সিপাহি বিপ্লবের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ প্রশিক্ষিত ও প্রভাবশালী নেতৃত্বের অভাব, অর্থের অভাব, সিপাহিদের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের সুযোগ না থাকা, একশ্রেণীর দেশীয় ইংরেজ ভক্তের বিশ্বাসঘাতকতা। এ ছাড়া কলকাতা ও ঢাকার শিক্ষিত শ্রেণী ও সম্পদশালী ভূস্বামী এ যুদ্ধকে সমর্থন করেনি। বিপ্লবের ফলে যুদ্ধ শেষে ইংরেজরা নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছে। ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কেও কয়েকজন দেশপ্রেমীকে ফাঁসি দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাদের মাংস কাক-শকুনে খায়। পচে-গলে খসে পড়তে থাকে। বাহাদুর শাহকে গ্রেফতার করে রেঙ্গুনে নির্বাসন দেওয়া হয়। মুঘল রাজবংশের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সর্বশেষ এ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে কোম্পানির শাসনের ইতি ঘটিয়ে ব্রিটিশ রাজশক্তির সরাসরি নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এই উপমহাদেশটি। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের ইতি ঘটিয়ে ব্রিটিশ রাজের অধীনে শুরু হয় ভারতবর্ষের অধীনতার আরেক মহাকাল। লর্ড ক্যানিং ভারতবর্ষের প্রথম ভাইসরয় নিযুক্ত হন। ঔপনিবেশিক শাসনের ৯০ বছরে এদেশে এসেছে রক্তচোষা নীলকর দস্যুরা। তারা বাংলার কৃষকের সোনার ধান ফলতে দেয়নি। জোর করে নীল চাষ করতে বাধ্য করেছে। এই নীলদস্যুদের হাতে নিপীড়ন-নির্যাতনে রক্তাক্ত হয়েছে হাজার হাজার কৃষক। সাধারণ মানুষ। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে দেশজুড়ে নীল বিদ্রোহ শুরু হয়। কৃষকদের দুর্বার প্রতিরোধের মুখে ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে ইংরেজ নীল কুঠিয়ালরা নীল ব্যবসা বন্ধ করে দেশে ফিরে যায়।
গ্রন্থনা : তাহ্মীদুল ইসলাম

No comments:
Post a Comment