Monday, February 7, 2011

ইনকা সভ্যতা

0 comments
যুগের পর যুগ ধরে প্রত্নতাত্তি্বকরা নানা প্রাচীন সভ্যতার খোঁজ করছেন। এর মধ্যে কোনোটি সমৃদ্ধ কোনোটিবা একেবারে অগোছাল। কোনোটির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আবার কোনোটি এখনো রয়ে গেছে অদ্ভুত রহস্যময়তার বেড়াজালে বন্দী। নেটিভ আমেরিকানদের ইনকা সভ্যতা এমনই এক রহস্যময় সাম্রাজ্য। তাদের সম্বন্ধে লিখিত কোনো তথ্য আজো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে নানা প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন থেকে এ সভ্যতা সম্পর্কে অনুমান করা হয়। তাদের স্থাপত্যশৈলী ছিল অসাধারণ। মিসরের পিরামিডের নির্মাণশৈলী যেমন আধুনিক মানুষকে বিস্মিত করে, ঠিক তেমনি নান্দনিক ছিল ইনকাদের স্থাপত্যশৈলী। ইনকা সাম্রাজ্য 'কেচুয়া' নামক নেটিভ আমেরিকানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বছর ধরে রাজত্ব করে গেছে। কেচুয়া জাতির শাসকদের মর্যাদা দেবতাতুল্য বলে তাদের ইনকা বলা হতো। সূর্যদেবকে তারা ইনতি বলে ডাকত এবং সেই নামের প্রতিনিধিত্ব করত ইনকা শাসকরা। একটি উপজাতি হিসেবে বর্তমান পেরুর কোস্কো এলাকায় সুপ্রাচীন ইনকা সভ্যতার সূচনা হয়েছিল। ইনকা সাম্রাজ্য একসময় বিস্তৃত ছিল বর্তমান পেরুর কস্কো ভ্যালি থেকে উত্তরে ইকোয়েডর এবং সুদূর দক্ষিণে বলিভিয়া, চিলি এবং আর্জেন্টিনা পর্যন্ত। পেরুর কুস্কো ভ্যালিকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু মনে করা হচ্ছে বর্তমান প্রত্নতাত্তি্বক অনুসন্ধানকে ভিত্তি করে। ইনকাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেট অব দ্য আর্ট নিদর্শন যা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত_ তা হলো মাচুপিচু। সমতল থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ ফুট উপরে এক দুর্গ শহর।
ইনকা সভ্যতা
পেরুর কেস্কো অঞ্চলেই উপকথার প্রথম সাপা ইনকা মাংকো কাপাক ১২০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে কোস্কো রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে মাংকো কাপাকের উত্তরসূরিদের অধীনে আন্দিজ পর্বতমালার অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীগুলোকে নিজেদের মধ্যে নিয়ে এসে এ রাজ্যটি বিস্তার লাভ করে। ১৪৪২ সালের মধ্যেই রাজা পাচকুতিকের অধীনে ইনকারা তাদের সাম্রাজ্য দূর-দূরান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত করে। পাচকুতিক নামের অর্থই হচ্ছে_ পৃথিবী কাঁপানো মানুষ। তিনিই ইনকা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, যা কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের আগে দুই আমেরিকা মহাদেশের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য ছিল।

ইনকাদের নির্মাণশৈলী খুবই নিখুঁত এবং সাদামাঠা। মিসরীয় ফিরাউনদের মতো তাদের সম্রাটরাও ডেমিগড মর্যাদার অধিকারী ছিল। স্পা্যনীয় দখলদারদের আক্রমণে ১৫৩২ সালে ক্ষমতাধর ইনকা সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায় এবং অনেক পরে তাদের ধ্বংসস্তূপ থেকে ইতিহাসের পাতায় তুলে আনেন একজন উত্তর আমেরিকান এক্সপ্লোরার হায়ার‌্যাম বিংগাম। ১৯১১ সালে হায়ার‌্যাম বিংগাম তার ব্যক্তিগত ভ্রমণ অনুসন্ধিৎসা থেকে চলতে চলতে মাচুপিচু দুর্গনগরী, ইনকাদের শেষ আশ্চর্য নিদর্শন আবিষ্কার করেন। যখন তিনি প্রথম সে জায়গাটি খুঁজে পান তখন তিনি অনুমান করতে পারেননি, তিনি একটি মূল্যবান প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু তার সহজাত অনুসন্ধিৎসা তাকে আবার সেখানে ফিরে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে পেশাদার প্রত্নতাত্তি্বকদের সহায়তায় তিনি হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের এই সভ্যতাকে আবিষ্কার করেন।

