Tuesday, November 28, 2023

ডায়নার সেই গোলাপি ব্লাউজ নিলামে

0 comments

 প্রায় ২৫ বছর আগে প্যারিসের রাস্তায় ক্যামেরাতাড়িত হয়ে অকাল মৃত্যু মেনে নিতে হয়েছিলো জনগণের রাজকুমারী হিসাবে খ্যাত প্রিন্সেস ডায়নাকে। তিনি শুধু সাধারণ মানুষের কাছে প্রিয়ই ছিলেন, সেই সঙ্গে গোটা দুনিয়াতে নিজেকে পরিণত করেছিলেন ফ্যাশন আইকন হিসাবে।



তার হেয়ারস্টাইল থেকে শুরু করে পোশাক সব কিছুই অনুকরণ হতো হু হু করে। সেই জন্য প্রিন্সেস ডায়না যেখানেই যেতেন, থাকতেন লাইম লাইটে। এবার নিলামে উঠছে প্রিন্সেস অব ওয়েলস খ্যাত লেডি ডায়ানার গোলাপি ব্লাউজ। তাঁর ব্যবহৃত ওই ব্লাউজটি বিখ্যাত ব্যক্তিদের পোশাক নিলামের তালিকায় রাখা হয়েছে।

১৯৮১ সালে ডায়ানা তাঁর বিয়ের এক অনুষ্ঠানে ব্লাউজটি পরেছিলেন। তখন ওই ব্লাউজ পরা অবস্থায় ডায়ানার ছবি তুলেন রাজপরিবারের ফটোগ্রাফার লর্ড স্নোডন। গোলাপি ক্রেপ কাপড়ের ব্লাউজটি সামনের দিকে রফের মতো কলার এবং আলগা প্লিট বিশিষ্ট। ব্লাউজটির ডিজাইনার হলেন ডেভিড এবং এলিজাবেথ ইমানুয়েল।

ডায়ানার বিয়ের পোশাকও ডিজাইন করেছিলেন তারা। ব্লাউজটি ২০১৯ সালে ‘ডায়ানা: হার ফ্যাশন স্টোরি’ প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে লন্ডনের কেনসিংটন প্যালেসে রাখা হয়। ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারি বলছে, ডায়ানার ছবি দিয়ে ‘ভোগ’ সাময়িকীতে একটি প্রচ্ছদ করা হয়েছিলো, সেখানেও একই ব্লাউজ পরা ডায়নাকে ছিলেন।

হলিউড কিংবদন্তি হিসেবে পরিচিত জুলিয়ান এবং টার্নার ক্লাসিক মুভিজ (টিসিএম) আয়োজিত চারদিনের এই নিলামে ডায়ানার ব্যবহৃত সন্ধ্যাকালীন একটি পোশাকও বিক্রি হবে। রাজকীয় ওই পোশাকটির ফ্যাশন ডিজাইনার ছিলেন মরক্কোর বংশদ্ভূত জ্যাকস আজাগুরি।

এটি ১৯৮৫ সালের এপ্রিলে ইতালির ফ্লোরেন্সে ভ্রমণের সময় ডায়ানা পরেছিলেন। এটি হল একটি ব্যালেরিনা স্কার্ট। যার নিলাম মূল্য হতে পারে ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ ডলার। ১৪ থেকে ১৭ ডিসেম্বর বেভারলি হিলসে এই নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজকদের ধারণা, তাদের ভিত্তিমূল্য থেকেই বেশি দামেই বিক্রি হবে পোশাকটি।


উৎসঃ একাত্তর টিভি

Monday, November 27, 2023

প্রিন্সেস ডায়নার পিক্সি হেয়ার কাটের পেছনের গল্প

0 comments

 প্রিন্সেস ডায়না গত হয়েছেন প্রায় দুই যুগ। কিন্তু এখনও সবার মনের অগোচরে রয়ে গেছেন তিনি। ডায়না আরও একটি কারণে এখনও বিখ্যাত তা হলো তার আইকনিক লুক। তার চুলের বিখ্যাত পিক্সি হেয়ার কাট এই যুগেও সমানতালে জনপ্রিয়।  প্রশ্ন থেকেই যায়, কী কারণে এবং কীভাবে এসেছে ডায়নার এই হেয়ার কাট।

ব্রিটিশ ভোগ-এর ইউটিউব সিরিজ ভোগ ভিশনারিসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রিন্সেস ডায়ানার হেয়ার স্টাইলিশ স্যাম ম্যাকনাইট জানান, ডায়ানার এই তুমুল জনপ্রিয় হেয়ার-কাটের জন্ম একটি তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত থেকে।

