Wednesday, March 2, 2011

জাতীয় পতাকা দিবস

২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ছাত্রসমাবেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। লাল, সবুজ, সোনালি তিন রঙের পতাকাটি সেই যে বাংলার আকাশে উড়লো তা আর নামাতে পারেনি পাকিস্তানের সুস-জ্জিত সেনাবাহিনী ও সরকার।
'জয় বাংলা', 'পিন্ডি না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা', 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর'-মার্চে বাংলার আকাশ বাতাস শেস্নাগানে শেস্নাগানে মুখর হয়ে উঠেছিল। দিকে দিকে শুরু হয় পাকিস্তানের পতাকা পোড়ানো। আর এই সময়টাকেই ছাত্রনেতারা বেছে নিলেন বাংলার স্বাধীকার আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিপূর্ণভাবে রূপান্তর করার মোক্ষম মুহূর্ত হিসেবে।

আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গোপনে একটি স্বাধীন বাংলা বিপস্নবী পরিষদ গঠন করেছিলেন এই ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। এই কাজটি তারা করেছিলেন ১৯৬৯ সালে, ১১ দফা আন্দোলন চলার সময়। এই বিপস্নবী পরিষদের সদস্যদের ভাবনায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশা ছিল। ১৯৭১ সালের পহেলা মার্চ পাকিস্তানিদের বিশ্বাসঘাতক চেহারা আবারও উন্মোচিত হয় বাংলার মানুষের সামনে। এর প্রতিবাদে ছাত্রনেতারাও তার জবাব দেবার সিদ্ধান্ত নেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক জনসভা আহ্বান করা হয় ২রা মার্চ। সেই বিশাল সভায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি আ স ম আব্দুর রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখন, ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

এ প্রসঙ্গে নূরে আলম সিদ্দিকী তার 'পহেলা থেকে ২৫ মার্চ' শীর্ষক স্মৃতিচারণমূলক লেখায় বলেছেন, 'ঃ২৫ মার্চের পর কিছু নেতা এবং উপনেতা আমাদের ওপর রুষ্ট হয়ে দীর্ঘ ন'মাস প্রচার করেছেন যে, আমরা ভাবাবেগে বা উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে স্বাধীনতার পতাকা তুলে নেতার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছি। আজ তারা বাস্তবতাকে অাঁচ করতে পেরেছেন বলেই আমার মনে হয়। এই বেচারারা বড় অসহায়। এরা নেতাকে উপলব্ধি করতে পারতেন না।

এদের দোষ নেই। সেদিন পল্টনে আসবার আগে নেতা আমাকে কি বলেছিলেন, আমাদের ওপর নেতার সার্বিক কি নির্দেশ ছিল- ওদের তা জানার কথা ছিল না। তবু এই অপপ্রচার বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল এবং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দৃঢ়তায় এসব বিভ্রান্তি কেটে যায়। ২ তারিখে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে যে সভা হয়েছিল তা শুধু আয়তনের বিচারেই নয় গুরুত্বের বিচারেও ঐতিহাসিক। ঐদিন স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলন করা হয়। অবশ্য ঐ সভার সভাপতি হিসাবে একটা কথা অবশ্যই আমি স্বীকার করব ঐ পতাকা তোলার কোন পূর্ব পরিকল্পনা আমাদের ছিল না।'

'তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী (সার্জেন্ট জহুরুল হক ১৫ ফেব্রুয়ারি শহীদ হন -তারই স্মরণে) রেজিমেন্টাল পতাকা ঘাড়ে করে একটি জঙ্গি মিছিলে নামে। এদিকে একটার পর একটা পাকিস্তানের পতাকা পুড়ছিল সেই জনসমুদ্রে। হঠাৎ সভা থেকে দাবি উঠল, ঐটাই বাংলাদেশের পতাকা, ওটাকে উড়িয়ে দাও। আমি মিছিলকারীর হাত থেকে পতাকাটি নিলাম, জনতা প্রচণ্ড হর্ষধ্বনি দিল এবং সভা পরিচালনার জন্যে যখন মাইকের কাছে যেতে হল তখন পতাকাটি রবের হাতে দিয়েছিলাম। পরবর্তীকালে এটাই বাংলাদেশের পতাকা হয়েছে। ঐ পতাকা আমরা চার জনে ২৩ মার্চ পল্টনে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করি এবং ছাত্রলীগ বাহিনী তাকে সামরিক কায়দায় অভিনন্দন জ্ঞাপন করে।'

ছাত্রনেতারা পরদিন অর্থাৎ ৩ মার্চ, ১৯৭১ পল্টন ময়দানে জনসভা করে সেখানে বাংলাদেশের পতাকা তোলেন এবং একই সঙ্গে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন। এতে শুরুতেই উলেস্নখ করা হয়, 'স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণা হয়েছে।'

পাকিস্তানী উপনিবেশবাদীদের হাত থেকে মুক্তির পথ হলো স্বাধীন জাতি হিসাবে, মুক্ত নাগরিক হিসাবে বেঁচে থাকা। এই যুক্তি উপস্থাপন করে ইশতেহারে ঘোষণা করা হয় ৫৪ হাজার ৫শত বর্গমাইল বিস্তৃত ভৌগলিক এলাকায় ৭ কোটি মানুষের জন্য আবাসভূমি হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম এ রাষ্ট্রের নাম হবে বাংলাদেশ।

সেই পতাকা উত্তোলনের মুহূর্তেই ছাত্ররা বুঝে নিয়েছিল 'যুদ্ধ অনিবার্য'। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু দিলেন সেই যুদ্ধ প্রস্তুতির ডাক। বললেন, 'ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল'। সেদিন সচিবালয়েও পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র অাঁকা পতাকা উড়ানো হয়। সেদিন রাতে হঠাৎ করে বেতার মারফত ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করা হয়। কারফিউ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও শ্রমিক এলাকা থেকে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা প্রবল শেস্নাগান তুলে কারফিউ ভেঙে মিছিল বের করে। শেস্নাগান ছিল : 'সান্ধ্য আইন মানি না', 'জয় বাংলা', 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর'। সমস্ত শহরে কারফিউ ভঙ্গ করে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। ডিআইটি এভিনিউয়ের মোড়, মর্নিং-নিউজ পত্রিকা অফিসের সামনে রাত সাড়ে নয়টায় সামরিক বাহিনী জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। মানুষের বিশাল মিছিল কারফিউ ভঙ্গ করে গভর্নর হাউজের দিকে এগিয়ে গেলে সেখানেও গুলি চালানো হয়। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ ভঙ্গকারীদের ওপর বেপরোয়া গুলি চলে।

-০০ আসিফুর রহমান সাগর
ছবি স্বত্বঃ রেজওয়ান

2 comments:

  1. Attгaсtivе sectіon of cοntent.
    I just stumbled upοn yοur ѕite anԁ іn aсcеsѕion саρital to аssеrt
    that Ӏ get aсtually enϳoyed acсоunt уour blog postѕ.
    Anywaу I'll be subscribing to your augment and even I achievement you access consistently quickly.

    my blog - chatroulette

    ReplyDelete
  2. You cаn certаinly see youг sκills іn the аrtiсle уou wгite.
    Τhe aгеna hopeѕ for еvеn mοrе ρassіonatе writers
    lіkе you whο aге nοt afrаid tо
    ѕaу how they believe. Аlways gο аfter youг heart.


    mу ωebsite ... get rid of hemorrhoids

    ReplyDelete