বিধ্বংসী স্প্যানিশ অভিযাত্রীরা বারবার আঘাত হেনেছিল ইনকাদের প্রাচুর্যে। তারা লুটপাট, হত্যাসহ আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে ইনকা সভ্যতার সমৃদ্ধ শহরগুলো। মূলত সেই ধ্বংসযজ্ঞের কারণে ইনকা সম্পর্কে খুব অল্পই তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। ১৫২৭ সালে ইনকা সাম্রাজ্যে এক মহামারী দেখা দেয়। সেই মহামারিতে ইনকা রাজা ও তার উত্তরসূরি ছেলে মারা যান। রাজার অন্য দুই ছেলের মধ্যে সিংহাসনের লড়াইয়ে দেশজুড়ে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এদের একজন অ্যাটাহুয়ালপা জিতে গেলেও খুব বেশি দিন টিকতে পারেননি। ১৫৩২ সালে স্প্যানিশ যোদ্ধা ফ্রান্সিস পিজারো তাকে হারিয়ে দেন। পিজারো নামমাত্র রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসান অ্যাটাহুয়ালপার শত্রু মানকোকে। নতুন রাজা অবশ্য কখনোই রাজার সম্মান পাননি। তাই প্রতিহিংসায় মেতে উঠে মানকো। ইনকা রাজার সোনার মূর্তি এনে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ভিলকাবাম্বা শহরের পাহাড়ে হারিয়ে যান মানকো ও তার শক্তিশালী সেনারা। এরপর বহু বছর ধরে মানকো ও তার ছেলেদের সঙ্গে ইনকা সভ্যতার সিংহাসন জয় নিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে স্প্যানিশ যোদ্ধাদের। এর মধ্যে কারও পক্ষেই আর সেই ভিলকাবাম্বা কিংবা ভিটেকাস নামের শহর দুইটিকে গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব হয়নি।

স্প্যানিশ কলোনির মানচিত্রেও শহর দুইটির উল্লেখ নেই। কিন্তু এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে ইনকা সভ্যতার বিশাল রত্নভাণ্ডার। ইনকাদের শেষ রাজা এ শহরেই পুঁতে রেখেছেন অমূল্য ধনসম্পদ। ইনকাদের ধন-সম্পদের আশায় বহু প্রত্নতাত্তি্বক বছরের পর বছর অনুসন্ধান করে গেছেন নিরলসভাবে।

ধারণা করা হয়, আপুরিমাক নদীর অববাহিকায় চোককেকিরোই প্রাচীন ভিলকাবাম্বা শহরটি। এ ধারণা নিয়ে আমেরিকান বিশেষজ্ঞ বিংহাম গুপ্তধনের অনুসন্ধান শুরু করেন ১৯০৯ সালে।
বিংহাম ১৯০৯ সালে তার প্রথম অভিযানে বিফল হলেও দমে যাননি। আবার ইতিহাস ঘেঁটে শুরু করেন দ্বিতীয় অভিযান। পথে দেখা হয় এক ইন্ডিয়ানের সঙ্গে। তার সহযোগিতায় উরুবাম্বা থেকে দুই হাজার ফুট ওপরে এক প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান বিংহাম। তবে এ শহরই যে ভিলকাবাম্বা, সেটার অবশ্য প্রমাণ নেই। ১৯৬৪-৬৫ সালে জেনারেল সাভোয় বিংহামের অভিযাত্রার শেষ থেকে তার অভিযান শুরু করেন। কিন্তু ধন-সম্পদের কিছুই আবিষ্কার করা যায়নি।

