Tuesday, April 13, 2021

হাজারকে সংক্ষেপে 'T' না বলে 'K' কেন বলা হয়?

0 comments

 এই চলটা সম্ভবত ইন্টারনেটের প্রভাবে জোড়ালো হয়েছে। এখন তো আমরা নিত্যদিনের কাজেও হাজার বোঝাতে ইংরেজি হরফ ‘k’ ব্যবহার করে ফেলি! যেমন আপনার কোনো বন্ধুকে বেতন জিজ্ঞেস করেছেন। তার বেতন যদি ৩৫ হাজার টাকা হয়, তাহলে কিন্তু টপ করে লিখে ফেলবে ‘৩৫k’। কিন্তু কোথা থেকে এল এই ‘K’? সেটা জানতে গেলে সময় সারণীতে সাঁতার কেটে আমাদের একটু পেছনের দিকে অতীতে যেতে হবে।

সেই ১৭৯৫ সালের কথা। যেখানে গ্রিক শব্দ ‘কিলিওই’ (Chilioi) অফিসিয়ালি স্বীকৃতি পেল হাজার অর্থে। কিন্তু ১০০০ বোঝানোর জন্য গ্রিকরা ‘কিলিওই’ ব্যবহার করতেন আরও অনেক আগে থেকে। পরে এই এককটি ব্যবহার করতে শুরু করেন ফরাসিরাও। ফরাসিদের হাতে এসে গ্রিক শব্দ ‘কিলিওই’ বদলে হয়ে যায় ‘কিলো’ (Kilo) তে। মেট্রিক পদ্ধতি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ‘কিলো’কে ১০০০ হিসাবে লিখতে শুরু করেন ফরাসিরা।

ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী এই ১০০০ এর গুরুত্ব বাড়ে, সবার কাছে ১০০০ প্রচলিত হয়ে যায়। ১০০০ লিটার, ১০০০ গ্রামের বদলে ক্রমে প্রচলিত হয়ে ওঠে কিলোলিটার, কিলোগ্রাম, কিলোটনের মতো নতুন শব্দগুলি। এই শব্দগুলি অনেকটাই বড়। আমেরিকার বদান্যতায় মার্কিনী স্টাইলে সময় বাঁচাতে তাই ‘কে’ লেখা শুরু হয়। এতে ১০,০০০ হয়ে যায় ‘১০কে’, ২০,০০০ হয়ে যায় ‘২০কে’ আবার ১লক্ষ হয়ে যায় ১০০কে। আর তখন থেকেই হাজার বোঝাতে ‘কে’-এর প্রচলন শুরু হয়।

লিখেছেন: রোজি ডসন | কোরা

Wednesday, April 7, 2021

আইফেল টাওয়ার বিক্রি

0 comments

 জালিয়াতি করে প্যারিসের আইফেল টাওয়ার বিক্রি করে দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। তা–ও আবার দুই–দুইবার! অসম্ভব কাণ্ডটি ঘটিয়েছিলেন ইউরোপ–আমেরিকায় জালিয়াতি করে ‘নাম কুড়ানো’ ভিক্টর লাস্টিগ। ‘কাউন্ট’ ভিক্টর লাস্টিগ নামেও কুখ্যাত ছিলেন তিনি। লাস্টিগের জন্ম ১৮৮০ সালে, অস্ট্রিয়া–হাঙ্গেরিতে (এখনকার চেক রিপাবলিক)। অপরাধ জগতে পা রাখেন তরুণ বয়সেই। জীবনের একটা লম্বা সময় কাটান প্যারিসে। সেখানে পড়াশোনার সময় জুয়া তাঁকে পেয়ে বসে। তাঁর নাম ওঠে তখনকার বিভিন্ন অপরাধ ম্যাগাজিনে।



১৯২৫ সালে পত্রিকায় একটি লেখা পড়েন ভিক্টর লাস্টিগ। সেখানে জানতে পারেন, আইফেল টাওয়ার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তার জোগান দিতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্যয়ভার বহন করার চেয়ে টাওয়ারটি রদ্দি হিসেবে বেচে দেওয়াই ভালো কি না, এমন প্রশ্ন তোলা হয় লেখাটির শেষ দিকে। আর এই শেষ লাইন থেকেই লাস্টিগের মাথায় আইফেল টাওয়ার বেচে দেওয়ার বুদ্ধিটি আসে। আর শুরু করে দেন জাল দলিল-দস্তাবেজ তৈরির অপকর্ম।

এরপর গোপনে একদল ভাঙারি ব্যবসায়ীকে একটি বিলাসবহুল হোটেলে দাওয়াত করেন লাস্টিগ। ব্যবসায়ীদের কাছে নিজেকে ফ্রান্সের ডাক ও টেলিগ্রাফমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। বোঝাতে সক্ষম হন যে এই টাওয়ার এখন দেশের জন্য একটা বোঝা এবং এ জন্যই সরকার এটিকে ফেলনা হিসেবে বেচে দিতে চাইছে। লাস্টিগ ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেন, পুরো বিষয়টি গোপন রাখা জরুরি, কেননা এ বিষয়ে জানাজানি হলে বিতর্ক দেখা দেবে। লাস্টিগ আরও বলেন, তিনি নিজে টাওয়ারের ক্রেতা নির্বাচনের দায়িত্বে আছেন।

