Wednesday, June 22, 2011

ছেলে এবং মেয়েদের মস্তিষ্কের গঠনগত পার্থক্য

0 comments
মানুষের মস্তিষ্কের গঠন কমবেশি একই, প্রায় ৪০ ভাগ গ্রে ম্যাটার আর ৮০ ভাগ হোয়াইট ম্যাটার। কিন্তু তারপরও ছেলেদের সাথে মেয়েদের মস্তিষ্কের কিছু গঠনগত পার্থক্য রয়েছে যার কারণে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা কথা বেশি বলে আবার মানচিত্র ছেলেরা ভালো ও দ্রুত বুঝতে পারে। কিন্তু কেন এমন হয়? বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এর উত্তর পাওয়া গিয়েছে।
ইন্টেলিজেন্স টেস্ট এর মাধ্যমে দেখা যায় ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় ৭ গুণ গ্রে ম্যাটার ব্যবহার করে আবার মেয়েরা ৯ গুণ বেশি হোয়াইট ম্যাটার ব্যবহার করে। গ্রে ম্যাটার এর অন্যতম কাজ হল লজিক্যাল বিষয় যেমন অবস্থান সম্পর্কে ধারণা, মানচিত্র পঠন, গণিত, ও প্রব্লেম-সলভিং জাতীয় কাজগুলো করা। অন্যদিকে হোয়াইট ম্যাটার মস্তিষ্কের প্রসেসিং সেন্টারগুলোকে যুক্ত করে, যা ভাষাগত দক্ষতা, ইমোশনাল চিন্তা ও একসাথে অনেক কাজ করতে ভূমিকা পালন করে।
যেহেতু মেয়েদের হোয়াইট ম্যাটার বেশি ব্যবহৃত হয়, তাই তারা ভাষাগত যোগাযোগে বেশি পারদর্শি। প্রকৃতপক্ষে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মস্তিষ্কের অনেক বেশি অংশ এই যোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত হয় ফলে তারা ভাষাকে সামাজিক বন্ধন গঠনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারে অধিক পারদর্শি, আর ছেলেরা ভাষা ব্যবহার করে তথ্য আদানপ্রদান ও সমস্যা সমাধানের মাধ্যম হিসেবে। গড়ে, একজন মহিলা দিনে ৭০০০ শব্দ আর পুরুষ দিনে ২০০০ শব্দ ব্যবহার করে।
ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মস্তিষ্কের দুটি অংশের (হেমিস্ফেয়ার) মধ্যে যোগাযোগ আরও বেশি কার্য্যকর, তাই ছেলেরা যখন একসময়ে একটি কাজেই মনোনিবেশ করে, তখন মেয়েরা একাধিক কাজ (multi-tasking) করতে পারে। ধারণা করা হয়, এই অধিক কার্য্যকরী যোগাযোগের জন্যই মেয়েদের স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়।
এই পার্থক্যগুলো প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে। যখন পুরুষেরা শিকারের খোঁজে বের হত এবং তাদের শিকারের অবস্থান নির্ণয় ও সমস্যা সমাধানে মস্তিষ্ক বেশি ব্যবহৃত হত, আর নিজেদের ঘরবাড়ি ও সন্তানদের নিরাপত্তা ও বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে মহিলাদের ভাষাগত দক্ষতা অর্জন করতে হয়েছিলো।

Source:The Curious Minds

Wednesday, June 8, 2011

ব্ল্যাক ফরেস্ট

0 comments
বন তো সবুজই হওয়ার কথা। তাই বলে 'কালো বন'! এটা আবার কী? বন আবার কালো হয় কী করে? আসলে বন কখনো কালো হয় না। তবে, দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির এক পর্বতময় বনভূমির নাম 'ব্ল্যাক ফরেস্ট' বা 'কালো বন'। এটি রাইন ভ্যালির দক্ষিণ ও পশ্চিম সীমান্ত রচনা করেছে। পাহাড় আর বন যেন এখানে একে অপরের পরিপূরক। এখানে আছে যেমন দীর্ঘ উচ্চতার গাছ, তেমনি আছে উঁচু পর্বতচূড়া। এখানকার সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া ফেল্ডবাগরাউর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪৯৩ মিটার। পাহাড়গুলোর মূল উপাদান বেলে পাথর। ব্ল্যাক ফরেস্টের আছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। শেষ বরফ যুগের সময় ব্ল্যাক ফরেস্ট তুষারাচ্ছাদিত ছিল আর পরে তা হিমবাহ আকারে নেমে এসে সৃষ্টি করেছে ফেল্ডবার্গ, হারজোজেন হর্ন, বেলচিন, সাঙ্গাইস হর্ন, স্কাউইন্সল্যান্ড, ক্যান্ডেল প্রভৃতি নদী।
এই বনের মূল বৃক্ষ হচ্ছে পাইন এবং দেবদারু জাতীয় গাছ। যেগুলোর ডালপালা কম এবং পাতা সুচালো। আফ্রিকার জঙ্গলের মতো ঘন আর নিবিড় নয় এই বন। অন্যান্য বন্য এলাকার মতো এ বনও একসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষের হাতে। তাছাড়া এসিড বৃষ্টির ফলেও ক্ষতি হয়েছে অনেক। আর সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে ১৯৯৯ সালের ঘূর্ণিঝড়ে। এ ঝড়ে প্রায় ১০০ একর বনভূমি একেবারে চুরমার হয়ে যায়। এখানকার প্রধান শিল্প পর্যটন। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এক অমোঘ আকর্ষণে ছুটে আসেন ব্ল্যাক ফরেস্টের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে। পর্যটকদের কথা চিন্তা করেই এ বনকে সাজানো হয়েছে শৈল্পিগুকভাবে। বনের মধ্য দিয়ে চলে গেছে ইউরোপিয়ান হাইওয়ে। তৈরি করা হয়েছে অনেক দীর্ঘ ফুটপাত। ফলে পর্যটকরা অনায়াসেই বনের মধ্যে ঘুরতে পারেন। আছে পাহাড়ে সাইক্লিংয়ের সুযোগ। ইচ্ছা করলেই করা যায় পাহাড় অভিযান, মানে পাহাড়ের খাড়া দেয়াল বেয়ে ওঠা। এছাড়া দিনের বেলায় হাঁটার জন্য বনের মধ্যে আছে ছোট ছোট রাস্তা। এ বনে প্রায় ২৩ হাজার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আছে পর্যটন নেটওয়ার্ক, যা পরিচালনার জন্য আছে প্রচুর লোকবল আর আছে ব্ল্যাক ফরেস্ট সোসাইটি_ যার সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। এখানে আছে অনেক লেক। আছে মন মাতানো জলপ্রপাত। ট্রিবার্গ জলপ্রপাত খুব একটা বেশি উঁচু না হলেও এটি জার্মানিতে খুব বিখ্যাত। আর আকর্ষণীয় পর্যটকদের কাছেও।

ব্ল্যাক ফরেস্টের মাঝেই আছে জাদুঘর, যেখানে দেখানো হয়েছে ১৬ এবং ১৭ শতকের জার্মান কৃষকদের জীবন। সঙ্গে আছে ঘড়ির ইতিহাস নিয়ে মজার ঘড়ি জাদুঘর। ব্ল্যাক ফরেস্ট বিশাল এক বন হাওয়া সত্ত্বেও এখানে কোনো হিংস প্রাণী নেই কিংবা বন্য বৈচিত্র্য নেই। এখানে দেখতে পাওয়া যায় গরু, উট, ঈগল, পেঁচা আর দুই মিটার লম্বা গলাওয়ালা নীল অস্ট্রিচ পাখি। আর আছে বৃহদাকার কেঁচো। আরেকটি প্রাণী এখানে দেখা যায়, যার নাম শিয়াল। নাম শিয়াল হলেও এটি অনেক বড় আকৃতির এবং ঘোড়ার মতো। অতীতে এর দ্বারা লোকজন বোঝা বহনের কাজকর্ম করাত। ব্ল্যাক ফরেস্ট এলাকায় পালন করা হয় এক বিশেষ ছুটির দিন। সেদিন লোকজন দলবেঁধে রাস্তায় নেমে আসে আদিবাসীদের মতো মুখোশ পরে আর আনন্দ হৈচৈ করে।

নবাব আমিন

টোডা

0 comments
হিন্দু ধর্মের পঞ্চপাণ্ডব আর দ্রৌপদীর কথা অনেকেরই জানা। পাঁচ ভাইয়ের একজন মাত্র স্ত্রী। বাস্তবে এমন ঘটনা বা উদাহরণ খুব বেশি দেখা যায় না। বাস্তবে একজন পুরুষের একাধিক বিয়ে করার ব্যাপারটা হরহামেশাই দেখা যায়। কিন্তু একজন মেয়ের একাধিক বিয়ে করে একই সঙ্গে সংসার করার ব্যাপারটি একদমই খাপছাড়া। আর এই খাপছাড়া ব্যাপারটিই নিয়মে পরিণত হয়েছে পশ্চিম ভারতের এক বিশেষ জনগোষ্ঠীর কাছে। 'টোডা' নামের এই জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ নারীই একাধিক স্বামী নিয়ে সংসার করে থাকেন।
এর পেছনে তাদের গোত্রগত ঐতিহ্য যেমন দায়ী তেমনি জনসংখ্যার অসমতারও একটা ব্যাপার রয়েছে।

