Saturday, January 25, 2014

দৈনিক ইত্তেফাক

0 comments
১৯৫৩ সালের ২৪ শে ডিসেম্বর দেশের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক প্রথম প্রকাশিত হয়। কালের বিবর্তনে আজও দৈনিকটি স্বমহিমায় ভাস্বর। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সম্পাদনায় যাত্রা শুরু করে দৈনিক ইত্তেফাক। বর্তমানে তারই পুত্র আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছেন।

ইত্তেফাকের রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য। ৬০ বছরের পুরোনো পত্রিকা। বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে রয়েছে ইত্তেফাকের বিশাল ভূমিকা। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এরশাদ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ইত্তেফাক এরশাদের পক্ষ নেয়নি। এটা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর কৃতিত্ব। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ ও ওয়ান ইলেভেনের সময়েও এর ভূমিকা ছিল সাহসী।

ইত্তেফাক এর প্রকাশনা শুরু হয় ১৯৫৩ সনের ২৪শে ডিসেম্বর হতে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও ইয়ার মোহাম্মাদ খান এর হাত ধরে। ইয়ার মোহাম্মাদ খান হলেন এর প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক। তবে তাঁরা দুজনেই সক্রিয় রাজনীতি ও পাকিস্তান বিরোধি আন্দোলনে ব্যাস্ত থাকায়, তাঁরা তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিঞাকে সম্পাদক নিয়োগ করেন। ১৯৫৪ এর সাধারণ নির্বাচন ও যুক্তফ্রন্টের জয়ে ইত্তেফাক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে এবং আইয়ুব খান হতে ইয়াহিয়া খান পর্যন্ত সকল সামরিক শাসনের বিরোধিতা করে। ফলে, আইয়ুব খান ১৯৬৬ সনের ১৭ জুন হতে ১১ জুলাই এবং এরপর ১৯৬৬ সনের ১৭ জুলাই হতে ১৯৬৯ সনের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এর প্রচারনা বন্ধ রাখেন। মানিক মিঞাকেও কয়েকবার জেলে যেতে হয়।

মানিক মিঞা ১৯৬৯ সনের ১ জুন মারা যান এবং তাঁর দুই ছেলে মইনুল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব হাতে নেন। পাকিস্তান আর্মি ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ ইত্তেফাকের অফিস পুড়িয়ে ফেলে এবং পুনরায় এর প্রকাশনা (পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে) শুরু হতে ঐ বছরের ২১ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। বাংলাদেশের স্বাধিনতার পর ১৯৭৫ সনের ১৭ জুন ইত্তেফাকের জাতীয়করণ হয়, নুরুল ইসলাম পাটোয়ারি প্রধান সম্পাদক হন এবং ঢাকার ১ রামকৃষন মিশনস্থ নিউ নেশন প্রেস হতে প্রকাশিত হতে থাকে।

মানিক মিঞার ছেলেদেরকে ১৯৭৫ সনের ২৪ অগাস্ট মালিকানা ফিরিয়ে দেয়া হয়। অবশ্য মানিক মিঞার দুই মেয়ে ১২ শতাংশ মালিকানা পান যদিও ২ ছেলেই তা ব্যবস্থাপনা করে আসছিলেন। দুই ভাই দীর্ঘস্থায়ী বিবাদে জড়িয়ে পড়েন এবং তাঁরা দুজনে পালাক্রমে এই প্রভাবশালী পত্রিকা পরিচালনা করেন। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে কয়েক দফা বন্ধও হয়েছিল ইত্তেফাক। ২০০৭-২০০৮ সনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জরুরি অবস্থা চলাকালে পুরো নিয়ন্ত্রণ নেন ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা মইনুল হোসেন। ২০১০ সনের ২ মে বিকেলে ঢাকার শেরাটন হোটেলে দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এ চুক্তি সই হয় এবং ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও দুই মেয়ে ( ও তাঁদের সন্তানেরা) মালিকানা গ্রহণ করেন। বিনিময়ে বড় ছেলে মইনুল হোসেন ১০কোটি টাকা ও ইত্তেফাক ভবনের পুরা মালিকানা পান।