Saturday, December 14, 2013

ম্যান্ডেলার তিন স্ত্রীর কথা

0 comments
নেলসন ম্যান্ডেলা। বহু বিশেষণে বিশেষিত সদ্যই অন্য ভুবনে পাড়ি জমানো এই মানুষটির পরিচয় নতুন করে দেয়ার কিছু নেই। ম্যান্ডেলার রাজনীতিবিদ আর সাম্যবাদীর পরিচয়ের আড়ালে অনেকটাই হারিয়ে গেছে তার পারিবারিক জীবন। মানুষ ভুলেই গেছে সাদা-কালো আন্দোলন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ম্যান্ডেলাকে মানসিক সমর্থন যুগিয়ে যাওয়া তার তিন স্ত্রীর কথা। যদিও ম্যান্ডেলা নিজে সবসময়ই স্মরণ করেছেন জীবনে তাদের অবদান। তাদের কঠিন সময়ে বাড়িয়ে দিয়েছেন বন্ধুত্বের হাত। 'মাদিবা'র স্ত্রীদের নিয়েই এই লেখা।
ছাত্রজীবনে তার জন্য পারিবারিকভাবে আয়োজিত এক বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে পালিয়ে যাওয়া ম্যান্ডেলা যে পরবর্তীতে স্বেচ্ছায় আরো তিনবার বিয়ে করবেন সেটা হয়তো ভাবতে পারেননি কেউই। ১৯১৮ সালে মেভেজোতে জন্ম নেয়া বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এই পুরোধা ব্যক্তি ১৯৪৪ সালে বিয়ে করেন তার মতোই গ্রাম থেকে উঠে আসা তরুণী এভলিন ওয়েসকে। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যান্ডেলার সহকর্মী ওয়াল্টার সিসুলুর মাধ্যমে এভলিনের সাথে পরিচয়ের কিছুদিনের মধ্যেই তাকে বিয়ে করেন ম্যান্ডেলা। সংসার জীবনের শুরুটা দারুণ মধুময় হলেও অল্পদিনের ব্যবধানেই ম্যান্ডেলা ব্যস্ত হয়ে পড়েন তার হাতেই সদ্য গঠিত এএনসি'র তরুণ দল নিয়ে। এর কয়েক বছর পরই বিদ্রোহের অভিযোগে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করতে হয় ম্যান্ডেলাকে।

জামিনে বেরিয়ে এসে এভলিনকে আর দেখা হয়নি ম্যান্ডেলার। তার অনুপস্থিতিতে তিন সন্তানকে রেখে এভলিন ততদিনে চলে গেছেন তার নিজ গ্রামে। ১৩ বছরের দাম্পত্য জীবনের শেষটাও রচিত হলো সেখানেই। দ্বিতীয় দফায় জেলে এসে অভিযোগের শুনানি চলাকালে ম্যান্ডেলার সাথে পরিচয় হয় উইনির। ১৯৫৮ সালের জুনে বিয়ে করেন তারা। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে ম্যান্ডেলা তার জীবনের সেরা সময়টা কাটান উইনির সাথেই। যদিও দ্বিতীয় দাম্পত্য জীবনের বেশিরভাগটাই এই অবিসংবাদিত নেতাকে কাটাতে হয় কারাগারের সেই বিখ্যাত ৪৬৬৬৪ নম্বর রুমে। তবে দু'জনের মানসিক নৈকট্যে এই জেল জীবনে কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। ম্যান্ডেলার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শীঘ্রই কারাভ্যন্তরে যেতে হয় উইনিকেও। প্রথম দফায় জেল থেকে বেরিয়ে আসার কয়েক বছর পর থেকে বিদ্রোহের অভিযোগে নিয়মিতই জেলে যেতে বাধ্য হন উইনি। তবে কালো মানুষের মুক্তির জন্য উইনির এই কারাবরণকে শ্রদ্ধার চোখেই দেখতেন ম্যান্ডেলা। গর্বের সাথেই তিনি উচ্চারণ করেন, 'মনে হয় বুঝে শুনে আমি একটা ঝামেলাকেই বিয়ে করেছি।'
১৯৯০ সালে জেল থেকে বেরিয়ে আসার সময়ও উইনি ম্যান্ডেলার বাহুলগ্না ছিলেন। যদিও ততদিনে বয়সে অনেক ছোট একজনের সাথে মন দেয়া-নেয়া চলছে তার। তবে তাই বলে দু'জনের সম্পর্ক সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। ১৯৯২ সালে দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও অপহরণের দায়ে যখন উইনির ছয় বছরের জেল হয়, তখনও তার পাশে ছিলেন ম্যান্ডেলা। এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত ম্যান্ডেলার পাশে ছিলেন তার তৃতীয় স্ত্রী গ্রাসা ম্যাচেল।
মোজাম্বিকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সামোরা ম্যাচেলের সহযোদ্ধা এবং পরবর্তীতে তার সরকারের মন্ত্রী গ্রাসার কাছে অবশ্য প্রেসিডেন্টের স্ত্রী পরিচয়টা নতুন ছিল না। ১৯৮৬ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় সামোরা মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার স্ত্রী ছিলেন গ্রাসা। তখন জেলে বসেই গ্রাসাকে সমবেদনা পত্র পাঠান ম্যান্ডেলা। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় গ্রাসার সাথে তার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয় এবং প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের বিয়ের অনুষ্ঠানে দুজনকে প্রথমে একসাথে দেখা যায়। দুজনের সম্পর্কের বিষয়ে কোন লুকোছাপা না করে ম্যান্ডেলা সাংবাদিকদের জানান, 'জীবনের এই শেষ পর্যায়ে এসেও মনে হচ্ছে আমি এখনো ফুলের মতোই ফুটছি। তার (গ্রাসা) সমর্থন এবং ভালবাসাই আমাকে এমনটা ভাবাচ্ছে।' এরপর ১৯৯৮'র ১৮ জুলাই ম্যান্ডেলার আশিতম জন্মদিনে 'জীবনে আর কখনো কোন প্রেসিডেন্টকে বিয়ে করবেন না' এই শপথ ভেঙ্গে ম্যান্ডেলাকে বিয়ে করেন গ্রাসা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ম্যান্ডেলার সাথেই ছিলেন গ্রাসা।

আবিদ শাহরিয়র

0 comments:

Post a Comment