Wednesday, July 23, 2014

পোকামাকড়ের উপদ্রব ঠেকাতে

0 comments
হঠাত্‍ হঠাত্‍ বৈশাখী ঝড় ছুঁয়ে গেলেও বাড়ছে গরমের তীব্রতা। সেই সঙ্গে বাড়ছে পোকামাকড়ের উপদ্রবও। মশা, মাছি, পিঁপড়া, তেলাপোকা তো বটেই, অনেক অচেনা-অজানা পোকামাকড়ের উপদ্রবও ঘটছে এবারের গরমে। তাই নিজের সুরক্ষায় ঘরদোর রাখুন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এতে রোগবালাই যেমন কম হবে, তেমনি আপনার গৃহকোণটিও থাকবে পোকামাকড়মুক্ত। আপনার নিয়মিত করা মাত্র কয়েকটি কাজ আপনাকে রাখবে সুরক্ষিত।
• -ঘরের কোণে অন্ধকার জায়গায় একটা পাত্রে সামান্য গরম পানিতে কর্পূর মিশিয়ে রেখে দিন। এতে মশার উপদ্রব কমে যাবে।
• -বাগানে, বাড়ির আঙিনা বা ঘরে জলাধার থাকলে তাতে মাছ ছাড়ুন। মাছ মশার লার্ভা খেয়ে ফেলে। ফলে পানির কারণে মশার দৌরাত্ম্য বাড়বে না।
• -বাথরুম বা রান্নাঘর – কোথাও পানি জমতে দেবেন না। ফুলদানীর পানিও একদিন পর পর পাল্টে ফেলুন। পুরোনো ফুলের পাতা, পাপড়ি বা ডাঁটি যেন পানিতে জমে পচে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
• -রান্নাঘরের ডাস্টবিনের জায়গা, স্টোররুম, আলমারির পেছনের অন্ধকার জায়গা, খাটের নিচে, ঘরের কোনা ইত্যাদি জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখুন। কারণ এসব জায়গায় মশা লুকিয়ে থাকে।
• -সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ রাখুন। এ সময়টাতেই ঘরে মশা ঢোকে বেশি।
• -খবরের কাগজ, ওষুধের ফয়েল, কফ সিরাপের বোতল ইত্যাদি কাজ শেষের সাথে সাথে ফেলে দিন, জমিয়ে রাখবেন না। এতে পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়।
• -গাছে যাতে পোকামাকড় আক্রমণ করতে না পারে এজন্য সাবান-পানি প্রয়োগ করুন। এটা দারুণ কাজে দেবে।
• -বিছানার তোষক বা ম্যাট্রেসের নিচে শুকনো নিমপাতা রাখুন। পিঁপড়া বা ছারপোকা বাসা বাঁধতে পারবে না।
• -ঘরে বোলতা বা মৌমাছি ঢুকে পড়লে সেটার গায়ে হেয়ার স্প্রে করে দিন। এতে বোলতা বা মৌমাছির হুল অকেজো হয়ে যাবে। আর কামড়ে দিলে সাথে সাথে সেখানে টুথপেস্ট লাগান। ব্যথা কমে যাবে।
• -পিঁপড়া ও পোকামাকড় তাড়াতে কাজে দেবে লবঙ্গ। চিনির বয়াম, আলমারির কাপড়ের ফাঁকে, বিছানার গদির কোনায় কিছু লবঙ্গ রেখে দিন। এতে পিঁপড়ার উপদ্রব কমে যাবে।
• -পিঁপড়ার গর্তের মুখে পিপারমিন্ট অয়েলে ভেজানো তুলা রেখে দিন। পিঁপড়া কমে যাবে।
• -ময়লা ফেলার জায়গায় বোরিক পাউডার ছিটিয়ে দিন। এতে মাছির উপদ্রব কমে যাবে।
• -চিনির সাথে সমপরিমাণ বোরিক পাউডার মিশিয়ে ঘরের কোনায়, দেয়ালে ছড়িয়ে দিন। এতে তেলাপোকার অত্যাচার কমবে।
• -প্রতিদিন ঘরের মেঝে পরিষ্কার করুন। ঘর মুছতে ফিনাইল বা অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড ব্যবহার করুন। এতে পোকামাকড়ের আনাগোনা অনেকটাই কমে যাবে।

Friday, July 18, 2014

কুমারিত্ব

0 comments
প্রথম মিলনে রক্তপাত এর মাধ্যমে নারীর কুমারিত্ব প্রমাণিত হয়, এটি বিশ্বব্যাপি একটি প্রচলিত ধারণা। অনেকের ধারণা নারীর যৌনাঙ্গের ভিতরে এক টুকরা মাংস পিন্ড থাকে যা প্রথম মিলনে ছিন্নভিন্ন হয়ে রক্তপাত ঘটায়। আবার অনেকের ধারণা, মাংসপিন্ড নয় এটা আসলে রক্তনালী দিয়ে তৈরী একটা জালের মত বস্তু, যা প্রথম মিলনে ছিড়ে গিয়ে রক্তপাত ঘটায়। তবে বেশির ভাগ মানুষের ধারণা হলো, এটি আসলে একটি পর্দা যা যৌনাঙ্গের ভিতরের দিকে থাকে এবং যৌনাঙ্গের প্রবেশপথ কে সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখে। প্রথম যৌনমিলনে তা ছিড়ে গিয়ে রক্তপাত ঘটায়। একবার চিন্তা করে দেখুন, তাই যদি হতো, তাহলে মহিলাদের ঋতুস্রাব কি আসলেই সম্ভব হতো? আসলে নারীর যৌনাংগ সমন্ধে স্বচ্ছ ধারণার অভাবই এসব ধারণার মূল কারণ।

