সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে মানুষের মনমানসিকতার। সময় সচেতন মানুষ সময়োপযোগী পেশা বেছে নিতে অনেক তৎপর। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম পছন্দের। কারণ সাংবাদিকতার মাঠ এখন অনেক বিস্তৃত। একটা সময় ছিল যখন সাংবাদিকতা শুধু খবরের কাগজের গণ্ডির মধ্যেই আবদ্ধ ছিল। বর্তমান যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকতা তার আগের গণ্ডি পেরিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এখন খবরের কাগজের স্থান কিছুটা হলেও দখল করে নিয়েছে টেলিভিশনের নিউজ চ্যানেলগুলো। অবশ্য তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় খবরের কাগজগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইন এডিশন বের করছে। পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি সাংবাদিকতার সুযোগ রয়েছে রেডিওতেও। এখানে রয়েছে অনেক সম্মান। সম্মানীও কম নয়। সৃজনশীল ব্যক্তিরা টিকে থাকতে পারেন এ পেশাতে।
সাংবাদিকতার ক্ষেত্রসমূহ
সাংবাদিকতার প্রধান ক্ষেত্র সংবাদপত্র। দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সংবাদপত্র। বাড়ছে সাংবাদিকের চাহিদা। দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক কিংবা ত্রৈমাসিক সংবাদপত্রের সংখ্যা অগুনিত। এ সংবাদপত্র আবার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ছাড়াও রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে। অনেকে মনে করছেন টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেল বৃদ্ধির সাথে সাথে সংবাদপত্রের গুরুত্ব লোপ পেতে পারে। আসলে এটা ঠিক নয়। সংবাদের গ্রহণযোগ্যতা ও পেছনের ভূমিকা উপস্থাপন এবং সংবাদের পেছনের সংবাদ খুঁজতে সংবাদপত্রের বিকল্প নেই। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রই উৎকৃষ্ট স্থান। সংবাদপত্রে যারা কাজ করেন তারা হলেন সম্পাদক, উপ-সম্পাদক, সহকারী সম্পাদক, নগর ও বার্তা সম্পাদক, সিনিয়র রিপোর্টার, বৈদেশিক সংবাদদাতা, মফস্বল সংবাদদাতা, সাব এডিটর, ক্রীড়া সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিক, চীফ মেক আপমেন এবং গ্রুফ রিডার।
টেলিভিশন :
সাংবাদিকতার অন্যতম ক্ষেত্র হলো টেলিভিশন বা চ্যানেল। টিভি বা চ্যানেল সাংবাদিক হওয়ার মাধ্যমে স্টার হওয়া সম্ভব টিভি সাংবাদিকতা আর সংবাদপত্রের সাংবাদিকতার মুল কাজ এক হলেও টিভি সাংবাদিতার ধরণ ভিন্ন। এখানে সাংবাদিককে ঘটনাস্থল থেকে তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করে বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। সাংবাদিক এখানে খবরের বিভিন্ন উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে সোর্ফ তৈরি করেন এবং খবর জন্ম দেয় এমন লোকও ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকেন। এসব কাজের জন্য সংবাদ সংস্থা পরিবেশিত খবর, বিভিন্ন সাময়িকীসহ তথ্যের বিভিন্ন উৎস থেকেও তথ্য সংগ্রহের কাজ সাংবাদিকরা করেন। এরপর তারা চলমান ছবি ব্যবহার করে নিজের কণ্ঠে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। কখনো কখনো তাদের ঘটনাস্থল থেকে কোনো রকম স্ক্রিপ্ট ছাড়াই সংবাদ পরিবেশন করতে হয়। কোনো কোনো সাংবাদিক সংবাদ পাঠকের কাজও করে থাকে।
রেডিও :
বর্তমানে রেডিও সাংবাদিকতার একটি অন্যতম ক্ষেত্র। মোবাইল সেটে এফ এম রেডিওর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে বর্তমান প্রজন্মের কাছে। ক্লাসের ফাঁকে, আড্ডায়, হাঁটতে, চলতে মোবাইলে বাজছে রেডিও। রেডিওর এ জনপ্রিয়তা শুধু গান দিয়েই নয়। প্রত্যেক ঘণ্টায় নিউজ আপডেটের মাধ্যমেও। বাংলাদেশ বেতার ছাড়াও বর্তমান ৫/৬টি রেডিও চ্যালেনের মধ্যে রেডিও ফুর্তি এবং এবিসি প্রত্যেক ঘণ্টায়ই সংবাদ পরিবেশন করে থাকে। অন্যান্য রেডিও এফএম চ্যানেলগুলোও শীঘ্রই তাদের শিডিউলে আনবে নিউজ । এ নিউজ সংগ্রহ, উপস্থাপন সাংবাদিকদের মাধ্যমেই হবে। রেডিও সাংবাদিকতায় কণ্ঠের গুরুত্ব একটু বেশি।
সংবাদ সংস্থা :
সংবাদপত্র, টিভি, রেডিও ছাড়াও সাংবাদিকতার সুযোগ রয়েছে সংবাদ সংস্থায়। বর্তমানে দেশে অনেক সংবাদ সংস্থা রয়েছে। যেমন- বাসস, ইউ এনবি, বিডি নিউজ, এনএনবি, ফোকাস বাংলা ইত্যাদি। এসব সংস্থায় চাকরি করতে গ্রাজুয়েট ডিগ্রিধারি হতে হয়। ইংরেজি ভাষায় দখল থাকলে ভালো হয়।