তবে এটা ঠিক খুঁজে বের করা গিয়েছিল যে, ইস্পিরিতো পাম্পা শহরটিই সেই ভিলকাবাম্বা। পরে আরেকটি হারানো প্রাচীন শহর আবিষ্কার হয়। কিন্তু কোথাও ইনকাদের ধনসম্পদের দেখা মেলেনি। তবে ইনকা সভ্যতার প্রাচুর্যের ঠিকানা মিলেছে। কিন্তু তাতেও তৃপ্তি মেলেনি। এ শহরগুলো কি ভিলকাবাম্বা? তবে কোথায় ইনকাদের ধন-সম্পদের পাহাড়। ইনকা সভ্যতা আরও নানা কারণে হাজার বছর ধরে মানুষের কাছে এক অপার রহস্যের ভাণ্ডার হয়ে রয়ে গেছে। ইনকা সাম্রাজ্যের পতনের পেছনে দায়ী ছিল স্প্যানিশ দখলদাররা। ১৫৩২ সালে স্প্যানিশ দখলদার ফ্রান্সিসকো পিজারো তারা দলবল নিয়ে ইনকা সাম্রাজ্যে আক্রমণ করে এবং তাদের সম্রাটসহ সবাইকে হত্যা করে। ইনকাদের বন্দুক, কামান জাতীয় আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না বলে তারা সহজেই স্প্যানিশ দখলদারদের হাতে পরাজিত হয়। মাচু পিচু দুর্গ নগরী মেঘাচ্ছন্ন পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত ছিল বলে তা একসময় হারিয়ে যায় মানুষের মন থেকে। সুবিস্তৃত ইনকা সাম্রাজ্য কয়েকজন ইনকা সম্রাটের অধীন ছিল। তারা হলেন টুপাক, ওয়াইনা কাপাক ও পাচাকুটেক। আবিষ্কৃত প্রাচীন মাচু পিচু নগরী, যা বর্তমানে পেরুর আন্দিজ পর্বতমালায় অবস্থিত তা মূলত পাচাকুটেক সম্রাটের দুর্গ ও শীতকালীন নগরী ছিল বলে অনুমান করা হয়। আন্ডিজ হিমালয়, আল্পস্ ও রকির মতো দক্ষিণ আমেরিকার পর্বতমালা।

যেহেতু ইনকা সভ্যতার সবটুকুই বিভিন্ন প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনের ওপর ভিত্তি করে অনুমান করা, তাই মাচু পিচু নগরী এখনও এক রহস্যময় নগরী। ইনকাদের স্মৃতি ও প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনগুলো রহস্য হয়ে থাকার কারণ তাদের অধিক পরিমাণে স্বর্ণ ও রৌপ্যের ব্যবহার। স্প্যানীয় দখলদাররা নেটিভ আমেরিকানদের আক্রমণ ও তাদের দেশ দখল করার কারণ স্বর্ণ ও রৌপ্যের লোভ। সেজন্য মনে করা হয় ইনকাদের স্বর্ণ ও রৌপ্যের ঐতিহ্যই তাদের ধ্বংসের কারণ হয়েছিল। একই কারণে তাদের বিভিন্ন নিদর্শন স্প্যানীয়দের দ্বারা লুট হয়ে যাওয়া ও সেগুলোর স্বর্ণ ও রৌপ্য গলিয়ে ফেলার কারণে ইনকাদের সম্বন্ধে অনুমান করা আরও দূরূহ হয়ে পড়ে। স্বর্ণের প্রতি ছিল ইনকাদের অন্যরকম আগ্রহ। এর পেছনে কারণ ছিল তারা স্বর্ণকে সূর্য দেবের প্রতীক ভাবত। তাদের মন্দিরগুলোতে তাই স্বর্ণের ব্যাপক ব্যবহার ছিল। ফ্রান্সিসকো পিজারো অশ্ব, কামান, বন্দুক নিয়ে ইনকাদের তৎকালীন শাসক আতাউয়ালপাকে পরাজিত করে।