এই সম্পর্কে আধুনিক ধারণার প্রবর্তক বিখ্যাত আরব বিজ্ঞানী ইবনে-সিনা। আধুনিক মেডিকাল সাইন্স অনুযায়ী, নারীর যৌনাঙ্গের প্রবেশ পথের ১-২ সেন্টিমিটার ভিতরে ইলাস্টিক বা স্থিতিস্তাপক একধরণের টিস্যু থাকে। একে বলা হয় hymen. এটাকে তুলনা করা যেতে পারে দরজার ফ্রেম বা চৌকাঠ এর সাথে, যা দরজার চারিদিকে লাগানো থাকে। কিন্তু কোনভাবেই এটি বদ্ধ দরজার সাথে তুলনীয় না। এটির আকৃতি এবং আকার একেক নারীর ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। কারো ক্ষেত্রে এটি যৌনাঙ্গের প্রবেশপথের চারিদিকে গোল করে লাগানো থাকে, কারো ক্ষেত্রে এটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির অর্থাৎ শুধু একপাশে লাগানো। বেশি সংখ্যক নারীর ক্ষেত্রেই এটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি (1) এটির আকারও একেক নারীর ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। যোনী পথকে একটা ঘড়ি আকৃতির জিনিস হিসেবে কল্পনা করলে, সবচেয়ে বড় hymen এর আকার হলো, যদি একটা ঘড়িতে যদি ১০টা ১০ বেজে থাকে, তবে ঘন্টা ও মিনিটের কাটা দুটির মধ্যবর্তী স্থানটুকু hymen দ্বারা আবৃত থাকলে। সবচেয়ে ছোট hymen হলো যদি ঘড়িতে ৬টা বেজে থাকে, তবে ঘন্টা ও মিনিটের কাটা দুটির মধ্যবর্তী স্থানটুকু hymen দ্বারা আবৃত থাকলে (2),খুব কম সংখ্যক নারী (০.০৩% নারী) hymen ছাড়া জন্মগ্রহণ করেন। আবার খুব কমসংখ্যক নারী যৌনাংগের প্রবেশ পথ রুদ্ধকারী hymen নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। যতদিন পর্যন্ত এরা প্রাপ্তবয়স্ক না হয় এবং ঋতুস্রাব না হয়, তারা কোন সমস্যা বোধ করেন না। বয়প্রাপ্তির পর ঋতুস্রাব বের হতে না পেরে ভিতরের দিকে চলে যায় ও ব্যাথার সৃষ্টি করে। মেডিকেলের ভাষায় একে বলা হয়, hematocolpos । এদের অপারেশন এর মাধ্যমে hymen অপসারণের মাধ্যমে ঋতুস্রাব বের করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয় (1)।
একটি নারী কুমারী হলেও নিম্নের কিছু কারণে, প্রথম মিলনে রক্তপাত না হতে পারে (1,3,4,5)।
>দরজার চৌকাঠের উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে, প্রথম মিলনে রক্তপাত র‍্যান্ডম বা আপেক্ষিক ব্যাপার। এটি নির্ভর করবে মিলনের তীব্রতা/ রুক্ষতা, যোনীপথের পিচ্ছিলতা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। আগের যুগে প্রথম মিলনে অনেক নারীই ভীত থাকত এবং সঠিক ভাবে উত্তেজিত হতে পারতো না, তাই hymen ছিড়ে রক্তপাতের শিকার হত। বর্তমান যুগে যৌনক্রীড়ায় মেয়েদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রথম মিলনে রক্তপাতের সম্ভাবনা আরো কমিয়ে দেয়।
>কারো কারো hymen জন্মগত ভাবে পাতলা থাকতে পারে এবং শারিরীক এক্টিভিটি যেমন ব্যায়াম, সাইকেল চালনা ইত্যাদির কারণে তা অজ্ঞাতসারে ছিড়ে যেতে পারে।
>উপরে hymen এর যে আকার বলা হয়েছে সেই অনুযায়ী কারো hymen এর আকার ছোট হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে hymen ছিড়ে যাওয়া নির্ভর করে পুরুষাঙ্গের আকারের উপরে।
>আবার নারী ভেদে hymen এর স্থিতিস্থাপকতা কম বেশী হতে পারে। যার স্থিতিস্থাপকতা বেশী, তার hymen ছেড়ার সম্ভাবনা কম।
> বয়স বাড়ার সাথে সাথে hymen এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়তে থাকে। পুরোন যুগে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে এবং কম স্থিতিস্থাপক hymen প্রথম মিলনে ছিড়ে রক্তপাত ঘটাত বলেই নারীর সতীত্বের সাথে রক্তপাতের সম্পর্কের ধারণা গড়ে উঠে। কিন্তু বর্তমানে মেয়েদের বেশী বয়সে বিয়ে হওয়াতে, অধিকতর স্থিতিস্থাপক hymen এর কারণে অনেকে রক্তপাতের সম্মুখীন না হতে পারেন (6)।
> এছাড়াও খুব কম সংখ্যক নারীর জন্মগত ভাবে hymen থাকেনা। এদের ক্ষেত্রে তাই প্রথম মিলনে hymen থেকে রক্তপাতের কথাটা খাটেনা।
আবার কোন কোন নারী কুমারী না হলেও তার রক্তপাত হতে পারে (3)।
>যদি কোন নারী যথেষ্ট পরিমানে উত্তেজিত না থাকে এবং যৌনরস দ্বারা যোনিপথ পিচ্ছিল না থাকে অথবা পুরুষসংগী যদি রুক্ষ ভাবে মিলনে অভ্যস্ত থাকে সে ক্ষেত্রে যোনীর টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তপাত হতে পারে। কিন্তু এই রক্ত hymen থেকে আসেনা। তবে আপেক্ষিক ভাবে রক্তের উৎস সম্নধে জানার কোন উপায় থাকেনা।
>কিছু ইনফেকশনের কারণে মিলনের সময় রক্তপাত হতে পারে (যেমন Chlamydia infection)
>প্রথম মিলনেই hymen নির্মূল হবে তা নয়। আবার কয়েকটি মিলনে অল্প অল্প করে নির্মূল হতে পারে। ফলে কুমারী না এমন নারীও কিন্তু মিলনের সময় রক্তপাতের সম্মুখীন হতে পারে, যদিও এটা তার প্রথম মিলন নয়।
ঠিক কত ভাগ মহিলা প্রথম মিলনে রক্তপাতের সম্মুখীন হন, তা নিয়ে তেমন ব্যপক কোন গবেষনা হয়নি। ১৯৯৮ সালে Dr. Sara Patterson-Brown এর করা the British Medical Journal এ প্রকাশিত একটি গবেষনার কথা জানা যায়। গবেষনাতে অংশগ্রহণ কারী ৬৩% মহিলা জানান যে তারা প্রথম মিলনে রক্তপাতের সম্মুখীন হননি (3)।
যুগ যুগ ধরে, এই রক্তপাতের মাধ্যমে সতীত্বের পরীক্ষার কারণে অনেক নারীর প্রতি আংগুল উঠেছে। পৃথিবীর কোথাও কোথাও বিয়ের পর রক্তমাখা বিছানার চাদর প্রদর্শনের রেওয়াজ আছে। আরব বিশ্বে এমন কি বিয়ের আগে অনেক নারী অপারেশন করে hymen প্রতিস্থাপন করেন। যদিও ইসলামি কোন বই-পুস্তকে কোথাও এই পদ্ধতিতে নারীর সতীত্ব প্রমাণিত হয় বলে বলা নেই ।

