Saturday, March 31, 2012

মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯

1 comments
'মোবাইল কোর্ট আইন' ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে। এ আইনের ভূমিকায় আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যের বর্ণনায় বলা হয় জনস্বার্থ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রমকে কার্যকর ও অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদন করার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে কিছু অপরাধ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে আমলে নিয়ে দণ্ডারোপের সীমিত ক্ষমতা অর্পণ করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয় হওয়ায় অত্র আইন প্রণয়ন করা হলো।
এ আইনের ৬(১) ধারায় বলা হয় যে অত্র আইনে তফসিলে বর্ণিত আইনের বিধান মোতাবেক কৃত অপরাধের বিচার করতে বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতাপ্রাপ্ত বটে। এ আইনের তফসিলে সর্বমোট ৬৫টি আইন উল্লেখিত আছে। এ আইনে সর্বমোট ১৭টি ধারা সনি্নবেশিত আছে।
মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পদ্ধতি বর্ণিত আছে ৭ ধারায়। ৭ ধারায় বলা হয়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর সংক্ষিপ্ত চার্জ গঠন করে তা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পড়ে শোনাবেন। অতঃপর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেন তিনি অভিযোগ স্বীকার করেন কি না। অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগ স্বীকার না করে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অব্যাহতি দেবেন [৭ (৩) ধারা]। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগ স্বীকার করলে তাঁকে দণ্ড প্রদান করবেন [৭(২) ধারা]। অভিযোগ স্বীকার করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দুইজন সাক্ষীর স্বাক্ষর বা টিপসই এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বাক্ষর বা টিপসই নেবেন [৭(২) ধারা] বর্ণিত আইনটি আপাতদৃষ্টে একটি চমৎকার আইন মনে হলেও বাস্তবিক পক্ষে Constitutional Norms এবং Principles of Natural Justice-এর সব নীতিমালাকে উপেক্ষা করে এ মোবাইল কোর্ট আইনটি রচিত হয়েছে, যা সবিস্তারে আলোচনা করা হলো।
* মোবাইল কোর্ট আইনের বিরুদ্ধে প্রথম আপত্তি হলো এটি Adversarial System of Criminal Justice সর্বৈব উপেক্ষা করো। আমাদের দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত মুখোমুখী বিজ্ঞ বিচারকের সামনে তাঁদের নিযুক্ত আইনজীবী দ্বারা মামলা প্রমাণ বা মিথ্যা প্রমানে আইনি লড়াই করে। উপস্থাপিত সাক্ষ্য প্রমানের আলোকে বিজ্ঞ বিচারক তাঁর সুচিন্তিত এবং সুসিদ্ধান্তিত রায় প্রদান করে। অথচ মোবাইল কোর্ট আইন সেই Adversarial System of Criminal Justice কে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে। এখানে উল্লেখ্য যে,অধুনা বিচার ব্যাবস্থায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশে Inquisitorial Criminal Justice System প্রচলিত আছে। এ ব্যবস্থায় বিজ্ঞ বিচারক অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি উভয় পক্ষকে ব্যাপক প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে একটা বিচারিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। আলোচ্য মোবাইল কোর্ট আইনে প্রতিষ্ঠিত মোবাইল কোর্ট ঠিক Inquisitorial Criminal Justice System-এর মধ্যে পড়ে তা বলার কোনোই অবকাশ নেই।
* মোবাইল কোর্ট আইনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আপত্তি হলো এ আইন বাংলাদেশ সংবিধানের বিধান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আইনি মৌলিক অধিকার Right to consult and be defended by a legal Practitioner of own choice মারাত্মকভাবে অস্বীকার করে। স্বীয় পছন্দের আইনজীবীর দ্বারা আনীত অভিযোগের সম্মুখে যথার্থ আইনি লড়াইয়ের অধিকার বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৩৩(১) অনুচ্ছেদ দ্বারা স্বীকৃত। ফৌজদারি আইনি লড়াই করার জন্য নিযুক্ত বিজ্ঞ আইনজীবী দ্বারা তাঁর Defence Against Charge-এর যে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার পেয়েছেন তা কোনো যুক্তিতে উপেক্ষা করা হলে সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা বা ধারণা মোবাইল কোর্ট আইনের কোথাও নেই। কাজেই একথা নিশ্চিন্তে বলা যায়, মোবাইল কোর্ট আইনের বিচারে এক অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁর আইনগত বক্তব্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে Seriously without Represented.
