বিস্ফোরক হলো এমন ধরনের পদার্থ যা তাপে কিংবা জোরালো আঘাতে প্রচণ্ড শব্দে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ যখন ঘটে তখন তার উপাদানগুলো গ্যাসে রূপান্তরিত হয় এবং এ সময় প্রচণ্ড তাপ ও চাপের সৃষ্টি হয়। বেশিরভাগ বিস্ফোরকের মধ্যে থাকে কার্বন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন। বিস্ফোরণের পর কার্বনডাই অক্সাইড, বাষ্প ও নাইট্রোজেন গ্যাস বেরিয়ে আসে। বিস্ফোরক প্রধানত তিন ধরনের।
রাসায়নিক বিস্ফোরক : দু'ধরনের রাসায়নিক বিস্ফোরকের একটি হলো নিম্নশক্তির আর অন্যটি হলো উচ্চশক্তির। নিম্নশক্তির বিস্ফোরক খুব দ্রুত বিস্ফোরিত হয়। বারুদ হলো একটি নিম্নশক্তির বিস্ফোরক আবার কর্ডাইট আর একটি নিম্নশক্তির বিস্ফোরক। উচ্চশক্তির বিস্ফোরক হচ্ছে ওইগুলো যাতে অতি দ্রুত রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়ে তাপ ও গ্যাসীয় পদার্থের সৃষ্টি করে। এগুলো তখনই ব্যবহৃত হয় যখন কোনো কিছু চূর্ণ-বিচূর্ণ করার জন্য বিপুল পরিমাণ বলের প্রয়োজন হয়। ট্রাই-নাইট্রো-টলুইন, পিকরিক এসিড, নাইট্রোগি্লসারিন ইত্যাদি হলো উচ্চশক্তির বিস্ফোরক।
যান্ত্রিক বিস্ফোরক : কার্ডক্স হলো একটি যান্ত্রিক বিস্ফোরক, সিলকরা ধাতব টিউব দিয়ে এটি তৈরি। কার্ডক্স একটি ধীরগতি ও কম শক্তিসম্পন্ন বিস্ফোরক, খনির মধ্যে বড় বড় পাথর ভেঙে টুকরো টুকরো করতে এটি ব্যবহার হয়।
পারমাণবিক বিস্ফোরক : প্রচণ্ড তাপমাত্রার উপর এ বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ নির্ভর করে। ওই তাপমাত্রা কয়েক লাখ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হতে পারে। এ বিস্ফোরক প্রচণ্ড পরিমাণ গ্যাস, তাপ ও আলো উৎপন্ন করে। পারমাণবিক বোমা ও হাইড্রোজেন বোমা হলো এ ধরনের বিস্ফোরক। প্রায় সব যুদ্ধাস্ত্রে বিস্ফোরকের ব্যবহার করা হয়। খনিতে পাথর টুকরো করতে, নদীতে ভাসমান বরফ খণ্ডকে ভাঙতে এবং নদীর উপর বাঁধ তৈরি করতে নানা ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার হয়ে থাকে। রজার বেকন নামে এক ইংরেজ ভিক্ষু ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বারুদ আবিষ্কার করেন বলে মানুষের বিশ্বাস। যদিও এরও কয়েক শতাব্দী আগে চীনা বা আরবীয়রা ওই ধরনের মিশ্রণ তৈরি করেছে যার কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। বারুদের আবিষ্কার সেনাবাহিনীর কাছে এক অবদান স্বরূপ প্রমাণিত হয়েছে। নতুন নতুন অনেক অস্ত্রের জন্ম হয়েছে এর থেকে। প্রথমদিকে বারুদ তৈরি করা হতো নিজস্ব প্রয়োজনে যা ছিল খুবই বিপজ্জনক। সপ্তদশ শতাব্দীতে বড় বড় প্রস্তর খণ্ডকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজে বারুদ ব্যবহার হয়। এ ব্যাপারে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়। ১৮৪৬ সালে যখন 'সকনবেন' নামক এক জার্মান রসায়নবিদ তুলোর আঁশকে ঘন নাইট্রিক এসিড ও সালফিউরিক এসিড সিক্ত করে 'গান কটন' নামক বিস্ফোরক তৈরি করেন। এর ঠিক এক বছর পর ১৮৪৫ সালে 'অ্যাসকানিয়ো সবরেরো' নামক এক ইতালীয় ব্যক্তি নাইট্রোগি্লসারিন আবিষ্কার করেন। তিনি গি্লসারিনের সঙ্গে নাইট্রিক এসিড ও সালফিউরিক এসিড মিশ্রণ করে এ বিপজ্জনক বিস্ফোরক তৈরি করেন। ১৮৬৬ সালে বিখ্যাত সুইডিশ বিজ্ঞানী 'আলফ্রেড নোবেল' ডিনামাইট আবিষ্কার করে এক নতুন ইতিহাসের সূচনা করেন। অস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রে ডিনামাইট এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিনামাইট ক্রমশ একটি নিরাপদ গান পাউডার এবং নাইট্রোগি্লসারিন হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা ট্যাঙ্কের আবিষ্কার করে এবং সফলতার সঙ্গে তা যুদ্ধে ব্যবহার করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার মতো ভয়ঙ্কর যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হয়। আমেরিকানরা জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। রকেটের উদ্ভবও ঘটে ঠিক একই সময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিস্ফোরক ও যুদ্ধাস্ত্র আবিষ্কার এবং তৈরি ইতিহাসে এক নাটকীয় মোড় নেয়।
-প্রীতম সাহা সুদীপ

সুনৃদর
ReplyDelete