অবশেষে আন্দ্রে পয়সন নামের এক ফরাসি ব্যবসায়ীকে ফাঁদে ফেলেন লাস্টিগ। তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পয়সনকে জানান, মন্ত্রী হিসেবে তাঁর অবস্থান নাজুক এবং তিনি সুযোগ–সুবিধাবঞ্চিত। এসব বলে তিনি আদতে পরোক্ষভাবে ঘুষ দাবি করেন। অন্যদিকে পয়সন চাইছিলেন ব্যবসায়ীমহলে নিজের একটা উঁচু অবস্থান তৈরি করতে। তাই তিনি যেভাবেই হোক আইফেল টাওয়ারটি কিনতে চাইছিলেন। কাজেই লাস্টিগকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতেও তাঁর দ্বিধা ছিল না। লাস্টিগ পুরো টাকা পাওয়ার পর পগারপার। প্রায় ৭০ হাজার ফ্র্যাঙ্ক হাতিয়ে নিয়ে স্বদেশে পাড়ি জমান তিনি।

লাস্টিগ ধরে নিয়েছিলেন, পয়সন লজ্জায় এবং পুলিশের কাছে ধরা পড়ার ভয়ে কাউকে বিষয়টি জানাবেন না। কেননা ঘুষ দেওয়াও তো অপরাধ। এদিকে খবরের কাগজেও চোখ রাখছিলেন এ বিষয়ে কোনো খবর ছাপা হয় কি না, তা দেখার জন্য। একসময় নিশ্চিত হন, জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হয়নি। লাস্টিগ আবার প্যারিসে ফিরে আসেন এবং আরও একবার আইফেল টাওয়ার বিক্রির নাটক সাজান। আগের মতোই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করেন। তবে এবার তাঁর জালিয়াতি ধরা পড়ে যায়। কিন্তু চতুর লাস্টিগ পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগেই পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।

লাস্টিগের ৪৭টি ছদ্মনাম এবং অসংখ্য পাসপোর্ট ছিল। পাঁচটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন। ব্যক্তিত্ব ছিল দারুণ আকর্ষণীয়। তাই একটি গোয়েন্দা সংস্থা লাস্টিগকে ‘তরুণীদের স্বপ্নের পুরুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিল। আর দ্য নিউইয়র্ক টাইমস তাঁকে চিহ্নিত করেছিল ‘সম্মানিত অভিজাত ব্যক্তি’ হিসেবে! লাস্টিগের আরেকটি বিশ্বখ্যাত জালিয়াতির ঘটনা ‘রোমানিয়ান বক্স’ নামে পরিচিত। এই রোমানিয়ান বক্স দিয়ে নাকি দুনিয়ার যেকোনো টাকার নোট নকল করা যেত!

সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন, ফ্রান্স টুডে ও মেন্টালফ্লস ডটকম

Friday, April 2, 2021

কাজল ও অজয়ের প্রেমের গল্প

0 comments

অজয়কে প্রথম দেখায় পছন্দ হয়নি কাজলের। তারা যখন একসঙ্গে প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেন তখন দুজনেই ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রেম করছিলেন। তারা কখনো একে অপরকে ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ বলেননি। এমনকি প্রথম দেখায় প্রেম হয়ে যায় এই থিওরিতে অজয়-কাজলের প্রেম হয়নি। কিন্তু, তারা যখন একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন তারপর আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাননি।

অজয় এবং কাজল উভয়ই চলচ্চিত্র পরিবারে বড় হয়েছেন। তাদের কাছে স্টারডম বা একে অপরের জনপ্রিয়তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। গুরুত্বপূর্ণ ছিল কাজের প্রতি মনোযোগ। তারা তাদের ব্যক্তিগত জীবন এবং তারকাজীবন আলাদা করে রেখেছিলেন। বিষয়টি খুব সাবধানতার সঙ্গে মেনে চলতেন। এতোটাই সাবধানতা অবলম্বন করতেন যে, তাদের বিয়ের ছবি ফাঁস না হলে কেউ বিশ্বাস করতেন না যে তারা সত্যিই বিয়ে করেছেন।

এই দু’জনের প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৯৫ সালে হালছুল সিনেমার সেটে। অবশ্য এই সিনেমার জন্য কাজল প্রথম পছন্দ ছিলেন না। কিন্তু, অভিনেত্রী দিব্যা ভারতীর আকস্মিক মৃত্যুতে শেষ মুহূর্তে কাজল সুযোগ পেয়ে যান। সুযোগ পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো অজয়ের সঙ্গে দেখা হয় কাজলের। তার সুযোগ পাওয়াটা একেবারেই কাকতালীয় ছিল। এই সিনেমার শুটিংয়ে সময় অজয়ের সম্পর্কে কাজলের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছিল।

পরে এক সাক্ষাৎকারে কাজল স্বীকার করেছিলেন- তিনি অজয়কে পছন্দ করতেন না। কারণ অজয়কে সবসময় সেটের কর্নারে বসে ধূমপান করতে দেখা যেত।

