অজয়কে
প্রথম দেখায় পছন্দ হয়নি কাজলের। তারা যখন একসঙ্গে প্রথম সিনেমায় অভিনয়
করেন তখন দুজনেই ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রেম করছিলেন। তারা কখনো একে
অপরকে ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ বলেননি। এমনকি প্রথম দেখায় প্রেম হয়ে যায় এই
থিওরিতে অজয়-কাজলের প্রেম হয়নি। কিন্তু, তারা যখন একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত
নিলেন তারপর আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাননি।
অজয় এবং কাজল উভয়ই চলচ্চিত্র পরিবারে
বড় হয়েছেন। তাদের কাছে স্টারডম বা একে অপরের জনপ্রিয়তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল
না। গুরুত্বপূর্ণ ছিল কাজের প্রতি মনোযোগ। তারা তাদের ব্যক্তিগত জীবন এবং
তারকাজীবন আলাদা করে রেখেছিলেন। বিষয়টি খুব সাবধানতার সঙ্গে মেনে চলতেন।
এতোটাই সাবধানতা অবলম্বন করতেন যে, তাদের বিয়ের ছবি ফাঁস না হলে কেউ
বিশ্বাস করতেন না যে তারা সত্যিই বিয়ে করেছেন।
এই দু’জনের প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯৯৫ সালে
হালছুল সিনেমার সেটে। অবশ্য এই সিনেমার জন্য কাজল প্রথম পছন্দ ছিলেন না।
কিন্তু, অভিনেত্রী দিব্যা ভারতীর আকস্মিক মৃত্যুতে শেষ মুহূর্তে কাজল সুযোগ
পেয়ে যান। সুযোগ পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো অজয়ের সঙ্গে দেখা হয় কাজলের।
তার সুযোগ পাওয়াটা একেবারেই কাকতালীয় ছিল। এই সিনেমার শুটিংয়ে সময় অজয়ের
সম্পর্কে কাজলের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছিল।
পরে এক সাক্ষাৎকারে কাজল স্বীকার করেছিলেন- তিনি অজয়কে পছন্দ করতেন না। কারণ অজয়কে সবসময় সেটের কর্নারে বসে ধূমপান করতে দেখা যেত।
তবে, পরবর্তীতে একসঙ্গে আরও কাজ করতে গিয়ে
তারা দুজন ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেন। দুজনের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হয়। তাদের
বন্ধুত্ব এতোটাই ভালো ছিল যে, কাজল নিজের সম্পর্ক নিয়ে অজয়ের পরামর্শ নিতে
শুরু করে। হালছুল-এর শুটিং চলাকালে তাদের প্রেম ছিল অন্যদের সঙ্গে।
তাদের দুজনেরই সেই প্রেম বেশিদিন স্থায়ী
হয়নি। পরবর্তীতে অজয় এবং কাজল সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নিলে তাদের মধ্যে
কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। তাদের বন্ধুত্বের মাঝে একধরনের নীরবতা তৈর হয় এবং
তাদের মধ্যে লাজুক হাসি বিনিময় শুরু হয়। এরপর থেকে কাজল এবং অজয় একে
অপরের সঙ্গে ডেটিং শুরু করেন। তারা চার বছর সবার কাছ থেকে তাদের সম্পর্ক
লুকিয়ে রাখেন।
১৯৯৮ সালে কুছ কুছ হোতা হ্যায় সিনেমার
শুটিং চলাকালে একটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন কাজল। তখন তিনি সাময়িক
স্মৃতিভ্রংশে ভুগছিলেন এবং কিছুই মনে করতে পারেননি। তখন সিনেমার পরিচালক
করণ জোহর এবং সহঅভিনেতা শাহরুখ খান অজয়কে ফোন করেন এবং কাজলের সঙ্গে কথা
বলতে বলেন। ফোনে অজয়ের কণ্ঠস্বর শোনার সঙ্গে সঙ্গে কাজল সুস্থতা বোধ করতে
শুরু করেন। এটাই ছিল তাদের রসায়নের জাদু।
পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে কাজলের সিনেমাটি
সুপার হিট হওয়ার মাত্র তিন মাস পরে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন।
বলিপাড়া যা কখনোই কল্পনা করেনি। এই জুটি মহারাষ্ট্রের ঐতিহ্য মেনেই গিঁট
বাঁধেন। অজয়ের বাসভবনের ছাদে ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং
সেখানে মাত্র কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিয়েতে কাজল একটি সাধারণ সবুজ রঙের সিল্কের শাড়ি পরেছিলেন এবং অজয় একটি
সাদা শেরওয়ানি পরেছিলেন। অতিরঞ্জিত কোনো কিছুই ছিল না।
পরে বিয়ের ছবিগুলো ফাঁস হলে সবাই বিষয়টি
জানতে পারেন। তবে, কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি ক্যারিয়ারে শীর্ষে অবস্থানে
থাকা দুজন অভিনেতা এভাবে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন।
তখন এক সাক্ষাৎকারে অজয় বলেছিলেন, প্রথমে
আমরা বন্ধু হয়ে গেলাম, তারপর বুঝতে পারলাম আমরা একে অপরকে বুঝি। পরে
একদিন হঠাৎ করেই আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আমার বিয়েকে বড় কোনো
ইস্যু করতে চাইনি। তাই ঘরের ছাদে বিয়ে করেছি। বিয়ে শেষে আবার ঘরেই ফিরে
গিয়েছি।
বিয়ের পর কাজল সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করা
একপ্রকার ছেড়ে দেন এবং পরিবারকে সময় দিতে শুরু করেন। তবে, অজয় নিজের অভিনয়
ক্যারিয়ারে সময় দিতে থাকেন এবং নিজের অবস্থান তৈরি করেন।
বিয়ের চার বছর পরে এই দম্পতির ঘরে প্রথম
কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয় নিসা দেবগন। নিসার জন্মের সাত
বছর পর ২০১০ সালে অজয়-কাজল ঘরে আসে একটি পুত্র সন্তান। তার নাম রাখা হয়
যুগ দেবগন। তবে এই তারকা দম্পতি তাদের সন্তানদের মিডিয়া থেকে দূরে
রেখেছিল। কাজল সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগ দেওয়ার পর তাদের পারিবারিক বন্ধনের
সুন্দর সুন্দর মুহূর্তগুলো আপলোড করা শুরু করেন।
কাজল বা অজয় কেউই একে অপরকে ‘আই লাভ ইউ’
বলেননি। কিন্তু, তারা দুজনেই বুঝতে পেরেছিলেন এটা ভালোবাসা এবং তারা বিয়ে
করতে যাচ্ছেন। সবকিছু বলা হয়নি কিন্তু সবকিছু বুঝতে পেরেছিলেন। এই দম্পতি
কখনো একে অপরকে ফুল বা উপহার পাঠাতে বিশ্বাস করতেন না। তারা ভালোবাসার
প্রকাশ কখনো কৃত্রিম কিছুর ওপর নির্ভর করেননি। একে অপরের জন্য তাদের
অনুভূতিকে কাজে লাগিয়েছেন। তাই হয়তো কাজল ও অজয়ের বন্ধন এখনো অটুট। অবশ্যই
এটি একটি বিরল এবং সুন্দর প্রেমকাহিনী!
রবিউল কমল | THE DAILY STAR