* মোবাইল কোর্ট আইনের বিরুদ্ধে তৃতীয় আপত্তি হলো এটি সংবিধান স্বীকৃত Right to Public Trial সমূলে অস্বীকার করে। সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদ মোতাবেক Right to Public Trial হলো Non-Derogable Right of every independent Citizen. এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য, Public Trial-এর মূল ভিত্তি হলো বিচার কাজটি হতে হবে জনসমক্ষে। কিন্তু তথাকথিত ঘটনা স্থলে। যেমন_ভেজালবিরোধী কার্যক্রমে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট যদি রেস্টুরেন্টে অপরাধ সংঘটন হতে দেখেন তবে বিচার সেই রেস্টুরেন্টের ভেতরেই অনুষ্ঠিত হয়। বিচার ও দণ্ড প্রদানের প্রাক্কালে কোনো জনসাধরণকে উক্ত স্থানে RAB, Police এবং বিজ্ঞ Executive Magistrate কাউকেই ওই স্থানে থাকতে দেন না। মোবাইল কোর্টের এহেন আচরণ নিশ্চয়ই Public Trial Concept-এর মারাত্মক বৈপরিত্য বটে।
* মোবাইল কোর্ট আইনের বিরুদ্ধে চতুর্থ আপত্তি হলো এটি মারাত্মকভাবে সর্বজনীন আইনের ন্যায়পর নীতিমালা Audi Atteram Partem Z_v No one shall be punished unheard নীতিমালাকে উপেক্ষা করে। Doctrine of Audi Alteram Partum মোতাবেক অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার আছে তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সাক্ষ্য (Evidence) অবলোকন করা এবং তা Ribut তথা খণ্ডন করা এবং উপস্থাপিত সাক্ষীদের (witnesses) প্রদত্ত Testimony তথা জবানবন্দি cross examine তথা জেরা করা। এখানে উল্লেখ্য, জেরা করা ফৌজদারি দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির মৌলিক আইনগত অধিকার। কিন্তু মোবাইল কোর্ট আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে এরূপ কোনো অধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিয়ে কোনো বিধান রাখা হয়নি। মোবাইল কোর্ট আইন Fundamental Principle of Natural Justice-এর নীতিমালা তথা Audi Attarem Partem-এর Basic Foundation চিরতরে মাটি চাপা দিয়েছে। Audi Attarem Partem-এর Basic Foundation nGjv Lord Justice Jenkins-এর ভাষায়।
"A party to an action is Prima facie entitled to have it heard in his presence; he is entitled to dispute his opponent's case and cross examine his opponent's witnesses and he is entitled to call his own witnesses and give his own evidence before the Court [এ rimshaw Vs. Dunbar (1953) 1 Q.B. 408 at 416]"
মোবাইল কোর্ট আইনের ১৭টি ধারা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় সার্বজনীন স্বীকৃত Audi Attarem Partem-এর সব শর্তগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে, যেমন_
ক) কোন সাক্ষ্য উপস্থাপন এবং প্রদর্শনের (Exhibit) করার বিধান রাখা হয়নি।
খ) কোনো সাক্ষীর জবানবন্দি উপস্থাপনের বিধান রাখা হয়নি।
গ) অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আনীত অভিযোগের জবাবে জেরা করার বিধান রাখা হয়নি।
ঘ) অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক নিজের সাফাইয়ের জন্য সাফাই সাক্ষী তথা (Defence witnesses) উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
