তাজমহল দেখে মনে হয়/যেন আজও সে প্রেম এসে কথা কয় ... হ্যাঁ, প্রেম চিরন্তন। দেশ-কাল ভেদে প্রেম-ভালোবাসা প্রকাশের প্রভেদ থাকলেও প্রেমের আকুলতায় প্রভেদ নেই। সম্রাট শাহজাহান যেমন তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলকে ভালোবেসে; শ্বেতমর্মরে গড়েছেন তাজমহল, গড়েছেন প্রেমের অমরগাঁথা। তেমনি পঞ্চগড়ের হাফিজউদ্দিন প্রিয়তমা স্ত্রীকে ভালোবেসে তার কবরের পাশে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের ২৭টি বছর।
ভালোবাসার এই ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত গড়ে হাফিজউদ্দিন বনেছেন এ যুগের সম্রাট শাহজাহান।
পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের বাকপুর গ্রামের মৃত বরকত আলী মিয়ার ছেলে বর্তমানে অশীতিপর মোঃ হাফিজউদ্দিন। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তের দুই বছর পর বাড়ির পাশেই বিয়ে করেন ৬ বছরের শুকুরী বিবিকে। বিয়ের ৭-৮ বছর পর্যন্ত ছোট্ট
শুকুরী হাফিজউদ্দিনের মা সূর্যবানু বিবির সঙ্গেই থাকতেন। এরপর ১৯৫৬ সালের দিকে দু'জনের সংসার শুরু হয়। প্রেম-ভালোবাসায় ভালোই কাটছিল হাফিজ-শুকুরীর সংসার। বিয়ের ১৯ বছরের মাথায় স্ত্রী শুকুরী মারা যান। স্ত্রীর এভাবে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারেননি নিঃসন্তান হাফিজ।
স্ত্রীর স্মৃতিচারণ করেন হাফিজ; বলেন, 'মৃত্যুর আগের রাতে বিবি আমার কাছে মিষ্টি খেতে চেয়েছিল, মিষ্টি এনে দিয়েছিলাম। রাতে দু'জনে মিলে মিষ্টি খেয়েছি। রাতভর দু'জনের অনেক কথা হলো। 'আমার জন্য কানবেন না, আমি থাকব না এমন কথা বলে পরদিন বিবি আমার হাঁটুতে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।'
স্ত্রীর এমন বিদায়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েন হাফিজ। দাফনের পর ছুটে যান স্ত্রীর কবরে। ডাকতে থাকেন তার প্রিয় সঙ্গিনী বিবিকে। কিন্তু সেই আকুলতায় সাড়া দেননি শুকুরী বেগম। হাফিজ ভাবেন, 'আগের রাতে বিবি আমার সঙ্গে ছিল, কথা বলেছে, আজ কেন নেই। কোথায় গেল তার আত্মা।'
স্ত্রীর আত্মার খোঁজে গৃহত্যাগ করেন হাফিজ। হেটে রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। আহার ও নিদ্রাহীন ঘুরতে ঘুরতে কুমিল্লার সোনাকান্দা এলাকায় এক পীরের সানি্নধ্যে আসেন হাফিজ। আবদুর রহমান নামের ওই পীরের দরগায় শুরু করেন সাধনা আর তপস্যা।
পীরের দরগায় ৪১ দিন কবরের ভেতর এবং ১ বছর ভাত না খেয়ে দুধ আর কলা খেয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে ১৯৭১ সালে শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। যুদ্ধের পর ১৯৭৮ সালের দিকে হাফিজউদ্দিন নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। ওই সময়ের অগ্রহায়ণ মাসের ২ তারিখ হাফিজউদ্দিন স্ত্রীর কবরের পাশে আশ্রয় নেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা ২৭ বছর স্ত্রীর কবরের পাশে ঘর তুলে বসবাস করেন হাফিজউদ্দিন। এ দীর্ঘ সময়ে বনজঙ্গলে ঘেরা নির্জনস্থানে ভয়ভীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ তার ভালোবাসার কাছে পরাজিত হয়েছে।
২০০৬ সালে আত্মীয়-স্বজনদের চাপে বিবির কবরস্থান ছেড়ে আসতে হয় হাফিজউদ্দিনকে, সবাই মিলে জোর করে বিয়ে করান আরেকটি। কিন্তু কবরস্থান ছাড়লেও বাড়িতে ফেরেননি তিনি। বাড়ির বাইরে নিজের কবর খুঁড়েছেন তিনি। সেখানেই ঘর তুলে বাস করছেন এখনও। তার বর্তমান স্ত্রীর সন্তানরাও বিষয়টি মেনে নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বাকপুর গ্রামে গিয়ে হাফিজউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তার জীবনকাহিনী। পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে চোখ ভিজে আসে হাফিজউদ্দিনের। দুহাতে চোখ মুছতে মুছতে তিনি জানান, সংসার জীবনে আমরা একে অন্যকে ছেড়ে কখনও ছিলাম না। বিয়ের পর থেকে একাত্ম হয়ে দু'জন দু'জনকে অনুভব করতাম। কেউ কাউকে কষ্ট দিইনি।