নারীর সতীত্ব প্রমানিত হয় যেভাবে : আর-বাবু

কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা

0 comments
পৃথিবীতে যত প্রকার খাদ্য উপযোগী ডিম আছে তার মধ্যে কোয়েল পাখির ডিম গুনে মানে এং পুষ্টিতে সর্বশ্রেষ্ট। আমাদের সমাজে র্ফামের মুরগীর ডিম বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, যার মধ্যে প্রাণের কোনো স্পন্দন নেই। কারণ এইগুলি মোরগ ছাড়া ডিম। এর বাচ্চা হয় না। অপর পক্ষে কোয়েলের ডিম বাচ্চা উৎপাদন করতে সক্ষম তাছাড়া পুষ্টিগুন ও অন্নান্য ডিম থেকে অনেক অনেক শ্রেয়। ৪০ বছর পার হলেই ডাক্তারের নির্দেশ থাকে মুরগীর ডিম খাওয়ার ব্যাপারে সর্তক থাকুন। কারণ নিয়মিত মুরগীর ডিম খেলে কলোস্ট্ররেল বেড়ে হৃদ রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বয়স্ক লোকদের এই অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং অতীব সুস্বাদু খাদ্য ডিম খাওয়া থেকে বিরক্তি ভাবে বিরত থাকতে হয়। অথচ কোয়েলের ডিম নিসংকোচে যে কোনো বয়সের মানুষ অর্থ্যাৎ বাচ্চা থেকে বৃদ্ধরা খেতে পারে। এতে ক্ষতির কোনো কারণ নেই বরং নিয়মিত কোয়েলের ডিম গ্রহণ করলে অনেক কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ হতে পারে। বিভিন্ন দেশে কোয়েল পাখির ডিম নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং সব জায়গা থেকে গবেষকরা কোয়েলের ডিম খাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

একজন ফাঞ্ছ ডাক্তার জিন ক্লড ট্রুফিয়ার বিভিন্ন রোগীর উপর কোয়েল পাখির ডিম থেরাপী হিসাবে ব্যবহার করে অভূত ফল পেয়েছেন। এটা নিশ্চিত যে, কোয়েল ডিম খাদ্য হলেও শরীরে ঔষধ হিসাবে কাজ করে। বিভিন্ন দেশের চিকিৎসা বিশেজ্ঞদের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায় যে, কোয়েল ডিম ঔষধ হিসাবে খেয়ে বিভিন্ন প্রকার রোগ যেমন- হার্ট-ডিজিজ, নানা ধরনের কিডনী রোগ, অতিরিক্ত ওজন, র্দুবল রোগ প্রতিরোধ, পাকস্থলীর নানা রকম রোগ, ফুসফুসের নানা রকম রোগ, স্মৃতিশক্তি হ্রৃাস, রক্তশুণ্যতা, ডায়াবেটিস, পুরুষত্বহীনতা এবং উচ্চ কলোস্ট্ররেল ইত্যাদি কোনো রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া নিরাময় হয়।



কেন কোয়েল পাখির ডিম এত সমাদৃত ?