'টোডা' শীর্ষক এই জনগোষ্ঠীর বসবাস দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি পর্বতে। এরা স্বনির্ভর আর স্বয়ংসম্পূর্ণ এক ক্ষুদ্র জনজাতি। তবে এদের উৎপত্তি বা বিকাশ সম্বন্ধে সঠিক কোনো ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়নি। টোডাদের একমাত্র পেশা পশুপালন এবং দুধ উৎপাদন। ১৯০১ সালে এদের মোট জনসংখ্যা ছিল ৮০৭। আর গত ১০০ বছরে এদের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৭০০। এর মধ্যে ৬০ ভাগেরও বেশি পুরুষ আর ৪০ ভাগের কম নারী। আর এ কারণেই টোডা সমাজের মেয়েরা বহুবিবাহে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তাদের বহু বিবাহ প্রথা অনুসারে মেয়েরা যে কোনো পরিবারের একাধিক ছেলেকে বিয়ে করতে পারে অর্থাৎ কোনো পরিবারে যদি পাঁচ ভাই থাকে তাহলে ওই পাঁচ ভাইকে যে কোনো একটি মেয়ে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। এ বিয়েকে বলে ফ্রাটারনাল পলিঅ্যানড্রি (Faternal polyandry). পঞ্চপাণ্ডব আর দ্রৌপদীর কাহিনীর সঙ্গে মিল থাকলেও টোডারা হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করে না। এ জনগোষ্ঠীর উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এরা দীর্ঘ অতীত থেকে নীলগিরি পর্বতে বসবাস করে এসেছে। এরা কথা বলে দ্রাবিড়িয়ান টোডা ভাষায়, যা একান্তই ওদের নিজস্ব এবং এর কোনো লিখিত রূপ নেই। টোডা উপজাতির ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে এরা গৃহপালিত মহিষের পূজা করে। এছাড়া এদের দেবদেবীর জন্য আছে সর্বদেবতা মন্দিরও। টোডারা মনে করে, তাদের সৃষ্টিকর্তা প্রথমেই সৃষ্টি করেছেন পবিত্র মহিষ এবং তারপরই সৃষ্টি করেছেন তাদের প্রথম পুরুষকে। আর প্রথম নারী সৃষ্টি হয়েছে প্রথম পুরুষের ডান পাঁজরের হাড় থেকে। এদের ধর্মে নদীর পুল বা সাঁকো কিংবা ব্রিজ পার হওয়া নিষিদ্ধ। নদী পার হতে হলে সাঁতার দিয়েই পার হতে হবে।

এদের একজন প্রধান ধর্মীয় দুক্সমানব থাকেন। যিনি সার্বক্ষণিক ধর্মীয় দুগ্ধশালায় অবস্থান করেন। তাকে সবাই খুব উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মনে করে। তবে দুক্সমানবের জন্য আছে কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন। তিনি বিয়ে করতে পারবেন না, কারও বাড়িতে বা কোনো গ্রামে যেতে পারবেন না, কেউ তাকে কিংবা তিনিও কাউকে স্পর্শ করতে পারবেন না, এমনকি তার আত্মীয়-স্বজন মারা গেলে শেষকৃত্যেও তিনি যোগ দিতে পারবেন না। তার হাত-পায়ের নখ এবং চুল কাটাও নিষেধ। এ দুক্সমানবকে অপবিত্র করার লক্ষ্যে কেউ স্পর্শ করলে ধর্মীয় রীতিতে তাকে শাস্তি পেতে হয়। টোডা লোকজন জোটবদ্ধভাবে ছোট ছোট গ্রামে বাস করে। এদের গ্রামকে এরা বলে 'মান্ড'। গ্রামের লোকদের মধ্যে হৃদ্যতার কোনো অভাব নেই। তারা সবাই সবাইকে একই পরিবারের লোক মনে করে। প্রত্যেক পরিবারে সাধারণত ঘর থাকে পাঁচটি। তিনটিকে তারা

ব্যবহার করে বসবাসের জন্য, একটি ব্যবহার হয় পশুপালন আর অন্যটি রাতের বেলা পশুদের বাচ্চাকাচ্চা রাখার কাজে। তবে এদের ঘরের দরজাগুলো খুবই ছোট। ঘরে ঢুকতে এবং বের হতে অনেকটা হামাগুড়ি দিতে হয়। বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই এ ব্যবস্থা। টোডারা এক পৃথক জনগোষ্ঠী হলেও বর্তমানে ওদের গায়েও লেগেছে আধুনিকতার হাওয়া। এদের কেউ কেউ চলে এসেছে শহরে। গ্রামেও কেউ কেউ গড়ে তুলেছে ইটের বাড়ি। মেয়েদের বহুবিবাহ প্রথাও কমতে শুরু করেছে একটু একটু করে। সার্বিকভাবে তারা নিরামিষভোজী হলেও অনেকেই হয়ে পড়ছে আমিষভোজী। পর্যাপ্ত সুযোগ ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় হয়তো এদের জীবনেও পরিবর্তন আসবে। আর সেদিকে মনোযোগী না হলে হয়তো ইতিহাসের পাতা থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে এদের যত স্মৃতি।

**রণক ইকরাম

ভেনিস

0 comments
পো এবং পিয়েভ নদীর মুখে ছোটবড় ১২০টি দ্বীপ নিয়ে ছোট্ট সাম্রাজ্য। কেউ শখ করে নাম দিয়েছে 'রা ডমিন্যান্তে'। কারও কাছে আদরের নাম 'সিটি অব লাইট।' আবার কারও পছন্দ 'সিটি অব রিজেস' নামটা। হাজার হাজার বছর ধরে হাজারো নাম রাখা হয়েছে। রোমান সভ্যতার পীঠস্থান এ অঞ্চলের চলতি নাম ভেনিস, যাকে আবার 'কুইন অব দ্য অ্যাড্রিয়াটিক'ও বলা হয়। এ শহর নানা কারণে বছরের পর বছর ধরে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে । কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন বছর পঞ্চাশেকের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে ঐতিহ্যমণ্ডিত এই শহরটি। ইতিহাস যেন মাখামাখি হয়ে আছে ভেনিসের প্রতিটি বাড়িতে। ৯০০ বছরের পুরনো সেন্ট মার্কস ব্রাসিলিকা আর ব্যাসিনিয়ায় ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রোঞ্জের ঘোড়া রোমান সম্রাটদের বিপুল বৈভবের কথা মনে করিয়ে দেয়। ভেনিসে বেড়াতে গেলে যে কেউই গন্ডোলায় সওয়ার হবেন। লম্বা লম্বা সরু নৌকার নাম এখানে গন্ডোলা। আসলে গোটা ভেনিস শহরটা জলের ওপর ভাসছে। শহরের টুকরো টুকরো অংশগুলো আদতে এক-একটা দ্বীপ। দ্বীপগুলোকে জুড়ে রেখেছে কারুখচিত বাঁকানো সেতু। সেতুর তলা দিয়ে নীল জলরাশি বয়ে চলেছে অবিরাম আর দুই পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন।
কিন্তু স্বপ্নের মতো সুন্দর এই শহরটিকেই মারাত্মক এক রোগে ধরেছে। প্রতিদিনই নাকি শহরটি একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছে পানি নিচে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা আগামী ৫০ বছরের মধ্যে নাকি গোটা ভেনিসই ভ্যানিশ হয়ে যাবে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে সমুদ্রের জলতল বাড়ছে। আর তাতেই নাকি ডুবছে ভেনিস। ইতোমধ্যে সেন্ট মার্কস ব্যাসিলিকা বামদিকে হেলে গেছে।