স্যাম ম্যাকনাইট জানান, ৯০ এর দশকে ব্রিটিশ ভোগের একটি ফটোশ্যুটে স্যাম ডায়ানাকে একটি বব কাট দিইয়েছিলেন। এরপর তাকে টায়রা পরানো হলো। এটি একটি পরীক্ষামূলক কাজ ছিলো। দেখতে চাওয়া হয়েছিলো ডায়নাকে এই লুকে মানায় কিনা। কারণ আশির দশকে লুকটি জনপ্রিয় ছিলো।


ফটোশুট শেষ হওয়ার পর, প্রিন্সেস ডায়ানা স্যামকে একটি কৌতূহলী প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি যদি সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পান তবে আপনি আমার চুল দিয়ে কী করবেন?" সাহসের সাথে, স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়াতে স্যাম উত্তর দিয়েছিলেন, আমি আপনার চুল আরও ছোট করে ফেলতে চাই। স্যাম ৯০ এর দশকে মডেল এবং সেলিব্রিটিদের মধ্যে জনপ্রিয় অ্যান্ড্রোজিনাস, তীক্ষ্ণতা, শৈলী থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন।

ডায়ানা সাথেসাথে স্যামের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। এরপর স্যাম নৈপুণ্যের সাথে কাচির সাহায্যে ডায়ানাকে তার ঐতিহাসিক হেয়ারকাটটি দিয়েছিলেন।

পিক্সি কাটটি প্রিন্সেস ডায়ানার জন্য চুলের স্টাইল পরিবর্তনের চেয়ে অনেক বেশি কিছু ছিল। এটি স্বাধীনতা এবং আত্ম-নিশ্চিততার একটি বিবৃতিতে পরিণত হয়েছে। রাজকীয় বন্দী জীবনে, এটি তার ব্যক্তিত্ব জাহির করার ক্ষমতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পিক্সি কাট ডায়ানার আধুনিক এবং প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে। তার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনকে চিহ্নিত করে, কারণ তিনি সে সময় অনেক মানবিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।

এই সাহসী এবং মুক্ত সিদ্ধান্তটি ফ্যাশন এবং সৌন্দর্যের জগতেও গভীর প্রভাব ফেলেছিল। বিশ্বের সমস্ত কোণ থেকে মহিলারা তার মার্জিত এবং পরিশীলিত চেহারা অনুকরণ করার চেষ্টা করেছিল। পিক্সি কাট সাহস এবং ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে এসেছে। এটা শুধু একটি চুলের স্টাইল ছিল না, এটি একটি শক্তিশালী প্রতীক ছিল।


উৎসঃ একাত্তর টিভি

Wednesday, November 8, 2023

পুরুষের অন্তর্বাস তত্ত্ব

0 comments

 ২০০৮ সালের মন্দার সময় লিপস্টিকের চাহিদা যেমন বেড়েছিল, তেমনি এর উল্টো এক বিষয়ও দেখা গিয়েছিল। এক বছর আগে এ নিয়ে প্রথম আলোতেই লেখা হয়েছিল যে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক–ব্যবস্থা ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) তৎকালীন চেয়ারম্যান অ্যালান গ্রিনস্প্যান দেখেছিলেন, মন্দার সময় মানুষ অন্তর্বাস কেনা কমিয়ে দেয়। তখন কাপড় কেনা দায় হয়ে যায়, নতুন অন্তর্বাস কেনা মানুষের জন্য বাড়তি ঝামেলায় পরিণত হয়। অ্যালান গ্রিনস্প্যান বলেছিলেন, আমেরিকার পুরুষদের মধ্যে নতুন নতুন অন্তর্বাস কেনার ঝোঁক রয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু ব্র্যান্ডের অন্তর্বাসের প্রতি রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, বিগত কয়েক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষদের মধ্যে অন্তর্বাস কেনার পরিমাণ অনেক কমে গেছে আর তা দেখেই মন্দার আশঙ্কা করছেন দেশটির অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। মন্দাকালীন অবস্থা বোঝার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষের অন্তর্বাস সূচক ব্যবহার করা হয়। ২০০৭ ও ২০০৯ সালে মন্দার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষের অন্তর্বাস বিক্রি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে গিয়েছিল।



