভালো হলো না।
এক লাফে অত দূরে না গিয়ে ভাবা যাক নিকট নিয়ে। মন্দ-ভালো নিয়ে আমাদের বিপুল মাথাব্যথা; সুবিধামতো ভালো ও মন্দের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে নিচ্ছি, এতে আত্মতৃপ্তি হচ্ছে, সুখ জুটছে। কিন্তু চোখে দেখতে পাই না, অসুখ ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে। অশান্তি লেজ নাড়িয়ে বলছে, ‘দাঁড়াও, দেখাচ্ছি মজা!’ শান্তি ও সুখের জন্য সর্বদা চোখে পট্টি বেঁধে যে পথটা বেছে নিচ্ছি, সে পথের শেষে আনন্দের অধ্যায় কি পাব?
হিন্দু ও মুসলমান এ বঙ্গে ভাই ভাই কবে ছিল না? সংকটের অনুগল্পগুলো বৃহৎ-দর্শন কাচের নিচে ফেলে দেখে লাভ কাদের? সুখী হয় কারা? প্রগতিশীলতার আচকান পরে সময়মতো দুই ছত্র হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির কথা বলা হলো, তার মধ্যে তিন টেবিল-চামচ সাম্প্রদায়িকতার প্রচ্ছন্ন উসকানি আর এক মুঠো অতীত-বর্তমানের বিশ্লেষণ ঢেলে দিলে হাততালির ঝাঁকুনিতে তা একপক্ষের জন্য বেশ উপাদেয় বলবর্ধক সালসা হয়, কিন্তু তাতে জন্মভূমির মুখে কিন্তু হাসি ফোটে না। দেশমাতার অস্বস্তি কিন্তু এমন পক্ষ-অবলম্বনে ঘোচে না।
ধর্মের প্রসঙ্গ এলে বলা আছে অনেক কিছু। জ্ঞানও তো মানুষকে দেওয়া হয়েছে। একটা কথার মানে জ্ঞান-অনুযায়ী মানুষ অনেক রকম ভেবে নিতে পারে। কিন্তু যে জ্ঞানে, যে অর্থে মনুষ্য সম্প্রদায়ের মঙ্গল হবে না তা জ্ঞান নয়, অন্ধত্ব। যে অর্থ প্রকাশে জীবনে নেমে আসে অনর্থ, তা কি প্রয়োজনহীন নয়?
একটা গল্প বলি, এক বন্ধু গেছেন হজে। মিনাতে গিয়ে লাখ লাখ মানুষের সমুদ্রে পড়ে অভিভূত তিনি। সফেদ ঢেউয়ের মধ্যে ভাসতে ভাসতে নিজের মনে হঠাৎ এক কষ্টের কাঁটার খোঁচা অনুভব করলেন। সাথি ছিলেন ঢাকার বড় এক মসজিদের তরুণ বয়সী ইমাম। তাঁকে প্রশ্ন করলেন বন্ধুটি, ‘ইমাম সাহেব, আমি পুরান ঢাকায় বসবাস ও ব্যবসা করি, সেখানে হিন্দুসম্প্রদায় পূজা-অর্চনা করে। নিজের এলাকায় পূজা হলে প্রতিবেশীরা আপন মনে করে পূজায় চাঁদা দিতে বলে, আমি দিই, মনে কখনো প্রশ্ন জাগেনি। আজ মনে হচ্ছে, আমি কি অন্যায় করেছি?’ একটু সময় নিয়ে ভাবলেন ইমাম সাহেব, তারপর উত্তর করেন, ‘এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর কোথাও লেখা দেখিনি। তবে নিজের জ্ঞানে বলতে পারি, আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৎ পথে, মঙ্গলের পক্ষে থাকতে বলেছেন, মানুষের মঙ্গলকাজে সহায়তা দেওয়া উত্তম কাজ। সে অনুযায়ী আপনি তো মঙ্গলের পথেই রয়েছেন।’ এ ব্যাখ্যায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন সেই বন্ধু।
পশ্চিমবঙ্গে আমার মামাবাড়ি। অনেক পূজা আমি সেখানে কাটিয়েছি। নিজের চোখে দেখেছি, আমার চেয়ে বছর চারেকের বড় আমার ছোট মামা অন্য বন্ধুদের সঙ্গে পূজামণ্ডপে কাঁধে বয়ে প্রতিমা এনে স্থাপন করছেন। দেখেছি, আরতিতে দুর্গাদেবীর সামনে ধুনচি হাতে নিয়ে নাচছেন। বিসর্জনে কাঁধে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রতিমা।