* মোবাইল কোর্ট আইনের বিরুদ্ধে পঞ্চম আপত্তি হলো এ আইনের অধীন বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একই সঙ্গে তদন্তকারী, আমল গ্রহণকারী এবং দণ্ড প্রদানকারী বিচারককে তিনটি ভিন্ন ক্ষমতা একই সঙ্গে প্রদান করা হয়। ফলে মোবাইল কোর্টের বিজ্ঞ বিচারক বাংলাদেশ সংবিধানে ৭৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত Ombudsman-এর চরিত্র পরিগ্রহ করেছে। The Executive Magistrate is wearing there crowns in one head like an Ombudsman এটা মোটেও কাম্য নয়। একই ব্যক্তি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা একই সঙ্গে অর্জন করার ফলে একটা অযাচিত Dictator ship-এর জন্ম হওয়াই স্বাভাবিক।
* মোবাইল কোর্ট আইনের ষষ্ঠ আপত্তি হলো এটা Judicial Magistrate এবং Executive Magistrate-এর মধ্যকার পার্থক্যরেখা ম্লান করে দিয়েছে। যেমন_মোবাইল কোর্ট আইনের ৮(১) ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ Executive Magistrate সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দিতে পারেন। ফৌজদারি কার্য সংহিতার ধারা ৩২(গ) মোতাবেক বিজ্ঞ Judicial Magistrate of the 3rd Class সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড দিতে পারেন। কিন্তু অদ্ভুত বিধান এই যে Executive Magistrate আইনে স্বীকৃত যেকোনো অর্থ দণ্ড দিতে পারে অথচ বিজ্ঞ Judicial Magistrate of 3rd Class ২০০০ টাকার ওপরে অর্থ দণ্ড দিতে পারে না। Executive Magistrate Judicial Magistrate না হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে Judicial Magistrate-এর চেয়ে অধিক অর্থদণ্ডই প্রদানের ক্ষমতা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং Separation of Judiciary-এর নীতিমালার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন ও পরিপন্থী। এখানে উল্লেখ্য, Executive Magistrate-কে সংবিধান মোতাবেক একজন Ombudsman-এর মতো ক্ষমতা প্রদান করার কোনো যৌক্তিক কারণ বা ব্যাখ্যা এ আইনে নেই। অধিকন্তু Executive Magistrate বিচারিক হাকিম তথা Judicial Magistrate না হওয়া সত্ত্বেও কেন তাঁকে Judicial Magistrate-এর চেয়ে অধিক অর্থদণ্ড আরোপের ক্ষমতা প্রদান করা হলো তারও ব্যাখ্যা বা কারণ বর্ণিত হয়নি।
* মোবাইল কোর্ট আইনের সপ্তম আপত্তি হলো আলোচ্য আইনটি Human Rights and their Norms-এর পরিপন্থী। মানবাধিকার আইনের মূলনীতি হলো Justice as per Rule of Law আর নেই Rule of Law কখনোই কার্যকর হয় না যখন ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় Rules of Fair Play অস্বীকার করা হয়। মোবাইল কোর্ট আইনে যেহেতু অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কোনো সময় মঞ্জুরের ব্যবস্থা নেই। এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ ও বিদান দুটোই নেই, সেহেতু মোবাইল কোর্ট আইন নিঃসন্দেহে মানবাধিকার আইনের নীতিমালার সঙ্গে মারাত্মক সাংঘর্ষিক। মানবাধিকার আইনের নীতিমালা মতে, একজন অভিযুক্তকে অবশ্যই নিম্ন লিখিত সুযোগ দিতে হবে।
ক) সুস্পষ্ট অভিযোগ লিখিতভাবে আনতে হবে।
খ) অভিযোগ সমর্থনে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।
গ) অভিযোগ প্রমাণে সাক্ষীদের জবানবন্দি নিতে হবে।
ঘ) অভিযুক্তকে অভিযোগকারী ও তাঁর সাক্ষীদের জেরার সুযোগ দিতে হবে।
ঙ) অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য প্রস্তুুতির পর্যাপ্ত সুযোগ ও সময় দিতে হবে।
চ) অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজ পছন্দ মোতাবেক বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগের এবং পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।