পিজারোর আগমনের কিছু আগে থেকেই এই পরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের অশনি সংকেত বেজে ওঠে যখন নিকটবর্তী প্যারাগুয়ে থেকে চিরিউয়ানো গোষ্ঠীর সৈন্যরা পর্তুগিজ দখলদার আলিক্সো গার্সিয়াকে নিয়ে প্রথম তাদের আক্রমণ করে আনুমানিক ১৫২৫ সালের দিকে। সেই আক্রমণ তারা প্রতিহত করেছিল তখন। তখন থেকে স্প্যানিশ সৈনিকদের দ্বারা সিফিলিস, বসন্ত রোগ এবং অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধি এ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
মহামতী সম্রাট টপা ১৪৯৩ সাল পর্যন্ত ইনকা শাসন করেছেন। এরপর সিংহাসনে আসীন হন তার উত্তরসূরি সম্রাট ওয়াইনা কাপাক, যিনি সাম্রাজ্য বিস্তারে বেশ মনোযোগী ছিলেন। এর কিছুদিনের মধ্যে অজ্ঞাত কারণে ওয়াইনা কাপাক এবং তার নিয়োজিত উত্তরাধিকার মারা যান। ধারণা করা হয়, ইউরোপীয়দের আমদানিকৃত কোনো সংক্রামক ব্যাধিতে তাদের মৃত্যু হয়। কাপাকের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে উয়াসকার ও আতাউয়ালপা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় এবং ১৫৩২ সালে আতাউয়ালপা জয়ী হয়ে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। তাদের নিজেদের অন্তর্কলহের কারণে তারা ইতিমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এ সময় স্প্যানীয় দখলদার ফ্রান্সিসকো পিজারো ১৮০ জন সশস্ত্র সৈন্য নিয়ে আবির্ভূত হয় দক্ষিণ আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় পেরুর উপকূলে। ইনকা রাজধানী কুসকো থেকে দূরবর্তী কাহামার্কা শহরে সম্রাট আতাউয়ালপা সৈন্যদের নিয়ে ক্যাম্পিং করেছেন শুনে পিজারো সেদিকে এগিয়ে যায়। ১৫৩২ সালের ১৫ নভেম্বর পিজারো তার দলবল নিয়ে কাহামার্কায় উপস্থিত হন। তারা সম্রাটের সম্মানে ভোজের আয়োজন করে। সম্রাট দাওয়াত গ্রহণ করলেও পরদিন স্প্যানীয়রা কৌশলে সম্রাট ও তার যোদ্ধাদের ঘিরে ফেলে এবং সৈন্যদের হত্যা করে। সম্রাট বন্দী হন। সম্রাট বন্দী অবস্থায় স্প্যানিশ ভাষা খানিকটা আয়ত্ত করলেন। এরপর তার মুক্তিপণ হিসেবে দুটি ঘরভর্তি রূপা ও একটি ঘরভর্তি স্বর্ণ দিতে চাইলেন। স্প্যানীয়রা সেই মুক্তিপণ হস্তগত করার পরপরই সম্রাটকে হত্যা করে। কারণ তারা ইতিমধ্যে বুঝে নিয়েছিল তারা স্বর্ণের অবারিত গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে। আতাউয়ালপাকে হত্যার পর সম্রাটের সৈন্যদের সঙ্গে স্প্যানীয়দের যুদ্ধে ইনকা যোদ্ধারা পরাজিত হয়।

এরপর থেকেই বস্তুত সেখানে স্প্যানীয় শাসন শুরু হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে স্প্যানীয়রা তাদের ওপর জোরজুলুমসহ ইনকা সভ্যতার বড় বড় স্থাপত্য, মন্দির ও বাড়িঘর ধ্বংস করে দেয়। ইনকা সভ্যতার নিদর্শনগুলো, যা মূলত মূল্যবান ধাতুতে গড়া ছিল তা তারা গলিয়ে ফেলে স্বর্ণ-রৌপ্যের লোভে। এর মধ্যেই স্প্যানীয়রা সম্রাট আতাউয়ালপার ভাই মানকোকে সিংহাসনে বসায়। চলতে থাকে মানকোর পুতুল শাসন। অন্যদিকে লুটেরা স্প্যানিশদের মধ্যে স্বর্ণ-রৌপ্যের ভাগাভাগি নিয়ে হাঙ্গামা বাধে। মানকো তাদের এই হানাহানির সুযোগ নিয়ে পালিয়ে গিয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ভিলকা বাম্বায় আশ্রয় নেন এবং নতুন রাজধানী পত্তন করেন। সেখান থেকে মানকো স্প্যানিশ রেজিমের বিরুদ্ধে গুপ্ত যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। এভাবে কয়েক দশক স্প্যানীয়দের সঙ্গে গুপ্ত যুদ্ধ পরিচালনা করার পর প্রায় চলি্লশ বছর পর ১৫৭২ সালে স্প্যানীয়রা ভিলকা বাম্বার অবস্থান খুঁজে পায় এবং ভিলকা বাম্বাও তারা ধ্বংস করে দেয়। মানকোর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সর্বশেষ ইনকা সম্রাট ও তার শহরের পতন ঘটে।

