ফ্রান্সের জাতীয় উৎসব যা বাস্তিল উৎসব হিসাবে পরিচিত। ফরাসীদের কাছে ‘ফেত্ নাসিওনাল্’ উৎসব নামেই বেশি পরিচিত। প্রতি বছর ১৪ই জুলাই এটি উদযাপন করা হয়।
স্থানীয়ভাবে এটি ল্য ক্যাতৌযে জুইয়ে (le quatorze juillet) অর্থাৎ ১৪ই জুলাই নামে পরিচিত। ১৭৮৯ সালের ১৪ই জুলাই ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদে বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটে।
কুখ্যাত বাস্তিল দুর্গের পতনের মাধ্যমেই ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়। এই বিপ্লব ছিল তদানীন্তন ফ্রান্সের শত শত বছর ধরে নির্যাতিত ও বঞ্চিত ‘থার্ড স্টেট’ বা সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এই বিপ্লবের আগে সমগ্র ফ্রান্সের ৯৫ শতাংশ সম্পত্তির মালিক ছিল মাত্র ৫ ভাগ মানুষ। অথচ সেই ৫ ভাগ মানুষই কোনো আয়কর দিত না। যারা আয়কর দিত তারা তেমন কোনো সুযোগ ভোগ করতে পারত না। এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করত তাদের বাস্তিল দুর্গে বন্দি করে নির্যাতন করা হতো।
বাস্তিল দুর্গ ছিল স্বৈরাচারী সরকারের নির্যাতন ও জুলুমের প্রতীক। বন্দিদের রাখা হতো এই দুর্গে। একবার তার মধ্যে প্রবেশ করলে জীবত্কালে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা থাকত না। কারাগারের ভেতরেই মেরে ফেলা হতো বহু বন্দিকে। অত্যাচারে জর্জরিত ফরাসি জনসাধারণ ওই তারিখে বাস্তিলের দুর্গ ভেঙে বন্দিদের মুক্ত করে। তাদের স্লোগান ছিল-স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্ব। ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই দেশবাসীর সুখ-দুঃখ দূরের কথা, নিজেদের প্রত্যাসন্ন বিপদেরও কোনো খোঁজখবর রাখতেন না। চাটুকারদের প্ররোচনায় রাজা অমানুষিক নির্যাতন চালাতেন প্রজাদের ওপর। ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই নির্বাচিত প্রতিনিধি, রক্ষী বাহিনীর সদস্য এবং বাস্তিল দুর্গের আশপাশের মানুষ বাস্তিল অভিমুখে রওনা হয়।
প্রতিনিধিরা রক্তক্ষয় এড়াতে বাস্তিল দুর্গের প্রধান দ্য লোনের কাছে আলোচনার প্রস্তাব দেন। লক্ষ্য ছিল বাস্তিলে অবস্থিত ৭ জন রাজবন্দিকে মুক্ত করা। কিন্তু দ্য লোন প্রস্তাবগুলো ফিরিয়ে দেয়। জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়ে, জনতার ঢেউ আছড়ে পড়ে বাস্তিল দুর্গে, বাস্তিলের রক্ষীরাও কামান দাগাতে শুরু করে। প্রায় দুইশ’ বিপ্লবী মানুষ হতাহত হয়। এরপর চারদিক থেকে উত্তেজিত ক্ষুব্ধ জনতা বাস্তিল ধ্বংস করে। পতন হয় স্বৈরাচারী শাসকের, ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয় শোষিত, নির্যাতিত মানুষের জয়ের নতুন এক উপাখ্যান-যার নাম ফরাসি বিপ্লব। এর পর থেকেই ফরাসীরা এই দিনটিকে জাতীয় উৎসব হিসাবে পালন করে আসছে। এটি হয়ে ওঠে ফরাসিদের মুক্তির মাইলফলক।১৭৯০ সালে প্রথম বাস্তিল দিবস উদযাপন করা হয়। সেই থেকে প্রতিবছর দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।
ঢাকাটাইমস২৪
0 comments:
Post a Comment