ছ) আত্মপক্ষ সমর্থনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাক্ষ্য ও সাক্ষী উপস্থাপনের সুযোগ দিতে হবে। মোবাইল কোর্ট আইনের ৭(১) ধারা মতে, লিখিত অভিযোগ গঠনের বিধান থাকলে অন্য সব বিষয়ে কোনো বিধান মোবাইল কোর্ট আইনে একেবারেই উল্লেখিত হয়নি। ফলে পুরো আলোচ্য আইনটি Fundamental Human Rights, যা সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে স্বীকৃত আছে তা সমূলে উপেক্ষা করেছে। ফলে মানবাধিকার আইনের কষ্টি পাথরের বিচারে মোবাইল কোর্ট আইনটি আইন বলা অনভিপ্রেত বটে।
এ যাবৎ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমার নিবেদন যে, স্বল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত বিচার সম্পাদন অবশ্যই আশা জাগানিয়া বিষয় বটে। তবে দ্রুত বিচার হতে হবে আইনের নীতিমালা ও মানবাধিকার আইনের বিধিবিধান-সাপেক্ষে। যেকোনো আইন প্রণয়নে মনে রাখা দরকার যে, প্রণীত ফৌজদারি আইনটির কিছু গুণাবলি নিশ্চিত করে প্রণীত হয়েছে, যেমন :
ক. আইনটি হতে হবে Logical (যৌক্তিক)
খ. আইনটি হতে হবে Reasonable (সংগত)
গ. আইনটি হতে হবে Transparent (স্বচ্ছ)
ঘ. আইনটি হতে হবে Human Rights Oriented (মানবাধিকার সম্মত)
ঙ. আইনটি হতে হবে Constitutional guarantee (oriented) (সংবিধানের নিশ্চয়তা সম্মত)
চ. আইনটি হতে হবে Principles of Natural Justice oriented (ন্যায়পরায়ণ নীতিমালা সম্মত)
ছ. আইনটি হতে হবে Procedurally fairness oriented (পদ্ধতিগত স্বচ্ছতাসম্মত)
কিন্তু আলোচ্য আইনটি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণে দেখা যায় যে ওই আইন ওপরে বর্ণিত সব নীতিমালা উপেক্ষা করে সরকারের একটি বিশেষ শ্রেণীর কর্মকর্তাদের খুশি করার জন্য ঝটপট আলোচ্য আইনটি প্রণয়ন করে। কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না যে ইতিহাসের কোনো আইন মানবতাবিমুখ হয়ে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারি।
যে আইন মানবাধিকার রক্ষা করতে পারে না, যে আইন ন্যায়পর নীতিমালা রক্ষা করতে পারে না, যে আইন সংবিধান সমুন্নত রাখতে পারে না, যে আইন সব স্বচ্ছতা, যৌক্তিকতা এবং পদ্ধতিগত সংহতি রক্ষা করতে পারে না, সেই আইন আর যাই হোক জনস্বার্থ রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে সক্ষম এ কথা বিশ্বাস করার কোনো যৌক্তিক অবকাশ নেই।
একথা সত্য, মোবাইল কোর্ট আইন সফল ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের প্রাণঘাতী কর্মতৎপরতা অনেকাংশে ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, ভেজালবিরোধী কর্মে অনুসৃত আইনটিতে ভেজাল আইনের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ ও পর্যুদস্ত করবে।
লেখক : ড. খন্দকার মোহাম্মদ মুশফিকুল হুদা; আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Wednesday, March 21, 2012

গঙ্গামতি, কুয়াকাটা

0 comments
দেশের সর্বদক্ষিণের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নে গঙ্গামতির অবস্থান। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে পূর্ব দিকে মাত্র ১০ কিলোমিটার।
গঙ্গামতি সৈকতের বৈশিষ্ট্য: রামনাবাদ নদী ও বঙ্গোপসাগর মোহনায় এ সৈকত দেখতে অনেকটা ইংরেজি এস আকৃতির। এর দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার, প্রস্থ হবে দুই কিলোমিটারের মতো। তা ছাড়া সৈকতের সঙ্গে দুই হাজার একরেরও বেশি খাসজমি রয়েছে।