সাংবাদিকতায় চাকরির সুযোগ :
সাংবাদিকতা একটি প্রফেশনাল কোর্স। অর্থাৎ সাংবাদিকতা করে খুব বেশি লোককে ঘরে বসে থাকতে হয় না। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন রকমের খবরের কাগজ এবং জনসংযোগ বিভাগে চাকরি পাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। যোগ্যতা থাকলে আপনাকে চাকরি খুঁজতে হবে না আপনাকেই চাকরি খুজবে। আপনি যদি সাধারণ কোনো পত্রিকায় আপনার যোগ্যতা প্রকাশ করতে পারেন বড় বড় পত্রিকা আপনাকে ডেকে নেবে। আর দিন দিন বাড়ছে মিডিয়া। সুতরাং চাকরির নিশ্চয়তা এখানে হান্ড্রেড পার্সেন্ট। তবে সাংবাদিকরা সাংবাদিকতাকে চাকরি হিসেবে না নিয়ে নেন আনন্দ হিসেবে। একজন সাংবাদিকের কাজই হলো জনগণের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরা। এটাকে তাই পেশা নয় সেবা হিসেবেই নেন সবাই।
সাংবাদিক হতে হলে :
সফল সাংবাদিক হওয়ার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন খবর সম্পর্কে বোধ ও গভীরতা। ইংরেজিতেও বলে নিউজ সেন্স। পরিবেশন করা খবর পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছে কী-না, তা একজন সাংবাদিকের যোগ্যতার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়াতে পারে। সময়ের সাথে সমানতালে চলার মানসিকতা ও স্বচ্ছ পক্ষপাতহীন দৃষ্টিভঙ্গি ভালো সাংবাদিক হয়ে ওঠার চাবিকাঠি।
সাংবাদিকতার কাজে দায়িত্ব অনেক বেশি। প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষেত্রে কোনো খবর সংগ্রহ করতে না পারলে অন্য সাংবাদিকদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়। কিন্তু ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কোনো ছবি একবার ধরতে না পারলে আর সুযোগ পাওয়া যায় না। তাই চব্বিশ ঘণ্টা চোখ কান খোলা রাখতে হবে। একটানা অনেকক্ষণ কাজ করার মত শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতাও থাকা চাই। এ পেশায় রাতে ঈদের দিনও ডিউটি করতে হতে পারে।
সাংবাদিকতা বা গণযোগাযোগ বিষয় না পড়লেও সাংবাদিক হওয়া যায়। সেক্ষেত্রে স্নাতক পর্যায়ের ছাত্র হলে ভালো হয়। তবে লেখার হাত ও কথা বলার গুণ থাকতে হবে। শিল্পের প্রতি আগ্রহ থাকলেও এ পেশায় জায়গা করে নেয়া সম্ভব। অনেক সংবাদপত্র বা টিভিতে পরীক্ষার মাধ্যমে সাংবাদিক নেয়া হয়। বেসরকারি সংস্থায় বিজ্ঞাপন দিয়েও লোক নেয়া হয় বটে, তবে বিজ্ঞাপন বের না হলেও আবেদনপত্র বা সিভি জমা দেয়া যায়।
বর্তমানে দেশে বেসরকারি মিডিয়া আছে। এসব মিডিয়ার পত্র-পত্রিকা বা চ্যানেলে সাংবাদিকতা করতে চাইলে, কর্মরত সাংবাদিক বা যেকোনো ধরনের কর্মকর্তার সাথে ভালো যোগাযোগ রাখতে হবে। সাংবাদিকতার অধিকাংশ জনশক্তিই এ যোগাযোগের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। এজন্য যাদের আগ্রহ আছে আজ থেকে সখ্যতা গড়ুন যেকোনো সাংবাদিকের সাথে।
সম্মানী কেমন :
সাংবাদিকতা অনেকের কাছে স্বপ্নের মত। সাংবাদিকতা করে একদিকে পাওয়া যায় ব্যাপক পরিচিতি, সম্মান অন্যদিকে আছে স্বচ্ছল জীবনের হাতছানি। এখানে প্রথমদিকে হয়তো আয়ের পরিমাণটা কম। তবে অভিজ্ঞতা অর্জনের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আয় রোজগার। দেশে আপনার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সম্মানী ১০-৫০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। তবে ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে এ অঙ্ক বাড়তে পারে। আর যদি সাংবাদিকতার মাধ্যমে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার সাংবাদিক হওয়া যায় তাহলে সম্মানী এর দ্বিগুণও হতে পারে।
পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ :
আমাদের দেশে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করা য়ায়। পিআইবি থেকে ১ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স ডিগ্রি নেয়া যায়। এছাড়া দেশের ৬/৭টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও অনার্স মাস্টার্সের সুযোগ রয়েছে।
--এসএম মাহফুজ