 

তবে, পরবর্তীতে একসঙ্গে আরও কাজ করতে গিয়ে তারা দুজন ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেন। দুজনের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হয়। তাদের বন্ধুত্ব এতোটাই ভালো ছিল যে, কাজল নিজের সম্পর্ক নিয়ে অজয়ের পরামর্শ নিতে শুরু করে। হালছুল-এর শুটিং চলাকালে তাদের প্রেম ছিল অন্যদের সঙ্গে।

তাদের দুজনেরই সেই প্রেম বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। পরবর্তীতে অজয় এবং কাজল সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নিলে তাদের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। তাদের বন্ধুত্বের মাঝে একধরনের নীরবতা তৈর হয় এবং তাদের মধ্যে লাজুক হাসি বিনিময় শুরু হয়। এরপর থেকে কাজল এবং অজয় একে অপরের সঙ্গে ডেটিং শুরু করেন। তারা চার বছর সবার কাছ থেকে তাদের সম্পর্ক লুকিয়ে রাখেন।

১৯৯৮ সালে কুছ কুছ হোতা হ্যায় সিনেমার শুটিং চলাকালে একটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন কাজল। তখন তিনি সাময়িক স্মৃতিভ্রংশে ভুগছিলেন এবং কিছুই মনে করতে পারেননি। তখন সিনেমার পরিচালক করণ জোহর এবং সহঅভিনেতা শাহরুখ খান অজয়কে ফোন করেন এবং কাজলের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ফোনে অজয়ের কণ্ঠস্বর শোনার সঙ্গে সঙ্গে কাজল সুস্থতা বোধ করতে শুরু করেন। এটাই ছিল তাদের রসায়নের জাদু।

পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে কাজলের সিনেমাটি সুপার হিট হওয়ার মাত্র তিন মাস পরে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। বলিপাড়া যা কখনোই কল্পনা করেনি। এই জুটি মহারাষ্ট্রের ঐতিহ্য মেনেই গিঁট বাঁধেন। অজয়ের বাসভবনের ছাদে ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং সেখানে মাত্র কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিয়েতে কাজল একটি সাধারণ সবুজ রঙের সিল্কের শাড়ি পরেছিলেন এবং অজয় একটি সাদা শেরওয়ানি পরেছিলেন। অতিরঞ্জিত কোনো কিছুই ছিল না।

পরে বিয়ের ছবিগুলো ফাঁস হলে সবাই বিষয়টি জানতে পারেন। তবে, কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি ক্যারিয়ারে শীর্ষে অবস্থানে থাকা দুজন অভিনেতা এভাবে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন।

তখন এক সাক্ষাৎকারে অজয় বলেছিলেন, প্রথমে আমরা বন্ধু হয়ে গেলাম, তারপর বুঝতে পারলাম আমরা একে অপরকে বুঝি। পরে একদিন হঠাৎ করেই আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আমার বিয়েকে বড় কোনো ইস্যু করতে চাইনি। তাই ঘরের ছাদে বিয়ে করেছি। বিয়ে শেষে আবার ঘরেই ফিরে গিয়েছি।

বিয়ের পর কাজল সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করা একপ্রকার ছেড়ে দেন এবং পরিবারকে সময় দিতে শুরু করেন। তবে, অজয় নিজের অভিনয় ক্যারিয়ারে সময় দিতে থাকেন এবং নিজের অবস্থান তৈরি করেন।

বিয়ের চার বছর পরে এই দম্পতির ঘরে প্রথম কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয় নিসা দেবগন। নিসার জন্মের সাত বছর পর ২০১০ সালে অজয়-কাজল ঘরে আসে একটি পুত্র সন্তান। তার নাম রাখা হয় যুগ দেবগন। তবে এই তারকা দম্পতি তাদের সন্তানদের মিডিয়া থেকে দূরে রেখেছিল। কাজল সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগ দেওয়ার পর তাদের পারিবারিক বন্ধনের সুন্দর সুন্দর মুহূর্তগুলো আপলোড করা শুরু করেন।

কাজল বা অজয় কেউই একে অপরকে ‘আই লাভ ইউ’ বলেননি। কিন্তু, তারা দুজনেই বুঝতে পেরেছিলেন এটা ভালোবাসা এবং তারা বিয়ে করতে যাচ্ছেন। সবকিছু বলা হয়নি কিন্তু সবকিছু বুঝতে পেরেছিলেন। এই দম্পতি কখনো একে অপরকে ফুল বা উপহার পাঠাতে বিশ্বাস করতেন না। তারা ভালোবাসার প্রকাশ কখনো কৃত্রিম কিছুর ওপর নির্ভর করেননি। একে অপরের জন্য তাদের অনুভূতিকে কাজে লাগিয়েছেন। তাই হয়তো কাজল ও অজয়ের বন্ধন এখনো অটুট। অবশ্যই এটি একটি বিরল এবং সুন্দর প্রেমকাহিনী!

 


 রবিউল কমল | THE DAILY STAR