আমি যখন লিখি তখন মনে করি আমি কারও সাথে কথা বলছি বা কারও প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। আমার লেখায় অনেক সময়ই দুষ্টুমির রেশ থাকে যেটা একটা সিরিয়াস লেখায় থাকা উচিত নয়। কিন্তু আমার লেখায় ঠিক তেমনটি উঠে আসে, যেমনটি আমি বাস্তবে।
আমি নিজে কোন ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটার নই। আমার নিজের লেখা স্ক্রিপ্ট আমার পছন্দ হয়না। নিয়ম কানুন জানলেও লিখার সময় মনে থাকেনা। দেশে অনেক স্ক্রিপ্ট রাইটার আছে যারা বেশ ভালো স্ক্রিপ্ট লিখে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে আমরা যখন কোন টিপস বা লেখা পাইনা, তখন আমাদের হাতে সম্বল থাকে শুধুই গুগল। আমরা অনলাইনে দেখি যে হাজার হাজার লিঙ্কে হাজার পোস্ট। সবাই সবাইকে হেল্প করছে। কিন্তু আমাদের দেশের বোকচো* ফিল্মমেকার রা নিজেদের ভাত মরে যাওয়ার ভয়ে দু'তিনটে লাইন লিখে আমাদের মত উঠতি ফিল্মমেকার দের কোন সাহায্য করেনা। কিছু আবাল আবার বলে যে তথাকথিত ছবির হাট বা আজীজ সুপার মার্কেটে গিয়ে আড্ডা মারতে। অইখানে গিয়ে আড্ডা না মারলে নাকি ফিল্মমেকার হওয়া যাবেনা। ওরে পাপীষ্ট, সিনেমা বানাইতে হইলে কি আমারে গঞ্জিকা সেবন করতে হবে নাকি রে!! গাঞ্জা খাইলেই যদি বড় কিছু হওয়া যাইতো তাইলে গাঞ্জা খাওয়া বৈধ হইয়া যাইতো কবেই। বারাক ওবামাও টেলিভেশনে বক্তৃতা দেয়ার সময় কাগজের ভিতর ঠেসে ঠেসে পুরিয়া ভরতো। যত্তসব!!!
যাইহোক, এখন রাগের সময় না। পড়ালেখার সময়। কাউরে যখন তেমন ভাবে পাইলাম না তখন মনে হইলো আমি একটু ঘাটাঘাটি করে কাট-কপি-পেস্ট করে সোজা বাংলায় কিছু লিখে দেই। নিজেরো নাম হইলো, দশেরো উপকারে আসলো। আমরা এই পর্বে আলোচনা করবো স্ক্রিপ্ট রাইটিং কি, স্ক্রিপ্ট লিখতে গেলে কি কি লাগে এবং একটা ভালো স্ক্রিপ্ট এ কি কি থাকা প্রয়োজন।
=> প্রথমেই হালকা ভাবে জেনে নেই স্ক্রিপ্ট জিনিসটা কি। আর স্ক্রিপ্ট রাইটিং কিভাবে একটি ভালো সিনেমা নির্মানে সাহায্য করে থাকে।
সিনেমায় স্ক্রিপ্ট হলো একটি খাঁচা। এমন একটি খাঁচা যেটায় বলার চেয়ে দেখানর ব্যাপারটা বেশী থাকবে। এমন একটি খাঁচা যেখানে সবই থাকবে কিন্তু শর্ট-হ্যান্ড এর মত করে। এমন একটি খাঁচা যেটা আপনার পুরো সিনেমাকে একজনের চোখের সামনে দৃশ্যের পর দৃশ্য দেখতে সাহায্য করবে।
মনে রাখবেন, আপনার স্ক্রিপ্ট হলো আপনার সিনেমার ৫০%, স্ক্রিপ্ট অসাধারন তো আপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে গেলো। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে আপনাকে আপনার সিনেমাটোগ্রাফার বা এডিটর কে বলতেও হবো না কি করা লাগবে। আপনি যদি শুধুই স্ক্রিপ্ট রাইটার হোন, তাহলে আপনার ডিরেক্টর আপনার স্ক্রিপ্ট পরেই ধরে ফেলতে পারবে আপনার গল্প। এবং অবশ্যই একটি ভালো স্ক্রিপ্ট কে কখনোই মনে হবেনা overwritten। বেশী বেশী সব কিছুই খারাপ। আপনার স্ক্রিপ্ট এ প্রয়োজনের তুলনায় বেশী ডায়ালগ বা বর্ননা থাকলেও খারাপ।
