Thursday, February 13, 2014

বাংলায় সুফিবাদের আগমন

0 comments
বাংলায় সুফিবাদের আবির্ভাবকাল সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এদেশে সুফিবাদের সর্বাধিক প্রচার ও প্রসার হয়েছে বলে জানা যায়।আরব, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, মধ্য এশিয়া ও উত্তর ভারত থেকে সুফিরা এসে বঙ্গদেশে সুফিবাদ প্রচার করেন। তাদের মৃত্যুর পর কিছু অতিভক্তগন কর্তৃক প্রচলিত হয়ে যায় যে তারা বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, লিখা হয় বিভিন্ন গাঁজাখুরি কিচ্ছা কাহিনি যা ইসলামের সাথে সরাসরি বিরোধ করে ও তারা নাকি আমাদের প্রিয় রাসুল (সাঃ) এবং সাহাবাদের (রাঃ) থেকেও বেশি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, এই সব কথা লিখা হয়েছে তাদের বই গুলোতে এবং তাতে স্পষ্ট শিরক ও কুফর লক্ষ্য করা যায়। সুফিদের চালচলন, মানবপ্রেমের ইত্যাদির কারণে এদেশের সাধারণ কিছু মানুষ সুফিবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠে । এভাবে ক্রমশ বঙ্গদেশে সুফিবাদ প্রসার লাভ করে। ১২০৪-৫ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজী কর্তৃক বাংলাদেশ বিজিত হলে ইসলামের শরীআত ও মারিফত উভয় ধারার প্রচার ও প্রসার তীব্রতর হয়। শাসকশ্রেণীর সঙ্গে বহু পীর-দরবেশ এদেশে আগমন করে নিজস্ব তরীকায় ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। এরা নিজ রচিত সুফিবাদের আধ্যাত্মিক
তত্ত্ব চমৎকারভাবে তুলে ধরে সাধারণ কিছু মূর্খ মানুষকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেন, ফলে বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে এই মতবাদ প্রসার লাভ করে। সুফিগণ নিজেদের রচিত বিভিন্ন তরীকা এবং মানুষের মাঝে প্রেম-ভ্রাতৃত্ব-সাম্যের মধুর বাণী প্রচার করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের কিছু সাধারণ মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হন।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ লোকমুখে কিংবদন্তি-পুরুষে পরিণত হয়েছেন। এদের অনেকের মাযার তৈরি হয়েছে, যেগুলোকে পবিত্র ও পুণ্য স্থান বিবেচনা করা হয় । এমন কি কেউ কেউ নিয়মিত যিয়ারত করে ও পার্থিব কামনা-বাসনায় মানত
করে, মাজারে টাকা পয়সা, ফুল, মোমবাতি, আগরবাতি ইত্যাদি দেয়াকে ছওয়াব মনে করে ! এই সুফিবাদ দ্বারা পরবর্তীতে বৈষ্ণবধর্ম, লৌকিক মরমিবাদ, বাউল ধর্মমত ও অন্যান্য ভক্তিবাদও কমবেশি প্রভাবিত হয়।

0 comments:

Post a Comment