এ গল্পে কারও কারও ভাবার সুযোগ থেকে যায়, সে দেশে মুসলমানদের টিকে থাকার করুণ চিত্র এটা। জোঁকের মুখে নুন দেওয়ার মতো আর একটা সত্য ঘটনা বয়ান করি। ১৯৭১ সালে বড় মামা মহসীন সরদার ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় বড় নেতা। তাঁর বাড়িতে আগুন দিতে মিছিল করে এসেছিল একদল মানুষ। সেই আগুনের সংকল্প ঠেকিয়েছিল আরও একদল মানুষ। উভয়ের ধর্মীয় পরিচয় হিন্দু। কিন্তু সে বিবেচনা না করে শ্রেয়তর বিবেচনা হচ্ছে—মন্দ মানুষ, ভালো মানুষ। মন্দ লোকেরা পোড়াতে আসে, জ্বালাতে আসে; ভালোরা থাকে প্রতিরোধে, নেভাতে।
১৬ বছর আগে আমার পিতার মৃত্যু হয়েছে। ছোটবেলা থেকে বৈদ্য নামের প্রায় সমবয়সী একজন আমাদের সংসার, জমিজমা দেখাশোনার দায়িত্বে আছে। বৈদ্যনাথ আমার আব্বার দুই হাতের এক হাত যেন। আব্বার আকস্মিক মৃত্যুতে আমাদের মতো তার মনেও হাহাকার, চোখে জল। আব্বার স্পন্দনহীন দেহটা চাদরমুুড়ি দেওয়া। সৎকারের আয়োজন শুরু হয়ে গেল। আমি সামলাচ্ছি আম্মা, ছোট ভাই আর ছোট বোনটাকে। বৈদ্যকে বলেছি জোগাড়যন্তর শুরু করতে। দোকান থেকে সে কিনে আনে আগরবাতি আর গোলাপজল। এক ধর্মপ্রাণ ঘনিষ্ঠজন আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে একান্তভাবে বললেন, ‘ওকে দিয়ে ওসব আনা কি ঠিক হচ্ছে?’ এ প্রশ্নে খুব অবাক হই। নাম, ধর্ম—এসব তো আমার মাথায় আসেনি। মনে ভেবেছি, আব্বার মৃত্যু হয়েছে, বৈদ্যের মামারও মৃত্যু হয়েছে। বৈদ্য আব্বাকে ডাকত ‘মামা’। আমি পুত্র হয়ে যত দিন যত মুহূর্ত তাঁর পাশে থাকতে পারিনি, বৈদ্যনাথ সরকার তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি আব্বার সঙ্গে ছিল। তাহলে অধিকার আমার একচ্ছত্র হয় কী করে? তার ও আমার শোক, আমার ও তার কান্না একই রকম, তাহলে কেন এই ভেদাভেদ?
হিন্দু-মুসলমান—এই পরিচয় পাশে সরিয়ে রাখি, পৃথিবীতে আরও দ্বন্দ্বের বিষয় রয়েছে। আছে সাদা-কালোর সংঘাত। ধনী দরিদ্রের ওপর সওয়ার হয়ে আছে, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চলছে সগৌরবে। রাজনীতির নামে, মঙ্গলের অজুহাতে অমঙ্গলের রাস্তায় মানুষকে ঠেলে দেওয়ার আয়োজনের শেষ নেই। দলের নামে, পক্ষের গায়ে ভালো ও মন্দের ছাপ লাগানো চলছে। এই ভালো ও মন্দের নির্ধারক হয়ে কী লাভ? অন্যের লোকসানের জন্য ফলবান চেষ্টা করে, নিজের লাভের গুড় যে পিঁপড়ে খেয়ে যায় তাকিয়ে দেখা হয় না।
আমাদের শোনা হয়, অমুক মুসলমান তমুক হিন্দুর জমি দখল করেছে। মন্দির ভেঙেছে, ঘরে আগুন দিয়েছে। এমন কর্ম কি এক মুসলমান অন্য মুসলমানের বিপক্ষে ঘটায় না? ভাই কি ভাইয়ের জমি দখল করে না? ছেলে বাবাকে হত্যা করেছে—এ গল্প কি শোনা হয় না? স্ত্রীর মুখ এসিডে ঝলসে দিয়েছে স্বামী—এমন গল্পে হিন্দু-মুসলমানের দ্বন্দ্ব কোথায়?