অনেকে স্ক্রিপ্ট লিখতে গিয়ে শুধু মাত্র গল্প লিখে বসে থাকেন। এটা হয় কারন তারা হয় কখনো স্ক্রিপ্ট লিখেননি বা তারা স্ক্রিপ্ট লিখার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেননি। ধরুন, আপনাকে একটা বাড়ি বানাতে দেয়া হলো। আপনি মাথার মধ্যে বাড়ির ডিজাইন করে স্পটে থেকে সবাইকে বলে দিচ্ছে কি করতে হবে। কেউ কোথাও কোন মিস্টেক করলে আপনাকে দৌড়ে যেতে হচ্ছে। বা, কেউ তার টাস্ক শেষ করে কি করবে বুঝতে পারছেনা। বা, কোথাও কোন ছোটখাটো প্রব্লেম হলো, সেখানেও আপনাকে দৌড়ে যেতে হচ্ছে। আলটিমেটলি, আপনার বাড়ি হয়তো সম্পন্ন হবে। আপনার অমানুষিক পরিশ্রমে বাড়ির কাজটাও হয়তো ভালো হবে। কিন্তু আপনি কয়টা বাড়ি বানাতে পারবেন এভাবে? আর কয়টা বাড়িই বা ভালো হবে?
অথচ, আপনার হাতে যদি বাড়ির একটা ব্লু প্রিন্ট থাকতো যেটা আপনি এক মাস কষ্ট করে বাসায় বসে বসে বানিয়েছেন, তাহলে আপনার অনেক কষ্ট কমে যেতো। আপনার ইঞ্জিনিয়ার বা শ্রমিকরা নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাজ শুরু করে দিতো। তারা জানতো তাদের টাস্ক কি। ছোটখাটো সমস্যায় পড়লে তারা নিজেরাই সেগুলোর সমধান করতো। চিন্তা করে দেখুন, মাইক্রসফট এর যাবতীয় সকল সমস্যার সমাধান যদি বিল গেটস কে দিতে হতো তাহলে কি হতো?
স্ক্রিপ্ট হলো আপনার সিনেমার ব্লু প্রিন্ট। আপনার ব্লু প্রিন্ট যত ভালো হবে, আপনার সিনেমাও তত ভালো হবে। এটা সেমি-গ্যারান্টেড - কারন একটা সিনেমায় স্ক্রিপ্ট ই সব নয়, অনেক ব্যাপার স্যাপার আছে
=>স্ক্রিপ্ট লিখতে গেলে কি কি লাগে?
স্ক্রিপ্ট লিখতে গেলে আসলে প্রথমেই লাগে একটা ভালো গল্প। তবে, সব সময় যে ভালো গল্প হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। অনেক সিনেমার মুল গল্প টা অত আহামরি না হলেও শুধুমাত্র অভিনয় বা গল্পকারের বলার ঢঙ্গের কারনে অসাধারন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, আপনার গল্প ছাড়াও যেটা লাগবে সেটা হলো দিস্তা দিস্তা কাগজ আর চালু কলম।
দিস্তা দিস্তা কাগজ হয়তো আপনার খরচ হবেনা যদি আপনি পিসি তে লিখে থাকেন। পিসিতে অবশ্য আপনি ফাইনাল স্ক্রিপ্ট টা লিখতেই পারেন, কিন্তু বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, প্রাথমিক অবস্থায় খাতা-কলম এই ডিজিটাল যুগেও আপনার ব্রেইন স্টর্মিং এ সাহায্য করে থাকে প্রবল ভাবে যেটা পিসির সামনে বসে সম্ভব নয়। ফাইন্যালি যেটা লাগে সেটা হলো 'চিন্তা'।
=> একটা ভালো স্ক্রিপ্ট এ কি কি থাকা প্রয়োজন?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে নিচের পয়েন্ট গুলো থাকা প্রয়োজন।
ক) স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট - যেনো আপনার লেখা যে কেউ পড়ে বুঝতে পারে
খ) ক্যাচি ডায়ালগ - ভালো একটা স্ক্রিপ্টে ডায়ালগ খুব ইম্পরট্যান্ট একটা বিষয়। ডায়ালগ ভালো না হলে স্ক্রিপ্ট মার খেয়ে যায়। এই জন্য চালাক স্ক্রিপ্ট রাইটার রা ডায়ালগ কম রাখার চেষ্টা করে কারন মোশন পিকচার দেখানোর মাধ্যম, বলার নয়।
গ) দুর্দান্ত শুরু - শুরুটা যেনো দুর্দান্ত হয়। শুরু যদি খুব পানসে হয় তাহলে ধরে নিবেন আপনার সিনেমা অনেকেই স্কিপ করে চলে যাবে। আর যদি এই দুর্দান্ত টা পুর সিনেমা জুরে ধরে রাখতে পারেন তাহলে আপনাকে আর পায় কে!