 কোয়েল ডিম প্রাণীজ খাদ্য দ্রব্য হলেও এর মধ্যে প্রটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম এবং এমাইনো এসিড এমনভাবে বিন্যাসিত যে, এই ডিম খেলে শরীরে সব ধরণের পুষ্টির অভাব পুরণ করে শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

 মুরগীর ডিমের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে কোয়েল ডিমে কোলেস্টেরেল যখন ১.৪% তখন মুরগীর ডিমে ৪% চর্বি জাতীয় উপাদান থাকে ও মুরগীর তুলনায় তিন ভাগের একভাগ এবং কুসুমে প্রটিনের পরিমান মুরগীর থেকে প্রায় শতকরা ৭ ভাগ বেশী।

 ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমান তুলনা করলে আরও উৎসব্যঞ্জক তথ্য বেরিয়ে আসবে।

 কোয়েল ডিমে ভিটামিন বি-১ এর পরিমান মুরগীর ডিম থেকে ছয়গুণ বেশী।

 ফসফরাস পাঁচ গুণ বেশী।

 আয়রন পাঁচ গুণ বেশী।

 ভিটামিন বি-২ পনেরো গুণ বেশী।

 এমন কিছু উপাদান আছে যা শরীরের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে অ্যালাজিক প্রতিক্রিয়াকে বিনষ্ট করে।

 এছাড়া শরীরের প্রয়োজনীয় সব ধরনেন ভিটামিন, মিনারেল, এবং এ্যামাইনো এসিড, কোয়েল ডিমে বিদ্যমান। যার কারণে কোয়েল ডিম ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা নিয়ে গবেষকদের কোন মতপার্থক্য নেই।

 সকালের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ৪/৫টা কোয়েল ডিম থাকলে দেহ যন্ত্রাদির কার্যক্রম যে ভাবে উন্নত করে ।

 র্হাটের কার্যক্ষমতা উন্নত করবে।

 কিডনী এবং লিভারের কার্যক্ষমতা দুর্বল থাকলে সবল করে।

 হজম শক্তি বাড়াবে এবং এসিডিটি কমাতে সাহায্য করবে।

 ব্রেন সব সময় সতেজ থাকবে এবং স্মৃতিশক্তি সবল রাখবে।

 সব বয়সের লোকদের পূর্ণজ্জীবিত করবে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

 বাচ্চাদের মানসিক, শারীরিক এবং বুদ্ধিমর্ত্তার বিকাশ ঘটাবে।

 দুর্বল বাচ্চা থেকে বৃদ্ধরা প্রতিদিন ৪/৫ টা কোয়েল ডিম গ্রহণ করে তবে ৩/৪ মাসের মধ্যে তার শরীরে পূর্ণ শক্তি ফিরে আসবে।


কোয়েল ডিম দিয়ে চিকিৎসা

যে কোনো গুরুতর জটিল রোগের সুস্থ্যতা শুধু কোয়েল ডিম ঔষধ হিসাবে গ্রহণ করে তার সুস্থ্যতা ফিরিয়ে আনতে পারবে।

কোয়েল ডিম ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করার নিয়ম:

 রোগের তীব্রতা, সময়কাল, বিপদজনক এবং গুরুতর অবস্থার উপর ভিক্তি করে রোগ নিরাময়ের সময়কাল এবং দৈনিক ডিম গ্রহনের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। যেমন- ৬০, ৯০, ১২০ এবং ২৪০ টা ডিম কত দিনের মধ্যে খেতে হবে।

 ১ বছর থেকে ৭ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের ৬০ টা ডিম নির্ধারণ করে ৩০ অথবা ২০ দিনের জন্য। অর্থ্যাৎ প্রতিদিন ২টা বা ৩টা করে খেতে দিতে হবে।

 ৮ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের ৯০ টা ডিম ৩০ দিনে খেতে হবে অর্থ্যাৎ প্রতিদিন তিনটা করে।

 ১১-১৫ বছর বাচ্চাদের ৯০ টা ডিম ৩০ দিনে অর্থ্যাৎ প্রতিদিন ৩ টা করে খেতে হবে।

 ১৬-১৮ বছর বয়সীদের জন্য ১২০ টা ডিম ২৬ দিনে খেতে হবে।

প্রথম দিন - ৩ টা

দ্বিতীয় দিন - ৩ টা

তৃতীয় দিন - ৪ টা

পরের দিন গুলি ৫ টা করে ডিম খেতে হবে।

বয়স্কদের জন্য ২৪০ টা ডিম ৪৯ দিনে নিচের নিয়ম অনুসারে খেতে হবে।

প্রথম ৩ দিন - ৩ টা করে ডিম খেতে হবে।

৪র্থ দিন - ৪টা
পরের দিন গুলিতে - প্রতিদিন ৫ টা করে ডিম খেতে হবে।

ডিমগুলি প্রতিদিন খালি পেটে কাঁচা খেতে হবে। ডিমগুলিকে প্রথমে গরম পানিতে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর কাঁচা ডিমে সামান্য মধু এবং কয়েক ফোটা লেবু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।


বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ডিমের সংখ্যা :

বাচ্চাদের শারীরিক বৃদ্ধি, বিপাকীয় কার্যক্রম এবং স্নায়ু তন্ত্রের বিকাশের জন্য  ১২০ টি ডিম প্রয়োজন।