লিপস্টিক তত্ত্ব

0 comments

 যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জুলিয়েট শোর ১৯৯৮ সালে ‘দ্য ওভারস্পেন্ট আমেরিকান’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। সেখানে তিনি প্রথম লিপস্টিক তত্ত্ব সামনে নিয়ে আসেন। আর ২০০০ সালে আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দার সময় প্রসাধন সংস্থা এস্টি লডার ‘দ্য লিপস্টিক এফেক্ট’ শব্দটি ব্যবহার করে এ তত্ত্ব জনপ্রিয় করেছিল। আসলে জুলিয়েট শোর দেখিয়েছিলেন, মানুষের আয় যখন কমে যায়, তখন তারা বিলাস পণ্য কেনা বন্ধ বা কমিয়ে দেয়। এর পরিবর্তে মানুষ কম দামি বিলাসী পণ্য কেনার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। মানুষ তখন দামি ফারের কোট বা দামি ব্যাগ কিনতে পারে না; যেতে পারে না দামি দোকানে, এ কারণে শখ পূরণ করতে কম দামি বিলাস পণ্য কেনে। এতেই বাড়ে লিপস্টিকের বিক্রি।



আবার অর্থনৈতিক মন্দার সময় লিপস্টিক বিক্রি বেড়ে যাওয়ার আরও একটি কারণ আছে। মানুষ তখন নিজের আর্থিক কষ্টের কথা ভুলে থাকতে নিজের প্রতি বেশি যত্নশীল হয়, নিজেকে পরিপাটি রাখার চেষ্টা করে। এ সময় লিপস্টিকের চাহিদা বাড়ে; কারণ সাজগোজ করার জন্য তুলনামূলক সস্তা পণ্য হচ্ছে লিপস্টিক। প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে নাইন–ইলেভেন বা টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পরে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তখন লিপস্টিক বিক্রি বেড়েছিল ১১ শতাংশ। প্রসাধন কোম্পানি এস্টি লডারের চেয়ারম্যান লিওনার্দ লডার একই প্রবণতা দেখেছিলেন ২০০৮ সালের মন্দার সময়। ফলে বেশ জোরেশোরেই প্রতিষ্ঠা পায় ‘দ্য লিপস্টিক এফেক্ট’ নামের এ তত্ত্ব। পরবর্তীকালে টেক্সাস ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটির দুই অধ্যাপক সারাহ হিল ও ক্রিস্টোফার রডেনহেফার এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করে এ তত্ত্ব আরও জোরদার করেছিলেন। ১৯২৯ সালের বিশ্বমন্দার সময় একই ঘটনা ঘটেছিল—সেই হিসাবও অর্থনীতিবিদেরা বের করেছেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মূল্যস্ফীতি সৌন্দর্যচর্চায় যথেষ্ট প্রভাব ফেলে।

Sunday, October 22, 2023

শাশুড়ি দিবস

0 comments

আমাদের জীবনে শাশুড়ি গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তিনি অভিভাবক, মায়ের মতো। এমন একজন মানুষকে সম্মান জানাতে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের চতুর্থ রোববার 'শাশুড়ি দিবস' উদযাপন করা হয়। সেই হিসেবে আজ 'শাশুড়ি দিবস'।



বিয়ে মানে দুই পরিবারকে এক করা, যে কাজটি মোটেও সহজ নয়। অথচ এই কঠিন কাজটিই সহজে করেন শাশুড়িরা। আবার প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে শ্বশুর বাধা হয়ে দাঁড়ালেও সাধারণত শাশুড়ি ঠিকই পাশে থাকেন। এমন একজন মানুষকে সম্মান জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।


তাই আজ শাশুড়িকে সম্মান জানাতে পারেন। যাদের বিয়ের কথা চলছে তারাও হবু শাশুড়িকে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন। তাতে বিয়ের কথাটা হয়তো আরও পাকা হবে।


এজন্য আপনার শাশুড়িকে ফোন দিতে পারেন। আন্তরিকভাবে জানতে পারেন, তিনি কেমন আছেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি পছন্দের কোনো খাবার বা পছন্দের কিছু উপহার দিয়ে তাকে চমকে দিতে পারেন।


তিনি অসুস্থ থাকলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারেন।


এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দিবস। শাশুড়ি দিবস কীভাবে চালু হয়েছিল বা কারা চালু করেছিলেন সেই ইতিহাস নিয়ে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, নিশ্চয়ই শাশুড়িকে সম্মান জানাতেই দিবসটির প্রচলন হয়েছে।


Saturday, October 21, 2023

আপেল দিবস

0 comments

 প্রতি বছরের ২১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র আপেল দিবস পালন করে।