ঘ) অসাধারন ফিনিশিং - শেষ ভালো যার সব ভালো তার (পুরোনো প্রবাদ)-- ফিনিশিং যদি সাদামাটা হয় তাহলে আপনার সিনেমা কেউ মনেও রাখবেনা। অসাধারণ ফিনিশিং কয়েকভাবে দেয়া যায় - অবিশ্বাস্য কোন টুইস্ট, যেটা দেখে মানুষ এর ধারনাই পালটে যাবে। অথবা, ইমোশন্যাল অ্যাটাক যেটা দেখে দর্শকের মনে হবে 'আহারে'।, অথবা কোন গুরুত্বপুর্ন মেসেজ।
ঙ) গ্রেট ক্যারেক্টার - কিছু গ্রেট ক্যারেক্টারের জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন। একজন গ্রেট নায়ক বা নায়িকা আমাদের সিনেমার সাথে যেমন মানুষিক ভাবে জড়িয়ে ফেলে, তেমনি আমাদের কে প্যাশনেট করে তোলে। আবার একজন গ্রেট ভিলেইন কে দেখে আমাদের মনে হয় লাফ দিয়ে উঠে স্ক্রিন এর ভেতর দিয়েই হারামজাদার গলা চেপে ধরি।
চ) ইমোশন ইমোশন ইমোশন - এর উপরে কিছু নাই। পারলে দর্শকদের কাঁদান। অথবা, পারলে তাদের হাসান। পারলে রাগান্বিত, পারলে তাদের মন ভালো করে দিন - এসব কাজই মেলা কষ্টের।
ছ) অল্প ভাষায় বর্ননা - অনেকেই স্ক্রিপ্ট লিখতে বসে মেলা বর্ননা দেন। মনে রাখবেন, যত বেশী বর্নন তত বেশী ঝামেলা। আর আপনাকে স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে সব কিছু বলে দিতে হবেনা। গল্পটা ধরতে পারলে ডিরেক্টর নিজেই বর্ননা বর্নিয়ে নিবে। আর আপনি নিজেও যদি আপনার স্ক্রিপ্টে ডিরেকশন দেন তাহলে আপনার বর্ননা করার জন্য শুটিং স্ক্রিপ্ট তো রইলোই।
আসুন খুব দ্রুত ফরম্যাট নিয়ে কিছু কথা বলে নেই। ফরম্যাট হলো এমন একটা জিনিস যেটা স্ট্যান্ডার্ড রাখলে সবার বুঝতে সুবিধা হবে। কিন্তু তার মানে এই না যে আপনাকে সব নিয়ম কানুন মানতেই হবে। কিন্তু কিছু নিয়ম মানাটা জরুরী। কোনটা কেনো জরুরী সেটা সিরিজের শেষেই বুঝতে পারবেন।
আমি সহজ সাবলীল ভাষায় ফরমেশন টা বর্ননা করার পাশাপাশি কিছু স্ক্রিপ্ট এর স্ক্রিনশট দিয়ে বুঝিয়ে দিবো। কিন্তু, মনে রাখা জরুরী যে আমি কোন বই লেখক ও নই আর বই থেকে কপি পেস্ট ও করতেছিনা। তাই হয়তো কিছু কিছু ব্যাপার মিস হয়ে যাবে। আমার পোস্ট কে কুরআ'ন বা বাইবেল না ধরে নেট খুজে খুজে আরও একটু পড়াশুনা করা উচিত হবে আপনাদের।