বয়স্ক লোকদের শরীরের ধীর অধোগতি, বিভিন্ন তন্ত্রের ভারসাম্যতা এবং সুস্থ্য থাকতে ২৪০ টি ডিমের প্রয়োজন।

চামড়ায় নানা ধরনের র‌্যাসের জন্য - ১২০ টি

লিভারের কার্যক্রম সবল করতে - ২৪০টি

মুত্রাশয় জনিত সর্ব প্রকার রোগের জন্য - ২৪০ টি

দুর্বল হজম শক্তির জন্য - ১২০ টি

ব্াঁত এবং বাঁতজ্বরের জন্য - ২৪০ টি

অতিরিক্ত ওজন কমাতে - ২৪০ টি

হৃদ রোগের জন্য - ২৪০ টি

এইডস এর জন্য - ২৪০ টি

অ্যাজমা - ২৪০ টি

এক্জিম্যা - ২৪০ টি

এর্লাজি - ২৪০ টি

আলসার - ২৪০ টি

এ্যাসিডিটি - ১২০ টি

রক্ত শূন্যতা - ২৪০ টি

ডায়াবেটিস - ২৪০ টি

শহীদ আহমেদ , ভাইস চেয়ারম্যান, সুচিকিৎসা জণকল্যাণ ফাউন্ডেশন। ২৯ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ঢাকা । ০১৭১৫১১৮৮৮৯

Monday, July 7, 2014

ব্রাজিল বিশ্বকাপের বল ব্রাজুকা’র আদ্যোপান্ত

0 comments
বারের ব্রাজিল বিশ্বকাপের বল ‘ব্রাজুকা’, আর অ্যাডিডাসের তৈরি এই বলটির আকর্ষনীয় নকঁশা ও নিখুঁত কার্যকর ভূমিকা খেলোয়াড়সহ দর্শকদেরও মন মাতাবে।
অদ্ভুত সুন্দর এই ‘ব্রাজুকা’ নামটি গৃহীত হয় ভোটাভুটির মাধ্যমে, ২০১৩ সেপ্টেম্বর মাসে ব্রাজিলের প্রায় এক মিলিয়ন ফুটবল সমর্থক এই ভোটে অংশগ্রহণ করে। যে দেশে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় সাধারণত সে দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, আবহমান জীবন ধারা, প্রকৃতি-পরিবেশ ইত্যাদি তুলে ধরা হয় বিশ্বকাপের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নামকরণের মাধ্যমে। সেই ঐতিহ্য থেকেইএসেছে ‘ব্রাজুকা’(Brazuca) নামটি। ‘ব্রাজুকা’(Brazuca) একটি অপ্রচলিত লৌকিক পরিশব্দ যার অর্থ ‘ব্রাজিলিয়ান’ এবং আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে ‘ব্রাজুকা’ বলতে বুঝানো হচ্ছে যেভাবে ব্রাজিলিয়ানরা জীবনধারণ করে এবং তাদের নিত্যদিনের জীবনের সমষ্টি। সাম্বার দেশ ব্রাজিল, নানা রঙের নানা বর্ণের এক উৎসবমুখর দেশ। তাই স্বভাবতই ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে রঙ্গিন বলটি হল এবারের ‘ব্রাজুকা’। বলের উপরিভাগের এই রঙ্গিন কারুকার্যও বেশ সুন্দর ভাবে তুলে ধরছে ব্রাজিলিয়ানদের একটি বিশেষ ঐতিহ্য; তা হল ব্রাজিলিয়ানরা ঐতিহ্যগত ভাবে বহু বর্ণের হাত বন্ধনী (wristbands) পরে থাকে সেটিকে। এখন পর্যন্ত ‘ব্রাজুকা’ বলটি নিয়ে কম বেশি প্রায় সকলেই সন্তুষ্ট, কেননা ইতিহাসের সবচেয় পরীক্ষিত বল এটি। ক্রীড়া সামগ্রী নির্মান প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাসের দীর্ঘ নিরলস পরিশ্রম ও গবেষণার ফসল এটি। বলটি বানানোর সময় অবশ্যই তাদের মাথায় ছিল ২০১০ বিশ্বকাপের বল জাবুলানি নিয়ে বিতর্কের ব্যাপারটি। অনেকেই বেশ বিরক্ত ছিলেন জাবুলানি নিয়ে, আর ঐ বিশ্বকাপে আমেরিকার সাথে ড্র করার পর ইংল্যান্ড গোলরক্ষক তো বলেই ফেললেন এটি ‘জঘন্য’। আর তাই এবারে বিশ্বকাপের জন্য বল তৈরির ব্যাপারটি আরও বেশি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা পূর্বক খুবই সতর্ক ছিল অ্যাডিডাস।