পিজারোর সৈন্যরা ভিলকা বাম্বা ধ্বংস করলেও মেঘাচ্ছন্ন পাহাড়ের উপত্যকায় নির্মিত মাচু পিচু তারা খুঁজে পায়নি। তাই মাচু পিচু অধরা ও অক্ষত থেকে যায়। কিন্তু এর রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি আজও। হয়তো ইনকাদের অস্তিত্বকে জানান দিতেই এই দুর্গ নগরী অক্ষত রয়ে গিয়েছিল। কারণ পিজারো ভিলকা বাম্বার মন্দির থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ পাথুরে নগরী ধ্বংস করে ফেলেছিল। তারা বেছে বেছে স্থানীয় লোকদের সব ধর্মীয় তীর্থস্থানকে ধ্বংস করে। চারশ' বছর পর ইনকাদের শেষ রাজধানী ভিলকা বাম্বা নগরীর খোঁজ করতে গিয়ে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক হায়ার‌্যাম বিংগাম ব্যক্তিগত অনুসন্ধিৎসার একপর্যায়ে দুর্গম পর্বত শৃঙ্গের সরু উপত্যকায় মাচু পিচু নগরী খুুঁজে পান ১৯১১ সালে।

আবিষ্কৃত মাচু পিচু মেঘের দেশের নগরী। কি কারণে মাচু পিচু স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছিল বা পরিত্যক্ত হয়েছিল তার সঠিক তথ্য আজও অজানা রয়ে গেছে। ইনকাদের কোনো লিখন পদ্ধতি বা লিখিত দলিলাদি না পাওয়াই এ রহস্যের অন্যতম কারণ। ইনকাদের মাচু পিচু নগরীর অবস্থান পেরুর কুসকো থেকে ৫০ মাইল উত্তর পশ্চিমে আন্দিজ পর্বতমালার দুটি সুউচ্চ শৃঙ্গের মধ্যবর্তী সরু উপত্যকায়। কুসকো পেরুর রাজধানী লিমা থেকে ৩৫৭ মাইল পূর্বে অবস্থিত। মাচু পিচুর অবস্থান নিকটবর্তী নদীবাহিত সমভূমি থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ ফুট উপরে-সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা প্রায় ৭ হাজার ৫০০ ফুট। নিচে প্রবাহমান নদীটি উরুবাম্বা নদী। পেছনে মাথা উঁচু বিশাল পর্বত শৃঙ্গটি ওয়াইনা পিচু। ধাপে ধাপে বাঁধানো চত্বরগুলো পাহাড়ের গায়ে এমনভাবে স্থাপিত যাতে মূল স্থাপনা ধসে না পড়ে। অনেকের মতে, এসব বাঁধানো চত্বরে ফসল ফলানো হতো যেহেতু বিশেষ কায়দায় এসব বাঁধানো চত্বরের উপরিভাগে কৃষি উপযোগী টপ সয়েল ব্যবহৃত হয়েছে।