যাইহোক, স্ক্রিপ্ট আসলে দুই রকম হয় সাধারনত। এক, সাবমিশন স্ক্রিপ্ট- যেটা বিক্রির জন্য প্রস্তুতকৃত। দুই, শুটিং স্ক্রিপ্ট - যেটা শুটিং এর জন্য প্রস্তুতকৃত। এই দুটোর পার্থক্য হলো - সাবমিশন স্ক্রিপ্ট লিখা হয় কোন স্টুডিও তে সাবমিশন ও পরবর্তীতে বিক্রীর ধান্দায়। অথবা, আপনি হয়তো কোন ডিরেক্টর কে দিলেন যেন সে ওই স্ক্রিপ্ট টাকে শুট করে। আর শুটিং স্ক্রিপ্ট হলো শুটিং যে স্ক্রিপ্ট এর উপর বেইজড করে করা হয়। সেটা অনেক সময় শুধু ডিরেক্টর এর কাছেই থাকে। শুটিং সাবমিশন স্ক্রিপ্ট থেকে শুটিং স্ক্রিপ্ট এ যাওয়ার পথে সাধারনত স্ক্রিপ্ট টাকে আরো কয়েকবার লিখা হয়। আমরা এখন কিভাবে সাবমিশন স্ক্রিপ্ট লিখা উচিত সে ব্যাপারেই ধারনা নিবো।
তার আগে একটু চোখ বুলিয়ে নেই কিছু স্ক্রিপ্ট এর উপর। ফরেস্ট গাম্প সিনেমাটার শেষ দৃশ্যের কথা মনে আছে? সে যে ফরেস্ট গাম্প তার ছেলে জুনিয়র কে স্কুল বাসে তুলে দেয় যেভাবে তার মা তাকে বাসে তুলে দিত?
অথবা টাইটানিক ছবির কথা মনে আছে যখন রোজ কে একটা কাঠের তক্তার উপর উঠিয়ে জ্যাক তক্তাটা ধরে পানিতে ভাসতেছিলো?
ফরেস্ট গাম্প সিনেমার শেষ দৃশ্য - ৩টা স্ক্রিনশট
টাইটানিক এর চারটা স্ক্রিনশট
এটা আমার লেখা একটি আর্ট ফিল্ম এর কিছু অংশবিশেষ - বানানো হয়নি এখনো
স্ক্রিপ্ট গুলো দেখে কি কোন কিছু মাথায় ঢুকেছে? যাদের কিছু আইডিয়া আছে তারা নিশ্চয়ই বুঝেছেন। কিন্তু যারা আগে কখনো স্ক্রিপ্ট দেখেননি তারা নিশ্চয়ই মাথা চুল্কাচ্ছেন। কোন সমস্যা নেই, আমিও একসময় এইভাবে মাথা চুলকাতাম। এখনো মাঝে মাঝে চুলকাই
একটা স্ক্রিপ্ট এর কয়েকটা পার্ট আছে। এই পার্ট গুলো ধরতে পারলে আপনার কাছে স্ক্রিপ্ট বুঝা কোন ব্যাপার না।
এবার আসুন একটা স্ক্রিপ্ট লিখে ফেলি।
গল্পাংশবিশেষঃ একজন সেলসম্যান তারিকের দরজায় নক করবে। তারিক দরজা খোলার পর তাদের মধ্যে কথা হবে। তারিক কিনতে রাজী না হওয়ায় সেলসম্যান বিদায় নিবে।
১) পৃষ্ঠার সাইজ ও স্ক্রিপ্ট এর দৈর্ঘ্যঃ সাধারন A4 কাগজে স্ক্রিপ্ট লিখা হয়। আর প্রথম পেজ বাদে বাকী সব পেজের উপরে ডান কোনায় পেজ নাম্বার দেয়া থাকে। পেজের উপরে আর নীচে আধা ইঞ্চি থেকে এক ইঞ্চি পর্যন্ত জায়গা খালি থাকে, বাম পাশে থাকে ১.২ ইঞ্চি থেকে ১.৬ ইঞ্চি এবং ডান পাশে থাকে আধা ইঞ্চি থেকে এক ইঞ্চি। ইংলিশে লিখলে কুরিয়ার ফন্ট ১২ সাইজে রেখে ব্যাবহার করবেন।
আপনি যদি পিসি তে লিখেন তাহলে এটা মেনে চলার চেষ্টা করবেন। আর হাতে লিখলে কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করবেন।
বায়ে - ১.২ থেকে ১.৬ ইঞ্চি
ডানে - ০.৫ থেকে ১.০ ইঞ্ছি পর্যন্ত