বলটি তৈরির জন্য ব্যাবহার করা হয়েছে উন্নতমানের প্রযুক্তি এবং কলাকৌশল। চ্যাম্পিয়নস লীগে যে বল ব্যাবহৃত হয় এবং ইউরো ২০১২ এর জনপ্রিয় ও সফল বল ট্যাঙ্গো-১২ (Tango-12) যে প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে সে প্রযুক্তি তো অবশ্যই ছিল, সেই সাথে বলের উপরিভাগ তৈরিতে আরও উন্নত মানের প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয়েছে। এবারের বলটির প্যানেলের (panel) বুনন এবং আকৃতি একেবারেই ভিন্ন ও নতুন। এটি প্রথম কোন বল যেটিতে ব্যাবহার করা হয়েছে ছয়টি অভিন্ন প্যানেল এবং এগুলো একেবারে নিখুঁত ভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে যেন বাতাসে গোলরক্ষকদের জন্য জাবুলানির মত কোন সমস্যা না করে। বলটির নকঁশার ব্যাপারে অ্যাডিডাসের পরিচালক জানিয়েছেন এটি বাতাসে গতিবিদ্যার সূত্র প্রায় নিখুঁতভাবে মেনে চলে এবং উড়ন্ত অবস্থায় যথেষ্ট সুস্থির। জাবুলানি প্রায় গোলরক্ষকদের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল কেননা বলটির উপরিভাগ ধরার জন্য গোলরক্ষকদের তেমন সুবিধা দেয় নি তবে এবারে ব্রাজুকা এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে গোলরক্ষক এবং অন্যরা সমান ভাবে নিজেদের খুশি মত এটিকে ব্যাবহার করতে পারে। ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার দানি আলভেজ বলটি দিয়ে খেলতে পারাটা দারুন আনন্দের হবে জানিয়ে বলেছেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হল মাটিতে এবং বাতাসে বলটি সত্যি ভাল।”

ব্রাজুকার তৈরি সহ এর মান উন্নয়নে সময় লেগেছে প্রায় তিন বছর এবং বিভিন্নভাবে বলটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময়ের ব্যাপ্তিও অবাক করার মত- প্রায় আড়াই বছর! আগেই বলেছি এটি ইতিহাসের সবচেয়ে পরীক্ষিত বল। বলটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাথে জ়ড়িত ছিল প্রায় ১০ টি দেশের প্রায় ৩০ টি ভিন্ন ভিন্ন ক্লাব যাদের মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান, ফ্লুমিনেসে, বায়ার্ন মিউনিখের মত ক্লাব সহ আরও অন্যান্য নামি-দামি ক্লাব ছিল; সেই সাথে এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত খেলোয়াড়ের সংখ্যা প্রায় ৬০০ জন এবং এদের মধ্যে প্রায় ৩০% খেলোয়াড় ছিলেন যাদের সাথে এডিডাসের কোন প্রকার চুক্তি নেই। এ থেকে সহজেই বোধগম্য যে বলটির ব্যাপারে কতখানি একনিষ্ঠ ছিল প্রতিষ্ঠানটি! মজার ব্যাপার হল বলটি আনষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করার আগেই এটি দিয়ে কিন্তু খেলা হয়েছে! অবাক হলেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই, কারণ বলটি বিশ্বকাপের জন্য কতখানি উপযোগি তা যত্নশীল ভাবে পরীক্ষার জন্য গত অনুর্দ্ধ্ব-২০ ফুটবল বিশ্বকাপে, কিছু আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ ব্রাজুকা দিয়েই খেলা হয়েছে, এসবের মধ্যে ছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারির আর্জেন্টিনা বনাম সুইডেনের খেলাটিও; তবে অবশ্যই বল গুলো ছিল ছদ্মবেশের আড়ালে ভিন্ন খোলসে। এখন পর্যন্ত বলটি নিয়ে তেমন কোন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। আর্জেন্টাইন তারকা মেসি বলটি সম্পর্কে বলেছেন, “বলটি সম্পর্কে আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া হল এটি সত্যিই ভাল।”

এডিডাসের সাথে চুক্তি বিহীন যেসব খেলোয়াড় বলটির উন্নতিকরণ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিল তাদের মধ্যে একজন ইংল্যান্ড অধিনায়ক জেরার্ড। কেউ বলটি নিয়ে নেতিবাচক কোন মন্তব্য করবে বলে মনে করেন না লিভারপুলের এই মিডফিল্ডার। “গোলরক্ষকদের জন্য যতদূর সম্ভব কঠিন বল আমি চাই কিন্তু আমি মনে করি ব্রাজুকা উভয় পক্ষের জন্যই পক্ষপাতহীন।” সেই সাথে জেরার্ড আরও বলেছেন, “একটি বিষয় নিশ্চিত বলটির ব্যাপারে কোন ওজর (excuse) থাকবে না।”

ব্রাজিলের বহুমাত্রিক আবহাওয়ার সাথে যেন সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে বলটি সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে বলটি; কি বৃষ্টি, কি তপ্ত রোদ, যে কোন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার মত করেই উন্নত করা হয়েছে ব্রাজুকা। মাত্র ৪৩৭ গ্রাম ওজনের বলটির পানি শোষণ ক্ষমতা প্রায় ০.২%, এবং মাত্র ৭% চাপ হারাবে উন্নত মানের এই বলটি। বলটি তৈরিতে ব্যাবহৃত হয়েছে বিশেষ ধরণের রাবার (Butyl) এবং অন্যান্য কাচামালের মধ্যে ছিল বিশেষ ধরণের ফোম (PU Based)। বলটি নিয়ে অনেক বেশি প্রত্যাশা অ্যাডিডাস কতৃপক্ষের। প্রায় কম বেশি সব ধরনের আবহাওয়া, পরিস্থিতি ও পরিবেশে পরীক্ষা করা হয়েছে বলটি। গত বিশ্বকাপে জাবুলানি নিয়ে যে অসন্তুষ্টি ছিল খেলোয়াড়দের মাঝে, এবারে ব্রাজুকা নিয়ে তেমনটা হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।


বিশ্বকাপের বল সমগ্র

0 comments
ফুটবল মানেই উম্মাদনা আর উম্মাদনা মানেই তো ফুটবল। এই এক ফুটবলকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে কত নাটক, কত কাহিনী আর হাজার আনন্দাশ্রু এবং দুঃখের নোনা জলে অঙ্কিত রূপকথা। যে বল নিয়েই এত আলোচনা, কত শত ইতিহাসের জন্ম তো সেই বলের হালচাল নিয়ে কি একটু হলেও উম্মাদনা থাকা সমীচিন নয় কি?