কুয়াকাটা সৈকত থেকে পর্যটকদের অনেকে এখানে এসে থাকেন। বন বিভাগের এক হাজার ৩৩৮ একর জমি নিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চলটি গঙ্গামতির বাড়তি আকর্ষণ। সংরক্ষিত এ বনাঞ্চলে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণী। এ সৈকতের বালুমহাল ঢেকে রেখেছে প্রাকৃতিক লতাগুল্ম। এককথায় বলতে গেলে প্রকৃতি সৈকতটিকে যেন নিজেকে সাজিয়েছে আপন করে।

গঙ্গামতি সৈকতের কারুকার্যময় বেলাভূমি, আর সেই বেলাভূমিতে দেখা যাবে হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার বিচরণ। ছোট ছোট ঢিবি বানিয়ে এরা এখানে নিরাপদ আবাস গড়েছে। সৈকতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঝিনুক। শীত মৌসুমে এ সৈকতের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে অতিথি পাখির সমাবেশ। এখানে জেলেদের আনাগোনাও কম নয়। পাশের মৌডুবি, বড় বাইশদিয়া, ছোট বাইশদিয়া, ভোলা, গলাচিপা এমনকি কক্সবাজারের মহেশখালীর জেলেরা নোঙর করে গঙ্গামতিতেই।

গঙ্গামতির সৌন্দর্যকে পরিপূর্ণ করেছে ‘গঙ্গামতি খাল’, যা গঙ্গামতি সৈকতের একেবারে পশ্চিম দিকে। এটি গঙ্গামতি ও কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে দুই ভাগ করেছে। সাগরগর্ভ থেকে বেরিয়ে এসে এ খালটি চলে গেছে গঙ্গামতির সংরক্ষিত বনের মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকের কাউয়ার চর গ্রামে। এই খালে নৌকা ভ্রমণ করা যায়। খালের স্বচ্ছ জলাধার আর তার দুই তীরের প্রকৃতির অপরূপ শোভায় মন ছুঁয়ে যায়।

লেখকঃ নেছারউদ্দিন আহমেদ, কলাপাড়া; পটুয়াখালী

Monday, March 19, 2012

বাংলা পঞ্জিকা : বাংলাদেশি পঞ্জিকা আবিস্কারের কথা

0 comments
মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সময়ের গুরুত্ব উপলব্ধ হতে থাকে। বিশেষ করে কৃষিসভ্যতার উন্মেষের পরই কাল গণনা অপরিহার্য হয়ে দেখা দেয়। কেননা কৃষি ঋতুনির্ভর। আমাদের সামাজিক কর্মকাণ্ডগুলো আবার কৃষিনির্ভর। অন্যদিকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোও ঋতুনির্ভর। ঋতু সম্পর্কীয় আগাম পূর্বাভাস তথা কাল গণনা এবং গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানজনিত শুভাশুভ কাল নির্ণয়ের কাল্পনিক ধারণা কৃষিভিত্তিক সমাজ-সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। প্রত্যেক প্রাচীন সভ্যতায় তাই কাল গণনা বা পঞ্জিকার ব্যবহার লক্ষ করা যায়। বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদেরও একটি নিজস্ব পঞ্জিকা আছে, যদিও 'বাঙালি' সভ্যতার ইতিহাস তত সুপ্রাচীন নয়। বাংলা সন ও পঞ্জিকার ইতিহাস অবশ্য আলাদা। বাংলা সনের প্রবর্তন নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা আছে। এই নামের প্রবর্তক শশাংক, না আকবর, না সংসদ তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে এই পঞ্জিকার কাঠামোগত পরিচয় নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। এই পঞ্জিকা সৌর পদ্ধতির। প্রাচীন ভারতীয় বেদাঙ্গ জ্যোতিষের সূর্য সিদ্ধান্ত অনুসৃত। মাস ও বারের নাম, সময়ের একক ইত্যাদি তারই সাক্ষ্য বহন করে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পঞ্জিকা সংস্কারের নামে বাংলা পঞ্জিকাকে খণ্ডিত করা হয়েছে। পঞ্জিকা জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষয়। ভাষাবিদ বা সুসাহিত্যিকদের দ্বারা পঞ্জিকার সংস্কার সম্ভব নয়। অথচ বাংলাদেশে যে পঞ্জিকা-সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছিল তার নেতৃত্বে ছিলেন একজন বিখ্যাত ভাষাবিদ। সেখানে কোনো বিজ্ঞানী ছিলেন বলে শুনিনি। পঞ্জিকার