উপরে ও নীচে -০.৫ থেকে ১.০ ইঞ্ছি পর্যন্ত
স্ক্রিপ্ট এর দৈর্ঘ্য সিনেমার দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে থাকে। সাধারনত হলিউড এর সিনেমার স্ক্রিপ্ট এ পৃষ্ঠা থাকে ৯৫ থেকে ১২৫ পৃষ্ঠা। আপনার স্ক্রিপ্ট এর কোন বর্ননা হয়তো পড়তে ১০ সেকেন্ড লাগবে কিন্তু শুট করার পর দেখবেন সেটা ৪৫ সেকেন্ড হয়ে গিয়েছে। তাই, সাধারনত এক পৃষ্ঠা স্ক্রিপ্ট এর শুটিং টাইম ধরা হয়ে থাকে ১ মিনিট।
২) একশন বা বর্ননাঃ বর্ননা আপনার স্ক্রিপ্ট এর নির্দিষ্ট সিকোয়েন্সের সেটিংস ও ক্যারেক্টার এর ব্যাপারে ধারনা দিয়ে থাকে। সবসময় এটা বাম থেকে ডানে যায়। আর সবসময় ই এটা বর্তমান সময়ে সময়ে (প্রেজেন্ট টেন্স) এ হয়ে থাকে। বর্ননায় কখনো এঙ্গেল বা শটের ধরন লিখবেন না। ওটা ডিরেক্টর এর কাজ।
ফেড ইনঃ
ইন্টঃ তারিকের দরজার সামনে - সকাল
হাতে ব্যাগ নিয়ে একজন সেলসম্যান এসে দরজায় নক করে। দরজা না খোলায় সেলস্ম্যান দ্বিতীয়বার দরজায় নক করলে তারিক খালিগায়ে দরজা খুলে বের হয়ে আসে।
- উপরে দেখুন, বর্ননাটুকু আমাদের ধারন দিচ্ছে যে আমরা তারিকের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সেলস্ম্যান দরজায় দু'বার নক করেছে আর তারপর তারিক বের হয়ে আসলে দেখা যায় তারিকের গায়ে জামা নেই। সেলস্ম্যানের হাতে ব্যাগ। এখন শুটিং স্ক্রিপ্ট এ গিয়ে দেখা যাবে ডিরেক্ট্র হয়তো এভাবে লিখেছে -
ফেড ইনঃ
ইন্টঃ তারিকের দরজার সামেন (মোতালিবের বাসা) - সকাল (৭টায়)
[মিড শট] বাম হাতে ব্যাগ নিয়ে এসে সেলস্ম্যান (তন্ময়) ডান হাতে দরজার কড়া নাড়বে - দুবার।
[ক্লোজ] সেলসম্যানের মুখ।
[টোপ শট] সেলসম্যান এক পা এগিয়ে এসে আবার কড়া নাড়বে - তারিক (আন্দালিব) বের হয়ে আসবে - সেলস্ম্যান পিছিয়ে যাবে।
[ক্লোজ] সেলস্ম্যান বিব্রত মুখে পিছিয়ে যাবে।
৩)ক্যারেক্টারের নামঃ কোন একট ডায়ালগ দেয়ার সময় ক্যারেক্টার এর নাম দিতে হয়। ক্যারেক্টার এর নাম হতে পারে আসল নাম বা মোটা মাথা, ভোদাই পোলা বা পুলিশ ১ অথবা জাদুকর টাইপের কিছু। ক্যারেক্টার এর নাম হবে ডায়ালগ এর ঠিক উপরে বাম থেকে সাড়ে তিন ইঞ্চি ডানে চাপায়া।
ফেড ইনঃ
ইন্টঃ তারিকের দরজার সামনে - সকাল
হাতে ব্যাগ নিয়ে একজন সেলসম্যান এসে দরজায় নক করে। দরজা না খোলায় সেলস্ম্যান দ্বিতীয়বার দরজায় নক করলে তারিক খালিগায়ে দরজা খুলে বের হয়ে আসে।
তারিক
কি চাই?