ফুটবল এমনই এক খেলা যা কিনা সমাজের সর্বনিম্ন স্তর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের মানুষের রক্তে মিশে আছে। পেলে, গাহিন্সা, সক্রেটিস থেকে শুরু করে আজকের মেসি, রোনালদো কিংবা তেভেজের কথাই একবার ভাবুন। অভাবের সংসার থেকে উঠে এসে পাড়ায় পাড়ায় ছেড়া-ফাটা বল নিয়ে খেলতে খেলতে আজ তাঁরা কোথায়! তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, হয়েছে পরিবর্তন সামাজিক অবস্থানের তবে গোলাকার সেই বস্তুটি কিন্তু গোলাকারই আছে বৈকি! তবে এটা ঠিক কালের পরিক্রমায় এবং আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের বদান্যতায় সেটার বাহ্যিক গঠনের মসৃণতা বেড়েই চলেছে। যতই যা পরিবর্তন হোক না কেন ফুটবলের প্রতি সে ভালবাসা আর উত্তেজনাটা আগের মতোই অকৃত্রিম রয়ে গেছে।

শুরুটা হয়েছিল ‘জুলে রিমে ট্রফি’ দিয়ে। এরপর নাম নিল ‘ওয়ার্ল্ড কাপ’ অর্থাৎ ‘বিশ্বকাপ’। পায়ের আঘাতে বল এক প্রান্ত থেকে ছুটে চলে অন্য প্রান্তে আর সেইসাথে রচিত হয় বীরত্বগাঁথা। ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরের নাম বিশ্বকাপ। ইতিহাস সৃষ্টিকারী বিশ্বকাপের ফুটবল নিয়েই আমাদের এই ছোট্ট প্রচেষ্টা। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বিশ্বকাপের বিভিন্ন আসরের কতিপয় বলগুলো-

১. টেলস্টার (১৯৭০ মেক্সিকো বিশ্বকাপ)


অ্যাডিডাস ১৯৬৩ সাল থেকে ফুটবল প্রস্তুত করা শুরু করলেও ১৯৭০ সালেই প্রথম তারা বিশ্বকাপের জন্য ফুটবল প্রস্তুত করে। তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে দামী বল ছিল এটি। বিশ্বকাপের বল বলে কথা! বলটির ডিজাইন ছিল ‘বাকমিনস্টার’ ঘরনার। সেই আমলে রঙিন টেলিভিশন ছিল দুর্লভ। তাই সকল শ্রেণির দর্শকদের বিবেচনায় বলটিকে এমন ভাবে রূপ দেয়া হয়েছিল যেন তা সাদা কালো টেলিভিশনে স্পষ্ট দেখা যায়। বলটিকে ৩২টি সাদা এবং কালো প্যানেল রয়েছে। যা বলটিকে দিয়েছিল অনন্য এক রূপ।

২.টেলস্টার ডুরলাস্ট ( ১৯৭৪ পশ্চিম জার্মানি বিশ্বকাপ)


এই বলটিও অ্যাডিডাসের তৈরি। বস্তুত এটি ছিল ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের বলটির উন্নত একটি রূপ। পূর্বের বলটি নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল যে বলটি বেশ ভারী। শট নিতে বেশ বেগ পেতে হত। তাই অ্যাডিডাস এই বলটির কারিগরি ত্রুটি সমাধান করার একটি চেষ্টা চালায়। সোনালি ব্র্যান্ডিংয়ের বদলে কালো ব্র্যান্ডিং ব্যবহার করা হয় এই বলটিতে। এটাই প্রথম বল যেটাতে নাম এবং লোগো একইসাথে ব্যবহার করা হয়।

৩.ট্যাঙ্গো ডুরলাস্ট (১৯৭৮ আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ)


গতি, সৌন্দর্য এবং সময়োপযোগী চাহিদার দাবি মেটাতে বলটির আবির্ভাব। বলটিতে ছিল ২০টি প্যানেল এবং ১২টি বৃত্তাকার চিহ্ন যা বলটিকে দিয়েছিল অন্য এক চেহারা যা দিয়ে সহজেই বলটিকে আলাদা করে বোঝা যেত। বলটি এতোই খ্যাতি পায় যে পরবর্তী ৫টি বিশ্বকাপ এই বলটির ডিজাইন দিয়েই চালিয়ে নেয়া হয়।

৪.ট্যাঙ্গো স্পানা (১৯৮২ স্পেন বিশ্বকাপ)

এই বলটি দেখতে পূর্ববর্তী বিশ্বকাপের বলটির মতই। বলটিতে রাবারের একটি স্তর রাখা হয় যা বলটিতে পানি প্রবেশের পথে বাঁধার সৃষ্টি করত। এটাই প্রথম পানি বিরোধী বল। বলটিতে সমস্যা ছিল কিছুক্ষণ ম্যাচে গড়ানোর পর রাবারের স্তরটি খসে পড়ত। তাই বিরতির সময় বল পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে ধরা পড়ত। এটাই ছিল সর্বশেষ আসল চামড়ার বল যা দিয়ে বিশ্বকাপ খেলা হয়েছিল।