ন্যাশনাল টুডে বলছে, গবেষণায় দেখা গেছে—১০ থেতে ২০ বছর আগে প্রাচীন বন্য আপেল গাছের সন্ধান পাওয়া যায় মধ্য এশিয়াতে। তবে, শুরুর দিকে সেই আপেলগুলো স্বাদ কিছুটা টক ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৭তম শতাব্দীর প্রথম দিকে আপেল ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। কিছু ইতিহাসবিদ বিশ্বাস করেন, এই সময়েই রোমান জনগোষ্ঠী আপেলের আকার বড়, মিষ্টি ও বৃহৎ পরিসরে চাষাবাদ শুরু করে। আমরা এখন যে আপেল খাই, এই আপেলের বিকাশ তখনই হয়েছিল। তারপর আপেল যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে।

আপেল দিবস যুক্তরাষ্ট্রে পালন করা হলেও দিবসের শিকড় আসলে ইউরোপে। ১৯৯০ সালের ২১ অক্টোবর যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা কমন গ্রাউন্ড আপেলের বিভিন্ন প্রজাতির গুরুত্ব বোঝাতে দিবসটির প্রচলন করেছিল। বর্তমানে আপেলপ্রেমীরা এখনো বিশ্বজুড়ে উৎপাদিত সাড়ে সাত হাজারের বেশি জাতের আপেলের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে আপেল দিবস পালন করে।



আপেল দিবস উদযাপনের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, একটি সুস্বাদু আপেলের স্বাদ নিন। হতে পারে হলুদ, সবুজ, গোলাপি বা লাল রঙের আপেল।

Tuesday, October 3, 2023

পৃথিবীর হারিয়ে যাওয়া মহাদেশ আবিষ্কারে

0 comments

 ১৬৪২ সনে অভিজ্ঞ ডাচ কাপ্তান -এবেল তাসম্যান এক সমুদ্রযাত্রায় বের হন। এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ গোলার্ধে এক বিশাল মহাদেশ আবিষ্কার; যার অস্তিত্ব আছে বলেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন তিনি। বিবিসি ফিউচার অবলম্বনে।



সেসময় পৃথিবীর এই অংশ সম্পর্কে বেশিকিছু জানতো না ইউরোপীয়রা, যা তাদের কাছে ছিল রহস্যের চাদরে মোড়া। তবে তাদের ধারণা ছিল, নিশ্চয়ই এখানে বিশাল কোনো ভূখণ্ড আছে, আবিষ্কারের আগেই যার নাম তারা দিয়েছিল টেরা-অস্ট্রালিস। ইউরোপে নতুন এ মহাদেশের ধারণা অবশ্য অনেক প্রাচীন; বলতে গেলে সেই রোমান যুগ থেকেই এটি প্রচলিত ছিল।

কিন্তু, প্রথমবারের মতোন তা প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর হন এবেল তাসম্যান। ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় তখন ছিল ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ঘাঁটি। সেখান থেকেই ১৬৪২ সনের ১৪ সেপ্টেম্বর দুটি ছোট জাহাজ নিয়ে পশ্চিমদিকে যাত্রা শুরু করেন এবেল। পশ্চিমে যেতে যেতে জাহাজ দুটি প্রথমে দক্ষিণে মোড় নেয়, তারপর যেতে থাকে পুবদিকে। এভাবে একসময় বর্তমান নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণে এসে পৌঁছায়। এখানে আসার পর স্থানীয় অধিবাসী মাউরিদের সাক্ষাৎ পায় ডাচরা।

কিন্তু, সে অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না। অচিরেই ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের এ সাক্ষাৎ রূপ নেয় সংঘাতে। ডাচরা তীরের জাহাজ ভেড়ায়, এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে এসময় বার্তা আদান-প্রদানে ব্যবহার করতো ছোট নৌকা। দ্বিতীয় দিনেই এমন একটি নৌকায় সজোরে গুঁতো দেয় মাউরিদের ক্যানু (গাছের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি এক ধরনের নাও)। এতে চার ইউরোপীয় মারা যায়।

পরে মাউরিদের ১১টি ক্যানু লক্ষ্য করে তোপ দাগা হয় জাহাজ থেকে, এতে কতজন মাউরি মারা যায়– ইতিহাসে তার কোনো উল্লেখ নেই।  