৪) [b]ডায়ালগঃ [/b]মারাত্মক একটা জিনিস। তবে আশার কথা হলো - এখন আর ডায়ালগ কে কাব্যিক করে বানাতে হয়না। ডায়ালগ হতে পারে মর্মস্পর্শী, হতে পারে সরাসরি আঘাত করে বলা, হতে পারে কাটখোট্টা। ডায়ালগের কোন নিজস্ব দৈর্ঘ্য নেই। আপনার ক্যারক্টার আর সিকোয়েন্সের উপর নির্ভর করবে আপনার ডায়ালগের দৈর্ঘ্য কেমন হবে। ডায়ালগ লিখার সময় মাথায় রাখবেন - আমরা সাধারনত কিভাবে কথা বলি। সেটার কাগজিক রুপ কত সুন্দর করে বলা যায়। যদি গল্প ডিমান্ড করে তাহলে অবশ্যই লোকাল ভাষা ব্যাবহার করা যায়। কিন্তু সিনেমা একটি শিল্প, আর একটি শিল্পের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। ক্রমাগত লোকাল ও বাজে ল্যাঙ্গুয়াজের ব্যাবহারে সেটা প্রায় ধ্বংসের মুখেই পড়বে। কয়টা অসাধারন সিনেমার নাম জানেন যেখানে লোকাল ভাষা ব্যাবহার করা হয়েছে? আর কয়টা অসাধারন সিনেমার নাম জানে যেখানে শুদ্ধ ভাষা ব্যাবহার করা হয়েছে?
আন্তর্জাতিকভাবে চিন্তা করুন। থিঙ্ক ইন্টারন্যাশনালি। আপনার সিনেমায় সেভাবে চিন্তা করে ভাষার ব্যাবহার করুন।
যাইহোক, পৃষ্ঠায় ডায়ালগ লেখার নিয়ম হলো - বাম পাশে আড়াই ইঞ্চি ফাকা আর ডান পাশে দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি ফাঁকা যায়গা রাখবেন।
ফেড ইনঃ
ইন্টঃ তারিকের দরজার সামনে - সকাল
হাতে ব্যাগ নিয়ে একজন সেলসম্যান এসে দরজায় নক করে। দরজা না খোলায় সেলস্ম্যান দ্বিতীয়বার দরজায় নক করলে তারিক খালিগায়ে দরজা খুলে বের হয়ে আসে।
তারিক
কি চাই?
সেলসম্যান
স্লামালিকুম। আমার নাম মোতালিব। আমি সিনেমা পিপলস থেকে এসেছি। আপনার সাথে কি কিছুক্ষন কথা বলা যাবে?
তারিক
কথা বলতে চাইলে বলতে পারেন কিন্তু কিছু বিক্রি করতে চাইলে হাতে হাড়িকেন ধরিয়ে দিবো।
৫) প্যারেইনথেটিক্যাল বা ডায়ালগের সময়কার এক্সপ্রেশনঃ ডায়ালগ দেয়ার সময় হয়তো আপনার ক্যারেক্টার একটি এক্সপ্রেশন দিলেন। সেটা লিখার নিয়ম হলো ক্যারেক্টারের নাম আর ডায়ালগের মাঝে লিখা। সাধারনতঃ ফার্স্ট ব্র্যাকেট () ব্যাবহার করা হয় প্যারেইনথেটিক্যাল এর দুইপাশে।
প্যারেইনথেটিক্যাল এর বাম পাশে ৩ ইঞ্চি জায়গা ফাকা রাখতে হয়। তার মানে ক্যারেক্টার এর এক্সপ্রেশন এক্সাটলি ক্যারেক্টারের নামের নীচে আসেনা। যদি এক্সপ্রেশন বড় করে লেখা লাগে তাহলে হয়ত আসে। যেমন-
তারেক
(রুক্ষ স্বরে)
- এটায় তারেকের ঠিক নিচে যদিও এক্সপ্রেশন দেখা যাচ্ছে, কারন পুরোটাই লেফট মার্জিনে আছে, আসলে এক্সপ্রেশন টা ক্যারেক্টার এর ঠিক নিচে একটু বায়ে থাকবে।
তারেক
(রুক্ষ স্বরে হাত নেড়ে)
- এই জায়গায় আবার এক্সপ্রেশন বড় করে লেখায় সেটা ডায়ালগ এর নীচে প্রায় মাঝামাঝি থাকবে।
একটা স্ক্রিনশট দিলে বুঝতে পারতেন। তবে আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন ব্যাপারটা। তবে মনে রাখবেন - এটা হতে হবে শর্ট এবং নির্দিষ্ট। আর না দিয়ে পার পাওয়া গেলে দিবেন না।
৬) এক্সটেনশনঃ নাম শুনেই বুঝতে পারছেন যে এটা কোন কিছুর বর্ধিত কিছু একটা। হ্যাঁ, এক্সটেনশন ব্যাবহার করা হয় ক্যারেক্টারের নামের ঠিক ডান পাশে ফার্স্ট ব্র্যাকেটের মধ্যে। এটা দিয়ে বুঝানো হয় কিভাবে ক্যারেক্টারের ভয়েস দর্শক এর কাছে পৌছুবে? যদি আমরা ক্যারক্টার কে দেখি স্ক্রীনে আর তার গলাও শুনি, তাহলে তো কিছু লেখার দরকার নেই। কিন্তু যদি এমন কারো গলা শুনি যে কিনা স্ক্রীনে নেই, তখন?
