বলা হয়, বিরিয়ানিতে কমপক্ষে ১৫ ধরনের মসলার ব্যবহার হয়। আর বিরিয়ানি
কীভাবে এলো তা নিয়ে আছে নানা কথা। খাবারটি উপমহাদেশে বিপুল জনপ্রিয়। কিন্তু
ইতিহাসবিদরা একমত, খাবারটি উপমহাদেশের বাইরে থেকে এসেছে। আর সবারই চোখ
আফগানিস্তান, ইরান ও অন্যান্য আরব এলাকার দিকে।
তবে আসুক না পশ্চিম থেকে। উপমহাদেশের বিখ্যাত মসলায় বিরিয়ানি মেলেছে তার
আসল সৌন্দর্য, পেয়েছে ভোজনরসিকদের ভালোবাসা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য
বেটার ইন্ডিয়া’ বিরিয়ানির আদি বাড়ির সন্ধান করার চেষ্টা করেছে।
ব্যারাকে জন্ম বিরিয়ানির?
মোগল সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজ মহলের শখ হল ব্যারাকে যাবেন। মোগল
সেনাদের দেখতে চান তিনি। যেই ভাবা সেই কাজ। গিয়ে তিনি অবাক হলেন। সেনাদের এ
কী অবস্থা? মোগল সেনারা দুর্বল আর অপুষ্টিতে ভুগছে। বাবুর্চির সরদারকে ডাক
দিলেন মমতাজ। নির্দেশ দিলেন চালের সঙ্গে মাংস মিশিয়ে রান্না করার জন্য।
সঙ্গে যেন ঘিও থাকে। ঘিয়ে ভাজা হলো চাল। মেশানো হলো মাংস। আর ওই রান্নায়
মিশল বাদামসহ কয়েক ধরনের মসলা। ওই স্বাদ কেবল সেনাদের মুখেই লাগল তা না,
পৌঁছাল মোগল দরবার পর্যন্ত।
বিরিয়ানির জন্ম প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদদের একটি দল মোগলদের পক্ষে। তাঁদের কয়েকটা যুক্তির মধ্যে মমতাজের ওই কাহিনী একটি।
সেনাদের নিয়েই প্রচলিত আছে বিরিয়ানির আরেকটি কাহিনী। তুর্ক-মোঙ্গল শাসক
তৈমুর লং মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা দখলে নিয়ে নেন। আর তার অন্যতম একটা
পথ ছিল ভারত। ১৩৯৮ এর দিকে তৈমুরের নাগালে চলে আসে ভারতের কিছু অংশও। এ
এলাকায় সেনাদের খাবারটা কী হবে? সেনাদের তো হৃষ্টপুষ্ট রাখা চাই। যেই ভাবা
সেই কাজ। চালের সঙ্গে মিশল মাংস আর মসলা। বিরিয়ানির স্বাদে তৈমুরের বাহিনী
সে রকমের মুগ্ধ।
দক্ষিণ ভারতে যে কাহিনীটা প্রচলিত তার সঙ্গেও সেনারা জড়িত। তামিল
সাহিত্যে ‘ওন সরু’ নামে একটা খাবারের কথা আছে। খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার বছর
আগে ওন সরুর নাম পাওয়া যায়। বলা হয়, তখন যোদ্ধাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার
জন্য চালের সঙ্গে মাংস, ঘি, হলুদ, মরিচসহ বেশ কিছু মসলা মেশানো হয়। আর
ওভাবেই তৈরি হয় ওন সরু। ওন সরুই কি বিরিয়ানির আদি রূপ? গবেষণা চলছে। চলবে।
তবে দক্ষিণ ভারতে বিরিয়ানি আনার জন্য একপক্ষ আরব ব্যবসায়ীদের প্রতি
কৃতজ্ঞতা জানায়। ওই পক্ষের দাবি মালাবার উপকূলীয় এলাকা দিয়ে আরবরা আসত
ব্যবসার জন্য। আর নিয়ে আসে ওই খাবার।
বিরিয়ানির উৎস খুঁজতে গিয়ে আবার ইতিহাসবিদদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন
ভাষাবিদরাও। এদেরই এক পক্ষ বলছে, বিরিয়ানি শব্দটা এসেছে পার্সি শব্দ
‘বিরিয়ান’ থেকে। যার অর্থ রান্নার আগে ভেজে নেওয়া। আর পার্সি শব্দ ব্রিনিজ
মানে হচ্ছে চাল। এ পক্ষের দাবি বিরিয়ানিটা পশ্চিম এশিয়া থেকেই যায় ভারতে।
বিরিয়ানির কথা হবে আর হায়দরাবাদের কথা আসবে না, তা কি হয়। আসে লখনৌর
নামও। হায়দরাবাদের নিজাম আর লখনৌর নবাবদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়
বিরিয়ানি। আর এ দুই অঞ্চলেই হয় বিরিয়ানি নিয়ে নতুন নতুন কাজ। যা পরে ছড়িয়ে
পড়ে সর্বত্র।
বিরিয়ানির বাহার
উত্তর ভারতে বিরিয়ানিতে দেওয়া হয় বাদামি ও লম্বা চাল। যা এখন বাসমতি চাল
নামে পরিচিত। দক্ষিণ ভারতে ব্যবহৃত হয় ওই এলাকার চাল-জিরা, কাইমা,
জিরাকাশালা ইত্যাদি। এখন বিরিয়ানি রূপ পেয়েছে বিভিন্ন রকমের। তবে ইতিহাসের
সঙ্গে জড়িয়ে আছে কয়েক ধরনের বিরিয়ানির নাম।
মোগলাই বিরিয়ানি
মোগল সম্রাট আর তাদের স্বজনরা বিরিয়ানি পছন্দ করতেন। তবে উনাদের মুখে
স্বাদ লাগতে হতো। প্রচুর মাংস থাকত ওই বিরিয়ানিতে। আর কেওড়া জল। গন্ধেই
মাতোয়ারা।
হায়দরাবাদি বিরিয়ানি
মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে হায়দরাবাদ এলো। তাঁর বাবুর্চি ৫০ ধরনের
রান্না করে পরিবেশন করতেন। চিংড়ি, হরিণ এমনকি খরগোশের মাংসও। তবে
আওরঙ্গজেবের মুখে লাগে এ এলাকার বিরিয়ানি। বিশেষ করে জাফরানের স্বাদে মুগ্ধ
হন সম্রাট। কাচ্চি বিরিয়ানির ধরনটা এখান থেকেই আসে বলে জানা যায়।
ক্যালকাটা বিরিয়ানি
ব্রিটিশরা অযোধ্যা থেকে বের করে দিল নবাব ওয়াজেদ আলী শাহকে। কলকাতায়
এলেন তিনি। নিয়ে এলেন পছন্দের খাবার বিরিয়ানি। ক্যালকাটা বিরিয়ানিতে আলু
থাকে। আর এ আলুর জন্যই বিরিয়ানির স্বাদ অন্যদের চেয়ে আলাদা। ওয়াজেদ আলী
সাহেবের পছন্দ বলে কথা।
0 comments:
Post a Comment