এপ্রিল থেকে সাধারণত চা বাগানগুলোতে শুরু হয়ে যায় কুঁড়ি সংগ্রহের মৌসুম। দেশের সবচেয়ে বেশি চা বাগানের এলাকা শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকরা এখন তাই ব্যস্ত দুটি কুঁড়ি একটি পাতা সংগ্রহে। এমনিতেই চা বাগানের সৌন্দর্য নজর কাড়া, এসময়ে সে সৌন্দর্যে যোগ হয় বাড়তি উপাদান। এই সময়ে তাই ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল থেকে।
ভাস্কর্য ‘চা কন্যা’
ঢাকা থেকে সড়কপথে শ্রীমঙ্গলের প্রবেশপথে দৃষ্টি নন্দন ভাস্কর্য ‘চা কন্যা’। সিমেন্টে তৈরি সফেদ এ ভাষ্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চা শ্রমিক এক তরুণীর কুঁড়ি সংগ্রহের দৃশ্য। সাতগাঁও চা বাগানের সহায়তায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন তৈরি করেছে সুন্দর এ ভাস্কর্যটি। এর সামনেই বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে সাতগাঁও চা বাগান। ঢু মারতে পারেন সেখানেও।
চা বাগান
‘চা কন্যা’ দেখে কিছু দূর চলতে চলতেই শ্রীমঙ্গল শহর। শহরকে পিছু ফেলে ভানুগাছা সড়ক ধরে সামনে চলতে চলতে দু’পাশে দেখা মিলবে ফিনলে’র চা বাগান। চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) ভেতর থেকে দক্ষিণমুখী সড়কটি ধরে গেলে ফিনলে’র চা বাগান ছাড়াও আছে বিটিআরআই’র নিজস্ব বাগান। এ ছাড়া ভানুগাছা সড়কের টি রিসোর্ট ফেলে সামনে দু’একটি বাঁক ঘুরে হাতের ডানের সড়ক ধরে কয়েক কিলোমিটার গেলে রয়েছে জেরিন টি এস্টেট। লাউয়াছড়ার আগে হাতের ডানে জঙ্গল ঘেরা সড়কটি চলে গেছে নূরজাহান টি এস্টেটে। এ পথে দেখা মিলবে আরো বেশ কিছু বাগানের।
মাধবপুর লেক
কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাহাড় ঘেরা চা বাগানের মধ্যে বিশাল এক জলাধার ‘মাধবপুর লেক’। তবে এ পথে যাবার সহজ পথ হলো নূরজাহান টি এস্টেটের পথ ধরে। তাহলে পুরো পথটিই চলা যাবে চা বাগানের ভেতর দিয়ে। চা বাগানের ভেতরে চলতে চলতে পাওয়া যাবে মাধবপুর লেক। এ জন্য অবশ্য শ্রীমঙ্গলের কোনো গাড়ি চালকের সহায়তা নিলে ভালো।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ
মাধবপুর লেক থেকে বেরিয়ে মূল সড়কটি হাতের বাঁয়ে চলে গেছে ধলাই সীমান্তের দিকে। এখানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সীমান্ত ফাঁড়ির পাশেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ। এ পথের দু’ধারেই সমতল চা বাগান। এখান থেকেও চা বাগান দেখতে দেখতে ফিরতে পারেন ভিন্ন একটি পথে। ধলাই সীমান্ত থেকে ফিরতি পথে হাতের বাঁয়ে বেশ পুরনো চা বাগানের বাংলোটির পাশ থেকে সড়কটি ধরে চললে চা বাগানের পথে পথে আসা যায় শ্রীমঙ্গল শহরে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট
দেশের একমাত্র চা গবেষণা ইনস্টিটিউটটি (বিটিআরআই) শ্রীমঙ্গল শহরের পাশেই। বিশাল চা বাগানের মাঝে বিটিআরআই-এর ক্যাম্পাসটি সবারই ভালো লাগবে। এখানে আছে চা পরীক্ষার ল্যাবরেটরি, বিটিআরআই উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রজাতির চা গাছ, ভেষজ উদ্ভিদের বাগান, পুরনো চা গাছ। তবে এসব দেখতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
চা বাগান আমাদের দেশের অমূল্য সম্পদ। তাই ভ্রমণের সময় অবশ্যই বাগানের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা কর্তব্য। কোনো রকম বর্জ্য বাগানে না ফেলে সঙ্গে নিয়ে আসুন। যেকোনো বাগানে প্রবেশের আগে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিন। শ্রীমঙ্গলের সব জায়গায় ভ্রমণের জন্য স্থানীয় কোনো চালকের সহায়তা নিন। আর চা বাগানের ভেতরের সড়কে চলার জন্য ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়ি হলে ভালো। সে ক্ষেত্রে শ্রীমঙ্গল থেকে জিপ ভাড়া করে নিতে পারেন। সারা দিনের জন্য সেখানে একটি জিপের ভাড়া ২৫০০-৩৫০০ টাকা।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে রেল ও সড়ক পথে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ (০১৭১১৯২২৪১৭), শ্যামলী পরিবহন (০১৭১১৯৯৬৯৬৫), সিলেট এক্সপ্রেস (০১৭১৩৮০৭০৬৯), টি আর ট্রাভেলস (০১৭১২৫১৬৩৭৮) ইত্যাদি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ভাড়া নন-এসি বাসে ২৫০ টাকা। টি আর ট্রাভেলসের এসি বাসে ভাড়া ৩৫০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনেও যাওয়া যায় শ্রীমঙ্গল। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬.৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, দুপুর ২.০০ মিনিটে প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০.০০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি বার্থ ৫২৬ টাকা, এসি সিট ৩৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৩২৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২০০ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৩৪৫ টাকা, শোভন চেয়ার ১৩৫ টাকা, শোভন ১১০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮.১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯.০০ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া প্রথম শ্রেণী বার্থ ৩৭০ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৫০ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৪২০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৬৫ টাকা, শোভন ১৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো মানের জায়গা ভানুগাছ রোডে টি রিসোর্ট (০৮৬২৬-৭১২০৭, ০১৭১২৯১৬০০১)। এ ছাড়া আরো একটি ভালো মানের থাকার জায়গা হলো রেইন ফরেস্ট রিসোর্ট (০১৯৩৮-৩০৫৭০৬-৭, ০২-৯৫৫৩৫৭০)। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গলের অন্যান্য হোটেল হলো হবিগঞ্জ সড়কে টি টাউন রেস্ট হাউস (০৮৬২৬-৭১০৬৫), কলেজ রোডে হোটেল প্লাজা (০৮৬২৬-৭১৫২৫)।
0 comments:
Post a Comment