সংস্কার বলতে এই কমিটি ভারতের সাহা কমিটির মাসের দিন সংখ্যা সংক্রান্ত সুপারিশ গ্রহণ করে অধিবর্ষ এবং বর্ষ গণনা পদ্ধতি গ্রেগরীয় পঞ্জিকার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে। পঞ্জিকার প্রকৃতিগত কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ফলে আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনিক কাজে আমরা ব্যবহার করি গ্রেগরীয় পঞ্জিকা। ধর্মীয় কাজে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ব্যবহার করেন ইসলামী পঞ্জিকা। হিন্দু-বৌদ্ধরা মেনে চলেন আবহমান বাংলা পঞ্জিকা। তাহলে সংস্কৃতিতে এই বাংলা পঞ্জিকার কার্যকরিতা কোথায়? বাংলা পঞ্জিকা সংস্কারের প্রয়োজনই বা হলো কেন? সংস্কারের নামে ঐতিহ্যবাহী বাংলা পঞ্জিকাকে খণ্ডিত করার কোনো অধিকার আমাদের নেই। যদি সংস্কার করতে হয় তাহলে উভয় বাংলার যৌথ উদ্যোগেই তা করা সমীচীন হবে। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা যদি আলাদা নিজস্ব একটি পঞ্জিকার অধিকারী হতে চাই তাহলে বাংলা পঞ্জিকাকে খণ্ডিত না করেই তা করতে হবে। একটি সুষ্ঠু পঞ্জিকা নির্মাণের প্রধান বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো_বর্ষ শুরু, বর্ষ গণনা পদ্ধতি, মাস ও বছরের দিন সংখ্যা, অধিবর্ষ সংযোজন, মাস ও বারের নাম, দিনের সংজ্ঞা, গ্রহ-নক্ষত্রের আপেক্ষিক অবস্থান নির্ণয় ইত্যাদি। বর্ষ গণনার ধারাবাহিকতার জন্য একটি অঙ্কেরও প্রয়োজন। এসব বিষয় বিবেচনা করে বাংলাদেশের জন্য বিজ্ঞানসম্মত এবং বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত একটি আধুনিক পঞ্জিকা সহজেই নির্মাণ করা সম্ভব। তারই একটি রূপরেখা হতে পারে নিম্নরূপ।
Source: Google 20 March
আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি ১৯৭১ সালে একটি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। স্বাধীনতার কালকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা একাত্তর সাল থেকেই বাংলাদেশি শব্দ বা সন গণনা করতে পারি। সনের নাম হতে পারে শহীদ সন। বর্ষ গণনার ক্ষেত্রে কয়েকটি দিন বিবেচ্য। শহীদ দিবস (২১ ফেব্রুয়ারি), স্বাধীনতা দিবস (২৬ মার্চ), ও বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর)। জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিক থেকে বর্ষ গণনার প্রকৃষ্ট সময় বসন্ত বিষুব (২১ মার্চ)। এই দিন থেকেই সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু। তা ছাড়া এ দিনটি আমাদের স্বাধীনতা দিবসেরও কাছাকাছি। সুতরাং বসন্ত বিষুব থেকে বর্ষ গণনাই যুক্তিযুক্ত।
বর্ষ গণনা হবে সৌর পদ্ধতিতে। এক বসন্ত বিষুব থেকে পরবর্তী বসন্ত বিষুব পর্যন্ত সময়কে বলা হবে এক বছর। জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী, প্রচলিত সময়ের এককে এই বছরের দৈর্ঘ্য ৩৬৫.২৪২২ দিন ব্যবহারিক জীবনে ভগ্নাংশের ব্যবহার অসুবিধাজনক। বছরের দিন সংখ্যা হতে হবে তাই পূর্ণসংখ্যাজ্ঞাপক। আধুনিক নিয়মে তাই সাধারণ বর্ষ ধরা হয় ৩৬৫ দিনে। আধুনিক নিয়মে অধিবর্ষ সংযোজন করে ঘাটতিটুকু পুষিয়ে নেওয়া হয় যাতে ঋতুচক্রের সঙ্গে সংগতি থাকে। বছরে মাস ১২টি। আমরাও এই রীতি অনুসরণ করব। তবে মাসের দৈর্ঘ্য নির্মিত হবে নিউটনীয় বিজ্ঞান অনুসারে। এক বছরে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ৩৬০ বার অতিক্রম করে, প্রতি ৩০ বার অতিক্রমণকালকেই বলা হয় এক মাস। কিন্তু পৃথিবীর গতিবেগ সমহারের নয়, সূর্য থেকে বিপরীত দূরত্বের ওপর নির্ভর