গুজরাটে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছিল। সে গল্প নিয়ে ভারতে একটা সিনেমা তৈরি হয়েছে। ছবির নাম ফিরাক। অভিনেত্রী নন্দিতা দাশ সে ছবির পরিচালক। ছবি মুক্তির পর হইহই করে উঠেছিল একদল মানুষ। তারা ভেবেছিল, এ কেমন কথা, পরিচালক নিজে হিন্দু হয়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে যায় এমন ছবি বানালেন? এমন ভাবনা, অভিযোগ কিন্তু তেমন সুবিধা করতে পারেনি। কেননা, সুচিন্তাকে রক্ষা করতে সুস্থ ভাবনা দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ওই গেল গেল করা মানুষদের আয়তনের চেয়ে বড় করে ভেবে লাভ নেই। হিন্দু নয়, মুসলমান নয়, একজন মানুষ মানুষের দৃষ্টিতে সব দেখবে—পৃথিবীর প্রকৃত নিয়ম সেটাই। অথচ আমরা, মানুষেরা ঠিক করে নিয়েছি, ভাবতে হবে, বলতে হবে, করতে হবে স্বার্থমতো। চোখ খুলে দেখা হয় না, সমস্যা শেকড়বাকড় মেলে শুষে নিচ্ছে জীবনের সৌরভ।
দোষারোপে ক্লান্তিহীন সবাই। কিন্তু নিজেদের মধ্যে দুষ্ট স্বভাব ত্যাগে সামান্য আগ্রহ চোখে পড়ে না; হাব ও ভাবে আশাও জাগে না মনে। এক পক্ষ মানুষের কল্যাণ হবে ভেবে, মঙ্গল প্রতিষ্ঠার বিবেচনায় অন্য পক্ষের ওপর হামলে পড়ছে। আমাদের শুনতে হচ্ছে, দেখতে হচ্ছে—অমুক পক্ষের অমুক তমুক পক্ষের তমুককে কুপিয়ে হত্যা করেছে বা গুলিতে মেরে ফেলেছে। পাল্টাপাল্টি ঘটনাও ঘটে যাচ্ছে। জয় এবং জোর প্রতিষ্ঠার জন্য শুনতে পাই, এবার অমুক পক্ষের অমুককে পিটিয়ে বা পুড়িয়ে মেরেছে তমুক পক্ষের লোকেরা।
অমুক-তমুক বাদ দিয়ে মূল পরিচয় মানুষ। মানুষ মানুষকে মারছে—গল্পটা কিন্তু এক লাইনের এবং খুবই সরল। এই নির্মম সত্যে কোনো পক্ষের আনন্দিত হওয়ার সামান্যতম সুযোগ নেই। আনন্দিত হওয়া পাপ। ‘বেশ হয়েছে’ এমন অব্যক্ত অনুভবও পাপ। যদি কারও মুখ থেকে ব্যক্ত হয় হত্যাকারীর জন্য প্রশ্রয় জোগানো প্রচ্ছন্ন ভাষা, সেও প্রচণ্ড অন্যায়। মানুষের বিরুদ্ধে মানুষকে দাঁড় করানো, অন্যায়ে লিপ্ত করার মতো উৎসাহ জোগানো, আগুন জ্বালো, পোড়াও, হত্যা করো, রক্ত ঝরাও—এমন উদ্যোগে ভূমিকা রাখতে দেখছি আমরা, সাধারণ মানুষেরা। আমরা এও দেখছি, অন্যে করলে যেটা পাপ ও ভয়ংকর অন্যায় বিবেচনা করা হয়, নিজের বেলায় সে পাপই পুণ্য, সে অন্যায় খুবই ন্যায়।
মানে দাঁড়াচ্ছে, পক্ষ রক্ষা করতে, পক্ষের মান বাঁচাতে, মন্দকে প্রশ্রয় দিতে সামান্য বুক কাঁপছে না কারও। টিকে থাকতে হলে সংঘাত চাই। মুখে সর্বদা মুখস্থ বুলি ‘শান্তি শান্তি’, কিন্তু শান্তি থাকলে পক্ষ টিকে থাকবে না, তাই পক্ষ টিকিয়ে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে। মনুষ্যত্ব, মানবতা, মানুষ—কারও বেঁচে থাকার উপায় থাকছে না।
দেবী গেলেন বিসর্জনে। ভালোয় ভালোয় হয়ে গেল সব। পূর্বে হয়েছে, পরেও হবে। আমাদের বাংলা মায়ের কোলে মুসলমান বা হিন্দু কখনোই আলাদা ছিল না। কালে কালে পক্ষেরা পক্ষ বাঁচাতে নিন্দা করেছে, প্রশস্তি গেয়েছে। সদাসর্বদা ভালো-মন্দের হিসাব-নিকাশ চলছে। দুঃখের বিষয়, মন্দকে মন্দ বলা হয়েছে অবিরাম, তবু মন্দ আশ্রয়হীন হয়নি। প্রশ্ন জাগে, দিনের পর দিন মন্দের উল্লাসধ্বনি কেন বেড়ে উঠেছে?