এখানে একটি এক্সটেনশন দেখুন
এক্সটেনশন সাধারনত দুই রকমঃ ভয়েস ওভার এবং অফ স্ক্রীন। অনেকেই দুটো ব্যাপার গুলিয়ে ফেলেন।
ভয়েস অভার (V.O.): যখন ক্যারেক্টার ওই সিকোয়েন্সে থাকেন না বা থাকেন কিন্তু কোন কিছুর বর্ননা দিচ্ছেন যেটা সিকোয়েন্সে দেখাচ্ছে না। যেমন ধরুন, গুডফেলাস সিনেমায় নায়ক ব্যাকগ্রাউন্ডে ক্রমাগত বলে যেতে ওর জীবনের ঘটনা। অথবা কিক-অ্যাস মুভিতে নায়ক ব্যাকগ্রাউন্ডে যা বলে - এসব হলো ভয়েস ওভার। অথবা, মুভির শুরুতেই মোটা একটা গলা কিছু কথা বলে গেলো, সে কিন্তু ওই মুভি তে অভিনয় করে নাই। এটাও ভয়েস ওভার।
অফ স্ক্রীন (O.S.): অফ স্ক্রীন হলো যখন কেউ সিকোয়েন্সে আছেন কিন্তু স্ক্রীনে নেই। যেমন ধরুন আগের লিঙ্কটায়। মা ও বাবা দুজনেই সিকোয়েন্সে আছেন, কিন্তু স্ক্রীনে ওই মুহুর্তে দুজনের কেউ নেই।
৭) ট্রাঞ্জিশনঃ আমি নিজে ট্রাঞ্জিশন স্ক্রিপ্টে ব্যাবহার করার পক্ষপাতি নই কারন ডিরেক্টর এর হাতে যাওয়ার পর স্ক্রিপ্ট নিয়ে যে ধোলাই চলে আর তারপর এডিটিং এর সময় এসব ট্রাঞ্জিশন সাধারনত পরিবর্তন হয়ে যায়। তারপরেও এটা একট স্ট্যান্ডার্ড রুল তাই সবাই ব্যাবহার করে থাকে। তবে বলা হয়ে থাকে, যদি খুব বেশী প্রয়োজন না পরে তাহলে ট্রাঞ্জিশন না দিতে স্ক্রিপ্টে। ট্র্যাঞ্জিশন গুলো আসলে আপনাদের চেনা।
ফেড টূ, ফেড আউট, কাট টু, ডিসলভ টু, কুইক কাট। এগুলা দিতে হয় স্ক্রিপ্ট এর বাম থেকে সারে ৬ ইঞ্চি ফাকা রেখে। মানে প্রায় ডান পাশে আর কি।
[b]এখানে দেখেন কাট টু [/b]
৮) শটঃ একজন স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে আপনার শট এর ব্যাপারে ধারনা থাকা উচিত। অনেক ধরনের শট আছে, কিন্তু আপনার অত বেশী শট না জানলেও দিব্যি চলে যাবে। তবে আগেও যেমন বলেছি, এখনো বলছি - শট জিনিসটা ডিরেক্টরের বাপের সম্পত্তি। আপনার লেখা শট ডিরেক্টর পছন্দ নাও হতে পারে। আপনি যদি স্ক্রিপ্ট বিক্রির চিন্তা করেন তাহলে পরামর্শ হলো আগেই শট না লিখে, বিক্রির পর আপনি ডিরেক্টর এর সাথে নেগশিয়েশন করুন।
যাইহোক, যদি একান্তই লিখতে চান তাহলে নেট ঘেটে সিনেমাটোগ্রাফী শট নিয়ে পড়াশুনা করুন।
৯) কিছু ব্যাপার মাথায় রাখা উচিত। আমি পয়েন্ট বাই পয়েন্ট লিখে দিচ্ছি।