মেহেদী হাসান বাবু

বাটারফ্লাই পার্ক, পতেঙ্গা; চট্টগ্রাম

0 comments
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পতেঙ্গার খবর সবারই জানা। ঝাউগাছে ঢাকা দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এখানকার সমুদ্রসৈকতে হয়তো এসেছেন অনেকেই। কিন্তু পতেঙ্গার নতুন একটি ভ্রমণ গন্তব্যের কথা হয়তো অনেকেরই অজানা। সেটি হলো প্রজাপতির এক জগত—‘বাটারফ্লাই পার্ক’। পতেঙ্গার শাহ আমানত বিমান বন্দরের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে আকর্ষণীয় এ জায়গাটি। বাটারফ্লাই পার্কের সামনে রঙিন প্রজাপতির বিশাল বিশাল ছবিতে মোড়ানো দেয়াল দেখে কারো বুঝতে বাকি থাকবে না, ভেতরটায় কী অপেক্ষা করছে তার জন্য। ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলে ছোট্ট কাঠের সেতু পেরিয়ে ওপারেই লোহার জালে তৈরি বিশাল প্রজাপতির জগত। লোহার তৈরি চিকন শেকলের প্রথম দরজার একটু পরেই মোটা পলিথিনের ভার্টিকাল ব্লাইন্ডার ঠেলে ঢুকতে হয় ভেতরে। প্রজাপতি যেন তার জগত ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে না পারে এজন্যই এ রকম প্রবেশদ্বার। ভেতরে ঢুকে একটু চমকেই যেতে হয়। কারণ, সে এক ভিন্নজগত্! ছোট্ট জলধারার চারপাশে নানা রকম গাছপালা, বেশিরভাগই বনফুল। কৃত্রিম ফোয়ারার প্রবাহে সে জলধারা স্রোত। গাছের ছায়ায় ছায়ায় ট্রেতে খাবার দেওয়া। উড়তে উড়তে ক্লান্ত কোনো প্রজাপতি এসে বসে গেছে সেখানে খাবার খেতে। একেক গাছে, ফুলে একেক রকম প্রজাপতি। কারো চঞ্চল ওড়াউড়ি, কেউ আবার বিশ্রাম নিতে হয়তো বসে গেছে পাতার আড়ালে-আবডালে। কোনো কোনো গাছের পাতায় দেখা যাবে শুককিট, যা থেকেই মূলত প্রজাপতির জন্ম। গাছের ছায়ায় ছায়ায় আবার বসার ব্যবস্থাও করা আছে। তবে সে ব্যবস্থাও ভিন্নতর। বসার চেয়ারগুলো দেখে প্রথম দর্শনে কেউ বিশাল আকৃতির কোনো প্রজাপতি ভেবে ভুল করতে পারেন। এতক্ষণ দেখলেন জীবন্ত প্রজাপতি। এবার চলুন প্রজাপতির আরেক জগতে। এটি মূলত প্রজাপতি জাদুঘর। এর ভেতরের দেয়ালে কাচঘেরা বাক্সে সাজিয়ে রাখা আছে নানান প্রজাতির নানান প্রজাপতি। এখানে যেসব প্রজাপতি মারা গেছে, সেগুলো ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মৃত প্রজাপতিগুলো সংগ্রহ করে এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে যত্নের সঙ্গে। প্রজাপতির জাদুঘর থেকে বেরিয়ে একটু সামনে গেলে শিশুদের খেলাধুলার জন্য জায়গাটি সাজানো হয়েছে পরিপাটি করে। পাশেই জলাশয়। সেখানে ফাইবারের তৈরি বোট চালানোর ব্যবস্থা আছে। আর প্রায় পাঁচ শতাধিক লোকের জন্য একটি বনভোজন কেন্দ্রও আছে এখানে। এ ছাড়া বাটারফ্লাই পার্কের একপাশে আছে আধুনিক রেস্ট হাউস আর রেস্তোরাঁ। বেশ সাজানো গোছানো রেস্ট হাউসের কক্ষগুলো। শীতল হাওয়া, উষ্ণ পানির ব্যবস্থা ছাড়াও আধুনিক সব সুবিধা আছে এ রেস্ট হাউসে। বেড়াতে এসে ভালো লেগে গেলে জায়গাটিতে থেকেও যেতে পারেন। প্রয়োজনীয় তথ্য বাটারফ্লাই পার্কে প্রবেশমূল্য বড়দের ১০০ টাকা ও ছোটদের ৫০ টাকা। তবে, বর্তমান প্রবেশমূল্যে ছাড় দিয়ে যথাক্রমে ৫০ ও ৩০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রেস্টহাউজের বাটারফ্লাই স্যুইট কক্ষের প্রতিদিনের ভাড়া ৭,০০০ টাকা, সুপার ডিলাক্স কক্ষের ভাড়া ৫,০০০ টাকা ও সাধারণ কক্ষের ভাড়া ৪,০০০ টাকা। এ ছাড়া এ মূল্যের সঙ্গে রয়েছে ১০% সার্ভিস ও ১৫% ভ্যাট। যোগাযোগ : ১৫, নেভাল একাডেমি, পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম। ফোন-০১১৯৫০১০৫০০, ০১১৯৫০১০৬০১। কিভাবে যাবেন ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যেতে পারেন চট্টগামে। সড়কপথে গ্রীনলাইন (০২-৯৩৪২৫৮০), সোহাগ পরিবহন (০২-৯৩৪৪৪৭৭), সৌদিয়া এস আলম (০১১৯৭-০১৫৬৩৬-৬৩৮) ইত্যাদি পরিবহনের বিলাসবহুল এসি বাস যায় চট্টগ্রাম। ভাড়া ৬০০-৮২৫ টাকা। আর গ্রীন লাইন, এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী ইত্যাদি পরিবহনের ভালো মানের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা। রেলপথে ঢাকা-চট্টগ্রামের পথে মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে, মহানগর গোধুলী ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ঢাকা ছাড়ে রাত এগারোটায়। ভাড়া এসি বার্থ ৭৫৬ টাকা, এসি সিট ৪৫৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪৫৫, প্রথম শ্রেণী চেয়ার ২৯০, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৩৮০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৫০, শোভন ১২৫, সুলভ ১০০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড এয়ার এবং জিএমজির বিমান চলাচল করে এ পথে। বিমানে গেলে এয়ারপোর্টের সঙ্গেই বাটারফ্লাই পার্ক। এ ছাড়া অন্য যে কোনো বাহনে চট্টগ্রাম শহরে এসে সেখান থেকে পতেঙ্গাগামী বাস কিংবা লেগুনায় চড়ে আসা যায় জায়গাটিতে। চট্টগ্রাম শহর থেকে সিএনজিচালিত বেবিটেক্সিতেও আসতে পারেন, ভাড়া লাগেব ২০০-২৫০ টাকা।

০০ লেখা ও আলোকচিত্র মুস্তাফিজ মামুন ০০

সুন্দরবনের কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র

0 comments
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের অধীন বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের কাছেই বনবিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে কলাগাছিয়া ইকো- ট্যুরিজম কেন্দ্র। সুন্দরবনের পরিবেশকে ঠিক রেখে পর্যটকদের বন ভ্রমণের জন্য নানান সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি বন্যপ্রাণী দেখারও ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। যারা মংলার কাছে করমজল ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র দেখেছেন, এ জায়গাটি তাদের কাছে আরো বেশি সাজানো-গোছানো ও সুন্দর মনে হবে। ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের জেটি বেয়ে উপরে উঠে একটু সামনেই এর প্রবেশপথ। শুরুতেই গোলাকার বিশ্রাম ছাউনি হাতের বাঁয়ে রেখে ইট বাঁধানো সরু পথে চলতে চলতে ছোট কাঠের সেতুটি পেরিয়ে শুরু হয়েছে ঘন জঙ্গলের ভেতরে দীর্ঘ কাঠের তৈরি হাঁটাপথ (ওয়াকওয়ে)। দু’পাশে গরান আর খাইলশা গাছের প্রাধান্যই বেশি। এ সময়ে (এপ্রিল, মে) এ দুই ধরনের গাছ থাকে ফুলে ফুলে ভরা। এ পথে হাঁটতে তাই নাকে ছোঁয়া দিয়ে যাবে বনফুলের সুগন্ধি। কাঠের সেতুর নিচে জোয়ার-ভাটায় ভেজা মাটিতে গজিয়ে ওঠা লাখো শ্বাসমূল ভাটার সময় দেখা গেলেও জোয়ারের সময় ডুবে থাকে জলের নিচে। বনের মধ্যে আঁকাবাঁকা ওয়াকওয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মিলতে পারে নানান পাখি, বন মোরগ, বানর, হরিণ কিংবা অন্যকোনো বন্যপ্রাণী। এদের কতটা দেখা মিলবে তা কিন্তু নির্ভর করবে আপনার উপরেই। সামান্যতম হৈচৈ কিংবা উচ্চস্বরে কথাবার্তা বন্যপ্রাণীদের খুবই বিরক্ত করে। শুধু তাই নয়, এখানে কিন্তু মামাও (বাঘ) আসেন মাঝে মধ্যে। তাকে দেখা কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার! কাঠের সেতুটি যেখানে শেষ, তার একটু আগেই হাতের বাঁ দিকে রয়েছে একটি মিঠাজলের পুকুর। এখানে বন্যপ্রাণীরা বিশেষ করে বানর, হরিণের দল জলপানে আসে। এ রকম আরো একটি পুকুর আছে এ ভ্রমণ কেন্দ্রের একেবারে শুরুতে, হাতের ডানে। এখানেও এরা পানি খেতে আসে। কাঠের সেতুর শেষে ইট বাঁধানো সরু পথটি চলে গিয়েছে দু’দিকে। সোজা পথটি গেছে একেবারে প্রবেশ পথের দিকে। আর ডানের সরু পথটি চলেছে বনের মধ্য দিয়ে বিশ্রাম ছাউনির দিকে। ঘুরে ঘুরে তাই বিভিন্ন পথে দেখা যায় এ জায়গাটিকে। পথ হারানোরও ভয় নেই। পথটি এসে শেষ হয়েছে শুরুর স্থানেই। তা ছাড়াও দুজন বনরক্ষীও আছে এখানে। একটি মজার ব্যাপার হলো, কলাগাছিয়ার বনকর্মীদের সঙ্গে এখানকার বন্যপ্রাণীদের সখ্যতাও বেশ ভালো। তবে, এদের সবচেয়ে বেশি ভাব এখানকার ইঞ্জিন নৌকা চালক মজিবর রহমানের সঙ্গে। খাবার নিয়ে ডাকলে বানর আর হরিণেরা ছুটে আসে তার কাছেই। বাঘ কখনো এখানকার কাছাকাছি চলে এলে বিপদ সংকেতও জানায় এখানকার চতুর বানররা। কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আছেন আবু তারেক খন্দকার। তার থেকে জানা গেল, ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রটি এখনো তৈরি হচ্ছে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য নানান সুযোগ-সুবিধাও যোগ করা হচ্ছে। পর্যটকরা যাতে সহজেই নদী থেকে এখানে উঠতে পারেন, সেজন্য জেটির স্থলে বনবিভাগ একটি গ্যাঙ্গওয়ে পল্টুন স্থাপন করবে শিগগিরই। এ ছাড়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের শুরুতেই একটি হরিণ ও শাপের প্রজনন কেন্দ্র করা হবে। কিভাবে যাবেন ঢাকা থেকে বাসে সাতক্ষীরা কিংবা শ্যামনগর। ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে সরাসরি সাতক্ষীরা যায় এসপি গোল্ডেন লাইনের (০২-৮১২৪৭৯৫) মার্সিডিজ বেঞ্জ এসি বাস, ভাড়া ৬০০ টাকা। এ ছাড়া হানিফ এন্টারপ্রাইজ (০২-৯১৩৫০১৮), সোহাগ পরিবহন (০২-৯৩৩৪১৫২), সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস (০১৭১২৭৮৭৩৬০), এসপি গোল্ডেন লাইন (০১৭৪০৯৪৯৬৪১), সাতক্ষীরা কে লাইন, সাতক্ষীরা ট্রাভেলস প্রভৃতি পরিবহন সংস্থার নন এসি বাস চলে ঢাকা-সাতক্ষীরা পথে। ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা। সাতক্ষীরা কিংবা শ্যামনগর থেকে বাসে মুন্সীগঞ্জ এসে সেখান থেকে ভটভটি, রিকশায় আসতে হবে বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশনে। সেখান থেকে বন বিভাগের অনুমোদিত ইঞ্জিন নৌকায় আসতে হবে কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রে আসতে সময় লাগবে আধা ঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা। এখানকার একেকটি নৌকায় ২০-২৫ জন একবারে যাওয়া সম্ভব। ভাড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এখানকার নৌকা চালকদের সর্দার হামিদ (০১৯১৭৬১৬৩৬৭)। কোথায় থাকবেন কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রটি এক দিনেই বেড়ানো সম্ভব। তা ছাড়া এখানে সাধারণ পর্যটকদের জন্য থাকারও কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই দিনে দিনেই ঘুরে আসতে হবে জায়গাটি। খুব সকালে সাতক্ষীরা থেকে গিয়ে আবার রাতে এসে তাই সেখানেই অবস্থান করা যেতে পারে। সাতক্ষীরা শহরের দু-একটি হোটেল হলো—শহরের পলাশপোল এলাকায় হোটেল সম্রাট (০৪৭১-৬৪৫৭১, এসি একক কক্ষ ৫০০ টাকা, এসি দ্বৈত ৬০০ টাকা, নন এসি একক ২০০ টাকা, নন এসি দ্বৈত ৩০০ টাকা)। হোটেল আরামবাগ (০১৭১২৭৮৭৪৮৭, নন এসি একক ১০০ টাকা, নন এসি দ্বৈত ২০০ টাকা)। শহরের বাইরে খড়িবিলা এলাকায় মোজাফফর গার্ডেন রিজর্ট (০১৭১৯৭৬৯০৯, ০১১৯১৮১২২৫৭, এসি দ্বৈত কক্ষ ১ হাজার ৫০০ টাকা, নন এসি দ্বৈত কক্ষ ১ হাজার টাকা)। প্রয়োজনীয় তথ্য কলাগাছিয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র দেশি পর্যটকদের জন্য প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। আর বিদেশিদের জন্য ২০০ টাকা। মনে রাখবেন এখানে ভ্রমণের সময় সম্পূর্ণ নিরবতা অবলম্বন করলে অনেক ধরনের বন্যপ্রাণী দেখা সম্ভব। তাই, জঙ্গলে ভ্রমণের সময় কোনো রকম হৈচৈ করবেন না। জঙ্গলে কোনো রকম আগুন জ্বালানো এবং ধূমপান করা উচিত নয়। যেকোনো রকম বর্জ্য যেমন, চিপসের প্যাকেট, পেট বোতল, পলিথিন জাতীয় কিছু সঙ্গে করে এনে জঙ্গলের বাইরে কোথাও ফেলুন।