টিকে থাকার জন্য মন্দের প্রশ্রয় ছাড়া উপায় নেই—এমন অসহায় ভাবনার মৃত্যু হওয়া দরকার। দরকার মানুষের মৃত্যু থামানো। কুঁজো পিঠ নিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখতে চাইলে কি তা সম্ভব হবে? হিংসা, প্রতিহিংসা বেঁচে থাকলে মানুষ মরবে; আর আমরা ভাবতে থাকব, ভাবতেই থাকব, ‘আমাদের পক্ষ বেঁচে থাকছে’। এমন স্বার্থপর আনন্দে দেশ আনন্দিত হয় না, সে বিষণ্ন হয় আরও।
আফজাল হোসেন: অভিনেতা, নির্মাতা।
fzalhossin1515@yahoo.com
Thursday, October 21, 2010
মানুষের গায়ের রং ভিন্ন হয় কেন
আমাদের সবার গায়ের রং একরকম নয়। কারও ফর্সা, কারও তামাটে, কারও বা কালো। আমাদের ত্বকে দুটি স্তর আছে। এর বাইরেরটি বহিঃত্বক বা এপিডারমিস আর ভিতরেরটিকে বলে আন্তঃত্বক বা ডরমিস। বহিঃত্বককে আবার কয়েকটা স্তরে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভিতরেরটার নাম স্ট্যাটাম বেসাল। এই স্তরে কতগুলো বিশেষ ধরনের কোষ আছে। তাদের বলে মেলানোসাইট। সাধারণ স্ট্যাটাম বেসালে প্রতি বর্গ মিলিমিটারে ১০০০-৩০০০ মেলানোসাইট থাকে। মেলানোসাইটগুলোর মধ্যে আছে রঙ্গক কণা মেলানিন। গাঢ় রংয়ের এই কণাগুলোই ত্বকের কালো রংয়ের জন্য দায়ী। যাদের ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বেশি, তাদের গায়ের রং কালো। ত্বকে মেলানিন কম থাকলে গায়ের রং ফর্সা হয়। ত্বকে মেলানিন কম থাকবে না বেশি থাকবে তা নির্ভর করে বংশগত বৈশিষ্ট্যের ওপর। তেমনি কোনো বিশেষ দেশের মানুষের গায়ের রংয়ের মতো সেই জায়গায় ভৌগোলিক অবস্থান, সূর্যের আলো সেখানে কতটা চড়া এসব কিছুরও সম্পর্ক আছে। যেমন ইউরোপের মানুষের গায়ের রং সাদা, আমাদের প্রধানত বাদামি, আফ্রিকার মানুষের কালো। নিগ্রোদের ত্বকে বহিঃত্বকের উপরের স্তরেও মেলানিন পাওয়া যায়।
-আমিন রহমান নবাব
-আমিন রহমান নবাব
ইনকা সভ্যতা
ইনকারা হলেন দক্ষিণ আমেরিকার আদিম ভারতীয় জাতির লোক। যারা মধ্য চিলি থেকে কলম্বিয়া-ইকুয়েডর সীমান্তবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত সমগ্র ভূখণ্ড শাসন করতেন। দ্বাদশ শতাব্দীতে ইনকারা কুজকোতে তাদের রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। কথিত আছে, প্রথম ইনকা শাসক মানকো কাপান সূর্য দেবতার বংশধর ছিলেন। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইনকারা রাজ্য জয় শুরু করেন এবং ১০০ বছরের মধ্যে তারা ১২ লাখ এন্ডিয়ান জনগণের ওপর অধিকার বিস্তার করেন। ইনকা সমাজ সুবিন্যস্ত স্তর ভাগে বিভক্ত ছিল। সম্রাটরা অভিজাত আমলাতন্ত্রের সাহায্যে রাজ্য শাসন করতেন। কর্তৃত্ব পরিচালনায় এরা ছিল কঠোর এবং হিংস । ইনকাদের প্রায় সব জনসাধারণ ছিলেন কৃষক শ্রেণীর। তারা ভুট্টা, কড়াই শুঁটি, টমেটো, শুকনা মরিচ, তুলা প্রভৃতি উৎপাদন করতেন। তখন কাউকে কর দিতে হতো না, কিন্তু প্রত্যেকেরই কিছু সময়ের জন্য সৈন্য বিভাগে কাজ করতে হতো। বা রাস্তা, প্রাসাদ, মন্দির নির্মাণ অথবা খনিজ পদার্থ উত্তোলনে সাহায্য করতে হতো। ইনকারা ঝুলায়মান পুল, মন্দির, পার্বত্য অঞ্চলের স্তরে স্তরে সাজানো গৃহ, কৃষি ভূমিতে জলদানের