অভিযানের সমাপ্তি টানা হয় তখনই। রক্তপাতের ঘটনার স্মরণে এবেল তাসম্যান এই উপসাগরের নাম নাম দেন 'মুর্দানার্স বে' (ইংরেজিতে মার্ডারার্স বে), যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়- খুনিদের উপসাগর। এরপর আর নতুন আবিষ্কৃত এ ভূখণ্ডে পদার্পণ করেননি তিনি, সপ্তাহখানেক পরেই ফিরে যান জাকার্তায়। এবেল বিশ্বাস করতেন, দক্ষিণের বিশাল সেই মহাদেশ তিনি আবিষ্কার করেছেন, কিন্তু আর কখনোই এমুখো হননি।  

প্রসঙ্গত; ততোদিনে অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে ইউরোপবাসী জানতো; কিন্তু, এটাই কিংবদন্তির সে মহাদেশ এমনটা বিশ্বাস করতো না। পরে অবশ্য তাই মনে করে তারা, এবং এরই নাম দেয় 'টেরা অস্ট্রালিস'।

সে যাই হোক, তাদের শেষোক্ত ধারণাটি ভুল ছিল। হারানো এক মহাদেশের ব্যাপারে এবেলই সঠিক ছিলেন। কিন্তু, দুর্ভাগ্য এই– সেটা তিনি নিজেও জানতেন না।

স্থানীয় মাউরি আধিবাসীদের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর নিউজিল্যান্ডের উপকূল থেকে চলে যায় এবেল তাসমানের জাহাজ দুটি। ছবি: অ্যালামি/ ভায়া বিবিসি ফিউচার

তারপর কেটে গেছে সুদীর্ঘ পৌনে চার শতক, পৃথিবী দেখেছে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর জয়জয়কার। আকাশ, পাতাল, সমুদ্রগর্ভে মানুষের নিরন্তর অভিযান। তবুও লুপ্ত সেই মহাদেশের কিংবদন্তির সমাধান হয়নি বহুকাল। ২০১৭ সালে সেই রহস্যের পর্দা তোলেন একদল ভূতাত্ত্বিক। তাদের 'জিল্যান্ডিয়া' (মাউরি ভাষায় রিউ- এ- মাউই) নামের নতুন মহাদেশ আবিষ্কারের ঘোষণা বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। প্রায় ৪৯ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিস্তৃত বিশাল এ ভূখণ্ড মাদাগাস্কারের চেয়েও প্রায় ছয়গুণ বড়।

এদিকে দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বকোষ, অভিধান, মানচিত্র থেকে শুরু করে হালআমলের সার্চ ইঞ্জিনগুলোও গোঁ ধরে ছিল, পৃথিবীতে মহাদেশ মাত্র সাতটি-ই আছে। কিন্তু, ভূতাত্ত্বিকদের দলটি নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে দেখান, এই পুরোটা সময়েই তারা মানুষকে ভুল তথ্য দিয়েছে। আসলে পৃথিবীতে আছে আটটি মহাদেশ– গবেষকদের আবিষ্কৃত ভূখণ্ডটি পৃথিবীর নবীনতম, ক্ষুদ্রতম এবং পরিধিতে সবচেয়ে সরু মহাদেশ হিসেবেও নতুন রেকর্ড গড়ে।

পার্থক্য শুধু এটাই যে, এই ভূভাগের ৯৪ শতাংশই জলের তলায় সমাহিত, শুধু নিউজিল্যান্ডের মতো গুটিকয় দ্বীপ সাগরের বুক ফুঁড়ে মাথা উঁচু করে আছে। একেই হয়তো বলে, স্পষ্ট চোখের সামনে থেকেও লুকিয়ে থাকা। অর্থাৎ কিনা দৃষ্টিসীমায় থেকেই নিজ রহস্য বুকে নিয়ে যুগ যুগ ধরে আড়ালে রেখেছিল।   

নিউজিল্যান্ডের ক্রাউন রিসার্চ ইনস্টিটিউট জিএনএস সায়েন্স এর ভূতাত্ত্বিক এন্ডি তুলখ বলেন, 'দৃশ্যমান কোনোকিছুর রহস্য আবিস্কারেও যে অনেক সময় লাগতে পারে, এটা তারই উদাহরণ।'

এন্ডি জিল্যান্ডিয়া আবিষ্কারক দলের একজন সদস্য ছিলেন।  

কিন্তু, অষ্টম মহাদেশের অস্তিত্ব প্রমাণ করেই এ কাহিনি শেষ হয়নি। হবার কথাও নয়, সাগরের ৬,৫৬০ ফুট নিচে থাকায় এ মহাদেশের অধিকাংশ রহস্যই আজো অজানা। সেই অজানাকে জানার চেষ্টাই শুরু হয় এরপর। যেমন কারা সেখানে বাস করতো? কত যুগ আগেই বা এটি জলের তলায় চলে যায়?