০০লেখা ও আলোকচিত্র মুস্তাফিজ মামুন ০০

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান

0 comments
গাছের ছায়ায় মৃদু হাওয়ায় ঘুরতে সবার ভালো লাগারই কথা। আর তা যদি হয় এই বৈশাখের তপ্ত গরমে, তা হলে তো কথাই নেই। চলুন, এই গরমে তাই ঘুরে আসা যাক গাজীপুরের ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক থেকে।


ঢাকা থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে জাতীয় এ উদ্যানের অবস্থান। জয়দেবপুর চৌরাস্তা ছাড়িয়ে ময়মনসিংহের দিকে কিছু দূর চলতে চলতে হাতের ডানে উদ্যানের বেশ কয়েকটি প্রবেশপথ আছে। তবে যাবার পথে দেখে নিন মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রথম স্মারক ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ গাজীপুরে সংঘটিত প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে শহীদ হুরমত আলীসহ অন্যান্য শহীদদের স্মরণে ১৯৭১ সালেই নির্মিত হয় এ ভাস্কর্যটি। এর স্থপতি আব্দুর রাজ্জাক। ভাস্কর্যটির উচ্চতা প্রায় একশো ফুট। আর এর দুপাশে ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১১ নম্বর সেক্টরের ১০৭ জন এবং ৩নং সেক্টরের ১০০ জন শহীদ সৈনিকের নাম খোদাই করা আছে।

বেশ কয়েকটি প্রবেশপথ থাকলেও হাতের ডানের একটি সবারই নজর কাড়ে। টেরাকোটায় মোড়া বর্ণিল ফটকের দুই পাশে দুই দণ্ডায়মান হাতি—এটিই ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্কের প্রধান ফটক।

গাছে গাছে ঢাকা এ উদ্যানের প্রতিটি জায়গাই নজরকাড়া। সারি সারি বৃক্ষের মাঝে পায়ে চলা পথ। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে দু’দণ্ড বিশ্রামের জন্য আছে বেঞ্চ কিংবা ছাউনি। বনের মাঝে কোথাও কোথাও চোখে চড়বে ধানক্ষেত। কোথাও আবার পুকুর কিংবা ছোট আকারের লেক।

এ ছাড়া ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ভেতরে আছে বেশ কয়েকটি বনভোজন কেন্দ্র। এগুলোর নামও বেশ মজার। আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন আরো কত বাহারি নামের বনভোজন কেন্দ্র । এখানকার কটেজগুলোও বাহারি নামের। বকুল, মালঞ্চ, মাধবি, চামেলী, বেলী, জুঁই ইত্যাদি। নামের মতো এগুলোর পরিবেশও ভিন্ন আমেজের। পিকনিক স্পট কিংবা রেস্ট হাউস ব্যবহার করতে হলে বন বিভাগের মহাখালী কার্যালয় থেকে আগাম বুকিং দিয়ে আসতে হবে।

কিছু তথ্য

একসময় ভাওয়াল উদ্যানে পাওয়া যেত ব্লাক প্যান্থার, চিতা বাঘ, ময়ূর, হাতি। এসব এখন ইতিহাস। ক্রমাগত বন উজাড়ের ফলে দিনে দিনে এর পরিধি কমে আসায় এ বন থেকে বিলুপ্ত হয়েছে নানান বন্যপ্রাণী। তবে বাংলাদেশ সরকার এ বনকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে। পৃথিবীর অন্যান্য জাতীয় উদ্যানের আদলে ৫০২২ হেক্টর জমিতে ১৯৭৩ সালে এ উদ্যান সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয়। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মূল উদ্ভিদ হলো শাল। প্রায় ২২০ প্রজাতির গাছপালা আছে এ বনে। এর মধ্যে ৪৩ প্রজাতির বিভিন্ন রকম গাছ, ১৯ প্রজাতির গুল্ম, ৩ প্রজাতির পাম, ২৭ প্রজাতির ঘাস, ২৪ প্রজাতির লতা, ১০৪ প্রজাতির ঔষধি গাছ। জীব বৈচিত্র্যেরও কমতি নেই এ বনে। প্রায় ১৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫ প্রজাতির পাখি ও ৫ প্রজাতির উভচর প্রাণীও রয়েছে এ বনে। (তথ্য: উইকিপিডিয়া)

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যেকোনো বাসে চড়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ফটকের সামনেই নামা যায়। এ ছাড়া ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস চলে এ পথে। ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। নিজস্ব বাহনে গেলে জয়দেবপুর চৌরাস্তা ছাড়িয়ে ময়মনসিংহের দিকে কিছু দূর চলতে হাতের ডানে পড়বে এর প্রধান প্রবেশপথ।

জেনে রাখুন

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৬ টাকা। প্রাইভেট কার কিংবা মাইক্রো বাস নিয়ে প্রবেশ করতে লাগবে ৩০ টাকা আর মিনি বাসের জন্য প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। দু’ তিনজন এখানে বেড়াতে গেলে উদ্যানের বেশি ভেতরে না যাওয়াই ভালো। একাকী পেলে দুষ্কৃতিকারীরা আপনার যেকোনো ক্ষতির কারণ হতে পারে।

বাড়তি কিছু

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বেড়িয়ে হাতে সময় থাকলে দেখে আসতে পারেন ভাওয়াল রাজবাড়ি। গাজীপুর সদরে অবস্থিত প্রাচীন এ রাজবাড়িটি। জমিদার লোক নারায়ণ রায় বাড়িটির নির্মাণ শুরু করলেও শেষ করেন রাজা কালী নারায়ণ রায়। প্রায় পনের একর জায়গাজুড়ে মূল ভবনটি বিস্তৃত। ভবনটির দক্ষিণ পাশে মূল প্রবেশপথ। মূল প্রবেশপথের পরেই রয়েছে প্রশস্ত একটি বারান্দা এবং এর পরে একটি হল ঘর। ভবনের ওপরের তলায় ওঠার জন্য ছিল শাল কাঠের তৈরি প্রশস্ত সিঁড়ি। ভবনের উত্তর প্রান্তে খোলা জায়গায় রয়েছে ‘নাটমণ্ডপ’। রাজবাড়ির সব অনুষ্ঠান হতো এ মঞ্চে। রাজবাড়ির মধ্যে পশ্চিমাংশের দ্বিতল ভবনের নাম ‘রাজবিলাস’। এ ভবনের নিচে রাজার বিশ্রামাগারের নাম ছিল ‘হাওয়ামহল’। দক্ষিণ দিকে খোলা খিলান যুক্ত উন্মুক্ত কক্ষের নাম ‘পদ্মনাভি’। ভবনের দোতলার মধ্যবর্তী একটি কক্ষ ছিল ‘রাণীমহল’ নামে পরিচিতি। সুরম্য এ ভবনটিতে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩৬০টি কক্ষ আছে। বর্তমানে এটি জেলাপরিষদ কার্যালয় হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে।

ভাওয়াল রাজবাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে মৃতপ্রায় চিলাই নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী। এটি ছিল ভাওয়াল রাজ পরিবারের সদস্যদের শবদাহের স্থান। প্রাচীন একটি মন্দির ছাড়াও এখানে একটি সমাধিসৌধ আছে।

লেখক: লেখা ও আলোকচিত্র মুস্তাফিজ মামুন

রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশে বসবাস স্থানগুলি

0 comments
বীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিতে ধন্য অনেক জায়গাই রয়েছে এ দেশে। এ দেশে জমিদারি পরিচালনার কাজে এসে যে জায়গাগুলোতে কবি বসবাস করেছেন দিনের পর দিন, রচনা করেছিলেন তার জীবনের মহা মূল্যবান সব সাহিত্যকর্ম। চলুন ঘুরে আসি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত সেইসব জায়গা থেকে।