হাফিজ জানান, স্ত্রীর কবরের পাশে ২ অগ্রহায়ণ বসবাস শুরু করার কারণে বর্তমানে প্রতি বছরের ওই তারিখে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন তিনি। মৃত্যুর পর পরকালে যেন বিবির সঙ্গে মিলিত হতে পারেন, বারবার এমন দোয়া কামনা করেন হাফিজউদ্দিন।
উৎসঃ UKBDNEWS (হ্যাঁ, প্রেম চিরন্তন: ২৭ বছর স্ত্রীর কবরের পাশে)
ভালোবাসার এই ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত গড়ে হাফিজউদ্দিন বনেছেন এ যুগের সম্রাট শাহজাহান।
পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের বাকপুর গ্রামের মৃত বরকত আলী মিয়ার ছেলে বর্তমানে অশীতিপর মোঃ হাফিজউদ্দিন। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তের দুই বছর পর বাড়ির পাশেই বিয়ে করেন ৬ বছরের শুকুরী বিবিকে। বিয়ের ৭-৮ বছর পর্যন্ত ছোট্ট
শুকুরী হাফিজউদ্দিনের মা সূর্যবানু বিবির সঙ্গেই থাকতেন। এরপর ১৯৫৬ সালের দিকে দু'জনের সংসার শুরু হয়। প্রেম-ভালোবাসায় ভালোই কাটছিল হাফিজ-শুকুরীর সংসার। বিয়ের ১৯ বছরের মাথায় স্ত্রী শুকুরী মারা যান। স্ত্রীর এভাবে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারেননি নিঃসন্তান হাফিজ।
স্ত্রীর স্মৃতিচারণ করেন হাফিজ; বলেন, 'মৃত্যুর আগের রাতে বিবি আমার কাছে মিষ্টি খেতে চেয়েছিল, মিষ্টি এনে দিয়েছিলাম। রাতে দু'জনে মিলে মিষ্টি খেয়েছি। রাতভর দু'জনের অনেক কথা হলো। 'আমার জন্য কানবেন না, আমি থাকব না এমন কথা বলে পরদিন বিবি আমার হাঁটুতে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।'
স্ত্রীর এমন বিদায়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েন হাফিজ। দাফনের পর ছুটে যান স্ত্রীর কবরে। ডাকতে থাকেন তার প্রিয় সঙ্গিনী বিবিকে। কিন্তু সেই আকুলতায় সাড়া দেননি শুকুরী বেগম। হাফিজ ভাবেন, 'আগের রাতে বিবি আমার সঙ্গে ছিল, কথা বলেছে, আজ কেন নেই। কোথায় গেল তার আত্মা।'
স্ত্রীর আত্মার খোঁজে গৃহত্যাগ করেন হাফিজ। হেটে রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ান। আহার ও নিদ্রাহীন ঘুরতে ঘুরতে কুমিল্লার সোনাকান্দা এলাকায় এক পীরের সানি্নধ্যে আসেন হাফিজ। আবদুর রহমান নামের ওই পীরের দরগায় শুরু করেন সাধনা আর তপস্যা।
পীরের দরগায় ৪১ দিন কবরের ভেতর এবং ১ বছর ভাত না খেয়ে দুধ আর কলা খেয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে ১৯৭১ সালে শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। যুদ্ধের পর ১৯৭৮ সালের দিকে হাফিজউদ্দিন নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। ওই সময়ের অগ্রহায়ণ মাসের ২ তারিখ হাফিজউদ্দিন স্ত্রীর কবরের পাশে আশ্রয় নেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা ২৭ বছর স্ত্রীর কবরের পাশে ঘর তুলে বসবাস করেন হাফিজউদ্দিন। এ দীর্ঘ সময়ে বনজঙ্গলে ঘেরা নির্জনস্থানে ভয়ভীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ তার ভালোবাসার কাছে পরাজিত হয়েছে।
২০০৬ সালে আত্মীয়-স্বজনদের চাপে বিবির কবরস্থান ছেড়ে আসতে হয় হাফিজউদ্দিনকে, সবাই মিলে জোর করে বিয়ে করান আরেকটি। কিন্তু কবরস্থান ছাড়লেও বাড়িতে ফেরেননি তিনি। বাড়ির বাইরে নিজের কবর খুঁড়েছেন তিনি। সেখানেই ঘর তুলে বাস করছেন এখনও। তার বর্তমান স্ত্রীর সন্তানরাও বিষয়টি মেনে নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বাকপুর গ্রামে গিয়ে হাফিজউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তার জীবনকাহিনী। পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে চোখ ভিজে আসে হাফিজউদ্দিনের। দুহাতে চোখ মুছতে মুছতে তিনি জানান, সংসার জীবনে আমরা একে অন্যকে ছেড়ে কখনও ছিলাম না। বিয়ের পর থেকে একাত্ম হয়ে দু'জন দু'জনকে অনুভব করতাম। কেউ কাউকে কষ্ট দিইনি।
হাফিজ জানান, স্ত্রীর কবরের পাশে ২ অগ্রহায়ণ বসবাস শুরু করার কারণে বর্তমানে প্রতি বছরের ওই তারিখে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন তিনি। মৃত্যুর পর পরকালে যেন বিবির সঙ্গে মিলিত হতে পারেন, বারবার এমন দোয়া কামনা করেন হাফিজউদ্দিন।
উৎসঃ UKBDNEWS (হ্যাঁ, প্রেম চিরন্তন: ২৭ বছর স্ত্রীর কবরের পাশে)