কষ্টসাধ্য এক আবিষ্কার

জিল্যান্ডিয়া নিয়ে গবেষণা করা সব সময়েই খুব জটিল ছিল।

এবেল তাসম্যান নিউজিল্যান্ড আবিষ্কারের এক শতাব্দীরও বেশি সময় পরে ১৬৪২ সনে ব্রিটিশ অভিযাত্রী ও মানচিত্র প্রস্তুতকারক জেমস কুক'কে দক্ষিণ গোলার্ধে এক বৈজ্ঞানিক অভিযানে পাঠানো হয়। তার ওপর নির্দেশ ছিল, সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে দিয়ে শুক্র গ্রহের অতিক্রম করাকে পর্যবেক্ষণ করার। সূর্য পৃথিবী থেকে কতটা দূরে, তা হিসাব করে বের করতে এর দরকার ছিল।

স্যাটেলাইট চিত্রে অস্ট্রেলিয়ার পাশে হালকা নীল রঙে সমুদ্র নিমজ্জিত জিল্যান্ডিয়ার আয়তনকে দেখানো হয়েছে। ছবি: জিএনএস সায়েন্স/ ভায়া বিবিসি

কিন্তু, তাকে মুখবন্ধ একটি খামও দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক দায়িত্বটি সম্পন্ন হলেই, কেবল সেটি খুলে দেখার নির্দেশ ছিল তার ওপর। এই নির্দেশনামায় কুককে দক্ষিণের এক বিশাল মহাদেশ আবিষ্কারের অতি-গোপনীয় মিশন দেওয়া হয়। কুক তাই-ই করেছিলেন, আর সোজা পৌঁছেছিলেন নিউজিল্যান্ডে। কিন্তু, তিনি জানতেন না, যে মহাদেশের সন্ধান করছেন, স্রেফ তার ওপর দিয়েই তার জাহাজ নিউজিল্যান্ডে পৌঁছেছিল।

জিল্যান্ডিয়ার অস্তিত্ব নির্দেশ করে প্রথম এমনকিছু প্রমাণ জড়ো করেছিলেন স্কটিশ প্রকৃতিবিদ স্যার জেমস হেক্টর। ১৮৯৫ সালে তিনি নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে থাকা বেশকিছু দ্বীপ জরিপের অভিযানে যোগ দেন । এসব দ্বীপের ভূতাত্ত্বিক গঠন অধ্যয়নের পর তিনি এ উপসংহারে পৌঁছান যে, 'বর্তমানে সাগরে ডুবে থাকা দক্ষিণ থেকে পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত এক মহাদেশীয় অঞ্চলের পাহাড়শ্রেণির চূড়া হলো নিউজিজিল্যান্ড ও আশেপাশের দ্বীপগুলো।'

অনেক আগেই এমন ধারণা পাওয়া সত্ত্বেও, জিল্যান্ডিয়ার অস্তিত্ব সম্পর্কে তথ্যউপাত্ত অপ্রতুল রয়ে যায় দীর্ঘকাল।  এমনকী ১৯৬০ এর দশকের আগপর্যন্ত গবেষণার চেষ্টা গুরুত্বও পায়নি।  

জিল্যান্ডিয়া আবিষ্কারক টিমের নেতৃত্ব দেওয়া ভূতাত্ত্বিক নিক মর্টিমার বলেন, 'এক্ষেত্রে গবেষণা হয়েছে খুবই ধীরে ধীরে।'

১৯৬০ এর দশকে মহাদেশের সংজ্ঞা নির্ধারণের বিষয়ে একমত হন ভূতাত্ত্বিকরা। সার্বিকভাবে এই সংজ্ঞায় বলা হয়, মহাদেশ হল পৃথিবীর একটি কাঠামো, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠে আসে। মহাদেশীয় ভূত্বক (ক্রাস্ট) নানান ধরনের শিলা দ্বারা গঠিত, যা বেশ পুরু থাকে। মহাদেশ হতে হলে সেই ভূখণ্ডকে যথেষ্ট বড়ও হতে হবে।

মর্টিমার বলেন, 'ছোট এক টুকরো ভূখণ্ডকে মহাদেশ বলা যাবে না।' এই সংজ্ঞার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা কাজের একটি দিকনির্দেশনা পান। তারা বুঝতে পারলেন, এই সূত্র মেনে যথেষ্ট প্রমাণ জোগাড় করতে পারলেই অষ্টম মহাদেশ যে আসলেই আছে তা প্রমাণ করা যাবে।