কুষ্টিয়া জেলা সদর থেকে প্রায় বারো কিলোমিটার দূরে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি। শিলাইদহের আগে নাম ছিল খোরশেদপুর। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার গ্রামটি কিনে নেওয়ার আগে এখানে একটি নীলকুঠি ছিল। শেলী নামে একজন নীলকর এটি নির্মাণ করেন বলে জানা যায়। গড়াই এবং পদ্মা নদীর মিলিত প্রবাহের ফলে গভীর একটি ‘দহ’ বা ঘূর্ণিস্রোত থেকে গ্রামটির নাম হয় শেলীদহ। পরবর্তীতে তা রূপ নেয় শিলাইদহ-তে। ১৮০৭ সালে রামলোচন ঠাকুরের উইল সূত্রে রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এ জমিদারির মালিকানা পান। জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথ সর্বপ্রথম শিলাইদহে আসেন ১৮৮৯ সালের নভেম্বরে। কৈশোর ও যৌবনের বিভিন্ন সময় জমিদারি দেখাশোনা করতে কবি এখানে আসতেন এবং কুঠিবাড়িতেই থাকতেন। একসময় পদ্মার ভাঙন কুঠিবাড়িকে গ্রাস করার উপক্রম হলে বাড়িটি ভেঙে নতুন কুঠিবাড়ি নির্মাণ করা হয়। ১৮৯১-১৯০১ সালে অল্প বিরতিতে কবি নিয়মিত এখানে অবস্থান করেছেন। জানা যায়, এখানে বসেই কবি রচনা করেন তার অমর সৃষ্টি সোনারতরী, চিত্রা, চৈতালী, কথা ও কাহিনী, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য ও খেয়ার অধিকাংশ কবিতাসহ আরো অনেক উল্লেখযোগ্য রচনা। এখানে বসেই ১৯১২ সালে কবি তার নোবেল জয়ের হাতিয়ার ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন।

প্রায় ১১ একর জায়গার উপরে সবুজ বৃক্ষের বাগানের ভেতরে রয়েছে দোতলা এ কুঠিবাড়ি। নিচতলা ও দোতলায় কেন্দ্রীয় হলঘরসহ এতে মোট ১৫টি কক্ষ আছে। দোতলা ভবনের উপরে পিরামিড আকৃতির ছাদ ভবনটিকে আরো দৃষ্টিনন্দন করেছে। তবে আগের রং পরিবর্তন করায় দৃষ্টিনন্দন এ কুঠিবাড়ির সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়েছে বলেই মনে করেন অভিজ্ঞজনরা।

শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাদুঘর। সপ্তাহের রবি ও সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ জাদুঘর। রবি ও সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। কবির জন্মবার্ষিকী এবং মৃত্যুবার্ষিকীতে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় শিলাইদহে।

টেগর লজ



কুষ্টিয়া শহরে কবিগুরুর আরেকটি স্মৃতিবাহী জায়গার নাম টেগর লজ। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ১৮৯০-এর শেষের দিকে কুষ্টিয়া রেল স্টেশনের কাছে এ বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। ভুসিমাল ও পাটের ব্যবসার জন্য কবি নিজে এ বাড়িতে ‘টেগর অ্যান্ড কোম্পানি’র প্রতিষ্ঠা করেন। কলকাতা থেকে ট্রেনে চড়ে কুষ্টিয়া এসে টেগর লজে বিশ্রাম নিয়ে তারপরে কবি যেতেন শিলাইদহে। কখনো কখনো এ যাত্রাপথে রাত্রিযাপনও করেতেন এ বাড়িতে। ১৮৯০ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত কবি এ বাড়িতে বিভিন্ন সময় অবস্থান করেছেন। দীর্ঘকাল বাড়িটি অযত্নে পড়ে থাকার পর ২০০৪ সালে বাড়িটি কিনে এর সংস্কার করে কুষ্টিয়া পৌরসভা।

যাতায়াত ও থাকা: ঢাকা থেকে সরাসরি সড়কপথে কুষ্টিয়া যাওয়া যায়। রেলপথে খুলনাগামী ট্রেনে ভেড়ামারা নেমে সেখান থেকে কুষ্টিয়া আসতে হবে। ঢাকার গাবতলী কল্যাণপুর থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস বি পরিবহন, কেয়া পরিবহন, রেজিনা পরিবহন প্রভৃতি বাস চলে এ পথে। ভাড়া ২৫০ টাকা। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে খুলনাগামী সপ্তাহের সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭.১০ মিনিটে আন্তঃনগর ট্রেন চিত্রা এক্সপ্রেস, শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৬.৩০ মিনিটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ভেড়ামারা যায়। ভাড়া এসি বার্থ ৭৩৬ টাকা, এসি সিট ৫০১ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪৩৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৩৩৪ টাকা, শোভন চেয়ার ১৭০ টাকা, শোভন ১৪০ টাকা। কুষ্টিয়া থেকে শিলাইদহ যাওয়া যাবে রিকশা, ইজি বাইক কিংবা টেম্পুযোগে।

কুষ্টিয়া শহরে থাকার জন্য হোটেল রিভারভিউ (০৭১- ৭১৬৬০, প্রতিদিনের কক্ষ ভাড়া ৩০০-১২০০ টাকা)। ফেয়ার রেস্ট হাউস (০৭১-৬১৪৭০, প্রতিদিনের কক্ষ ভাড়া ১৫০-৬০০ টাকা )। হোটেল গোল্ডস্টার (০৭১- ৬১৬৭৫, প্রতিদিনের কক্ষ ভাড়া ১২০-৮০০ টাকা)।




সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে আছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারিবাড়ি। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক জমিদারি ছিল। কবির দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর নীলকরদের একটি কুঠি নিলামে কিনে নেন। ঊনত্রিশ বছর বয়সে ১৮৯০ সালে সর্বপ্রথম শাহজাদপুরে জমিদারি তত্ত্বাবধান করতে আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপরে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত জমিদারির কাজে এখানে যাওয়া-আসা ও অবস্থান করেন কবি। এখানে অবস্থানকালে তিনি তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাহিত্যকর্ম রচনা করেন। ঠাকুর পরিবারের জমিদারি ভাগাভাগির ফলে শাহজাদপুরের জমিদারি চলে যায় রবীন্দ্রনাথের অন্য শরীকদের কাছে। তাই ১৮৯৬ সালে তিনি শাহজাদপুর ছেড়ে চলে যান। জমিদারি খাজনা আদায়ের একটি পুরনো দ্বিতল ভবন এখনো আছে, বর্তমানে যা ব্যবহূত হচ্ছে জাদুঘর হিসেবে।

যাতায়াত: ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ আসা যায় সড়ক ও রেলপথে। ঢাকার মহাখালী থেকে সৌরভ পরিবহন, এস আই এন্টারপ্রাইজ, গাবতলী থেকে ইউনিক সার্ভিস যায় সিরাজগঞ্জ। ভাড়া ১৭০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে সদানন্দপুর স্টেশনে নেমে সেখান থেকে সাত কিলোমিটার দূরে সিরাজগঞ্জ শহর। ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেন খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, পদ্মা ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো সদানন্দপুর স্টেশনে থামে। ভাড়া ১১০-১২৫ টাকা। জেলা শহর থেকে রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। বাসে শাহজাদপুর স্টেশনে নেমে সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ কাছারিবাড়ি।


নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে আত্রাই উপজেলার পতিসরে নাগর নদীর তীরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারির কালিগ্রাম পরগনার সদর কাছারি ছিল এখানে। রবীন্দ্রনাথের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৩০ সালে এ জমিদারি ক্রয় করেন। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং জমিদারি দেখাশোনার জন্য ১৮৯১ সালে সর্বপ্রথম পতিসরে আসেন।

পতিসরের দোতলা কুঠিবাড়ি অনেকটা শিলাইদহ ও শাহজাদপুরের কুঠিবাড়ির অনুরূপ। বাড়ির সামনের প্রশস্ত খোলা মাঠ নাগর নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে অবস্থানকালে কবি নানান জনহিতকর কাজ করেন। ১৯০৫ সালে কবি পতিসরে কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে নোবেল পুরস্কারের এক লক্ষ টাকাও তিনি এই ব্যাংককে দান করেন। ১৯১৩ সালে কবি পতিসরে প্রতিষ্ঠা করেন কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউট। বিভিন্ন সময়ে এখানে অবস্থানকালে কবি রচনা করেন তার জীবনের উল্লেখযোগ্য কিছু সাহিত্যকর্ম। ১৯২১ সালে জমিদারি ভাগ হলে পতিসর রবীন্দ্রনাথের ভাগে পড়ে। কিন্তু নানান ব্যস্ততার কারণে পতিসরের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়। শেষ বারের মতো তিনি পতিসরে আসেন ১৯৩৭ সালে। এ কুঠিবাড়িতে বর্তমানে সংরক্ষিত আছে কবির অনেক স্মৃতিময় নিদর্শন।

যাতায়াত: ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি নওগাঁ যাওয়া যায়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি ঢাকার গাবতলী থেকে ছাড়ে এ পথের বাসগুলো। শ্যামলি পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আর পরিবহন, কেয়া পরবিহন, বাবলু পরিবহন, টি আর পরিবহন ইত্যাদি পরিবহন সংস্থার নন এসি বাস চলে এ পথে। ভাড়া ২২০-২৪০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেন একতা এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, নীল সাগর এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস, রাজশাহী থেকে বরেন্দ্র ও তিতুমীর এক্সপ্রেস, খুলনা থেকে সীমান্ত এক্সপ্রেস ও রূপসা এক্সপ্রেসে সান্তাহার নেমে সেখান থেকে সহজেই নওগাঁ আসা যায়। নওগাঁ সদর থেকে পতিসর আসা যায় লোকাল বাসে। ভাড়া ৩০-৩৫ টাকা।

লেখক: মুস্তাফিজ মামুন
আলোকচিত্র :শেখ কবিরুল হাসান

মাধবকুণ্ডের দুই জলপ্রপাত

0 comments
সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় রয়েছে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় দুটি জলপ্রপাত। দুটি ঝরনার একটি সারা বছর শুকনো থাকলেও বর্ষা মৌসুমে জীবন্ত হয়ে ওঠে। অন্যটিতে পানি প্রবাহ বেড়ে যায় এ সময়ে।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত

মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। প্রায় ২৭০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া এ জলপ্রপাত সারা বছরই বহমান থাকে। তবে বর্ষায় পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। মাধবকুণ্ড ইকো পার্কের প্রধান ফটক ফেলে প্রায় আধা কিলোমিটার পথ হাঁটার পরে জলপ্রপাতে এসেই সড়কটি শেষ হয়েছে। পথের একপাশে মাধবকুণ্ড ইকো পার্ক, আরেকপাশে পাহাড়ের ঢালে ঢালে খাসিয়াদের পুঞ্জি আর চা বাগানের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে দশ মিনিটে পৌঁছা যায় মাধবকুণ্ডের নিচে। সবুজে ঘেরা বিশাল উঁচু পাহাড়ের উপর থেকে ঝরনাধারা নিচে গড়িয়ে পড়ছে অনবরত। ঝরনার সে পানি ছড়াপথে বয়ে চলে দূর থেকে দূরান্তে। হিম শীতল ঝরনার জল প্রাণ জুড়ায় পর্যটকের।

পরীকুণ্ড জলপ্রপাত

মাধবকুণ্ড ঝর্ণার কিছুটা আগে শিব মন্দিরের বিপরীত দিক থেকে পাথুরে ঝিরি পথটি শেষ হয়েছে পরীকুণ্ড জলপ্রপাতে। এ ঝর্ণাটির সৌন্দর্য মাধবকুণ্ডের চেয়েও অনেক বেশি। সবুজে ঘেরা উঁচু পাহাড়ের গা বেয়ে এখানে নেমে আসে স্বচ্ছ জলধারা। এ ঝরনাটি প্রায় সারা বছরই শুকনো থাকে। শুধু প্রাণ ফিরে পায় বর্ষায়। পরীকুণ্ডে যাবার ঝিরি পথটি বেশ পিচ্ছিল। তাই সাবধানে চলতে হবে এ পথে।

মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক

পাহাড়ের ঢালে ঢালে নানান গাছগাছালিতে ঢাকা মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের সৌন্দর্যও কোনো অংশে কম নয়। মাধবকুণ্ড ঝরনায় যাবার পথে পাহাড় বেয়ে কয়েকটি সিঁড়িপথ উঠে গেছে ইকো পার্কে। ঝরনার ঠিক আগে পাহাড়েরর ওপরে আছে একটি উঁচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ টাওয়ারে উঠলে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের বহু দূর দেখা যায়।

খরচপাতি

মাধবকুণ্ডের প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য দশ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাঁচ টাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩০-১০০ জনের জন্য একশত টাকা, ১০১-২০০ জনের জন্য দুইশত টাকা। বিদেশি পর্যটকের জন্য এক আমেরিকান ডলার বা সমমূল্যের টাকা। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠতে জনপ্রতি লাগবে পাঁচ টাকা। প্রাইভেট কার ও মাইক্রো বাসের পার্কিং মূল্য ৫০ টাকা।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে রেল ও সড়ক পথে মৌলভীবাজার যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ (০১৭১১৯২২৪১৭), শ্যামলী পরিবহন (০১৭১১৯৯৬৯৬৫), সিলেট এক্সপ্রেস (০১৭১৩৮০৭০৬৯), টি আর ট্রাভেলস (০১৭১২৫১৬৩৭৮) ইত্যাদি বাস যায় মৌলভী বাজার। ভাড়া নন এসি বাসে ২৫০ টাকা। টি আর ট্রাভেলসের এসি বাসে ভাড়া ৩৫০ টাকা। ট্রেনে মৌলভীবাজার যেতে হলে নামতে হবে কুলাউড়া স্টেশনে। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬.৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, দুপুর ২.০০ মিনিটে প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০.০০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি বার্থ ৫৮১ টাকা, এসি সিট ৩৯৭ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৩৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৩৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৩৮০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৫০ টাকা, শোভন ১৩০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮.১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯.০০ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ভাড়া প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪১৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৮৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৪৭২ টাকা, শোভন চেয়ার ১৮৫ টাকা, শোভন ১৭০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

মৌলভীবাজারে থাকার জন্য কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল আছে। শ্রীমঙ্গল রোডে হোটেল সোনাগাঁও (০৮৬১-৬৪৬০৭), শহরের কুসুমবাগে হোটেল শেরাটন প্লাজা (০৮৬১-৫২০২০), সাইফুর রহমান রোডে হোটেল হেলাল (০৮৬১-৫২৫৩৫)। এসব হোটেলে প্রতিদিনের রুম ভাড়া ২০০-১০০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।

*-*লেখক: লেখা ও আলোকচিত্র মুস্তাফিজ মামুন

বগুড়া

0 comments
উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বারখ্যাত বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদ বগুড়া। প্রাচীন পুন্ড্র রাজ্যের রাজধানী পুন্ড্রবর্ধনই হচ্ছে এখনকার বগুড়া জেলা। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন প্রভৃতি আমলের বিভিন্ন নিদর্শন এখনো বর্তমান আছে এ জেলার বিভিন্ন জায়গায়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১২৭৯-১২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসনকর্তা সুলতান গিয়াস উদ্দীন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দীন বগরা খানের নামানুসারেই এখানকার নামকরণ হয়েছে বগড়া বা বগুড়া।

মহাস্থানগড়

বগুড়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হলো মহাস্থানগড়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় তের কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত এ জায়গাটি। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের এক দুর্গ নগরী এই মহাস্থানগড়। এককালে, মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন রাজাদের রাজধানী ছিল এখানে। এখন শুধু সেগুলোর ধ্বংসাবশেষ নীরবে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে। এখানে এখনো আছে ৫০০০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৪৫০০ ফুট প্রস্থের সেই প্রাচীন নগরীর দেয়াল। দেয়ালের ভেতরে রয়েছে জীয়ত্কুণ্ড, প্রাচীন মসজিদসহ নানান নির্দশন।

হযরত শাহ সুলতান বলখীর (র.) মাজার

মহাস্থান গড়ের ঠিক আগেই রয়েছে হযরত শাহ সুলতান বলখীর (র.) মাজার। এ অঞ্চলের জনগণকে রাজা পরশুরামের অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে আফগানিস্তানের অন্তর্গত বলখ প্রদেশ থেকে শাহ সুলতান বলখীর (র) এ এলাকায় আগমন করেন। ১২০৫-১২২০ খ্রিস্টাব্দে পরশুরামের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত এবং নিহত হন।

শীলা দেবীর ঘাট

মহাস্থানগড়ের পূর্ব দিকে করতোয়া নদীর তীরে রয়েছে শীলা দেবীর ঘাট। শীলা দেবী ছিলেন পরশুরামের ভগ্নি। যুদ্ধের সময় আত্মশুদ্ধির জন্য এখানেই তিনি আত্মাহুতি দিয়েছিলেন।

গোবিন্দ ভিটা

মহাস্থানগড় থেকে সামান্য উত্তরে করতোয়া নদীর বাঁকে অবস্থিত একটি প্রত্নস্থল এটি। এটি মূলত একটি প্রাচীন মন্দির। খ্রিস্টীয় ১২শ-১৩শ শতকে রচিত সংস্কৃতি গ্রন্থ ‘করতোয়া মহাত্মতে এ মন্দিরটির কথা উল্লেখ আছে।

এখানে সর্বপ্রথম ১৯২৮-২৯ সালে এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে প্রত্নতাত্তিক খননের ফলে খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতক থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগের নানান নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।

ভাসুবিহার

বগুড়া শহর থেকে প্রায় আঠারো কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এ প্রত্নস্থলটির আরেক নাম নরপতির ধাপ। খননের ফলে এখানে দুটি মধ্যম আকৃতির সংঘারাম ও একটি মন্দিরসহ আরও অনেক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। অপেক্ষাকৃত ছোট সংঘারামটির আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৪৯ মিটার এবং পূর্বে-পশ্চিমে ৪৬ মিটার। এর চার বাহুতে ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য ২৬টি কক্ষ এবং কক্ষগুলোর সামনে চারপাশে ঘোরানো বারান্দা এবং পূর্ব বাহুর কেন্দ্র স্থলে প্রবেশপথ রয়েছে। বড়টিতে ৩০টি ভিক্ষু কক্ষ এবং দক্ষিণ বাহুর কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে খননের ফলে এখান থেকে প্রায় ৮০০টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।

গোকুল মেধ

বগুড়া শহর থেকে দশ কিলোমিটার উত্তরে এবং মহাস্থানগড় থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে গোকুল গ্রামে অবস্থিত এ প্রত্নস্থলটি অনেকেই জানেন বেহুলার বাসরঘর নামে। ঐতিহাসিকগণের মতে এটি আনুমানিক সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত। ইট নির্মিত এ স্তুপটি পূর্ব পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং তিনকোণ বিশিষ্ট। খননের ফলে এ স্থাপনাটিতে ১৭২টি কক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে।

মহাস্থানগড় জাদুঘর

মহাস্থানগড় থেকে সামান্য উত্তরে গোবিন্দ ভিটার ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত মহাস্থান জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৬৭ সালে। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত নানান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষিত আছে এ জাদুঘরটিতে। এ জাদুঘরের গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি হলো বেলা ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। দুপুর ১টা থেকে ত্রিশ মিনিট মধ্যাহ্ন বিরতি। আর শীতকালীন সময়সূচি হলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা। দুপুর ১টা থেকে ত্রিশ মিনিট মধ্যাহ্ন বিরতি। মহাস্থান জাদুঘর সপ্তাহের রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো সার্ভিস হলো গ্রীন লাইন, টি আর ট্রাভেলস এবং এস আর পরিবহনের এসি বাস। ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা। আর এ পথে সাধারণ মানের নন-এসি বাস চলে শ্যামলী, হানিফ, এস আর, কেয়া, টি আর, বি আর টিসি, শাহ সুলতান ইত্যাদি পরিবহনের। ভাড়া জনপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা। ঢাকা থেকে বগুড়ার বাস সাধারণত ছাড়ে গাবতলী, কলেজ গেট থেকে। আর বগুড়া থেকে ঢাকার বাস ছাড়ে শহরের সাতমাথা এবং ঠনঠনিয়া থেকে। বগুড়া শহর থেকে অটো রিকশা কিংবা টেম্পুতে চড়ে আসেত পারেন মহাস্থান।