মূল স্থাপনা, মন্দির, বেদি ও এক কক্ষবিশিষ্ট ঘরগুলোর দেয়াল পাথরের নিপুণ কারিগরি নিদর্শন। ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, সব স্থাপনা চালবিহীন, কারণ সম্ভবত তারা বাঁশ, কাঠ ও ছনের চালা ব্যবহার করত যেগুলো কালের বিবর্তনে এখন নিশ্চিহ্ন। তাদের নির্মাণশৈলী বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। কোনো রকম চাকা বা লোহার যন্ত্রপাতি ছাড়া তারা কিভাবে সুবিশাল পাথর কেটে কেটে তা পরপর গেঁথে দিয়েছে তা এক রহস্য। মাচু পিচু নগরী এক মাস্টারপিস। স্থাপত্যবিদ, প্রকৌশলী এবং পাথরের কারিগররা তাদের অপূর্ব দক্ষতায় নিপুণভাবে পাথরের এসব স্থাপত্য নির্মাণ করেছিল। প্রায় আধা মাইল দূরের প্রাকৃতিক পানির উৎস থেকে মাচু পিচু নগরীতে সয়ংক্রিয়ভাবে পানির সাপ্লাই পানি প্রকৌশলীদের অসাধারণ বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচয় বহন করে।
মাচুপিচু হচ্ছে ইনকাদের সবচেয়ে বিস্ময় নগরীর নাম। মাচুপিচু শব্দটি নেটিভ আমেরিকান কেচুয়া জাতির ব্যবহৃত শব্দ। আর এর অর্থ প্রাচীন পর্বত। মাচুপিচুর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭,৫০০ ফুট উচ্চতায়। অধিকাংশ সময় মাচুপিচু নগরী মেঘের আড়ালে ঢাকা থাকে বলে একে মেঘের দেশের নগরী বলে। এমনকি উপর দিয়ে চলাচল করা বৈমানিকদেরও এটি চোখে পড়ে না। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন ২০০৭ সালের ৭ জুলাই মাচুপিচুকে আধুনিক সপ্তাশ্চর্যের একটি বলে ঘোষণা দেয়। মাচুপিচু নগরীটি কোনো ধ্বংসাবশেষ নয় বরং একেবারে অব্যয় ও অক্ষত অবস্থায় কী এক অজ্ঞাত কারণে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। বর্তমান বিশ্বের কাছে ইনকা সভ্যতা বলতে মাচুপিচুর পরিচিতি সবচেয়ে বেশি। তাই প্রতিবছর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটক মাচুপিচু দেখতে ছুটে যায় পেরুর রাজধানী লিমা থেকে ৩৫৭ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত কুসকো শহরে।

মূলত ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে পেরুর উচ্চভূমি কুজবেন অঞ্চলে ইনকা সাম্রাজ্যের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমান ইকুয়েডর, পেরু, বলিভিয়া, উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনা, উত্তর চিলি ও দক্ষিণ কলম্বিয়াও ইনকা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইনকারা জাতি হিসেবে মোটামুটি সভ্য ছিল বটে, কিন্তু তাদের সভ্যতায় ধর্মভিত্তিক কুসংস্কারের কোনো শেষ ছিল না। সূর্য দেবতা 'ইনটি' ছিল ইনকা ধর্মের মূল কেন্দ্র । তবে এর পাশাপাশি তারা স্থানীয় অনেক দেব-দেবীকে মেনে নিয়েছিল। প্রজারা এসব দেব-দেবীর পূজা করত, যারা 'হুয়াকাস' নামে পরিচিত ছিল। যদিও ইনকারা মেক্সিকোর আজটেক্সাদের মতো রক্তপিপাসু ছিল না, তবুও তারা নরবলি পছন্দ করত। বিশেষ করে 'কাপাকচা' নামের বিশেষ অনুষ্ঠানে শিশুদের বলি দেওয়া হত। দেব-দেবীর উদ্দেশে উৎসর্গ করার আগে ইনকারা কিভাবে তাদের সন্তানদের মোটাতাজা করত, তার নির্মম প্রমাণ পাওয়া গেছে কিছু মমি আবিষ্কারের মাধ্যমে।