৫.অ্যাজটেকা (১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপ)

এই বলটি ছিল প্রথম সিনথেটিকের বল। বলটি হাল আমলে বেশ জনপ্রিয় ছিল বলটির অসাধারণ গতির জন্য। বলটি ইতোপূর্বের বলগুলোর তুলনায় হালকা ছিল যা বলাই বাহুল্য। বলটি ভেজা কিংবা শক্ত মাটি উভয়ক্ষেত্রেই সমধর্মী আচরণ প্রদর্শন করত। স্বাগতিক দেশের অ্যাজটেক স্থাপত্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতি ইঙ্গিত রেখেই বলটির এমন নামকরণ করা হয়েছিল।

৬.এতরুস্কো (১৯৯০ ইতালী বিশ্বকাপ)

এই বলটিতে সর্বপ্রথম পলিইউরেথিনের ফোম অভ্যন্তরীন আস্তরণ ব্যবহার করা হয়েছিল। ইতালীর ইতিহাস এবং এতরুস্কো সম্প্রদায়ের কৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে বলটির এরূপ নামকরণ করা হয়েছিল।

৭.কুয়েস্ট্রা (১৯৯৪ যুক্তরাস্ট্র বিশ্বকাপ)

এই বলটিতে পলিস্টাইরিনের ফোমের আস্তরণ ব্যবহার করা হয়েছিল। বলটি একাধারে পানিরোধকই ছিল না সেই সাথে বলটির গতি ছিল বলার মত! পূর্বের বিশ্বকাপের বলগুলোর তুলনায় হালকা এবং নরম ছিল এই বলটি। বলের আকার আকৃতি পরিবর্তন করে বলের প্রতি নিয়ন্ত্রণ কৌশলেরও বেশ উন্নতি সাধিত হয়েছিল।

৮.ট্রাইকোলোর (১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপ)

বিশ্বকাপ বলের ইতিহাসে প্রথম রঙিন বল। ফ্রান্সের জাতীয় পতাকার লাল, সাদা এবং নীল রঙকে ইঙ্গিত করে বলটিতেও তেমনই একটা ছোঁয়া রাখা হয়।

৯.ফেভারনোভা (২০০২ কোরিয়া জাপান বিশ্বকাপ )

২০০২ সালের কোরিয়া জাপান বিশ্বকাপকে লক্ষ্য রেখে অ্যাডিডাস মোটা অভ্যন্তরীণ আস্তরণ বিশিষ্ট এই বলটি তৈরি করে। অভ্যন্তরীণ আস্তরণটি অপেক্ষাকৃত মোটা হওয়ার কারণে বলটি বাতাসে বেশ বেগ পেত যার ফলে হেডিংয়ে পাওয়া যেত বাড়তি সুবিধা।

১০.টিমজিস্ট (২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপ)

বলার অপেক্ষা রাখে না এই বলটি ফুটবল বিশ্বকে দেয়া অ্যাডিডাসের অন্যতম সেরা উপহার। বলটিতে প্যানেল কমিয়ে আনার কারণে বলটি আরো নিখুঁত এবং গোলাকৃতিরূপ ধারণ করে। “প্রপেলার ডিজাইন” নামক নতুন এবং ভিন্নধারার এই প্রযুক্তি বলটিতে প্রয়োগ করা হয় যার ফলে বলটিতে ‘বন্ধুর’ তল সংখ্যা হ্রাস পায়। এর ফলে ফুটবলাররা বলটিকে গতিশীল অবস্থায় খুব সহজেই কিক করতে সমর্থ হতেন।

১১.জাবুলানি (২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ)

বলটিতে ‘গ্রিপ এন গ্রুভ টেকনোলজি’ ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তিতে ব্যবহারের ফলে বলটি বৃষ্টিস্নাত কিংবা উষ্ণ আবহাওয়াতে সমান গতি বজায় রাখতে পারত। বলটিতে ত্রিমাত্রিক প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছিল যার ফলে বলটি পূর্বের বলগুলোর তুলনায় বেশ হালকা এবং আরো বেশী গোলাকাররূপ পেয়েছিল। বিশ্বকাপ ফাইনাল উপলক্ষে ‘জোবুলানি’ নামক সোনালি প্যানেল যুক্ত বিশেষ বল বানায় অ্যাডিডাস।

১২.ব্রাজুকা (২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপ)

এই বলটি দিয়ে আসন্ন বিশ্বকাপ ফুটবল মাঠে গড়াবে। ধারণা করা হচ্ছে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি পরীক্ষিত ও নিখুঁত বল হতে যাচ্ছে এটি। বলটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে উন্নত মানের প্রযুক্তি, সেই সাথে এটিই প্রথম বল যেটিতে রয়েছে অভিন্ন ছয়টি প্যানেল। ব্রাজুকার ওজন মাত্র ৪৩৭ গ্রাম, পানি শোষণ ক্ষমতা প্রায় ০.২%, এবং মাত্র ৭% চাপ হারাবে বলটি। ব্রাজিল বিশ্বকাপের ব্রাজুকায় অবশ্য লাগানো হবে উন্নত প্রযুক্তির ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা, বলের ‘চোখে’ খেলা দেখার অভিনব কায়দা।