Wednesday, September 21, 2016

খড়ম

0 comments

আশির দশকেও ময়মনসিংহে অনেকেই ব্যবহার করতেন খড়ম। বাংলাদেশে খড়মের ব্যবহার অনেক প্রাচীন। ১৩০৩ সালে বিখ্যাত সুফি দরবেশ ও পীর হজরত শাহজালাল (রহ.) সুদূর তুরস্ক থেকে সিলেটে এসেছিলেন খড়ম পায়ে দিয়ে। তার ব্যবহৃত খড়ম এখনো তার সমাধিস্থল সংলগ্ন স্থাপনায় রক্ষিত আছে। কিছুকাল আগেও খড়মের শব্দে গৃহস্থরা বুঝতে পারতের তাদের বাড়িতে কেউ আসছেন।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় কাঠের তৈরি পাদুকা খড়ম এখন শুধুই স্মৃতি। কালের আবর্তে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাষ্ঠ পাদুকা খড়ম। এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
জানা যায়, চামড়া , রেকসিন, প্লাস্টিক, কাপড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি জুতা এখন মানুষের পায়ে শোভা বর্ধন করে।
বিগত কয়েক বছর ধরে বার্মিস জুতায় ছেঁয়ে গেছে বাংলাদেশের নগর-মহানগর, শহর- এমনকি গ্রাম বাংলার মানুষের পায়ে পায়ে।
সূত্র জানায়, কাঠ দিয়ে তৈরি খড়ম পরিবেশবান্ধব। তারপরও মানুষ এটিকে পরিহার করেছে।
অপরদিকে বার্মিস জুতা মানুষের মাথা গরম করা, পায়ের নিচের স্তর চামড়া মোটা করে বয়রা নামক রোগের সৃষ্টি করে। বয়রায় আক্রান্ত হয়ে অনেকেই চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছেন।


একজন প্রবীণ জানান, ৭০ এর দশক পর্যন্তও জনপ্রিয় ছিল পাদুকা ছিল খড়ম। তবে, সে সময় পশুর চামড়ায় তৈরি জুতাও কম-বেশি ছিল। পরে যানবাহনের চাকায় ব্যবহৃত টায়ার ও টিউব কেটে তৈরি হয় এক ধরনের জুতা। যার নামকরণ করা হয় টায়ার জুতা। কালের আবর্তে ওই টায়ার জুতাটিও বিলুপ্ত হয়ে যায়।
আসে সেন্ডেল। বর্তমানে বাহারি মডেলের সেন্ডেলে বাজার সয়লাব। একটি কাষ্ঠ পাদুকা খড়ম তৈরি করতে (মজুরি ও কাঠের দাম বাবদ) বর্তমান বাজারে খরচ পড়ে দেড় থেকে ২শ টাকা। পক্ষান্তরে বার্মিসের একটি পাদুকা পাওয়া যায় মাত্র ৮০ থেকে ১শ টাকায়।
দামসাশ্রয়ী হওয়ায় সবাই বার্মিসের জুতাই ব্যবহার করেন।
একজন জানান, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদেরও বর্মিস জুতা ব্যবহার করতে হয়। খড়ম পায়ে দিয়ে চলাফেরা করলে বেমানান মনে হবে, বিধায় ইচ্ছা থাকলেও খড়ম ব্যবহার করি না। তবে, এখনও খড়ম পায়ে দিয়ে চলাফেরা করেন এমন মানুষও কম-বেশি আছেন। মূলত তারাই ধরে রেখেছেন প্রাচীন জুতা খড়ম।
ব্যবহারকারী কমে যাওয়ায় পরিবেশবান্ধব কাষ্ঠ পাদুকা বিলুপ্তপ্রায় খড়ম শিল্পের সাথে জড়িত কারিগররাও কমে যাচ্ছেন।


ঢাকাটাইমস

0 comments:

Post a Comment