করে। গ্রীষ্মকালে পৃথিবী থাকে সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে, যদিও উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকে থাকে। পক্ষান্তরে শীতকালে পৃথিবী থাকে সূর্যের সবচেয়ে নিকটে। তাই পৃথিবীর শীতকালীন বেগ গ্রীষ্মকালীন বেগের থেকে বেশি। ফলে গ্রীষ্মকালীন মাসগুলো শীতকালীন মাসের থেকে দীর্ঘতর। মাসের প্রকৃত দৈর্ঘ্য গাণিতিকভাবে সহজেই বের করা যায়। কিন্তু তাতে ভগ্নাংশ চলে আসে। তাই ব্যবহারের সুবিধার জন্য গ্রীষ্মকালের প্রথম পাঁচ মাস ৩১ দিনের এবং পরের ৭ মাস ৩০ দিনের ধরা যায়, যাতে বছরে মোট ৩৬৫ দিন হয়।
নতুন পঞ্জিকায় মাসের নাম হিসেবে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ইত্যাদি ব্যবহার সমীচীন হবে না। জ্যোতির্বিজ্ঞানের দিক থেকে এ নামগুলোর আর কোনো তাৎপর্য নেই। যেমন বিশাখা নক্ষত্রে এখন আর বৈশাখ মাস আসে না। জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সংগতি রেখে মাসের নামকরণ যুক্তিযুক্ত। বর্ষ শুরুতে সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু। তাই প্রথম মাসের নাম হতে পারে অয়ন মাস। পরের মাসগুলো হতে পারে যথাক্রমে অগি্ন, মৌসুমি, বাদল, বরুণ, নির্মল, হেমন্তি, শ্যামল, বিজয়, শস্য, শিশির ও মধু মাস। বিজয় দিবসকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য 'বিজয়' নামটি রাখা হয়েছে। গ্রেগরীয় পদ্ধতি অনুযায়ী অধিবর্ষ সংযোজন সুবিধাজনক। অতিরিক্ত দিনটি যুক্ত হয় মধু মাসের সঙ্গে। অঙ্কের হিসাবে বাংলাদেশি যে সনকে ৪ দ্বারা ভাগ করলে ১ অবশিষ্ট থাকে সেই সনটি হবে অধিবর্ষ। বাকি সনগুলো হবে সাধারণ বর্ষ। কিন্তু শতাব্দী-পরবর্তী যেসব ২৯তম সনকে ৪০০ দ্বারা ভাগ করলে ২৯ অবশিষ্ট থাকে সেই সনগুলো হবে অধিবর্ষ।
আধুনিক পঞ্জিকার একটি বড় দুর্বলতা হলো_'বার' ও 'তারিখ'-এর মধ্যে মিল না থাকা। মাসের তারিখগুলো প্রতিবছর নির্দিষ্ট বার-এ আসে না। এর প্রধান কারণ হলো সপ্তাহ চক্রটি সাত দিনের। ৫২ সপ্তাহের একটি চক্র শেষ হয় ২৬৪ দিনে। অথচ সাধারণ বর্ষ ৩৬৫ দিনের। ফলে প্রতি সাধারণ বর্ষে 'বার' একদিন করে পিছিয়ে পড়ে। অধিবর্ষ হলে পিছিয়ে পড়ে দুই দিন। ফলে বার ও মাসের তারিখে ক্রমাগত গরমিল দেখা দিতে থাকে। নতুন পঞ্জিকায় আমরা যদি ৩৬৫তম দিনকে এবং অধিবর্ষ হলে ৩৬৬তম দিনকে যথাক্রমে বারহীন 'বর্ষ শেষ' এবং অধিবর্ষ বলে চিহ্নিত করি, তাহলে আর এই সমস্যা থাকে না। যে বারে বর্ষ শুরু হলো, পরবর্তী বছর সে 'বারে'ই শুরু হবে। শেষের এই দিন দুটি ছুটির দিন বলে বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলো_বারের নামগুলো। আমরা যদি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গৃহীত নামগুলো রেখে দিই, তাহলে অন্যান্য পঞ্জিকার সঙ্গে গরমিল দেখা দেবে। তাই বারের নতুন নামকরণ প্রয়োজন হবে। এই নামগুলো হতে পারে সূর্যের সাতটি নামে অথবা বাংলাদেশের সাতটি ফুল বা সাতটি নদীর নামে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী এক দিন হলো মধ্যরাত থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। ভারতীয় পদ্ধতিতে সূর্যোদয় থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কালকে বলা হয় এক দিন। প্রাত্যহিক জীবনে এ সংজ্ঞার ব্যবহারই সুবিধাজনক। তাই দিন বলতে আমরা এক সূর্যোদয় থেকে পরবর্তী সূর্যোদয় পর্যন্ত বোঝাব, যদিও সূর্যোদয়ের সময় নির্ধারিত হবে আধুনিক ঘড়ির কাঁটার নিয়মে। আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-নক্ষত্রের আপেক্ষিক অবস্থান অনুযায়ীই উদ্যাপিত হয়।