কোথায় থাকবেন

বগুড়া শহরে থাকার জন্য আছে বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শহরের ছিলিমপুরে হোটেল নাজ গার্ডেন, ফোন :৬২৪৬৮, ৬৩২৭২। বনানীতে পর্যটন মোটেল, ফোন :৬৭০২৪-২৭। চার মাথার মোড়ে হোটেল সেফ ওয়ে, ফোন :৬২৬৯০, ৬৬০৮৭। বনানী ফুলদিঘীতে হোটেল সিস্তা, ফোন :৬৬৯৬৫, ৬৬৩১০। এসব হোটেলে ৫০০ থেকে ৯০০০ টাকা ভাড়া মানের বিভিন্ন রকম কক্ষ রয়েছে।

শ্রীমঙ্গল

0 comments
এপ্রিল থেকে সাধারণত চা বাগানগুলোতে শুরু হয়ে যায় কুঁড়ি সংগ্রহের মৌসুম। দেশের সবচেয়ে বেশি চা বাগানের এলাকা শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকরা এখন তাই ব্যস্ত দুটি কুঁড়ি একটি পাতা সংগ্রহে। এমনিতেই চা বাগানের সৌন্দর্য নজর কাড়া, এসময়ে সে সৌন্দর্যে যোগ হয় বাড়তি উপাদান। এই সময়ে তাই ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল থেকে।

ভাস্কর্য ‘চা কন্যা’

ঢাকা থেকে সড়কপথে শ্রীমঙ্গলের প্রবেশপথে দৃষ্টি নন্দন ভাস্কর্য ‘চা কন্যা’। সিমেন্টে তৈরি সফেদ এ ভাষ্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চা শ্রমিক এক তরুণীর কুঁড়ি সংগ্রহের দৃশ্য। সাতগাঁও চা বাগানের সহায়তায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন তৈরি করেছে সুন্দর এ ভাস্কর্যটি। এর সামনেই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে সাতগাঁও চা বাগান। ঢু মারতে পারেন সেখানেও।

চা বাগান

‘চা কন্যা’ দেখে কিছু দূর চলতে চলতেই শ্রীমঙ্গল শহর। শহরকে পিছু ফেলে ভানুগাছা সড়ক ধরে সামনে চলতে চলতে দু’পাশে দেখা মিলবে ফিনলে’র চা বাগান। চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) ভেতর থেকে দক্ষিণমুখী সড়কটি ধরে গেলে ফিনলে’র চা বাগান ছাড়াও আছে বিটিআরআই’র নিজস্ব বাগান। এ ছাড়া ভানুগাছা সড়কের টি রিসোর্ট ফেলে সামনে দু’একটি বাঁক ঘুরে হাতের ডানের সড়ক ধরে কয়েক কিলোমিটার গেলে রয়েছে জেরিন টি এস্টেট। লাউয়াছড়ার আগে হাতের ডানে জঙ্গল ঘেরা সড়কটি চলে গেছে নূরজাহান টি এস্টেটে। এ পথে দেখা মিলবে আরো বেশ কিছু বাগানের।

মাধবপুর লেক

কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাহাড় ঘেরা চা বাগানের মধ্যে বিশাল এক জলাধার ‘মাধবপুর লেক’। তবে এ পথে যাবার সহজ পথ হলো নূরজাহান টি এস্টেটের পথ ধরে। তাহলে পুরো পথটিই চলা যাবে চা বাগানের ভেতর দিয়ে। চা বাগানের ভেতরে চলতে চলতে পাওয়া যাবে মাধবপুর লেক। এ জন্য অবশ্য শ্রীমঙ্গলের কোনো গাড়ি চালকের সহায়তা নিলে ভালো।

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ

মাধবপুর লেক থেকে বেরিয়ে মূল সড়কটি হাতের বাঁয়ে চলে গেছে ধলাই সীমান্তের দিকে। এখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সীমান্ত ফাঁড়ির পাশেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ। এ পথের দু’ধারেই সমতল চা বাগান। এখান থেকেও চা বাগান দেখতে দেখতে ফিরতে পারেন ভিন্ন একটি পথে। ধলাই সীমান্ত থেকে ফিরতি পথে হাতের বাঁয়ে বেশ পুরনো চা বাগানের বাংলোটির পাশ থেকে সড়কটি ধরে চললে চা বাগানের পথে পথে আসা যায় শ্রীমঙ্গল শহরে।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট

দেশের একমাত্র চা গবেষণা ইনস্টিটিউটটি (বিটিআরআই) শ্রীমঙ্গল শহরের পাশেই। বিশাল চা বাগানের মাঝে বিটিআরআই-এর ক্যাম্পাসটি সবারই ভালো লাগবে। এখানে আছে চা পরীক্ষার ল্যাবরেটরি, বিটিআরআই উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রজাতির চা গাছ, ভেষজ উদ্ভিদের বাগান, পুরনো চা গাছ। তবে এসব দেখতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।

প্রয়োজনীয় তথ্য

চা বাগান আমাদের দেশের অমূল্য সম্পদ। তাই ভ্রমণের সময় অবশ্যই বাগানের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা কর্তব্য। কোনো রকম বর্জ্য বাগানে না ফেলে সঙ্গে নিয়ে আসুন। যেকোনো বাগানে প্রবেশের আগে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিন। শ্রীমঙ্গলের সব জায়গায় ভ্রমণের জন্য স্থানীয় কোনো চালকের সহায়তা নিন। আর চা বাগানের ভেতরের সড়কে চলার জন্য ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়ি হলে ভালো। সে ক্ষেত্রে শ্রীমঙ্গল থেকে জিপ ভাড়া করে নিতে পারেন। সারা দিনের জন্য সেখানে একটি জিপের ভাড়া ২৫০০-৩৫০০ টাকা।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে রেল ও সড়ক পথে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ (০১৭১১৯২২৪১৭), শ্যামলী পরিবহন (০১৭১১৯৯৬৯৬৫), সিলেট এক্সপ্রেস (০১৭১৩৮০৭০৬৯), টি আর ট্রাভেলস (০১৭১২৫১৬৩৭৮) ইত্যাদি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ভাড়া নন-এসি বাসে ২৫০ টাকা। টি আর ট্রাভেলসের এসি বাসে ভাড়া ৩৫০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনেও যাওয়া যায় শ্রীমঙ্গল। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬.৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, দুপুর ২.০০ মিনিটে প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০.০০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি বার্থ ৫২৬ টাকা, এসি সিট ৩৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৩২৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২০০ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৩৪৫ টাকা, শোভন চেয়ার ১৩৫ টাকা, শোভন ১১০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮.১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯.০০ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া প্রথম শ্রেণী বার্থ ৩৭০ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৫০ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৪২০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৬৫ টাকা, শোভন ১৫০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো মানের জায়গা ভানুগাছ রোডে টি রিসোর্ট (০৮৬২৬-৭১২০৭, ০১৭১২৯১৬০০১)। এ ছাড়া আরো একটি ভালো মানের থাকার জায়গা হলো রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট (০১৯৩৮-৩০৫৭০৬-৭, ০২-৯৫৫৩৫৭০)। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলের অন্যান্য হোটেল হলো হবিগঞ্জ সড়কে টি টাউন রেস্ট হাউস (০৮৬২৬-৭১০৬৫), কলেজ রোডে হোটেল প্লাজা (০৮৬২৬-৭১৫২৫)।

রাজশাহী

0 comments
পদ্মার তীরে অবস্থিত প্রায় ৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিভাগীয় শহর রাজশাহী। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এ শহরের উত্থান। আগে এ জেলার সদর দপ্তর ছিল নাটোরে। ১৮২৫ সালে সেটি নাটোর থেকে রাজশাহীতে স্থানান্তরিত হয়। রেশম উত্পাদন কেন্দ্র এবং পদ্মা নদীর তীরবর্তী শহর হওয়ায় ইংরেজ বণিকদের সহজেই নজর কাড়ে রাজশাহী। পর্যায়ক্রমে ওলন্দাজ, ফরাসি, ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে এ শহরে। ওলন্দাজ রেশম কারখানার ভবনটি ছিল বড়কুঠি নামে পরিচিত। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় ইউরোপীয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদর দফতর বসেছিল বড়কুঠিতে। উনিশ শতকের শেষ দিকে বড়কুঠি ব্রিটিশদের নিকট থেকে মেদিনীপুর জমিদার কিনে নেয়। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর একে বেসামরিক সরবরাহ বিভাগের গুদামঘর করা হয়। ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বড় কুঠি হয় ভাইস চ্যান্সেলরের বাসভবন ও কার্যালয়। শহরের প্রধান প্রধান কেন্দ্রগুলো হলো সাহেববাজার, রানীবাজার, রেশম পট্টি, ঘোড়ামারা, হাতেমখানা, দরগাপাড়া, কুমারপাড়া, বোয়ালিয়া ইত্যাদি। ১৮৭৬ সালে রাজশাহী পৌরসভা ও ১৯৯১ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয় রাজশাহী শহর।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর

রাজশাহী ভ্রমণের শুরুতেই দেখে নিন বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। তাতে এ অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব সম্পর্কে একটা ধারণা মিলবে। রাজশাহী সদর হাসপাতালের সামনে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। নাটোরের দিঘাপাতিয়ার জমিদার শরত্ কুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রামাপ্রসাদ চন্দ্র প্রমুখ ব্যক্তির প্রচেষ্টায় ১৯১০ সালে এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৬ সালে মূল জাদুঘর ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তত্কালীন বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল। ১৯৬৪ সালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের দায়িত্ব বর্তায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। আটটি গ্যালারিতে প্রায় দেড় হাজার প্রস্তর ও ধাতব মূর্তি, দুই হাজারেরও বেশি প্রাচীন মুদ্রা, প্রায় এক হাজার পোড়ামাটির ফলক ছাড়াও হাজারো নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে এ জাদুঘরে। এপ্রিল থেকে অক্টোবরে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত, নভেম্বর থেকে মার্চে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থকে এটি। শুক্রবার খোলা থাকে দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষিত ছুটির দিনে এটি বন্ধ থাকে।

