বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবন নামে পরিচিত। স্থাপনাটি দেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত। প্রাসাদটি মূলত ব্রিটিশ ভাইসরয় অব ইন্ডিয়ার অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত স্থাপনাটি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
ইতিহাসে বাংলার সালতানাতের আমলে বঙ্গভবন যে স্থানে তা ছিল হজরত শাহ্জালাল দাখিনি নামক ঢাকার এক সুফি সাধকের। সুলতানের চরের দ্বারা সুফি সাধক এবং তার অনুসারীরা নিহত হলে তাদের এখানে কবর দেওয়া হয়। স্থানটি দ্রুত সাধকের ভক্তদের মাঝে মাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে থাকে। বঙ্গভবন এলাকায় 'মানুক হাউস' নামে একটি ইমারত ছিল। জনশ্রুতি আছে ব্রিটিশ রাজত্বের সময় আর্মেনীয় জমিদার মানুকের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়। ঢাকার নবাব খাজা আবদুল গণি মানুকের কাছ থেকে স্থানটি কিনে নেন এবং এখানে একটি বাংলো তৈরি করেন। যার নাম দেওয়া হয় দিলখুশা। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম সরকার এ স্থানটি কিনে নেয় এবং একটি প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরি করে, যা ১৯১১ সাল পর্যন্ত ভারতের গভর্নর জেনারেলের অস্থায়ী বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯১১ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রাসাদটি গভর্নর হাউস নামে পরিচিত ছিল এবং বাংলার গভর্নরের অস্থায়ী বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম হয় এবং প্রাসাদটি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের বাসভবনে পরিণত হয়। ভবনটি বেশ কয়েকবার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৬৪ সালে ভবনটির পুনঃনির্মাণ শেষ হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি গভর্নর হাউসের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গভবন করা হয়। ওই দিনই আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রথম সাংবিধানিক রাষ্ট্রপতি হন এবং এ ভবনটি রাষ্ট্রপতির বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ও ভবনটি রাষ্ট্রপতির বাসভবন ছিল। বঙ্গভবন বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি চিহ্ন, বঙ্গভবন যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের সমমর্যাদা বহন করে। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে এর পরিচর্যা করা হয়, কারণ এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং এ সময় এটি জনসংযোগ মাধ্যমসমূহ ও পর্যটকদের মধ্যমণিতে পরিণত হয়। স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে এখানে আমজনতার জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এ প্রাসাদে বসবাস এবং কাজ করে থাকেন। এখানে প্রায়ই বিভিন্ন সভা, সম্মেলন, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য রাষ্ট্রীয় ভোজের আয়োজন করা হয়।
নকশা : ব্রিটিশ আমলে ঢাকায় স্থাপিত অন্যান্য স্থাপত্যের মতো বঙ্গভবনও অনেকটা ভিক্টোরিয়া স্থাপত্যে নির্মিত। ১৯৬১ এবং ১৯৬৪ সংস্কারের পর এখানে ইসলামী স্থাপত্য ও বাঙালি স্থাপত্যের সমন্বয় ঘটানো হয়।
- তানভীর আহমেদ