- কখনো কোন ট্রঞ্জিশন দিয়ে পেইজ শুরু করবেন না।
- যদি কোন বর্ননা বা ডায়ালগে মাঝে অন্য পৃষ্ঠায় যেতে হয় তাহলে নীচে লিখুন - 'কন্টিনিউ' বা 'চলছে'
- খেয়াল রাখবেন যেনো ক্যারেক্টার এর নাম পেইজের শেষ লাইন না হয়। ক্যারেক্টার এর নাম লিখে অন্তত এক লাইন ডায়ালগ ও লিখুন।
- প্যারেনথেটিক্যাল দিয়েও পেইজ শেষ যেনো না হয়। অন্ততঃ এক লাইন ডায়ালগ দিয়ে বাকিটুকু না হয় অন্য পেইজে লিখুন
- ডুয়েল সাইডেড বা একি সাথে দুই জন কথা বলছে ( যেরকম ঝগড়ায় হয় আর কি) - এমন শটের ডায়ালগ লিখার সময় পাশাপাশি লিখুন।। এখানে একটা উদাহরন দিচ্ছি।
যেসব কাজ গুলো অবশ্যই করবেনঃ
- বানান ভুল যেনো না হয়। বানান ভুল চোখে পড়লে আপনাদের ও কিন্তু মেজাজ খারাপ হয়।
- কাউরে দিয়া স্ক্রিপ্ট পড়ান। জোড়ে জোড়ে পরাইতে পারলে আরো ভালো। না পারলে, তাকে বলুন এমনি পড়তে। তখনো কিছু ভুল বের হয়ে আসতে পারে।
- অভিজ্ঞ কাউকে যদি পা তাহলে খুব ভালো। স্ক্রিপ্ট এর ভুল ত্রুটি ধরায়া দিতে পারবে।
- লেখা কম্পিউটারে কম্পোজ করুন।
- যেসব রুলস গুলা বললাম সেগুলা মানার চেষ্টা করুন, যদি না আপনার কাছে এই রুল না মানার পিছনে কোন শক্ত কারন থাকে। মনে রাখবেন, এই রুলস আমি বানাই নাই
যেসব কাজ গুলো অবশ্যই করবেন নাঃ
-টাইটেলে পেইজে আবার হেভী একটা ফন্ট দিয়া নাম ধাম লেইখেন না। যত সাধারন রাখবেন তত ভালো।
- টাইটেল পেইজে কোন কোটেশন ব্যাবহার কইরেন না। আপনি ছাড়া আর কেউ এটা নিয়ে মাথা ঘামাবেনা।
- স্ক্রিপ্ট এর কোথাও তারিখ দিয়েন না।
- স্ক্রিপ্ট এর মাঝে শুধু শুধু খালি কাগজ দিবেন না।
- ক্যারেক্টারের বর্নানা বা কোন পুর্ব-গল্প লিখবেন না স্ক্রিপ্ট এ। যদি আপনার স্ক্রিপ্ট স্বয়ং কোন গল্প না বলে তাহলে আপনার স্ক্রিপ্ট লিখা হয়নি।
- রঙ্গীন কাগজ বা রঙ্গীন কালো কোনটাই ব্যাবহার করবেন না।
অনেক কথাই তো বললাম। এবার বলুনতো স্ক্রিপ্ট লিখা কি সোজা নাকী কঠিন? এবার বলনতো বিদেশের সাথে দেশের ফিল্ম এর এতো পার্থক্য কোথায়? একেবারে বটম লাইনে পার্থক্য দিয়া শুরু হয়। বলবেন না দেশের স্টোরি বাজে। এই বাজে স্টোরি কে মারাত্তক করে দিতে পারে বেশ কিছু ব্যাপার - তার মধ্যে একটা হলো স্ক্রিপ্ট।
লিখেছেন :: মাহদী হাসান [শামীম]
ফ্রীল্যান্স ফিল্মমেকার