সুবিধার জন্য খাল এবং বিরাট বিরাট দুর্গ তৈরি করতেন। আন্ডেস অঞ্চলের সব খানে এখনও ইনকাদের তৈরি জল সেচন ব্যবস্থা, প্রাসাদসমূহ, মন্দির ও দুর্গগুলো দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো ছাড়াও এদের ওষুধের চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসা অনেক উন্নত ছিল। লামার, পশম ও তুলা দিয়ে ইনকারা বস্ত্র প্রস্তুত করতেন। বস্তুত এদের প্রায় প্রত্যেকই কৃষক ছিল এবং সবাই তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও বস্ত্র উৎপাদন করতেন। ১৫৩২ সালে স্পেন দেশের অভিযানকারী ফ্রান্সিসকো পিভারো ইনকাদের পরাজিত করেন। তিনি মাত্র ১৮০ জন সৈন্য নিয়ে ইনকা সাম্রাজ্যে প্রবেশ করেছিলেন। এ সময় ইনকার ভবিষ্যৎ সম্রাট কে হবেন এ নিয়ে হুয়াস্কার এবং তার ভাই আতাহুয়ালপার মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ সংগ্রামে আতাহুয়ালপা জয়ী হতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে পিজারো তাকে আটক করলেন। ইতোমধ্যে হুয়াস্কার নিহত হন। পিজারো এ সুযোগে আতাহুয়ালপাকে হত্যা করেন। তখন ইনকা সাম্রাজ্য নেতৃত্বাধীন হয়ে পড়ে। ইনকারা স্পেনীয় হিংস অভিযাত্রী সৈন্য দলকে বাধা দিতে অক্ষম হয়ে পড়ে। ইনকা সম্রাট আতাহুয়ালপাকে হত্যা করে পিজারো এক অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। স্পেনীয় অভিযাত্রীরা ইনকা সাম্রাজ্যকে স্পেন রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত প্রদেশে পরিণত করে। রুপার খনির ওপর প্রাধান্যশীল ঔপনিবেশিক অর্থনীতির প্রয়োজন অনুযায়ী সমগ্র জনসংখ্যার পুনর্বিন্যাস ঘটে এবং তাদের নবনির্মিত বিরাট শহরাঞ্চলে বসতি স্থাপন করতে হয়। খনির কাজ এবং ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাকে এড়াবার জন্য, অনেক আদিম ভারতীয়রা পূর্বাঞ্চলের দিকে প্রস্থান করে। পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড প্রচার অভিযান দ্বারা ইনকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়। এভাবেই পতন হয় ইনকাদের সভ্যতার। কিন্তু অনেক ইতিহাসবিদের মতে, স্পেনীয়রা যে সভ্যতাকে ধ্বংস করেছিল তা তাদের নিজেদের সভ্যতার দিক থেকে অনেক উন্নত ছিল।
-প্রীতম সাহা সুদীপ
এ বিষয়ে রণক ইকরামের একটি বিশদ আর্টিক্যাল
-প্রীতম সাহা সুদীপ
এ বিষয়ে রণক ইকরামের একটি বিশদ আর্টিক্যাল
রোজাদের ব্লাক ম্যাজিক
আদিম সমাজে উইচ-ডক্টর বা রোজা এমন ব্যক্তি ছিলেন যিনি অতিন্দ্রীয় শক্তির বলে ডাইনী, প্রেতাত্মাদের ধরতে পারতেন এবং তাদের ক্ষতিকর কাজের প্রতিবিধান করতে পারতেন। রোজারা একাধারে চিকিৎসক, জাদুকর এবং পুরোহিতের ভূমিকা পালন করতেন। আদিম সমাজের অধিবাসীরা বিশ্বাস করতেন যে ভূতপ্রেতরা অতি প্রাকৃত শক্তি দ্বারা পরিচালিত এবং তাদের ওপর রোজাদের প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা আছে। বর্তমানকালেও আদিম-সামাজিক ব্যবস্থায় বসবাসকারীদের মধ্যে উইচ-ডক্টর বা রোজাদের প্রভাব দেখা যায়। আদিম জাতিদের মধ্যে রোজাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হতো।