শাহ মখদুমের (র.) সমাধি

রাজশাহী সরকারি কলেজের কাছে দরগা পাড়ায় রয়েছে এ অঞ্চলের দরবেশ পুরুষ শাহ মখদুমের (র.) সমাধি। ১২৮৭ সালে তিনি বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশে এ অঞ্চলে আসেন। ১৩১৩ সালে চিরকুমার এ দরবেশ মৃত্যুবরণ করেন। আলীকুলী বেগ ১৬৩৫ সালে তার সমাধির উপরে এক গম্বুজবিশিষ্ট সৌধ নির্মাণ করেন। প্রতিবছর আরবি মাসের ২৭ রজব এখানে উরস অনুষ্ঠিত হয়। আর ১০ মহররম এখান থেকে বের হয় তাজিয়া মিছিল।

টি বাঁধ

রাজশাহী শহরের পাশে পদ্মার তীরে ইংরেজি টি আকৃতির বাঁধ এখন শহরের অন্যতম বেড়ানোর জায়গা। পদ্মার শীতল বাতাসের পরশ নিতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ এখানে জড়ো হন। এখান থেকে নৌকা ভাড়া করে পদ্মার চরেও ঘুরে আসা যায়।

বিসিক শিল্প এলাকা

শহরের বিসিক শিল্প এলাকায় আছে সিল্ক ফ্যাক্টরি। বিভিন্ন সিল্ক কারখানার শোরুমও আছে এখানে। তুলনামূলক কম দামে এখান থেকে সিল্কের কাপড় কেনা যায়।

স্মৃতি অম্লান

মহান মুক্তিযুদ্ধের এ স্মৃতিসৌধটি রাজশাহীর কেন্দ্রস্থলে শহীদ ক্যাপ্টেন বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সড়কের দ্বীনেভদ্রা এলাকায়। ১৯৯১ সালের ২৬ মার্চ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। স্মৃতি অম্লান-এর নির্মাণ ও স্থাপিত্যিক ডিজাইনে নির্দেশনা দেন স্থপতি রাজিউদ্দিন আহমদ। এই স্মৃতিসৌধটি বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতীক। সৌধে মোট তিনটি স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভের গায়ে ২৪টি করে ধাপ, ধাপগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত আন্দোলনের ক্রমবিবর্তন ও স্বাধীনতার ফসল। মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের নির্দেশ করা হয়েছে স্তম্ভের গায়ের ৩০টি ছিদ্রের মাধ্যমে। প্রতিটি স্তম্ভে রয়েছে ১০টি করে ছিদ্র। বেদিমূলে রাখা আছে নীল শুভ্র পাথরের আচ্ছাদন, যা দুই লাখ নির্যাতিত নারীর বেদনাময় আর্তির কথা ইঙ্গিত করে। সৌধের চূড়ায় রয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্রের লালগোলক যা স্বাধীনতা যুদ্ধের উদীয়মান লাল সূর্যের প্রতীক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

রাজশাহী শহরের পাশে অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছায়াঘেরা ক্যাম্পাসে বেড়াতে ভালো লাগবে সবার।

শাবাশ বাংলাদেশ

মুক্তিযুদ্ধের এই স্মারক ভাস্কর্যটিও রাজশাহীতে অবস্থিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার সবুজ চত্বরে মুক্তাঙ্গনের উত্তরপাশে এটি অবস্থিত। রাকসু এবং দেশের ছাত্রজনতার অর্থ সাহায্যে শিল্পী নিতুন কুন্ড এই ভাস্কর্যটি বিনা পারিশ্রমিকে নির্মাণ করেন। ১৯৯২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এটি উদ্বোধন করেন। এই স্মৃতিস্তম্ভে আছে দুজন মুক্তিযোদ্ধার মূর্তি। একজন অসম সাহসের প্রতীক, অন্য মুক্তিযোদ্ধার হাত বিজয়ের উল্লাসে মুষ্টিবদ্ধ হয়েছে পতাকার লাল সূর্যের মাঝে।

বানেশ্বর বাজার

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে বানেশ্বরে। ঢাকা থেকে সড়কপথে যাবার সময় রাজশাহীর আগেই পড়ে বিশাল এ বাজার। এ বাজারে আমের দামও তুলনামূলক কম। দীর্ঘ এলাকাজুড়ে মহাসড়কের দুইপাশে নানান জাতের আমের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। নিজস্ব বাহনে ভ্রমণে গেলে ফেরার পথে এ বাজার থেকে কিনে নিতে পারেন পছন্দসই আম।

বাঘা মসজিদ

রাজশাহী থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে বাঘায় অবস্থিত ইট নির্মিত প্রাচীন মসজিদ। প্রায় ২৩.১৬ মি দৈর্ঘ্য এবং ১২.৮০ মিটার প্রস্থের এ মসজিদটির ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ছাদ ধ্বংস হয়ে যায়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ পরবর্তীতে গম্বুজসহ ছাদটি পুনর্নিমাণ করে। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে প্রচুর পোড়ামাটির ফলক। মসজিদের ভেতরে উত্তর-পশ্চিম কোণে একটু উঁচুতে নির্মিত একটি বিশেষ নামাজ কক্ষ আছে। ধারণা করা হয়, কক্ষটি শুধু সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত গভর্নরের জন্যই সংরক্ষিত ছিল। বর্তমানে করাচিতে সংরক্ষিত মসজিদের প্রধান প্রবেশ পথের ওপরের শিলালিপি অনুযায়ী সুলতান নসরত শাহ মসজিদটি ১৫২৩ সালে নির্মাণ করেন। মসজিদের পূর্ব পাশে আছে বিশাল আকৃতির একটি দিঘি। বাঘা মসজিদের আশপাশের এলাকাজুড়ে রয়েছে বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন আমের বাগান। ঘুরে দেখতে পারেন এগুলোও। রাজশাহী কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন থেকে ত্রিশ মিনিট পর পর বাঘার উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৪০-৪৫ টাকা।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে রাজশাহী যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে গ্রীন লাইনের (০১৭৩০০৬০০০৪) তাপনিয়ন্ত্রিত বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৫০০ টাকা। ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে শ্যামলী পরিবহন (০২-৯১৪১০৪৭), হানিফ এন্টারপ্রাইজ (০২-৯১৩৫০১৮), ন্যাশনাল পরিবহন ইত্যাদি পরিবহনের সাধারণ বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ২৮০-৩০০ টাকা। ঢাকার কমলাপুর থেকে রোববার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেস এবং ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি বার্থ ৬৮০ টাকা, এসি সিট ৪৬৬ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪০৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৮৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৩৪৪ টাকা, শোভন চেয়ার ১৬৫ টাকা, শোভন ১৪০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

রাজশাহী শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল আছে। এ শহরে ১০০-৪০০০ টাকায় বিভিন্ন মানের হোটেল পাওয়া যাবে। রাজশাহী চিড়িয়াখানার সামনে পর্যটন মোটেল (০৭২১-৭৭৫২৩৭, ০৭২১-৭৭০২৪৭), সাহেব বাজারে হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৭১১০০, ০১৭১১৩০২৩২২), বিন্দুরমোড় রেল গেইটে হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৭৩৮৩৯, ০১৭১১৮০২৩৮৭), গণকপাড়ায় হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৬১৮৮, ৭৭১৮০৮), মালোপাড়ায় হোটেল সুকর্ণা ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৭১৮১৭, ০১৭১৩৭২৪২৮৪), সাহেব বাজারে হামিদিয়া গ্রান্ড হোটেল (০৭২১-৭৭২৯৩০, ০১৭১৩৭০১০৫০), শিরোইলে হকস্ ইন (০৭২১-৮১০৭২১, ০১৭১৫৬০৫১৫৭), লক্ষ্মীপুর মোড়ে হোটেল গ্যালাক্সি (৮১২৭৪০, ০১৭৩৫৬৯২০২৯), সাহেব বাজারে হোটেল নিউ টাউন ইন্টারন্যাশনাল (০৭২১-৭৭৪৯৬১, ০১৭১৩৭০৪৩১৪)।

চুলের জন্য

0 comments
++ চুলের যত্নে প্রতিদিন চুল ও মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখুন। যাতে ডেডসেল বেশি না জমে।

++ প্রয়োজন মনে করলে প্রতিদিন শ্যাম্পু করুন। মনে রাখবেন, শ্যাম্পুটি যেন মাইল্ড হয়। প্রয়োজনে বেবি শ্যাম্পু হতে পারে।

++ মাথা ম্যাসেজ করার সময় নখ যেন তালু স্পর্শ না করে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

++ মাঝে মাঝে শ্যাম্পুর সঙ্গে দুটো ভিটামিন ‘ই’ ক্যাম্পসুল মিশিয়ে নিন।

++ চুল চিকন হলে শ্যাম্পু করার কিছুক্ষণ আগে কন্ডিশনার লাগান।

++ শ্যাম্পুর সঙ্গে একটা ডিম মিশিয়ে নিন। ডিমের প্রোটিনে চুলের ভলিউম বাড়বে।

++ লেবু কিংবা কিউয়ি-সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। ফ্রুট এসিড চুলের তেল ও ময়লা পরিষ্কার করে, চুল নেতিয়ে থাকে না।

++ প্রতিদিন চুল আঁচড়ালে এবং ঠান্ডা ও গরম পানিতে মাথা ধুয়ে ফেললে মাথার তালুর রক্ত চলাচল বাড়ে।

***ইত্তেফাক