অবশ্য তারপর ফের এই মিশন গতি হারায়, কারণ একটি মহাদেশ আবিষ্কার সত্যিই বেশ কঠিন, এবং ব্যয়বহুল। তাছাড়া, তেমন তাগিদও ছিল না বলে উল্লেখ করেন মর্টিমার। এরপর ১৯৯৫ সালে আমেরিকান ভূপদার্থবিদ ব্রুস লুয়েনডিক এই অঞ্চলকে আবারো একটি মহাদেশ হিসেবে বর্ণনা করেন, এবং এর নাম জিল্যান্ডিয়া দেওয়ার সুপারিশ করেন। সেদিন থেকে আবিষ্কারের চেষ্টা নবউদ্যম ফিরে পায় বলে জানান ভূতাত্ত্বিক এন্ডি তুলখ।

প্রায় একইসময়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত আইন, 'ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সী' কার্যকর হয়। এই আইনের ফলেই নিউজিল্যান্ড সরকার এবার নড়েচড়ে বসে। জিল্যান্ডিয়া আবিষ্কারের ব্যাপক তাগিদ অনুভব করেন ওয়েলিংটনের কর্তারা। গবেষণায় টাকা ঢালতে, দরকারি বৈজ্ঞানিক উপকরণ দিতেও এবার যেন তাদের উৎসাহ দেখা যায়।

কারণ আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত আইনে বলা হয়েছে, একটি দেশ তার মহাদেশীয় মহীসোপন পর্যন্ত সমুদ্রসীমা ও এরমধ্যে থাকা সব ধরনের সম্পদ নিজের বলে দাবি করতে – তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ছাড়িয়ে, উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল (৩৭০ কি.মি.) পর্যন্ত সমুদ্রসীমা বিস্তৃত করতে পারবে।

নিউজিল্যান্ড যদি প্রমাণ করতে পারে, দেশটির আরও বৃহৎ এক মহাদেশের অংশ– তাহলে সমুদ্রসীমা ছয়গুণ বাড়াতে পারবে। এতে বহুগুণে বাড়বে দেশটির রাজস্ব আয়ের উপায়। এই সম্ভাবনা উপলদ্ধি করে, সমুদ্রজরিপে হঠাৎ করেই হু হু করে আসতে থাকে তহবিল। সেই সুযোগ নিয়ে বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে জিল্যান্ডিয়ার অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রমাণ জড়ো করতে থাকেন। সমুদ্রতল থেকে সংগ্রহ করা প্রতিটি পাথরের নমুনা জিল্যান্ডিয়ার স্বপক্ষেই সাক্ষ্য দিয়েছে।  

কিন্তু, আরও অকাট্য প্রমাণের দরকার ছিল। যা দিয়েছে স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য। স্যাটেলাইটের দেওয়া তথ্যের সাহায্যে সমুদ্রতলের ভূত্বকের বিভিন্ন অংশের মধ্যাকর্ষণ শক্তির তারতম্য শনাক্ত করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রযুক্তির সাহায্যে সমুদ্রের ভূত্বক থেকে জিল্যান্ডিয়ার অপেক্ষাকৃত পুরু ভূত্বককে আলাদাভাবে চেনা  গেছে। এভাবে তৈরি সমুদ্রতলের মানচিত্রে উঁচুনিচু ভূপ্রকৃতির প্রায় অস্ট্রেলিয়ার সমান জিল্যান্ডিয়াকে স্পষ্টভাবেই দেখাতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।     

মর্টিমার বলেন, 'আমরা যখন এই মহাদেশের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে জানাই, তখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলমগ্ন ভূখন্ড সম্পর্কেও মানুষ জানতে পারে। বিষয়টি দারুণ মজার। ভেবে দেখুন, দুনিয়ার সব মহাদেশেই অনেক অনেক দেশ আছে, কিন্তু জিল্যান্ডিয়ায় মাত্র তিনটি রাষ্ট্রের উপস্থিতি আছে।'  

এরমধ্যে নিউজিল্যান্ড স্বাধীন রাষ্ট্র। অন্যদিকে ফরাসী উপনিবেশ হিসেবে রয়েছে নিউ কালেদোনিয়া দ্বীপ এবং অস্ট্রেলিয়ার দুটি দ্বীপ– লর্ড হোয়ে আইল্যান্ড এবং বলস পিরামিড।