এ ছাড়া জ্যোতিষী গণনার জন্যও গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পঞ্জিকায় গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানজনিত যে সময়সূচি দেওয়া থাকে তা নির্ভুল নয়। যেমন_তিথি। চাঁদের ১২ বার অতিক্রমণকালকে এক তিথি বলা হয়। পঞ্জিকার হিসাবে তিথির ব্যাপ্তি ২১ ঘণ্টা থেকে ২৫.৫০ ঘণ্টা। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের হিসাবে তিথির ব্যাপ্তিকাল ২০ ঘণ্টা ২৬.৭৫ ঘণ্টার মতো। নতুন পঞ্জিকার জন্য আমরা চন্দ্র-সূর্য এবং গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান-সংক্রান্ত নির্ভুল তথ্য 'আমেরিকান এফিমেরিস' থেকে সংগ্রহ করতে পারি। উপরোক্ত বিশ্লেষণের আলোকে আমরা বাংলাদেশের জন্য একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বিজ্ঞানসম্মত পঞ্জিকা প্রণয়ন করতে পারি। এ পঞ্জিকা হবে সহজ-সরল এবং নাগরিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের জন্য সুবিধাজনক।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

Saturday, March 3, 2012

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

0 comments
বাংলাদেশের সবুজ বেষ্ঠিত নৈসর্গিক শহর দেখতে গিয়েছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সেখানে পেঁৗছানোর পর লক্ষ্য করলাম আমের বাগান ও পথের দু'পাশে সারি সারি আমগাছ। আমের মৌসুমে এখানে এলে মনে হবে এ যেন আমের দেশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের সর্বত্রই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পাখির গান। নেই কোনো কোলাহল। মন চাঙ্গা হয়ে যাবে লাখ লাখ আমগাছ দেখে। মনে হয়েছিল এখন যদি শীতকাল না হয়ে গ্রীষ্মকাল হতো। এখানে দেখার মতো আছে অনেক কিছু_ নুসরাত শাহ নির্মিত সোনামসজিদ, ঐতিহাসিক কানসাট ও মহানন্দা নদী পার হলে চোখে পড়বে পথের দু'পাশে বাহারি আমের সারি সারি গাছ, যা আপনার মনে নাড়া দেবে। সময় কম। ঘুরতে হবে অনেক জায়গা, দেখতে হবে অনেক কিছু। চলে গিয়েছিলাম ভারত সীমান্তের কাছে খানাইয়াদীঘি মসজিদ দেখতে। বিশাল এক দীঘির পাড়ে নির্মিত খানাইয়া মসজিদ। ১৪শ' সালের দিকে এ মসজিদ নির্মিত, যা স্থানীয়দের কাছে চামচিকা ও রাজবিবি মসজিদ নামে পরিচিত। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় লক্ষ্য করলাম শাক-সবজির বাগান। কিনে নিলাম কিছু শাক-সবজি। এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে এসব শাক-সবজি রান্না করতে বললাম। এর সঙ্গে গরুর মাংস দিয়ে রাতের খাবার সেরে নিলাম। পরদিন সকালে সেখানকার গ্রামীণ জীবন দেখলাম। দেখতে গেলাম ছোট সোনামসজিদ। সোনামসজিদ যাওয়ার পথে আমগাছগুলো দেখে ছোটবেলার আম চুরির কাহিনী মনে পড়ে গিয়েছিল। বড় সোনামসজিদটি ভারতের গৌড়ে অবস্থিত মুসলিম যুগের স্থাপত্য নিদর্শন।
মসজিদটির নির্মাণকাল সঠিকভাবে জানা যায়নি। এটি নির্মাণ করেছিলেন সুলতান হোসেন শাহের ছেলে সুলতান নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ। এ মসজিদের গম্বুজগুলোর উপর সোনালি রঙের আস্তরণ ছিল। এই থেকে মসজিদটির নাম হয় সোনামসজিদ। এখানকার সাজানো গোছানো আমের বাগান দেখে বুঝতে পারলাম এখানকার মানুষ খুবই পরিষ্কার-পরিছন্ন।
এখানে জড়িয়ে আছে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস, আছে প্রচুর পুরনো মন্দির। বিকেলে বাড়ি ফেরার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল, রওনা হলাম ঢাকার উদ্দেশে।