তারা আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে কিংবা চোর বা হত্যাকারীদের ধরতে ও শাস্তি প্রদান করতে সক্ষম ছিলেন। এছাড়াও তারা জাদুবিদ্যার সাহায্যে রোগের চিকিৎসা করতে পারতেন এবং মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথোপকথনে তারা সক্ষম ছিলেন। সে সময় রোজাদের প্রতি জনগণের অন্ধ বিশ্বাস ছিল। রোজাদের হাতিয়ার ছিল জাদুবিদ্যা। সাধারণ মানুষকে তাদের বশে আনার জন্য রোজারা তাদের ভয় প্রদর্শন করতেন তাদের জাদুবিদ্যার সাহায্যে।
তারা তাদের ইচ্ছানুযায়ী অপরকে অভিশাপগ্রস্ত করতে পারতেন। খাদ্যশস্যের উৎপাদন রুদ্ধ করে দিতে পারতেন। শিশুদের রোগগ্রস্ত করতে পারতেন এবং মানুষের মৃত্যুও ঘটাতে পারতেন। মানুষের মৃত্যু ঘটানোর জন্য তারা নানা ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। কখনো মানুষের একটি ছোট আকৃতির পুতুল তৈরি করে তাতে পিনবিদ্ধ করতেন। আবার কখনো কোনো লোকের চুল বা নখের টুকরো সংগ্রহ করে তা মাটিতে পুঁতে রাখতেন। এগুলো যখন আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেত মানুষটিও ক্রমেই মৃত্যুমুখে পতিত হতো। রোজারা প্রায়ই রোগের চিকিৎসার জন্য গাছ-গাছড়া, লতাপাতা ব্যবহার করতেন এবং রোগ সংক্রমণ দূর করার জন্য জল ব্যবহার করতেন। কখনো তারা জাদুকরী পাথরসহ জল ছিটিয়ে দিতেন। তারা জাদুকরী গান করতেন, প্রার্থনা করতেন এবং আশ্চর্য ভঙ্গিমায় নৃত্য করতেন যাতে লোকের মনকে প্রভাবিত করা যায়। রোজারা রঙিন পোশাক পরতেন, মুখোশ ধারণ করতেন এবং মুখমণ্ডল চিত্রিত করতেন। কেউ কেউ পশু চর্মও পরিধান করতেন। বস্তুত তারা লোকদের সম্মোহিত করতেন যাতে তারা বিশ্বাস করতে বাধ্য হতো যে তাদের সৌভাগ্যের জন্য রোজারাই দায়ী। যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের পাতায় রোজাদের সম্পর্কে এ ধরনের কাহিনীই প্রচলিত হয়ে আসছে।
http://www.bd-pratidin.com
তারা আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে কিংবা চোর বা হত্যাকারীদের ধরতে ও শাস্তি প্রদান করতে সক্ষম ছিলেন। এছাড়াও তারা জাদুবিদ্যার সাহায্যে রোগের চিকিৎসা করতে পারতেন এবং মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথোপকথনে তারা সক্ষম ছিলেন। সে সময় রোজাদের প্রতি জনগণের অন্ধ বিশ্বাস ছিল। রোজাদের হাতিয়ার ছিল জাদুবিদ্যা। সাধারণ মানুষকে তাদের বশে আনার জন্য রোজারা তাদের ভয় প্রদর্শন করতেন তাদের জাদুবিদ্যার সাহায্যে।
তারা তাদের ইচ্ছানুযায়ী অপরকে অভিশাপগ্রস্ত করতে পারতেন। খাদ্যশস্যের উৎপাদন রুদ্ধ করে দিতে পারতেন। শিশুদের রোগগ্রস্ত করতে পারতেন এবং মানুষের মৃত্যুও ঘটাতে পারতেন। মানুষের মৃত্যু ঘটানোর জন্য তারা নানা ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। কখনো মানুষের একটি ছোট আকৃতির পুতুল তৈরি করে তাতে পিনবিদ্ধ করতেন। আবার কখনো কোনো লোকের চুল বা নখের টুকরো সংগ্রহ করে তা মাটিতে পুঁতে রাখতেন। এগুলো যখন আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেত মানুষটিও ক্রমেই মৃত্যুমুখে পতিত হতো। রোজারা প্রায়ই রোগের চিকিৎসার জন্য