নিউজিল্যান্ডই হলো জিল্যান্ডিয়ার সর্বোচ্চ ভূখণ্ড। ছবি: অ্যালামি/ ভায়া বিবিসি


রহস্যময় বিস্তার

জিল্যান্ডিয়া ছিল প্রাচীন অতিকায় মহাদেশ গন্ডোয়ানার অংশ। আজ থেকে প্রায় ৫৫ কোটি বছর আগে দক্ষিণ গোলার্ধের সকল ভূমি একত্র হয়ে গড়ে ওঠে গন্ডোয়ানা। পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা ও পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার মতো কিছু ভূখণ্ডের সাথে জিল্যান্ডিয়া ছিল গন্ডোয়ানার পুবদিকের অংশে।

তুলখ জানান, 'আজ থেকে প্রায় ১০ কোটি বছর আগে অজ্ঞাত জিল্যান্ডিয়া গন্ডোয়ানা থেকে পৃথক হতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে আমরা আজো পুরোপুরি জানতে পারিনি।'   

মহাদেশীয় ভূত্বক সাধারণত ৪০ কিলোমিটার গভীর হয়– যা সামুদ্রিক ভূত্বকের চেয়ে অনেক পুরু। সামুদ্রিক ভূত্বক সাধারণত ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীর হয়। কিন্তু, গন্ডোয়ানা থেকে পৃথক হওয়ার সময় জিল্যান্ডিয়া এতটাই দূরে সরে গিয়েছিল যে, এর ভূত্বকের পুরুত্ব ক্ষয় হতে হতে মাত্র ২০ কিলোমিটারে নেমে আসে। ফলে অতিসরু এই মহাদেশ পানির তলায় ডুবে যায়।   

সরু ভূত্বক নিয়ে জলমগ্ন থাকলেও– এই মহাদেশে পাওয়া নানান রকম শিলা পরীক্ষা করেই বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন এটি সমুদ্রের অংশ নয়, বরং মহাদেশ। কারণ গ্রানাইট, স্কিস্ট ও চুনাপাথর দিয়ে গঠিত হয় মহাদেশীর ভূত্বকের শিলাস্তর। অন্যদিকে, সামুদ্রিক ভূত্বকে ব্যাসল্ট শিলাই থাকে বেশি।

তারপরও এখনও অজানা রয়েছে অনেক কিছু। যেমন বিশ্বের অষ্টম এ মহাদেশের উৎপত্তি ভূতাত্ত্বিকদের যেমন বিস্মিত করে, তেমনি এর টিকে থাকাও কম অভিভূত করে না তাদের। এত সরু ভূত্বক থাকার পরেও কেন এটি খণ্ড খণ্ড হয়ে আরও ছোট ছোট মহাদেশ তৈরি করেনি– সেটা ভেবেও অবাক হন তারা।

আরেকটি বড় রহস্য ঠিক কখন জিল্যান্ডিয়া সমুদ্রে ডুবে গেল– সে সময় জানার ক্ষেত্রে। তাছাড়া, আদৌ এটি পুরোপুরি শুকনো ডাঙ্গার ভূখণ্ড ছিল কিনা তা নিয়েও আছে মতভেদ। বর্তমানে প্রশান্ত ও অস্ট্রেলীয় টেকটনিক প্লেটের সিমানায় গড়ে ওঠা পর্বতশ্রেণির খাঁজ বা চূড়া বিভিন্ন দ্বীপ হিসেবে গড়ে উঠেছে। তুলখ জানান, ভূতাত্ত্বিকদের একদল মনে করেন, জিল্যান্ডিয়ায় এমন কিছু দ্বীপ ছিল, আর বাকিটা ছিল নিচু, জলমগ্ন অংশ। আরেকদল মনে করেন, একসময় পুরোটাই ছিল শুকনো ডাঙ্গা।    

এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে কারা ছিল জিল্যান্ডিয়ার বাসিন্দা। এটি যার অংশ ছিল, সেই গন্ডোয়ানা ছিল প্রায় ১০ কোটি বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত, সেখানে ছিল বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণির সমাগম। প্রথম স্থলচর চারপেয়ে প্রাণীর আবির্ভাব হয়েছিল গন্ডোয়ানায়। আরও পরবর্তীকালে টাইটানোসরসের মতো সর্ববৃহৎ স্থলচর জীবও বিচরণ করেছে। ভূতাত্ত্বিকরা আশাবাদী, হয়তো জিল্যান্ডিয়ার ডুবে থাকা শিলাস্তরে প্রাগৈতিহাসিক জীবাশ্ম পাওয়াও যেতে পারে।

সূত্র: দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড