সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় রয়েছে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় দুটি জলপ্রপাত। দুটি ঝরনার একটি সারা বছর শুকনো থাকলেও বর্ষা মৌসুমে জীবন্ত হয়ে ওঠে। অন্যটিতে পানি প্রবাহ বেড়ে যায় এ সময়ে।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। প্রায় ২৭০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া এ জলপ্রপাত সারা বছরই বহমান থাকে। তবে বর্ষায় পানির প্রবাহ বেড়ে যায়। মাধবকুণ্ড ইকো পার্কের প্রধান ফটক ফেলে প্রায় আধা কিলোমিটার পথ হাঁটার পরে জলপ্রপাতে এসেই সড়কটি শেষ হয়েছে। পথের একপাশে মাধবকুণ্ড ইকো পার্ক, আরেকপাশে পাহাড়ের ঢালে ঢালে খাসিয়াদের পুঞ্জি আর চা বাগানের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে দশ মিনিটে পৌঁছা যায় মাধবকুণ্ডের নিচে। সবুজে ঘেরা বিশাল উঁচু পাহাড়ের উপর থেকে ঝরনাধারা নিচে গড়িয়ে পড়ছে অনবরত। ঝরনার সে পানি ছড়াপথে বয়ে চলে দূর থেকে দূরান্তে। হিম শীতল ঝরনার জল প্রাণ জুড়ায় পর্যটকের।
পরীকুণ্ড জলপ্রপাত
মাধবকুণ্ড ঝর্ণার কিছুটা আগে শিব মন্দিরের বিপরীত দিক থেকে পাথুরে ঝিরি পথটি শেষ হয়েছে পরীকুণ্ড জলপ্রপাতে। এ ঝর্ণাটির সৌন্দর্য মাধবকুণ্ডের চেয়েও অনেক বেশি। সবুজে ঘেরা উঁচু পাহাড়ের গা বেয়ে এখানে নেমে আসে স্বচ্ছ জলধারা। এ ঝরনাটি প্রায় সারা বছরই শুকনো থাকে। শুধু প্রাণ ফিরে পায় বর্ষায়। পরীকুণ্ডে যাবার ঝিরি পথটি বেশ পিচ্ছিল। তাই সাবধানে চলতে হবে এ পথে।
মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক
পাহাড়ের ঢালে ঢালে নানান গাছগাছালিতে ঢাকা মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের সৌন্দর্যও কোনো অংশে কম নয়। মাধবকুণ্ড ঝরনায় যাবার পথে পাহাড় বেয়ে কয়েকটি সিঁড়িপথ উঠে গেছে ইকো পার্কে। ঝরনার ঠিক আগে পাহাড়েরর ওপরে আছে একটি উঁচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ টাওয়ারে উঠলে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের বহু দূর দেখা যায়।
খরচপাতি
মাধবকুণ্ডের প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য দশ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাঁচ টাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩০-১০০ জনের জন্য একশত টাকা, ১০১-২০০ জনের জন্য দুইশত টাকা। বিদেশি পর্যটকের জন্য এক আমেরিকান ডলার বা সমমূল্যের টাকা। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠতে জনপ্রতি লাগবে পাঁচ টাকা। প্রাইভেট কার ও মাইক্রো বাসের পার্কিং মূল্য ৫০ টাকা।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে রেল ও সড়ক পথে মৌলভীবাজার যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ (০১৭১১৯২২৪১৭), শ্যামলী পরিবহন (০১৭১১৯৯৬৯৬৫), সিলেট এক্সপ্রেস (০১৭১৩৮০৭০৬৯), টি আর ট্রাভেলস (০১৭১২৫১৬৩৭৮) ইত্যাদি বাস যায় মৌলভী বাজার। ভাড়া নন এসি বাসে ২৫০ টাকা। টি আর ট্রাভেলসের এসি বাসে ভাড়া ৩৫০ টাকা। ট্রেনে মৌলভীবাজার যেতে হলে নামতে হবে কুলাউড়া স্টেশনে। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬.৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, দুপুর ২.০০ মিনিটে প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০.০০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি বার্থ ৫৮১ টাকা, এসি সিট ৩৯৭ টাকা, প্রথম শ্রেণী বার্থ ৩৪৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৩৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৩৮০ টাকা, শোভন চেয়ার ১৫০ টাকা, শোভন ১৩০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮.১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯.০০ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ভাড়া প্রথম শ্রেণী বার্থ ৪১৫ টাকা, প্রথম শ্রেণী সিট ২৮৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণী ৪৭২ টাকা, শোভন চেয়ার ১৮৫ টাকা, শোভন ১৭০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
মৌলভীবাজারে থাকার জন্য কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল আছে। শ্রীমঙ্গল রোডে হোটেল সোনাগাঁও (০৮৬১-৬৪৬০৭), শহরের কুসুমবাগে হোটেল শেরাটন প্লাজা (০৮৬১-৫২০২০), সাইফুর রহমান রোডে হোটেল হেলাল (০৮৬১-৫২৫৩৫)। এসব হোটেলে প্রতিদিনের রুম ভাড়া ২০০-১০০০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা আছে।
*-*লেখক: লেখা ও আলোকচিত্র মুস্তাফিজ মামুন
0 comments:
Post a Comment