গাছ-গাছড়া, লতাপাতা ব্যবহার করতেন এবং রোগ সংক্রমণ দূর করার জন্য জল ব্যবহার করতেন। কখনো তারা জাদুকরী পাথরসহ জল ছিটিয়ে দিতেন। তারা জাদুকরী গান করতেন, প্রার্থনা করতেন এবং আশ্চর্য ভঙ্গিমায় নৃত্য করতেন যাতে লোকের মনকে প্রভাবিত করা যায়। রোজারা রঙিন পোশাক পরতেন, মুখোশ ধারণ করতেন এবং মুখমণ্ডল চিত্রিত করতেন। কেউ কেউ পশু চর্মও পরিধান করতেন। বস্তুত তারা লোকদের সম্মোহিত করতেন যাতে তারা বিশ্বাস করতে বাধ্য হতো যে তাদের সৌভাগ্যের জন্য রোজারাই দায়ী। যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের পাতায় রোজাদের সম্পর্কে এ ধরনের কাহিনীই প্রচলিত হয়ে আসছে।
http://www.bd-pratidin.com
রানী ভবানীর স্মৃতিচিহ্ন
এককালের অর্ধে বঙ্গেশ্বরী নামে পরিচিত 'রানী ভবানীর' স্মৃতিবিজড়িত ছাতিয়ান গ্রামে তার স্মৃতিটুকু আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে মহীয়সী এই নারীর জন্মস্থান হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য। ভেঙে ফেলা হয়েছে তার পিতৃগৃহ, যেখানে তিনি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। এখন তার পিতৃগৃহের ধ্বংসাবশেষ আছে মাত্র। ভেঙে ফেলা হয়েছে মায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত জয় দুর্গা মন্দির এবং শিব মন্দির। এগুলো রক্ষার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কখনো। অথচ এলাকাবাসী এটি সংরক্ষণের দাবি করে আসছেন দীর্ঘকাল ধরে। আদমদীঘি উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে পাকা রাস্তার পাশে ছাতিয়ান গ্রাম। আজও তার সময় তৈরি করা ৩৬৫টি পুকুরে মাছ চাষ অব্যাহত রেখেছে এলাকার মানুষ। কেউ দখল কেউ বা লিজ নিয়ে আছে এসব সম্পদ। সপ্তদশ শতাব্দীর কথা; ছাতিয়ান গ্রামে ছিলেন ছোটখাটো জমিদার আত্মারাম চৌধুরী ও শ্রী জয়দুর্গা দেবী চৌধুরানী। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। সন্তান লাভের আশায় জমিদার তার বাড়ির অদূরে নির্জন এক পুকুর পাড়ে ঈশ্বরের সাধনা শুরু করেন। শ্রী জয়দুর্গার গর্ভে জন্মেছিলেন এক কন্যাসন্তান। তার নাম রাখা হয় ভবানী। আত্মারাম চৌধুরী যে স্থানে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সে স্থানটি আজও সিদ্ধেশ্বরী নামে স্মৃতি বহন করে আছে। ভবানীর বয়স যখন ৯/১০ বছর; একদিন নাটোর রাজবাড়ির দেয়াল (মগনেহর) দয়ারাম নবাব আলীবর্দী খানের দরবার থেকে ফেরার পথে ছাতিয়ান গ্রামে এসে রাত হয়ে যায়। সেখানে তাঁবু ফেলা হয় রাত যাপনের জন্য। নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণের অভ্যাস ছিল দয়ারামের। ভোরে তিনি শয্যা ত্যাগ করে বের হন তাঁবু থেকে। দেখেন ফুটফুটে একটি মেয়ে লালশাড়ি পরে পূজার জন্য ফুল তুলছে। দেওয়ান দয়ারামের পছন্দ হলো ওই মেয়েটিকে। তিনি পিছু নিলেন মেয়েটির। পৌঁছলেন তিনি আত্মারাম চৌধুরীর বাড়িতে। জানলেন মেয়েটি আত্মারাম চৌধুরীর। নাম তার ভবানী। দেওয়ান নাটোরের রাজকুমার রামকান্তের সঙ্গে ভবানীর বিয়ের প্রস্তাব দিলেন আত্মারামের কাছে। তিনি ভবানীর মতামত জানতে গেলে ৩টি শর্তে বিয়েতে রাজি হন। প্রথম শর্ত ছিল বিয়ের পর তিনি এক বছর পিতার বাড়িতে থাকবেন। এক বছরে প্রতিদিন একটি করে পুকুর স্থাপনের জন্য ছাতিয়ান গ্রামে ৩৬৫টি পুকুর খনন করে দিতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত ছিল ছাতিয়ান গ্রাম থেকে নাটোর পর্যন্ত নতুন রাস্তা নির্মাণ করে পুরো রাস্তায় লাল সালুর কাপড় দিয়ে ছাউনি তৈরি করতে হবে। যার ভিতর দিয়ে স্বামীর বাড়ি যাবেন। তৃতীয় শর্ত ছিল এলাকার প্রজাদের ভূমি দান করে তাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ছাতিয়ান গ্রামে ৩৬৫টি পুকুরের স্মৃতিচিহ্ন আজও বিদ্যমান। ছাতিয়ান গ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের পূর্বদিকে যে রাস্তাটির স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে সে রাস্তাটির নাম ছিল ভবানীর জঙ্গল। ওই সড়কটি ছাতিয়ান গ্রাম থেকে নাটোর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এ থেকে প্রমাণিত হয় রাজকুমার রামকান্তের সব শর্ত পূরণ করে রানী বানিয়েছিলেন। ভবানীর বিয়ের পর মা জয়দুর্গা দেবী দেহ ত্যাগ করেন। রানী ভবানী তার মায়ের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য যে স্থানে তিনি মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন যেখানে মন্দির তৈরি করেন। যার নাম ছিল জয়দুর্গা মন্দির। এই মন্দিরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অষ্টধাতু নির্মিত এক দুর্গা প্রতিমা। রানী ভবানীর জন্ম হয়েছিল কৃষ্টামী তিথিতে। নিয়মিত পূজা ছাড়াও তিথিতে বিশেষ পূজা অর্চনা হতো। রানী ভবানী শিশুকাল থেকেই ছিলেন ধর্মপরায়ণ ও মানবকল্যাণে নিয়োজিত। তার বিয়ের শর্তানুযায়ী ৩৬৫টি পুকুর এবং রাস্তাটি তার নিজের জন্য করেননি, করেছিলেন জনসাধারণের উপকারের জন্য। ১৭৪৮ সালে রাজ রামকান্তের মৃত্যুর পর রানী ভবানী নবাব আলীবর্দী খানের কাছ থেকে নাটোরের জমিদারির ভার গ্রহণ করেছিলেন। ১৮০২ সালে পর্যন্ত তিনি জমিদারি পরিচালনা করেন। প্রবাদ আছে, নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে কাশিমবাজার কুঠিতে যে ষড়যন্ত্র সভা হয়েছিল সেখানে রানী ভবানী আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তিনি ইংরেজদের বিরোধিতা করেছিলেন এবং জমিদারদের খাল কেটে কুমির না আনার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। নাটোরের বাজার কাচারি ছিল ছাতিয়ান গ্রাম। ১৯৫০ সালে সান্তাহারে সংঘটিত হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। জয়দুর্গা মন্দিরে অষ্টধাতুর দুর্গা নিরাপত্তার অভাবে তিনি নাটোরে নিয়ে যান। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার সময় রানী ভবানীর জন্মস্থান ছাতিয়ান গ্রামের জয়দুর্গা মন্দির নাটোরসহ তার সময় নির্মিত সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পদ চয়েজ অব ল্যান্ড হিসেবে রাখা হয়েছিল। পাকিস্তান আমলেও ছাতিয়ান গ্রামের জয়দুর্গা মন্দিরের বিশাল এলাকা রানী ভবানীর চয়েজ অব ল্যান্ড হিসেবে ব্যবহার হত।
-নাজমুল হক ইমন
-নাজমুল হক ইমন