আগ্নেয়গিরিকে কিংবা অন্য দেবদেবীকে শিশু উৎসর্গ করা ইনকা সভ্যতার একটি বর্বরতম দিক। দেবদেবীদের উৎসর্গের আগে ইনকারা তাদের সন্তানদের মোটাতাজা করে নিত। আর এই কাজটি তারা কিভাবে সম্পাদন করত, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে ক'দিন আগেই। প্রাচীন ইনকা সভ্যতার নিকটবর্তী লুলাইলাকো নামের একটি আগ্নেয়গিরির চূড়ায় সংরক্ষিত ৫০০ বছরের পুরনো মমির চুল পরীক্ষার মাধ্যমে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত জানা গেছে। সেখানে 'লুলাইলাকোর কুমারী' নামে পরিচিত ১৫ বছর বয়সী এক বালিকা এবং 'লুলাইলাকোর বালক' নামে সাত বছর বয়সী এক বালকের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। মমিকৃত দুটি দেহের সঙ্গে ছয় বছর বয়সী আরেকটি ছোট মেয়ের মমির সন্ধান পাওয়া যায়। উত্তর-পশ্চিম আর্জেন্টিনায় চিলির সীমান্তবর্তী লুলাইলাকো পাহাড়ে এসব মমি ১৯৯৯ সালে আবিষ্কার হয়। ওখানকার প্রতিটি দেহই সূক্ষ্মভাবে সংরক্ষিত ছিল। যদিও বজ্রপাতে ছোট মেয়েটির দেহাবশেষ ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে তার ডাকনাম হয় 'বজ্রের মেয়ে'। লুলাইলাকোর কুমারী বা 'লা ডনচেলো'কে বিবেচনা করা হচ্ছে আন্দিজের সব মমির মধ্যে সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত। কিছুদিন আগে এটি জনসমক্ষে প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এটি 'হাই মাউন্টেইন আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম'-এ রাখা আছে, যেটি সাল্টার নিকটবর্তী একটি শহরে অবস্থিত। তাদের দেহাবশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, মৃত্যুর পূর্ববর্তী ১২ মাসে তাদের খাদ্যাভ্যাসে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছিল। গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন একজন ব্রিটিশ গবেষক। গবেষকরা জানান, পর্বতশৃঙ্গে অবস্থিত একটি ধর্মীয় সমাধিস্থলের উদ্দেশে যাত্রার আগে বাচ্চাগুলোকে বিশেষ ধরনের আনুষ্ঠানিক পথ্য দেওয়া হতো। লুলাইলাকো আগ্নেয়গিরির উচ্চতা ২২,১১০ ফিট (৬,৭৩৯ মি.)। সমাধিস্থলটি এর ৮২ ফিট (২৫ মি.) উঁচুতে অবস্থিত। সেখানে তাদের শ্বাসরোধে হত্যা করা হতো অথবা আগুনের উত্তাপে মৃত্যুর জন্য রেখে আসা হতো। সম্ভবত ইনকাদের বিজিত জনগোষ্ঠীদের মাঝ থেকে এ ছেলে-মেয়েকে বেছে নেওয়া হতো। যে তথ্য এ সম্ভাবনা বৃদ্ধি করছে তা হলো, 'বলির পাঁঠা' হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার আগে এ ছেলেমেয়েরা সাধারণত কৃষি খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত ছিল। শুধু পাহাড়ের দেবতাদের তুষ্ট করতেই তাদের বলি দেওয়া হতো না, বরং একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সম্পর্কে বিজিতদের মনে ভয় ও সম্মান ঢুকিয়ে দেওয়াও এর একটি উদ্দেশ্য ছিল বলে গবেষকরা মনে করেন।

এ গবেষণা দলের অন্যতম একজন গবেষক ইউনিভার্সিটি অব ব্রাডফোর্ডের টিমোথি টেইলর। তিনি বলছেন, দেখে মনে হচ্ছে বছরব্যাপী ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত পর্যায়ে বাচ্চাগুলোকে প্রধান সমাধিস্থলের দিকে নিয়ে যাওয়া হতো। এ সময় তাদের ওষুধ দিয়ে মাতাল করে আগুনের মুখে ঠেলে দেওয়া হতো। তিনি আরও বলছেন, অবশ্য কেউ কেউ এ নির্মম হত্যাকাণ্ডকে আদিম বিশ্বাস ব্যবস্থার আলোকে বিচার করতে পছন্দ করবেন। কিন্তু আমাদের এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, ইনকারা ছিল সাম্রাজ্যবাদী। সম্ভবত দুর্গম এলাকায় ভয় ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কৃষিজীবীদের সন্তানদের প্রতি এ নির্মম আচরণ ভালো কৌশল হিসেবে কাজ করেছিল।
নতুন একটি গবেষণায় নৃবিজ্ঞানী ড. টেইলর, তার সহকর্মী এবং অন্যরা মমির চুল পরীক্ষা করেছেন। কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন আইসোটোপ পরীক্ষার জন্য তারা কুমারী মেয়ে ও ছেলেটির চুলের নমুনা নেন। আইসোটোপ হলো বিভিন্ন পদার্থের আণবিক চলক। চুলে এসব উপাদানের উপস্থিতির তারতম্যের ভিত্তিতে তাদের খাদ্যাভ্যাস ও বাসস্থান সম্পর্কে জানা যাবে।

