বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সাথে পান্তা ভাত খাওয়ার বিষয়টি ঐতিহাসিক এবং লোকজ সংস্কৃতির অংশ। পান্তা ভাতের সাথে সাধারণত কাঁচা মরিচ বা পেঁয়াজ খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম এবং সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী বলেন, "রাখাল ছেলেরা বা মাঠে কৃষিকাজ করা কৃষকরা সাধারণ সময়েই সকালে পান্তা ভাত খেয়ে কাজ করতে যেত। আর নববর্ষের দিনে ভাতের পানি - যেটিকে আমানি বলা হতো - সেটি খেয়ে কাজে যেত তারা।"
"তারা মনে করতো এই আমানি বলকারক, এটি অনেকক্ষণ পেটে থাকে। এই আমানির ব্যাপারটা অনেককাল থেকে গ্রাম বাংলার কৃষি সভ্যতার সাথে যুক্ত হয়ে গেছে।"
এই চল শুরু হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় না থাকলেও কৃষিভিত্তিক সামন্তবাদী সমাজের প্রসার শুরু হওয়ার সাথেই এটি শুরু হয়, বলেন তিনি।
পান্তা ভাত কি সাধারণ ভাতের চেয়ে পুষ্টিকর?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম খান বলেন, "পান্তা ভাত হলো এনার্জি গিভিং ফুড (শক্তিদায়ক খাবার)। পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় বলে এটি কিছুটা ফারমেন্টেড (গাঁজানো) হয়। যা হজমে সুবিধা করে এবং গরমের দিনে এটি খেলে মানুষের আরামের ঘুম হয়। তবে এতে সাধারণ ভাতের চেয়ে খুব একটা বেশি পুষ্টিগুণ নেই।"
তবে কিছু বিশেষ পুষ্টি উপাদানের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে রান্না করা ভাতের চেয়ে পান্তা ভাত কয়েকগুণ বেশি সমৃদ্ধ থাকে বলে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। এতে বলা হয় "সাধারণ রান্না করা ভাতে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট আবদ্ধ অবস্থায় থাকে যা শরীর শোষণ করতে পারে না। রান্না করা ভাতকে ৮ থেকে ১২ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে সেই ভাতের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম এবং আয়রন বহুগুণ বেড়ে যায় এবং তা সহজে শরীর শোষণ করতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে এই ভাতের ক্যালসিয়াম সাড়ে তিনশো গুণ পর্যন্ত এবং আয়রন প্রায় ষাট গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।"
