Monday, December 20, 2010

মাদারীপুরের গণকবর

0 comments
স্বাধীনতার ৪ দশকেও ১৯৭১ সালের গণহত্যার তীর্থক্ষেত্র মাদারীপুরের ৫টি বধ্যভূমিতে নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিসৌধ। মাদারীপুরের এআর হাওলাদার জুটমিল, পাখুল্যা, মিঠাপুর, সেনদিয়া, কলাগাছিয়া বধ্যভূমি শুধু কালের সাক্ষী হিসেবে স্মৃতি বহন করছে। ১৯৭১ সালে যখন সারা বাংলার মানুষ স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল তখন এদেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সারা দেশে ব্যাপক নারকীয় গণহত্যা চালায়। তাদের অত্যাচারের দুঃসহ স্মৃতি মনে হলে আজো শিউরে উঠে হাজার হাজার বাঙালি। ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিমান থেকে প্রথম গোলাবর্ষণ ও ২৪ এপ্রিল স্থলপথে মাদারীপুরে প্রবেশ করে। তারপর মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থানে ঘটাতে থাকে একে একে ধ্বংসযজ্ঞ। হত্যা করে শত শত নিরীহ বাঙালিকে। শরীয়তপুর ছিল তখন তৎকালীন মাদারীপুর মহাকুমার একটি অংশ। বর্তমান শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত নিরীহ বাঙালিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা মাদারীপুরের এআর হাওলাদার জুট মিলের অভ্যন্তরে ডি-টাইপ বিল্ডিংয়ে স্থাপিত হানাদার বাহিনীর টর্চার সেলে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। তাদের পাশবিকতার শিকার হয়ে অগণিত কিশোরী-যুবতী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এছাড়াও ৫ শতাধিক নিরীহ বাঙালিকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় এই টর্চার সেলে। আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরসংলগ্ন এআর হাওলাদার জুট মিলের জেটির ওপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় বাঙালি নর-নারীদের। তারপর কখনোবা লাশ ফেলে দেওয়া হয় প্রমত্তা আড়িয়াল খাঁ নদীতে, কখনোবা বীর শহীদদের এআর হাওলাদার জুট মিলের ডি-টাইপ বিল্ডিংয়ের পশ্চিম দিকের খোলা জায়গায় দেওয়া হয় গণকবর বা মাটিচাপা। এআর হাওলাদার জুট মিল এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মুক্তিকামী অগণিত বাঙালি নারী-পুরুষের লাশ। স্বাধীনতার ৪ দশকেও সেসব স্থান চিহ্নিত করে শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত এসব এলাকায় নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ এই গণকবরগুলো কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম শুধু স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের অভাবে। এছাড়াও মাদারীপুর শহর থেকে ৭/৮ কি.মি দূরে মাদারীপুর-শ্রনদী সড়কের পাশে মিঠাপুরের শিকদারবাড়ির বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয় শত শত মুক্তিপাগল বাঙালিকে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন দ্বারপ্রান্তে তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে শহীদ হন এ অঞ্চলের অসংখ্য গণ্যমান্য ব্যক্তি। সে সময়ের প্রতক্ষদর্শী নিত্যগোপাল ঠাকুর (৭০) বলেন, প্রতিদিন শিকদারবাড়ি ও তার আশপাশের হাজার হাজার মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি জানান, সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গুলি খেয়ে বেঁচে থাকা তিনিই একমাত্র ব্যক্তি। গুলি করার সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যান তিনি। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা তার পিঠে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ফেলে যায় কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। সেদিন নিহত সবাইকে বর্তমান কৃষি ব্যাংক কালিরবাজার শাখার ভবনের পাশে মাটিচাপা দেওয়া হয়। বর্তমান কৃষি ব্যাংক কালিরবাজার শাখা নির্মাণকালে এখানে অনেক মানুষের খুলি ও হাড় পাওয়া যায়। বর্তমান কৃষি ব্যাংক কালিরবাজার শাখার পাশে যে বধ্যভূমি রয়েছে তা চিহ্নিত করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের দীর্ঘদিনের দাবি। দ্রুত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত না হলে হয়তো একদিন এ স্থানটি বেহাত হয়ে যাবে। এছাড়াও পাখুল্লা সেনদিয়া, কলাগাছিয়ার বধ্যভূমিতে এখনো নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ।



বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

0 comments:

Post a Comment