'প্রসিডিংস অফ ন্যাশনাল একাডেমী অফ সায়েন্সেস'-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, এসব শিশু জীবনের বেশির ভাগ সময় যে খাদ্যে অভ্যস্ত ছিল তা প্রধানত সবজি প্রধান, যেমন আলু। এটি তাদের কৃষি ভিত্তিক জীবনের দিকে ইঙ্গিত করে। তাদের চুলের বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, মৃত্যুর পূর্ববর্তী ১২ মাসে তারা ভুট্টা ও প্রাণিজ আমিষ গ্রহণ করতে শুরু করে। তৎকালীন সমাজে ভুট্টাকে অভিজাত শ্রেণীর খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আর প্রাণিজ আমিষের উৎস ছিল শুষ্ক লামার মাংস যা 'চরকি' নামে পরিচিত।

ড. উইলসন বলেন, 'দুর্ভাগা এসব শিশুর চুলের নমুনা থেকে নির্মম এক গল্প উদ্ঘাটিত হচ্ছে। বলির আগে কিভাবে এসব শিশুকে মোটাতাজা করা হতো তা ধীরে ধীরে জানা যাচ্ছে।' তিনি আরও বলেছেন, 'তাদের খাদ্যাভ্যাসের বিস্ময়কর পরিবর্তন ও চুল কাটার সাঙ্কেতিক ধরন থেকে বোঝা যায়, নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হতো। ফলে মৃত্যুর বেশ কিছু সময় আগেই তাদের বলির দিনক্ষণ গোনা শুরু হয়ে যেত।'

হেয়াটার আইসোটোপ বিশ্লেষণ থেকে আরও জানা গেছে, মৃত্যুর তিন থেকে চার মাস আগে তাদের জীবনযাত্রায় আরও এক দফা পরিবর্তন এসেছিল। কখন তারা আগ্নেয়গিরির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল তাও জানা যায়। সম্ভবত তারা ইনকা রাজধানী 'কুজকো' থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। এসব শিশুকে ভুট্টার মদ বা 'চিচা' নামের পানীয় এবং কোকো খেতে দেওয়া হতো। উচ্চতাজনিত অসুস্থতার চিহ্ন দূর করতে এসব খেতে দেওয়া হতো। এছাড়া তাদের মাতাল করার উদ্দেশ্যেও এসব খাবার দেওয়া হতো, যাতে তারা নিজেদের দুর্ভাগ্যকে মেনে নেয়। তাদের চুলে কোকোর উপজাত দ্রব্যের উপস্থিতি এটা প্রমাণ করে। তবে কুমারী মেয়েটির চুলে কোকোর উচ্চ উপস্থিতি লক্ষণীয়। বয়সে সবার বড় হওয়ায় সম্ভবত সে বুঝতে পেরেছিল তাদের ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে। ইনকারা যেসব উপজাতীয়কে পরাজিত করত, তাদের স্থানীয় দলপতিদের ছেলেমেয়েদের বলির জন্য পছন্দ করত। বিশেষ করে দেখতে আকর্ষণীয় এমন ছেলেমেয়েকে তারা এজন্য নির্বাচন করত। 'আকলাস' নামে কিছু মেয়েকে চার বছর বয়সেই নির্বাচন করা হতো। নারী পুরোহিতরা তাদের লালন-পালন করতেন। এসব মেয়ের কাউকে অভিজাত ব্যক্তিদের স্ত্রী হিসেবে 'উপহার' দেওয়া হতো, কেউ কেউ পূজারিণী হতো এবং অন্যরা বলির শিকার হতো। আবিষ্কৃত দুটি মমিকে অনেক উচ্চতায় ফেলে রেখে আসা হয়েছিল, যাতে তারা সেখানেই মারা যায়। এ রকম অবস্থায় এসব শিশু খুব অল্প সময়েই মৃত্যুবরণ করত। যাহোক, পূর্ববর্তী গবেষণা থেকে জানা যায়, লুলাইলাকোর বালককে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। এ সময় তাকে দড়ি দিয়ে এত শক্ত করে পেঁচানো হয়েছিল যে, তার পাজর ভেঙে গিয়েছিল এবং তার নিম্নাঙ্গ স্থানচ্যুত হয়ে গিয়েছিল। আলোচিত এই আবিষ্কার ও গবেষণার মাধ্যমে প্রাচীন আন্দিজ সভ্যতার ধর্মীয় আচার ব্যবস্থার অজানা দিক এবং ইনকাদের সাম্রাজ্যবাদী নিষ্ঠুরতার নানা দিক উন্মোচিত হয়েছে।

-রণক ইকরাম

0 comments:

Post a Comment