Thursday, February 13, 2014

বিশ্ব বেতার দিবস

0 comments

বিশ্ব বেতার দিবস পরিচিতি :


জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কোর ৩ নভেম্বর, ২০১১ তারিখের সাধারণ সভায় বিশ্ব বেতার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্পেনের 'একাডেমিয়া এসপানোলা ডি লা রেডিও' বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার সংস্থা ও তাদের ইউনিয়নের সমর্থনে এ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের ১৮৭তম সেশনে স্পেনের স্থায়ী প্রতিনিধি আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব বেতার দিবস পালনের প্রস্তাব করলে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। ১৪ জানুয়ারি ২০১৩ জাতিসংঘের সাধারণ সভা আনুষ্ঠানিকভাবে 'বিশ্ব বেতার দিবস' পালনের ইউনেস্কোর সিদ্ধান্তটি অনুমোদন করে। মূলত ১৯৪৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ বেতার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেতার দিবস পালিত হচ্ছে। বিশ্ব বেতার দিবস ২০১৪ এর স্লোগান 'বেতার সবার জন্য, সব সময়ে, সবখানে'।

বেতারের ইতিহাস :

বাংলাদেশ বেতার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের উত্তরাধিকার, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও অতি প্রাচীন গণমাধ্যম। ১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর এর যাত্রা। বৃটিশ শাসনামলে এটি প্রতিষ্ঠিত হলেও বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যম হিসেবে এ দেশের গণমানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। একটি ৫ কি. ও. ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে পুরাতন ঢাকা শহরের নাজিমুদ্দিন সড়কের একটি ভাড়াবাড়ি থেকে তৎকালীন অল ইন্ডিয়া রেডিও এর ঢাকা কেন্দ্র নামে এই ভূখণ্ডে বেতার সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সে সময়ে শুধুমাত্র ঢাকার আশপাশের এলাকার শ্রোতারা অর্থাৎ দেশের শতকরা ৮ ভাগ জনগণ এই বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতে পেত।

বেতার সম্পর্কে পরিচিতি :


বাংলাদেশ বেতার তার পথ পরিক্রমায় ৭৫ বছরে পদার্পণ করেছে, গড়ে উঠেছে তার নিজস্ব স্থাপনা, বেড়েছে আয়তন ও কার্যক্রম, বেড়েছে সম্প্রচার সময়। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশ বেতার দেশের সংস্কৃতিকে ধারণ ও লালনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতার ৪৯টি ট্রান্সমিটারের সাহায্যে ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং ৮টি বিশেষায়িত ইউনিটের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ২৭৮ ঘণ্টা সম্প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছে। দেশের শতভাগ এলাকা এখন বাংলাদেশ বেতারের ট্রান্সমিটারের আওতাধীন। কাজেই সম্প্রচার পরিধি এবং সম্প্রচার সময় উভয় দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ বেতার দেশের বৃহত্তম ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যম। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারের এফ এম কাভারেজ ৬৪% এবং মিডিয়াম ওয়েভ কাভারেজ ১০০%।

বাংলাদেশে বেসরকারী এফ এম রেডিও :


বিশ্ব এখন ইনফরমেশন সুপার হাইওয়েতে অবস্থান করছে। অবাধ তথ্যপ্রবাহের এই যুগে দেশের সার্বিক কল্যাণ ও সুষম উন্নয়ন করতে হলে সরকারি সম্প্রচার গণমাধ্যমের পাশাপাশি বেসরকারি প্রচারমাধ্যমকেও সহমত প্রচারের সুযোগ দিতে হবে। আর এ জন্যই সরকার বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক এফ এম রেডিও সম্প্রচারের অনুমতি প্রদান করেছে। বর্তমানে দেশে ১১টি বেসরকারি এফ এম রেডিও কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়াও লাইসেন্সপ্রাপ্ত বেসরকারি এফ এম রেডিও স্টেশনের সংখ্যা ২৫টি।

বাংলাদেশে কমিউনিটি রেডিও :


বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালে কমিউনিটি রেডিও স্থাপন, সম্প্রচার ও পরিচালনা নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে, যা ছিলো ১৯৯৮ সাল থেকে নাগরিক সমাজের একটি প্রত্যাশা। নাগরিক সমাজের প্রত্যাশার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০৮ উপলক্ষে প্রকাশিত নির্বাচনী মেনিফেস্টো- "দিন বদলের সনদ" এর ১৯.১ অনুচ্ছেদে কমিউনিটি রেডিওকে অন্তর্ভুক্ত করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে তথ্য মন্ত্রণালয় প্রমবারের মত বাংলাদেশে মোট ১৪টি কমিউনিটি রেডিও পরিচালনায় অনুমোদন প্রদান করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কমিউনিটি রেডিওগুলোর মূল প্রভাব হলো দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজেদের কথা সরাসরিভাবে বলার সুযোগ করে দিতে পারে। অর্থাৎ হাতের কাছে একটি গণমাধ্যম থাকায় সম্প্রদায়ের মানুষের কথা বলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তৈরি হয়েছে কণ্ঠহীনদের কথা বলার ও শোনার সুযোগ। এই নয়া গণমাধ্যম সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে পল্লী অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে তথ্য এবং যোগাযোগের অধিকার এনে দিয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গণমানুষের কথা বলার এবং তথ্য ও জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করার ফলে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সুশাসন নিশ্চিতকরণে জনপ্রতিনিধি, সরকারি এবং বেসরকারি কর্মকর্তাদের সাথে জনসাধারণের সংলাপ আদান-প্রদানের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। জনগণের জীবনমান উন্নয়নে দেশে বর্তমানে ১৪টি কমিউনিটি রেডিও প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া আরও ১৬টি কমিউনিটি রেডিও বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

বিশ্ব বেতার দিবসের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব :


এ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বেতার মাধ্যমের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, মানুষকে বেতারমাধ্যমে তথ্য প্রবেশাধিকার দেওয়া এবং দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমের মধ্যে আন্তঃসংযোগ জোরদার করা। এ ছাড়া বেতারমাধ্যমকে সর্বাধিক ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নানা রকম অনুষ্ঠান আয়োজন, বেতার অনুষ্ঠান বিনিময়, অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় অংশগ্রহণের কর্মসূচি নেওয়া। বেতারের রয়েছে পৃথিবীর দুর্গমতম স্থানে পৌঁছানোর শক্তি। বিশ্বের শতকরা ৯৫ ভাগ এলাকা বেতার সম্প্রচারের আওতাধীন। এ গণমাধ্যম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এবং বিদ্যুতের সংকট একে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। নিরক্ষর, প্রতিবন্ধী, নারী, যুবা কিংবা গরিব মানুষের জন্য বেতারের দ্বার অবারিত। এর মাধ্যমে নাগরিকের মধ্যে সংলাপ, বির্তক এবং শিক্ষার বিস্তার ঘটানো সম্ভব। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ সম্পাদন করা এবং দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় বেতারের ভূমিকা অনন্য। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নতুন প্রযুক্তি বেতারকে আরো সম্ভাবনাময় করে তুলেছে। তবে এতকিছুর পরও বিশ্বের এক বিলিয়নের ওপর মানুষ বেতার সম্প্রচারের আওতায় আসতে পারেনি। এ সীমাবদ্ধতা অতিক্রমের চ্যালেঞ্জটি বিশ্ব বেতার দিবস উদযাপনের সামনে রয়েছে।

0 comments:

Post a Comment